#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_৪
Tahrim Muntahana
একমিনিট। ওকে তো এখন নিয়ে গেলে চলবে না -হৃদিতা
কেন -হৃদান
রাহি আমার ঘরে টেবিলের উপর আবদনের কপি আছে যা নিয়ে আয় -হৃদিতা
রাহি আবদনের কপিটা নিয়ে আসল।
সাইন কর। তুই টাকার লোভে কেন্সেল করেছিলি এখন জিবন বাঁচাতে গ্রান্টেড করবি। তোর আগে খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল হৃদিতা চৌধুরীর কলিজায় আঘাত করার পরিনাম কি হতে পারে। আর একে ছেড়ে দিন। ও দাড়িয়ে থেকে আমার জয় দেখবে -হৃদিতা
ওর কথা শুনে হৃদান বাঁকা হাসল। পরে সিএমকে কিছুক্ষন শাষিয়ে ছেড়ে দিল। তারপর সবাই একটু রিলেক্স হয়ে বসল।
হৃদি মামুনি ও হলো তোমার মামুনির ছেলে হৃদান -হৃদয়
মানে আলোআপু আর আনহুর ভাই? আপনার আরো আগে আসা উচিত ছিল ভাইয়া। বোনের বিয়ে বলে কথা -হৃদিতা
ভাইয়া ডাকটি শুনে হৃদানের রাগ হলো তাই চুপ করে আছে। আর হৃদিতা ও তার বন্ধুরা মুখ টিপে হাসছে। এটি আর কেউ লক্ষ্য না করলেও পিয়াস আর পরশ ঠিকই লক্ষ্য করেছে।
আর হৃদিপাখি ও হলো পিয়াস তোমার মামার ছেলে -পরশ
পরশের পিয়াসকে পরিচয় করাতে দেখে হৃদিতা ওর বন্ধুরা হো হো করে হেসে দিয়েছে। সবাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে হৃদিতা উঠে গিয়ে পিয়াস সামনের সোফায় বসে পড়ে। সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
তোমরা আমাকে ভাইয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছ সিরিয়াসলি। এই কালকে আমাদের সাথে ভাইয়ার কথা হলো আর তোমরা বলছ আমি চিনি না ভাইয়াকে হিহিহি -হৃদিতা
তুমি পিয়াস কে কিভাবে চিনো হৃদিপাখি -পরশ
আমি বলব নাকি পিয়াস ভাইয়া বলবে -হৃদিতা
আসলে আসলে -পিয়াস
আসলে আসলে করছো কেন জিজু -হৃদিতা
জিজুজুজুজু – সাগর,সোহান
ওইযে আমার বান্ধুপী দেখছো রোহানী কয়েকদিন পর তাহলে মোর ভাবী হবে -হৃদিতা
কিহহহহহহ -সবাই
রোহানি লজ্জা পেয়ে দৌড়ে হৃদিতার ঘরে চলে গেল আর পিয়াস নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে হৃদিতা বলল
কি ব্যাপার ভাইয়া তুমি এমন করে লজ্জা পাচ্ছো কেন। আমি বলছি সবাইকে। রোহানি আর ভাইয়া একে অপরকে ভালোবাসে ৪ বছর ধরে। ফেসবুকে পরিচয়। কিন্তু আমি জানতাম না যে পিয়াস ভাইয়া আমার কাজিন হয়
হৃদিতার কথা শুনে হৃদান বাদে পিয়াসের বন্ধুরা খাইয়া ফালামু লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে ওদেরকে না জানানোর জন্য তা দেখে পিয়াস একটি শুকনো ডুক গিলল। হৃদান আগে থেকেই জানতো ওদের সম্পর্কের কথা। সবাই আজকে শুধু অবাকের মধ্যে আছে বিশেষ করে সাগর সোহান পিয়ানি অরনী সোহা শুধু ফ্যালফ্যাল চোখে দেখে যাচ্ছে। হৃদান তো শুধু তার হৃদপরীকে দেখছে।ভেতরের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।
হৃদপরী আমার কাছে আয়
হৃদয় চৌধুরী পরশী চৌধুরী পরশ পিয়াস বাদে কেউ বুঝতে পারছে না কাকে বলছে। হৃদিতা বুঝেও না বুঝার ভান করে বসে আছে। হৃদানের আর সহ্য হলো না টান মেরে উঠিয়ে নিজের কাছে বসালো। হঠাৎ এরকম হওয়ার হৃদিতা সহ সবাই অবাক হয়ে চেয়ে আছে। বাচ্চারা কথা বলছে বলে হৃদয় চৌধুরী নিজের ঘরে চলে গেল আর পরশী চৌধুরী রান্নাঘরে।
হৃদপরী আমাকে চিনতে পারছিস না আমি তোর হৃদরাজ। তোর মনে নেই আমাকে
কাকে বলছেন ভাইয়া? কে হৃদপরী কে হৃদরাজ এসব কি নাম। হাউ রোমান্টিক। খুব সুন্দর নাম তো। কিন্তু আমার তো মনে পড়ছে না এর আগে আমি আপনাকে কোথাও দেখেছি। এই প্রথম আমি আপনাকে দেখলাম। এমনকি কোনো ছবিও দেখি নি। কত বলতাম আলো আপু আনহুকে আমাকে দেখাতো না
মন খারাপ করে বলল হৃদিতা। হৃদিতার কথা শুনে হৃদানের মনে হচ্ছে ওর কলিজাটা পুড়ে যাচ্ছে। ও তো জানতো এরকমই হবে তবুও এত কষ্ট কেন হচ্ছে। মানতে পারছে না হৃদান। চোখ লাল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এখনি পানি পড়বে। নিজেকে ঠিক করে হৃদিতার দিকে তাকালো। বাকিরা সবাই ওদেরকেই দেখছে। পিয়ানি তো রেগে একাকার। কিছু বলতেও পারছে না সইতেও পারছে না।হৃদিতা হৃদানকেই দেখছিল এতক্ষন। হৃদান এর চোখ দেখে হৃদিতার খুব কষ্ট হলো। ও এই চোখের ভাষা বুঝে। কতটা কষ্ট পেলে একটা ছেলে কান্না করতে পারে সেটা ও জানে কিন্তু তবুও নিজের রাগটাকে দমন করতে না পেরে মিথ্যে অভিনয় চালিয়ে গেল।
ভাইয়া কি হয়েছে আপনার এরকম করছেন কেন
এই মেয়ে কে তোমার ভাইয়া হয়। একটা থাপ্পড় দিব আরেকবার ভাইয়া ডাকলে। কলড মি হৃদরাজ। আই সে কলড মি হৃদরাজ
ধমক দিয়েছে হৃদিতা ভয় না পেলেও ভান করে বলল
বলছি বলছি হৃ হৃ হৃদরাজ
দেটস লাইক এ মাই গার্ল। এরপর থেকে যেন এই নামটাই শুনি
হৃদিতা অবুঝের মতো মাথা নাড়ালো। প্রিয় মানুষটার মুখে প্রিয় নামটা কত বছর পর শুনে হৃদানের কলিজাটা মনে হলো ঠান্ডা হয়ে গেল। কতবছর অপেক্ষা করেছে এইনাম টা শুনার জন্য। পিয়ানির কষ্টে চোখ ছলছল করছে। হৃদান কে ও সত্যিই খুব ভালোবাসে সেই ৩ বছর ধরে। হৃদান ও জানে বিষয়টা। অনেকবার বলেছে কিন্তু পাত্তা দেই নি। শুধু বলতো তোকে আমি বন্ধু ছাড়া কিছু ভাবি না। ফারদার এসব বলবি না নাহলে বন্ধুত্বটাও রাখবো না। পিয়ানিও আর বলতো না কিন্তু হঠাৎ করেই আবেগি হয়ে বলে ফেলতো। একদিন রাতে হৃদানকে বলেছিল ভালোবাসার কথা হৃদান না জানিয়ে দিলে পিয়ানি জেদ ধরে আর সেদিন হৃদান রেগে অনেক কথায় বলেছিল তারপর থেকে বন্ধুর মতোই থাকে আবার একটু বেশী বেশী করেও। হঠাৎ করেই পিয়ানি বলে উঠল
বেবী আমিও হৃদরাজ ডাকি তোমায়
হৃদিতার মনে হলো কেউ ওর গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। হৃদান রেগে কটমট করে তাকালে পিয়ানি চুপ হয়ে যায়
হৃদরাজ শুধু হৃদপরী। ডাকার অধিকারও একমাত্র তার। সো ডন্ট বি ট্রাই পিয়ানি
সরি বেবী
বেবী ডাকটা শুনে হৃদিতা হো হো করে হেসে দিলো। ওর হাসি থামছেই নাহ কেউ বুঝতে পারছে না হঠাৎ কি হলো যে এইভাবে হাসছে।
লাইক সিরিয়াসলি। বেবী। এত বড় দামডা পোলা যদি বেবী হয় তাহলে আমি তো এখন মমের পেটেই হয় নাই। হাহাহা বেবী। ভাইয়া না মানে হৃদরাজ আপনার যে সমবয়সী একটা মা আছে আগে বলেন নি তো।হাহাহা
হোয়াট কি বলিস এইসব -হৃদান
হৃদিতার কথা শুনে সবাই আরেকদফা হাসলো পিয়ানি খুব অপমানিত হলো। পিয়ানির চোখ ছলছল করছে। ওর বন্ধুদেরও ওর ন্যাকামো পছন্দ না। কম তো পিছে ঘুরলো না। পাত্তা যেহেতু দেয় না তখন এত ন্যাকামোর কি আছে। এমন সময় পরশী চৌধুরী আসলো রান্না ঘর থেকে। এসেই ওদের ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার তাগাদা দিলো। ওরাও ফ্রেশ হতে গেল।
হৃদপরী আমাকে তোমার রুমে নিয়ে চলো -হৃদান
তুই ওর রুমে যাবি কেন -পিয়ানি
আমার ইচ্ছা তুই তোর মতো ফ্রেশ হো। রোহানি ওদের নিয়ে যাও আর পরশ তুই সাগর আর সোহানকে নিয়ে যা। আমি আমার হৃদপরীর সাথে যাবো। সো চলো হৃদপরী -হৃদান
বলেই হৃদিতার হাত ধরে উপরের দিকে চলে গেল। পিয়ানি রাগ নিয়েই রোহানির সাথে গেল। হৃদান হৃদিতার রুমে ঢুকেই শকড হয়ে গেল।
ঘরটা অনেক বড়। একপাশে আলমারি রাখা তার পাশেই ড্রেসিং টেবিল। জানালার একটু দূরেই একটা গোল বিছানা। সারা বিছানা আলমারি টেডি বিয়ার দিয়ে ভরা। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলো রুমের মধ্যে আরেকটি রুম। তাড়াতাড়ি সেখানে গেল। গিয়ে দেখলো একপাশে পড়ার টেবিল তার পাশেই বুকসেল্ফ। শতশত বই এ ভরা বুকসেল্ফ। সাজানো হয়েছে নিপুন ভাবে। বুকসেল্ফের একদিকে সাহিত্যিক বই। আরেপাশে সব বিভিন্ন রাইটারে গবেষণা বিষয়ক থ্রিলার বই সব ধরনের বই আছে। ওই রুমের উল্টো পাশে আরেকটি কাচের সেল্ফ। সেই সেল্ফ শুধু বিভিন্ন টফিতে ভরা। গানের প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট প্রাইজ ১১ টি নাচের জন্য ৯ টি ক্লাস ৪ থেকে এই পর্যন্ত টপ হয়েছে তার জন্য ১২ প্রাইজ। দৌড় প্রতিযোগিতায় ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার ৬ আরো অনেক পুরস্কার রয়েছে। এতসব দেখে অন্য কেউ হয়তো মাথা ঘুরে পড়ে যেত কিন্তু হৃদান চৌধুরী তো হৃদান চৌধুরীই সে তো তার হৃদপরীর বিষয়ে সব জানতো। তাই স্বাভাবিক ই আছে। হৃদান এতক্ষন রুম পর্যবেক্ষন করছিল। কিন্তু এখানে শিউলী ফুলে মো মো করছে রুমটা তাই বেলকনিতে গেল। ওর তো এই রুমটা খুব পছন্দ হয়েছে। হৃদান ঠিক করেছে ঠিক এইরকম একটা রুম ই তার হৃদপরীর জন্য বানাবে। দেরী হচ্ছে বলে হৃদিতা তাড়া দিলো হৃদানকে। হৃদানও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। সবাই ডাইনিং এ বসে আছে। হৃদিতা গিয়ে ওর ভাইয়ুর পাশে বসল। তারপাশেই হৃদান বসলো। পিয়ানি অবশ্যই জায়গা রেখেছিলো ওর জন্য হৃদান রোহানি কে পিয়াসের পাশে বসিয়ে নিজে হৃদিতার পাশে বসলো। রোহানির খুব লজ্জা লাগছে। সবাই জেনে গেল। পিয়াস তো তার প্রিয়তমার লজ্জা রাঙা মুখটা উপভোগ করছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে। পরশ যখনি হৃদিতাকে খাইয়ে দিবে পিয়ানি তা দেখে বলল
হৃদিতা তুমি কি এখনো ছোট যে খাইয়ে দিতে হবে তোমাকে -পিয়ানি
মেহমান বলে হৃদিতারা কিছু বলল না। পরশও হাত মুঠো করে আছে। পিয়ানি সম্পর্কে ও সব জানে তাই একে ও সহ্য করতে পারে না। হৃদান ভ্রু কুচকে চোখ ছোট করে তাকালো ওর দিকে।
পিয়ানি এটা কোন ধরনের কথা। ছোট না থাকলে খাইয়ে দেওয়া যাবে না। আর তুই এইসব বলছিস কেন -অরনী
একজন বাচ্চাকে যেভাবে খাইয়ে দেই সেই ভাবে খাইয়ে দিচ্ছে তাই বললাম -পিয়ানি
ফাস্ট কথা মিস পিয়ানি এটা নতুন না। আমি কখনো নিজের হাত দিয়ে খাই না। সকালে মম দুপুরে ভাইয়ু রাতে পাপা খাইয়ে দেই। আর আমি যত বড়ই হই না কেন আমার মম পাপা ভাইয়ুর কাছে এখনো সেই ছোট বাচ্চাটিই আছি। তাই এত যত্ন করে খাইয়ে দেই আমাকে। আর আপনি এই প্রথম আসলেন বাংলাদেশে তাই হয়তো জানেন না। পরশ চৌধুরীর কাছে তার বোন কি সেই তথ্য প্রায় সবাই জানে। আর হৃদিতা চৌধুরী কখনো কারো টিটকেরী শুনতে পছন্দ করে না তাই আমার সাথে একদম লাগতে আসবেন না। সরি হৃদরাজ আপনার বন্ধু অপমানিত হলে আমার কিছু করার নেই। আমার সাথে কেউ কখনো এইভাবে কথা বলে না -হৃদিতা
হৃদান কিছু বললো না কটমট চোখে পিয়ানির দিকে তাকালো। হৃদপরীর একটু মন খারাপ ওর সহ্য হয়না। ওরা খেয়ে বেরিয়ে গেল। রিদিমা চৌধুরী অপেক্ষা করছে। হৃদান অবশ্যই হৃদিতাকে সাথে করে নিয়ে যেতে চাইছিল কিন্তু হৃদিতা যায় নি। হৃদিতার যে এখন খুব খুশি। ওর হৃদরাজ ওকে ভালোবাসে আর কি চাই?
চলবে…..?