#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ১৭
#Mitu-মিতু
কনের বাড়িতে বিয়ে হলো একরাশ আনন্দের পাশাপাশি মেয়ে দূরে পাঠানোর বেদনা। আর ছেলের বাড়িতে নতুন অতিথি আগমন যেনো শ্রেষ্ঠ হয় তার প্রচেষ্টা। পার্লারের কাজ শেষ করে সবাই চলে গেলো মার্কেটে। কনের সকল পোশাক বর পক্ষ থেকে আসবে।তারপরও প্রয়োজনীয় সকল কিছু নেওয়া হলো।তানিয়ার বান্ধবীরা গায়ে হলুদ,,মেহেন্দি অনুষ্ঠান,, বিয়ে সাথে ফিরনির জন্য আলাদা পোশাক নিলো।গায়ে হলুদে সব মেয়েদের লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি নির্ধারণ করা হলো।আর ছেলেদের জন্য সাদা পাঞ্জাবি। তারা শাড়ির সাথে মিল রেখে হলুদ বা লাল পাঞ্জাবি সিলেক্ট করতে চেয়েছিলো কিন্তু তানিয়ার বন্ধু রায়হান যখন বললো
“লাল আর হলুদ ছেলেদের পরা নিষেধ। তোরা অন্য কালার সিলেক্ট কর।আর যদি না করিস তবে বলে রাখলাম আমি এগুলো পরবো না।”
সবাই তাদের পছন্দ মতো সবকিছু কিনে ফেললো কিন্তু রিশা চুপচাপ। সে নিজের জন্য কিছুই পছন্দ করতে পারছে না আর তার ভালোও লাগছে না। আসার পর থেকেই তার মাথা ব্যথা করছে।
“পুতুল তুই কিছু পছন্দ করছিস না কেনো? মুখটা এমন করে রেখেছিস কেনো?”
“আপু!আমার ভালো লাগছে না।মাথা ব্যথা করছে।সবার তো কেনাকাটা শেষ এখন চলো যাই।”
“সবাই কতকিছু নিলো আর তুই কিছু নিলি না,,এটা কেমন হয়? তুই এভাবে গেলে আব্বু আমায় বকবে পুতুল।”
তানিয়ার কথায় রিশা বললো
“আপু! আমার আছে সবকিছু। না নিলেও হবে।”
“তোর কথা আমি শুনছি না। তুই যা গাড়িতে বস।ওখানে গাড়িতে দুজন মামি আছে। বসে থাক আমি আসি।”
কপট রাগ দেখিয়ে রিশাকে গাড়ির কাছে পাঠালো তানিয়া।রিশা জানে তার কোনো কথাই শুনবে না তানিয়া ওর জন্য নিশ্চিত এখন কেনাকাটা করবে।রিশা আর না থেকে চলে গেলো।গাড়িতে বসে ছিটে মাথা এলিয়ে দিলো। বিয়ের দিন লেহেঙ্গা পারফেক্ট হবে বলে তানিয়া রিশার জন্য লেহেঙ্গা পছন্দ করতে লাগলো।তানিয়া একহাতে গোল্ডেন কালার লেহেঙ্গা আরেক হাতে ডিপ খয়েরী কালার লেহেঙ্গা ধরে আছে। কোনটাতে রিশাকে বেশি মানাবে সেটা সে ঠিক করতে পারছে না সে।
“এভাবে গাধীর মতো বসে আছিস কেনো?”
রায়হানের প্রশ্নে তানিয়া তার দিকে তাকালো।
“পুতুলের জন্য কোনটা নেবো ভেবে পাচ্ছি না রায়হান। কোনটাতে বেশি মানাবে?”
“বিয়েতে খয়েরী সাধারণত কনেরা বেশির ভাগ পড়ে,,তুই গোল্ডেন কালার টা নিয়ে নে।ভালো লাগবে।”
তানিয়া দ্বিমত করলো না।লেহেঙ্গা কেনার পর সে একটা সারারা আর একটা গাউন কিনলো রিশার জন্য। সেগুলোও ছিলো রায়হানের পছন্দ করা। সব কেনাকাটা শেষে সবার জন্য কিছু ফাস্ট ফুড কিনলো গাড়িতে বসে খাওয়ার জন্য। বাড়ি থেকে বিকেলে বের হওয়ায় তাদের ফিরতে একটু রাত হলো।
_______________
বিয়ের চারদিন আগে
রসুলপুর চেয়ারম্যান বাড়ি নিকটাত্মীয় দিয়ে ভরপুর। ছোট বাচ্চাদের হইচই এ মেতে আছে বাড়িটি। শহর থেকে আসা ছেলে-মেয়েদের জন্য বিয়ের অনুষ্ঠান টা আরো জাঁকজমকপূর্ণ হচ্ছে। বাড়ির চারপাশ ডেকোরেশন সম্পুর্ন। কালকে হলুদ সন্ধ্যার অনুষ্ঠান বাড়ির আঙ্গিনায় করতে চাইলেও তানিয়ার বন্ধু-বান্ধবীর কথায় বাড়ির ছাদে আয়োজন করা হবে।বাড়ির বয়স্করা সবাই তাদের কাজে ব্যস্ত আর যুবক-যুবতীরা হলুদ সন্ধ্যার প্ল্যান নিয়ে ব্যাস্ত।
______________
মজিদ মিঞার সাথে রিশার মান-অভিমান চলছে। সে বাবার কাছ থেকে তেমন অবহেলা পায়নি বলে রাগ করতে পারছে না তবে মাকে তার কাছে খারাপ ভাবে উপস্থাপন করার জন্য সে অভিমান করেছে। এতোদিনে মজিদ অনেক বার মেয়ের সাথে মন খুলে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু রিশার উত্তর হ্যা /না তেই সীমাবদ্ধ। আজকে অনেকদিন পর মজিদ মিঞা চেয়ারম্যান বাড়ির সামনে এসে দাড়িয়েছে। রিশার সাথে কথা বলতে না পেরে তিনি হাসফাস করছেন।সম্পর্ক বিচ্ছেদের কারনে সে সহজে মতিন সাহেবদের সামনে দাড়াতে পারে না।মেয়ের সাথে কথা না বলে শান্তি পাচ্ছিলো না তাই আজকে এসেছে এখানে। বাড়ির ভেতরে না ঢুকে সবার অগোচরে থেকে একটা পিচ্চি কে দিয়ে রিশাকে ডাকতে পাঠিয়েছে।
“রিশু আপু! একটা আঙ্কেল তোমায় ডাকে।” বাড়ির গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে। ”
রিশার বুজতে বাকি থাকে না কে ডাকছে তাকে। দোতলা থেকে নেমে সোজা বাড়ির বাইরে চলে যায় সে।রিশাকে আসতে দেখে মজিদ মিঞার জানে পানি আসলো।
রিশা আর মজিদ মিঞা পাশাপাশি হাঁটছে। নেই কোনো সঠিক গন্তব্য। মজিদ মিঞা রিশাকে জিজ্ঞেস করলেন
“আম্মা! তুমি আমার সাথে আগের মতো কথা বলো না কেন?”
“আমার ভালো লাগে না তাই। আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই না। ”
মেয়ের কথা শুনে মজিদ মিঞার কলিজার পানি শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম। কোন অপরাধে মেয়ে তার সাথে কথা বলতে চায় না।
“আমার দোষ কি আম্মা? ”
রিশা উত্তেজিত হয়ে বললো
“সব দোষ তোমার বাবা।সব দোষ তোমার। তুমি কিভাবে পেরেছিলে ঘরে বউ,,মেয়ে রেখে অন্যজনের কাছে যেতে। আমাদের নিয়ে কি তুমি সুখী ছিলে না? আমার মায়ের কি দোষ ছিলো?”
“আম্মা! আমি তখন এগুলো কিছু ভাবিনি আম্মা। আমি ভুল করে ফেলেছিলাম তখন। আমায় ক্ষমা করো আম্মা। তুমি আমার সাথে কথা বলো।”
রিশার চোখে পানি টলমল করছে। সে কি করবে? বাবা যে তাকে মাথায় করে রেখেছে। কিন্তু তাকে কেনো মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত করলো তার বাবা?
“তুমি আমাকে কেনো বলতে আমার মা ভালো না? জুইয়ের মা যখন জুইকে আদর দিতো তখন আমার খুব আফসোস হতো বাবা আমার কেনো ভালো মা নেই? ছোট মা আমায় কেনো আদর করে না? তুমি চাইলেই পারতে আমাকে মায়ের আদর পাওয়ার সুযোগ করে দিতে। কেনো দেওনি বাবা?”
“আম্মা! তুমি আমার কলিজার টুকরা। তুমি আমার আম্মা।আমি তোমাকে আমার কাছে রাখতে চাইছিলাম। তোমার মায়ের কাছে দিলে তোমাকে আর পেতাম না আমি।তোমার মা ও তোমাকে খুব ভালোবাসে যে।”
মজিদ মিঞা অপরাধবোধে ভুগছেন। মেয়ের সাথে অন্যায় হয়েছে এটা তিনি উপলব্ধি করতে পারছেন। বাবার চোখে পানি দেকে রিশা নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।মজিদ মিঞাকে জড়িয়ে ধরে বললে
“তুমি চাইলে আমি বাবা-মায়ের আদর একসাথে পেতাম বাবা।আমরা খুব সুখী হতাম।তুমি আমার মাকে কেনো কষ্ট দিলে বাবা? ”
“আম্মা!আমার চোখে তখন অদৃশ্য কাপড় বাধা ছিলো আম্মা।আমি এতোকিছু ভাবতাম না।তোমার এ অসহায় বাবাকে তুমি ক্ষমা করো আম্মা। ”
আর কেউ কোনো কথা বললো না। অনেকক্ষণ নিরবতা পালন করলো।
“বাবা! আমি এখন যাই। বাড়িতে অনেক কাজ।”
“আচ্ছা যাও।”
রিশা চেয়ারম্যান বাড়িতে প্রবেশ করলে মজিদ মিঞা চলে যায়। দোতলায় উঠার সময় রিশা রায়হানের মুখোমুখি হয়।রায়হান ফোনে কথা বলতে বলতে নিচে নামছিলো। রিশার মুখের দিকে তাকিয়ে সে ভ্রু কুচকায়।রায়হানের ভ্রু কুচকানো দেখে রিশা আর দাঁড়ালো না চলে গেলো তার ঘরে। সে এমনিতেও সবার সাথে খুব সহজে মিশতে পারে না। রায়হান রিশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো। মেয়েটা কি কেঁদেছে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো।
“কিন্তু কাঁদবেই বা কেনো?”
আর কিছু না ভেবে সে আবার ফোনে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
চলবে……