#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৬৩ (দ্বিতীয় আংশ)
অর্ণব অন্তুকে আগলে নিয়ে ফ্লোরে বসে আছে। অন্তু তার বাবার সত্যি জেনে ভেঙ্গে পরে, তার বিশ্বাস হচ্ছে না তার আব্বু তার জীবন কে এভাবে নষ্ট করে দিলো শুধু নিজের সম্মান, আধিপত্য বিস্তার আর রাজনৈতিক ক্ষমতা জন্য। অর্ণব অন্তুকে বুঝাচ্ছে যাতে সে ভেঙে না পরে কিন্তু সে কিছুতেই বুঝতে চাচ্ছে না। এদিকে বাড়ির সবাই এই সত্যি জেনে হতভাগ্য তার সব সময় আজাদ মির্জাকে ভালো মানুষ হিসেবে চিনতো, কিন্তু তার ভেতরে যে এতোটা জঘন্য মানুষ লুকিয়ে ছিলো তারা জানতো না কেউ। দিদুন সোফাতে বসে আছে তার ছেলের কু-কর্মের কথা আয়ানের কাছ থেকে জেনেছে, তার শিক্ষা দিক্ষা সব তার ছেলে জলাঞ্জলি দিয়েছে শুধু টাকা, ক্ষমতার লোভে নেশায় সব ভুলে গেলো। আকাশ সব শুনে বললো….
আকাশঃ এসব কি বলছো কি তোমরা আমার ভাইজান এমন কিছু করতে পারে না। তিনি অনেক ভালো মানুষ, তিনি আমাদের সব ছেলেমেয়েকে ভালোবাসে। সে কেন তার মেয়ের জীবন নষ্ট করবে?
আকাশের কথা শুনে নিহিতার মনে পরে অরনির বিয়ের কথা তিনি নিজের স্বার্থের জন্যই তো বিয়েটা দিতে চেয়েছিলেন তাও তাকে লোভ দেখিয়ে। তাইলে কেন তিনি তার মেয়ের জীবন নষ্ট করতে পারে না তিনি সব করতে পারে। আয়ান একবার অন্তুকে দেখে তার বাবার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো…
আয়ানঃ আব্বু তুমি তো এখনো আজাদ মির্জা একটা সত্যি জেনেছো কিন্তু তিনি আরো কি কি করতে পারে আর না পারে সেটা আমার থেকে কেউ ভালো জানে না। উনি কতটা নিচু প্রকৃতির মানুষ সেটা তোমরা জানো না। এখানে উপস্থিত সবার জীবন সে নষ্ট করেছে, কাউকে বাদ দেয়নি তিনি। উনার রাস্তায় যে এসেছে তাকে মেরে ফেলতেও তিনি এক বার ভাবেনি।
আয়ানের কথায় সবাই চমকে যায়। আয়ান আজাদ মির্জা বিষয়ে অনেক কিছু জানে সেটা আদি, আদিবা, অর্ণব, প্রাপ্য জানে না। বাড়ির সবাই আয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে। অন্তু আয়ানকে বলে…
অন্তুঃ তিনি আর কার কার জীবন নিয়ে খেলেছে ভাইয়ু…
অন্তুর ভাইয়ু ডাকে আয়ান স্তব্ধ হয়ে যায়, তার চোখের কোণে জল ছলছল করছে। আজ এতো গুলো বছর পর সেই আদুরে ডাক ‘ভাইয়ু’ অন্তু মন থেকে বলেছে। বাড়ির সবাই এতো কষ্টের মাঝেও একটু সুখ অনুভব করলো। অন্তু যে আয়ানকে মন থেকে ভাইয়ু ডেকেছে এতে বোঝা যাচ্ছে সে আয়ানকে ক্ষমা করে দিয়েছে, আয়ান অন্তু দিকে তাকায় অন্তু তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আয়ান অন্তুর মন বুঝছে অন্তু মনে তার সাথে করা খারাপ ব্যবহারের জন্য সে অনুতপ্ত, আয়ান মুচকি হাসে তার বোনু আগের মতো হয়েছে ভেবেই সে খুশি। আয়রা আয়ানের কাছে এসে তার হাত ধরলে আয়ান তার দিকে তাকায়, আয়রা আয়ানের চোখে খুশি দেখতে পায়, সেও খুশি আয়ানকে খুশি দেখে। আদি আয়ানকে বললো….
আদিঃ আয়ান আব্বু আর কি করেছে আমাদের সবার সাথে একটু খুলে বল….
আয়ান আজ তার মনে মধ্যে দাবিয়ে রাখা সব সত্যি বলবে। এতো দিন যা নিজের মধ্যে রেখেছে সে আজ সবাইকে সবটা বলবে, এতে যা হবার হবে। আয়ান দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলতে লাগলো….
আয়ানঃ কোথা থেকে শুরু করবো বুঝছি না, তোমরা সবাই জানো আজাদ মির্জা রাজনীতি করে কিন্তু সেটা তোমাদের ভুল ধারণা, তিনি রাজনীতির আরালে তার কালো ব্যবসা চালায়। তিনি নারী পাচারকারী চক্রের লিডার, তিনি বিভিন্ন প্রকার নেশাক্ত দ্রব্যের কালোবাজারে যুক্ত। তিনি অনেক খুন- হাজারি, কালো ব্যবসা, সব কাজ করেন। তিনি সবার সামনে ভালো মানুষ কিন্তু সবার পেছনে খারাপ।
আয়ানের কথা শুনে সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়, বিমূঢ়, হতভম্ব। তাদের সবার এই সত্যি মানতে কষ্টকর হচ্ছে, আজাদ মির্জা যে এতোটা খারাপ ভাবতেও পারেনি তারা। আয়ান আবার বলো….
আয়ানঃ তোমরা তো সবাই আয়রার থেকে জানলে অন্তুর সাথে কি হয়েছে। এখন আসি রোদের বিষয়ে, তোমরা যাকে রোদ জানো সে আসলে অর্ণব। সেই অর্ণব যাকে অন্তু ভালোবাসে, আর আনভি হলো অন্তু অর্ণবের মেয়ে যাকে সবাই জেনে এসেছো সে মারা গেয়েছে কিন্তু না সে মারা যায়নি। আজাদ মির্জা তাকেও মারতে চেয়েছিলো কিন্তু সঠিক সময় দিদুন আনভিকে অর্ণবের হাতে দিয়ে দেয় তাই সে বেঁচে আছে।
আয়ানের কথা শুনে অন্তু কেঁপে ওঠে তার বাবা তার মেয়েকেও মারতে চেয়েছিলো। অন্তু চোখ থেকে অঝরে জল পরছে, অর্ণব অন্তুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অন্তু এখন বুঝতে পারছে অর্ণব কেন তাকে রেখে আনভিকে নিয়ে গিয়েছিলো আর কেন তাকে তার মেয়ের মৃত্যু খবর দিয়েছে, সে এটাও বুঝলো কেন অর্ণব তাকে নিজের থেকে দূরে রেখেছিলো, কেন তাকে কষ্ট পেতে দিলো, অন্তু অর্ণবের দিকে তাকেয়ে থাকে অন্তুর তাকানো মানে বুঝে অর্ণব মলিন হেসে তাকে আশ্বস্ত করে সে কিছু মনে করে নি। আয়ান আদির কাছে এসে তাকে বললো….
আয়ানঃ দাদাভাই তোমার কখনো মনে হয়নি আদিবা ভাবি কেন তোমার থেকে দূরে দূরে থাকতো? কেন সব সময় নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলো? কেন নুপুর তোমার সাথে ভালো করে কথা বলে না? যে মেয়ে তোমাকে ভালোবাসতো কিন্তু হঠাৎ এতোটা পাল্টে গেলো কেন।
আদি আয়ানের কথা ভ্রু কুচকায়, আয়ানের কথা যা বলেছে সে আগেও ভেবেছে কিন্তু সে এটা বুঝতে পারছে না তার বিয়ের কথা সে কাউকে বলেনি তাইলে আয়ান কি করে জানলো। এদিকে আদিবা ঘাবড়ে যায় আয়ানের কথায়, সে বুঝতে পারচ্ছে আয়ান আদিকে সব এখন বলে দেবে তাই সে আয়ানকে ইশারায় বলতে না করছে কিন্তু আয়ান সেদিকে তাকায় না সে বলো….
আয়ানঃ তুই হয়তো এটা ভাবছিস আমি কি করে তোদের বিয়ের কথা জানলাম তাইলে বলছি। তুই চলে যাবার ১ বছর পর বড় আব্বু হঠাৎ তোর রুমে কি যেনোও খুজতে গিয়েছিলো কিন্তু সেটা না পেয়ে পায় তোদের কাবিননামা। সেটা দেখে তিনি রেগে যায় কিন্তু পরে তিনি অর্ণবের সাথে যা করে তাই আদিবার সাথে করার চেষ্টা করে, প্রথমে আদিবার পরিবারে ওপর ছোট্ট ছোট্ট অন্যায় শুরু করে কিন্তু তাতেও কিছু না হলে নুপুরকে কিডনেপ করে আদিবাকে ভয় দেখায় যে তোমাকে ছেড়ে দেয় আর সেটা সে মানে না, তখন আদিবাকে নুপুরের সামনে আজাদ মির্জা লোকেরা বাজে ভাবে টাচ করে আর ভিডিও করে। লোকগুলোর উদ্দেশ্য ছিলো আদিবাকে ভয় দেখানো আর তোমার থেকে দূরে রাখা এর বেশি কিছু না, আদিবা ও তাই মেনে নেই তার সম্মান বাঁচানোর জন্য। এতো দিন শুধু তোমার কাছ থেকে এই জন্য দূরে থাকতো সে এটা ভাবতো ভিডিওটা তুমি যদি দেখো তাইলে তাকে তুমি ভুল বুঝিয়ে তাই। আর তোর কাছে এখন যে আদিবা আছে তার মনে কোনো ভয় নেই কেননা তার ভিডিওটা এখন আর আজাদ মির্জা কাছে নেই সেটা এখন আদিবার কাছে আছে…
আয়ান তার কথা বলে সেরে আসে সেখান থেকে। এদিকে আদিবা ফুপিয়ে কাদচ্ছে, আদি রক্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার ভাবতে কষ্ট হচ্ছে আদিবা তাকে এতোটা নিচু মনের মানুষ ভাবে সামান্য একটা ভিডিওর কারনে সে তাকে ছেড়ে দেবে।
আদিঃ আদিবা আয়ান যা বললো তা কি সব সত্যি বলছে। কি হলো বললো আমি তোমার মুখ থেকে জানতে চায় সব সত্যি না-কি।
আদিবা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে তা দেখে আদি দু-কদম পিছিয়ে যায় তার ভাবতেই ঘেন্না লাগছে তার বাবা কতোটা নিচু। আদিবা আদির দিকে হাত বাড়াতে গেলে সে হাত দিয়ে তাকে না করে বলে…
আদিঃ তুমি আমাকে এতোটা নিচু মনে করো যে সামান্য একটা ভিডিও জন্য আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো। এটা তুমি ভাবলে কি করে আদিবা, একটা বার আমাকে বলতে তোমার সাথে আব্বু এটা করেছে তাইলে আমি আগেই সব ঠিক করে দিতাম।
আদিবা কান্না করতে করতে বললো… আদি আমার কথাটা তো শোনো…
আদিবাকে কিছু না বলতে দিয়ে আদি বললো… যা শোনার বোঝার পরে হবে আগে আনভিকে পেয়ে নিই তারপর তোমার ব্যবস্থা করবো।
আদিবা কিছু বলো না সে জানে আদি এখন রেগে আছে, রাগ পরে গেলে ঠিক আদি তাকে বুঝবে। আদি আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো… আর কি কি করেছে আব্বু..
আয়ান সবাইকে দেখে বললো… বড়ো আম্মু যে মারা যায় সেটা কি ভাবে মারা যায় তোমরা সঠিক কারন জানো?
আয়ানের কথায় সবাই চমকে যায়, কেননা অন্তুর মা এক্সিডেন্টে মারা যায়। তার মৃত্যু নিয়ে তো কখনো কেউ কিছু সন্দেহ করে নি সেটা নরমাল মৃত্যু ভেবে নিয়েছিলো সবাই তাইলে আয়ান আজ কেন তার মৃত্যু কথা তুলছে না-কি এর মধ্যেও কিছু রহস্য আছে। দিদুন বললো…
দিদুনঃ বড়ো বৌমার তো এক্সিডেন্টে মারা যায় তার মৃত্যু নিয়ে তো কোনো সন্দেহ করার কথা না…
আয়ানঃ কে বলেছে বড়ো আম্মু এক্সিডেন্টে মারা গেছে..
আদিঃ আয়ান কি সব বলছিস আমি তখন যথেষ্ট বড় ছিলাম যখন আম্মু এক্সিডেন্টে মারা যায়।
আয়ানঃ হ্যাঁ আমি জনি তুমি বড় ছিলে কিন্তু আমিও কিন্তু ছোট ছিলাম না আমার বোঝার ক্ষমতা ছিলো বড়ো আম্মু সাথে কি হয়েছিলো আমি কিন্তু সব বুঝতে পারছিলাম কিন্তু কউকে বলতে পারিনি। কিন্তু সেটার প্রমাণ আমি পরে পেয়েছিলাম কিন্তু তখন কাউকে বলিনি।
অন্তুঃ আ আম্মু এক্সিডেন্টে হয়নি তো কি হয়েছিলো তার সাথে।
আয়ানঃ বড়ো আম্মুকে আজাদ মির্জা মেরে ফেলে…
আয়ানের কথা মির্জা বাড়ির সবার ওপর আকাশ ভেঙ্গে পরে। তাদের কখনো মনে হয়নি অন্তুর মাকে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে মারা হয়েছে। তিনি তো কিছু কাজের জন্য বাড়ির বাইয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু মাঝে রাস্তায় তার গাড়িকে একটা ট্রাক ধাক্কা মারে তিনি সেখানেই মারা যান। আদি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো…
আদিঃ আ আব্বু আম্মুকে কে কেন মারতে যাবে। তিনি তো আম্মুকে ভালোবাসতেন
আয়ানঃ আজাদ মির্জা কাউকে ভালোবাসে না তিনি শুধু নিজেকে ভালোবাসেন। বড়ো আম্মু আজাদ মির্জা সব কালো ব্যবসার কাজ সম্পর্কে জেনে যায় তাও প্রমান সহকারে। সেটা আজাদ মির্জা জেনে যায়, বড়ো আম্মু আজাদ মির্জাকে বোঝায় এই পাপের পথ থেকে সরে আসার জন্য কিন্তু সে আসে না। তাই বড়ো আম্মু সব প্রমার তার এক ফ্রেন্ডকে দিয়ে দেয় তিনি ছিলেন একজন সৎবান রিপোর্টার। সেটা আজাদ মির্জা যেনে যায় তাই বড়ো আম্মুকে সেদিন মেরে ফেলে আর তার মৃত্যু এক্সিডেন্টের নাম দিয়ে দেয়।
আয়ানের কথা শুনে বাড়ির সবাই হতবিহ্বল হয় যায় একে পর এক এমন এমন সত্যি বেরিয় আসছে তার সেটা কখনো পরিকল্পনা ও করতে পারেনি। অন্তু জোরে জোরে কান্না করতে লাগলো সে তার মাকে বেশি পায়নি সে তখন মাত্র ৪বছর বয়স তখন তার মা মারা যায়। আদি অন্তুর কান্না শুনে তার কাছে গেলে অন্তু তাকে ধরলে অন্তু কান্না করতে করতে বললো…
অন্তুঃ দাদাভাই উনি আমাদের আম্মুকে ও মেরে ফেলো। আমাকে আম্মু আদর থেকে বঞ্চিত করলো, আামাদের মা হারা করলো শুধু টাকার জন্য উনি কতটা নিকৃষ্ট ব্যাক্তি। ছি আব্বু বলতেও ঘেন্না লাগছে আমার…
আদি তার বোনকে কি সামলাবে সে তো নিজে নিজের মধ্যে নেয় তার আম্মুকে কতটা কষ্ট দিয়ে মেরেছে তার আব্বু, সেটা ভাবতেই বুক কেঁপে ওঠে। আকাশ বললো…
আকাশঃ তুমি এতো সব কি করে জানলে আয়ান। তুমি তো তখন মাত্র ৭বছর বয়স আর আদি ১০ তাইলে কি করে এতো সব জানলে তুমি।
আয়ানঃ হ্যাঁ আমার বয়স ছোট ছিলো কিন্তু আমি সবটা বুঝতাম। যে দিন বড়ে আম্মু মারা যায় তার ২ দিন আগে আমি, দাদাভাই অন্তু খেলছিলাম। খেলতে খেলতে আমি বড়ো আম্মু রুমে গেলে দেখে আজাদ মির্জা বড়ো আম্মু গলা চেপে ধরে তার ফ্রেন্ড কে সেটা বলতে বলছে আর বড়ো আম্মু সেটা বলছে না। আমি সেটা দেখে ভয়ে দরজার আরালে লুকিয়ে পরি তারপর তাদের সব কথা আমার কানে আসে, আজাদ মির্জা বড়ো আম্মু ছেড়ে দিয়ে বার বার একটা ফাইলে কথা বলছে কিন্তু বড়ো আম্মু কিছুতে সেটা বলছিলো না সেটা কথায়। তারপর আজাদ মির্জা বলে বড়ো আম্মুকে আর তার ফ্রেন্ডকে সে মেরে ফেলবে কিন্তু বড়ো আম্মু তাও বলে না আজাদ মির্জা রেগে চলে যায়। আমি সবটা দেখেছিলাম আজাদ মির্জা চলে যাবার পরে বড়ো আম্মু কাউকে ফোনে বলে ফাইলটা পুলিশকে দিয়ে দিতে আজাদ মির্জা সব জেনে গেছে আর সে পরশু গিয়ে কেস করে আসবে পুলিশ স্টেশনে। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম কাউকে কিছু বলতে পারিনি, যদি সেদিন বলে দিতাম তাইলে হয়তো বড়ো আম্মু আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকতো আর না এসব হতো। আজাদ মির্জা তার পাপের সাজা আগেই পেয়ে যেতো। সরি অন্তু সরি দাদাভাই…
বলে কান্না করতে লাগে আয়ান। আদি আয়ানের কথা শুনে অন্তুকে ছেড়ে আয়ানের কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগে। সবার চোখে জল, আজাদ মির্জা না জানি আরো কার কার প্রান নিয়েছে কে জানে। আয়ান আদিকে ছেড়ে নিহিতা মির্জার কাছে এসে বললো…
আয়ানঃ আম্মু তুমি বার বার প্রশ্ন করতে না আয়রাকে নিয়ে তার জন্মপরিচয় নিয়ে তুমি কি জানো ও কার মেয়ে ওর বংস পরিচয় কি সে কোন পরিবারের মেয়ে। তার মা বাবাকে…
নিহিতা মির্জা আয়ানের কথা শুনে আয়রা দিকে একবার তাকায় মেয়েটার মুখ শুকিয়ে গেছে কথাটা শুনে, তিনি আবার আয়ানের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে সে কি বলবে। আয়ান বললো…
আয়ানঃ আমি বলছি তোমাকে সত্যি। বড়ো আম্মু যে রিপোর্টার ফ্রেন্ডের কাছে আজাদ মির্জা কালো ব্যবসার প্রমানের ফাইলটা দিয়ে ছিলো সেই হাসেম তাদুকদারে মেয়ে হলো আয়রা। আয়রা আরো একটা পরিচয় আছে সেটা আমি ও আগে জানতাম না যখন আয়রা বাবার ছবি দেখি আমি তখন আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি এটা কি ভাবে সম্ভব। জানো আয়রার বাবার ছবিতে কি দেখেছিলাম আমি।
নিহিতা মির্জা মাথা নাড়িয়ে তাকে বলতে বলে। আয়ান মুচকি হেসে বললো… আয়রার বাবার ছবিটা ছিলো আমার বড় মামুর ছবি মানে জাহেদ তালুকদারের ছবি। মানে তোমার ভাই জাহেদ তালুকদার, তালুকদার বংসের বড় ছেলে আমার নানুর বড় ছেলে।
আয়ানের কথা শুনে নিহিতা মির্জা হতভম্ব হয়ে যায়, জাহেদ তালুকদার মানে তার ভাই, আয়রা তার ভাইয়ে মেয়ে কিন্তু সেটা কি ভাবে সম্ভব তার বাবার নাম তো হাসেম তালুকদার। আয়ান তার মাকে দেখে বললো…
আয়ানঃ বুঝতে পারছো না তো ঠিক আছে আমি বলছি। মামু ভালোবেসে মামিকে বিয়ে করে সেটা নানু মেনে নেইনি তাই তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মামু মামিকে নিয়ে চলে যায় তখন আমি ১বছর বয়সের বেশি হবো মনে হয়, এই কাহিনী নানি আমাকে বলেছিলো আর মামুর ছবি ও দেখায়। আমি আয়রাকে যখন ওর মামার বাড়ি থেকে নিয়ে আসি তখন তার বাবা-মা ছবি সে নিয়ে আসে সেখান থেকে ছবিটা দেখি আমি, ছবিটা দেখে আমি আয়রাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে জাহেদ তালুকদার তার বাবা। আমি তখন কিছু বলতে পরিনি বা বলার মতো ছিলাম না, তারপর আমি নিজে খোজ নিয়ে জানতে পারি মামু নিজের নাম পাল্টিয়ে রিপোর্টারের জব করে আর বড়ো আম্মু ফ্রেন্ড ছিলো আর তার কাছে ওই ফাইটা ছিলো। আয়রাকে ফাইলটা কথা বলে সে আমাকে বলে তার বাবা তাকে একটা ফাইল যত্ন করে রাখতে বলেছিলো সে সেটা রেখে দেয় তারপর আয়রা ফাইলটা আমাকে দেয় যখানে সব প্রমান ছিলো আজাদ মির্জা কাজের।
নিহিতাঃ আয়ান আমার ভাই কোথায়…
কান্না করে বলো তিনি, আয়রা কান্না করছে তার বাবার জন্য। আয়ান শান্ত স্বরে বললো… মামুকে আজাদ মির্জা বড়ো আম্মু মতো এক্সিডেন্ট করিয়ে মেরে ফেলেছে সাথে মামি ও ছিলো…
আয়ানের কথায় নিহিতা মির্জা কান্না করতে থাকে এতো বছর পর তার ভাইয়ের কথা জানতে পেরেও তার ভাইয়ের মৃত্যু কথা জানতে হলো ভেবেই তার কষ্ট দ্বিগুন হতে লাগলো। আয়রা ধীরে পায়ে নিহিতা মির্জা কাছে এসে বলো… ফুপি আব্বু তোমাকে অনেক মিস করতো আমাকে বলতো তার বোন তার নেউটা ছিলো কিন্তু এখন আর তার ভাইয়ে খোজ নেই না সে তার সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আব্বু তোমাকে অনেক ভালোবাসতো ফুপি…
নিহিতা মির্জা আয়রার কথা শুনে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। আয়ান তাদের দেখে মনে মনে বলে.. আয়রা তোমার পরিবারকে আমি ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম না দেখো আজ সেটা হলো। আম্মু তোমাকে এখনে তার মেয়ের মতো রাখবে আর কষ্ট পেতে দেবে না……
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৬৪
আজ নিহিতা মির্জা তার করা অন্যায়, পাপ সব কিছু তার চোখের সামনে ভেসে আসছে। আয়রার প্রতি তার সব অন্যায় আজ তার গায়ে কাটার মতো বিধছে, তার বার বার আয়রাকে তার জন্মপরিচয় নিয়ে যে কথাগুলো বলেছে সেই সব তার মনে পরছে। তিনি কি করে আয়রা সময়নে দাড়াবে ভাবতেই বুকটা কেঁপে ওঠছে, এদিকে আয়রা নিহিতা মির্জাকে ধরে কান্না করেছে। বাড়ির সবাই তাদেরকে দেখছে, নিহিতা মির্জা আয়রাকে ছেড়ে বললো…
নিহিতাঃ আমাকে ক্ষমা করে দে মা। আমি তোরকে জেনে বুঝে অনেক কষ্ট দিয়েছি পারলে ক্ষমা করে দিস এই ফুপিকে।
আয়রাঃ ফুপি তুমি তো জানতে না আমি কে তাই তুমি ওসব করেছো। এই যে তুমি ভালোবাসে আমাকে জড়িয়ে ধরে মা বলে এতে আমি খুশি সত্যি আমি তো শুধু এইটুকু চাইতাম সব সময়। তুমি কান্না করো না..
নিহিতা মির্জা আয়রার কথায় আয়রাকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে চুমু দিলো। আয়রা আজ সত্যি ভীষণ খুশি যে সে তার মা আর ফুপি দু’জনকেই পেয়েছে এসব হয়েছে আয়ানের জন্য। সে আগে এই সত্যি জানতো না আয়ান তার বাবার ছবি দেখার পর তাকে সব সত্যি বলে, তখন সে অনেক খুশি হয় কেননা তার বাবা শুধু তার ফুপির কথা বলতো তাই তাকে দেখতে, তার আদর নিতে ইচ্ছে করতো। কিন্তু তার ফুপি তো তাদের সম্পর্কে কিছু জানতোই না কিন্তু আজ সব ঠিক হয় গেছে। আয়ান তাদের দেখে চোখের জল মুখে বলো..
আয়ানঃ আজাদ মির্জা শুধু আমার মামা, বড় আম্মুকে মারেনি আরো একজনকে ও মেরেছে। যাকে মেরেছে তার কাছ থেকেও তার পরিবারকে ছিনিয়ে নিয়েছে সব সুখ।
আয়ানের কথা শুনে সবাই তার দিকে তাকায়। অর্ণব আয়ানকে বললো… তুমি তো আমাকে এসব আগে বলো নি। তুমি এতো সব সত্যি তুমি কি করে যানলে আর আজাদ মির্জা আর কাকে মেরেছে।
আয়ান স্মিত হেসে বললো… আমি অনেক কিছু জানি সেটা তুমি তো যানো না আর বাকিরা ও, কারন আমি কাউকে কিছু বলিনি।
আদিঃ আয়ান আর কি সত্যি আছে বল…
আয়ানঃ আজাদ মির্জা সত্যি মামু একজন সৎ পুলিশের কাছে বলে এবং প্রমান ও দেখায়। এটা আজাদ মির্জা মামুকে মারার সময় জানতে পারে, তাই সে তাকেউ মেরে ফেলে। আর ওই পুলিশ অফিসারের নাম হলো আবিদ চৌধুরী।
আয়ানের কথায় প্রাপ্য চমকে উঠে, সে তার বড় আব্বুর নাম আয়ানের মুখে শুনে হতভাগ্য, বিমূঢ়। আয়ান প্রাপ্য কে চমকাতে দেখে বললো…
আয়ানঃ প্রাপ্য নামটা কার তুমি নিশ্চিয় যানো..
প্রাপ্যঃ হ্যাঁ জানি আবিদ চৌধুরী আমার বড় আব্বু আর রোদ ভাইয়ার বাবা ছিলেন..
প্রাপ্য কথা সবাই বিহ্বলিত, বিস্মিত, অবাক তার কেউ যানতো না প্রাপ্য কোন চাচা ছিলো। অর্ণব প্রাপ্য কে বলে…
অর্ণবঃ প্রাপ্য আমি তো কিছু বুঝছি না কি সব বলছিস এসব। আর রোদ তো তোর ভাই আর বাবাইর ছেলে তাইলে সে কি করে আবিদ চৌধুরী ছেলে হয়। আমি এতোগুলো বছর ওখানে ছিলাম কখনো তো এই সত্যি বলিস নি আমাকে।
প্রাপ্যঃ অর্ণব ভাইয়া এটা সত্যি তোমাকে কিছু বলিনি কারন বাবাই কখনো রোদ ভাইয়াকে তার বড় ভাইয়ের ছেলে মনে করেনি তিনি সর্বদা নিজের ছেলে মনে করেছে আর আমি তাকে নিজের ভাই মনে করেছি। আর তুমি হয়তো আমাদের বাড়ি দেখেছো কোথাও বড় আম্মু আর বড় আব্বু ছবি নেয় কারন রোদ ভাইয়া তাদের কে দেখলে হাইপার হয়ে যেতো তাই তাদের ছবি রাখা হয়নি। কারন ভাইয়া তার চোখের সামনে তার বাবা, মা আর ভাইকে মরতে দেখেছে আর তখন থেকে তিনি ডিপ্রেশনে চলে যায় তাকে বাঁচাতে বাবা তার ভাই ভাবির ছবি সরিয়ে দেয়। আমি তখন ছোট ছিলাম শুধু জানতাম বড় আব্বুর পোস্টিং চট্টগ্রাম হয়েছিলো তাই তারা সেখানে যাচ্ছিলো, তখন তাদের সাথে এই ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরে বাবাই আমাকে সত্যি বলে আমি জানতাম বড় আব্বুকে জঙ্গি হামলায় মারা গেছে, বড় আব্বু ভালো পুলিশ অফিসারের ছিলেন তাই তারকে জঙ্গিরা মেরে ফেলে সাথে বড় আম্মু আর রোদ্দুর ভাইয়াকেও।
প্রাপ্য কথা শুনে সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় বিস্ময়, অর্ণবের মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে সব। আয়ান প্রাপ্য কথা শুনে তাকে বললো…
আয়ানঃ তোমার বড় আব্বুকে এমন ভাবে মারা হয় যাতে সবাই বুঝতে পারে সেটা কোনো জঙ্গি হামলা কিন্তু তাকে আজাদ মির্জা লোকেরাই মারেছে তেনার নিদেশে। কিন্তু তোমাদের হয়তো একটু ভুল ধারনা আছে সেই দিনের ঘটনা নিয়ে, সেদিন সেখানে শুধু তোমার বড়ো আব্বু আর আম্মু মারা যায় রোদ্দুর মারা যাইনি।
আয়ানের কথায় প্রাপ্য বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে বললো… মানে কি সব বলছেন ভাইয়া আপনি। রোদ ভাই আমাদের বলেছিলো রোদ্দুর ভাইয়া গাড়ি থেকে পরে মারা যায়। কিন্তু তার লাশ আমরা পায়নি শুধু বড় আব্বু আর আম্মু লাশ পায়।
আয়ানঃ ঠিক ধরেছো লাশ পাওনি কেননা তোমার রোদ্দুর ভাইয়া মরেনি সে বেঁচে আছে। সেদিন তোমার বড় আব্বু হয়তো জানতে পেরে গিয়েছিলো তার সাথে কি হতে চলছে। তাই তিনি রোদ আর রোদ্দুরকে একটা ট্রাকে সুযোগ বুঝে উঠেয়ে দেয় কিন্তু তারপরে তাকে গুলি করে মারা হয় সেটা দেখে রোদ্দুর তার কাছে আবার জন্য চলন্ত গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে রাস্তায় পরে সে গড়ে পাহাড় ধারে গিয়ে আটকে থাকে। আর রোদ তার ভাইকে আর বাবা মাকে এভাবে মরতে দেখে সেই গাড়িতেই অজ্ঞান হয়ে যায়, যখন জ্ঞান ফেরে তখন তোমার আব্বুকে এসব বলে। তোমার আব্বু তখন তার ভাই ভাবির হারিশে সর্বশান্তো হয়ে যায় আর রোদ্দুর কে তিনি খুজতেন কিন্তু রোদের আবস্থা দেখে তা হয় নি। যদি ভালো করে খুঁজতে তাইলে হয়তো ২০ বছর আগে খুজে পেতে এখন পেতে না…
আয়ানের কথায় প্রাপ্য চোখ বড় বড় করে বললো… ২০বছর আগে খুজে পেতে এখন পেতে না মানে কি ভাইয়া…
আয়ানঃ মানে এই যে তোমার রোদ্দুর ভাইয়াকে আগে পেতে এখন তোমার রোদ্দুর ভাইকে পেতে না আর না তাকে কাছে নিয়ে রাখতে তোমরা।
প্রাপ্য কাঁপা কাঁপা গলায় বলো… কাছে রেখেছি মানে কি ভাইয়া। আমরা কোথায় রোদ্দুর ভাইয়াকে কাছে রেখেছি।
আয়ান কোনো ভঙ্গিতা না করে সোজা সুজি বললো… তোমরা যাকে অর্ণব বলে নিজেদের কাছে রেখেছো তার আসল পরিচয় তোমরা কেউ জানো। মানে তার বাবাকে, মা, কে সে কোথা থেকে এসেছে এসব কিছু জানো।
আয়ানের কথায় বাড়ির সবাই নিরাবতা পালন করে এমনকি অন্তুও সে জানে না অর্ণবের আসল পরিচায় কি, সে শুধু জানে অর্ণবকে তার মাদার চট্টগ্রামের রাস্তা থেকে কুরিয়ে পেয়েছিলো তাও রক্তাক্ত আবস্থাতে। অর্ণব আয়ানের কথা শুনে বললো…
অর্ণবঃ আয়ান এখানে আমার কথা কেন আসছে আমার সত্যি নিয়ে তোমার কি কাজ। আর আমি জানি না আমি কে, কে আমার বাবা-মা, জানি না আমার আসল পরিচয়। আমি শুধু জানি আমাকে আমার অনাথ আশ্রমের মাদার আমাকে কুরিয়ে পেয়েছে আর আমি অর্ণব আহামেদ এটাই সত্যি আর কোনো পরিচয় আমার লাগবে না।
আয়ানঃ তোমার না লাগলেও প্রাপ্য লাগবে তার বাবার লাগবে তাই তুমি চুপ থাকো। আর প্রাপ্য তোমার রোদ্দুর ভাইয়া আর কেউ না তোমাদের বাড়িতে যে থাকে, যাকে তুমি ভাইয়া বলে ডাকো, সেই অর্ণব আহামেদ ওরফে রোদ্দুর চৌধুরী। যে ২০বছর আগে চট্টগ্রামের পাহাড়ে পরে যায় যাকে তোমারা মৃত ভাবতে সেই রোদ্দুর চৌধুরী আর কেউ না অর্ণব নিজে…
আয়ানের কথায় অর্ণব থমকে যায়, প্রাপ্য বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে অর্ণবের দিকে। উপস্থিত সবাই এই সত্যি শুনে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয় দাড়িয়ে থাকে, তাদের সব কথা কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। আয়ান সবাইকে এভাবে দেখে বুঝতে পারে কেউ বিশ্বাস করে নি তাই সে বললো…
আয়ানঃ যদি আমার কথা তোমাদের বিশ্বাস না হয় তাইলে আমি প্রমান করতে পারি। আমি নিজে অর্ণবের মাদারের সাথে কথা বলেছি, তিনি আমাকে বলেছে তিনি কি ভাবে অর্ণবকে পেয়েছে আর তার গলায় একটা লকেটো ছিলো যেটা তিনি অর্ণবকে তখন দেননি তিনি মনে করেছিলেন তিনি নিজে অর্ণবের আসল পরিচয় খুজতে পারবেন তাই সেটা অর্ণবকে দেন নি কিন্তু সে খুজতে পারেনি তার পরিচয়। আমি সেই লকেটা নিজের কাছে নিয়ে রেখেছি মনে করেছিলাম অর্ণবকে ধরে সুস্থে সবটা বলবো কিন্তু এভাবে বলতে হবে বুঝিনি। দাড়াও আমি লকেটা নিয়ে আসছি।
বলে দৌড়ে তার রুমে চলে যায়। এদিকে সবাই আয়ানের কথা শুনে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে থাকে, প্রাপ্য ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে তার ভাইয়ের দিকে যদি এই কথা সত্যি হয় তাইলে সে তার হারানো ভাইকে ফিরে পাবে তার বাবা তার ভাইয়ের অংশকে ফিরে পাবে। এদিকে অর্ণব সব শুনে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে তার মাথায় আয়ানের সব কথা যেন গোল পাকছে কিন্তু সমাধান পাচ্ছে না কিছুতেই সে, অন্ত তার অবস্থা বুঝে তাকে চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করে কিছু হবে না সে আছে তার সাথে। আয়ানে লকেটা নিয়ে এসে প্রাপ্য হাতে দেয়, সেই লকেটা দেখে সে চমকে যায় তার কাছে সব কিছু এখন জলের মতো পরিস্কার অর্ণব তার ভাই রোদ্দুর চৌধুরী। কেননা আয়ান যে লকেটা তাকে দিয়েছে সেটা তার মা তাদের ৩ভাইকে দিয়েছিলো তার শেষ স্মৃতি হিসেবে তার মৃত্যুর আগে। অর্ণব প্রাপ্য চোখেমুখে কিছু পাবার তীব্র খুশি দেখতে পারছে, মনে হচ্ছে কতো বছর পরে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিসটা হঠাৎ সে পেয়েছে। অর্ণবের বুঝতে বাকি নেয় আয়ান যা বলছে সব সত্যি, অর্ণব অন্তুর হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগে। অন্তু তার হাত ধরে তাকে শান্ত করছে, প্রাপ্য দৌড়ে গিয়ে অর্ণব জড়িয়ে ধরে বললো….
প্রাপ্যঃ রোদ্দুর ভাইয়া তুই বেঁচে আছিস আ..আমি বিশ্বাস করতে পারছি না ভাইয়া। তোকে কোথায় কোথায় না খুঁজেছি আমরা সবাই, রোদ ভাইয়া তোর মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ি করতো কারন বড় আব্বু তোকে তার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলো সে যেনো তোর খেয়াল রাখে কিন্তু সে তা করতে পারেনি তাই সে ডিপ্রেশনে চলে যায়। বাবা যদি জানে তুমি সেই হারিয়ে যাবা রোদ্দুর তাইলে সে অনেক খুশি হবে। আমাদের আগে থেকে তোর প্রতি টান অনুভব হতো কিন্তু কেন হতো আজ বুঝছি তুমি আমার রোদ্দুর ভাইয়া বলে…
বলে কান্না করতে লাগে অর্ণব স্তব্ধ হয় শুধু শুনছে কিছু বলছে না। আজ সে তার জীবনের সব চেয়ে বড় সত্যি মুখ মুখি হয়েছে। সে তার পরিচয় জানতে পেরেছে সে আজ খুশি কিন্তু সে এটাও জানতে পেরেছে তার বাবা, মা, ভাই কেউ বেঁচে নেই সে আবার অনাথ হয়ে গেলো ভাবতেই কান্না পাছে তার। কিন্তু না সে এখানো অনাথ হয়নি তার ভাই আছে বাবাই আছে, তাদের নিয়ে তার পরিবার। অর্ণব প্রাপ্য কে জড়িয়ে ধরে থাকে কিছু বলে না। আজ এতো বছর পর সে তার পরিচায়ের সাথে তার পরিবার পেয়েছে ভালো লাগা ভালোবাসার সম্পর্ক পেয়েছে তার কি চায় আর। সবাই তাদের দেখে তৃপ্তি পায়, আদি আয়নকে বললো…
আদিঃ তুই এতো সব জানলি কি করে আয়ান?
আয়ানঃ আমি এসব জানার ইচ্ছে বা আগ্রহ ছিলো না কিন্তু আয়রা বাবা মানে মামু মৃত্যু রহস্য খুজতে গিয়ে আমার সামনে বড় আম্মু সত্যি বেরিয়ে আসে সাথে আজাদ মির্জা কালো ব্যবসা। কিন্তু আমি কিছু বুঝে ওঠার আগে আয়রার অসুস্থতা আর অন্তু আর অর্ণবে সাথে করা অন্যায়ে সব এলোমেলো করে দিয়ে ছিলো আমাকে। কিন্তু আয়রা সুস্থ হলে আর আমি অর্ণবের সাথে মিলে আজাদ মির্জা সব কাজ খোজ খবার নিতে গিয়ে আবিদ চৌধুরী ঘটনা আমার সামনে আসে তখন আমি নিজ উদ্যোগে সব খুজতে লাগি তখন অর্ণবের সত্যি আমার সামনে আসে আমি আগে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু আয়রাকে নিয়ে আবার ঝামেলা জন্য বলে ওঠা হয়নি তাই আজ এভাবে সব সত্যি বের হলো…
সবাই সব বুঝে যায় আজাদ মির্জা জন আজ কতো গুলো পরিবার ধংস হলো। সবার সুখ, ভালোবাসা, সব কিছু আজাদ মির্জা জন্য হারিয়ে গেছে। অর্ণব প্রাপ্যকে ছাড়িয়ে বললো….
অর্ণবঃ প্রাপ্য এসব পরে দেখে নেবো আগে আনভিকে খোঁজা দরকার আজাদ মির্জা আনভিকে কোথায় নিয়ে রেখেছে জানি না। আনভিকে পাবাটা দরকার…
আয়ানঃ আমি আমার লোক লাগিয়েছি কিন্তু কেউ আজাদ মির্জা ঠিকানা দিতে পারেনি। তিনি কোথায় লুকিয়ে আছে কেউ জানে না। কিন্তু তিনি ঠিক আমাদের সাথে যোগাযোগ করবে কেননা তার সব কালোব্যবসার প্রমান আমার কাছে তাই সে আমাকে নিশ্চিয় ফোন করবে।
অন্তুঃ আমি জানি না কে কি করেছে আমি শুধু জানি আমার মেয়েকে আমার কাছে এনে দেবে তোমরা তাও সেফলি। না হলে আমি নিজেকে শেষ করে দেবো যদি আমার মেয়েকে আমি না পায়।
অর্ণবঃ অন্তু আনভির কিছু হবে না। আমি আনভিকে তোমার কোলে ফিরিয়ে দেবো সেফলি তুমি চিন্তা করো না।
অন্তু কান্না করতে করতে বলো… অর্ণব আমার মেয়ে ওখানে ভয় পাছে। সে এতখনে কিছু খাইনি প্লিজ তারাতাড়ি করো কিছু। আমার মেয়ে আমার জন্য কান্না করছে।
অর্ণব অন্তুকে জড়িয়ে ধরে থাকে, সে আনভিকে কিছু হতে দেবে না অন্তুকে। হঠাৎ আয়ানের ফোনে ফোন আসে, সবাই আয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে জানার জন্য আজাদ মির্জা ফোন করেছে না-কি। আয়ান ফোন হাতে নিয়ে বাঁকা হাসে তার সন্দেহ ঠিক হয়েছে আজাদ মির্জা তাকে ফোন দিয়েছে। আয়ান ফোন ধরতে ওপাশ থেকে আজাদ মির্জা বললো…
আজাদ মির্জাঃ তা সবাইকে সব সত্যি বলে দিয়েছো নিশ্চিত আয়ান।
আয়ানঃ কি মনে হয় আপনার আমি কি করেছি?
আজাদ মির্জা ওপাশ থেকে জোরে জোরে হেসে বললো… নিশ্চিত এতখনে বাড়ির সবাই সব সত্যি জেনে গেছে আর এটাও জেনে গেছে যে আমি কতোটা খারাপ হতে পারি।
আয়ানঃ হুমম জেনেছে সবাই সব সত্যি কিন্তু একটা সত্যি এখনো জানেনি আর সেটা হলো আপনি আমাকে মারার চেষ্টা করেছিলেন অরনির জন্মদিনে দিন। সেটা বলা হয়নি এখন সেটা বলা হলো…
আজাদ মির্জা হুমকার দিয়ে বললো… বেশ বেশ ভালো করছো তাইলে এখন ভালো ছেলের মতো ফাইলটা আমাকে দিয়ে দাও তো আয়ান বাবা….
আয়ানঃ আনভি কোথায় বড় আব্বু..?
আজাদ মির্জা হাসতে লাগলো, তিনি বলেন…. আনভি সোনা আমার কাছে আছে। ভালো আছে কতখন যে ভালো থাকবে সেটা তোমার ওপরে নির্ভর করে তাই যত জলদি পারো ফাইলটা নিয়ে আমার নতুন গোডাউনে নিয়ে আসো আমি ঠিকানা পাঠাছি। আর হে পুলিশ আনবার চেষ্টা ও করবে না, না হলে আনভিকে তোমরা পাবেনা মেনে থাকে জেনো। ১ ঘন্টার মধ্যে ফাইলটা আমার চাই মানে চাই।
বলে আজাদ মির্জা ফোন রেখে দেয়। সবাই আয়ানের কথায় বুঝতে পারে আজাদ মির্জা ফোন করেছিলো। আয়ান সবাইকে বলো…
আয়ানঃ আনভি ঠিক আছে আমি ফাইল নিয়ে আজাদ মির্জাকে দিয়ে আনভিকে নিয়ে আছি।
অর্ণবঃ তুমি একা যাবে না আমি ও সাথে যাবো..
আদিঃ আমি ও যাবো তুই ফাইল নিয়ে আয়।
আয়ান বুঝলো সে একা জেতে পারবে না তাই সে ফাইল আনতে যায়। এদিকে অন্তু অর্ণবকে বলে…
অন্তুঃ আমি ও যাবো আনভির কাছে।
অর্ণবঃ না অন্তু তুমি এখানেই থাকবে। আমরা আনভিকে নিয়ে আসবো। ওখানে অনেক বিপদ হতে পারে তোমার যাওয়া ওখানে ঠিক না।
অন্তু জেদ ধরে থাকে সে যাবে আনভিকে নিতে, বাড়ি সবাই তাকে মানা করলেও সে শুনে রাজি হয় না। তার এই কথা তাকে যদি না নেয়া হয় তাইলে সে একায় যাবে তাই অর্ণব বাধ হয়ে তাকে নিয়ে যেতে হয়……
না জানে এই জেদ কার জীবনে অন্ধকার নামিয়ে আনে……
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৬৫
লোকালয় বিহীন নিরব স্থান যেখানে নেই কোনো মানুষের আনাগনা, নেই কোনো কলাহোল, কেমন গা ঝমঝম পরিবেশ। আদি, আয়ান, অর্ণব, প্রাপ্য আর অন্তু দাড়িয়ে আছে একটা গোডাউনে কাছে। এই গোডাউনেই তাদেরকে আসতে বলে আজাদ মির্জা। সবাই এক সাথে সেখানে যায়, ভেতরে যাবার আগে দরজায় কালো পোশাক পরা এক লোক তাদেরকে দেখে সোজা ভেতরে নিয়ে যায়, যেখানে আজাদ মির্জা আছে। আয়ান সবটা দেখে নিচ্ছে, তারা যত এগোচ্ছে লোকগুলো আরো বাড়ছে এবং তাদের হাতে বন্দুক ও আছে। অন্তু এসব দেখে ভয়ে অর্ণবে হাত জড়িয়ে ধরে, অন্তুকে ভয় পেতে দেখে অর্ণব বলে…
অর্ণবঃ অন্তু কিছু হবেনা আমরা শুধু আনভিকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাবো।
অন্তুঃ অর্ণব আনভি ঠিক আছে তো। আমার মেয়ের কিছু হয়নি তো। আব্বু যদি ওর কোনো ক্ষতি করে তাইলে…
অর্ণবঃ জান কিছু হবে না আমাদের মেয়ের। আনভি আমাদের সাথে যাবে তাও সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে। তাই চিন্তা করো না। চলো…
আগের লোকটা তাদেরকে নিয়ে গোডাউনে ভেতরে গিয়ে তাদের মাঝখানে এনে দাড় করায়, তাদের আশে পাশে আরো কয়েকজন দাড়িয়ে আছে। লোকগুলো তাদের ঘিড়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার নিজেদের মধ্যে কিছু ইশারায় কথা বলে নিলো। হঠাৎ আজাদ মির্জা কন্ঠে স্বর শুনে তারা সবাই ওপরে তাকিয়ে দেখে আজাদ মির্জা সেখানে দাড়িয়ে বলছে….
আজাদ মির্জাঃ আমি তো শুধু আয়ানকে এখানে আসতে বলেছিলাম কিন্তু এখন তো দেখছি চাঁদে হাট বসে গেলো। যাগে সেসব কথা, আমার এতে মাথা না ঘামালেও চলবে, আয়ান আমার ফাইলটা?
আয়ানঃ ফাইলটা আপনি পেয়ে যাবেন আগে আনভি কোথায় সেটা বলবেন?
আয়ান চিতকার করে কথাগুলো বলো আজাদ মির্জাকে। আজাদ মির্জা হেসে নিচে আসতে আসতে বললো…
আজাদ মির্জাঃ আছে আছে এতো তারা কিসের। এখনো তো অনেক কিছু বাকি আছে তার আগে ফাইলটা আমাকে দাও।
বলে সে তাদের থেকে কিছুটা দূরে একটা চেয়ারে গিয়ে বসলো। এদিকে অন্তু তার আব্বুকে এই রুপে দেখে সে স্তম্ভিত, সে কখনো তার আব্বুকে এই রুপে কল্পনাও করতে পারেনি, তার চোখ থেকে অঝরে জল পরছে। এদিকে আজাদ মির্জা ভাবসাব দেখে সবাই রাগে ফেটে পরছে কিন্তু কিছু করতে পারছে না শুধু আনভির জন্য। আজাদ মির্জা তার ছেলে-মেয়েকে দেখে বললো…
আজাদ মির্জাঃ ছোট আম্মাজান তুমি কষ্ট করে এখানে এলে কেনো। আমি তো আনভিকে দিয়েই দিতাম তাইলে,, না এসে ভালোই করেছো। তা আয়ান হয় তো তোমাকে সব সত্যি বলেছে তাইনা ছোট আম্মাজান…
আজাদ মির্জা কথা শুনে অন্তু ঘেন্না লাগছে যে এই মানুষটা তার বাবা ছিঃ। আদি রাগ যেনো বেরে গেলো এই কথায় সে তেরে আসতে নিলে আয়ান আর প্রাপ্য তাকে আটকায়। আদিকে তার দিকে আসতে দেখে আজাদ মির্জা গর্জন দিয়ে বললো…
আজাদ মির্জাঃ আদি তোমার সাহস বরাবর একটু বেশিই ছিলো তাই তো আমার সাথে এতো বড় গেম খেলতে পেরছো। কিন্তু তোমরা হয়তো আমাকে ছোট খাটো পেলীয়ার ভাবছো তাই খেলার দড়ি হালাক ছেড়ে দিয়েছিলে। কিন্তু আমি ঠিক সেটা বুঝতে পেরেছি, তোমরা এই খেলাতে নতুন তাই কিছু কিছু জায়গায় ভুল করে বসেছো আর সেটাই তো তোমাদের পতনের জিনিস হয়ে দাড়িয়েছে, আর আমি সবটা জেনে যায় আর সবটা জেনেও চুপ ছিলাম এতো দিন।
আদিঃ আপনি কেমন প্রকৃতির মানুষ হে কেমন মানুষ আপনি ছিঃ। আপনাকে মানুষ বলতে ঘেন্না হয়, আপনি কি করে পারলেন আমার আম্মুকে মারতে, অন্তু জীবন নষ্ট করতে, আদিবার সাথে খারাপ করতে, কি করে এতো গুলো নিরীহ মানুষ করে মারতে কি করে পারলেন।
আদি রাগে থরথর করে বলো কাথাগুলো। আদির কথা শুনে আজাদ মির্জা নিশ্চুপ হয়ে যায়, কিন্তু কিছুক্ষণ পর জোরে জোরে হাসতে হাসতে বললো…
আজাদ মির্জাঃ আমার কাছে টাকা, রুধবা, ক্ষমতা, পাওয়ার ছাড়া কিছু মেটার করে না বুঝলে আদি। তোমার আম্মুকে অনেক বুঝিয়ে ছিলাম যাতে বাড়াবাড়ি না করে তার ছেলে-মেয়ে কথা ভাবতে বলি কিন্তু তিনি নিজের ছেলেমেয়ে কথা না ভেবে পরের মেয়ের কথা ভেবেছে তাই আমি ও বাধ হয়ে তাকে মেরেছি। আর তার সাথে আমি সবাইকে মেরেছি। আর অন্তু আমার কাছে চাবি ছিলো আমার কালোব্যবসাকে বাড়ানোর কিন্তু সে অর্ণবকে ভালোবাসে সেই চাবিটা ভেঙে দিলো তাই আমি ও অন্তর থেকে ওর ভালোবাসা কে কেরে নিলাম। আদিবাকে কিছু করতে চায়নি আমি কিন্তু যখন অন্তুকে কাজে লাগাতে পারলাম না তখন ভাবলাম তোমাকে কাজে লাগায় তাই আমার এক বন্ধুর মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করেছিলম। কিন্তু তুমিও একই ভুল করেছো তাই তার শাস্তি আদিবা পেয়েছে….
আজাদ মির্জা এক একটি কথা সবার ভেতরে তার জন্য ক্ষোভ তৈরি করছে। সবাই তাকে ঘ্নার নজরে দেখতে থাকে। অন্তু কান্না করতে করতে বললো…
অন্তুঃ আব্বু প্লিজ আনভিকে আমাকে দিয়ে দাও। ও ছোট্ট অবুঝ বাচ্চা, ও কিছু বুঝে না এসবের। তুমি যা বলেছ আমরা সেটা এনেছি তাইলে আনভিকে কেন দিচ্ছো না, ওকে আমাকে দাও।
আজাদ মির্জা অন্তুকে দেখে বললো…. আনভি কিছু করে নি কিন্তু তার বাপ, মামা এবং তার মা তো আমার সব কিছু করেছে। তোমাদের জন্য আমার ব্যবসা ডুবেছে, আমার সব সত্যি সবাই জেনে গেছে, এমনকি আমার রাজনীতি ও ক্ষমতা ও শেষের দিকে। এতো সব ক্ষতি করে সবাই শান্তিতে থাকবে আর আমি জেলে সেটা তো হচ্ছে না। তাই আয়ান ফাইলটা দাও তারপরে দেখছি তোমাদের কি করা যায়।
অর্ণবঃ আপনি কিছু করতে পারবেন না, তাই ভালোই ভালোই আনভিকে দিয়ে দিন না হলে আপানাকে এর শাস্তি পেতে হবে।
অর্ণবের কথা শুনে আজাদ মির্জা হাসতে লাগলে, তাকে শাস্তি দেবে তাও এরা ভাবতে হাসি পাছে তার। এদিকে তেনাকে এই ভাবে হসতে দেখে কেউ কিছু বুঝলো না। হঠাৎ কিছু লোক তাদের সবার দিকে এগোতে লাগলো, অর্ণব অন্তুকে তার পেছনে রেখে লোক গুলোকে মারতে লাগলো। কিছু মূহুর্তে মধ্যে আজাদ মির্জা লোকজন আদি, প্রাপ্য, আয়ান আর অর্ণবের ওপর হামলা করে। তারা সবাই মিলে আজাদ মির্জা লোকগুলোকে মারতে লাগে, মারামারি এক পর্যার আজাদ মির্জা ফাঁকা গুলি মারে। গুলির শব্দে সবাই তার দিকে তাকিয়ে দেখে আজাদ মির্জা কোলে আনভি আছে। আনভিকে দেখে অন্তু দৌড়ে আসতে নিলে মানিক তাকে ধরে ফেলে, অন্তু ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো…
অন্তুঃ আব্বু প্লিজ আনভিকে কিছু করো না প্লিজ। আনভি মাম্মা এসে গেছে কান্না করো না আমি তোমাকে কিছু হতে দেবো না।
আনভি কান্না করতে করতে বললো… মাম্মা নানু পচা আমি তার কাছে যাবো না। পাপা আমাকে নিয়ে যাও..
অর্ণব আনভির কাছে আসতে নিলে একজন লোক তার নাক বরাবর মারে, সে ঝিটকে একটু দূরে গিয়ে পরে তার নাক থেকে রক্ত বের হচ্ছে। অর্ণবকে মারতে দেখে প্রাপ্য আসতে নিলে তাকে একজন ধরে ফেলে। আস্তে আস্তে আদি আর আয়ানকে ও ধরে ফেলে, আয়ানের হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে আজাদ মির্জা হাতে দেয় তার এক লোক। এদিকে অর্ণব ছোটার চেষ্টা করতে লাগলো তা দেখে আজাদ মির্জা হেসে বললো…
আজাদ মির্জাঃ তোমরা কি মনে করেছো আমি কিছু বুঝবো না তোমরা আসার আগে পুলিশকে সবটা জানিয়ে এসেছো কিন্তু প্রমান দাওনি। আর এখন প্রমান দিতেও পারবে না আজ সবাই এখানেই মরতে।
আয়ানঃ আপনি কিছু করতে পারবেন না আগে ফাইলটা তো খুলে দেখুন সেটা আসল কি না।
আয়ানের কথা শুনে আজাদ মির্জা ভ্রু কুচকায়, সে আয়ানের কথা কিছু বুঝলো না তাই সে আনভিকে একজনের কাছে দিয়ে ফাইলটা খুলে দেখে ফাইলে কিছু নেই। তিনি রেগে গিয়ে বললো…
আজাদ মির্জাঃ আয়ান তুমি বড়ো বেশি বার বেরে গেছো। ভালোই ভালোই ফাইলটা আমাকে দিয়ে দাও তা না হলো সবাইকে মারতে বাধ্য হবো।
আয়ানঃ আপনাকে আমি বিশ্বাস করি না তাই এটা করেছি। আমি আগেই জানতাম আপনি এটা করতে পারেন তাই ফাইলটা সরিয়ে দিয়েছি।
আদিঃ আমাদের এখন এখান থেকে যেতে দিন তা না হলে ফলটা ভালো হবে না।
আজাদ মির্জা হেসে বললো…. তোমরা আমাকে এতো কাঁচা খেলোয়াড় ভেবছো কিন্তু আমি এতোটাও কাঁচা খেলোয়াড় না। তোমরা যদি ফাইলটা না দাও আনভিকে আমি মেরে ফেলবো কিন্তু তোমাদের ছেড়ে দাবো। সারাজীবন আফসোস করবে তোমাদের ভুলের কারনে আনভি মারা গেলো কিন্তু তোমরা বেঁচে আছো, তোমরা নিজেদেরকে ঘেন্না করবে বুঝলে।
অর্ণবঃ আপনি এটা করতে পারে না।
আজাদ মির্জাঃ আমি সব করতে পারি। নিজের ছেলে-মেয়ের জীবন নষ্ট করতে পেরেছি, তাদের মাকে মারতে পেরেছি তাইলে আনভিকে মারতে আমার হাত কাপবে না।
আজাদ মির্জা কথাটা বলে আনভির দিকে বন্দুক তাক করলে সবাই আঁতকে ওঠে। তারা সবাই আজাদ মির্জাকে বিশ্বাস করে তিনি সব কিছু করতে পারে। অন্তু আনভির কাছে আসতে নিজে আসতে না পেরে কান্না করতে করতে বললো…
অন্তুঃ আব্বু প্লিজ আনভিকে কিছু করো না। যদি মারতে হয় আমাকে মারো কিন্তু আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও প্লিজ।
অর্ণবঃ আনভিকে কিছু করবেন না আমি ফাইলটা দিচ্ছি। আম্মু কান্না করে না পাপা তোমাকে কিছু হতে দেবে না।
আনভিঃ মাম্মা পাপা আমি এখানে থাকবো না সবাই পঁচা। আমি বাড়ি যাবো…
আনভি কান্না করতে করতে তার মুখ লাল বৃত্ত ধারণা করেছে। তাকে কান্না করতে দেখে অন্তু অর্ণবকে বললে…
অন্তুঃ তুমি কিছু করবে না, উনি আমাদের মেয়েকে মেরে ফেলবে। প্লিজ অর্ণব দোহাই লাগি ফাইলটা দিয়ে দাও।
অর্ণব অসহায় চোখে চেয়ে থাকে অন্তুর দিকে, সে দ্বিধা ভুক্তছে আজাদ মির্জা আদো ফাইলটা পেলে তাদের ছেড়ে দেবে কি না সন্দেহ আছে। অর্ণব সব ভুলে আয়ানকে ইশারা করলে আয়ান বলে…
আয়ানঃ ফাইলটা আমাদের গাড়িতে আছে, যেটা করে আমরা এসেছি এখানে।
আয়ানের কথা শুনে আজাদ মির্জা তার লোকে বলে ফাইলটা আনতে সেই লোক তাই করে। কিছুক্ষণ পরে লোকটা ফাইল তার হাতে তুলে দিলে সে সব দেখে নেয়। সব ঠিক থাকায় সে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো…
আজাদ মির্জাঃ ফাইলটা যেহেতু পেয়ে গেছি তাইলে তোমাদের ছেড়ে দেয় কি বলো। কিন্তু আমি তো সবাইকে ছাড়বো না, কাউকে না কাউকে আজ এখানে মরতে হবে। এখন তোমরা ডিসিশন নাও কে মরবে।
আজাদ মির্জা কথা শুনে সবাই চমকে যায়। অর্ণব ঠিক ধরেছিলো এতো সহজে তাদেরকে আজাদ মির্জা ছাড়বে না। আদি বলে…
আদিঃ সবাইকে যেতে দিন, আমি মরতে রাজী আছি?
আয়ানঃ না আমাকে মারুন, আমার জন্য এসব হয়েছে তাই আমাকে মারুন।
আদিঃ আয়ান অয়নের কথা ভাব তোর কিছু হলে আয়রা আর অয়ন কে দেখবে কে। তাই আমাকে মারুন।
আয়ানঃ না দাদাভাই সব আমার জন্য হয়েছে তাই আমার সাথে শেষ হবে। আর আয়রা অয়ন কে তুমি দেখে রেখো।
তাদের দুজনের তর্কে আজাদ মির্জা বিরক্ত হলো। অর্ণব কিছু বলতে যাবে তার আগে অন্তু বলো…
অন্তুঃ আব্বু আমাকে মেরে ফেলো। আমার জন্যই তো এসব হলো, না আমি অর্ণবকে ভালোবাসতাম, না তোমার ব্যবসা কেউ ধরতে পারতো তাই আমাকে মেরে ফেলো।
অর্ণবঃ কি যা তা বলছো তুমি, অন্তু আনভি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না, তাই মরতে হলে আমি মরবো কাউকে মরতে হবে না।
অন্তুঃ অর্ণব আনভি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে কিন্তু তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। আব্বু তুমি আমাকে মারো।
আদিঃ অন্তুপাখি এমন করে না দেখ আমি বলছি তো তোদের কাউকে কিছু করতে হবে না…
আয়ানঃ বোনু এমন করে না একটা বার আনভির কথা ভাবো।
কিন্তু অন্তু কারো কথা শুনে না সে নিজের সিদ্ধান্তে আটুল। আজাদ মির্জা বিরক্ত হয়ে বললো…
আজাদ মির্জাঃ তোমার সবাই চুপ করো, আমি বলছি আমি কাকে মারবো। আমি অর্ণব আর আনভির মধ্যে যে কোনো একজনকে মারবো এখন অন্তু ডিসিশন নাও তুমি কি করবে।
আজাদ মির্জা কথায় অন্তু চমকে যায়, সে কি করে ডিসিশন নেবে মানে? সে অর্ণব আর আনভির মধ্যে যে কোন একজনকে বেছে নেবে কি করে, না সে এটা করতে পারবে না কিছুতেই না। আজাদ মির্জা কথা শুনে অর্ণব বললো…
অর্ণবঃ আপনি আনভিকে আর অন্তুকে ছেড়ে দিন আমাকে মারুন প্লিজ।
আয়ানঃ আপনি এটা ঠিক করছে না।
আজাদ মির্জাঃ ঠিক করছি, তোমাদের সবার জান অন্তুর মাঝে আর অন্তুর জান অর্ণব আর আনভির মাঝে। তাই অন্তুকে মারলে তোমরা চারজন কষ্ট পাবে কিন্তু তা আমি করবো না, আমি অর্ণব আর আনভিকে মারলে অন্তু কষ্ট পাবে সেটা দেখে তোমরা কষ্ট পাবে। এতে আমি শান্তি পাবো। এখন বলো কি করবে।
আজাদ মির্জা কথা আদি রেগে ছুটতে নিলে তাকে মারতে লাগে আজাদ মির্জা লোকগুলো। এদিকে অন্তু একবার আনভিকে আর একবার অর্ণবকে দেখছে সে কি করবে যানে না একদিকে তার ভালোবাসা আর অন্যদিকে তার মেয়ে। সে দুজনকে ছাড়া বাচতে পারবে না কিছুতেই না, অন্তুকে কান্না করতে দেখে অর্ণব চিতকার করে বললো…
অর্ণবঃ অন্তু প্লিজ আনভি ছোট এসব বঝেনা। দেখো আমার আম্মু কান্না করছে প্লিজ অন্তু আনভিকে বেছে না। আমাদের ভালোবাসরা চিহ্নকে বাচাও অন্তু..
অর্ণবের কথা শুনে অন্তু আনভির দিকে তাকায় সে হাত উঁচু করে তাকে ডাকছে। অন্তু চোখের সামনে সবাই নানান কথা বলছে তার মাথায় কিছু যাচ্ছে না। সব শেষ অন্তু জোর করে বলে…
অন্তুঃ আমার আনভিকে চাই প্লিজ। আনভিকে কিছু করো না আব্বু। আমার আনভিকে চাই…(বলে কান্না করতে করতে নিচে বসে বলো) সরি অর্ণব সরি..
অন্তু ডিসিশনে অর্ণব হাসে সে চায় তার মেয়ে বেচে থাকুক, তার চোখের সামনে তার মেয়ের কিছু হলে সে বাচতো না আর না অন্তু। অন্তুর কথা শুনে আয়ান আদি রেগে যায় কিন্তু তারা কিছু করতে ও পারছে না। আজাদ মির্জা খুশি হয়ে আনভিকে অন্তুর কাছে দিয়ে দেয়। আনভিকে পেয়ে অন্তু তার সারামুখে চুমু দিয়ে আদর করতে লাগলে এদিকে আনভি তার মাকে পেয়ে কান্না করতে করতে বলে…
আনভিঃ মাম্মাম আমি বাড়ি যাবো এখান সবাই পচা। আমি ভয় পেয়েছি, তুমি পাপাকে বলো এখান থেকে যেতে।
অন্তুঃ মা তোমার কোনো ভয় নেয় আমি আছি তো। আমরা সবাই বাড়ি যাবো, কেউ কিছু করবে না তোমাকে। মাম্মাম তোমাকে অনেক ভালোবাসে অনেক…
বলে অন্তু আনভিকে চুমু দিয়। এদিকে আজাদ মির্জা অর্ণবের দিকে রিভলভার তাক করে বললো…
আজাদ মির্জাঃ তা অর্ণব মেয়ে আর মেয়ের মাকে দেখে নাও শেষ বারের মতো৷ এখন তোমার মৃত্যুর পালা তৈরি তো।
অর্ণব অন্তুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলো… অন্তু আনভিকে দেখে রাখবে নিজের ক্ষতি করবে না। আই লাভ ইউ। আম্মু পাপা লাভ’স ইউ।
বলে চোখ বন্ধ করে নেয় তার চোখের সামনে আস্তে আস্তে সব স্মৃতি চলে আসে তার আর অন্তু। কতো ভালোবাসা, খুনসুটি, কষ্ট, সুখ সব চোখে সামনে ভাসছে, আনভিকে নিয়ে কাটানো সময় সব মনে পারছে। এদিকে আজাদ মির্জা বাকা হেসে রিভলভার চাপ দেয়। জোরে একটা শব্দে সবকিছু নিরব হয়ে যায়, কতো শতো ভালোবাসা, হাসি, কান্না, সুখ, দুঃখ সব এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো। হঠাৎ আনভি মাম্মাম বলে চিতকার দিয়ে ওঠে সাথে আদি আর আয়ান অন্তু বলে ডাকতে লাগলো। এদিকে নিজের গায়ে গুলি না লাগায় অর্ণব অবাক হয় সাথে সবাইকে অন্তু বলে ডাকতে শুনে সে নিজের চোখ খুলে যা দেখে সেটা দেখে তার সর্বপৃথিবী ঘুড়ে যায়………
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৬৬
গুলির শব্দে সারা গোডাউন নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। কারোর মুখে কোনো কথা নেই, সবাই ‘থ’ মেরে দাড়িয়ে আছে কি হলো হঠাৎ কেউ কিছু বুঝলো না। আজাদ মির্জা হাত থেকে রিভলভারটা পেরে যায়, নিজের ভেতরে কেমন নড়ে ওঠে তেনার, তিনি এক দৃষ্টিতে সামনে পরে থাকা অন্তুর নিথল, নির্জীবি দেহটাকে পরে থাকতে দেখছে। আজাদ মির্জা এখনো বুঝতে পরছে না তিনি নিজের হাতে তার মেয়েকে মেরে ফেলেন, না তিনি এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না, তিনি তো অর্ণবকে মারতে গুলি করেছিলে কিন্তু সেটা অন্তু যে অর্ণবকে বাচাতে সে তার নিজের বুকে নেবে সেটা তিনি ভাবেনি। এদিকে আদি, আয়ান বোনকে এভাবে দেখে নিজেদের স্বতচেষ্টা করে তাদেরকে ছাড়িয়ে নেই সেই লোকগুলোর থেকে। ঠিক তখনি সেখানে পুলিশ চলে আসে, হ্যাঁ আদি এখনে আসার আগে পুলিশকে তাদের ঠিকানা দিয়ে আসে। পুলিশ এসে সবটা দেখে আজাদ মির্জা আর তাদের বাকি সদস্যকে নিয়ে চলে যায়। এদিকে অর্ণব তার বুকে অন্তুকে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে আর কি যেনো বিড়বিড় করছে। অন্তু সাদা শার্টটা রক্তে লাল হয়ে ভিজে যাচ্ছে সেদিকে অর্ণবের কোনো হুশি নেয়ে সে শুধু অন্তু মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আর কিছুক্ষণ আগের কথা ভাবছে….
কিছুক্ষণ আগে,,,,,
তখন আজাদ মির্জা অর্ণবের দিকে গুলি মারলে অন্তু অর্ণবের সামনে চলে আসে তার ফলে তার বুকের ডানপাশে গুলিটা লাগে। সবাই অন্তু বলে চেঁচালে অর্ণব চোখ খুলে অন্তুকে রক্তাক্ত অবস্থা দেখে কিংকর্তব্যবিমুঢ়, বিমূঢ়, স্তব্ধ হয়ে যায়। তার চোখের সামনে অন্তুকে রক্তে মাখা দেখে মূহুর্তে মধ্যে তার শরীলে চিত্ত যেনো হারিয়ে যায়। কি হলো তার সাথে, যেখানে তার নিজের মৃত্যু লেখা ছিলো সেখানে নিজের প্রেয়সীকে দেখে সে হতভম্ব হয়ে যায়। অন্তুকে পরে যেতে দেখে সে তারাতাড়ি করে নিজের বুকে নিয়ে ফ্লোরে বসে পরে অর্ণব, তার কাঁপা কাঁপা হাতে অন্তুর গালে ছুয়ে বলতে লাগলো…
অর্ণবঃ এ..এই অ..অন্তু। জান কি করলে তুমি এটা? আমার জায়গায় কেন এলে তুমি হে কেন এলে। তোমাকে না বলাম আনভিকে দেখে রাখতে তাইলে আমার কথা অমান্য করে তুমি এটা কেন করলে?
অর্ণবের চোখ থেকে অঝরে জল গড়িয়ে পরছে। অন্তু তার রক্ত মাখা হাত অর্ণবের গালে রেখে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো…
অন্তুঃ অ..র্ণ..ব আমি আগের বার তোমাকে রক্ষা করতে পারিনি তাই বলে এবার ও পারবো না সেটা হতে দেবো না আমি। আ..আমার থেকে আনভির কাছে তোমার প্রয়োজন বেশি, তাই আমি এটা করেছি।এসবের শুরু আমার থেকে হয়েছে তাই শেষ আমার থেকে হবে। বি..বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ভীষণ ভা..ভালোবাসি, তোমার সাথে থাকতে চেয়েছিলাম সা..সারাজীবন, কিন্তু সেই আশা হয়তো আল্লাহ মানতে নারাজ। তাইতো নিয়ে যাচ্ছে আমাকে তার কাছে। তুমি প্লিজ আমাকে ভালোবাসে তোমার বুকে রেখো, কাউকে দিওনা এই জায়গা অর্ণব। আনভিকে দেখে রেখো প্লিজ…
অর্ণবঃ তোমার কিছু হবে না জান আমি তোমাকে কিছু হতে দেবো না। তোমার জায়গা তোমার থাকবে, কেউ সেই জায়গা পাবেনা। আর আল্লাহ তোমাকে নিয়ে যেতে পারবে না কিছুতেই না, তোমাকে নিতে হলে আমার সাথে লড়াই করতে হবে কঠিন লড়াই।
অন্তু হাসে অর্ণবের কথা শুনে। হঠাৎ তার শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, সে জোরে জোরে নিঃশ্বাস টানতে লাগে। তা দেখে অর্ণব অস্থির হয়ে বললো…
অর্ণবঃ জান জান প্লিজ চোখ বন্ধ করবে না আমি তোমাকে কিছু হতে দেবো না। তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না প্লিজ। আমাকে মাঝ রাস্তায় একা ছেড়ো না প্লিজ আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না প্লিজ। অন্তু অন্তু… আদি প্লিজ কিছু করো আমার অন্তু মরে যাচ্ছে আদি, প্রাপ্য ভাই আমার কিছু কর আমি অন্তুকে ছাড়া থাকতে পারবো না। কেউ কিছু করো প্লিজ…
বলে চিতকার করতে লাগে পাগলের মতো। আনভি তার মাম্মাকে এভাবে দেখে ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, কেমন যেন হয়ে যায় সে কান্না করছে না, কথাও বলছে না, শুধু অন্তুর দিকে তাকিয়ে আছে…
এখন,,,,
পুলিশ চলে যেতেই আদি, আয়ান দৌড়ে তার বোনের কাছে আসে। প্রাপ্য আনভিকে কোলে নিলে সে তার বুকের মাঝে লুকিয়ে পরে এতখন একটা নিরাপদ স্থান পেয়েছে সে, আনভিকে এভাবে দেখে প্রাপ্য ভয় পেয়ে যায় সাথে অর্ণবের অবস্থা দেখে ভেঙ্গে পরে। একটা সুখি, ভালোবাসাময় পরিবার কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেলো। আদি অর্ণবের বুকে থেকে অন্তুকে নিতে নিলে অর্ণব তাকে ছাড়ে না তা দেখে আদি চোখ থেকে জল পরে। সে তার বোনকে ডাকতে লাগলো কিন্তু অন্তুর কোনো রেসপন্স নেয়, আদি ভয় পেয়ে যায়। আয়ান অন্তু পালস চেক করে দেখে এখনো পালস ধীরে ধীরে চলছে এখনি হসপিটালের না নিলে কিছু একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে তাই সে বলে…
আয়ানঃ অর্ণব অন্তু পালস এখন চলছে প্লিজ ওকে হসপিটালের নিতে হবে। তুমি কি আমার কথা শুনতে পারছো কিছু তো বলো অর্ণব..
আয়ানের কথায় অর্ণবের হুঁশ আসে, তাকে এখনি অন্তুকে হসপিটালের নিতে হবে না হলে অন্তুকে বাঁচানো সম্ভব না। অর্ণব তারাহুরো করে অন্তুকে কোলে নিয়ে বাইরের দিকে ছুটলো সাথে তারা সবাই…..
________________________________________
হসপিটালের করিডোর দেওয়াল ঘেষে দাড়িয়ে আছে অর্ণব। তার থেকে দূরে দাড়িয়ে আছে তার পরিবারের সবাই। তখন অন্তুকে হসপিটালের নিয়ে আসলে ডক্টর তাকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে গিয়েছে, এখনো পর্যন্ত ডক্টর বাইরে বের হয়নি। আনভি অরনি কোলে ঘুমিয়ে আছে মেয়েটা কিছুক্ষণ আগে মাম্মাম মাম্মাম করে কান্না করছিলো কিন্তু কেউ কিছু করতে বা বলতে পারেনি শুধু নিরব দর্শকের মতো চেয়ে ছিলো আনভির দিকে, অর্ণব ও তার কাছে আসেনি সে তো নিজে ভেঙ্গে পরেছে সে কি করে আনভিকে সামলাবে। আনভি কান্না করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে যায়, এদিকে সবাই থতমত মুখে চাতক পাখী মতো দাড়িয়ে আছে অন্তুর একটা খবরের আশায়।
অর্ণব নিজে হাতে দিকে তাকিয়ে আছে এই হাতে সে অন্তুকে নিয়ে এসেছে তার সারা শরীলে অন্তুর রক্ত আছে, সেটা শুকিয়ে গেছে প্রায়। প্রাপ্য তার কাছে এসে তার কাঁধে হাত রাখে এতোখন নিজেকে আঁটকে রাখলেও এখন আর রাখতে পারে না সে। অর্ণব ফুপিয়ে কান্না করে দেয় তাকে এভাবে কান্না করতে দেখে সবাই হতভম্ব, বিস্ময়, অর্ণব প্রাপ্যকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললে…
অর্ণবঃ প্রাপ্য আমার অন্তু চাই যে করে হোক ওকে এনে দে। আমি ওকে ছাড়া মরে যাবো, ওই পাগলীটা এক বারো আমার কথাটা ভাবলো না, ওকে ছাড়া আমি কি ভাবে থাকবো৷ সে তো দিবি হসপিটালের শুয়ে আছে কিন্তু আমার প্রান গলায় আটকে আছে, কখন যেনো কি সংবাদ আসে আর সেটা শুনে আমার প্রান উড়ে যায়। ওকে কে বলেছিলো এই পাগলামিটা করতে, আমি তো ওদের বাচাতে নিজে মরতে চেয়েছিলাম কিন্তু সে আমাকে বাচিয়ে এখন নিজে মৃত্যুর সংঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। একটা বার ভাবলো না আমি এই কষ্টটা সহ্য করতে পারবো কি না। প্রাপ্য তোর ভাবিকে বল না আমার সাথে এমনটা না করলেও পারবো। ওকে যেতে মানা কর প্লিজ ভাই।
অর্ণবের প্রতিটা কথা উপস্থিত সবার ভেতটা নাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রাপ্য তার ভাইকে বলে… ভাইয়া ভাবির কিছু হবে না, সে সুস্থ হয়ে আবার তোর কাছে চলে আসবে দেখে নিস। তুই একটু শান্তো হো ডক্টর এখনি এসে ভালো খবর দেবে দেখিস…
প্রাপ্য কথা শেষ হতে না হতে ডক্টর মাহিয়া বাইরে আসে। তাকে দেখে অর্ণব দৌড়ে এসে অস্থির হয়ে বললো… আমার ওয়াইফাই কেমন আছে? সে ঠিক হয় যাবে তো ডক্টর? আমি দেখা করতে পারি তার সাথে। আপনি কিছু বলছেনা কেন?
ডক্টর মাহিয়া শুকনো মুখ বললো… মিস্টার চৌধুরী আপনি আগে শান্তো হয়ে আমার কথাটা শুনো প্লিজ। দেখুন আপার স্ত্রী অনেক ব্লাড লস হয়েছে আর তাকে হসপিটালের আনার পেরে থেকে তাকে ট্রিটমেন্ট চলছে কিন্তু সেটা আপনার ওয়াইফের শরীলে রিস্পনস নিচ্ছে না। আমি আমার সিনিয়র ডক্টরের সাথে কথা বলেছি আমরা ও.টি রেডি করিয়ে রেখেছি আপনাদেরকে বলতে এসেছি আর একটা কাগজে সাইন লাগবে আপনার মিস্টার চৌধুরীর…
অর্ণবঃ কিসের পেপারে সাইন লাগবে আপনাদের।
ডক্টর মাহিয়াঃ দেখুন আমাদের হসপিটালের একটা রুলস আছে অপারেশন আগে তার বাড়ির লোকের কাছ থেকে একটা পেপারে সাইন লাগবে সেখানে লেখা আছে অপারেশন চলা কালিন বা পরে পেশেন্ট কিছু হলে হসপিটালের কতৃপক্ষের তাতে দায়ি না।
ডক্টর কথা শুনে অর্ণব রেগে বললো… আমার স্ত্রী কিছু হলে আপনাদের কাউকে আমি ছাড়বো না। সবাইকে জেলে পুরবো বলে দিচ্ছি আমি৷, আমার অন্তু যেনো সুস্থ হয়ে আমার কাছে আসে তা না হলে আমি এই হসপিটালের পুরিয়ে দেবো সাথে আপনাকেও…
অর্ণবে কথায় ডক্টর মাহিয়া ভয় পেয়ে যায়। অর্ণবের এই ভয়ংকর বানী শুনে সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়, আদি এসে সবটা সামাল দিয়ে বললো….
আদিঃ প্লিজ ডক্টর আপনি তো বুঝতে পারছেন আমাদের এখন কি অবস্থায় আছি। অর্ণব অন্তুকে অনেক ভালোবাসে তাই সে এটা মানতে পারছে না। আমি তার পক্ষ থেকে সরি বলছি..
ডক্টর মাহিয়াঃ ইট’স ওকে আমি বুঝছি। আপনি সাইনটা করে দেবেন তাই হবে আমরা ১০মিনিটের মধ্যে অপারেশন শুরু করবো।
আদি মাথা নেড়ে নার্সের হাত থাকা পেপারটা সাইন করে দেয়। ডক্টর চলে যাবে বলে পা পাড়ালে আবার কি মনে করে না গিয়ে অর্ণবকে বললো… আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো মিস্টার চৌধুরী ?
অর্ণবঃ কি কথা।
ডক্টর মাহিয়া আমতা আমতা করে বললো… আপনার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট ছিলো। কিন্তু গুলি লাগা আর অতিরিক্ত রক্তক্ষননে ফলে তার মিসকেরেজ হয়ে গেছে। আপনাদের অনাগত সন্তানটি আর এই পৃথিবীতে নেই সরি…
ডক্টর কথাটি বলে আর দাড়ালো না, তিনি জানেন এখন এখানে থাকা মনে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা। এদিকে ডক্টরের প্রতিটা কথা অর্ণবের কার্ণপনে বাজছে, তার অন্তু মা হতে চলেছিলো? সে বাবা হতে চলেছিলো। তাইলে অন্তু এতো দিন যে শরীল খারাপ হচ্ছিল সেটা এই জন্যে হচ্ছিল কিন্তু পাগলী মেয়ে বুঝতেও পারেনি তার মধ্যে নতুন একটা প্রান বেরে উঠছিলো ধীরে ধীরে। অর্ণব এখন এমন একটা পরিস্থিতি সমুখিনে দাড়িয়ে আছে যেখানে এই সত্যিটা তার কাছে সুখের যে সে বাবা হতে যাচ্ছিলো না-কি কষ্টে তার সন্তান অন্তুর পেটেয় মারা গেছে। অন্তু কি জানে এই কথা, না সে জানলে তো তাকে জানাতো কিন্তু এই কথা যদি মেয়েটা পরে জানে তাইলে কি হবে। অর্ণব নিজে ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেরে পরে যেতে নিলে আদি তাকে ধরে ফলে। অর্ণব আদিকে বলে…
অর্ণবঃ অন্তু জানে না তার পেটে একটা প্রান বেড়ে উঠছিলো। সে আমাকে বার বার বলতো তার বেবি চায়, কিন্তু আমি কথা ঘুড়িয়ে দিতাম কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি মেয়েটা আমাকে না বলে এমন একটা ডিসিশন নিজে একলা নিয়ে নেবে, নিলে তো নিলো পাগলী বুঝতেও পারলো না তার শরীল খারাপের কারন তার পেটে বেরে ওঠা বাচ্চাটির কারনে। মুড সুইং, খাবারের প্রতি আনহা, বমি করা সব দেখতাম কিন্তু এটা ভাবিনি সে প্রেগন্যান্ট হতে পারে না ও ভেবেছে। কালকে সে ডক্টরে কাছে গিয়েছিলো কিন্তু রেজাল্ট পায়নি। এখন আমার সন্তান আমাকে ছেড়ে আগেই চলে গিয়েছে সাথে তার মাকে ও নিয়ে যাবে, ভাইয়া প্লিজ আপনার বোনকে বলুন আমাকে যাতে না ছেড়ে যায়। আমি তার সব কথা শুনবো কিন্তু আমাকে একলা ফেলে যেনো না যায়।
আদির হাত ধরে পাগলের মতো আচরণ করে বলেতে লাগে অর্ণব। সবাই অন্তুকে নিয়ে চিন্তায় আছে কিন্তু অর্ণবকে নিয়ে বেশি করছে, ছেলেটা নিজেকে কি হাল করছে এই কয়েক ঘন্টা সময়ে। এমনটা যদি এখন হয় তাইলে আল্লাহ না করুক অন্তুর কিছু হয়ে যায় তখন সে কি করবে, সে তো মরে যাবে। আদি কিছু বলার মতো ভাষা পায় না….
______________________________________
দীর্ঘ ২ঘন্টা যাদব ওটির সামনে দাড়িয়ে আছে অর্ণব। অন্তুকে ভেতরে নেবার পর থেকে কেউ তাকে এখান থেকে সরাতে পারে না। মি.চৌধুরী সব জেনে এখানে আসলে অর্ণব তাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কান্না করেছে, অর্ণব সবার কাছে একই কথা বলেছে তার অন্তুকে যেনো তারা সবাই এনে দেয়। মি.চৌধুরী তার ভাইয়ে ছেলে ফিরে পাবার আনন্দ করবে নাকি অন্তুর অবস্থা দেখে কষ্ট পাবে সে জানে না। প্রাপ্য যখন তাকে বলে অর্ণব তাদের রোদ্দুর তখন তিনি খুশি হয় তারপরে অন্তুর কথা শুনে তিনি ছুটে আসে হসপিটালের। ওটির লাইট ওফ হলে অর্ণব সেখানে গেলে ডক্টর বেরিয়ে আসলে সে বলে…
অর্ণবঃ আমার স্ত্রী কেমন আছে?
ডক্টর মাহিয়াঃ অপারেশন সাকসেসফুল কিন্তু তার অবস্থা ওতটা ভালো না তাই তাকে অবজারভেশনে রাখা হবে ২৪ ঘন্টার জন্য দেখা যাক কি হয়। একটু পর তাকে আইসিইউতে দেওয়া হবে আপনাদের মধ্যে একজন তাকে দেখতে যেতে পারবেন।
বলে তিনি চলে যান। এদিকে সবাই স্বস্তির নিশ্বাস নিলো কিন্তু অর্ণবের মন তা মানছে না কিছুতেই। তার মনে হচ্ছে অন্তু তাকে ছেড়ে চলে যাবে কেমন ভয় হচ্ছে, বুকটা কেপে কেপে উঠছে, বার বার অন্তু সেদিন রাতে বলা কথা মনে পরছে। না সে আর ভাবতে পারছে না। অন্তুকে আইসিইউতে দিলে কাউকে তার কাছে যেতে দেয় না তাই বাইরে থেকে সবাই একবার দেখে নেয়। অর্ণব বাইরের কাঁচের গ্লাস থেকে তাকে দেখছে, মুখে অক্সিজেন মাস্ক, হাতে কেনলা লাগানো, কেমন নিশ্চিত শুয়ে আছে নেই কোনো চিন্তা, নেই ভাবনা, আরামে শুনে আছে আর তাকে টেনশন দিচ্ছে। হঠাৎ কি হলো রুমের ভেতর থেকে নার্স অস্থির হয়ে বেরিয়ে এসে ডক্টরকে ডেকে নিয়ে যায়, এদিকে সবাই অস্থির হয় যায় কি হলো ভেবে। অর্ণব বাইরে থেকে দেখ অন্তু কেমন করছে, ডক্টর তাকে ট্রিটমেন করছে কিন্তু ভেতরে কি হচ্ছে কেউ বুঝতে পারে না। অর্ণব শুধু অন্তুর দিকে তাকিয়ে আছে তার বুকটা কেমন মোচর দিলো কেন দিলো যানে না কিন্তু এমন কিছু হয়েছে যা ভালো না। একটু পর ডক্টর মাহিয়া শুকনো মুখ বেরিয়ে আসে তাকে আসতে দেখে আদি তার কাছে গিয়ে বললো…
আদিঃ কি হয়েছে ডক্টর? আমার বোনের কি হয়েছিলো? সে ঠিক আছে? ও তখন এমন করছিলো কেন?
ডক্টর মাহিয়াঃ আ’ম সরি আপনার বোন আর বেঁচে নেই। সি ইজ নো মোর…
ডক্টর কথা উপস্থিত সবাই চমকে যায়। দিদুন কান্না করতে করতে বসে পরে চেয়ারে তাকে ধরে কান্না করছে নিহিতা মির্জা। আকাশ মি.চৌধুরী সাথে দাড়িয়ে আছে, আয়ান আদির কাছে এসে দাড়ালে আদি বলে…
আদিঃ আয়ান দেখ ডক্টর কি বলছে আমার অন্তুপাখি না-কি মরে গেছে তাই কি কখনো হতে পারে। আমার বোন আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। একটু আগে তো ও ভালো ছিলো তাইলে কি এমন হলো যে ডক্টর বলছে সে মারা গেছে।
আয়ান আদিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। এদিকে অর্ণব সব শুনে পাথরের মতো দাড়িয়ে আছে তাকে দেখে কিছু বোঝা যাছে না তার মধ্যে কি চলছে। সে কি আদো অন্তু মৃত্যু কথা শুনেছে না কি সব শুনে সংকট পেয়েছে। সবাই অন্তুকে হারানো নিয়ে কান্না করলেও, অর্ণব অন্তুর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো… তুমি অনেক বার বেরেছো তাই আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছো তাই না। কিন্তু তুমি একটা কথা জানো না আমি যতখন এই পৃথিবীতে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছি তার মানে তুমি ও শ্বাস নিতে বাধ্য। দেখি তুমি আমাকে ছেড়ে একলা কি করে যেতে পারো বেয়াদব মেয়ে, সব সময় আমাকে কাঁদানোর ফন্দী কিন্তু আজ আমি কাঁদবো না। তোমাকে আমার কাছে আসতে হবে মানে আসতে হবে বাই এনি কোস্ট জান এনি কোস্ট……
চলবে….