#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_১০
সাফাত বন্যাকে কিছু না বলেই রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে সোজা ভার্সিটি চলে আসে। সাফাত ভার্সিটিতে প্রবেশ। করেই দেখে কণা ঐশির সাথে গল্প করছে আর হাসাহাসি করছে। সাফাত দৌড়ে গিয়ে কণাকে জড়িয়ে ধরে। কণা তৎক্ষণাত সাফাতকে নিজের থেকে ঠেলে দুরে সরিয়ে দেয়। সাফাত অবাক হয়ে কণার দিকে তাকিয়ে আছে।
সাথে সাথেই একটা গুলি কণা আর সাফাতের মাঝখান দিয়ে চলে যায়। একটুর জন্য গুলিটা সাফাতে শরীরে লাগেনি। সাফাতের শরীর ঘেষে গিয়ে একটা গাছের সাথে লাগে। বিষ্ময়ে সাফাতের চোখ মুখ বড় হয়ে গেছে। সে কিছুই বুঝতে পারছে না এসব কী হচ্ছে? কিন্তু কণার চোখ মুখ একদম স্বাভাবিক।
যেনো সে জানতো এমন কিছু একটাই হবে। সাফাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা ছেলে এসে সাফাতকে জড়িয়ে ধরে। সেই সুযোগে কণা দ্রুত পা চালিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে। সাফাত লোকটার সাথে কুশল বিনিময় করে কণার পিছনে ছুটতে থাকে। কণা ততক্ষণে রাস্তায় চলে আসে। কণা রাস্তার পাশে আসতেই একটা গাড়ি থেকে কালো পোশাক পরিহিত কিছু লোক নেমে কণাকে অঙ্গান করে গাড়িতে তুলে নেয়।
সাফাত কণার থেকে অনেকটা দূরে থাকায়। সাফাত দৌড়ে আসতে আসতে গাড়িটা অন্য গাড়ির ভীরে হারিয়ে যায়।
২১
কণাকে একটা রুমে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়ছে। কিছুক্ষণ আগেই কণার ঙ্গান ফিরিছে। ঙ্গান ফেরার পর থেকেই কণা বাঁধন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ছটফট করছে। কিন্তু কিছুতেই হাতের বাধন খুলতে পারছে না। হাত মুচরা মুচরি করার ফলে দড়ি দিয়ে হাত ছিলে গেছে। তখনি একটা লোক রুমে প্রবেশ করে। কণা ভাবে আগে যেই লোকটা তাকে কিডন্যাপ করেছিল সেই লোকটা।
এতো ছটফট করছো কেনো জানেমান?
কণা লোকটার কন্ঠ শুনে বুঝতে পারে এটা সেই লোক না। কণা লোকটার দিকে তাকায়। লোকটা মুখে মাস্ক পড়ে আছে। লোকটার শুধু চোখ দেখা যাচ্ছে। কণার এই চোখ দুটো অনেক চেনা লাগছে। মনে হচ্ছে এই চোখ দুটো সে আগেও দেখেছে। কিন্তু কোথায় দেখেছে মনে করতে পারছে না।
কে আপনি?
লোকটা কোনো কথা না বলে কণার সামনে রাখা চেয়ারটাই বসে। কণার মুখের ওপর পড়ে থাকা চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। কণা মুখ ফিরিয়ে নেয়। কেনো জানি তার এই লোকটাকে দেখে রাগ লাগছে।
রাগলে তোমাকে অনেক হট লাগে। ( চোখ টিপ দিয়ে )
আপনার এইসব বাঁজে কথা বন্ধ করুন। আমাকে এখানে কেনো নিয়ে আসছেন?
তোমাকে কিডন্যাপ করার একমাত্র কারণ হচ্ছে তোমাকে সাফাতের থেকে আলাদা করা।
তুমি যখন কাজের কথায় আসতে চাইছো তাহলে আমিও বলি। গত চার মাস ধরে তোমার সাথে যা হচ্ছে সব আমি করেছি। তোমার ফোনে যে অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ যাই সেগুলোও আমিই দেই।
এসব করে আপনার লাভ কী?
এসব লাভ লোকসান তোমাকে জানতে হবে না। তোমাকে বলেছিলাম না এই শহর ছেড়ে চলে যেতে। তাহলে চলে গিয়ে আবার ফিরে এসেছো কেনো? ( রেগে হুংকার দিয়ে বলে)
তুমি এই শহর ছেড়ে চলে যাও নাহলে তোমার ভাই সাফাতকে আমি খুন করে ফেলবো। এই মেসেজটা আপনি দিয়েছিলেন তাই না?
হ্যাঁ।
আমি তো আপনার কথা মতো চলে গিয়েছিলাম। তাহলে আপনি ভাইয়া ওপর এ্যাটাক কেনো করেছেন?
তুমি আবার ফিরে এসেছো তাই।
আমি কী আপনার জন্য পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিব?
আমি তো তোমাকে পড়াশোনা বাদ দিতে বলি নাই। তুমি শুধু সাফাতের থেকে দূরে থাকবা।
আমি কেনো আপনার কথা শুনে আমার নিজের ভাইয়ের থেকে দূরে থাকবো? আর আপনি এসব কেনো করছেন? আপনার সাথে আমার কীসের শত্রুতা।
তোমার নিজের ভাইয়ার জীবন বাঁচানোর জন্য তুমি আমার কথা শুনবা। তোমার সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই। ইনফ্যাক্ট তোমার ভাইয়ের সাথেও আমার কোনো শত্রুতা নেই। তোমার ভাইকে তো আমি ভালো করে চিনিও না। আমার শত্রুতা হচ্ছে তোমার বাবার সাথে।
তোমার আর ভাইয়ের ঝগড়া দেখে যখন ঐ তিশান আহম্মেদ কষ্ট পাবে তখন আমি মানসিক শান্তি পাব। আমার এক পৈশাচিক আনন্দ হবে। আমি প্লেন চেইন্জ করে ফেলছি। তোমাকে এই শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেছিলাম না। এখন আর এই শহর ছেড়ে যেতে হবে না। এই শহরেই থাকবে তবে তোমার ভাইয়ের থেকে দূরে। সাফাত তোমার সাথে কথা বলতে আসলে ওর সাথে দুর্ব্যবহার করবে। কথায় কথায় সাফাতকে অপমান করবে। আমার কথা মতো চলবে। যদি আমার কথা মতো না চলো সুন্দরী তোমার ভাইয়ের প্রাণ পাখি ফুরুৎ।
না না এসব করার দরকার নেই। আমি আপনার সব কথা শুনে চলবো। ভাইয়াকে কিছু করবেন নাহ।
এই তো গুড গার্ল। তুমি না অন্য সব মেয়েদের থেকে আলাদা। এই জন্যই তোমাকে আমার এতো ভালো লাগে। শুনো তিড়িং বিড়িং কিছু করার চেষ্টা করো না। তোমার ওপর আমার লোকেরা ২৪ ঘন্টা নজর রাখবে। তুমি কোনো ভুল করবা তো তোমার পরিবারের ক্ষতি হবে কণা পাখি। যাও এখন বাসায় চলে যাও। আমার লোকেরা তোমাকে তোমার বাসায় পৌছে দিবে।
২২
কণা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ল্যাম্প পোস্টের আলোয় রাতের ব্যস্ত শহর দেখছে। কণার রাতের শহর দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। আগে সে আর সাফাত তিশান আহম্মেদ ঘুমিয়ে পড়লে প্রায়ই বাইকে করে রাতের ঢাকা শহর দেখতে বের হতো। দুইজন এক সাথে হাঁটতে হাঁটতে আইসক্রিম খেতো। এখন তো এসব ধুলোময় স্মৃতি হয়ে গেছে। কণার ভাবনায় ছেদ ঘটে ফোনের শব্দে। কণা বেলকনি থেকে রুমে গিয়ে ফোনটা হাতে নেয়। ফোনের স্কিনে হিরো আলমের ছবি ঝলঝল করছে। কণার আর বুঝতে বেগ পেতে হয়ে না কে কল করেছে। কণা তাড়াতাড়ি কলটা রিসিভ করে।
কীরে হিরো আলমের এক্স ওয়াইফ কী খবর? হিরো আলম কেমন আছে?
অহি কপট রাগ দেখিয়ে বলে, একদম আমাকে হিরো আলমের এক্স ওয়াইফ বলবি না। তুই তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী হিরো আলমের এক্স ওয়াইফ।
লে টেপ রেকর্ডার স্টার্ট হয়ে গেছে।
অহি কণার কথায় অভিমানে গাল ফুলায়। মেয়েটা সব সময় তার সাথে এমন করে। সিরিয়াস কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য ফোন দিলেও এমন করে।
যা তোর সাথে আর কথা বলবো না। তোকে আর কোনোদিন ফোনও দিব না।
আরে রাগ করিস না। দুই দিন ধরে তোকে এমনিতেই ফোন পাচ্ছি না। আমার কতো টেনশন হচ্ছিল জানিস। আমি আর ঐশি তোকে অনেক বেশি মিস করি। আমরা তিন জন একসাথে থাকলে কতো ভালো হতো। কিন্তু তুই হুট করেই এখান থেকে চলে গেলি কাউকে কিছু না বলে। অন্য একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেলি।
অহি গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার চলে আসার কারণটা তো কাউকে বলা হয়নি। হয়তো কোনোদিন বলাও হবে না। নিজের মনের কথাগুলো নিজের বেস্টফ্রেন্ডের সাথেও শেয়ার করতে পারে না। মনের কথাগুলো যদি কণাকে বলে তাহলে অনেকগুলো সম্পর্ক এলোমেলো হয়ে যাবে। সব সম্পর্ক ছন্নছাড়া হয়ে যাবে।
এক তরফা ভালোবাসাগুলো অনেক কষ্টের। একজন শুধু নিরবে ভালোবেসেই যায় আর অপরজন সেই ভালোবাসার কথা কখনো জানতেই পারে না। আরেক দিকে এক তরফা ভালোবাসাগুলো অনেক আনন্দের। এক তরফা ভালোবাসায় না থাকে কোনো চাওয়া, না থাকে কোনো পাওয়া আর না কোনো চাহিদা। একজন শুধু নিরবে ভালোবাসা দিয়েই যায়।
২৩
কণা ৩০ মিনিটের মতো মর্নিং ওয়াক করে ডান্স ক্লাসে যায়। কণার নিজের একটা ডান্স স্কুল আছে। কণা নিজেই ছোট ছোট বাচ্চাদের ডান্স শেখাই। তার কাছে ১০ টা বাচ্চা ডান্স শিখতে আসে। সব বাচ্চারা কণা আপু বলতে পাগল। তারা এখনো কণাকে দেখে নাই। হয়তো দেখলে কণার কুৎসিত চেহেরা দেখে তারাও ভয় পেয়ে যেতো। এটা কণার ধারণা। এসব কথা ভেবে কণা মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।
এক ঘন্টার মতো ডান্স শিখিয়ে কণা বাসায় আসে। কলিংবেল বাজাতেই তিশান আহম্মেদ এসে দরজা খুলে দেন। কণা ড্রয়িংরুমে যেতেই অবাক হয়ে যায়। সোফায় বসে থাকা লোকটাকে দেখে সে চমকে ওঠে। এখন সে কী করবে? কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।
চলবে……….