তুমি যে আমার পর্ব -৩৪+৩৫

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_34

বর্ষা নিরব হয়ে সব শুনলো। কোন কথা বললো না। বাপি মাম্মা অনেক কথা বলে চলে গেলো। বর্ষা চুপচাপ বসে র‌ইলো কিছু সময়। বিছানায় থেকে নেমে বর্ষা বেলকনিতে এসে বসে র‌ইলো। বিয়ে করার একটু ইচ্ছে নাই ওর কিন্তু বাপির কথার উপর কথাও বলতে পারবে না। আর বলতেও চাইনা। তাদের কথা না শুনে তাদের আমি কষ্ট দিতে চাইনা এমনিতেই তারা আমার জন্য অনেক কিছু সাফার করতেছে।তাদের কথার বিরুদ্ধে গিয়ে আর কষ্ট দিতে চাইনা। তারা আমার জন্য যে সিদ্ধান্ত নিবে আমি মাথা পেতে নেবো। তারা আমার ভালোর জন্য করবে যা করার।
আকাশের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো ভাবছে বর্ষা। শত তারা মেলা আকাশ জুড়ে। চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে চারপাশ। ছলছল চোখে বর্ষা চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে বর্ষা। হঠাৎ তূর্য ওর মুখটা ভেসে উঠলো চোখের সামনে।‌ আতকে উঠলো বর্ষা। আকাশে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো নিচের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো। যেন তূর্য কে দেখলো আবসা অন্ধকার এ। চট করে উঠে দাঁড়ালো। আর রাস্তার দিকে উঁকি ঝুঁকি দিতে লাগলো না কেউ নাই। সব আমার মনের ভুল। এসব কেন হচ্ছে। ও নিষ্ঠুর লোকটাকে কেন আমার মনে পরে। কেন আমার মনে হয় লোকটা আমার আশেপাশে আছে ছায়ার মতো। সব সময় আমাকে ফলো করে। বর্ষা আর দাঁড়ালো না অসহ্য লাগছে ওর। কোথাও গিয়ে দাঁড়াতে পারে না মনে হয় কেউ তীক্ষ্ণ নজরে চেয়ে আছে ওর দিকে।

রুমে এসে শুয়ে পরলো বর্ষা। চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ঘুম আসছে না। কার সাথে আমার বিয়ে হবে ? সে কি জানে আমার সাথে কি ঘটেছিলো? সব কিছু জেনে আমাকে মানতে পারবে তো? চোঁখের কোনা দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে বর্ষা।

বর্ষা ঘুমের মধ্যে শরীরে সুরসুরি পেয়ে ধরফরিয়ে উঠে বসলো। সকাল হয়ে গেছে কখন আর ওর সামনে পরীর বসে খিলখিলিয়ে হাসছে ওর অবস্থা দেখে।

‘ আপু তুমি ভয় পেয়েছো?’

পরীকে দেখে বর্ষা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। ও ভয় পেয়ে গেছিলো। এই দুষ্টু সাতসকালে চলে এসেছে জ্বালাতে।
কপাট রাগ দেখিয়ে বললো,

‘ এসব কি করছিলে তুমি পরী খালি দুষ্টুমি!’

‘ তুমি এতো বেলা অবধি ঘুমাচ্ছিলে কেন? আমি সেই কখন আসছি। তোমাকে ডাকছি কিন্তু তুমি উঠো নাই‌। তাই তো এভাবে উঠালাম।

‘ আর এমন করবা না।’

‘ আচ্ছা চলো তারাতাড়ি!’

‘ কোথায় যাবো?’

‘ ছাদে চলো একটা জিনিস দেখাবো তোমাকে?

‘ এখন আমি কোথাও যাব না পরী। তুমি একাই যাও।’

‘ আমি তো গেছিলাম। এখন তোমাকে নিয়ে যাব’

‘ আমি যাব না এখন।’

‘ না না তুমি যাবে। চলো না আপু। ‘

‘ জেদ করো না পরী। তুমি একা যাও আমি….

‘ আমি একা গেছিলাম। তোমাকে একটা জিনিস দেখাতেই তো ডাকতে এলাম। চলো না আপু।’

বর্ষার হাত ধরে টানতে লাগলো পরী। এই মেয়ে একবার যেহেতু বলেছে না রাজি হ‌ওয়া পর্যন্ত ছারবে না।

‘ আচ্ছা যাবো। তুমি হাত ছারো আমার আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’

‘ ওকে আপু।’

পরীর হাত ছাড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো বর্ষা
। প্লাজো আর টপস পরা ছিলো বর্ষা। আলমারি খুলে ওরনা খুঁজে গলায় পেঁচিয়ে বেরিয়ে এলো। এলোমেলো চুল হাত দিয়ে পেঁচিয়ে ঝুটি করে। ছাদে ওরা দুজন ছাড়া আর কেউ নাই। পরীর ছাদে এসেই বর্ষাকে আকাশের দিকে তাকাতে বললো। বর্ষা উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলো ঘুড়ি।

‘ ওই দেখো কি ওটা আকাশে উড়ছে!!

বর্ষা লাল ঘুড়িটাকে দেখেই ওর ঠোঁট হাসি চলে এলো। ঘুড়ি ওর ও ছিলো মাঝে মাঝে বাপিকে নিয়ে উড়াতো। অনেকদিন পর দেখছে। পরীর এটা দেখাতে এনেছে।
পরীর ঘুড়ি চিনে না বোধহয় বর্ষা নাম বলে দিলো। শুনেই কিনার জন্য লাফিয়ে নিচে চলে গেলো। এখনি নাকি তার আম্মুকে বলবে। বর্ষা একাই ছাদে দাঁড়িয়ে র‌ইলো।
পরীর কান্না কাটিতে বিকেলেই কিনে আনতে হলো। ওর ঘুড়িটা হলুদ রঙের। এনেই আমাকে নিয়ে এলো ছাদে উড়ানোর জন্য। বিকেলে ছাদে এসে আরো মুখ দেখলাম সেখানে। সবার থেকে দূরে গিয়ে ঘুড়ি উড়ানোর কাজ করছি। আগের আমি হলে এখন এই সবার সাথে গল্প আড্ডা জুড়ে দিতাম। কিন্তু এখন আমার কারো সাথেই কথা বলতে মন চায় না।
পরীর হাতে ঘুড়ি দিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়াতে বললাম।আর আমি সুতো ধরে দাঁড়িয়ে আছি।ও ছেড়ে দিতেই বাতাসে ঘুড়িটা আকাশে উড়ে গেলো। এখন ভেসে বেড়াচ্ছে। পরীর খুশি দেখে কে চেঁচিয়ে যাচ্ছে, লাফালাফি করছে খুশিতে। হাত তালি দিচ্ছে। ফুরফুরে মেজাজে বাসায় এসে সোফায় বসে পরলাম। আমার মনটা আজ ও ভালো। মাম্মা এসে আমার পাশে বসলো। আর আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।

‘ মাম্মা কিছু বলবে?’

‘ হুম। তোকে একটা কথা বলার ছিলো!’

‘ কি বলো?’

‘ ছেলের সাথে দেখা করবি না। কার সাথে তোর বিয়ের ঠিক করলাম দেখবি না?’

‘ না মাম্মা। আমি কারো সাথে দেখা করতে চাই না।’

‘ তুই কি বিয়েতে খুশি না? মন থেকে বল মা। তোর উপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। তোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে চাই না। ‘

‘ এমন কিছু না। আমি তোমাদের খুব ভালোবাসি, ও বিশ্বাস করি মাম্মা।আমি জানি আমার জন্য যা ভালো সেই সিদ্ধান্ত‌ই তোমরা নিবে। কিন্তু আমি দেখা করতে চাই না।’

‘ কেন ছেলেকে তোর পছন্দ হয় নাকি দেখবি না।’

‘ তোমাদের উপর সেটুকু ভরসা আছে। আমার জন্য বেস্ট টাই চয়েজ করবে।’

‘ তাই বলে একবার দেখবি না।’

‘ নাহ। আচ্ছা মাম্মা এসময় এসব না করলে চলতো না। আমাদের অবস্থা‌ তো এমনিতেই ভালো না। এখন এসব করা কি খুব দরকার ছিলো।’

‘ হ্যা ছিলো। আমাদের কিছু হয়ে গেলে তোর আর কেউ থাকবে না এই পৃথিবীতে। তখন তোর কি হবে। এতৈ কিছু যাচ্ছে এসবে তোর ও কম ক্ষতি হয় নি। এখন তোকে একজন ভালো মানুষের হাতে তুলে দিতে পারলে আমি আর তোর বাবা স্বস্তি পাবো। নিশ্চিত হতে পারবো। যে আমাদের একমাত্র সন্তান কে দেখে আগলে রাখার মতো কেউ আছে।’

বর্ষা চুপচাপ শুনলো। তারপর উঠে রুমে চলে এলো।

.
‘ব্রো কি বলছিস এসব? এটাও সম্ভব? তোকে তারা একজন ভালো ছেলে খুঁজে দিতে বললো আর তুই নিজেকেই দাড় করিয়ে দিলি!!’

বিষ্ময় এর চরম সীমায় পৌঁছে গেছে শাওন।

‘ হুম’

‘ আর তারা রাজি হয়ে গেলো?’

‘ ইয়েস আমি কি পাত্র হিসেবে খারাপ নাকি যে রাজি হবে না।

‘ তা না পরিবার সম্পর্কে কিছু বলে নি!

‘ বলেছে আমি বলেছে কেউ নেই আমার।’

‘ বিশ্বাস করলো?’

‘ বিশ্বাস করতে না পারলে তিন দিন পর আমার বিয়ে থাকতো না নিশ্চয়ই।’

‘ ব্রো আমার মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। তুমি কেন ওই বর্ষাকে বিয়ে করছো? আবার কি মতলব আকছো বলো প্লি…

আর টুকু বলতে পারলো না শাওন তূর্য এর চাহনী দেখে।

‘ কি হয়েছে আবার এমন করে তাকাচ্ছো কেন?,’

‘ কি বললি তুই?

‘ আমি আবার কি বললাম?’

‘ বর্ষাকে কি বললি?’

‘ কি আবার বলবো বর্ষা বলেছি কেন?’

‘ একটা ঘুসি মেরে তোর নাক ফাটাবো আমি। আর একবার বর্ষা বললে!’

‘ তাহলে কি বলবো? আর বর্ষা বললে সমস্যা কোথায়?’ ভীতু মুখ করে বললো শাওন।

‘ ভাবি বলবি আর কখনো ওকে নাম ধরে ডাকবি না। ‘

‘ ব্রো তুমি ওই বর্ষার….

‘ আবার এবার কিন্তু সত্যি.

‘ আচ্ছা সরি। ব্রো তুমি ভাবির প্রেমে পরেছো সাথে ভালো ও বেসে ফেলেছো তাই না। কিন্তু আমার কাছে স্বীকার কেন করছো না বলতো।

‘ তুই কোন দেশের প্রেসিডেন্ট রে আমার তোর কাছ এ স্বীকার করতে হবে।’

‘তার মানে ইউ লাভ বর্ষা সরি সরি ভাবি?’

তূর্য কিছু বললো না। ঠোট বাঁকিয়ে হাসলো।

.
বিয়েতে আয়োজন বলতে কিছুই হবে না। বর আসবে কবুল বলা হবে শেষ। বাপি এমনটা কখনো চায়নি। কিন্তু তার এখন শত্রুর অভাব নাই তাই তিনি এভাবে লুকিয়ে বিয়ে দিতে রাজি হয়েছে। বর্ষার কাছে এসে বাপি আক্ষেপ করেছে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে ধুমধামে দিতে পারলো না। বর্ষা কতো স্বপ্ন ছিলো বিয়ে নিয়ে কতো ভাবে সাজবে, কোন পার্লারে সাজবে, ছবি তুলবে, পোশাক সব কিছুতেই কতো পাগলামো করেছিলো আগের বার কিন্তু এবার তেমন কিছুই করছে না।বর্ষা মামা ফুপিরা এসেছে বিয়েতে। এদের বিপদে পাওয়া না গেলেও এখন পাওয়া যাবে। ঘনিষ্ঠ না হলে এদের বাপি ডাকতো না। ফুপি আর তার মেয়ে এসেছে।আর এদিকে মামা মামা এসেছে।
বর্ষার কথা বাবা-মা রেখেছে। জোর করে দেখা করায় নি। মেয়ে রাজি হয়েছে এতেই খুশির সীমা নাই। মেয়ের একটা গতি হলে তারা চিন্তা মুক্ত হতে পারবে।
বর্ষার ফুফাতো বোন লোপা বিছানায় বসে আছে। ওর সামনে বিয়ের পোশাক, গহনা দিয়ে ভরপুর। এসব কিছু ছেলে পক্ষ থেকে এসেছে। পরীর আমাকে টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে লাল টকটকে ওরনা আমার মাথা দিয়ে বললো,

‘ লাল পরী লাগছে তোমাকে আপু।’

‘ তাই নাকি পরী। কিন্তু আমি তো পরী না পরী তো তুমি।’

‘ হুম আমি তো ছোট পরী। আর তুমি বড় মিষ্টি পরী। আজ তোমার বিয়ে।’

বলেই লাফালাফি করতে লাগলো।
#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_35

‘কবুল’ বলতেই চারপাশ থেকে হ‌ইহল্লা দেখা গেলো। বর্ষা মায়ের বুকে মাথা রেখে কাঁদছে। পরী ওর পাশেই বসে ছিলো। বাচ্চা মেয়েটাও বর্ষার কান্না দেখে কাঁদছে। বর্ষার রুমেই বর্ষা বসে ছিলো।বাইরে বর। রুমে মানুষ গিজগিজ করছে। রেজিস্ট্রি পেপার এ সাইন করার সময় ও খুব কেঁদেছে বর্ষা ওর মাথা ঘুরছে এখন কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেছে‌।‌ যেটুকু সেজেছিল সব নষ্ট হয়ে গেছে কান্নার ফলে।কাজল লেপ্টে চোখ কালো হয়ে গেছে।ওকে কেউ থামাতে পারছে না।বাবা মাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে ভাবতেই ও চিৎকার করে উঠে।
বর্ষার বাবা মা ও কাঁদছে খুব। একমাত্র মেয়েকে এইভাবে পর করতে চায়নি। কিন্তু মেয়েকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কিছু করার ছিলো না।বর্ষার বাবা নিরবে চোখের জল ফেলছে। মেয়ের কাছে যেতে পারছে না।মেয়ের কান্না তার বুকে তীরের মতো বিঁধছে। তবুও ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো।
বর্ষা মায়ের বুকে থেকে বাবাকে দেখে জাপ্টে ধরলো নিজের বাপিকে। আর কাঁদতে লাগলো। এখন বিদায় হবে কিন্তু বর্ষা কিছুতেই যাবে না বলে মনে স্থির করেছে।‌ও কিছুতেই বাপি মাম্মা কে ছাড়া থাকতে পারবে না।বর্ষা কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেলো বাবার বুকেই। নিবিড় চৌধুরী মেয়েকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চোখের জল ফেলতে লাগলো।
রুমে মানুষ গিজগিজ করছে ফ্যানের বাতাসে কিছু হচ্ছে না যেন। একেতে গরম তার উপর ভাড়ি সাজ গোজ আবার কান্না এজন্য বর্ষা জ্ঞান হারিয়েছে। ডাকা ডাকি করেও বর্ষার জ্ঞান ফেরাতে পারছে না। চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়েছে কাজ হচ্ছে না।

তূর্য সোফায় বসে আছে তার একপাশে বসা মামা শ্বশুর আরেক পাশে বসা ফুফা শশুর। তূর্য কে ভদ্র হয়ে চুপচাপ বসে থাকতে হচ্ছে এদিকে ফোনটা ভেজেই যাচ্ছে। শাওন আজ এতো কল করে ডিস্টার্ব। ফোন রিসিভ করে ধমক ও দিতে পারছে না কারণ শশুর বাড়ির লোকের সামনে এসব করে মান সম্মান খুয়াতে চায় না তূর্য। বিয়ে হয়েছে আধা ঘন্টা হয়ে গেছে। রুমে ভেতরে থেকে বর্ষার চিৎকার ভেসে এসেছে এখন আর আসছে না। কান্না কাটি শেষ হলো নাকি। আর কতো ক্ষণ বসে থাকতে হবে কে জানে বিরক্তিকর। তখন লোপা দৌড়ে তূর্য দের সামনে এসে বললো,

‘ বর্ষা কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেছে।সবাই ডাকছে কিন্তু উঠছে না। ডাক্তার ডাকতে হবে বোধহয়।’

তূর্য কথাটা শুনে বিরক্তে কপাল কুঁচকে ফেললো। ডিসগাস্টিং!! বরের বাসায় যাবে তাতে এতো কান্নাকাটির কি আছে? এমন কান্নাকাটি করল যে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম! এই মেয়েটা যে এত কাঁদতে পারে! এখন অজ্ঞান বউ নিয়ে বাসায় ফিরবো নাকি হাসপাতালে নিয়ে জ্ঞান ফেরাবো। তূর্য কোন দিকে তোয়াক্কা না করে বর্ষার রুমে গিয়ে উপস্থিত হলো। বিছানায় বর্ষা চোখ বন্ধ করে পরে আছে।আর নিবিড় চৌধুরী মেয়ের হাত ধরে ডাকছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।তূর্য কে দেখে সবাই সাইট করে দিলো ভেতরে ঢুকার জন্য।
বর্ষার বাবা তূর্য কে দেখে বললো,

‘ দেখো বাবা কি হয়েছে! বর্ষা অজ্ঞান হয়ে গেছে এখন কি করবো? জ্ঞান ও আসছে না।’

‘ ডোন্ট ওয়ারি আঙ্কেল। ওর কিছু হবে না।ও কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে অজ্ঞান হয়েছে মনে হয়।আমার মনে হয় ও এখন এইভাবেই থাক ওর জ্ঞান খুব দ্রুতই ফিরে আসবে। এদিকে রাত অনেক হয়ে গেছে আমার মনে হয় এখন আমাদের র‌ওনা হ‌ওয়া দরকার।’

‘ এই অবস্থায় মেয়েকে নিয়ে যাবে? এটা কি করে হয়।’

‘ আঙ্কেল আমাকে ভরসা করেন তো?’

‘ এসব কি কথা তোমাকে ভরসা না করলে আমার কলিজা টুকরো কে তোমার হাতে তুলে দিতাম?’

‘ যদি আমাকে বিশ্বাস করেন তাহলে বর্ষাকে এভাবে আমার সাথে নিয়ে যেতে দিন আঙ্কেল। আমি ওর কোন ক্ষতি হতে দিব না বিশ্বাস রাখুন আমার উপর।’

বাবার মন কি এতো সহজেই মানে? তিনি তবুও রাজি হচ্ছিলেন না। তাই ডাক্তার ডাকা হলো।ডাক্তার বর্ষাকে দেখে বলল বর্ষা এখন ঘুমিয়ে আছে ওর শরীরটা দুর্বল। খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করে না। এজন্য এই অবস্থা।ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করা দরকার। এই অবস্থায় নিয়ে যেতে পারবে।বর্ষা ঠিক আছে শুনে বাবা মা দুজনেই বর্ষাকে নিয়ে যাওয়ায় মত দিলো। তূর্য ঝড়ের বেগে বর্ষাকে পাঁজকোলে তুলে নিলো। তারপর বেরিয়ে এলো বাসা থেকে।বর্ষার মা আঁচলে মুখ গুজে কাঁদছে। বর্ষার মামাকে পাঠানো হলো সাথে।
তূর্য বর্ষাকে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও ওর পাশে বসে পরলো।সবার থেকে বিদায় নিয়ে নিলো। বর্ষার মামাকে অন্য গাড়িতে পাঠানো হয়েছে। তূর্য’দের গাড়ি চলতে লাগলো। সাথে আরো তিনটা গাড়ি গেলো। তূর্য বর্ষার মাথাটা বুকের মধ্যে নিয়ে একহাত পেঁচিয়ে জরিয়ে নিলো। তারপর ফোন করলো শাওন কে।

‘ব্রো তুমি ফোন রিসিভ করছিলে না কেন? জানো আমি কতো কষ্ট করতেছি তোমাদের জন্য।’

‘ আমি একবার আসি। তারপর যদি তোর মাথা যদি না ফাটিয়েছি তো…

‘ তুমি আজ কিছু করতে পারবে না। রুমে ঢুকে উল্টা আমাকে জড়িয়ে চুমু খাবে?’

‘ হোয়াট কি করেছিস তুই?

‘সারপ্রাইজ।’

‘ কোন আকাম করলে কিন্তু আজকে তোকে….

‘আমি কিছু করলেই কেন তোমার মনে হয় আকাম করেছি।আমি কি ভালো কিছু করতে পারি না।

‘ চুপ এবার ফোন রাখ। আর একবার কল করলে মুন্ডু কাটবো এসে।

বলেই ফোন কেটে দিলো।

বর্ষা তূর্য কে নিয়ে একটা বাজে স্বপ্ন দেখে ধরফরিয়ে উঠে বসে। চোখ মেলে একটা নীল ড্রিম লাইটের ফুল দিয়ে সাজানো রুমে নিজেকে আবিষ্কার করে। বসে সারা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। ও প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে।
বর্ষা স্বপ্নে দেখেছে ওর বিয়ে তূর্য এর সাথে হয়েছে।এটা দেখে ওর হাত-পা থরথর করে কাঁপতে থাকে। এটা কিভাবে সম্ভব? আব্বু আম্মুর আমাকে বিয়ে কেন দেবে ওই রাক্ষস টার কাছে! অসম্ভব এটা! আমার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে কি সব দেখেছি স্বপ্নে!
চোখ মেলে বুঝার চেষ্টা করেছে ও কোথায় আছে। গায়ে লাল বেনারসি। আস্তে আস্তে ওর বিয়ে,কান্না সব মনে পরে যায়। আমি তো বাপিকে ধরে কান্না করছিলাম এটা কোথায় চলে এলাম। বাসর ঘর সাজানো বিছানা থেকে নেমে দাড়ায় বর্ষা। ড্রিম লাইটের আলোতে রুম স্ক্যান করে। এটা কি তাহলে আমার শ্বশুরবাড়ি আমি শ্বশুর বাড়ি চলে এসেছি কখন এলাম? তার মানে বাবা-মাকে ছেড়ে আমি চলে এসেছি? এটা ভাবতেই বর্ষার কান্না দলা পাকিয়ে আসতে চায়! তখন দরজা খট করে শব্দ করে খুলে কেউ ভেতরে আসে। লোকটার পেছনের দিকে বর্ষা তাকিয়ে আছে। এটাই কি তাহলে আমার স্বামী? এই লোকটাই কি সবকিছু জেনে আমাকে বিয়ে করেছে? এতই মহান তিনি নাকি এর পেছনে তার কোন উদ্দেশ্যে আছে।

বর্ষা চুপচাপ মাথা নিচু করে অনেক কথা ভাবছে। আবছা অন্ধকারে নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে বর্ষা বলে উঠলো, ‘আপনি একটা ধর্ষিতা মেয়েকে বিয়ে কেন করলেন?আপনার এতে স্বার্থ কি? সত্যি করে বলুন!’

তূর্য বর্ষার একদম কাছে এসে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে। বর্ষা খুব পরিচিত একটা পারফিউমের গন্ধ শুঁকে থমকে যায়। পরিচিত স্পর্শ নিজের কোমরে পেয়ে ওর সারা শরীর কেঁপে ওঠে মুহূর্তে। ও মাথা উঁচু করে মানুষটার মুখ দেখবে কিন্তু তা দেখা হয়না কারন তূর্য ওর মুখটা বর্ষার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলছে,

‘ বর্ষা মনি’

লোকটার গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পরছে বর্ষার কাঁধে। ও চোখ খিচে বন্ধ করে ছিলো ‘বর্ষা মনি’ কথাটা শুনেই ওর হার্টবিট বেড়ে গেলো। অজানা ভয়ে ওর হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠলো। এটা তো তূর্য ওর কন্ঠ। আর এই পারফিউমের গন্ধ টা ও তো তূর্যের। বর্ষা মুহূর্তের মাঝে ভেবে ফেললো তাহলে কি স্বপ্নটা সত্যি হয়ে গেল। ও নিজের শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে তূর্য এর বুকের ধাক্কা মেরে নিজে থেকে সরিয়ে দিলো।
আর কাঁপা গলায় বলল, ‘ ক ক কে আ আপ নি?

#চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here