তুমি নামক অক্সিজেন পর্ব -২৮ ও শেষ পর্ব

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_২৮
Tahrim Muntahana

রোহানি খান বাড়ির সামনে গাড়ির উপরে বসে সেলফি উঠছে বিভিন্ন পোজ নিয়ে। অন্যদিকে কোনো খেয়াল ই নেই। যখন হৃদিতাদের দেখতে পেলো খুশিতে দৌড়ে পিয়াসকে জড়িয়ে ধরে গালে শব্দ করে চুমু খেলো। সবাই আহম্মক হয়ে তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে এখানে রোহানিকে দেখে আগেই অবাক হয়েছে পিয়াসকে চুমু খাওয়ার ব্যাপারটাই সবাই বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে আর পিয়াস তো এখনো হতবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে মুখ হা করে। রোহানি অতিমাত্রায় খুশি হয়ে কাজ টা করে ফেললেও যখন বুঝতে পারলো সবার সামনে কি করে ফেলছে তখন লজ্জা পেয়ে দৌড়ে আবার গাড়ির কাছে চলে গেলো। এটা দেখে সবাই জোরে হেসে দিলো পিয়াস ও হালকা হেসে এগিয়ে গেলো।

হৃদান অরনিকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। হৃদান অরনির ফ্যামিলির সাথেও কথা বলে নিয়েছে। সব ঠিক ঠাক। একসাথে পাঁচটা বিয়ে হবে। হৃদান+হৃদিতা, রাইসা+পরশ, রোহানি+পিয়াস, অরনি+আহিল, রিয়া+সাগর এর। অনেক কাজ। একসপ্তাহ আগেই সবাই রিসোর্ট চলে যাবে। অনেক বড় একটা রিসোর্ট বুক করেছে। ওখানে যাওয়ার আর চারদিন অবশিষ্ট আছে। তাই সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। বিয়ের কার্ড সবাই মিলে একটাই ঠিক করেছে যেখানে পাঁচজনের নাম ই আছে। সবাই প্রায় আত্মীয়দের মধ্যেই বলে কাজটা খুব সহজ হয়েছে। পরশ নাশিন হৃদান সাগর পিয়াস খুব ব্যস্ত। বিয়ের জন্য প্রায় এক সপ্তাহের বেশী অফিসে যেতে পারবে না তাই কাজগুলো করে রাখছে। আহিলের বড়ভাই থাকায় তেমন কোনো প্রেশার যাচ্ছে না ওর উপর। সেই সুযোগে অরনির সাথে চুটিয়ে প্রেম করছে। হৃদান ওরাও কম যায় না কাজের ফাঁকে ফাঁকে ঠিক প্রেয়সীর খোঁজ খবর নিচ্ছে। হৃদিতা ওরা ভিষন ব্যস্ত। পড়াগুলো কমপ্লিট করে রাখছে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রতিযোগীর অভাব নেই তাই নো রিস্ক।

মধ্যে কেটে গেছে দুইদিন। রাহিকে অনেক কষ্টে সোহান বুঝিয়েছে যে মেয়েটা ওর বোন হয়। নাথিং এলস। এক্ষেত্রে হৃদান ওরাও সাহায্য করেছে। রাহিও মেনে নিয়েছে কিন্তু মুখ ফুটে কেউ ভালোবাসার কথা বলে নি। এর মধ্যে সবাই একজোট হয়েছিলো। বিয়ে উপলক্ষ্যে কিছু কাজিনরা আগেই চলে এসেছে, সবাই মিলে পরিচিত হয়ে নিয়েছে। রাহিরও কাজিনরা এসেছে। তারমধ্যে রাহির এক কাজিন নাম কনিক ছেলেটা সবসময় রাহির সাথে চিপকে থাকতে চায়। যদিও ওরা বন্ধু। কনিকের গার্লফ্রেন্ড আছে কেউ জানেনা রাহি ছাড়া।

আজ সবাই মিলে শপিং করতে যাবে। আজকেই যাবতীয় সবকিছু কিনে নিবে। পাঁচটা বিয়ে অনেক কিছু কিনতে হবে। শহরের সবচেয়ে বড় শপিংমলে যাবে শপিং করতে এটা হৃদানের ইচ্ছা। কোনো কিছু কমতি রাখতে চায় না। বড়রা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিনে নিয়েছে তাই আজ ছোটরা যাবে। সবাই গেলেও সোহান আজ যেতে পারবে না। আধির সাহিল ও বিয়ের একটা কাজে গেছে।সোহানের অফিসে ইমপরটেন্ট মিটিং পড়ে গেছে তাই যেতে পারবে না। আর কেউ জোর ও করলো না। সবাই বিকেলের দিক দিয়ে বেরিয়ে পড়লো রাতে ডিনার করে ফিরবে। অনেক শপিং করতে হবে আর অনেক মানুষ যাবে ওদের সাথে তাই হৃদান আগেই শপিংমলের ম্যানেজার কে বলে শপিংমলের ভিড় কমাতে বলেছে। তাই শপিংমলে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ শপিং করছে আর হৃদান ওরা। যে যার মতো শপিং করছে।

বিয়ের শাড়ি না লেহেঙ্গা নিবো। আমরা সবাই কিন্তু একরকম নিবো বিয়ের জন্য -রোহানি

তাহলে বলবো লেহেঙ্গা নাও -হৃদান

শাড়ি কেন নয় -অরনি

আমার পাখি শাড়ি সামলাতে পারে না -হৃদান

ওরে আল্লাহ কি কেয়ার -রোহানির এক কাজিন

পিচ্চিটা তো আমার প্রাণ ছোট আপু। ওর একটু কষ্ট ও আমার সহ্য হয়না -হৃদান

তোর মতো প্রেমিক পুরুষ কম ই আছে রে ভাই -পিয়াস

নিজে তো হতে পারলে না ডং -রোহানি

আমিও তোমাকে ভালোবাসি। আর কতটা ভালোবাসি সেটা তুমিও জানো সো আমার ভালোবাসায় আঙুল তুলবে না রোহু -পিয়াস

হুমম হইছে আসেন -রোহানি

রোহানি হালকা হেসে অন্যদিকে গেলো। হৃদিতা বিয়ের শপিং বাদ দিয়ে টেডিবিয়ার দেখছে। আর যেটা পছন্দ হচ্ছে নিয়ে নিচ্ছে। হৃদান হৃদিতার কাছে গেলো অনেক গুলো টেডি নিয়ে নিয়েছে বিয়ের শপিং ও বাকি আছে। অন্যদিকে রাহি শপিং করা শেষ। কনিক ছেলেটা রাহির সাথেই আছে সবসময় তা দেখে কাজিন গোষ্ঠীর অনেকেই কানাঘোষা করছে। কিন্তু তাতে ওদের কিছু যায় আসে নাকি। রাইসা একের পর একে জুয়েলারি দেখেই যাচ্ছে একটাও পছন্দ করতে পারছে না। পরশ বিরক্তিমার্কা মুখ বানিয়ে ওর পিছু পিছু যাচ্ছে। রেখে কোথাও যেতেও পারছে না যে ড্রামাকুইন কি জানে না দেখে কি শুরু করে। নাশিন অনেকক্ষণ ধরে আনহা কে মানানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পিচ্চু মানছেই না। আসলে কাজের চাপে কিছুদিন ওদের কথা হয়নি তাই নিয়ে অভিমান হয়েছে। রিয়াকে সাগর সবকিছু পছন্দ করে দিচ্ছে। বিয়ের লেহেঙ্গা জুয়েলারি সব হৃদান হৃদিতার পছন্দে কিনেছে কারণ ওদের পছন্দটাই বেস্ট হয়েছে। প্রায় সব কিনা শেষ কিছু বাকি আছে। তারমধ্যে হালকা কিছু নাস্তাও করে নিয়েছে। সোহানের মিটিং খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে তাই ও শপিং এ জয়েন হবে বলে এসেছে। কয়েকদিন ধরে বেচারার উপর অনেক প্রেশার গেছে। রাহি মানলেও সোহানের থেকে যথেষ্ঠ দূরত্ব বজায় রেখে চলে। এর কারণ সোহান খুঁজে পায়নি তাই নিজেই একটু কাছে আশার চেষ্টা করে কিন্তু বেশী লাভ হয়না।

রাহি কনিক আর ওর কিছু কাজিন হৃদিতাদের সাথে কিছু নিয়ে আলোচনা করছে। রাহির মনটা খারাপ। হয়তো সোহানের জন্য। কথা বলার মাঝখানেই রাহির একটু মাথাব্যথা করছিলো বলে দূরে গিয়ে বসলো তার সাথে সাথে কনিক ও গেলো। বসে থাকতেই রাহি সোহানকে আসতে দেখলো। সাথে সাথে কনিকের হাত শক্ত করে ধরলো। কনিক তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। পরে রাহির ইশারায় সামনে তাকিয়ে দেখে সোহান আসছে তাই ও রাহির আরেকটু কাছে এসে বসলো। সোহান আগে দেখতে না পারলেও পরে ঠিক লক্ষ্য করলো। আপনাআপনি বুকে চিনচিন ব্যাথা করে উঠলো। হয়তো ভালোবাসার মানুষটাকে হারানোর ব্যাথা। চোখ ছলছল করছে সোহানের। রাহি আড়চোখে ঠিক খেয়াল করছে। সোহান ফোন বের করে রাহিকে ফোন দিলো। রাহি এটাই চাইছিলো তাই কেটে দিলো তাড়াতাড়ি। চারবার এইভাবে কেটে দেওয়ার পর ধরলো।

হ্যালো রাহুপাখি কোথায় তুমি

শপিং এ এসেছি আপনি তো জানেন তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন

ওওহ হ্যাঁ তুমি একা আছো নাকি সাথে কেউ আছে

কেন তা দিয়ে আপনি কি করবেন

বলোই না একটু একা নাকি সাথে আছে কেউ

রাহি ইচ্ছা করেই একটু আমতা আমতা করে বললো ওর সাথে কেউ নেই সে একাই আছে। কিন্তু সোহান দিব্যি দেখছে ও কনিকের হাত ধরে বসে আছে। সোহানের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এমনিই কয়েকদিন ধরে ইগনোর করছে তারউপর এই ছেলেটার সাথে ডলাডলি করছে আবার মিথ্যেও বলছে। তাই রেগে এগোতে যাবে তার আগেই কেউ একজন ওর হাত ধরে আটকে দিলো আর ওখান থেকে দূরে নিয়ে গেলো।

কি হয়েছে এভাবে নিয়ে আসলি কেন? দেখ হৃদ তোর সাথে পরে কথা বলছি আগে আসছি আমি

কষ্ট হচ্ছে?

মানে…

মানে রোহানি আর কনিক কে দেখে কষ্ট হচ্ছে? হাত ধরেছে বলে বুকে চিন চিন ব্যাথা করছে? মিথ্যে বলেছে বলে রাগ হচ্ছে?

রাগ হবে না কেন ও মিথ্যে বললো কেন? এমনিই আমাকে কয়েকদিন ধরে ইগনোর করছে তারউপর ওই ছেলেটা সবসময় ওর সাথে চিপকে থাকে আবার হাত ধরে বসে আছে। আমার রাগ হওয়া কি স্বাভাবিক নয়

কেন? কেন তোর রাগ হবে

কারণ আমি ওকে ভালোবাসি। হ্যাঁ আমি রাহুপাখিকে ভালোবাসি

ওকে বলেছিস

না

তাহলে কোন দিক দিয়ে অধিকার খাটাবি? আর মিথ্যে বলছে বলে তোর রাগ হচ্ছে তুই যখন মিথ্যে বলেছিলি ওর রাগ হয়নি?

কি বলতে চাইছিস

তুই যখন তোর ওই সো কল্ড ফুফাতো বোনের সাথে হাত হাত রেখে হেসে হেসে কথা বলছিলি আর শপিং করছিলি তখন ওর খারাপ লাগেনি? ফোন দিলে ধরছিলি না তখন ওর কষ্ট হয়নি? ফোন ধরে মিথ্যে বলেছিলি তখন ওর বুকে ব্যাথা করেনি?

হৃদ তুই ও আমাকে ভুল বুঝলি? আমি মনে করেছিলাম আমার সাথে মেয়ে আছে শুনে রাহি রাগ করবে ভুল বুঝবে তাই

সত্য কোনোদিনও মিথ্যে হয়না সোহান। তোর সেদিন মিথ্যে বলা একদম ঠিক হয়নি। মানছি তোর বোন হয়। তুই তাকে বোনের চোখেই দেখিস কিন্তু সে তো তোকে ভাইয়ের চোখে দেখে না। হ্যাঁ সে তোকে সাইয়া বানানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আর একটা সম্পর্কে সর্বপ্রথম বিশ্বাস থাকাটা জরুরি। সেই বিশ্বাস এই যদি ফাটল ধরে তখন সম্পর্ক টিকে না সেখানে তোদের সম্পর্ক তো শুরুই হয়নি। তোর সত্য শুনে রাহি যদিও রাগ করতো সেই রাগ কিন্তু এতদিন থাকতো না। তোর প্রতি আরো বিশ্বাস বাড়তো কমতো না। আর তোর রাহিকে আরো চেনার বাকি আছে। রাহি ওরা ওই টিপিক্যাল মেয়েদের মতো করে নিজেদের তৈরী করেনি। সবসময় সত্যের উপর থেকে কাজ করে। আর আমার মনে হয়না ফুফাতো বোনের কথা বললে রাহি রাগ করতো।

কথাগুলো বলে হৃদান থামলো একটু থামলো। সোহান মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে। সোহান বেশ অনুতপ্ত আগে থেকেই। এখন হৃদানের কথা শুনে আরো অনুতপ্ত হলো। হৃদান ওর মনের কথাটা বুঝতে পারলো তাই ফুস করে দম ছেড়ে আবার বলতে শুরু করলো

ওই ছেলেটা রাহির বেস্ট ফ্রেন্ড কাজিন গোষ্ঠীর মধ্যে ধরতে গেলে ভাইবোনের মতো। কনিকের গার্লফ্রেন্ড ও আছে। তোকে নিজের ভুলটা ধরিয়ে দিতে এসব করছে রাহি। এখন রাহিকে মানানো তোর উপর। যা রাগ ভাঙিয়ে মনের কথা বলে দে। আমি তোর সাথে আছি

হৃদানের কথা শুনে সোহানের মুখে একটু হাসি ফুটে উঠলো। সোহানের হৃদানের সাথে খুশিতে হাগ করে তাড়াতাড়ি রাহির কাছে গেলো। হৃদান ও মুচকি হেসে পিছে ঘুরে দেখে হৃদিতা দাড়িয়ে আছে। ওর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হৃদান বুঝলো তার হৃদপরী সব শুনেছে। হৃদিতা কিছু বলতে যাবে তার আগেই হৃদান ইশারায় চুপ থাকতে বললো। হৃদিতা আর বললো না মুচকি হেসে হৃদানের সাথে যেতে লাগলো।

সোহান গিয়ে রাহির সামনে বসলো হাটু গেড়ে। রাহি এতক্ষণ একায় বসে ছিলো। সোহান কে এইভাবে বসতে দেখে রাহি সহ এখানের যারা যারা ছিলো সবাই অবাক হয়ে গেছে। রাহি কিছু বলতে যাবে তার আগেই সোহান ঝট করে রাহির হাতদুটো নিজের হাতের মধ্যে আকড়ে ধরলো। রাহির চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। এতগুলো মানুষ চেয়ে আছে দেখে তাড়াতাড়ি হাত সরাতে গেলেই সোহান আরো শক্ত করে আকড়ে ধরলো। রাহির বুক ধরফর করছে

আই এম সরি রাহুপাখি। আমি সত্যিই বুঝিনি ব্যাপার টা বিশ্বাস করো। আমি ভেবেছিলাম তুমি শুনে রাগ করবে তাই মিথ্যে বলেছিলাম। আর কোনো দিন এমন করবো। পরিস্থিতি যেমনি হোক সবসময় সত্য বলবো আর সব কথায় তোমাকে শেয়ার করবো। প্লিজ একটা সুযোগ দিবে। সারাজীবন আগলে রাখবো। একবার হাত টি ধরো আর কোনোদিন ছাড়বো না। খুব ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে। দিবে একটা সুযোগ

সোহানের কথা শুনে রাহি স্তব্দ হয়ে বসে আছে। মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছে। চোখ থেকে দুয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিলো, সোহান খুশিতে রাহিকে জড়িয়ে ধরলো। চারদিকে হাততালির শব্দে ওদের ধ্যান ভাঙলো। ভিড় দেখে হৃদিতা ওরাও এসে এসব দেখে, সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#অন্তিম_পর্ব
Tahrim Muntahana

চারদিন হলো বিয়ে উপলক্ষ্যে সবাই রিসোর্টে চলে এসেছে। পুরো দমে রিসোর্ট সাজানোর কাজ চলছে। রিসোর্টের এক বিল্ডিং এ মেয়েরা আরেক বিল্ডিং এ ছেলেরা আরেক বিল্ডিং এ বয়োজেষ্ঠরা আরেক বিল্ডিং এ আত্মীয় দের জন্য রাখা হয়েছে। সব গোজগাজ করে নিয়েছে এসেই। এরমধ্যে কয়েকজায়গায় ঘুরাঘুরি ও শেষ। আজ দুপুরে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে আর সন্ধ্যায় মেহেন্দি। স্টেজ সাজানো শেষ। সবাই রেড়ি হয়ে বসে আছে এখন শুধু কনেদের আসার পালা।
কথা বলার মাঝখানেই হঠাৎ করে বরেরা উঠে নিজেদের রুমের দিকে হাটা দিলো।
রুমে এসেই একজনকে ফোন দিয়ে কথা বলি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।

হৃদিতা রা সবাই সবুজের বাসন্তি পাড়ের শাড়ি পড়ে গায়ে ফুলের গহনা পড়ে বসে ছিলো। রাহি আর আরিয়া সবাইকে রুম থেকে বের করে দিয়ে নিজেরাও বের হয়ে গেছে।হৃদিতারা কিছু না বুঝে বের হতে যাবে তখনি বেলকনি তে কয়েকটা পায়ের শব্দ শুনে থেমে গেলো। উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে সবাই। একে একে রুমে প্রবেশ করলো হৃদান পিয়াস পরশ সাগর আহিল। ওদের রুমে দেখে সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। নিজেদের প্রেয়সীদের এমন রিয়েকশন দেখে বাঁকা হেসে এগিয়ে গেলো। সাথে সাগর একটা থালায় হলুদ নিয়ে এসেছে সেটাও বের করে যার যার প্রেয়সীকে হলুদ লাগালো। হৃদানের তো হার্টবিট মিস হয়ে গেছে হৃদিতাকে এই সাজে দেখে। বেশীক্ষণ দেরী না করে আবার চলে আসলো।
___________

হাসি মজার মধ্যে দিয়ে হলুদ মেহেন্দি সব শেষ হয়েছে। আজ বিয়ে সবাই ছুটোছুটি করছে কাজের জন্য। অনেক প্রতিক্ষার পর এই সময়টা আসলো। কারো বারো বছরের অপেক্ষা, কারো চার বছরের অপেক্ষা, কারো সাত বছরের অপেক্ষা আবার কারো কিছুসময়ের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেই সময় টা আসলো। হৃদান তো পার্লারের মেয়েদের একপ্রকার থ্রেট দিয়েছে তার হৃদপরীকে যেন ন্যাচারাল ভাবে সাজায় কোনো প্রকার মেইকাপের প্রলেপ যেন না থাকে। অন্যদিকে রাইসা রোহানি অরনি সেজেই যাচ্ছে তো সেজেই যাচ্ছে। রিয়া সাজ কমপ্লিট করি সেলফি উঠছে। ওদের কথা হলো বিয়ে তো একবার ই করবো মজা না হলে হবে। নিজেদের বিয়েতে নিজেরাই মজা করবো।

সবার সাজ কমপ্লিট হলে বড়রা ছোটদের পাঠিয়ে দিলো কনে আর বরদের দের আনার জন্য। কবুলের আগে কেউ কারো মুখ দেখতে পারবে না। মাঝখানে বড় সাদা একটা পর্দা টানানো। কনেদের দেখে সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ বরেররাও কম যায় না। মেইড ফর ইচ আদার।
কাজি আসলো বিয়ে পড়ানোর জন্য। আগে পরশের বিয়ে পড়ানো হবে কিন্তু বাঁধ সাধলো হৃদান। নাহ আগে ওর বিয়ে পড়াতে হবে। সবার থেকে ও বেশী অপেক্ষা করেছে এই দিন টার জন্য তাই সবার আগে কবুল শব্দটা সে বলবে। হৃদানের বাচ্চাতের মতো জেদ করা দেখে চারদিকে হাসির রোল পড়ে গেলো। হৃদানের পাগলামি দেখে হৃদিতাও হাসছে আবার লজ্জাও পাচ্ছে। হৃদান হৃদিতারই বিয়ে আগে হবে ঠিক হলো। কাজি একবার কবুল বলতে বলছে হৃদান একসাথে তিনবার ই বলে দিছে, হৃদিতাও কম যায় না একটু থেমে নিজেও গড়গড় করে বলে দিয়েছে। এইভাবে সবাই খুব তাড়াতাড়ি কবুল বলায় সবাই বুঝে গেছে এরা কত বিয়ে পাগল। হবেই না কেন কতদিনের প্রতিক্ষা। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর মাঝখানের পর্দাটা সরিয়ে দিলো। সরিয়ে দিতেই বরেদের মুখ তো হা হয়ে গেলো। কোনো দিকে ধ্যান নেই দেখেই যাচ্ছে তো দেখেই যাচ্ছে। কনেরাও ক্রাশ খেয়ে গেছে নিজেদের বরদের দেখে। বিয়েতে ছবি না উঠলে কি চলে। লজ্জাসরম ভুলে একেরপর এক পোজ নিয়ে ছবি উঠছে জুটিগুলো। ওদের দেখে মনেই হচ্ছে না পরিবার ছেড়ে চলে যাবে। ওদের কথা হলো বিদায়ের সময় তো কান্না করবেই এখন মন খারাপ করে কি লাভ। এনজয় করতে হবে তো। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই কাজিন গোষ্ঠীরা কনেদের যার যার বরাদ্দকৃত বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে আসে। দুয়েকজন করে সবার ঘরের সামনেই দাড়িয়ে ছিলো টাকার জন্য। বরেরা দেড়ী না করে সাথে সাথেই দিয়ে বাসর ঘরে ঢুকে ঠাসসস করে দরজা বন্দ করে দিয়েছে। আজ অনেকদিনের অপেক্ষার পর নিজের প্রেয়সী কে আপন করে পেয়ে হয়তো কেউ ভালোবাসা সিক্ত হচ্ছে কেউ হয়তো জোসনা বিলাস করছে আবার কেউ হয়তো হাত হাত রেখে নানা গল্পে মেতে উঠেছে।
_________________

রিসোর্টেই রিসেপশন হয়ে গেছে। এখন প্রায় রাত নয়টা বাজে। আজকে কনেরা বিদায় নিবে। কনেদের সবার মুখ কালো হয়ে আছে। বিশেষ করে হৃদিতা। পরশ যে নিজে বিয়ে করেছে তার কোনো লক্ষণ ই নেই বোনের জন্য কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে একটা করে ফেলেছে নাশিন ও তেমন। ঠিক যাওয়ার আধাঘন্টা আগে থেকেই হৃদিতা আর রিয়া পরশ আর নাশিনকে জড়িয়ে ধরে আছে, ছাড়ছেই না। কান্না পাচ্ছে কিন্তুু হৃদানের চোখ রাঙানিতে কাঁদতেও পাচ্ছে না। হটাৎ হৃদান সবার মাঝেই হৃদিতার জন্য এক গ্লাস শরবত নিয়ে আসলো। তা দেখে সবাই মন খারাপের মাঝেও হেসে দিলো।

হৃদপরী সেই কখন খেয়েছো এখন এই শরবত টুকু খাও ভালো লাগবে

না আমি খাবো না। আমার খেতে ইচ্ছে করছে না

আমি তোমার কথা শুনতে চাইনি আমি অর্ডার করছি তোমাকে

প্লিজ

হৃদান রেগে তাকাতেই হৃদিতা ঠাসস করে গ্লাসটা নিয়ে এক চুমুকে খেয়ে নিলো। হৃদান মুচকি হেসে গ্লাসটা সারভেন্টের কাছে দিয়ে দিলো। খাওয়ার পর হৃদিতা ওর পাপা মমের কাছে যাবে তার আগেই পরশের বুকের উপর ডুলে পড়লো। উপস্থিত সবাই ভয় পেয়ে গেছে হঠাৎ কি হলো। কিন্তু হৃদানের কোনো ভাবান্তর নেই। পরশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই হৃদান টুক করে হৃদিতাকে কুলে তুলে নিলো

চিন্তার কিছু নেই হৃদপরী এখন ঘুমাচ্ছে -হৃদান

মানে -পরশ

মানে তোর বোনের চোখের পানি আমার সহ্য হয়না। এতক্ষণ কান্না করতে চাইছিলো কিন্তু আমার জন্য পারেনি। এখন দেখলাম কন্ট্রোল করা যাবে না তাই একটা স্লিপিং পিল খাইয়ে দিয়েছি আবাদত তিনঘন্টার আগে ঘুম ভাঙবে না। মামুনি বাবাই তোমাদের মেয়ে নিয়েগেলাম। কালকেই চলে আসবো শশুড় বাড়ি। চিন্তা করো না আসি

হৃদানের কথা শুনে সবাই তাজ্জব হয়ে গেছে কি বলে এই ছেলে। এত বউ পাগল কেউ দেখে নি। হৃদানের দেখাদেখি সব বরেরাই নিজেদের প্রেয়সী কুলে তুলে নিয়ে হাটা ধরলো। সবাই আর কান্না করবে কি দেখেই যাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে। সব গাড়ি ছেড়ে দিলো একে একে। সবাই চলছে নতুন গন্তব্যে। এখন থেকে সব জুটি তাদের তুমি নামক অক্সিজেনে মিশে যাবে। প্রতিজ্ঞা বদ্ধ যে।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here