তুমি যে আমার পর্ব -৩৬+৩৭

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_36

তূর্য’এর হাসি উজ্জ্বল মুখ দেখে বর্ষা আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। ভয়ে ওর চোখের সামনে সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসে। ওর শরীর সমস্ত শক্তি কমে গেছে। দাঁড়িয়েও থাকতে পারছে না। অতিরিক্ত ভয়ে আবার ও অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়ে। তূর্য তা দেখে ঝড়ের গতিতে বর্ষাকে ধরে সামলে নেয়। তারাতাড়ি বর্ষাকে বিছানার শুইয়ে ওর গালে মৃদু চাপর দিতে দিতে ডাকতে থাকে কিন্তু নো রেসপন্স।
‘ বর্ষা ওপেন ইউর আইস।’
শুধু ডাকাডাকি তে কাজ হচ্ছে না দেখে। বোতল থেকে পানি নিয়ে পানি ছিটা দিয়ে জ্ঞান ফেরাতে হলো। বর্ষা চোখ মেলে ওর মুখের ওপর তূর্য’কে ঝুঁকে থাকতে দেখে আবার মৃদু চিৎকার করে ওঠে। তূর্য দ্রুত বর্ষার মুখের উপর হাত দিয়ে আটকে চিৎকার থামায়।
বর্ষা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে তূর্য এর দিকে। আর মুখ দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু হাতের জন্য পারছে না কথা উম’উম শব্দ করে হচ্ছে। তূর্য বললো,

‘ চিৎকার করলে হাত সরাবো না। আরো চিৎকার করবে?

বর্ষা আচমকা তূর্য এর হাত কামড়ে উঠলো। তূর্য আহ করে হাত সরিয়ে নিলো। হাত ঝাড়ছে তূর্য। বর্ষা তড়িগড়ি করে উঠে বসলো। আর চেঁচিয়ে উঠলো,

‘আপনি আমাকে আবার কিডন্যাপ করেছেন কেন? আজ তো আমার বিয়ে ছিলো। আমি কিডন্যাপ হলাম কি করে? বাপি মাম্মার কাছে থেকে আমাকে কি করে কিডন্যাপ করলেন? আর কেন করলেন? আবার কি উদ্দেশ্যে কিডন্যাপ করেছেন? আগের সব কথা তো আমি শুনেছিলাম। আপনি তাও কেন আবার আমার জীবনে এসেছেন নরক করতে। আমার বিয়ে হয়েছে আমার তো বরের বাড়িতে থাকার কথা…..

‘ আরে বিয়ে হয়েছে আর কতো বার বলবে‌। আমি শুনেছি তো। আর বরের জন্য দেখি পাগল হয়ে গেছো এতো ভালোবাসো বরকে?’ বর্ষাকে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে তূর্য বলে উঠলো।

‘ আমার প্রশ্নের উত্তর দিন। আর আমি আমার হাজবেন্ড কে ভালোবাসতেই পারি তাতে আপনার সমস্যা কোথায়? আর এই রুম এমন বাসর ঘরের মতো সাজানো কেন?’ বলেই বর্ষা তূর্য এর দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।

তূর্য বললো, ‘ কি বললে? তুমি আমাকে ভালোবাসো?’

‘ আপনার মাথা খারাপ নাকি? আমার বাংলা কথা বুঝতে পারছেন না। আমি আপনাকে কখন বললাম ভালো বাসি আমি আমার হাজবেন্ড এর করা বলছি।’

‘ ওই এক‌ই তো হলো।’

‘ মা‌নে এক হলো কি করে? কি সব বলছেন?’

‘ মানে আমি‌ই তো তোমার হাজবেন্ড। তো হাজবেন্ড কে ভালোবাসো মানে আমাকেই তো ভালোবাসা হলো তাই না বর্ষামনি!!

তূর্য এর কথা শুনে বর্ষা থমকে গেলো। কি সব বলছে এই লোক।

‘ আপনি আমার হাজবেন্ড। মিথ্যা বলার জায়গায় পান না তাই না। সত্যি করে বলেন আবার কেন আমাকে কিডন্যাপ করেছেন! আমার বিয়ে দিন কেন বারবার এমন করেন?’

‘ মিথ্যা না বর্ষামনি। তোমাকে কিডন্যাপ করে আনি নি। কবুল বলে বিয়ে করে নিয়ে এসেছি। তোমার বাপি আমার হাতে তোমাকে তুলে দিয়েছে সারা জীবনের জন্য। এখন তোমার বাপির থেকেও তোমার উপর অধিকার আমার বেশি। বিলিভ না হলে তুমি তোমার বাপিকে ফোন করে জানতে পারো। সাথে তোমার মামাও এসেছে। তিনি এখন গেস্ট রুমে বিশ্রাম নিচ্ছে। এখন আর এত কিছু ভেবে অসুস্থ হ‌ইয় না বর্ষা মনি। এখন খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। তোমার শরীর এমনিতেই দুর্বল। দুবার জ্ঞান হারালে অলরেডি।’

উনি আমার হাজবেন্ড মানে কি এসবের? বাপি কি শেষ পর্যন্ত এই লোকটার কাছে ওকে বিয়ে দিলো? না না অসম্ভব! এটা হতেই পারে না। এই জগন্য লোকটার সাথে ওর বিয়ে হতেই পারে না। লোকটাকে সব মিথ্যে বলছে আমার তো পুলিশ অফিসার আদিলের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
কাবিননামায় আমি তার নামে স্পষ্ট দেখেছি।আর এখন তূর্য কিনা বলছে আমার বিয়ে তার সাথে হয়েছে আর বাপি কিনা তার হাতে আমাকে তুলে দিয়েছে। ইম্পসিবল এটা হতেই পারে না।তূর্য এর পক্ষে কিডন্যাপ করা খুব বেশি সমস্যা না। সেই দিন এত এত মানুষের ভীড়ে বিয়ে আসর থেকে উনি আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে ছিল। উনার তো ভয় ঢর কিছুই নাই। আর আজকে এত মানুষ ও ছিলনা আজকে তার পক্ষে কিডন্যাপ করা অসম্ভব নয়। আমাকে এখন মনগড়া কথা বলছে। কিন্তু কেন? আবার কি স্বার্থ আছে তার। আবার কেন আমাকে এই নরকের টেনে আনলো। উনি কি আমাকে এক দন্ড বাঁচতে দেবে না।সব সময় কি উনি আমার পেছনে ছায়া মত পড়ে থাকবে! আমার জীবনটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি শান্ত হবে না!

তূর্য বাথরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে টাউজার আর টি-শার্ট পরে মাথার চুল মুছতে মুছতে রুমে আসে। বর্ষা এখনো চুপচাপ সেভাবেই বসে কি যেন আনমনা ভাবছে আর ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। এই মেয়েটা এত কাঁদতে পারে। ফ্যাচফ্যাচ করে সারাক্ষণ কাঁদবে আর চোখের জল ফেলতে থাকবে। তূর্য তোয়ালে রেখে বর্ষার কাছে এগিয়ে গেলো। তারপর হাত বাড়িয়ে ওর চোখের জল মুছে দিতেই বর্ষা হতচকিয়ে ভাবনা ছেড়ে বেরিয়ে এলো। আর নিজের খুব নিকটে তূর্য কে দেখে ঝামটা মেরে ওর হাত সরিয়ে দূরে সরে বসলো।

‘ডোন্ট টাচ মি! একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। না হলে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।আপনি আবার আমার শরীর ভোগ করার জন্য আমাকে তুলে এনেছেন তাই না। একবার আমার শরীর ভোগ করে আপনার সাধ মেটেনি এখন আবার তুলে এনেছেন। ছিঃ এতো জগন্য কেউ হয় আপনাকে না দেখলে জানতে পারতাম না। আমি আপনার সব চাল বুঝতে পেরেছি।এভাবে মেয়েদের জীবন নষ্ট করে শান্তি পান তাই না। এখন আমি অন্য একজনের স্ত্রী। এখনো আপনি আমাকে ছাড়লেন না। লোকটা সবকিছু জেনেশুনে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে, বিয়ে করেছে। যেই দেখেছেন আমি একটু শান্তির মুখ দেখবে তখনি আবার আমার জীবনটা তছনছ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। আপনি কি আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দেবেন না। আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ না করলে কি আপনার পেটে ভাত হজম হয় না। আমি আপনার কি ক্ষতি করে ছিলাম যার জন্য এমন করছেন সব সময়। আমার বাপির জন্য আমার জীবন একবার নষ্ট করলেন। শুধু আমার জীবন নষ্ট করে ক্ষ্যান্ত হননি আপনি আমাদের বাড়ি গাড়ি সব কেড়ে নিয়ে পথে নামিয়েছেন। তাও চুপ ছিলাম এবার আবার কেন এসব করছেন। আমি এই যন্ত্রণায় না মরা পর্যন্ত কি আপনি আমাকে শান্তি দিবেন না।’

বলতে বলতে ফুঁপিয়ে উঠলো বর্ষা। তূর্য এগিয়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। বর্ষা ছটফট করে তূর্য এর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। বর্ষা হাত দিয়ে তূর্য কে আঘাত করে সরিয়ে দিতে চাইছে ও আরো অনেক কথা বলছে। তূর্য সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করল না। বর্ষাকে এখন শান্ত করতে হবে যেভাবেই হোক। তূর্য নিজের অধর দিয়ে বর্ষার কথা বলা বন্ধ করে দিলো।আর একহাতে বর্ষার হাত শক্ত করে ধরে আছে। বর্ষা শান্ত হতেই তূর্য সরে আসলো।রাগে ঘৃণায় ওর মরে যেতে ইচ্ছে করছে। স্বামী থাকতেও পর পুরুষ আবার ওকে স্পর্শ করল ভাবতে ওর মরে যেতে ইচ্ছে করছে। এই লোকটা এতো খারাপ কেন?

কথা বলছে না বর্ষা কাঁদছে ও না পাথরের মতো বসে আছে তূর্য ওকে জোর করে এক হাতে জরিয়ে ধরে খাইয়ে দিতে লাগলো। বর্ষা চুপচাপ খাবার মুখে নিয়ে বসে আছে। ও অনুভূতি শূন্য হয়ে গেছে। কিছু বলার ভাষা খুজে পাচ্ছে না। এত নিখুত অভিনয়। এদের দ্বারাই সম্ভব। কিভাবে ওর পরিবারটাকে তুর্য হাত করে নিয়েছে। তূর্য বর্ষাকে এই মাত্র বিয়ের প্রমাণ দিয়েছে সাথে ওই যে আদিল তা সব বলেছে। সব শুনে বর্ষা পাথর হয়ে গেছে। আবার ফাঁসিয়ে ওকে এই লোকটা নিজের খাঁচায় বন্দী করলো। আগের বার কিডন্যাপ করে আর এবার বিয়ে করে।কেন করছে লোকটা এমন? কি চায় লোকটা আমার থেকে? কি চায়? কিছু জানে না জানতেও চায় না। ওর শুধু একটা কথাই মাথায় আসছে ও কেন একবার তূর্য এর ছবি দেখলো না বিয়ের আগে। মাম্মা কতো দেখাতে চেয়েছে কিন্তু ও দেখেনি। বিয়ে নিয়ে তেমন ইচ্ছা ছিল না বলে বরের চেহারা দেখার আগ্রহ দেখায়নি। ও ভেবেছিল বাবা মা যার কাছে তুলে দেবে তাকে ওকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করবে। কিন্তু এটা কি হলো এই জঘন্য পাষাণ লোকটাই কিনা আড়াল থেকে ছুরি মেরে সামনে এসে মলম লাগানোর চেষ্টা করেছে। কি নিখুঁত অভিনয় বাবা-মায়ের সঙ্গে। তাদের একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করেছে বাপির কতোটা বিশ্বাসযোগ্য হলে বাপি তার একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেয় এই লোকটার সাথে।
এখন আমি কিভাবে বাবা-মাকে বুঝাবো এই লোকটায় তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু।যার কাছ থেকে রক্ষা করতে চাই , বাঁচাতে চাই আজকে তার কাছে তার মেয়েকে তুলে দিয়েছে। ভাগ্যের কি পরিহাস!!
#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_37

রাতে তূর্য বর্ষা’কে জোর করে‌ খাইয়ে কিসের যেন ওষুধ খাইয়েছিলো তারপর আর কিছু মনে নেই ওর। চোখ মেলে বর্ষা নিজেকে বিছানায় শুয়ে আছে আবিষ্কার করে। রাতের কথা মনে পরতেই ধরফরিয়ে উঠে বসে বর্ষা। সকাল হয়ে গেছে। রুমে আর রাতের মতো ফুল নাই। পরিষ্কার। বিছানায় ও একাই শুয়ে আছে। গায়ে কালের শাড়ি‌ই। গহনা কিছু নাই ড্রেসিং টেবিলের সামনে সব। রুমে একটা আলমারি সোফা ও ড্রেসিং টেবিল আর খাট। রুমটা অনেক বড় ট্রি টেবিলের উপর তূর্য এর একটা ছবি এ ছাড়া দেয়ালে প্রেন্ডিং ফটো ছাড়া আর কোন ছবি নাই তূর্য এর । একটা ঘড়ি আছে যাতে দেখলাম দশটা বাজে এটা কি তূর্য এর সেই আগের বাসা যেখানে আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়েছিলো। ভাবতেই বর্ষার বুক কেঁপে উঠলো। বিছানা থেকে নেমে গেলো বর্ষা বারান্দায় গিয়ে দেখবে এটা সেই ভূতুড়ে বাড়ি নাকি। বিছানা থেকে দেখতে পেলো ওর শাড়ি একদিন ঠিক আছে। শুধু কাঁচকে আছে। বর্ষা বারান্দায় গিয়ে চারপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো এটা অন্য বাসা। বাগানে ফুলের সমাহার। আর একজন মালি ফুল গাছে পানি দিচ্ছে। আগের বাসায় কালো মুখোশধারী গার্ড ছিলো এটায় তা নাই। গার্ড আছে কিন্তু কম। বাসা ও অজৈব কাছাকাছি আরো‌ আমি ভয় থেকে যেন স্বস্তি পেলাম। ওই ভাবেই বারান্দায় থেকে বেরিয়ে এলাম।
ফ্রেশ টেশ কিছু হলাম না আমি রুমের বাইরে এসে মামার দেখা পেলাম। তিনি খাবার খাচ্ছেন ড্রাইনিং টেবিলে বসে আর তাকে একজন মাঝবয়সী মহিলা খাবার খাওয়াচ্ছে বেড়ে। আমি তাকিয়ে আছি মহিলা টির দিকে এটা আবার কে? তূর্য এর মা? বাড়িতে আমি তূর্য কে খুঁজছি। লোকটা নাই আশেপাশে এখন আমাকে মামার কাছে গিয়ে সব বলতে হবে।
আমাকে বিশ্বাস করবে তো? করবে করবে না কেন। বর্ষা তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি দিকে এগিয়ে গেলো
মামার খাওয়া শেষের দিকে। উঠবে এখন। বর্ষা দুই সিঁড়ি নামতেই হেঁচকা টান পরলে হাতে। তাকিয়ে দেখে তূর্য। বর্ষা কিছু বলতে যাব তূর্য ওর মুখ চেপে ধরে টেনে রুমে এনে দরজা আটকে দিলো।

বর্ষা ছুটাছুটি করে নিজের থেকে তূর্য কে সরাতে চেষ্টা করছে পারছে না।এবার তূর্য নিজেই ওকে ছেড়ে দিলো। আর ক্রোধান্বিত গলায় বলল,

‘ওমন হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যাচ্ছিলে?’

বর্ষা উত্তর না দিয়ে দরজা খুলতে গেলো তা দেখে তূর্য রাগে ফেটে পরলো যেন। ও রেগে বর্ষার হাত শক্ত করে ধরে সামনে এনে বললো,

‘অ্যানসার মি!’

‘ ছাড়ুন আমার হাত। আমি বাইরে যাব আর মামাকে সব বলে দেবো। তারপর বাপি- মাম্মা সবাইকে আপনারা আসল রুপ দেখাবো। সবাই কে মিথ্যা বলে ভালো সাজার নাটক করা ফাঁস করে দেবো।’
হাত ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে বর্ষা।

তূর্য এসব শুনে হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। বর্ষা তীব্র ব্যাথায় আহ করে উঠলো। চোখে জল চলে এসেছে। তূর্য এর সেদিকে খেয়াল নেই ও রক্ত চক্ষু করে তাকিয়ে হুট করেই হো হো করে হেসে উঠলো। বর্ষা ব্যাথার মধ্যে ও বিষ্মিত হলো। অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে তূর্য এর দিকে কি সুন্দর হাসি? কিন্তু গললো না ও ভাবছে এই লোক হাসছে কেন?আমি হাসির কি বললাম?
তূর্য বর্ষার চোখে পানি দেখে আচমকা হাত ছেড়ে দিলো আর বললো,

‘ কি বললে? সব বলে দিবে ওকে বলে দাও কিন্তু তোমার কাছে কি প্রমাণ আছে? আমি তোমাকে কিডন্যাপ করে ছিলাম? তুমি বললে সবাই কেন বিশ্বাস করবে তোমার কথা! আমি একজন পুলিশ অফিসার হয়ে তোমাকে কেন কিডন্যাপ করতে যাব? আর কিডন্যাপ তো দূরের কথা আমার উপরেই তোমাকে খোঁজার দায়িত্ব এসে পড়েছিল! তুমি নিখোঁজ হওয়ার একমাস তো আমি হন্য হয়ে পাগলের মত ছোটাছুটি করেছি তোমাকে খুঁজতে! বিশ্বাস না হলে থানায় গিয়ে আর তোমার বাবা-মার কাছে থেকে শুনে নিও তারা এটা খুব ভাল করেই জানে।’

‘আমি জানি বাপি আমাকে বিশ্বাস করবেই।’

‘ ওকে আজ বৌ ভাতের অনুষ্ঠানে তোমার বাপি আসলে সব বলে দিও। যদি বিশ্বাস করেন তাও আমার কিছুই করতে পারবে না। উল্টা আমি তাকে থানায় নিয়ে যাব গুরুত্বপূর্ণ ফাইলটা হারিয়ে ফেলার জন্য। যেটার জন্য ওনি চাকরি থেকে অবসর আছেন।’

‘ওই ফাইল আপনার কাছে। আমি আপনাকে দিয়েছি তার দায় আমার বাপির দোষ নাই।’

‘ সেটা তুমি আমি জানি বাকিরা তো জানে না বর্ষা মনি।’ বলতে বলতে তূর্য বর্ষার কাছে এসে ওর এলোমেলো হয়ে কপালে পড়ে থাকা চুল ফু দিয়ে সরিয়ে দিলো। বর্ষা চোখ বন্ধ করে কেঁপে উঠলো।

দুইটা পিছিয়ে বর্ষা বললো, ‘একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না।’

‘ আমি তো তোমার কাছেই আছি আর চেষ্টা কি করবো?’

‘ ফালতু! আপনি আমার সাথে জোর করে কিছু করতে আসলে আমি হয় আপনাকে খুন করবো না হলে নিজেই মরে যাব।’

‘ জোর করে করবো কিনা এখনো জানি না‌ বর্ষা মনি। কিন্তু শুনো আমি ভালো স্বামী হয়ে এই কথা বলতে পারবো না। তুমি না চাওয়া পর্যন্ত আমি তোমাকে স্পর্শ করবো না। টাচ তো আমার যখন সেভাবে মন চাইবে সেভাবেই করবোই। আর নিজেকে খুন তুমি করতেই পারবে না তাহলে আমি তোমার বাবা মাকে নরক যন্ত্রণা দেবো। মাইন্ড ইট।’

বর্ষা ঘৃণার চোখে তাকিয়ে আছে। তূর্য আবার বললো,

‘ যাও কুইক ফ্রেশ হয়ে আসো। ব্রেকফাস্ট করবো। আম্মু ওয়েট করছে!’

‘ নিচের ওইটা আপনার আম্মু?’

‘ ইয়েস আম্মুর সাথে একদম তেরিংমেরিং করবে না। না হলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।’

বর্ষা রাগে গজগজ করতে করতে ফ্রেশ হয়ে এলো বর্ষা। থ্রী পিস পরে এসেছে। তূর্য বর্ষার হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে নামলো।সোফায় মামা বসে আছে। ওদের দেখে গুড মর্নিং বললো। নিচের মহিলা যাকে তূর্য মা বলে সম্বোধন করলো তিনি বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে আদর করলো। তারপর খেতে দিলো। বর্ষা দাঁত চেপে সহ্য করছে। এই মহিলাকে ওর একটুও সহ্য হচ্ছে না। তূর্য এর মাকে ও সহ্য কি করে করবে! যার জন্য ওর জীবন টা ধ্বংস হয়ে গেছে। দাঁত কিড়মিড় করতে বর্ষা। কোথা থেকে ছুটে এসে শাওন বসলো আর ওই মহিলার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ মা খেতে দাও তারাতাড়ি।’

তারপর বর্ষার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, ‘ গুড মর্নিং ভাবি। শশুরবাড়ির সকাল কেমন কাটছে?’

বর্ষা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো শাওন এর দিকে। যেন চোখ দিয়ে আগুনের কুন্ডলি নিক্ষেপ করে ভষ্স করে দিবে। তা দেখে শাওন আর কিছু বলার সাহস করলো না। চুপ করে খেতে লাগলো।
বর্ষা খাবার শেষ করে গটগট করে রুমে চলে এলো।

এগারোটার দিকে পার্লার থেকে লোক এসে সাজিয়ে দিয়ে গেলো বর্ষাকে। আজকে লেহেঙ্গা পরেছে বর্ষা। গোলাপী রঙের। আর গর্জিয়াস সাজ। খুব সুন্দর লাগছে ওকে কিন্তু ওর মনটা খারাপ প্রচন্ড খারাপ। হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছে না।
রাজকীয় ভাবে ওকে স্টেজে নেওয়া হলো লাইটিং ফুল দিয়ে রাস্তা কথা আবার বৃষ্টির মতো ফুলের পাপড়ি গায়ে পড়া। বর্ষা অন্য সময় হলে খুশিতে লাফালাফি করতো আজ করছে না। অনেক আত্নীয় স্বজন এসেছে বাসা ভর্তি।‌ বর্ষা চুপ করে স্টেজের সোফায় বসে আছে। তূর্য নিচে দাঁড়িয়ে কাদের সাথে জানি কথা বলছে। একটু পর এসে আমাকে নিয়ে জোর করে নানান স্টাইল এ পিক তুলতে লাগলো। রাগে বর্ষার গা জ্বলে যাচ্ছে। তূর্য ওকো তোয়াক্কা করছে না।
বাপি মাম্মা আসতেই বর্ষা বাপি কে জরিয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।

#চলবে……
#চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here