#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২৩
#Jhorna_Islam
দায়ানের বুকে মাথা রেখে চুপচাপ বসে আছে সোহা।এখনো শ্বাস স্বাভাবিক হয় নি ভালো করে।
প্রায় আধা ঘণ্টা যাবত একই ভাবে বসে আছে। সোহা দায়ানের বুকে চুপটি করে। দায়ান ও কিছু ব’লে নি।নিজের সাথে সোহাকে সে ও আঁকড়ে ধরে আছে।
সোহার বুক ব্যাথা হালকা একটু কমেছে এখন।নিজের ভালোবাসার মানুষটার বুকে মাথা রাখার সৌভাগ্য বোধয় সবার হয় না। কি যে শান্তি লাগছে।সোহার ইচ্ছে করছে সারাজীবন দায়ানের বুকে মাথা রেখেই কাটিয়ে দিতে।
সোহার দায়ানের কিছু সময় আগে করা কাজটা মাথায় আসতেই এক রাশ লজ্জা এসে হানা দেয়। লজ্জায় আরো কোকড়ে যায় মেয়েটা।দায়ানের বুকে আরো ঢুকে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালায়।
দায়ান সোহার মাথাটা ধরে নিজের বুকের থেকে উঠায়।সোহা চোখ বন্ধ করে রাখে।লোকটার মুখের দিকে কিছুতেই তাকানো যাবে না।
দায়ান সোহার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। সোহা যে কিছু সময় আগের ঘটনা টা নিয়ে লজ্জা পাচ্ছে বেশ বুঝতে পারছে সে।তাই কিছু না বলে সযত্নে সোহার মুখের অগোছালো চুল গুলো সরিয়ে দেয়। সোহার মুখ টা নিজের কাছে নিয়ে কপালে দীর্ঘ সময় নিয়ে চুমু খায়। সোহা দায়ানের ঠোঁটের ছোঁয়া নিজের কপালে পেয়ে চোখ মুখ আরো খি”চে ফেলে। দায়ানের পিছনের শার্ট খামচে ধরে।
“অনেক বুক ব্যাথা করছে তাই না? ”
সোহা দায়ানের কথাতে চোখ পিটপিট করে তাকায়। এতো সময় দায়ানের করা কাজে মাথা থেকে ব্যাথার কথা বেরিয়েই গিয়েছে।
ঐ সময় একটু বেশি ছিলো। অসহনীয় এখন একটু কমেছে এটা সহ্য করার মতো। মিনমিনিয়ে বলে উঠে সোহা।
আমি ঐদিন ভেবেছিলাম তোমার এটা হয়তো না খাওয়ার জন্য গ্যা’স’টি’ক হয়ে গেছে। বাট এটাতো অন্য কিছু।
সোহা তার দৃষ্টি এবার দায়ানের দিক থেকে সরিয়ে এদিক ওদিক তাকায়।
“কবে থেকে এই রকম হচ্ছে? ”
না মানে,,,,,,,,
এ টু জেট জানতে চাইছি আমি।কোনো বাহানা বা মিথ্যা কথা শুনতে চাই না।
আসলে হয়েছে কি ক্লাস সি'”ক্স এ থাকতে এরকম হচ্ছে। কোনো রকম কা”টা ছে”ড়া র/ক্ত এগুলো আমি দেখতে পারি না। অনেক সমস্যা হয়।বুক ব্যাথা শুরু হয়।শ্বাস কষ্ট হয়।
সব শুনে ডাক্তার এক বস্তা ঔষধ দিয়েছিলো। আর আমি ঔষধ খেতে একদম ই পছন্দ করি না। তাই যখনই বুক ব্যাথা করতো চুপচাপ শুয়ে থাকতাম গিয়ে। কাউকে বলতাম না এ কথা। এমন কি আপু কে ও না। কিন্তু এই ব্যাথা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আগে সহ্য করা যেতো।এখন আর পারি না।
সোহার কথা গুলো শুনে দায়ানের প্রচন্ড রা’গ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে ঠা”টিয়ে গালে একটা লাগিয়ে দিতে। ঔষধ খাওয়া ভয়ে অসুস্থতা নিয়ে মানুষ এসব করে?
ডাক্তার ঐ সময় কোনো টেস্ট করায় নি?
না শুধু চেক আপ করে ঔষধ গুলো দিয়ে খেতে বলেছিলো।না সারলে বলে ছিলো পরের বার করাবে।আর উনি বলে ছিল আমার হা”র্ট দূ”র্বল।
দায়ান কিছু সময় চুপ থেকে বলে,,,, এখান থেকে ডিরেক্ট আমরা হাসপাতালে যাচ্ছি। সব টেস্ট করাবো। এতো দিন তুমি আমার ডাক্তার ছিলে না? এখন আমি তোমার! দেখি ম্যাডাম এবার ঔষধ না খেয়ে কই যায়।
সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে এই যে তার ডাক্তার বর এবার ডাক্তার গি”রি শুরু করবে।
“বলছিলাম যে অন্য একদিন যাবো।আজ না হয় থাক।এখন ব্যাথা একদম নেই সেরে গেছে। চলুন বাড়ি চলে যাই।
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙায়।
সোহা এবার দ”মে যায়। ঠিক আছে এমন ভাবে তাকাতে হবে না। আপনি যা বলবেন তাই হবে।
বলেই সোহা দায়ানের কোল থেকে নেমে যেতে নেয়।যদিও একটু ও ইচ্ছে করছে না তার।ইশশশশ দায়ানের বুকে কি রকম শান্তি। সব দুঃখ কষ্ট কমে যায়।
দায়ান সোহাকে কোল থেকে সরতে দেয় না। আরো নিবিড় ভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
” তুমি চুপচাপ এখানে শুয়ে থাকো।একদম নড়াচড়া করবে না। আমাদের পৌঁছাতে অনেকটাই সময় লাগবে। সো তুমি আরাম করো।”
সোহা দায়ানের কথা শুনে অনেক খুশি হয় যায়।সে তো মনে এতো সময় এটাই চেয়েছিল। মনের আশাটা যখন পূরণ হয়েই গেছে তাহলে আর তার সাথে কে? দায়ান কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে।
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে।
বলছি যে আপনার সমস্যা হচ্ছে না? আমাকে এভাবে নিয়ে গাড়ি চালাতে? দায়ান কে সোহা কথাটা জিজ্ঞেস করলেও মনে মনে এটাই চাইছিল দায়ান যেনো তাকে আবার সিটে না পাঠিয়ে দেয়।
চুপচাপ রিলেক্স করো। আই উইল ম্যা’নেজ।
সোহা আর কথা বাড়ায় নি।দায়ানের বুকে মাথা ঠেকিয়ে দায়ানের শরীরের মিষ্টি সুবাস উপভোগ করতে থাকে। এক সময় ঘুমিয়ে ও যায়।
দায়ান গাড়ি চালাতে চালাতে সোহাকে ধরে রাখা হাতটা সরিয়ে এনেছিলো।সোহা ঘুমিয়ে যাওয়ায় দায়ান কে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখা হাতগুলো আস্তে আস্তে আলগা হয়ে যায়।
দায়ান বুঝতে পারে নি সোহা যে ঘুমিয়ে গেছে। তাই রাস্তার মোড় ঘুরানোর সময় সোহা পরে যেতে নেয়। দায়ান গাড়ি থামিয়ে তারাতাড়ি সোহাকে আগলে ধরে। মাথাটাও পরে যাচ্ছিল।তাই মাথাটা নিজের বুকের মাঝে সযত্নে রাখে। মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে। ঘুমানোরই কথা এতো কিছুর পর শরীরটা অনেকটাই দূর্বল হয়ে গেছে। এবার আর দায়ান জোরে গাড়ি চালালো না আস্তে আস্তে ড্রাইভ করছে।সোহার ঘুমে যেনো ব্যা”ঘাত না ঘটে।
——————-
হাসপাতালের সামনে এসে দায়ান গাড়ি টা দার করায়।তারপর সোহার দিকে তাকায়। তাকিয়ে দেখে কি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা।জাগাতে ইচ্ছে করছে না। মন বলছে আরেকটু থাকুক না।ঘুমাক মেয়েটা।
দায়ান কে আর বেশি সময় সোহার ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করতে হয় নি। গাড়ি থামানোর দশ মিনিটের মাথায় সোহা নিজেই উঠে পরে। ঘুমের ঘোরে দায়ানের বুকে নাক ঘষতে থাকে।সে এখন ভুলেই বসেছে কোথায় আছে।
সোহার কান্ডে দায়ানের শরীর অব’শ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে সোহাকে বলে,,,,,,
সোহা তোমার ঘুম ভাঙলো তাহলে। এবার আসো আমরা হাসপাতালে এসে পরেছি।
দায়ানের কথা শুনে সোহা ত”রি’ঘ’রি করে উঠে সিটে চলে যায়। সে ভুলেই গিয়েছিল এখনো সে দায়ানের কোলেই ছিলো। কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে তা নিজেও জানে না।
দায়ান বুঝতে পেরে বিষয় টা নিয়ে বেশি ঘাটায় না। বলে সোহা কে ঠিকঠাক হয়ে নিতে।
সোহা দায়ানের কথা মতো চুল গুলো ভালো করে বেঁধে নেয়।তারপর ওড়না টা ভালো করে শরীরে জড়ায়।
দায়ান গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে যায়। তারপর ঘুরে এসে সোহার পাশের টা খুলে চোখের ইশারায় বেরিয়ে আসতে বলে।
সোহা কিছু বলার জন্য উশখুশ করছে।
দায়ান বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে,,, কিছু বলবে?
হ্যা আসলে খুব খিদে পেয়েছে আমার। চোখ বন্ধ করে বলে সোহা।
দায়ান বিনিময়ে মুচকি হেসে সোহাকে হাতে ধরে নিজে বের করে গাড়ির দরজাটা লাগাতে লাগাতে বলে,,,আমি জানি ম্যাডামের যে খিদে পাবে। হাসপাতালের ক্যা’ন’টিন এ চলো আমার সাথে। খাইয়ে তারপর সব করাবো। এখানে ভালো টেস্টি খাবার পাওয়া যায় চিন্তা করো না।
তারপর সোহা কে নিয়ে ভিতরে ঢুকে যায়।
সোহাকে নিজে পাশে বসিয়ে খাওয়ায় দায়ান।সোহা অবশ্য বলেছে দায়ান কে ও খাওয়ার জন্য। কিন্তু সে মানা করে দেয়।ঐসময় দায়ান খেয়েছে ভালো করে। এখন পেট ফুল আর খাবে না।সে যেনো ভালো করে খায়।
ভালো করে খাওয়ার কথা বললেও সোহার একটু ইতস্তত লাগছিলো। তাও কিছু করার নেই।
খাওয়া শেষ করে সোহা পানি খেতে খেতে দায়ানের হাতের দিকে ন’জর যায়। হাতটা দেখে সোহার ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠে। কি অবস্থা হয়ে আছে। ছি’লে গেছে অনেক টা র/ক্ত জমে শুকিয়ে আছে।বুঝতে একটুও অসুবিধা হয় না যে এগুলো ওরই কাজ।
পানির গ্লাস টা রেখে দায়ানের হাত টা ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। দায়ান এতো সময় এক হাত টেবিলের উপর রেখে আরেক হাত দিয়ে মোবাইল টি’প’ছি’লো।
সোহা দায়ানের হাত নিয়ে ক্ষ’ততে হাত বোলাতে বোলাতে বলে,,আমি কি করেছি এগুলো? আপনার খুব কষ্ট হয়েছে না? মলম লাগাতে হবে নয়তো সমস্যা হবে পরে। বলেই দায়ানের দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টায়।
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে উঠতে উঠতে বলে,,,,বাড়ি গিয়ে না হয় আমার ডাক্তার মেম আমার চিকিৎসা করবে।সে যখন জ’খ’ম করেছে তাহলে এটা তারই দায়িত্ব জ’খ’ম ঠিক করার।
এবার আসো ফাস্ট । বলেই সোহাকে টেস্ট করার জন্য নিয়ে যায়।
সোহা মিনমিনিয়ে বলে,, আমার ভ’য় লাগে।
ভ’য় পেয়ো না। আমি আছি না? আমি তোমার সাথেই থাকবো।
তারপর সোহার কি কি টেস্ট করতে হবে সব দায়ান পাশে দাড়িয়ে থেকে নিজে বলে দিয়ে করিয়েছে। সব টেস্ট করিয়ে দুই জন ই বেরিয়ে আসে। রিপোর্ট আসতে আরো দুয়েক ঘন্টা সময় লাগবে।তাই দায়ান সিদ্ধান্ত নিয়েছে একেবারে রিপোর্ট দেখে তারপর বাড়ি যাবে।তাই আপাতত সোহাকে নিয়ে নিজের ক্যাবিনে গিয়ে বসার জন্য নিয়ে যেতে থাকে।
সোহার একটা হাত দায়ানের হাতের মুঠোয়। দায়ান সোজা দিকে তাকিয়ে হাটলেও।সোহা এদিকে ওদিকে তাকিয়ে হাঁটছে।
হঠাৎ করেই দায়ান দাড়িয়ে যায়। সামনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।
দায়ান থেমে যাওয়াতে সোহা ও থেমে যায়। দায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে দায়ান সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। সোহা ও দায়ানের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকায়।
সোহা সামনে তাকিয়ে একটা ঝ”টকা খায়।ততক্ষণে দায়ানের হাত সোহার ধরে রাখা হাত ছেড়ে দিয়েছে। সোহা একবার সামনের দিকে তাকিয়ে আবার দায়ানের দিকে তাকায়। তো আবার নিজের হাতের দিকে যা এতোসময় দায়ান ধরে রাখলেও এখন আর ধরে নেই।
তিতিশা! তিশা! এই তিশা বলে,,
দায়ান ততক্ষণে দৌড়ে বেরিয়ে গেছে।
সোহা শুধু নীরবে দাড়িয়ে দায়ানের চলে যাওয়া দেখছে।তার চোখ দিয়ে জলের ধারা বয়ে চলেছে।
#চলবে,,,,,,,,,,,#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২৪(বোনাস)
#Jhorna_Islam
দায়ানের চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে সোহা তাকিয়ে রয়। তার কি করা উচিত কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।
সোহা নিজের চোখকে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারে নি যে এইটা তিশা।ভেবে ছিলো হয়তো চোখে ভুল দেখছে।
কিন্তু দায়ান কে তিশার নাম ধরে ডাক দিতে দেখেই বোঝে গেছে যে সে ভুল না।সত্যিই তিশা কে দেখেছে। কিন্তু একটা কথা সোহার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না। সেটা হলো তিশা যদি মরেই যায় তাহলে এখানে আসলো কেমন করে।
আদৌ কি দুইজন এক রকম দেখতে হতেই পারে আলাদা আলাদা? হলেও একটু ও কি ভিন্নতা থাকবে না তাদের মধ্যে? এটা কি ভাবে সম্ভব!
একেইতো সোহার শরীরের উপর দিয়ে আজ অনেক ধ’কল গেছে তার উপর এমন ঝ’টকা খেয়েছে তিশা কে দেখে।
নিজের শরীর আর চলছে না সোহার।দায়ানের ক্যাবিন পর্যন্ত ও যাওয়ার আর ক্ষমতা নেই সোহার। তাই পাশে তাকিয়ে একটা বে’ঞ্চ দেখতে পায় ঐখান বসেই নিজের শরীরটা এলিয়ে দেয়।
চোখ বন্ধ করতেই কিছু সময়ের আগের মুহূর্ত গুলো চোখের পাতায় এসে হা’না দেয়। চোখের কোণ বেয়ে অবিরাম ধারায় অশ্রু বেরিয়েই যাচ্ছে।
দায়ান তিশা আপুকে দেখেই তার হাতটা কিভাবে আলগোছে ছেড়ে দিলো।
দায়ানের মুখে তিশা নামটা সোহা কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। দায়ান যখন তিশা তিশা বলে ডাকছিল তখন সোহার খুব কষ্ট হচ্ছিল।
সোহা কে ফেলেই বেরিয়ে গেলো দায়ান।
সোহা এক জায়গায় প্রায় দুই ঘন্টা যাবত বসে আছে। হাসপাতালের গেইটের দিকে তাকিয়ে। এই বুঝি দায়ান আসবে এসে স’রি বলবে। এখন সন্ধা সাতটা বা’জে।
অথচ দায়ানের কোনো খবর নেই। সোহার শরীর যেনো ধীরে ধীরে আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আবার বুক ব্যাথা করছে।
আরো আধা ঘণ্টা বসে থাকে দায়ানের অপেক্ষায়। কিন্ত হায় দায়ানের তো কোনো খবর নেই। সোহার মোবাইল টা ও দায়ানের গাড়িতেই ফেলে রেখে এসেছিলো।
হাসপাতালে আর কোনো ভাবেই থাকা সম্ভব নয় সোহার জন্য। ফি’না’ই’লের গন্ধে আর কিছু সময় থাকলে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারবে না।
সোহার ভিতর এখন ঝ”ড় বয়ে চলেছে। নিজের আপন ফোপাঁতো বোন ফিরে আসবে হয়তো।তবুও মনের মাঝে বিন্দু মাত্র আনন্দ খুজে পাচ্ছে না। নিজের ভালোবাসার মানুষ টা কে হাড়ানোর ভ’য় পেয়ে বসেছে মনে।
সোহা আস্তে করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। দায়ান হয়তো সোহার কথা ভুলেই গেছে। নয়তো তিশা আপুর সাথে কথা বলছে হয়তো।
আচ্ছা এটা কি সত্যি ই তিশা আপু? নাকি অন্য কেউ। পৃথিবীতে কি সত্যি এক রকম দেখতে মানুষ আছে? তাদের মধ্যে কি এতোটা ও মিল থাকে?
এই যে মেয়েটা কে দেখলো পুরোপুরি তিশার মতো দেখতে।মেয়েটার হাঁটা ও।এমনকি হাসি ও তিশার মতোই।
মেয়েটা ফোনে কার সাথে যেন হেসে হেসে কথা বলতে বলতে চলে গেলো।তাইতো দায়ানের ডাক ও শুনতে পেলো না।
দায়ান কি তিশা আপুর সাথে এখন কথা বলছে। তিশা আপু কে পেয়েছে উনি? কতো কিছু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অথচ একটার উত্তর ও সোহার কাছে নেই।
এটা যদি সত্যি তিশা আপু হয় তখন? উনিকি তিশা আপুর কাছে ফিরে যাবে? আমাকে উনার জীবন থেকে বের হয়ে যেতে হবে।
নানা না কিছুতেই না।উনি শুধু আমার। আমি তিশা আপুকে দিবো না উনাকে। দরকার পরলে তিশা আপুর কাছে অনুরোধ করবো।
উনাকে ছাড়া আমি কি করে থাকবো? এক মুহূর্ত না দেখলে মনে শান্তি পাই না। উনি সারাজীবনর জন্য আমার কাছ থেকে চলে গেলে আমি মরেই যাবো।
দরকার পরলে তিশা আপু কে বলবো তুমি আমার সব নিয়ে নাও আপু।বিনিময়ে দায়ানকে আমায় দিয়ে দাও।
অনেক ভালোবাসি আমি উনাকে। এখনো আমাদের একে অপরের কাছে ভালোবাসি বলা বাকি।এক সাথে পথ চলা বাকি। আমি তো উনার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি। চোখের ভাষা কখনো মিথ্যা হতে পারে না। আজও আমার অসুস্থতা নিয়ে কতোটা উতলা হয়ে উঠেছিল উনি।ভালোবাসা না থাকলে এটা কোনো ভাবেই সম্ভব না।
হাসপাতালের গেইটের দিকে হাঁটা দিতে দিতে বিরবির করে একটা কথাই বলছে সোহা।তুমি উনাকে কেড়ে নিও না তিশা আপু। উনি শুধু আমার। কেড়ে নিও না উনাকে।
পিছন থেকে একটা নার্স অনবরত ডেকে চলেছে সোহাকে সেই দিকে তার কোনো ধ্যা’নই নেই। সেতো এখন অন্য খেয়ালে আছে।
“ম্যাম আপনার রিপোর্ট গুলো এসে গেছে। ”
ম্যাম কোথায় যাচ্ছেন? রিপোর্ট গুলো নিন।
ম্যাম,,,,ম্যাম?
কে শুনে কার কথা ততক্ষণে সোহা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেছে।
নার্স কে এমন ভাবে কাউকে ডাকতে দেখে দায়ানের স্যার+ সিনিয়র ডাক্তার এসে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? এমন ভাবে কাকে ডাকছো?
আসলে স্যার ম্যাম এতক্ষন উনার টেস্টের রিপোর্ট গুলোর জন্যই অপেক্ষা করছিলো এখানে বসে। কিন্তু এখনই মাত্র রিপোর্ট না নিয়ে উঠে চলে গেলো।
দায়ান স্যারও উনার ক্যাবিনে নেই।আশে পাশে কোথাও দেখলাম না। উনি নিজে দাড়িয়ে থেকে ম্যামের সব টেস্ট করিয়েছে।
দায়ানের রিলেটিভ নাকি মেয়েটা?
উনার ওয়াইফ নাকি স্যার।
মানে? দায়ান বিয়ে করলো কবে? আর আমি ও জানি না?
আমিও উনাকে ম’জা করে বলেছিলাম স্যার।উনি বললেন অনুষ্ঠান এখনো হয়নি।পারিবারিক ভাবে শুধু আ’কদ সম্পন্ন হয়েছে।
ওহ আচ্ছা। রিপোর্ট গুলো আমার কাছে দাও আমি দিয়ে দিবো দায়ান কে।
নার্স টা ফাইল টা এগিয়ে দিতে দিতে বলে,, স্যার মনে হয় ম্যামের হার্টে কোনো সমস্যা।
তোমার কেন এটা মনে হলো?
হার্টের রু’গী’দের যা যা টেস্ট করানো হয়।ম্যামের ও করিয়েছে।
ঠিক আছে তুমি তোমার কাজে যাও।
নার্স টা চলে গেলে উনি ফাইল টা নিয়ে নিজের ক্যাবিনে এসে টেবিলের উপর রাখে। তারপর ফ্রেশ হতে যায়।পাঁচ মিনিট পর বেরিয়ে আসে।
তখনই টেবিলের উপরে রাখা ফোন টা বেজে উঠে। টেবিল থেকে ফোনটা নেওয়ার সময় অসাবধানতা ব’শত ফাইল টা নিচে পরে রিপোর্টের কাগজ গুলো বেরিয়ে আসে।
ফোনে কথা বলতে বলতেই রিপোর্ট গুলো উঠাতে থাকেন। কিন্তু একটা রিপোর্টে গিয়ে চোখ আটকে যায়। ভুল দেখছে ভেবে কল কেটে আবার রিপোর্ট টা দেখে।তারপর একে একে সব গুলো রিপোর্ট দেখে।
রিপোর্ট গুলো নিয়ে উঠে চেয়ারে বসে মনে মনে বলে উঠে,,, ওহ মাই গড।
পাঁচ মিনিট রিপোর্টের দিকে স্থির তাকিয়ে থেকে খুটিয়ে খুটিয়ে সব দেখে। তারপর দায়ানের নাম্বার বের করে কল লাগায়।
দায়ানের ফোন বন্ধ বলছে।আরো কয়েকবার লাগায় বার বার একই কথা বলছে। ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন।
———————
সোহা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে দায়ানের গাড়ি দেখতে পায় না। হয়তো গাড়ি নিয়ে গেছে।
প্রায় অনেক সময় দাড়িয়ে থাকার পরে একটা সি এন জি পায়। তাও অনেক ভাড়া দিতে হবে নয়তো যাবে না। রাত হয়ে গেছে বলে সোহা কথা বাড়ায় না। লোকটার দাবিই মেনে নেয়। সে শুধু বাড়ি যেতে চায় এখন।
গেইটের সামনে এসে লোকটার ভাড়া দিতে গিয়ে মনে হলো ব্যাগটা তো গাড়িতেই আছে ফোনের সাথে। এখন টাকা দিতে হবে।লোকটা কে বলে বাড়ি থেকে এনে তারপর দিচ্ছে। লোকটা কিছুতেই মানতে নারাজ।এখন সোহাকে যেতে দিলে নাকি সোহা পালিয়ে যাবে।
লোকটা সোহাকে যেতেও দিচ্ছে না। আবার চি’ল্লা চি’ল্লি ও করছে।
দায়ানের উপর এবার সোহার অনেক রা’গ হলো। কি ভাবে সোহাকে এমন বিপদে ফেলে চলে গেলো? গেলো তো গেলো একটা বার ও কি ভাবলো না।রাতের বেলা কি হবে মেয়েটার।
তখনই দারোয়ান এগিয়ে এসে জানতে চায় কি হয়েছে?
ড্রাইভার লোকটা ভাড়া না দেওয়ার কথা বলল।সোহা নাকি মিথ্যা বলে কেটে পরতে চাইছে এগুলোও বলল।সব শুনে দারোয়ান ড্রাইভার কে ইচ্ছে মতো বকে তারপর নিজে টাকা দিয়ে দেয়। লোকটা কাচুমাচু করে সি এন জি নিয়ে কেটে পরে।
সোহা চুপচাপ বাড়ির ভিতর ঢুকে। সকলে তখন ড্রইং রুমে বসে বসে গল্প করছে। অবশ্য রুশ আর দায়ানের বাবা আরো পরে আসবে।
দায়ানের মা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,,, কিরে মা তোর এতো দেরি হলো যে? আমরা তো ভেবেছি তুই দায়ানের সাথেই আছিস।
দায়ান কি এসেছে?
বড় ফুপি উনি আমার সাথে আসে নি।আমি একাই এসেছি।
ওহ আচ্ছা ভিতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।খাবার দিচ্ছি কি না কি খেয়েছিস সারাদিন।মুখ টা দেখ কিরকম শুকিয়ে আছে।
আমি কিছু খাবো না। খেয়ে এসেছি। আমি ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরবো।আমাকে কেউ ডেকো না।আমার মাথা ব্যাথা করছে। বলেই কাউকে কিছু না বলতে দিয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়।
তারপর ফ্রেশ না হয়েই গিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে।
সোহাকে কেউ আর ঘাটায় নি।রাতে যে দায়ান বাড়ি ফিরে নি এটা নিয়েও তারা বেশি চিন্তা করে নি।হয়তো হাসপাতালে কাজ আছে।তাই মোবাইল বন্ধ রেখেছে। বাড়িতে জানাতে ভুলে গেছে এটাই ভেবে নেয় সকলে।
—————
সোহা কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে নিজেও জানে না। পরের দিন চিৎকার চেচামেচি আর জিনিস পত্র ভাঙার আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙে যায়। উঠে বোঝার চেষ্টা করে কি হয়েছে।
দায়ানের গলার স্বর শুনে তারাতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে আসে।নিচে আর নামেনি।উপর থেকেই দায়ানের জোরে জোরে বলা কথা গুলো শুনে স্ত’ব্ধ হয়ে রয়।
তিশা বেঁচে আছে তোমরা কেনো আমাকে বলোনি? কেন বলোনি? মিথ্যা কেন বলেছো আমায়?
চিৎকার করছে আর জিনিস পত্র ভাঙছে। হাত কেটে হাত দিয়ে র/ক্ত ঝড়ছে সেই দিকে তার খেয়াল নেই।
#চলবে,,,,,,,