তুমি নামক অক্সিজেন পর্ব -২০+২১

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_২০
Tahrim Muntahana

মাঠের মধ্যে সিয়া পা ধরে বসে আছে। আর সবাই ওকে ঘিরে রেখেছে। উৎসুক জনতা কেউ কেউ সিটি বাজাচ্ছে, কেউ কেউ চিৎকার করে হৃদিতা দের বাহুবা দিচ্ছি, কেউ কেউ চিয়ার্স আপ করছে। এসব দেখে সিয়া রেগে মাঠের মধ্যে পা ধরে বসে আছে আর চোখের পানি ফেলছে। ব্যাথা তো কম পায়নি। এবারও নিজের ফাঁদে নিজে পড়েছে।

ফ্লাসবেক

বিরতি শেষ হলে পুনরায় সব খেলোয়াড় একত্র হয়েছে। খেলা শুরু হয়েছে তখনি সিয়া তার কোচের শেখানো পথ থেকে যখনি রিয়াকে লেং মারতে যাবে রিয়া বল নিয়ে লাফ দিয়ে দূরে চলে গেলো আর হৃদিতা না দেখার ভান করে সিয়াকে লেং মেরে ফেলে দিলো।

ওহ সরি সরি আমি দেখেনি। বাট আপনি পরে যেতে নিচ্ছিলেন কেন মিস সিয়া -হৃদিতা

হ্যাঁ কাউকে বুঝি লেং মারতে চেয়েছিলেন -রাহি

কিন্তু শেষমেষ নিজের করা ফাঁদে নিজেই পড়লেন -রোহানি

হাহ আফসোস -রাইসা

তুমি আমাকে ইচ্ছে করে ফেলে দিছো আমি এখনি কোচকে বলবো -সিয়া

রিয়েলি তো বলে কি আপনি আপনার কোচ কেও ফাঁসাতে চাইছেন নাকি -রিয়া

মানে -সিয়া

মানে বুঝতে পারছেন না। নিজে তো রিয়ু কে লেং মারতে গিয়েছিলেন তো পারলেন না। কি করে পারবেন বলেন এত সহজ নাকি -হৃদিতা

বর্তমানে সিয়া কিছু বলতে যাবে য়ার আগেই সিয়ার কোচ বরফ নিয়ে আসলো। কিছুক্ষন বরফ ঘসে বেরিয়ে গেল মাথা নিচু করে। সিয়া ও কষ্ট করে উঠে দাড়ালো। আবার খেলা শুরু হলো। সিয়ারা একটা রান ও করতে পারে নি। অথচ হৃদিতারা ৮ অলরেডি করে ফেলছে। করবেই বা না কেন পাঁচজন এক্সপার্ট যেখানে সেখানে আরো করা উচিত ছিলো। হৃদিতারা তো সিয়াকে বিভিন্ন ভাবে লেইক পুল করছে। সিয়া আর সহ্য করতে পারছে না এত অপমান। খেলা শেষ না হলে যেতেও পারছে না।
__________________________

এরা পাঁচজন তো দেখি আমাদের ও হার মানাবে -সোহান

কার আন্ডারে প্রেকটিস করেছে দেখতে হবে না -নাশিন ভাব নিয়ে বলল

সাথে আমি না থাকলে পারতি তুই -হৃদান

হয়ছে সবারই কষ্টের ফল আজ পাবে -পরশ

হুমম আমার বউটাতো তো একবছর কম কষ্ট করেনি। আমি তো ভাবতেই পারছি না আমার বউ আজ এত ভালো খেলবে। সত্যি আমার খুব গর্ব হচ্ছে -সাগর

যায় বলিস না কেন তোরা আমার বউমা না হলে এইবার এত ভালো খেলতে পারতো না হাহাহা -সাগরের বাবা

হুমম ওরা পাঁচজন কেউ কারো থেকে কম না। যে এক্সপার্ট সেও ওদের ধরতে পারবে না কে ভালো খেলে -সাগর

বাট আমি ধরতে পারবো এক্সপার্ট না হয়েই -হৃদান

হৃদানের কথা শুনে পরশ মুচকি হাসলো পরশ ও বেশ ধরতে পেরেছে। তাই হৃদানের দিকে চেয়ে আছে ওর সাথে মিলে কিনা দেখবে

বলতো শুনি আমি কিন্তু ধরতে পারিনি -সোহান

ফাস্ট হৃদপরী। কারণ হৃদপরী ছয়টা মাস প্রাণপণ প্রেকটিস করেছে আর রিয়ুর টিকস তো আছেই। ওসব টিকস কিন্তু আয়ত্ব করা খুব কঠিন। আর ও যেহেতু দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন তাই ও সবার আগে গোল দিচ্ছে। হৃদপরীর স্কিল দৌড়ের গতি রিয়ুর টিকস প্রত্যেকটা স্টেপ অনুসারে হৃদপরী ফাস্ট। তারপর রিয়ু। রিয়ু আগে থেকেই চ্যাম্পিয়ন আর ওর টিকস গুলোও আছে কিন্তু একবছর প্রেকটিস না করার কারণে ও একটু পিছিয়ে আছে তাও তা দেখার মতো না। আর রাইসা রাহি রোহানি ওরা তিনজন এক সমান। ইউনিক ট্রিকস বাদে ওরা পারফেক্ট আছে -হৃদান

হৃদানের বর্ণনা শুনে পরশ মুচকি হাসলো। ঠিক ওর সাথে মিলে গেছে। আর সবাই হা করে আছে। ওরা এসব ভাবেই নি।

হা বন্ধ করো মশা ঢুকবে -নাশিন

হাহাহা -সাগর

খেলা তো প্রায় শেষে দিকে ১১ টা গোল আর চারটা করতে পারলেই সুপার হবে -সোহান

আর দশ মিনিট আছে করতে পারবে বলে মনে হয়না -সাগর

আচ্ছা হৃদিপাখি ডাক দিয়ে বল কথাটা ঠিক ১৫ টা করে দেখিয়ে দিবে -পরশ

সাগর সোহান তাই করলো। হৃদিতারা শুনে মুচকি হাসলো। হেসেই ওরা পজিশন নিয়ে দাড়ালো। ভেবেছিলো আর গোল দিবে না কিন্তু ওরা যেহেতু বলেছে দিতেই হয়। রাইসা আর রিয়ু দাড়িয়ে আছে গোলের থেকে একটু দূরে। হৃদিতার কাছে বল। ঝড়ের গতিতে বলটা রাইসার কাছে দিতেই রাইসা গোলে ফেলে দিলো। এইভাবে সময়ের আগে পাঁচটা গোল হয়ে গেছে। যেখানে চেয়েছিলো মোট ১৫ টা সেখানে ১৬ টা হয়েছে।

খেলা শেষ হতে ওরা পাঁচ জন একসাথে গ্রুপ হাগ করে লাফালাফি শুরু করে দিলো। হৃদান ওরা দৌড়ে ভিতরে চলে গেল। হৃদান গিয়ে হৃদিতাকে কোলে নিয়ে ঘুরতে লাগলো। পরশ রাইসাকে জড়িয়ে ধরলো। সাগর রিয়ুকে আগে বসালো। অনেক স্ট্রেস গেছে। সোহান রাহিকে পানির বোতল এগিয়ে দিলো। রাহি মুচকি হেসে পানি নিয়ে আগে মুখে পানির ছিটা দিলো। তারপর পানি খেয়ে পানির বোতল টা ফিরিয়ে দিলো। সামনে তাকিয়ে এদের জুটির ভালোবাসার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। সোহান তা লক্ষ্য করে রাহিকেও জড়িয়ে ধরলো। রাহি এটাই চাইছিলো। মুচকি হেসে সোহানের বুকে মুখ গুজলো। রোহানি ওর মা বাবার সাথে বসে আছে। দূর থেকে পিয়াস ওর কাছে যাওয়ার জন্য ছটফট করছে। রোহানির ও ইচ্ছে করছে কিন্তু ওর বাবা ওকে ছাড়ছেই না। তাই কিছু সময় অসহায় চোখে পিয়াসের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। পিয়াস ওইভাবেই দাড়িয়ে তার প্রেয়সীকে দেখতে ব্যস্ত।

সিয়া ওদের শুধু কেন অল দর্শকদের কাউকে যেতে না করেছে হৃদিয়া। এখন খেলার মাঠেই ইন্টারভিউ হবে। রাহি রোহানি রাইসা রিয়া হৃদিতা আধির সাহিল আরো বেশ কয়েকজন বসে আছে পিছে কয়েকজন দাড়িয়ে আছে। সামনে রিপোর্টার রা। পাশে কয়েকদল পুলিশ। তার পাশেই সিয়া হিয়া আর ওদের কোচ দল নিয়ে দাড়িয়ে আছে। হৃদানরা হৃদিতার দের একটু দূরেই দাড়িয়ে থেকে ওদের দেখছে। বাড়ির সবাই চলে যেতে চেয়েছিলো ওরাই না করেছে। এখন যে রহস্য খুলবে।

একটা একটা করে প্রশ্ন করবেন উত্তর দিবো একসাথে প্রশ্ন করবেন না আগেই বলে রাখছি। আজ আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তারপর যাবো -হৃদিতা

মেম আপনাদের এখন কেমন লাগছে জয়ী হয়ে -রির্পোটার

আজব কথা বললেন ভাই। জয় নিয়ে কার না আনন্দ হয়। তাও আবার এত গোলে -রোহানি

রোহানির কথা শুনে রিপোর্টার টি থতমত খেয়ে গেল। হৃদান ওরা হেসে দিলো। এরা আরেও বটে।

রিয়া মেম আমরা শুনেছিলাম আপনি আর খেলতে পারবেন কিন্তু আজ খেললেন কেমনে -রির্পোটার

তাহলে কি অাগের খবরটা মিথ্যে ছিলো -আরেক রিপোর্টার

না মিথ্যে না। একটা কারণে আমি চোখে দেখার শক্তি হারিয়ে ফেলি। শুধু এটা জানেন না আপনার ওই এক্সিডেন্টের জন্য আমার হার্ট ড্যামেজ হওয়ার সম্ভবনা থাকবে যদি আমি পুনরায় খেলি। তাই হার্ট ট্রান্সফার না হলে খেলতে পারতাম না। ছয়মাস আগে চোখের পাশাপাশি হার্টের ও অপারেশন হয়েছে তাই খেলতে পারছি। আর আজ ও খেলতাম না কিন্তু আমাদের দলের একটা খেলোয়াড মিসিং তাই বাধ্য হয়ে খেলায় নামতে হলো। আর যায় হোক চিটিংবাজ দের সাথে হারতে তো পারি না -রিয়া

চিটিংবাজ বলতে কেউ কি ইচ্ছে করে করেছে এমন -রির্পোটার

ইয়েস ওইযে দেখুন মিসিং হওয়া খেলোয়াড। মাথায় পায়ে ব্যান্ডেজ। ওকে কিডন্যাপ করা হয়েছিলো। যাতে আমরা না খেলতে পারি আর অন্যদল অনায়েসেই কোনো প্রকার খেলা ছাড়াই বিজয়ী হোক -রাহি

আপনরা কাদের সন্দেহ করছেন – রিপোর্টার

এই যে আপনাদের একটাই দোষ বড্ড প্রশ্ন করেন। রিপোর্টার হয়েছেন কেমনে বলুনতো। কেন বুঝতে পারছেন না অন্যদল বলতে কি বুঝিয়েছে-আধির

যা যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন পুরস্কার নিতে হবে তো -সাহিল

মেম আমরা শুনেছিলাম রিয়া মেমের উপর ওইবার ন্যাশনালের আগে হামলা হয়েছিল এটা কি সঠিক -রির্পোটার

হ্যাঁ সঠিক -হৃদিতা

কে করেছে জানতে পেরেছেন -রির্পোটার

হ্যাঁ অফিসার নিয়ে আসুন -হৃদিতার

কয়েকটা ছেলেকে নিয়ে আসলো। ওদের কে দেখে সিয়া আর হিয়া থরথর করে কাঁপছে। তা দেখে ওরা বাঁকা হাসলো। ওরা দুজন এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। পালানোর রাস্তা খুঁজছে। যখনি দৌড় দিতে যাবে তখনি

মিস সিয়া হিয়া ভয় পেয়ে গেলেন বুঝি -হৃদিতা

চমকে দাড়িয়ে গেল ওরা। শেষ রক্ষা হলো না।

ভ ভ ভয় পাবো কেন -সিয়া

পালাচ্ছেন কেন আর তোতলাচ্ছেন ই বা কেন -রিয়া

পালাবো কেন হ্যাঁ কি বলবে বলো -হিয়া

কিছু বলবো না শুধু দেখাবো। অফিসার নিয়ে আসুন এদের দুইটাকে -হৃদিতা

আজকে স্বাদ মিটিয়ে দিবো -রাইসা

মা মা মানে কি বলছো তোমরা কি করেছি -সিয়া

আহারে বেচারি ভাজা মাছ টা উল্টে খেতে পারে না। হেই তোরা ওদের কিছু বলিস না দেখছিস না কেমন ভয় পাচ্ছে -রাহি

পানি খাবেন মিস সিয়া নাকি কোল্ড ড্রিংকস আনাবো -আধির

বিয়ারের ব্যবস্থা করি। পার্টিও হবে -রোহানি

এই এতো কথা রাখ তো এই দুটোকে এখানে আসতে বল। আমার শরীর কিন্তু রাগে জ্বলে যাচ্ছে -সাহিল

রিলেক্স সাহি। অফিসার আনুন ওদের -হৃদিতা

ওরা দুজন তো ভয়ে কাঁপছে। আজকে যে ওরা শেষ সেটা অলরেডি বুঝে গেছে। ওরা আসার সাথে সাথে হৃদিতা যা করলো তা দেখে সবার চোখ কপালে উঠার উপক্রম…
#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_২১
Tahrim Muntahana

হাতে হাতকড়া সহ সবার মাঝে সিয়া আর হিয়া দাড়িয়ে আছে। সবাই ঘৃণ্য চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারপরেও তাদের মধ্যে কোনো অনুতাপের লেশ মাত্র নেই যা আছে শুধু ভয়। কিছুক্ষন আগেই সবার সামনে লোকগুলো স্বীকার করেছে তারা সিয়া আর হিয়ার কথায় রিয়ার অপর এট্যাক করেছিলো। আর সিএম স্বীকার করেছে যে হিয়ার কথায় কালকে মাঠে কারচুপি করেছিলো। হৃদিতাদের উপর যে হামলা হয়েছিলো তা প্রমাণ সহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। সবাই এক প্রকার ক্ষেপে আছে। এতকিছু হওয়ার পরও হিয়া হৃদিতার দিকে রেগে তেড়ে আসতে নিলো

তোকে আমি শেষ করে ফেলবো। আনন্দ হচ্ছে খুব তাইনা -হিয়া

এতক্ষন পরশ খুব কষ্টে নিজের রাগ কন্ট্রলে রেখেছিলো। তার কলিজার বোনটা একটা বছর কত কষ্ট করেছে শুধু মাত্র এদের জন্য। আর নিজের রাগ কে আয়ত্তে রাখতে পারলো না। ঠাসসস করে চড় বসিয়ে দিলো। কাজ টা এত তাড়াতাড়ি হয়েছে সবাই একপ্রকার চমকে গেছে। দাবাং মার্কা হাতে চড় খেয়ে হিয়া মাটিয়ে পড়ে গেল ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। হিয়ার অবস্থা দেখে সিয়ার আর কিছু বলার সাহস হলো না।

অফিসার এদের নিয়ে যান আর কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। সারাজিবন যেন জেলেই পঁচে মরে -হৃদান

এতক্ষন আখি খান এসব দেখছিলো আর চোখের পানি ফেলছিলো। সিয়ার ব্যাপারটা সে জানে না কিন্তু হিয়ার ব্যাপারটা তো সে জানে। দুই মেয়ের অবস্থা দেখে সে এগিয়ে গেল তার ভাইয়ের দিকে

ভাইয়া প্লিজ ক্ষমা করে দিতে বলনা। ওরা তো এখন খুব ছোট ভুল করে ফেলেছে। তুই কিছু একটা কর ভাইয়া। আমার দুইটা মেয়ে ছাড়া যে আর কেউ নাই -আখি খান

আমি কিছু করতে পারবো না আখি। তোর মেয়েদের তুই মানুষ ই করতে পারিস নি। আমার কাছে হৃদিতা রিয়া সবার আগে সেটা তুই ভালো করেই জানিস। তাও তুই জানা সত্যেও ওদের আরো উসকিয়ে দিয়েছিস না করিস নি। এখন আমাকে বলছিস কেন। আগে এই দিনটার কথা মনে ছিলো না যে আসবে একদিন। আমি কিছুই করতে পারবো না -আহনাফ চৌধুরী

আখি খান এবার নিরাশ হলেন ভাইয়ের বউয়ের কাছে যাবে সে তো আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এখন শুধু আশা ভাইপো। দৌড়ে গেল ভাইপোর কাছে

হৃদান বাবা তুই কিছু কর না। তোর তো বোন হয় ওরা। আর ওরা ছাড়া আমি কি নিয়ে থাকবো। এবারের মতো ক্ষমা করে দেনা। আমরা অনেক দূরে চলে যাবো তোদের সামনে আর কখনো আসবো না -আখি খান

বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন হৃদান এইবার অসহায় চোখে হৃদিতার দিকে তাকালো। সে তার ফুপিকে বড্ড ভালোবাসে। ফুপির জন্য হলেও যদি ছেড়ে দিতো তাই ভাবছে হৃদান। আর ওর তো বোন হয়। মায়া তো একটু হবেই। কিন্তু এখানে তো ওর হাত নেই যা করার হৃদিতা করবে। হৃদিতা হৃদানের চোখের ভাষা বুঝে স্ট্যাট দাড়িয়ে গেল

আমার কাছে রিয়ু কি সেটা আপনাকে বলে দিতে হবে না মি হৃদান চৌধুরী। একটা বছর এদের জন্য আমার রিয়ু কতটা কষ্ট পেয়েছে। চোখে না দেখার মর্ম বুঝেন? বুঝবেন কি করে চোখের জ্যোতি তো হারান নি। প্রিয় মানুষের থেকে দূরে থাকার যন্ত্রণা তো বুঝবেন তাইনা। আর গেল পছন্দের জিনিস খেলতে না পারার কষ্ট। বুঝবেন? বাস্কেটবল তো রিয়ুর আত্নার সাথে মিশে আছে আর এদের জন্য যখন শুনলো সে আর বাস্কেটবল ই খেলতে পারবে না। তখন কি আদোও বাঁচতে ইচ্ছে করতো? বলুন আমাকে। একটা বছর বেঁচে থেকেও মরার মতোই মনে হতো। শুধু রিয়ু না পরিবারের প্রত্যেকটা ব্যাক্তি কষ্ট পেতো। আমরা চার ভাইবোন কখনো নিজেদের আলাদা দেখিনি জানেন। দুইভাইয়ের কলিজা ছিলাম আমরা দুজন। আর আমাদের তো তিন বাবা তিন মা ছিলো। ওদের সবসময় কাছে লাগতো আমাদের। হঠাৎ করে যখন এক বাবা মা ভাই বোন দূরে চলে যায় তখন মনের মধ্যে কতটা চাপ পড়ে আপনি হয়তো বুঝবেন। আমার ভাইয়ু জানেন প্রত্যেক রাতে রিয়ু আর নাশু ভাইয়ার ছবি দেখে ঘুমোতে যেতো। ছেলেদের তো কষ্ট মানুষকে দেখাতে নেই তাই রাতে কষ্টগুলো ঝড়ে পড়তো। আমার পাপা কি করতো জানেন সারাদিন কাজের মধ্যে ডুবে থাকতো। যে ছোট ভাইকে ছাড়া আমার পাপা এক দন্ডও শান্তি পেতো সেই পাপা তার প্রাণের ভাইকে ছাড়া এক বছর থেকেছে। যে চার কলিজার মুখ না দেখে অফিসে যেতো না সেই পাপা এক বছর এরকম করেই যায়। আর মমের কথা না হয় বাদই দিলাম। সে তো প্রতি নামাজে ডুকরে ডুকরে কাঁদে আর দোয়া করে। যে নাশু ভাইয়া সব সময় অগোছালো ছিলো ভাইয়ু গুছিয়ে রাখতো তাকে সেও একবছরে কতটা গুছিয়ে গেছে দেখছেন। ছোট আব্বু ছোট আম্মু কথা তো জানি না কিন্তু তাদের চোখের পানি দেখলেই বুঝতে পারবেন তারা কতটা ভালো ছিলো। পিছে দেখছেন পাঁচজন দাড়িয়ে আছে। হিয়া আর সিয়ার প্রতি ওদের এত রাগ কেন বলতে পারবেন? ওদের তো কোনো ক্ষতি করেনি। তাহলে? ডিরেক্টলি ওদের ক্ষতি না করলেও না ইনডিরেক্টলি ওদের খুব ক্ষতি করেছে। আমাদের আড্ডা টা সমসময় অসম্পূর্ণ হয়ে থাকতো। তারজন্য ঠিক মতো আড্ডা দিতে পারিনি। আমাদের আড্ডা জায়গায় তো সেদিন ই লাস্ট গিয়েছিলাম রিয়ু চলে যাওয়ার আগে। আর আপনার দুইবোনের কথা না হয় নাই বললাম। আলো আপু আনহা তারা তো কয়েকদিন থম মেরেই বসে ছিলো। এখন আমার কথা বলি। এই দেখেন যে রিয়ু আর নাশু ভাইয়াকে ছাড়া খেতাম না, দুপুরে ভাইয়ু আমাদের তিনজনকে খাইয়ে দিতো সেখানে আমাকে একাই খেতে হতো। বাড়িতে থাকতে পারতাম না। শুধু মনে হতো এই যেন রিয়ু আমাকে হৃদিরানী বলে ডাকছে, এই যেন নাশু ভাইয়া আমাকে আদর করতে আসছে, এই যেন ছোট আম্মু রিয়ুর নামে নালিশ করতে আসছে – এই যেন ছোট আব্বু একবক্স আইসক্রিম এনে দাড়িয়ে আছে আমার জন্য। একটা বছর আমার উপর দিয়ে কি গেছে জানেন। একদিক থেকে দৌড়ের জন্য প্রেকটিস অপর দিকে রিয়ুর স্বপ্ন পূরণ করার জন্য বাস্কেটবল প্রেকটিস আবার পড়াশুনা। হাপিয়ে গেছি আমি। কোনো কোনো দিন শরীর চলতো না টেনে নিয়ে যেতাম। কিন্তু কাউকে বুঝতে দেই নি। দিন শেষে একটু হলেও হেসেছি। এখন বলুন তো কার কষ্টটা বড়। কার কষ্টের শাস্তি আগে দিবো। পারবেন এতগুলো মানুষের একবছরের কষ্টটা মুছে দিতে। আমার রিয়ু চোখে দেখতে না পেয়ে যে অন্ধকারের মধ্যে একটা বছর থেকেছে এদের দুইজন কেউ ঠিক একটা বছর এরকম অন্ধকারের মধ্যেই রাখবো। তারপর অন্য জেলে আটকে রাখবো। এখন আপনি যদি আপনার সো কল্ড ফুপিকে ভালোবেসে এদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন বা বুঝাতে চান তাহলে করতে পারেন ছেড়ে দিবো তাদের। কিন্তু আমার আর আপনার পথ সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যাবে। এখন এস ইউর উইশ মি হৃদান চৌধুরী

কথা গুলো বলে এবার একটা বড় ধম নিলো হৃদিতা। হৃদিতার শেষের কথাটি শুনে হৃদানের বুকটা ধক করে উঠলো। সেতো হৃদপরীকে ছাড়া কল্পনায় করতে পারে না নিজেকে। আর বাড়ির বাকি সবাই তো কেঁদেই যাচ্ছে। তারা ভাবেনি তাদের গতিবিধির উপর হৃদিতা এইভাবে লক্ষ্য করেছে। পরশের বুকে মুখ গুজে রিয়া কাঁদছে। আর নাশিন একটু দূরে দাড়িয়ে চোখে পানি ফেলছে। শুধু বাড়ির সবাই না হৃদিতার সামনে মাউথ পিস থাকায় সবাই শুনতে পেয়েছে কথাগুলো। সবার চোখেই পানি এমনকি রিপোর্টার দেরও। এদের পরিবারের ভালোবাসা দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিবার কয়জন পায়? যেখানে আপন ছেলে বাবা মা কে দেখে না সেখানে এদের ভালোবাসা সত্যি দেখার মতো।

হৃদান এতসব ভাবেনি সত্যি। আসলেই এতোজন মানুষ একটা বছর কত কষ্ট পেয়েছে। তার হৃদপরী কত কষ্ট পেয়েছে ভাবতেই মাথা নিচু করে ফেললো। ফুপির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পুলিশকে নির্দেশ দিলো হৃদিতা যেভাবে বলেছে সেভাবেই কাজ করতে। সিয়া আর হিয়াকে নিয়ে পুলিশ চলে যাওয়ার পর হৃদান হৃদিতার কাছে গেল

হৃদপরী প্লিজ তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলো না। আমি তোমাকে ছাড়া আর বাঁচতে পারবো না। অনেকগুলো বছর কম কষ্ট পাইনি আর চাইনা। বড্ড ব্যাথা করে বুকে। তোমাকে ছাড়া কল্পনা করা দায়। তুমি নামক অক্সিজেনের সাথে যে পুরোপুরি মিশে গেছি সেই অনেকগুলো বছর আগেই। এতদিন কিছুটা বেঁচেছিলাম তোমায় পাবার আশায় সেই আশাটা ভেঙে দিওনা বাঁচতে পারবো না। আমার ভুল হয়েছে হৃদপরী প্লিজ

হৃদান হৃদিতার সামনে হাটু গেড়ে বসে কথাগুলো বলল। কথাশুনে হৃদিতার চোখ দিয়ে কয়েকফুটা পানি গড়িয়ে পড়লো কিছু না বলে হৃদান উঠিয়ে ওর বুকে মুখ গুজে ডুকরে কেঁদে উঠলো। এতক্ষন খুব কষ্টে কান্না আটকে রেখেছিলো এখন একটু আদরে সব বেরিয়ে আসলো। হৃদান কাঁদতে না করলো না। কাঁদুক আজকে এর পর আর কাঁদবে না।

সবাই ইমোশনাল হয়ে গেছে বিদায় এবার সাগর আর সোহান একটু নড়েচড়ে দাড়ালো। পরিস্তিতি স্বাভাবিক করতে গলা খাঁকারি দিলো।

বাবা তোমার বউতো ভুলেই গেছে তার অবলা হতভাগা একটা বর আছে। তা সারাক্ষণ কি ভাইয়ের বুকেই থাকলে চলবে বরটাকেও তো দেখতে হবে -সাগর

তুই যে আমার সন্তান সেটা তুই প্রত্যেক কাজে প্রমাণ করে দিস। আই এম প্রাউড অফ ইউ মাই সান। রিয়েলি -সাগরের বাবা

ওদের কথা বলার ধরণ দেখে সবাই এবার স্বাভাবিক হলো। রিয়া এবার সাগরের কথা শুনে লজ্জা পেলো। ইশশ লজ্জা শরম বলতে নেই। বড়দের সামনে কি বলে।

ওই যে শুরু হলো বাবা ছেলের ড্রামা। যেমন বাপ তেমন ছেলে -সাগরের মা

তা কে যেন বলে ছেলে নাকি তার মতো হয়েছে -সাগরের বাবা

সাগরের বাবার কথা শুনে সাগরের মা থতমত খেয়ে গেল সবাই একসাথে হেসে দিলো। এবার রাইসা গিয়ে রিয়া কে সাগরে পাশে দাড় করিয়ে নিজে গেল পরশী আর হৃদয় চৌধুরীর কাছে।

শাশুড়ি মম শশুড় পাপা -রাইসা

রাইসা লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলল। পরশের মাথায় হাত। বেশ বুজতে পারছে ওর ইজ্জতের ফালুদা করবে এখন। কি আর করার। রাইসার কথা শুনে সবাই ওর দিকে তাকালো। রাইসা লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়েই এদিক ওদিক দুলছে।

এমন করছিস কেন তুই। আর শাশুড়ি শশুড় বলছিস কাকে -রাইসার মা

হেই পেয়ে গেছিইইইইই -রাইসা

রাইসার চিৎকার শুনে সবাই অবাক হলো কি পেয়েছে কিছুই বুঝলো না। রাইসার মা দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে। এত বড় মেয়ে এখনো ডং গেলো না। মনে হয় ছোটই আছে

কি পেয়েছিস -রাইসার মা

ভিলেননননন -রাইসা

মানে -রাইসার বাবা

এইযে আমি শাশুড়ি মম আর শশুড় পাপা বলছি বলে আমার মম ক্ষেপে গেলো তাই ভিলেনন পাইলাম। আমি তো মুভিতে কত দেখি -রাইসা

একটা ঠাঁটিয়ে চড় দিবো বাঁদর মেয়ে কোথাকার -রাইসার মা

রাইসার মার বকা শুনে রাইসা এবার ঠোঁট উল্টে কান্নার ভান ধরলো। মেয়ের কান্না রাইসার বাবা মুটেও সহ্য করতে পারে না

এই একদম আমার মেয়েকে বকবে না -রাইসার বাবা

তো কি করবো কিসব বলছে -রাইসার মা

আরে মম তুমি চুপ থাকো তো। আমাকে কথা বলতে দাও। শাশুড়ি মম শশুড় পাপা দেখো তো আমি বড় হইছি না -রাইসা

মানে -পরশী

আরে আমার বয়স কত বলো তো -রাইসা

হৃদি আর তোর তো সেইম বয়স -হৃদয়

তোমার ছেলের বয়স কত -রাইসা

৩০ হবে হয়তো -হৃদয়

তাহলে তোমার ছেলের কি বিয়ের বয়স হয়নি। এখনো ঘরে বসিয়ে রাখছো কেন বলোতো। বুড়ো বয়সে কে বিয়ে করবে শুনি। এখন হয়তো আমি আছি তাই যত তাড়াতাড়ি পারো বিয়ে করাও কয়দিন পরে দেখা যাবে মেয়ে খুঁজে পাবে না। আর আমার ঠিক সময় বিয়ে এখন ঘরে তিন চারটা বাচ্চা থাকতো। তোমরা চোখেই দেখোনা আমাকে -রাইসা

কথা গুলো বলেই ন্যাকা কান্নার ভান ধরলো পরশ তো পারেনা এখান থেকে চলে যায়। মেয়েটার লাজ লজ্জা বলতে কিছুই নাই। বড়রা সবাই তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হৃদিতারা সবার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে হো হো করে হেসে দিলো তা দেখে রাইসাও হাসতে লাগলো। এরপর বড়রাও হেসে দিলো।

ঠিকি বলেছিস এবার আমার ঘরে একটা মিষ্টি বউ দরকার -পরশী

তাহলে তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করো আমার পাপা মম কিন্তু এখানেই আছে -রাইসা

এবার হৃদয় চৌধুরী এসে রাইসার কান টেনে ধরলো আর রাইসা লাফাতে লাগলো।

বেশী পাঁকা হয়ে গেছো তাই না -হৃদয়

আহ উহ শশুড় পাপা কান ছিড়ে যাবে তো।পরে কিন্তু সবাই বলবে হৃদয় চৌধুরীর ছেলের বউ কান কাটা তখন শুনতে ভালো লাগবে তাই বলছি ছাড়ো না -রাইসা

রাইসার কথা শোনে সবার মাঝেই হাসির রুল পড়ে গেল। সবাই চলে গেছে কিছু ক্ষন আগেই। রিপোর্টার রা রয়ে গেছে।

কয়েকদিনের মধ্যে আপনাদের খবর পাঠানো হবে চলে আসবেন নতুন খবর পাবেন -হৃদান

আর আজকে ঘটানা গুলো যেন সব পত্রিকায় ফন্ট পেইজে থাকে আমি সব গুলো চেইক করবো -পরশ

ওকে ওকে স্যার -রির্পোটার

রিপোর্টার রা চলে গেলে ওরাও বেরিয়ে পড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে। সবাই এক বাড়িতেই যাবে। সেলিব্রেশন পার্টি হবে কাল। আজকে বড়রা মিলে সিদ্ধান্ত নিবে বিয়ের সম্পর্কে।

সন্ধার দিকে সবাই ড্রয়িং রুমে এসে উপস্থিত হয়েছে হালকা নাস্তার জন্য। আলোচনা করবে সবাই মিলে। হঠাৎ হৃদান এসে যা বললো তাতে হৃদিতার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম পারেনা মাটির নিচে ঢুকে যায়……..

চলবে….?
চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here