তুমি নামক অক্সিজেন পর্ব -১৬+১৭

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_১৬
Tahrim Muntahana

হসপিটালের করিডরে চিন্তাযুক্ত মুখে কেউ বসে আছে কেউ পায়চারি করছে। রিয়াকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে প্রায় একঘন্টা আগে। এখন অপরেশন চলছে। ক্রিটিক্যাল অপারেশন। সেদিন হৃদান হৃদিতাকে জানিয়েছিলো রিয়ার জন্য ম্যাচিং হার্ট পাওয়া গেছে। হৃদিতা খুশিতে হৃদানকে সত্যি সত্যিই চুমু দিয়ে বসে। তার কয়েকদিনের মধ্যেই রিয়াকে হাসপিটালাইস করা হয়। দুটো অপারেশন একসাথে। হার্ট ট্রান্সফার আর চোখের অপারেশন। হৃদিতারা ছাড়া কেউ জানে না হার্টের অপারেশনের ব্যাপারে তাই বড়রা বেশী টেনশন করছে না। সাগর একপাশে মাথা নিচু করে বসে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে ছেলেটা ভেতরে ভেতরে গুমডে মরছে। অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগে রিয়া সাগরকে বলেছিলো –

আমি চোখ খুলে কিন্তু হৃদিরানী পরশ ভাইয়া, নাশিন ভাইয়া আর তোমাকেই আগে দেখবো প্রিয়

হ্যাঁ দেখবে তো রিয়ুপাখি। আমি আছি তোমার সাথে। কথা দাও সারাজীবন থাকবে

জানিনা ফিরবো কিনা ফিরলে অবশ্যই তোমার সাথে সারাজীবন কাটাবো

এমন করে বলো না রিয়ুপাখি বড্ড ব্যাথা করে বুকে। কিছু হবে না তোমার। আমার কাছে ফিরবে তুমি

তাই যেন হয়

তুমি হয়তো জানো না যে তোমার অসুস্থতার কথা সম্পূর্ণ আমি জানি তাই ভয় হচ্ছে রিয়ুপাখি ছেড়ে যাবে না তো বড্ড বেশী ভালোবাসি

আমিও ভালোবাসি প্রিয়। এবার আসি

আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রিয়াকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় তারপর থেকে সাগর থম মেরে বসে আছে। আর দুই ভাইতো সমানে পাইচারি করছে অল্প কিছুক্ষনেই সবার হাল নাজেহাল। রাহি ওরা হৃদিতাকে সামলাচ্ছে। আর পিয়াস সোহান পরশদের। ওদের ও খুব টেনশন হচ্ছে। হৃদান ও আছে হৃদিতার পাশে। একটু একটু পর ফুপিয়ে কেঁদে উঠছে তাই হৃদান ওর পাশ থেকে উঠেনি।
প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা পর ওটির রুমের লাইট নিভে গেল ডাক্তার বের হয়ে আসলো। সবাই ডাক্তার ঘিরে ধরে আছে। তা দেখে ডাক্তার মুচকি হাসলো। ওদের ভালোবাসা আসলেই খুব স্বচ্ছ। একজনের কিছু হলে আরেকজন হৃদয়হীন হয়ে যায়।

অপারেশন সাকসেসফুল। দুটো অপারেশন ই অনেক সুন্দর ভাবে করতে পেরেছি। রিয়া মামুনি ঠিক আছে এখন, জ্ঞান ফিরবে না আজকে। ঘুমের ডোজ দেওয়া হয়েছে। কাল জ্ঞান ফিরলে চোখের ব্যান্ডেজ টাও খুলে দেওয়া হবে

সত্যিই ! -হৃদিতা

হ্যাঁ মামুনি আসলে প্রথমে একটু ভয়েই ছিলাম একটু এদিক সেদিক হলেই বিপদ। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমত আর তোমাদের প্রত্যেকর ভালোবাসার জন্যই অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। কিন্তু একটা প্রবলেম আছে

কি প্রবলেম আঙ্কেল -পরশ

অপারেশনটা খুব ক্রিটিক্যাল ছিলো ওনাকে অনেকদিন হসপিটালে থাকতে হবে। হাটতে পারবে না ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। দূর্বলতার পাশাপাশি হার্টের প্রবলেম ও আছে সদ্য অপারেশন হয়েছে ক্ষতটা সারতে দেরী হবে।

কবে বাসায় নিয়ে যেতে পারবো – নাশিন

এত তাড়াতাড়ি না। অপিরেশন টা কিন্তু হার্টের তাই আমার মনে হয়না ছয় মাসে রিকোবার হবে। আর হাটতে যেহেতু পারবে তাই বাসায় নিয়ে রিস্ক নিয়ে লাব নেই। প্রত্যেকদিন চেকাপ মেডিসিন এসব করতেই হবে যতক্ষন না ক্ষত শুকায় আর হাটতে পারে। এখন আসি চিন্তা করো না।

ডাক্তার চলে গেল ওরা সবাই একটা স্বস্থির নিশ্বাস নিলো। নাশিন আর পরশ হসপিটালে থেকে সবাইকে বাসায় পাঠিয়ে দিলো বাসার সবাইকে তো বোঝাতে হবে না জানি কি রিয়েক্ট করে শুনে। বাসার সবাই সব শুনে কিছুক্ষনের জন্য চুপ করে ছিলো কিই বা বলবে ওদের কে টেনশনে না রেখে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা কেমন ম্যানেজ করলো এসব ভেবে কেউ আর কিছু বললো না শুধু আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো।
আগের মতোই চলছে সব। রিয়াকে সবাই প্রত্যেকদিন দেখতে আসে। একেক দিন একজন করে ওর সাথে থাকে। অরনী সোহা পিয়ানি সোহান ওরাও যায়নি। আগে থেকেই বাংলাদেশে নিজস্ব বাসা ছিলো আর বাংলাদেশ থেকে যেতে ইচ্ছে করলো না বলে কেউ যায় নি। অগত্যা ওদের বাবা মা রাই সব কিছু হ্যান্ডেল করে বাংলাদেশে চলে আসলো। কেটে গেছে মধ্যে আরো ৫ টা মাস। আর মাত্র দুদিন বাকি কম্পিটিশনের। আগের দিন দৌড় প্রতিযোগিতা পরের দিন বাস্কেটবল। সবাই খুব টেনসনে আছে কি হবে। হৃদান পরশ নাশিন তিনজনে হৃদিতা রাইসা রাহি রোহানি আধির সাহিল ওদের কে খুব সেইফটিতে রেখেছে। যেখানেই যাবে সেখানেই পিছে পিছে গার্ড থাকবে কিন্তু ওরা কেউ জানে না এই বিষয়ে। ওরা খুব করে প্রেকটিস করছে। জিততে তো হবেই। অন্যদিকে হিয়া আর সিয়া দুইজনে মিলে প্রেকটিস করছে। হৃদিতাকে টেক্কা দিতে নিজেও দৌড়ে নাম দিয়েছে হিয়া। আর সিয়া তো বাস্কেটবলে আছেই। হিয়া সিয়া মনে করেছে হিয়ার কথাটা হৃদিতারা কেউ জানে না তাই এসব ভেবে শয়তানি হাসি হাসে। অনত্র হৃদিতা ওদের খবর দেখে আর বাঁকা হাসে।
দুইদিন অনেক কাজের মন্যে দিয়ে গিয়েছে। মাঝখানে হৃদিতারদের উপর একটা এ্যাটাক হয়েছিলো। গার্ডরা কি করবে সবগুলোকে এমন ভাবে মেরেছে গেট গেট করে সব সত্যিই বলে দিয়েছে তা রেকর্ড করে নিয়েছে হৃদান। সিয়া খুব ভয়ে আছে কারণ ও নিজেও জানে হৃদিতার সাথে পারবে না। তাই অন্য প্লেন করেছে হৃদিতাকে থামানোর।

আজকে দৌড় প্রতিযোগিতা। স্পেশাল গেস্ট হিসেবে এসেছে আহনাফ চৌধুরী হৃদয় চৌধুরী রিয়ান চৌধুরী হৃদান চৌধুরী। ওরা এমনিই আসতো কিন্তু ওদের স্পেশাল গেস্ট হিসেবে ইনভাইট করেছে তাই গেস্ট হিসেবেই এসেছে। হৃদিতা ভেতরে গেছে ড্রেস চেন্জ করতে। আগে আগেই গেছে সবকিছু পর্যবেক্ষন করবে পরে। সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। জার্সি পড়ে নিয়েছে হৃদিতা চুল উপরে খোপা করে কাঠি দিয়ে এমন ভাবে বেঁধেছে যাতে টান দিলেও না খুলে। এমন সময় হৃদান আসলো। হৃদিতা হৃদান কে দেখে মুচকি হেসে নিজের কাজ করতে লাগলো। হৃদান পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর অনেক কিছু বুঝিয়ে কপালে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে শুভেচ্ছা জানালো। দূর থেকে এসব দেখে একজন রেগে ফেটে পড়ছে। হৃদান হৃদিতাকে নিয়ে বের হয়ে আসলো। আসার সাথে সাথে রিপোর্টার রা ঘিরে ধরলো হৃদিতা বিরক্তি নিয়ে তাকালো।

এখন না পরে কথা হবে আপনাদের সাথে। আমি একবার যখন বলেছি যে ইন্টারভিউ দিবো তো দিবো তাই অযথা এসব না করে বসে থাকুন আর খেলা দেখুন। বাই

বলেই বেরিয়ে এলো মধ্য থেকে রিপোর্টার রাও চুপ করে বসে রইলো। পিয়ানি সোহা অরনী ওরা সবাই ওদের ফ্যামিলিকে নিয়ে এসেছে। রিয়াও এসেছে আজ। ও এখন হাটা চলা করতে পারে। হৃদিতার পাপা মম মামুনি আলো আনহা রাহি রোহানী রাইসা আধির সাহিল ওদের সবার বাবা মা সবাই এসেছে। খেলার মাঠে সময়ের আগে ঢুকা বারণ কথাটা শুনেই হৃদিতার খটকা লাগলো। তাই ও সব নিষেধ ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেল। তা দেখে কয়েকজন এগিয়ে আসলো

হেই আপনি কি করছেন ভেতরে আসলেন কেন খেলার শুরু হওয়ার আগে ভেতরে প্রবেশ নিষেধ। বাইরে যান প্লিজ

আমি জায়গাটা চেইক করবো। তাই চুপ থাকুন না হলে চাকরী থাকবে না আপনার

হোয়াট আপনার সাহস তো কম না আমি ইচ্ছে করলে আপনাকে এখনি খেলা থেকে বাদ দিতে পারি জানেন

হৃদিতার রাগ উঠে গেল। রক্ত লাল চোখে তাকালো লোকটার দিকে লোকটা ভয়ে পিছিয়ে গেল একটুপর নিজেকে স্বাভাবিক করে কিছু বলতে নিবে তার আগেই

আমাকে বার করার কারো সাধ্য নেই। যে সিএমের চামচা গিরি করছেন তাকে পৃথবী থেকে সরিয়ে দিতে আমার একটা ইশারায় যথেষ্ট সেখানে সিএম পদ তো নিছক তুচ্ছ। তাই চুপ থাকুন আমাকে আমার কাজ করতে দিন

লোকটি আর কিছু বলতে পারলো না ভয় পেয়ে গেছে। কিন্তু লোকটি এটাও বুঝলো না যে মেয়েটিকে খেলার স্পটে দেখেই সিএম ভয় পেয়ে গেল কেন আর ওকেই বা তাড়াতাড়ি পাঠালো কেন।

হৃদিতা প্রথমে সবার দৌড়ের লাইন টা চেইক করে নিজের লাইনটার দিকে গেল মধ্যে খানে এসেই কিছু একটা দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো। জিনিসটি হাত দিয়ে ধরতেই রাগে মুখমন্ডল প্রচন্ড রকমের লাল হয়ে গেল। হিংস্রতা নিয়েই চিৎকার করেই সিএমকে ডাকলো। কেউ কেউ গল্প করছিলো কেউ কেউ ঘুরে দেখছিল স্পট টা হঠাৎ চিৎকার শুনেই সবাই সেদিকে ভিড় করলো। সাথে হৃদান ওরাও আসলো গিয়ে যা দেখলো তাতে ওরা শকড হয়ে তাকিয়ে রইলো………..
#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_১৭
Tahrim Muntahana

হৃদিতা মাঠে সিএম কে এলোপাথাড়ি মেরে চলছে। ভয়ে কেউ কাছে ঘেসতে পারছে না। গার্ড রাও সামনে যেতে পারছে না, না যেতে পারছে পুলিশ। হৃদিতা চৌধুরীকে সবাই চিনে। হৃদান ওরা দৌড়ে গিয়ে হৃদিতাকে থামালো। হৃদিতা রেগে আবার মারতে গেল পরশ হৃদিতাকে জড়িয়ে ধরলো। দূর থেকে মারের দৃশ্যটা দেখে হিয়া কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারলে বাঁচে।কিন্তু তা করা যাবে না। ধরা পড়ে যাবে তাই চুপ করে দৃশ্যটা দেখতে লাগলো।

হৃদপাখি কি হয়েছে এত হাইপার কেন। মারছো কেন সিএমকে -পরশ

কথা বলো হৃদিরানী কি হয়েছে -নিশাত

হৃদু বলছিস না কেন কি হয়েছে -রাইসা

হৃদিতা কোনো কথা বলছে ওর ঠিক রাগটা হজম হচ্ছে না মন চাচ্ছে এই সিএমকে মেরে ফেলতে। তখন বাড়ির সবাই ও ওখানে আসলো। হৃদয় আর রিয়ান চৌধুরী তো দৌড়ে গিয়ে তাদের প্রাণভোমরা কে জড়িয়ে নিলো। কেমন বিধ্বস্ত লাগছে।

আমার আম্মুটার কি হয়েছে -রিয়ান চৌধুরী

মামুনি কি হয়েছে তোমাকে এমন লাগছে কেন আর সিএমকে মারছো কেন -হৃদয় চৌধুরী

আহনাফ চৌধুরী এসে ওদের হৃদিতাকে সময় দিতে বলল। ওরা ওখানেই বসলো চেয়ারে। সাহিল আধির ওরা সিএমকে মাটি থেকে তুলে চেয়ারে বসালো। হৃদান সিএম এর সহকারীর কাছে গেল

কি হয়েছে এখানে -হৃদান

স্যার আমি কিছু জানিনা -সহকারী

বলবেন নাকি অন্য ব্যবস্থা নিবো -হৃদান

সহকারী ভয়ে আমতা আমতা করে বলতে লাগলো

আসলে সিএম স্যার আজকে খেলা শুরুর আগে কাউকে খেলার মাঠে ঢুকতে বারণ করেছিলো। আমরা কেউ বুঝতে পারছিলাম না কেন। সিএম এর আদেশ অমান্য করলে তো চাকরী যাবে তাই আর কিছু বলিনি। হঠাৎ হৃদিতা মেম কে মাঠে ঢুকতে দেখে আমরা এখানে এসেছি না করতে কিন্তু আমাদের কথা শুনছিলো না তাই সিএম এসেছে। হঠাৎ হৃদিতা মেম কি যেন দেখে কিছু না বলেই সিএম এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করলো

হৃদানের ও খটকা লাগলো কারণ অহেতুক কোনো কিছু দেখে এত রেগে যায় না হৃদিতা কখনো। তাই সামনে এগিয়ে গেল। গিয়ে দেখলো হৃদিতার লাইন সহ তিন লাইন ছোট করে অনেকটুুকু জায়গা গর্ত করা। গর্তের আশেপাশে অনেকটুকু জায়গায় কাদার সাথে তেল মিশানো যাতে তেল মিশানো কাদায় পা পিছলে গর্তে পড়ে যায়। হৃদান এতক্ষনে বুঝলো হৃদিতার হঠাৎ রেগে যাওয়ার কারণ। হৃদান রেগে গিয়ে এক ঘুসিতে চেয়ার থেকে ফেলে দিলো সিএম কে। হৃদানের হঠাৎ আক্রমনে সবাই হতবিহ্বল হয়ে গেল। সিএম আর সহ্য করতে পারলো না জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে রইলো। প্রেস মিডিয়া তো নতুন খবর পেয়ে গেল। একেরপর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে

মেম কি এমন হলো যার কারণে আপনি সিএমকে মারলেন

আপনাকে তো এখন খেলা থেকে রাসট্রিকেট করে দিতে পারে

আপনি কিছু বলছেন না কেন। সিএমকে মারলেন কেন। কি ক্ষতি করেছে আপনার

পাপা ভাইয়ু সিএম হেড ডিসি কে ফোন করে বলো এখানে আসতে। আজকে আমিও দেখবো ওই লোকটাকে কে সিএম বানিয়েছে। পাপা কোনো কথা শুনতে চাইছি না যা বলছি তাই করো -হৃদিতা

হৃদয় চৌধুরী কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না মেয়ের রাগ সম্পর্কে ধারণা আছে তাই ডিসিকে ফোন দিলো আসতে। প্রায় আধাঘন্টার মধ্যে ডিসি এসে উপস্থিত হলো। সিএমকে এইভাবে পড়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে সামনে তাকালো। হৃদয় আহনাফ চৌধুরীর সাথে তার ভালো সম্পর্ক।

হৃদয় সাহেব কি হয়েছে এখানে। আর সিএম এর এই অবস্থা কে করলো

আমার সাথে আসুন -হৃদিতা

কোথায় যাবো

মি আরিফ আপনি আসুন পরে দেখবেন বলতে হবে না -হৃদান

মি আরিফ আর কিছু বললো না এগিয়ে গেল ওদের পিছু পিছু। সাথে রিপোর্টার রা তো আছেই। গর্ত টা দেখে মি আরিফ রেগে বোম হয়ে গেলেন। তিনি তার কর্মজীবনে খুব স্ট্রিট। দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেন।

এগুলো কিভাবে হলো -মি আরিফ

সেটা আপনাদের সিএম কে জিজ্ঞেস করুন -হৃদিতা

তার জন্যই সিএম কে মারা হয়েছে

মি আরিফ এসব সিএমের কাজ। তিনি আগে থেকেই জানতেন এখানে এরকম কিছু আছে তাই খেলার আগে কাউকে ঢুকতে দিতে চাইছিলেন না। হৃদিতার খটকা লাগলে জোর করে এসে দেখে এরকম। আর সিএম এসে আজেবাজে বুঝাচ্ছিলো তাই মেরেছে -হৃদান

আমি দেখছি বিষয়টা। এই এগুলো ঠিক করে খেলা স্টার্ট করার ব্যবস্থা করো। আমি নিজে সবকিছুর তদারকি করবো। আর সিএম কে হসপিটাল নেওয়ার ব্যবস্থা করো সাথে পুলিশ নিয়ে যাও যাতে পালাতে না পারে। কার কথায় এসব করেছে সেটাই দেখবো -মি আরিফ

সবাই মাঠের বাইরে চলে গেল। এতক্ষন হিয়া এসব দেখে ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। অন্যকে গর্তে ফেলতে গিয়ে সেই গর্তে নিজেই পড়েছে। হৃদিতা এখন একটু শান্ত হয়েছে। পরশী চৌধুরীর বুকে মাথা এলিয়ে আছে। একটু স্ট্রেস গেছে রেস্ট দরকার নাহলে দৌড়াতে পারবে না। কিছুক্ষন পর মাথা তুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজছে পাচ্ছে না

কাকে খুজিস তুই হৃদু -রোহানি

সিক্রেট -হৃদিতা

বল না -সাহিল

বলবো না একটু পর দেখতেই পারবি -হৃদিতা

আরে কি দেখবো বল না প্লিজ -রাহি

নো -হৃদিতা

তোর মাথায় কি চলছেরে -আধির

একটুপর যা দেখবি তোরা চমকে যাবি -হৃদিতা

ইশশ বলনা কি এমন করছিস কেন -রাইসা

হৃদপরী কি হয়েছে -হৃদান

কিছু না তো -হৃদিতা

আর যায় বলো তোমার হঠাৎ এইভাবে রেগে যাওয়া ঠিক হয়নি। এত স্টেস নিলে দৌড়াতে প্লবলেম হবে। আমাকে বলতে পারতে -হৃদান

হৃদান ওসব কথা এখন থাক -পরশ

হ্যাঁ ভাইয়া এখন চলো ওইদিকে প্রতিযোগিতা শুরু হবে -নাশিন

ফাটিয়ে দিবে চ্যাম্পিয়ন হৃদিআপু -আনহা

হৃদিরানী আমি জানি তুই এইবারো চ্যাম্পিয়ন হবি। ওল দি বেস্ট মাই কলিজা। আমি তো ভাবতেই পারিনি সেই আগের মতো তোর প্রতিযোগিতা আমি দেখতে পারবো -রিয়া

ইমোশনাল হয়ে যাও কেন এত। এই মেয়ে মানুষ গুলা পারেও বটে -সাগর

ইমোশনাল হইছে দেইখা নাকি বউয়ের কষ্ট তোমার সহ্য হয়না দেইখা বলতেছ -সোহা

হাহাহা -পিয়াস

দাঁত কেলাস না তো সর -সাগর

ওলে বাবা বাবুটা নাগ করেতে -পিয়ানি

বেশী কিন্তু হচ্ছে -সাগর

হইছে থামো তোমরা মাই ডিয়ার সুইট শালিকা বেস্ট অফ লাক -নিয়ন

হুমম গুড লাক হৃদি -আলো

বলো সবাই থ্রি চিয়ারস ফর হৃদিআপু হিপ হিপ হুররে -আনহা

হিপ হিপ হুররে -সবাই

হৃদপরী সবাধান নিজের ক্ষতি করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দরকার নেই। মনে রেখো তোমার উপর আমার প্রাণটাও ডিপেন্ড করে -হৃদান

হৃদরাজ কিছু হবে না আমার। আসি এখন -হৃদিতা

হৃদিতা চলে গেল খেলার মাঠের দিকে। খেলার মাঠে হিয়া কে দেখে ওরা রীতিমতো শকড।

হৃদু কি এই সিক্রেট টার কথায় বললো -রাইসা

মানে হিয়া খেলবে সেটা হৃদি আগে থেকেই জানতো -আলো

আমাদের তো বললো না -রাহি

আর ফুপি ও তো কিছু বললো না -আনহা

তার মানে এইসব হিয়ার কাজ -পরশ

আমি তো ওকে দেখে নিবো -হৃদান

হৃদান খেলার মাঠের দিকে যাবে তার আগেই নাশিন আটকায়

না ভাইয়া হৃদিরানী যদি আগে থেকেই জানতে পারে হিয়া প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছে তাহলে বুঝতেও পেরেছে যে এসব হিয়ার কাজ। তাই ও যেহেতু কিছু বলে নায় সেহেতু কিছু প্লেন তো আছেই -নাশিন

আমাদের কিছু করা এখন ঠিক হবে না -সোহান

হুমম দেখি কি হয় আগে -রোহানি

আমার মনে হচ্ছে হৃদিতা চাচ্ছে ওকে খেলায় হারিয়ে পরে শাস্তি দিবে -অরনী

হুমম আগে শাস্তি দিলে তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মজায় পাবে না হৃদি -পিয়াস

চলো আলোচনা না করে খেলা দেখি -রিয়া

হুমম হুমম চলো -আধির

খেলা শুর হবে এখন। সব খেলোয়াড় নিজেদের পজিশন নিয়ে দাড়িয়ে আছে। প্রথম বাশিতে সবাই হুশিয়ার হলো। দ্বিতীয় বাশিতে প্রথম স্টেপ নিলো। মাথা ঘুরিয়ে হৃদিতা হিয়াকে অল দা বেস্ট জানালো হিয়া মুখ ভাঙচি দিয়ে সামনের দিকে তাকালো। তৃতীয় বাশিতে সবাই ছুটলো। চারটা রাউন্ড দিতে হবে। হৃদিতা আর হিয়া সমান সমান। হৃদিতা এবার নিজের মতো দৌড়াতে লাগলো। ওর দৌড়ের গতি এতটাই প্রখর যে খুব তাড়াতাড়ি দৌড়াতে পারে। তবুও হিয়ার সাথে একটু খেলতে ইচ্ছে করলো। তাই ও নিজের গতি কমিয়ে দিলো। হিয়া তো মনে করছে হৃদিতা ওর সাথে পারছে তাই ও খুশি মনে দৌড়াতে লাগলো। তা দেখে হৃদিতা বাঁকা হাসি দিলো। খেলার রাউন্ডের চারপাশে মানুষে গিজগিজ করছে। সবাই হৃদিতা হৃদিতা বলে চিল্লাচ্ছে। কিন্তু হৃদিতা গতি কমিয়ে দেওয়ায় হিয়ার কিছু লোক হিয়া হিয়া বলে চিল্লিয়ে উঠলো। দুই রাউন্ড শেষ। হিয়া আর হৃদিতা প্রায় সমান সমান। হৃদিতার খেলার স্টেপ টা কেউ বুঝতে পারছে না কারণ হৃদিতা চাইলেই এখন শেষ রাউন্ড দিয়ে দিতে পারতো কিন্তু এবার বেশ ঝিমিয়ে খেলছে বলে সবাই দিকভ্রান্ত হয়ে চিৎকার বন্ধ করে দিলো। তিন রাউন্ড লাস্টের দিকে হিয়া বেশ হাপিয়ে গেছে। হৃদিতা এইবার দর্শকদের দিকে ঘুরে চিয়ার্স আপ এর মতো হাত উঠিয়ে ইশারা করেই জোরে দৌড় দিলো। একটুপর ই রাউন্ড শেষ সবাই একসাথে হিরিক দিয়ে উঠলো। হিয়া বুঝে উঠতেই পারলো না হৃদিতা কখন চলে গেল। রেগে পায়ের জুতো খুলে মাঠ থেকে বেরিয়ে গেল। হৃদান ওরা দৌড়ে মাঠে চলে গিয়ে হৃদিতাজঢকে শুভেচ্ছা জানালো অতি উল্লাসের সহিত।
এখন সম্মাননার জন্য ডাকা হলো। হৃদিতা স্ট্রেজে গেল। প্রতিবছর ই ওকে কিছু বলতে বলে ও কিছু বলে না কিন্তু আজ মাইক হাতে নিলো।

হিয়া খান প্লিজ কাম। হিয়া খান আর ইউ হেয়ার মি। ইফ ইউ হেয়ার মি প্লিজ কাম দা স্ট্রেজ

হৃদিতা হিয়াকে কেন ডাকছে কেউ বুঝলো না। হিয়া রেগে পাইচারি করছিলো ওর নাম এনাউন্স করতে শুনে এগিয়ে গেল। হিয়াকে আসতে দেখে হৃদিতা শয়তানি বাঁকা হাসি দিয়ে বলতে লাগলো

আমি চাই আমার চ্যাম্পিয়ন কাপটি হিয়া খান ওরফে আমার মেইন বিপক্ষ খেলোয়াড় আমার হাতে তুলে দিক

হৃদিতার কথা শুনে সবাই জোরে জোরে চিল্লিয়ে চিয়ার্স আপ করতে লাগলো আর হৃদান ওরা হেসে দিলো এবার বুঝলো কেন ডাকছে কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা যাকে বলে। হিয়া তো রেগেমেগে আগুন কিছু বলতেও পারছে না সহ্যও করতে পারছে না। তাই অপারগ হয়ে গেল। পুরষ্কার টি তুলে দিলো হৃদিতা কুটিল হেসে কাপটি হাত থেকে প্রায় কেড়ে নেওয়ার মতো ছো মেরে নিয়ে নিলো। হিয়া চোখ রাঙিয়ে চলে যেতে নিবে

মিস হিয়া আমাকে উইশ করবেন না। আপনার থেকে আবাদত একটা উইশ আশা করেছিলাম। এতবড় একটা জয় বলে কথা আর এটা নতুন না প্রত্যেক বছর আমিই চ্যাম্পিয়ন হই

হিয়া সব অপমান হজম করে মুখে কৃত্রিম হাসি দিয়ে এগিয়ে গেল

কনগ্রেজুলেশন মিস হৃদিতা। অনেক অনেক শুভেচ্ছা

বলেই চলে আসলো হৃদিতা তাড়াতাড়ি মাইক হাতে নিলো

পরিশেষে একটা কথায় বলবো পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। তাই বলছি সাবধান। আর হ্যাঁ চ্যাম্পিয়ন অলওয়েস চ্যাম্পিয়ন ই হয়

বলেই স্ট্রেজ থেকে নেমে বাড়ির লোকদের কাছে গেল। অনেকক্ষন ঘুরাঘুরি আনন্দ করে সবাই বাসায় চললো। আজকে সবাই হৃদিতাদের বাসায় থাকবে। কালকে দশটা থেকে বাস্কেটবল খেলা তাই সবাইকে জোর করে নিয়ে এসেছে একসাথেই যাবে এখান থেকে। সন্ধায় রেস্ট নিয়ে হালকা নাস্তা করে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তখনি নাশিন আসলো

হৃদিরানী রাহু রোহা ভাবি সাহি আধি চল -নাশিন

নাশিনের কথা শুনে সবাই ভ্রু কুচকালো হৃদিতারা উঠতে যাবে

কোথায় যাবে ওরা -পরশ

প্রেকটিস করতে -নাশিন

এখন কিসের প্রেকটিস -সোহা

কালকের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে না -নাশিন

নাশিন তুই কি বলছিস তোর মাথা ঠিক আছে -সোহান

কেন -নাশিন

কেন মানে এই রাত করে প্রেকটিস করবে রেস্ট নিবে কখন কালকে অসুবিধা হবে তো খেলতে -হৃদান

আরে ভাইয়া আমি ওদের এমন ভাবে তৈরি করিনি যে একটু প্রেকটিসেই অসুস্থ হয়ে পড়বে -নাশিন

আরে নাশিন তুমি বুঝতে পারছো না আমরা কি বলছি -সাগর

হ্যাঁ আজকে একটা প্রতিযোগিতা হলো এখন আবার প্রেকটিস করলে শরীর চলবে না -পিয়ানি

পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে আর খেলতেই পারবে না -নিয়ন

কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে না। ওরা নিজেদের এমন ভাবে তৈরী করেছে যে ব্যাথা পেলে ঘুরে দাড়াতে পারে একমিনিটেই -রিয়া

তুমি কেমনে জানো ভাবি -অরনি

বারে আমিও ওদের মতো একজন আর আমি জানবো না -রিয়া

আজকে প্রকেটিসের দরকার নেই যাও রেস্ট নাও -হৃদান

গাইস তোরা প্রেকটিস করতে প্রস্তুত তো -নাশিন

একদম চলো -রাহি

হুম আমাদের কিছুই হবে না দিনে এর থেকেও আমরা বেশী পরিশ্রম করে রাতে প্রেকটিস করেছি -আধির

আচ্ছা যাও তাড়াতাড়ি এসো -পরশ

আমরাও যাই না -আনহা

হ্যাঁ হ্যাঁ চলো না যাই -আলো

ঘুরাও হবে খেলাও দেখা হবে ওরাও আনন্দ পেলো -সোহান

আচ্ছা চল আমি হৃদপরীকে এমনিও একা ছাড়তাম না তরাও যেহেতু যেতে চাইছিস চল -হৃদান

সবাই বেরিয়ে পড়বে প্রেকটিস স্পটের দিকে এমন সময় হৃদিতা একটা বায়না ধরলো তা দেখে সব মেয়েই সায় দিলো। ছেলেরা মানতে নারাজ

চলবে……?

(দুই পর্বের পরিবর্তে বড় করে দিলাম)
চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here