তুমি নামক অক্সিজেন পর্ব -১৮+১৯

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_১৮
Tahrim Muntahana

রাস্তা দিয়ে ২৫ টার মতো মটর বাইক যাচ্ছে সমান তালে। এখন সন্ধা হওয়ায় বেশ মানুষ শহরের রাস্তায়। একসাথে এতগুলো গাড়ি দেখে সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
হৃদিতা হৃদান রাইসা পরশ রোহানি পিয়াস রাহি সোহান রিয়া সাগর নাশিন আনহা আলো নিয়ন সোহা অরনি পিয়ানি আধির সাহিল আর ৬ জন গার্ড নিয়ে মটর বাইক করে যাচ্ছে।

হৃদিতা বায়না ধরেছে সবাই যখন যাবে তাহলে মটর বাইক করে যাবে। সবাই যেহেতু বাইক চালাতে পারে কোনো প্রবলেম নেই তো। ছেলেরা প্রথমে রাজি না হলেও হৃদিতার জেদের কাছে হার মেনে নিয়েছে। হৃদিতা বলছিলো ওরাই শুধু যাবে কিন্তু পরশ হৃদান ও শর্ত দিয়ে বসলো গার্ড ছাড়া যাওয়া যাবে না। অগত্যা ওরাও রাজি হয়ে গেল। হৃদান ফোন দিয়ে বাইক আনার ব্যবস্থা করে। রেড়ি হতে গেল। শীত পড়েছে বাইরে। তাই উভয় ই হুডি জিন্স পড়ে রেড়ি হয়ে নিলো। রেড়ি হতে হতে বাইক ও চলে আসলো। সবাই বেরিয়ে পড়লো।
হৃদিতারা প্রথমে যাবে হিয়াদের বাড়ি। এই প্রস্তাব টা শুধু হৃদিতার না সকলের। কালকে বাস্কেটবল খেলা একটু উইশ না করলে কি হয়।

হঠাৎ বাইরে এত শব্দ শুনে ওরা মেইন দরজার পাশে আসলো। হৃদিতারাও বাইক পার্ক করে হেলমেট খুলতেই হিয়া আর সিয়ার মুখ থমথমে হয়ে গেল। হৃদিতারা হেসে ভেতরে চলে গেল। আখি খান ভাইয়ের ছেলে কে দেখে তাড়াতাড়ি ঘরে নিয়ে গেল। একটু খাতির যত্ন না করলে কি হাতে থাকে নাকি। আর সবাইকে দেখে খুশি হয়নি তা তার মুখ দেখলেই বুঝা যাচ্ছে। অনিচ্ছা সত্তেও নাস্তা বানাতে গেল

মিস সিয়া উইশ করতে আসলাম। খুশি হাননি -হৃদিতা

হ্যাঁ খু খুশি হয়েছি তো -সিয়া

তো মিস হিয়া কেমন আছেন। না মানে শকড টা মেনে নিতে পেরেছেন তো -রাহি

তোমরা কি বাড়ি বয়ে লেইক পুল করতে এসেছ -হিয়া

এমা কি যে বলেন না আমাদের কি সে সাধ্য আছে -আধির

হ্যাঁ হিয়া খানকে লেইক পুল ভাবতেও তো আমার ভয় করে -রোহানি

পরশ বসুন না দাড়িয়ে আছেন কেন -সিয়া

সিয়ার মুখে পরশের নাম শুনে সবাই ভ্রু কুচকে তাকালো। রাইসা তো পারে না গিলবে এমন ভাবে তাকালো। সিয়া পরশের দিকে তাকিয়ে আছে আর মিটিমিটি হাসছে। পরশ তো নাম শুনে থতমত খেয়ে গেছে না জানি রাইসা কি করে।

পরশ বেবী আসো আমার পাশে বসো তো -রাইসা

পরশ আর রাইসা কে ঘাটালো না এমনিই পাগলি তার উপর কখন ওভার রিয়েক্ট করে বসে তার কোনো গ্যারান্টি নেই।

মিস সিয়া দেখো তো আমাকে আর পরশ কে কেমন মানায়। সুন্দর না। খালি সুন্দর নাকি সুপার। পুরো মেইড ফর ইচ আদার তাইনা -রাইসা

রাইসার কথা শুনে সিয়ার মুখটা চুপসে গেল। আর সবাই রাইসার কান্ড দেখে মুখ চেপে হাসছে। এবার হৃদিতা মজা নেওয়ার জন্য জোরেই হেসে দিলো

মিস সিয়া দেখুন না সত্যিই খুব মানিয়েছে তাইনা। আমি তো বসে আছি কবে আমার বান্ধরনীকে মিষ্টি ভাবি করে নিয়াসবো -হৃদিতা

তা আর বলতে নাকি। কবে যে বড় হবে আর বিয়ে হবে -রিয়া

আর সিয়া পরশ তোর থেকে অনেক বড় নাম ধরে ডাকছিস কেন ভাইয়া বলে ডাক -হৃদান

কেন রাইসা যে ডাকছে নাম ধরে ও তো ছোট -সিয়া

আপনার আর রাইসার মধ্যে অনেক তফাৎ মিস সিয়া। রাইসা আমার উডবি আর আপনি জাস্ট আত্মীয়। তাই ভেবে চিন্তে কথা বলবেন। বউ যদি ভাইয়া বলে ডাকে তার থেকে বিয়ে না করায় ভালো -পরশ

ভাইয়া টেনশন করো না রাইসা তো আর পিচ্চি না যে তোমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে -নাশিন

নাশিন আড়চোখে আনহার দিকে তাকালো। আনহা কটমট করে চেয়ে আছে ওর দিকেই। লোকটাযে ওকেই মিন করে বলছে বেশ বুঝতে পারছে আনহা। হিয়া চুপচাপ বসে আছে। হারটা মেনে নিতে পারছে না। এমন সময় আখি খান নাস্তা নিয়ে আসলো।

আরে বাহ মিসেস খান দেখছি আমাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসছে -সাহিল

তাই তো দেখছি। আমরা কিছু খাবো না মিসেস খান -নাশিন

মিস সিয়া কালকে দেখা হবে মাঠে -হৃদিতা

হুমম দেখা তো হবেই। তখন দেখে নিবো কে কত বড় খেলোয়াড় -সিয়া

ইয়েস এরকম একটা বিপক্ষ দল ই তো আমার চাই। তাছাড়া খেলায় ঠিক মজা পাইনা। আর যে খেলায় মজা নাই সে খেলা হৃদিতা চৌধুরী খেলে না -হৃদিতা

বাহ বাহ কেয়া বাত হে -সাগর

সুপার -সোহান

সত্যি তো বিপক্ষ দল ভারী না হলে কি খেলায় মজা আছে নাকি -সিয়া

এরআগের বার তো বিপক্ষ দল শক্ত ছিলো না তাই খুব ইজিলি জিতে গেছেন মিস সিয়া এবার হবে খেলা -রোহানি

আজ না খেলে খুব মজা পেয়েছি। বিপক্ষ দলকে নাচাতে খুব ভালোলাগে। যাই হোক অল দা বেস্ট মিস সিয়া এন্ড অগ্রিম কনগ্রেচুলেশন হারের জন্য বাই সি ইউ টমোরো ইন দি ফিল্ড -হৃদিতা

হৃদিতারা চলে গেল হিয়া মন খারাপ করে নিজের রুমে দরজা আটকে বসে রইলো। আর সিয়া তো রেগে প্রেকটিস করতে চলে গেল। প্রায় আধাঘন্টা পর হৃদিতারা প্রেকটিস স্পটে পৌঁছলো। হাতে সময় নেই বেশী তাই তাড়াতাড়ি প্রেকটিস শুরু করলো। সাগর রা বসে আড্ডা দিচ্ছে আর খেলা দেখছে। হুডি পরেই খেলা শুরু করেছে। প্রচন্ড শীত।
নাশিন হৃদান পরশ ওদের প্রেকটিস করাবে। প্রথম স্টেপ থেকে শুরু করলো। এবার ছয়জনের মধ্যে গেইম হবে। প্রেকটিস করতে করতে গরম করছে খুব তাই হৃদিতারা হুডি খুলে ফেললো। নিচে টিশার্ট আছে।
সবার প্রত্যেকটি স্টেপ ই খুব নিখুত। রাইসা ওরা আগে থেকেই আর হৃদিতা ছয়মাস খুব করে প্রেকটিস করার ফল খুব ভালো। কারো থেকে কেউ কম না কিন্তু হৃদিতার পারফোমেন্স একটু বেশী স্টিক যেমনটা রিয়ার ছিলো। আসলে হৃদিতা রিয়ার ডাইরি পড়েছিলো। ওখানে বাস্কেটবল খেলার প্রত্যেকটা ইউনিক স্টেপ রিয়া বর্ণনা করে লিখে রেখেছে। হৃদিতা ওখান থেকেই শিখেছে। শেষ কিছু সময় বাকি আছে কিন্তু কেউ রান দিতে পারছে না। হৃদিতার হঠাৎ করে রাগ উঠে গেল। চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে কিছু একটা মনে করে ফট করে চোখ খুললো। ঝড়ে বেগে রাহির থেকে বল নিয়ে সামনে চলে গেল কিন্তু আধির আটকালো। বলটাকে পাস করে নিজেও পাস হয়ে গেল আর গোলে বলটা ফেলে দিলো। রিয়া এতক্ষন বিষ্ময়ে হৃদিতার পারফোমেন্স দেখছিলো

হৃদিরানী তুই -রিয়া

হ্যাঁ আমি তোমার ট্রিকস এইগুলো তাইতো-হৃদিতা

তুই এইগুলো শিখলি কেমনে ভাইয়া তো এইগুলো শেখায় নি। এইগুলো খুব হার্ড তাই আমিও কিছু বলিনি তাহলে -রিয়া

তুমি না বললেও তোমার ডাইরি তো বলেছে -হৃদিতা

মানে -রিয়া

মানে তোমার ডাইরির সব কথা এন্ড সব ট্রিকস এখন আমার বা হাতের খেল -হৃদিতা

কিন্তু এগুলো খুব হার্ড। তুই এগুলো প্রয়োগ করবি না -রিয়া

তুমি তো করেছিলে -হৃদিতা

হৃদিরানী তুই আমার কথা বুঝতে পারছিস না। প্লিজ এগুলো স্টেপ নিস না রিস্কি খুব -রিয়া

আহ রিয়ু বললাম তো এসব ট্রিকস আমার কাছে কিছুই না ।এখন শুধু দেখতে থাকো কালকে কি হয় -হৃদিতা

শুন হৃদি তুই যদি কালকেও আজকের মতো করস তোর খবর আছে -রোহানি

হুমম তুই চাইলে অনেক আগেই দৌড়ের লাস্ট স্টেপ নিতে পারতি অথচ হিয়ার সাথে সাথে থাকলি -সাহিল

আজকে তো হিয়াকে বুঝালাম সবাইকে সব জায়গায় মানায় না।আর কালকের কথা চিন্তা করিস না কালকে শুরু থেকেই খেলা শুরু করবো।আর গো হারান হারিয়ে এমন অবস্থা করবো কালকে টের পাবে -হৃদিতা

কি করতে চাইছো হৃদপরী -হৃদান

নো টেনশন হৃদরাজ তোমার হৃদপরীর কিছুই হবে না -হৃদিতা

হৃদিপাখি তুমি এমন কিছু জানো তাইনা যেটা আমরা জানি না -পরশ

তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে কালকে বড় কিছু করবে তুমি -নাশিন

আরে তোমরা চুপ করোতো এত প্রশ্ন করো কেন হৃদিতা এমনিই বলবে কি করবে ও -অরনি

রোহানি তোমরা জানো তাইনা আমাদের বলছো না কেন -পিয়াস

ওদের কথা শুনে ওরা আমতা আমতা করছে কি জবাব দিবে।

চলো বাড়ি যাই রেস্টের দরকার। কালকেই সব দেখতে পারবে তাই আর অযথা প্রশ্ন করো না উত্তর এখন পাবে না -হৃদিতা

হ্যাঁ হ্যাঁ চলো চলো -আধির

আচ্ছা চল তো তোরা। ওদের আসলেই রেস্ট দরকার -সোহা

আমি এখন হৃদরাজের সাথে যাবো ভাইয়ু তুমি ওই বাইক টার ব্যবস্থা করো -হৃদিতা

হৃদিতার কথায় হৃদান যেন হাতে চাঁদ পেয়ে গেল। হৃদিতার দেখাদেখি রাইসা রোহানিও বলল পরশ পিয়াসের সাথে যাবে। আলো আর নিয়ন ও সাগর আর রিয়া। হৃদিতা আনহার দিকে তাকিয়ে দেখলো নাশিনের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে।

নাশু ভাইয়া তুমি আনহাকে নিয়ে আসো আর রাহি তুই সোহান ভাইয়ার সাথে আয়। আর তোমার কি ডাবল আসবে -হৃদিতা

না না আমি একাই যাবো -পিয়ানি

আমিও একাই। অনেকদিন পর বাইক চালাচ্ছি এই সুযোগ মিস করতে চাইনা -অরনি

ওকে তোরা আয় তাহলে -সাগর

সবাই যে যার প্রেয়সীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। প্রিয়মানুষটাকে আগলে নিয়ে রাতের শহর দেখার আনন্দ আর সুখটা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সত্যি !#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_১৯
Tahrim Muntahana

এখন সকাল ৮ বাজে। বাড়ির প্রত্যেকটি মানুষ খুব এক্সাইটেড হয়ে আছে। হৃদিতারা মাত্রই নাস্তা সেরে ড্রয়িং রুমে বসেছে। একটু পর রওনা হবে। বড়রা খেলা শুরু হওয়ার আগেই চলে যাবে ছোটরা এখন যাবে। বড়দের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে বেড়িয়ে গেল ওরা। আধা ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে গেল। প্রিন্সিপাল স্যার খুব টেনশনে আছে। কোনো ভুল যাতে না হয় খেয়াল রাখছে। হৃদিতা প্রথমে গিয়ে আগে সবকিছু চেইক করে নিলো। নাহ আজকে সব কিছু ঠিক আছে।
সবার সাথে কথা বলতে বলতে এখন প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে। আর আধা ঘন্টা আছে খেলা শুরুর। নাশিন খেলার ট্রিকস গুলো আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিলো। আগে ছেলেদের খেলা তারপর মেয়েদের। ছেলেরা তৈরী হচ্ছে একটু পরেই ডাক পড়বে।

দশটা বাজতে পাঁচ মিনিট থাকতেই হুশিয়ার আসলো মাঠে যাওয়ার।যথারীতি খেলা শুরু হয়ে গেল। আধির সাহিল দুজন বেশ হ্যান্ডেল করছে নিজেদের দল কে। বিরতি দিয়েছে অথচ কেউ রান দিতে পারেনি। নাশিন এবার আধির আর সাহিল কে নতুন একটা ট্রিকস শিখিয়ে দিলো। ট্রিকস অনুসারেই আধির দুইটা আর সাহিল একটা আর অন্য একজন একটি মোট চারটা রান দিয়ে বিজয়ী ঘোষিত হলো। এবার ট্রান মেয়েদের। মধ্যে আধাঘন্টা রেড়ি হওয়ার সময়।

হৃদিতাদের জন্য বরাদ্দ কৃত রুমে সবাই চিন্তিত মুখে বসে আছে আর হৃদিতা সারা রুম পাইচারি করছে। একজন খেলোয়াড় এখনো এসে পৌছায়নি। টিম মিল না হলে খেলতে পারবে না ওরা। আর তেমন কোনো স্টুডেন্ট ও নেই যে সাধারণত খেলার মাঠে আবাদত দাড়িয়ে থাকতে পারবে। রাইসা ওরা অনবরত কল দিয়েই যাচ্ছে কেউ তুলছে না। এবার ওদের ডাক পড়লো। এখানে শুধু খেলোয়াড় রা ছিলো আর সাথে রিয়া আলো আনহা সোহা অরনি পিয়ানি। ওদের ও টেনশন হচ্ছে। না জানি হৃদিতা কখন রেগে যায় আর হুংকার দিয়ে উঠে। কিন্তু হৃদিতা বেশ শান্ত হয়ে বসলো। ভাবছে কিছু। হৃদিতা সব খেলোয়াড় কে মাঠে পাঠিয়ে দিলো। আর ও ফোন দিলো ডিসি কে

আসসালামু আলাইকুম স্যার হৃদিতা চৌধুরী বলছিলাম

বলো মামুনি আমি চিনতে পেরেছি তোমাকে

স্যার আমার দলের একজন মিসিং

হোয়াটটট কি বলছো এসব এখন খেলা শুরু হবে আর এখন তুমি বলছো একজন মিসিং

আমি বেশ বুঝতে পারছি মিসিং এর কারণ। ওসব পরের কথা। এখন কথা হচ্ছে আমরা ওই একজন ছাড়াই খেলবো

এটা সম্ভব না আমি নিয়মের বাইরে যেতে পারবো না। মামুনি তুমি জানো আমি আমার দায়িত্বে কখনো হেরফের করিনা। দল মিল হলে এসো না হয় খেলা কেন্সেল করতে হবে

নো খেলা কেন্সেল করা যাবে না আমরা আসছি। বাই স্যার

কল কেটে দিয়ে হৃদিতা কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসলো। অন্যদিকে সিয়া চিল মুডে আছে। ও জানে একটু পর ঘোষণা হবে বিপক্ষ দল হার মেনে নিয়েছে তাই আনন্দে আছে। আসলে একজন খেলোয়াড মিসিং হওয়ার কারণ হলো সিয়া। আর মাত্র পাঁচ মিনিট আছে অথচ বিরোধি দলের পাঁচ জন আসছে না। তাই সবার মধ্যে চাপা গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। সিয়ার মুখ থেকে তো হাসি সরছেই সে যেন ঘোষণার আগেই বিজয়ী হাসি হাসছে। হৃদানদের ও এবার টেনশন হতে শুরু করলো। একসময় থাকতে না পেরে উঠে ওদের ওখানে যাবার জন্য। সামনে তাকাতেই ওদের চোখ কপালে উঠার উপক্রম। সিয়ার হাসিটা মিলিয়ে গিয়ে মুখটা কালো হয়ে আসলো। কি করতে চেয়েছিলো কি হলো।

হৃদিতা রিয়া রাইসা রোহানি রাহি আসছে। জার্সি আর ট্রাউজার পড়ে। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রিয়াকে এখানে কেউ আশা করেনি। সবাই জানতো রিয়া আর কখনো খেলতে পারবে না। রিপোর্টার রা তো নতুন চমক পেয়ে গেল। বাড়ির সবাই তাড়াতাড়ি ওদের ওখানে গেল।

এসব কি রিয়ু পাখি। তুমি এই পোশাকে কেন -সাগর

হৃদপরী কি হচ্ছে এসব -হৃদান

আমাদের দলের একজন মিসিং তাই রিয়ু খেলবে -হৃদিতা

হোয়াটটটট কি বলছো হৃদিরানী তুমি বুঝতে পারছো -নাশিন

রিয়ু এখন অনেকটা সুস্থ হলেও খেলার উপযোগি হয়নি। অসুস্থ হয়ে যাবে -নাশিন

অসম্ভব রিয়ুপাখি খেলবে না। আমি কিছুতেই মানতে পারবো না -সাগর

তোরা কি করছিস তোদের খেয়াল আছে। হৃদি মা আমার রিয়ু তো অসুস্থ -পরশী চৌধুরী

আর ডাক্তার বলেছে ও একবছরের মধ্যে কোনো দৌড়াদৌড়ি করতে পারবে না – হৃদান

ভুল বলেছে কারণ ডাক্তার কে আমিই বলছি এটা বলতে -হৃদিতা

মানে -নিশি চৌধুরী

ছোটআম্মু রিয়ু এখন খেলতে পারবে। কিন্তু ওর শরীরের স্কিলের উপর এটা নির্ভর করবে যে ও এখন পারবে কিনা। আমি চাইনি কোনো রিস্ক নিতে তাই ডাক্তার কে বলেছি এটা বলতে যাতে রিয়ু খেলার কথা না বলে -হৃদিতা

আর আমিই এখন চাই খেলতে। ওরা যে খেলা আমার জিবনে খেলেছে তার প্রতিশোধ এইভাবেই নিতে চাই। আমি হৃদিরানী আর ডাক্তারের কথা শুনতে পেয়েছিলাম। কিন্তু কিছু বলিনি কারণ আমি জানি হৃদিরানী আমার খারাপ হোক কখনোই চাইবে না। তাই ওর সিদ্ধান্ত কে আমি সম্মান করি। এখন আমাকে খেলতে হবে। আর আমার স্কিল সম্পর্কে তোমাদের ধারণা আছেই -রিয়া

তাই বলে -সাগর

প্লিজ সাগর আর না করোনা। আমিও চাই নিজেকে প্রমাণ করতে -রিয়া

আচ্ছা যাও তোমরা। আমাদের সবার দোয়া এবং ভালোবাসা তোমাদের উপর আছে। তোমরা পারবে আমি জানি -পরশ

হুম পারতে যে হবেই তোমাদের -নাশিন

আমার বউমা হয়ে হারলে কিন্তু হবে না। আমার বউমা চ্যাম্পিয়ন -সাগরের বাবা

আর আমার মেয়েগুলো খুব শক্তিশালী তাই তাদের হারানো এত সহজ না -রিদিমা চৌধুরী

সবার কাছে দোয়া নিয়ে ওরা খেলার মাঠে উপস্থিত হলো। সিয়া যে প্রচন্ড শকে আছে তার ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। সবার মধ্যেই উত্তেজনা কাজ করছে। আজকে যে এত বড় একটা সারপ্রাইজ পাবে কেউ ভাবেই নি। হৃদিতা ওরা মাঠে লাইনে দাড়িয়েই সিয়ার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিলো। সিয়া বুঝে গেছে যে আজকে হার নিশ্চিত।

যথারীতি খেলা শুরু হলো। সিয়ারা হৃদিতাদের কাছ থেকে বল নিতেই পারছে না। বিরতির আগেই চারটা গোল হয়ে গেছে। সবাই তো শুধু হৃদিতা রিয়াকে রাইসা রাহি রোহানি চিয়ার্স আপ করছে। এখন বিরতি দিয়েছে। হৃদিতা রিয়া রাইসা রাহি রোহানি গেল সিয়া দের ওখানে

হাই মিস সিয়া -রিয়া

কেমন লাগছে -হৃদিতা

আর বলিস না মন চাচ্ছে কোথাও লুকিয়ে থাকি -রাহি

ইসস হায় আমার তো মনটা ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে। পরশ মেরী জান প্লিজ কাম। মেরী বাঁচালো -রাইসা

ওইযে ড্রামাকুইনের ড্রামা শুরু হয়ে গেছে -পরশ

হাহাহা যায় বলিস না কেন পরশ এরা পারেও বটে -সোহান

ইশশ আমার বউটা কি খেলল আমি মনে হলো চান্দে বসে আছি -সাগর

আমার বউটাকে দেখছিস মনে হচ্ছে বাঘেনি। না জানি কবে আমাকেই খেয়ে ফেলে। ইশশ কবে যে বিয়ে করবো কবে যে বাসর করবো -হৃদান

হৃদানের কথা শুনে পিয়াস সাগর সোহান পরশ নাশিন এমন ভাবে তাকালো হৃদান থতমত খেয়ে গেল। তারপর মেকি হাসি দিয়ে পরশের কাঁধে হাত রাখলো।

আরে ভাই ওমন করে চাচ্ছিস কেন। বয়স তো কম হলো না এখনো বিয়েই করতে পারলাম না বাবা ডাক শুনবো কবে -হৃদান

ভাইয়া আর বেশী দেরী নেই কয়েকদিন পরেই হয়ে যাবে -নাশিন

ইশশ এই কয়েকদিনটা আর যেতে চায় না -পিয়াস

আরে তোমাদের সবার দেখছি বিয়ের খুব তাড়া। মধ্যে আমি নামক মাছুম বাচ্চার সামনে এমন কথা বললে আমার বুঝি ইচ্ছে করে না -নাশিন

কি ইচ্ছে করে নাশিন ভাইয়া -আনহা

আবব তেমন কিছু না। তুই পিচ্চি পিচ্চির মতো থাক বড়দের কথার মাঝখানে আসছিস কেন -নাশিন

এই এই আমি পিচ্চি তোমাকে কে বলল। আমি এইটিন প্লাস সো বুঝে কথা বলবে -আনহা

তো পিচ্চি বড় হইছিস? -নাশিন

বড় হইনি তুমি জানো ঠিক বয়সে বিয়ে হলে এখন দুই বাচ্চার মা হয়ে যেতাম আর বলছে আমি বড় হয়নি -আনহা

আনহার কথা শুনে বসাই চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে আছে। আনহা তো রেগে কি বলছে বুঝতেই পারছে না। নাশিন তো হতভম্ব হয়ে গেছে কি বলে এই পিচ্চি

তা তোমার বিয়ের ঠিক বয়স কত ছিলো শালিকা -নিয়ন

কেন ক্লাস নাইন। তোমরা জানো ক্লাস নাইনে আমার সাথে পড়া কয়েকজনের বিয়ে হয়ে গেছে এখন ওরা তিন তিনটা বাচ্চার মা আর আমি? হায় কি কপাল এখনো পাপা মমের চোখেই পড়লাম না -আনহা

বোনের মনে যে এসব চলছে হৃদান তো তাজ্জব হয়ে গেছে। নিজেই বিয়ে করলাম না তার পিচ্চি বোন বলে দুই বাচ্চার মা হয়ে যেতো। পরক্ষনেই আনহার দিকে তাকিয়ে দেখে ও মুখ চেপে হাসছে। হৃদান তখন বুঝলো ওদের বোকা বানাচ্ছে এই মেয়ে। আলো তো সেই কখন থেকে হেসেই যাচ্ছে ও আগে থেকেই জানে ওর বোন কেমন। নাশিন এখনো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে কল্পনা করছে ওদের বিয়ে হয়ে দুইটা বাচ্চা হয়েছে। বাচ্চা দুইটাকে ওর কোলে দিয়ে আনহা চকলেট খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। বাচ্চা করে দিয়েছে পটি আনহাকে বলতেই গর্জে উঠে জারি দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো তারপর নিজেই পরিষ্কার করতে লাগলো। নাহ আর ভাবতে পারছে খকখক করে কেঁশে উঠলো নাশিন। সবাই ওকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এই সুযোগে আনহা নিজেও চলে গেল হৃদিতাদের ওখানে।

হাই ওয়ান ইয়ার এক্স চ্যাম্পিয়ন আপু। কেমন আছো এখন -আনহা

আনহা এভাবে বলিস না সত্যি বড্ড কষ্টের বিষয়টা -আলো

আলোপু আর বইলো না আমার যে এত কষ্ট লাগছে মনে চাচ্ছে শুধু জামাই মানে মেরী জান পরশের কুলে বসে কতক্ষন কান্না করি -রাইসা

হায় কি কপাল। একবার লড়াই ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন হয়ে কি গুমর টাই না দেখালো কিন্তু এখন -রোহানি

মুখ সামলে কথা বলো তোমরা, ভালো হবে না বলে দিচ্ছি -সিয়া

আর বলিস না মিস সিয়া যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে আমাদের আটকানোর। কত কষ্ট করে একজন কে কিড়ন্যাপিং করে আটকে রাখলো কিন্তু থামাতে পারলো না -রাহি

মা মা মানে -সিয়া

মিসেসসসস খানননন আপনার মেয়ে মা মা করছে তাড়াতাড়ি আসুন -হৃদিতা

হৃদিতারা উঠে চলে আসলো। সিয়া রেগে গিয়ে নিজের কোচের কাছে গেল। গিয়ে দেখলো কোচ মুখ ভার করে বসে আছে। সিয়া তো রেগে ফোস ফোস করছে। কোচ কিছুক্ষন ভেবে সিয়াকে একটা ট্রিকস শিখিয়ে দিলো। ট্রিকসের পরিণতি ভেবেই সিয়া বাঁকা হেসে চলে গেল খেলার মাঠে কোচ ও গেল পিছু পিছু। বিরতি শেষ শুরু হবে পরের রাউন্ড।

চলবে….?

চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here