তুমি নামক অক্সিজেন পর্ব -২২+২৩

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_২২
Tahrim Muntahana

আমি আগেই বলে রাখছি এবার আমার বিয়েটা না দিলে আমি নিজেই বিয়ে করে ফেলবো। বয়স তো কম হলো না এখন বিয়ে না করলে কবে করবো?আর তোমাদের ও তো দাদা দাদী নানা নানী ডাক শুনতে ইচ্ছে করে নাকি। তা তোমাদের সেইদিকে খেয়াল ই নেই। আমার আগেই আমার ছোট বোনের বিয়ে দিয়ে দিলে অথচ আমাকে তোমাদের চোখেই পড়ে না। কবে হৃদপরী কে পাবো বলোতো। আর অপেক্ষা করতে পারবো না

গড়গড় করে বলে দিয়ে হৃদান সবার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো সবাই ওর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। হৃদান ভ্রু কুচকে তাকালো। এই ছেলের যে লাজ লজ্জা একদম ই নেই বুঝে গেছে তারা। এবার সবাই হো হো করে হেসে দিলো। হৃদিতা নিচের দিকে তাকিয়ে পা দিয়ে ফ্লোর গুতাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
এবার সবাই একটু সিরিয়াস ভাবে বসলো।

আমার ছেলেটা কেউ তো বিয়ে করাবো ভাইসাহেব মেয়ে দেখেন -পিয়াসের আম্মু

পিয়াসের আম্মুর কথা শুনে পিয়াস খকখক করে কেঁশে উঠে তা দেখে রোহানি কটমট চোখে তাকায়। চোখের ভাষায় বলে দিচ্ছে, আজকে যদি আমাদের সম্পর্কের কথাটা না বলছো তোমার খবর খারাপ কইরা দিমু। পিয়াস ঠিক বুঝতে পেরে অসহায় চোখে তাকালো কিন্তু কোনো লাভ হলো না পরিবর্তে আরো রেগে তাকালো। এবার পিয়াস শুকনো ঢুক গিলে হৃদিতার দিকে তাকালো। হৃদিতা ভাইয়ের অবস্থা ভালোয় বুঝতে পারছে। কিন্তু সবার সামনে এইভাবে বলা যাবে না আর বড় রা কথা বলছে তাই ওরা ছোটরা সবাই উপরে চলে গেল।

আচ্ছা শুনো তোমরা এখন বড়রা সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাও কবে বিয়ে হবে কার কার হবে। আমি আসি -হৃদান

হৃদান ও চলে গেল হৃদানের দেখাদেখি ওর বন্ধুরাও চলে গেল। বড়রা আবার কথা বলা শুরু করলো

আমাদের রোহানির বিয়েটাও এখন দিতে হচ্ছে -রোহানির আব্বু

কবে ঠিক করলি বিয়ে -হৃদয় চৌধুরী

তিন বছর হলো আমার এক বন্ধু রোহানিকে দেখে পছন্দ করে। অনেক অনুরোধ করে ছেলেও ভালো আর পরিবারো ভালো তাই আর না করিনি -রোহানির আব্বু

এটা ঠিক করিস নি রোহানিরো পছন্দ আছে ও তো জানেই না এই বিষয়ে -আহনাফ চৌধুরী

রোহানির কোনো পছন্দ থাকলে আমাদের বলতো -রোহানির আব্বু

ছেলে মেয়ে রা বড় হয়েছে এইভাবে নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না -হৃদয় চৌধুরী

আচ্ছা আমি বাড়ি গিয়ে কথা বলবো ওর সাথে।এখন ঠিক কর কবে বিয়ে হবে -রোহানির আব্বু

কালকে তো একটা পার্টি আছে। কয়েকদিন পর করতে হবে -পরশী

সাগর রিয়া হৃদান হৃদিতা পরশ রাইসা রোহানি আর আহিলের বিয়েটা একসাথেই হোক তাহলে -রোহানির আম্মু

হ্যাঁ তাহলে একটা কমিউনিটি সেন্টার বুক করতে হবে -সাগরের আব্বু

আচ্ছা তাহলে পরের সপ্তাহ মানে ২০ তারিখ বিয়ে হোক। মধ্যে আরো আলোচনা করে নেওয়া যাবে -রাইসার আব্বু

সবাই মিলে বিয়ের আলোচনা করে কি কি হবে কিভাবে হবে। পরের দিন বড় করে একটা পার্টি আয়োজন করা হয়। সেখানে আগেই বিয়ের ঘোষণা দেই নি। পরে দিবে সিদ্ধান্ত। পার্টির দিন ই সবাই যে যার বাড়ি চলে যায়। কয়েকদিন পর বিয়ে কত কাজ করতে হবে। রোহানি রাতে শুয়ে শুয়ে পিয়াসের সাথে ফোনে কথা বলছিলো। তখন ওর মা আসে তড়িঘড়ি করে ফোন না কেটেই উল্টো করে রেখে দেই।

রোহানি তোকে ছাড়ায় আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি

কি আম্মু

তোর বিয়ে

হোয়াটটটটট

হুমম তোর বাবার বন্ধুর ছেলে আহিলের সাথে।অনেক ভালো দেখতে পরিবার ভালো আর্থিক অবস্থা ভালো তাই আর না করিনি তিন বছর আগেই ঠিক করে রেখেছে

কথা গুলো শুনে পিয়াস হতভাগ হয়ে বসে আছে। ও সব শুনতে পেরেছে অপর পাশ থেকে হাঁসফাঁস করছে।

তাহলে এখন আমাকে জানাতে এসেছো কেন। একবারে বিয়ের দিন কবুল বলার আগেই গিয়ে বিয়ের আসরে বসিয়ে দিতে। তাহলে আরো ভালো হতো

এইভাবে কথা বলছিস কেন

আম্মু আমার রাগ উঠিও না আমার রুম থেকে যাও। আমার রাগ সম্পর্কে তোমার ধারণা আছে

মেয়ের রাগের কথা শুনেই রোহানির আম্মু চলে গেছে। না জানি রাগের মাথায় কি না কি করে। মা চলে যাওয়ার পর রোহানি একটু বসে থেকে ফোন হাতে নিয়ে চমকে উঠে। ও তো জানেই না পিয়াস ফোনে ছিলো। কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে হ্যালো বলতেই পরশ খট করে ফোনটা কেটে দেয়। রোহানি তাড়াতাড়ি উঠে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। হৃদিতার সাথে ইমিডিয়েটলি দেখা করতে হবে। হৃদিতারদের বাড়ি গিয়েই দৌড়ে হৃদিতার রুমে চলে যায়। হৃদিতা বসে বসে হৃদানের সাথে কথা বলছিলো। রোহানি দৌড়ে গিয়ে বিছানায় বসে হাঁপাতে থাকে।

কি হয়েছে রোহা। তুই এত রাতে আমাদের বাড়ি

হৃদি আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করেছে

হোয়াটটটট কার সাথে কবে কখন

আব্বুর বন্ধুর ছেলের সাথে আজকে তিন বছর আগে ঠিক করে রেখেছে। আমি কিন্তু পিয়াস কে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না। পিয়াস ও রাগ করে ফোন তুলছে না

তুই আগে শান্ত হয়ে বস। তোর বিয়ে আমার ভাইয়ার সাথেই হবে। ডোন্ট পিনিক

কিভাবে তুই জানিস আব্বু যা বলে তাই করে

হৃদপরী হৃদপরী কি হয়েছে

হৃদরাজ রোহার বিয়ে ঠিক করেছে ওর বাবা এখন কি হবে। আমাদের কিছু একটা করতে হবে।১৫ দিন পর বিয়ে বেশী দেরী নেই

আচ্ছা দেখা করো সকালে আমি প্লেন ভেবে রাখছি

হৃদভাইয়া তুমি প্লিজ পিয়াসের সাথে কথা বলো। না জানি কি করছে, আমার ফোন তুলছে না। আম্মুর কথা গুলো শুনে নিয়েছে

বনু আমি পিয়াসকে দেখছি টেনশন করো না আর এখন বাসায় যাওয়ার দরকার নেই হৃদপরীর সাথেই ঘুমিয়ে পড়ো। বাই বনু বাই হৃদপরী। আই লাভ ইউ

হুমমম

ফোন কেটে দিয়েই হৃদান পিয়াসের কাছে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ে আর হৃদিতা অনেক বুঝিয়ে রোহানি ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে নিজেও ঘুমিয়ে গেল। যা হবে কাল দেখা যাবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে মেয়ের রুমে গিয়ে দেখে মেয়ে ঘরে নেই। সারাবাড়ি খুঁজেও যখন রোহানিকে পেল না তখন একেরপর এক ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফোন তুলছে না। টেনশনে থাকতে না পেরে হৃদিতা কে ফোন দিলো। রোহানির বাবাও বাসায় নেই সকালে হাটতে গেছে ফোন নিয়ে যায়নি।

হ্যালো হৃদিতা মা রোহানি গেছে তোর ওইখানে

হ্যাঁ রোহানি আমার সাথেই আছে আর তোমাদের সাথে কথা বলার কোনো মুড নেই আমার রাখছি

বলেই রেখে দিলো। একটু নিশ্চিন্ত হয়ে বসে ভাবতে লাগলো। কাজ কি ঠিক হয়েছে কিনা। হৃদিতা রোহানি রিয়া পরশ নাশিন ভোর সকালে ব্রেকফাস্ট না করেই বেরিয়ে গেছে। পড়নে জগিং ড্রেস। সকল কে এড্রেস পাঠিয়ে দিয়েছে ঠিক সময়ে চলে আসবে।

ওরা সবাই বসে আছে একটা জগিং স্পটে। সবাই বলতে হৃদিতা রোহানি রাহি রাইসা আনহা অরনি সোহা পিয়ানি সাহিল আধির পরশ নাশিন হৃদান সাগর সোহান পিয়াস। হৃদানের দিকে সবাই চেয়ে আছে। প্লেন বলবে। কালকে রাতে পিয়াসকে বুঝিয়ে মানিয়েছে হৃদান।

আরে বলছিস না কেন কি করবি -সাগর

বেশী কিন্তু সময় নেই যা করার দুই তিন দিনের মধ্যেই করতে হবে -পিয়াস

আচ্ছা তোর প্লেন কি বল -সোহা

কোনো প্লেন করতে হবে না কয়েক টা ঘা দিলেই বিয়ে করার শখ মিটে যাবে -রাহি

হিহিহিহি -আনহা

হিহিহি ওই চুপ যা -নাশিন

নাশিনের ব্যাঙ্গ কথায় আনহা মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো। লোকটা শুধু বকে একটুও ভালোবাসে না।

ছেলে আহিল খান। এত সহজ হবে না বিষয়টা -হৃদিতা

খবর নিয়ে শুনেছি মি আহিল রোহানিকে দেখে নি আর বিয়ের ব্যাপারে জানেই না -পরশ

ওহহহ সুপার তাহলে তো আরো ভালো হলো। এখন ছেলেকে গিয়ে রোহানি বলবে সে পিয়াস ভাইয়াকে ভালোবাসে তাহলেই বিয়ে ভেঙে যাবে -রাইসা

আজ্ঞে না যদি মি আহিল রোহানির বাবা কে বলে দেয় তখন কি হবে -সোহান

আমি বলি কি রোহানি ওর বাবাকে বললেই তো হয় যে ও পিয়াসকে ভালোবাসে -পিয়ানি

তোমরা ওর বাবাক চেন না পুরা হিটলার -আধির

আধির কথা শুনে রোহানি কটমট চোখে তাকালো। আধির ভয় পাওয়ার ভান ধরে হেসে দিলো।

যদি শুনে ভালোবাসে তাহলে আজীবন সিংগেল ই থাকা লাগবে -সাহিল

আমি একটা প্লেন করেছি -হৃদান

তাড়াতাড়ি বলো -রাইশা

এখন বাজে ৬:৪৫ ঠিক ১৫ মিনিট পর মি আহিল খান জগিং করতে আসবে তখনই আমাদের কাজটি করতে হবে -হৃদান

আহিল খানের ছবি আছে -রিয়া

হুমম দেখো -হৃদিতা

হৃদিতার ফোনে আহিলের একটা ছবি, সাদা একটা টিশার্ট পড়ে স্টাইল করে দাড়িয়ে আছে। অরনি অনেকক্ষন ধরে ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে।

এইইই আমি ক্রাশ খাইছি। আল্লাহ রে আল্লাহ -অরনি

হোয়াটটটটটট -পিয়ানি

তুই খাইছিস ক্রাশ -সোহা

ক্রাশ না প্রেমে পড়ে গেছি। পারলে বিয়ে করে ফেলবো -অরনি

কি কস এইগুলা -সোহান

সত্যি বলছিস নাকি মিথ্যে বলছিস -পিয়াস

সত্যি আসলে প্রেমে পড়েছি কিনা জানি না ভালো লেগেছে খুব -অরনি

তাহলে তো হলোই। আচ্ছা আমি যেভাবে বলবো সেভাবে করবি -হৃদান

হৃদান ওর প্লেনটা বলার সাথে সাথেই সাগর সোহান আধির সাহিল চিৎকার করে উঠে।

অসম্ভব আমি মার খেতে পারবো না পাবলিকের -সাগর

বেশী না গনধোলায় দিবে সবাই -সোহান

আমি এখনো খুব ছোট তোমরা এইভাবে আমাকে বলির পাঠা বানিও না -সাহিল

আমি আরো নাদান বাচ্চা আর আমাকে কি গুন্ডার মতো দেখতে লাগে নাকি -আধির

চুপপপপ -হৃদান

হৃদান বেবি সোনা মোনা ময়না শালিক পাখি আমি এক পায়ে রাজী আসি -অরনি

ওই তুই কিন্তু আবার বেশী বাড়াবাড়ি করবি না -সোহা

আরে না বেশী করবো কেন। তোরা শুধু দেখবি অরনি কা খেল -অরনি

হইছে সময় হলো ওইযে আসছে। যা তুই -হৃদান

অরনির আর যাওয়ার নাম নেই একধ্যানে চেয়েই আছে তো চেয়েই আছে।

আরে অরনি আপু পরে অনেক সময় পাবে দেখার। নাও গো -হৃদিতা

অরনি ও সাথে সাথে দিলো দৌড়। হৃদান সাগরদের ইশারা করতেই ওরাও চলল দুঃখি দুঃখি মুখে নিজেদের কাজ করতে।
#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_২৩
Tahrim Muntahana

আহিল খান একজায়গায় দাড়িয়ে এক্সারসাইজ করছে তার পাশেই অরনি। অরনি যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সাগর সোহান সাহিল আধির ওদের কাজ করতে গেলো। ঝোপের আড়াল থেকে এ সব কিছু হৃদান ওরা দেখছে।

হাই জানু কেমন আছো তুমি -সাগর

ভাবি আজকে তোমাকে কি সুন্দর দেখাচ্ছে -সোহান

পুরাই আমার মতো ভাবী -সাহিল

হেই তোমাদের সাহস তো কম না আবার আমাকে ফলো করছো। এই অরনি রহমান কে ফলো করছো। এমন মার মারবো না -অরনি

হেই বেবী রাগ করছো কেন। আমি তোমাকে ভালোবাসি বুঝো না -সাগর

ওদের অভিনয় দেখে হৃদিতারা হাসতে হাসতে শেষ। কিন্তু সাগরের মুখে ভালোবাসি কথা শুনেই রিয়া তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে

কিহহ ভালোবাসে আজ হচ্ছে তোর। অন্যজনকে ভালোবাসি বলা হচ্ছে তোর মুখ যদি বেকা না করে দিয়েছি আমার নাম ও রিয়া চৌধুরী না

বলেই সাগরের দিকে যেতে নিবে পরশ আটকে দেয়
রিয়ুপাখি কি করছো আরে ও তো অভিনয় করছে। সত্যি সত্যি বলছে না তো। আর ভালোবাসি বলেছে ভুল কি বলেছে বন্ধু হিসেবে তো ভালোবাসে। কুল পাখি কুল _
পরশের কথা শুনে রিয়া শান্ত হয় বাকি সবাই মুখ টিপে হাসছে।

তোর ভালোবাসা ছুটাচ্ছি দাড়া। আমার পাপাকে বললে তোর চৌদ্দ গোষ্ঠিকে দেখে নিবে -অরনি

হাই আল্লাহ ভাই ভাবি আপনারে ভয় দেখাইতেছে। আল্লাহ রে আল্লাহ ভাই আপনার সামনে কেউ কথা বলতে পারে না সে আপনাকে ভয় দেখায় -আধির

বেশী সাহস বাড়ছে তাই না। এতদিন পেছনে ঘুরছি পাত্তা দিস নি। আজকে তোকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো। দেখি তোর বাপ কি করে আমার -সাগর

এইতো ভাই আমাদের নিজের ফর্মে ফিরে এসেছে। পুরাই লুচ্চা ফর্ম -সোহান

সোহানের কথা শুনে অরনি ফিক করে হেসে দেয় আর সাগর সোহানের দিকে কটমট করে তাকায়। সোহান একটু ভয় পেয়ে যায়। সাগর খপ করে অরনির হাত ধরে ফেলে। আর একটা চোখ মারে। অরনি ও একটা চোখ মেরে কাজে লেগে পড়ে

এই বদমাশ ছাড় বলছি ছাড় আমি অন্য একজন কে ভালোবাসি তোকে কোনো দিন ও বিয়ে করবো না -অরনি

কিহহ কার এত বড় সাহস আমার ভালোবাসার দিকে নজর দিয়েছে -সাগর

ভাই ভাবি বুকিং চলে চলে যায় -সাহিল

চুপ যা বিয়াদপ অরনি শুধু আমার -সাগর

প্লিজ এমন করো না আমি একজনকে খুব ভালোবাসি বিশ্বাস করো তুমি আমাকে বিয়ে করলেও কোনো দিন সুখি হতে পারবে না -অরনি

সত্যি বলছো তুমি নাকি আমার থেকে বাঁচার জন্য বলছো -সাগর

না বিশ্বাস করো আমি সত্যি বলছি -অরনি

আচ্ছা তাহলে আমি দেখা করবো তার সাথে। চিন্তা করো না আমি তাকে মারবো না -সাগর

আববব না মানে সে তো আমাকে ভালোবাসে না এমনকি সে আমাকে দেখেই নি। সত্যি বলতে কি জানো আমি তাকে সরাসরি দেখেনি। ফোনে পিক দেখে ফিদা হয়ে গেছি প্রেমেও পড়ে গেছি -অরনি

হোয়াটটটটটট -সোহান

কে সে -সাগর

আহিল খান -অরনি

এতক্ষন আহিল ওদের কথায় শুনছিলো কান খাড়া করে কিন্তু ওদের বুঝতে দেয়নি। কেন জানি ওর ব্যাপারটা ভালো লাগছিলো। ওর নাম শুনার সাথে সাথে ও এইদিকে তাকালো।

হেই এ আমার নাম বললো কেন। নাকি আমাকে দেখে পটানোর চেষ্টা করছে। আরে আমি এসব কি ভাবছি আমাকে দেখবে কেমনে আমি তো হুডি পড়ে আছি। দেখতে হয় তো ব্যাপার টা

মনে মনে ভেবে আহিল অরনি কে দেখার জন্য এদিক ওদিক করতে লাগলো কিন্তু মুখ দেখতে পারছে না।

তাহলে তার আশা বাদ দিয়ে দাও। আজকেই বিয়ে হবে আমাদের চলো

বলেই সাগর অরনির হাত ধরে নিয়ে যেতে নিবে ওমনি অরনি আশে পাশে তাকানোর ভান করে আহিলকে দেখে বলে ওঠে

ওই ব্যাটা কালো হুডি দেখতে পাচ্ছেন না আমাকে কিডন্যাপ করছে আর আপনি দাড়িয়ে দাড়িয়ে মজা নিচ্ছেন

আহিল তো অরনির মুখ দেখে জাস্ট হা। ফর্সা ধবধবা মুখ ব্রাউন চুল চোখ গুলো একটু ছোট। অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ায় ঠোঁট লাল। প্রথম দেখায় ক্রাশ খেয়ে গেছে। অরনির কথা না শুনেই ওর দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে। আর সবাই বেশ মজা নিচ্ছে ব্যাপারটা। আরনি তো লজ্জায় মরে যাচ্ছে কিন্তু দেখাতেও পাচ্ছে না তাই ধ্যান ভাঙানোর জন্য চিল্লিয়ে উঠলো

ওই কালো হুডি কানে শুনতে পান না নাকি ভয় পাচ্ছেন ব্যাটা বডি তো মাশাআল্লাহ বানাইছেন তা সব উপরে উপরেই নাকি কাজে খাটানোর মতো

আহিলের ধ্যান ভেঙে অরনির কথা শুনে বেশ রাগ হলো তাই এগিয়ে গেল ওদের দিকে

কি হচ্ছে এখানে -আহিল

এই আপনি কানা নাকি এতক্ষণ তো দাড়িয়ে দাড়িয়ে অভিনয় দেখলেন ই এখন আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন -অরনি

অভিনয় -আহিল

অরনির কথা শুনে সবাই টাসকি খেল। হায় হায় ধরা পড়ে যাবে নাকি। অরনি যখন বুঝলো ও কি বলে ফেলেছে তখন ফট করে আবার চিল্লিয়ে উঠে

আরে কালো হুডি আপনি আগে আমাকে বাঁচান। এই লুচ্চা গুলো থেকে -অরনি

এই হাত ছাড়েন। জোর করছেন কেন ওনাকে আপনারা। ভালোবাসা কি জোর করে পাওয়ার জিনিস। ফিলিংস না থাকলে জোর করে বিয়ে করে সংসার করবেন কেমনে। সে তো বলছে সে আমাকে ভালোবাসে -আহিল

হোয়াটটটটটটটটট আপনাকে ভালোবাসি মানে কখন বললাম আপনাকে ভালোবাসি আমি তো আমার জান প্রাণ কলিজা ময়না শালিক টিয়া হিরা মানিক পান্না আহিল কে ভালোবাসি। আমার আহিল আই লাভ ইউ আহিল -অরনি

আববব না মানে সেটাই। এই এই ছেলে হাত ছাড়ো বলছি -আহিল

ছাড়বো না কি করবেন -সোহান

আমি চাইলেই অনেক কিছু করতে পারি কিন্তু তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে না যে তোমরা বখাটে। তাই এসব করো না। ওনার জায়গায় যদি তোমাদের বোন থাকতো তাহলে তোমরা সেটা মানতে পারতে। পারতেন না। আর সবারই একটা মন আছে। কেউ মনের বাহিরে কাজ করে না। মানছি আপনি উনাকে ভালোবাসেন কিন্তু উনি আপনাকে ভালোবাসে না তাই আমি বলবো আপনি নিজের জিবন অন্যদিক দিয়েই মুভ অন করুন। দেখবেন আপনি আপনার জিবনে যেমন ভালো আছেন তোমনি উনিও ভালো থাকবে

আহিলের কথা শুনে তো অরনি এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। হৃদান হৃদিতা ওদেরও ভালো লেগেছে। সাগর ওরা পারেনা দৌড়ে পালায়। সাহিল সাগরের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল

জিজু মুভ অন করো তাড়াতাড়ি ভাগো এখান থেকে না হয় একটা মাইর ও মাটিতে পরবে না

সাহিলের কথা শুনে সাগর গলা খাকারি দিয়ে অরনি হাত ছেড়ে দিয়ে সটান হয়ে দাড়ালো।

ভাই আপনি আমার চোখ খুলে দিয়েছেন। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আর অরনি তুমি ভালো থাকো অনেক জ্বালিয়েছি তোমায় পারলে ক্ষমা করো । আসি

সাগর বলেই উদাসীন হওয়ার ভান ধরে উল্টো হাটা ধরলো। অরনির বেশ হাসি পাচ্ছে এবার। মনে হচ্ছে না হাসলে এবার দম বন্দ হয়ে মারা যাবে।

ভাবি ও সরি না মানে আপু আপনি ভালো থাকবেন কিন্তু আর আপনি খুব ভালো সব কিছুই জোসস ছিলো -আধির

হ্যাঁ হ্যাঁ আপু ভালো থাকবেন আপনার কাহিল কে নিয়ে -সোহান

ওই বজ্জাত ব্যাটা তুই কাহিল বললি কেন আহিল বল আহিল। আমার আহিল

ওহ সরি আফা আহিল ই হবে -সোহান

সোহাও ওরাও হৃদিতাদের উল্টো পাশের ঝোপে গিয়ে আড়ি পাতলো।

এই মেয়ে আহিল খান কে ভালোবাসো বলছো দেখছো কোনো দিন -আহিল

আপনাকে কেন বলবো -অরনি

হেই আমি আমার প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন করতে বলি নি উত্তর দিতে বলেছি -আহিল

এএএএএএএএএএএ আপনি আমাকে বকা দেন। আমি খেলবো না আমি নাচবো না আমি গাইবো না আমি খাবোও না

অরনির কথায় আহিল সহ বাকি সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। সাগর ওদের তো মাথায় হাত। প্লেন গেছে।

এই অরনি তো নিজের ফর্মে ফিরে এসেছে। এখন কথায় কথায় প্লেনের কথা বললে সব শেষ -হৃদান

আমি জানতাম এই অরনি ছাগলী এমন টাই করবে -সোহা

আহ চুপ করো তোমরা আমাদের ই কিছু করতে হবে পিয়ানি আপু যাও -হৃদিতা

আবব আমি গিয়ে কি করবো -পিয়ানি

যা করার তাই করবে যাও আপু -রিয়া

এই এই আমি যায় -রাইসা

নাহ তুই ভাংচাল করে দিবি -রাহি

না সত্যি এমন এক্টকিং করবো বুঝতেই পারবে না -রাইসা

না গো বউ তোমার যাইতে হবে না। ড্রামাকুইন আপনি সব ভাংচাল করবেন -পরশ

আহ ভাইয়া চুপ কর ভাবি তুমি যাও। দেখিয়ে দাও তোমার কারিশমা -নাশিন

এই তো আমার সোনা দেবর। তোমাকে এক টুক্কুস ভালোপাসা -রাইসা

হইছে যাও এখন -আনহা

রাইসা খুশিতে গদগদ হয়ে ছুটে গেল। অর সবাই অধির আগ্রহে দেখে চলছে সামনে কি হয়।

আরে আপু এতক্ষণ কই ছিলে তুমি? তোমাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান আমরা -রাইসা

আর বলিস না বনু জানিস আজকে আবার ওই ঝামেলাটা এসেছিলো কিন্তু আমার আহিল আমাকে বাঁচিয়ে নিয়েছে -অরনি

হোয়াটটটট বাঁচালাম আমি ক্রেডিট পেল আহিল -আহিল

আমি যদি না বলতাম আহিলের কথা তাহলে ওরা যেত না। আর আপনি এমন হুডি পড়ে আছেন কেন বেকুবের মতো। খুলেন বলছি -অরনি

বলেই হুডির উপরের অংশ টান দিয়ে খুলতে যাবে তার আগেই আহিল একটু পেছনে সরে আসে আর অরনি টাল সামলাতে না পেরে আহিলের উপর পড়ে যায়। আকস্মিক এমন হওয়ায় আহিল ভরকে গিয়ে নিজেও অরনিকে নিয়ে নিচে পড়ে যায়। সাথে সাথে মাথা থেকে হুডির টুপিটাও খুলে যায়। অরনি হা করে আহিল কে দেখছে আর আহিল তো আবার ক্রাশ নামক বাঁশ টা খেয়ে গেল।
অরনির যখন হুশশ হলো চিৎকার করে উঠে গেল।

আহিল আপনি আমার সামনে। এতক্ষণ আপনি ছিলেন আপনি বলেননি কেন -অরনি

বলবো কেন -আহিল

আরে কি বলে আমি না আপনার প্রেমে পড়ে গেছি সত্যি সত্যি বলছি। কিন্তু ভালোবাসি কিনা জানিনা -অরনি

আমি যে ভালোবেসে ফেলেছি। লাভ এট ফাস্ট সাইট। আই কান্ট বিলিভ আহিল খান প্রেমে পড়েছে

অস্পষ্ট সুরে বলে উঠলো আহিল সামনের দুটো মানুষ কেউ কোনো কথা বুঝলো না।

এই আপু চল আজকে তোকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে খেয়াল আছে। পাপা জানতে পারলে আর রক্ষে নেই -রাইসা

পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে মানে -আহিল

এটাও বুঝেন না আপনি -রাইসা

কিসের পাত্র পক্ষ উনি না আমাকে ভালোবাসে -আহিল

ও ভালোবাসলেই কি হবে আপনি তো আর বাসেন না আর আপনার তো বিয়েও ঠিক হয়ে আছে -রাইসা

কথাটা শুনা মাত্রই আহিল চমকে উঠলো কি বলে এই মেয়ে

বিয়ে ঠিক হয়েছে মানে? আমার বিয়ের কথা আমি জানবো না পাগল তুমি -আহিল

জি না আপনি বাড়ি গিয়ে আপনার বাবাকে জিজ্ঞেস করে শুনে নিবেন কোনটা সঠিক। চলতো আপু দেরী হলে পাপা বকা দিবে -রাইসা

আহিল শুনুন না আমি না আপনার প্রেমে পড়ে গেছি ভালোবাসি কিনা জানিনা। জিবনে প্রথম ক্রাশ খাইছি। তাও কখন জানেন? আধাঘণ্টা আগে ফোনে ছবি দেখে -অরনি

অরনির কথায় আহিলের মাথা উপর মনে হো বাজ পড়লো। এই মেয়ে তো দেখছি পাগল করে ছাড়বে। অন্যদিকে হৃদিতা হৃদান ওরা আহিলের এক্সপ্রেশন দেখার জন্য বসে আছে।

আমাদের উচিত এখন মি খানকে সব বলে দেওয়া। উনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে অরনি আপুকে বেশ লেগেছে তার কাছে -হৃদিতা

আমারো তাই মনে হচ্ছে -হৃদান

পরে বললে সিনক্রিয়েট করবে চলো সবাই এখনি বলবো -পরশ

ওরাও ওদের সামনে গিয়ে দাড়ালো। আহিল নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো এতগুলো পা দেখে উপরে তাকাতেই বিষ্ময়ে ওর মুখ হা হয়ে গেল..

চলবে….?
চলবে….?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here