তুমি আমার অধিকার পর্ব -০৩

#তুমি_আমার_অধিকার(পর্ব-৩)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম
,,
,,
সময়টা রাত সাড়ে বারোটার কাছাকাছি, চারিদিকে কুয়াশা দিয়ে ঢেকে গেছে। ছাদের একপার্শ থেকে অন্য পাশ দেখা যাচ্ছে না।শিরশির করে ঠান্ডা বাতাস বইছে, রোহান ছাদের একপার্শে গিয়ে এক দৃষ্টিতে আকাশের আধো আলো দেওয়া চাঁদটার দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে,
চাঁদ তুমি যতোই সুন্দর হও না কেনো,আমার চাঁদের কাছে তুমি বরাবরি পরাজিত,,
ওকে যতোবার দেখি ততোবার ওর প্রেমে পড়ে যাই, ওর বাচ্চামো অভ্যাসের প্রেমে পড়ে যাই।ওর কথা বলা, কান্না করা, সবকিছুর প্রেমে পরে যাই।

তখন রোহান বাইক রেখে ওপরে এসে দেখে রুহি দরজা লাগিয়ে দিয়েছে,একবার ভেবেছিলো ডাকবে কিন্তু কি যেনো ভেবে আর ডাকেনি। জালানা দিয়ে একবার কান্নামাখা মুখটা দেখে ছাদে চলে এসেছে।

,,
রুহি কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে গেছে বুঝতে পারে নি। সকাল সকাল উঠে নিচে গিয়ে দেখে ওর মা আর বড় আম্মু নাস্তা বানাচ্ছে। রুহিকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে উঠে ওর মা বললো,
কখন এসেছিস রুহি,আর কার সাথে, রিপা কোথায়।

কাল রাতে আসছি রোহান ভাইয়ার সাথে, রিপা নিজের ঘরেই আছে।

এতো রাতে আসার কারন কি রুহি,আর একমাসও তো হয় নি এখনো,

রুহির মায়ের কথায় সাহেদা বেগম বলে ওঠে, উফফ ছোটো তুই মেয়েটাকে বকছিস কেনো, কতোদিন পর এসেছে। আর রোহান যখন এনেছে তখন সব জেনে শুনেই এনেছে,জানিস তো রোহান ওর ওপর কতোটা সচেতন।

হ্যা ভাবি তা তো জানি,

এর মধ্যে রিপা নিচে এসে সবার সাথে দেখা করে যায়। রাসেদ চৌধুরী বারান্দায় বসে পত্রিকা পারছিলো, রুহি আর রিপা গিয়ে ওনার সাথেও কথা বলে আসে। তারপর রিপা ওপরে চলে যায় আর রুহি টিভির সামনে বসে নুডলস খেতে শুরু করে।

সাহেদা বেগম রুহিকে ডেকে বলে মা কফিটা একটু রোহানকে দিয়ে আয় তো,

আ‌ আমি,,(রুহি)

হ্যা তুই, দেখছিস তো আমার হাত বন্ধ আর তোর বড় আম্মুরও পায়ে ব্যথা ওপরে উঠতে সমস্যা হয় তো তুই দিয়ে আয় (পাশ থেকে জেসমিন‌ বেগম কথাটা বলে ওঠে)

মায়ের কথা শুনে রুহি কফির মগটা নিয়ে রোহানের রুমের দিকে এগোতে থাকে। আসলে কালকের পর থেকে একটা চাপা অভিমানে রুহি রোহানের সামনে যেতে চাচ্ছিলো না। কিন্তু এখন বাধ্য হয়ে যেতেই হচ্ছে।

রুহি রোহানের রুমে এসে দেখে রোহান‌ এখনো ঘুমাচ্ছে তাই সে কফিটা রেখে চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু দেরি হলে ঠান্ডা হয়ে যাবে ভেবে রোহানকে ডাক দেয়,,

রোহান ভাই ওঠো, নয়তো কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে

সকাল সকাল রুহির কন্ঠ কানে আসতেই রোহান চোখ মেলে তাকায়। রোহানের তাকানো দেখে রুহি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

রোহান মুচকি হেসে কফিটা হাতে নেয়।মহারানি এখনো রাগ করে আছে। তোমার রাগ কি করে ভাঙ্গতে হয় সেটা আমি জানি। (মনে মনে ভাবে রোহান)

রুহি চলে যেতে ধরলে রোহান ওকে ডেকে বলে এই রুহি আজ এক জায়গায় ঘুরতে যাবো যাবি।

না ,

ওওওও আচ্ছা, আমি আরো ভেবেছিলাম তোকে নিয়ে যাবো কিন্তু তুই তো যাবি না সাদিয়াকেই বলতে হবে

না না আমি যাবো,

কিন্তু আমি তো তোকে আর নিয়ে যাবো না, আর মনে পরলো সাদিয়া কয়েকদিন থেকে আমাকে বলছিলো ঘুরতে যাওয়ার কথা। তাই ওকেএএএ এইইইই কি করছিস,,

রোহান কে আর কিছু বলতে না দিয়ে গ্লাস এ থাকা ঠান্ডা পানিগুলা রোহানের শরীরে ঢেলে দিছে রুহি।

এটা কি করলি,

কেনো দেখতে পাচ্ছিস না কি করছি,

উফফ ঠান্ডার মাঝে পানি কেনো দিলি,

তুই সাদিয়া আপুকে কেনো নিয়ে যাবি,

তোকে বললাম তুই যাবি না তাই ,,

আমি যাবো,

আচ্ছা আচ্ছা কি ডাইনি মেয়েরে বাবা, বিকেলে রেডি হয়ে নিস,আর সাদিয়াকেও নিয়ে যাবো কেমন

তবেরেএএএ

রুহি ধাওয়া করলে,রোহান তারাতাড়ি গিয়ে ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দেয়।

,,,,

আজ রুহি কালো রঙের একটা থ্রিপিস আর কালো প্যান্ট সাথে লাল খয়েরি সোয়েটার, আর কালো টুপি পরেছে , চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া ঠোঁটে গোলাপি কালার লিপস্টিক। অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওকে।

রোহান ওকে দেখে ওর সাথে ম্যাচিং করে কালো প্যান্ট খয়েরি শার্ট আর কালো কোর্ট পরেছে।

রুহি নিচে গিয়ে অপেক্ষা করতেছে ওর আসার। ওকে আসতে দেখে রুহি তো আরেক দফা ক্রাস খেয়ে গেলো, উজ্জ্বল ফর্সা গায়ে কালো কোর্ট যেনো অসম্ভব সুন্দর মানানসই, তার ওপর হাতে কালো ঘরি আর ঠোঁটে মুচকি হাসি।
রোহান একটা কালো সানগ্লাস পরে ভাব নিয়ে এসে রুহিকে বলতেছে কি রে আমার সাথে ম্যাচিং করে পরেছিস কেনো।

রোহানের কথা শুনে রুহি একদম বোকা বনে গেলো, কারন ও নিচে নামার সময় দেখেছে যে রোহান ওকে দেখছে আর তখনো ও রেডি হয় নি।

ভাইয়া তুই তো আমাকে দেখার পর ড্রেস পরেছিস তাহলে আমি কিভাবে তোর দেখে পরলাম।

এই রে, ঐ আমাকে দেখলো কিভাবে। কিন্তু এটা ওকে কিছুতেই বলা যাবে না।
আমি কি তোর ড্রেস দেখেছি নাকি যে তুই কি পরেছিস।

ওও আচ্ছা তাই নাকি, তাহলে কি দেখেছিস,

আমি তো মেকাপ দেখছিলাম,না জানি কতো আটা ময়দা গালে মেখেছিস।

মোটেই না,আমি হালকা মেকাপ করেছি,

তা তো দেখেই বোঝা যাচ্ছে,

আমি মেকাপ ছা,,,,

হ্যা হ্যা তুই তো মেকাপ ছাড়াই ময়দা সুন্দর, চল এখন নয়তো গলে পরবে,

ভাইয়া,,

কে তোর ভাইয়া,

কে আবার তুই,

আমি তোর কোন জন্মের ভাই হই,

মানে,

মানে,তোর বাবা মায়ের দুইজন সন্তান তুই আর তৌকির,তোরা ভাই বোন,আমি কেনো আমি তোর ভাই না ঠিকাছে।

তাহলে কে,

কেনো জামাই,

জামাই ,,

না মানে ভাই এ তোওও

যাব্বাবা, এতোক্ষণ ধরে এসব কি বুঝালো সব তো মাথার ওপর দিয়ে গেলো। কিন্তু শেষে জামাই কেনো বললো,রুহির ভাবনার মাঝে এক জগ পানি ঢেলে দিয়ে সাদিয়া বলে উঠলো রোহান ভাই তোমরা কোথায় যাচ্ছো আমিও যাবো।

রোহান কিছু বলতে যাবে তার আগে রুহি বলে উঠলো, ঠিক আছে সাদিয়া আপু তুমি রেডি হয়ে আসো।

সাদিয়া তো খুব খুশি রোহান আর রুহিকে কিছুতেই একা ছাড়বে না ও। এমনিতেই রোহান রুহির ব্যাপারে খুব পজেটিভ। পরাশুনার ব্যাপারেও রুহিকে ওর মা কিছু বলতে গেলে ও যেভাবেই হোক বুঝিয়ে দেয় যে সবার ব্রেইন এক না। আর রুহিকে যেনো কোনো বিষয়ে কেউ কোনো চাপ না দেয়। কেনো যে এমন করে রোহান ভাই বুঝি না। মনে হয় রুহি একটা ননির পুতুল। তবে আজকে আমি খুব সাজবো রোহান ভাই একদম চোখ ফেরাতে পারবে না আমার থেকে। এসব ভাবতে ভাবতে সাদিয়া রেডি হতে যায়।

এদিকে রুহির কথা শুনে রোহান প্রচন্ড ক্ষেপে গেছে, ভেবেছিলো রুহি আর ও একা যাবে কিন্তু এই মেয়েটা সাদিয়াকে আসতে বললো। রোহান রাগ করে কিছু বলবে তার আগে রুহি বললো রোহান ভাই তারাতাড়ি চলো না হলে সাদিয়া আপু এসে পড়বে।

মানে,তুই তো ওকে আসতে বললি,

আরে আমরা যদি না বলতাম তাহলে জেদ ধরে বসতো আর আমাদের যাওয়ার দেরি করাতো। আর সন্ধ্যা হলে তো আমাদের যাওয়া হতো না। বুঝিস না কেনো,

রোহান এতোক্ষণে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে একটু হেঁসে উঠলো, পাগলির বুদ্ধি আছে তাহলে।
,,

এ যেনো এক অপূর্ব মনোরম দৃশ্য, একদম ফাঁকা রাস্তার দুইপার্শে শরিষা ক্ষেত তার মাতাল করা গন্ধ যেনো অবাক করিয়ে দিচ্ছে।রুহি রোহানের ঘারে হাত দিয়ে বসে আছে চুলগুলো উরে মুখে আসছে,রোহান বার বার আয়নায় রুহিকে দেখছে। একটু পর রোহান বাইক একপার্শে রেখে রুহির হাত ধরে নিচে নেমে যাচ্ছে। রুহি ভাবতে পারে নি এতো সুন্দর একটা জায়গায় নিয়ে আসবে। ও নিচে নেমে রোহানের হাত ছেড়ে দিয়ে শরিষা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছে আর রোহান উপভোগ করছে প্রিয়তমার আনন্দ।

একপার্শ থেকে কিছুটা ফুল নিয়ে ও রুহির কানে গুঁজে দিলো আর রুহি খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে।
,,,

কয়েকদিন পর রোহান কোনো এক কাজের জন্য ঢাকা যাবে। গাইবান্ধা থেকে ঢাকা লং জার্নি। রুহি রা আর হোস্টেলে যায় নি,রোহান ও জোড় করে নি। কারন সেও তো তার প্রেয়সীকে না দেখলে থাকতে পারে না। ওর থেকে দুরে যাওয়ার কথা তো ভাবতেই পারে না।

রুহি শুনেছে রাতে, তখন থেকে মনটা ভীষণ খারাপ করে রেখেছে। সকালে রিপা এসে দেখে রুহি মন খারাপ করে বসে আছে। নাস্তা খেতেও যায় নি। রোহান নাস্তা খেয়েই বের হবে। রাতেই যেতো কিন্তু রাসেদ চৌধুরী (রোহানের বাবা) কিছুতেই রাতে যেতে দেয় নি। রাতে কুয়াশার মধ্যে কোনো দূর্ঘটনা ঘটতে পারে এজন্য।

রোহান নাস্তা খেয়ে রেডি হতে গেছে আর রিপা নাস্তা খেতে গিয়ে দেখে রুহি নেই তাই ওকে ডাকতে গেছে।

কি রে রুহি মন খারাপ করে রেখেছিস কেনো, রোহান দা কি একবারেই চলে যাচ্ছে নাকি।

না জানি কতোদিন থাকবে রোহান ভাই।‌ আমার তো ওকে একদিন না দেখলেই দম বন্ধ লাগে রে,

এখনি এমন তাহলে রোহান দা যখন একবারেই চলে যাবে তখন কি করবি।

আমিও সাথে যাবো ,,

এর মাঝে বাহিরে গাড়ির হর্ন বাজছে,রোহানকে নিতে প্রাইভেট কার আসবে হয়তো সেটাই , রুহি এক দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে দাড় হয়ে রোহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,

রোহান গাড়িতে ওঠার আগে একবার রুহির দিকে তাকায়।(মন খারাপ করিস না পাগলি, আমি তারাতাড়ি চলে আসবো,তোকে ছেড়ে যেতে তো আমারো ইচ্ছে করছে না কিন্তু আমাকে যে যেতেই হবে, তোকে নিজের করে পেতে গেলে এটুকু সেক্রিফাইস তো করতেই হবে। কথাগুলো মনে মনে ভাবে রোহান)

রোহান গাড়িতে ওঠার সাথে সাথে রুহির চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে।

এমন সময় সাদিয়া রেডি হয়ে নিজের ব্যাগ নিয়ে রোহানের সাথে গাড়িতে গিয়ে ওঠে,,

রুহি রাগে গজগজ করে ওঠে, এই মেয়েটার সাহস কি করে হয় আমার রোহান ভাইয়ের পাশে বসার।আর ও কোথায় যাচ্ছে ,,

চলবে,,

সবাই শুধু নেক্সট চায়, নেক্সট তো দেবোই কিন্তু গঠনমূলক মন্তব্য চাই। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। ❌❌ কপি করা নিষেধ ❌❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here