#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ৮
#Jhorna_Islam
“তার মানে বুঝতে পারছেন? তার মানে হলো আমি আপনার ডাক্তার। ডাক্তারের ডাক্তার ”
সোহা দায়ানকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।
দায়ান প্রতিউত্তরে কিছু বলে না।সামনের পুকুরটার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
এই ডাক্তার আপনি আমার ‘ফি’ দিবেন না? পরিচিত বলে কিন্তু ছাড় পাবেন না বলে দিলাম। পাই টু পাই দিতে হবে। আমি আবার কমার্সের ছাত্রী বুঝলেন? ক’ড়া হিসাব জানি।এতো দরদী না যে বলবো থাক,আপনিতো কাছের মানুষই দিতে হবে না।
তা ডাক্তার ম্যাডামের ফি কতো হলো?
— হিসাব করি নাই।পরে হিসাব করে জানিয়ে দিবো।
— ওকে অপেক্ষায় রইলাম।
এবার উঠো বাড়ি যেতে হবে। নয়তো সন্ধা হয়ে যাবে।বাড়িতে সবাই টেনশন করবে।বলেই দায়ান পাশে ফিরে সোহার দিকে। একি সোহা তো এখানে নেই! কোথায় চলে গেলো? চারদিকে চোখ বুলিয়েও কোথাও দেখতে পেলো না।মুহূর্তের মধ্যে হাওয়া হয়ে গেলো নাকি মেয়েটা? দায়ান বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। বার কয়েক এদিকে ওদিকে খুঁজেও পায় না।তারপর ডাক দেয়,,,,,
— সোহা,,,, কই তুমি? সোহা?
— এই মিয়া এই যে আমি।
— দায়ান এদিক ওদিক তাকিয়ে ও কোথাও দেখতে পায় না। কোথায় তুমি? দেখলাম পাচ্ছি না তো।
— আরে উপরে দিকে তাকান।
দায়ান সোহার কথা মতো উপরের দিকে তাকিয়ে একটা টা’স’কি খায়।এইই এইই তুমি ওখানে কি করছো? পরে যাবে তো নামো বলছি।পরে তোমার বাবা তোমার কিছু হলে আমায় জেলে ঢুকাবে।
সোহা বড় একটা পেয়ারা গাছের ডালে বসে থাকতে পা ঝুলিয়ে। আর কিছু সময় পর পর পেয়ারায় কামড় বসাচ্ছে।
আরে আপনি না ডাক্তার? ডাক্তারদের ভ’য় পেলে চলেনা।তাদের বুক ভরা সাহস থাকতে হয় বুঝলেন?
ফালতু কথা বাদ দিয়ে বলো তুমি ঐখানে কি করছো? পরলে পা আর কোমড় আস্তো থাকবে?
আপনার দেখছি আমার সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই দেখছি।
মানে?
আরে এটা তো ছোট গাছ।আরো কতো বড় বড় গাছে চড়েছি।এটা আমার কাছে কোনো বেপারই না।গাছে উঠা আমার কাছে দুধ-ভাত বুঝলেন?
কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা।গে’ছো কোথাকার।
চুপ করুন এই গাছের পেয়ারা হে’ব্বি টেস্ট। আহ্ কি ভালো লাগছে খেতে।আপনিও একটা নিন বলেই গাছ থেকে একটা পেয়ারা ছিড়ে দায়ানের দিকে ঢি’ল মারে।
দায়ান কোনো উপায় না পেয়ে, পেয়ারাটা কে’চ করে ধরে নেয়।তারপর বলে নামো বলছি। নয়তো তোমায় একা রেখেই চলে যাবো আমি।
এইইই না না নামছি আমি।আমায় আবার এখানে একা রেখে যাবেন না।দিনের বেলা যতোই সাহসী হই না কেনো রাতের বেলা আমি খুব ভ’য় পাই।এমনিতেই আমার হা’র্ট দূ’র্ব’ল।
হা’র্ট দূ’র্ব’ল মানে? দায়ান সোহার কাছে জানতে চায়।
সোহা দায়ানের কথায় পাত্তা না দিয়ে তারাতাড়ি নামতে নামতে বলে ও কিছু না।
এই আস্তে পরে যাবা তো।কে শুনে কার কথা।গাছের অর্ধেক থেকেই লাফ দিয়ে নিচে নেমে আসে।
তারপর কোমড় থেকে পেঁচানো ওড়না টা গায়ে ভালো ভাবে দিয়ে বলে চলুন এবার। বলেই বাড়ির পথে হাঁটা দেয়। দায়ান ও সোহার সাথে তাল মিলিয়ে হাটছে।
হাঁটতে হাঁটতেই সোহা দায়ানের দিকে তাকায়। তারপর হাতের দিকে চোখ যায়।একি আপনি পেয়ারাটা এখনো খাচ্ছেন না কেনো খান।অনেক ম’জা খেয়ে দেখেন।
দায়ান পেয়ারার দিকে তাকিয়ে বলে,, বাড়ি গিয়ে ধুয়ে খাবো, এমন ভাবে আমি খেতে পারবো না।
দায়ানের কথা শুনে সোহা থা’বা মেরে দায়ানের হাত থেকে পেয়ারাটা কে’ড়ে নেয়।
দায়ান হাঁটা থামিয়ে বলে,,একি নিলে কেনো? বললাম না বাড়ি গিয়ে খাবো!
সোহা কোনো কথা না বলে,নিজের ওড়নার এক অংশ দিয়ে পেয়ারাটা ভালো করে মুছে নেয়।তারপর আবার দায়ানের হাতে গুঁজে দেয়।
দায়ান হাটতে হাটতে পেয়ারায় কামড় বসায়। ওড়না টা নোংড়া না করলেও পারতে।বাড়ি গিয়ে ধুয়ে খেয়ে নিতাম।
এখন খেতে যা ম’জা লাগবে বাড়িতে গিয়ে সেটা পাবেন না বুঝলেন?
ওমম আসলেই পেয়ারাটা অনেক টেস্টি।কি সুন্দর একটা ঘ্রাণ।
তারপর আর তাদের মধ্যে কোনো বিশেষ কথা হয়নি।দুইজনই চুপচাপ বাড়ির কাছাকাছি এসে পরে। তার মধ্যে তমার সাথে পথে দেখা হয়ে যায়। তমা সব গুলো দাঁত বের করে লাজুক হেসে সোহাদের দিকেই এগিয়ে আসছে।
তমা কে দেখেই সোহার ভালো মে’জা’জ টা গরম হয়ে গেলো।
— কিরে সোহা তুই ঐদিক থেকে এলি? আর আমি তোকে খুজে খুজে হয়’রা’ন। আমাকে না নিয়েই তোরা ঘুরে এলি? আমি কিন্তু তোর সাথে রা’গ করেছি।
আর আপনিও আমায় রেখে ঘুরে এলেন? এটা মানা যায় এটা কিন্তু অ’ন্যা’য়।
দায়ান তমার কথা শুনেনি এমন একটা ভা’ব করে বাড়ির ভিতর ঢুকে যায়। তমার দিকে একবার তাকায় ও নি।
— এই যাহ্ সোহা এটা কি হলো?
– কি হলো?
— দেখলি উনিতো আমার কথায় পা’ত্তা দিবে দূরে থাক,আমার দিকে তাকিয়ে ও দেখলো না।এটা কি ঠিক হলো?
— তো যা না গিয়ে বল,,,,” দায়ান কাকা গিভ মি সাম পা’ত্তা।” তারপর বাড়িতে নিয়ে রান্না করে খাবি।
— তুই এমন ভাবে কথা বলছিস কেনো? আর উনার মতো ছেলেকে কেউ কাকা ডাকে নাকি?
— সোহা মনে মনে সেই লেভেলের খুশি দায়ান তমাকে ইগনোর করে চলে গেছে বলে। উনি না ছে’চ’ড়া লোকদের একদম দেখতে পারে না বুঝলি তমা?
আমি কি ছে’চ’ড়ামি করলাম রে সোহা?
ও কিছু না সামনে থেকে সর বাড়ি যাবো আমি।বলেই সোহা তমাকে পাশ কাটিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো গান গাইতে গাইতে,,,, লা,,,লা,,,লা,,,।
তমা কিছু সময় সোহার যাওয়ার পানে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসি দেয়। তারপর নিজেও উল্টো পথে হাঁটা দেয়।
———————————
দায়ান বাড়িতে ঢুকে নিজের রুমে না এসে সোজা বাবা মায়ের রুমের সামনে গিয়ে দাড়ায়।তারপর জোরে নিশ্বাস নেয়। দরজায় নক করে।
দায়ানের বাবা- মা দুজনে বসেছিলো। বসে বসে দায়ানের বিষয় নিয়েই কথা বলছিলো।হঠাৎ করে দরজায় ন’ক পরায় দায়ানের মা জানতে চায় ,,,, কে?
আম্মু আমি!
দায়ান বাবা? আয় ভিতরে আয়।
দায়ান মায়ের কথায় রুমে ঢুকে। তার মা তাকে দেখে মুচকি একটা হাসি দেয়। কে জানে মায়ের এই মুচকি হাসিতে কি আছে! মন প্রান জুড়িয়ে যায়।মায়ের ঐই হাসির দিকে তাকিয়ে থাকতেই মন চায়।
দায়ানের বাবা এতো সময় দাড়িয়ে ছিলো।দায়ানের কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে সে ও মুচকি হাসে। দায়ান হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে রয় এক দৃষ্টিতে। এরাইতো সব দায়ানের।ওদের তো আর কেউ নেই দায়ান ছাড়া। দায়ান মনে মনে আওড়ায় আমার কিছু হয়ে গেলে এই দুটো মানুষের কি হবে? এতো দিন স্বা’র্থ’প’রের মতো শুধু আমার কথাটাই ভেবে গেলাম।একবারও ভেবে দেখলাম না এই দুইটা মানুষ আমার এমন অবস্থা দেখে কতো কষ্টে আছে।বাবা মায়ের মুখটাও কেমন শুকিয়ে গেছে এই কয়দিনে।হয়তো তার টেনশনেই খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করে নি। এতো না নিজে ঠিক মতো খেয়েছে আর না ওদের দিকে খেয়াল দিয়েছে।দায়ানের এখন নিজেকে খুবই অপরাধী লাগছে।
আর বাবা মাকে কষ্ট দিবে না।তাকে ভালো থাকতে হবে।তার ভালো থাকার উপরই এই দুই জনের ভালো থাকা নির্ভর করে।
দায়ানের বাবা দায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়। দায়ান মুচকি হেসে বাবাকে গিয়ে ঝাপটে ধরে। তারপর বলে,,,, লাভ ইউ বাবা। তোমাদের অনেক অনেক ভালোবাসি।
কে বলে ছেলেদের কাঁদতে নেই।চোখ দিয়ে পানি বের হতে চায় না সহজে।এই যে নিজের ছেলেকে এতোদিন পর নিজের বুকে পেয়ে দায়ানের বাবার চোখের কোণে পানি এসে গেছে। ছেলের কথায় মন প্রাণ জুরিয়ে গেছে। দায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,,,,আমিও আমার বাপ কে খুব ভালোবাসি। আমি চাই সে যেনো সব সময় হাসি খুশি থাকে।দায়ান মুচকি হেসে কিছু সময় বাবাকে জরিয়ে ধরে রয়। তারপর মায়ের কাছে এগিয়ে যায়।
দায়ানের জন্য বিছানায় বসে ছিলো।দায়ান গিয়ে মায়ের কোলে শুয়ে পরে। তারপর হাসি মুখে মায়ের দিকে তাকায়। আম্মু তোমাদের আর আমায় নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। এখন থেকে আমি ভালো থাকবো।তোমাদের আগের দায়ান হয়ে যাবো।রুশের বিয়ের পর গিয়ে হাসপাতালে জয়েন করবো।
দায়ানের বাবা ও এবার ওদের পাশে বসে।
তোমরা আর আমায় নিয়ে চিন্তা করবানা ঠিক আছে? দুইজন শরীরের কি হা’ল করেছো দেখেছো? এখন থেকে ঠিক সময় খাইবা আর ঘুমাইবা। বলেই আবার হাসে।
দায়ানের বাবা মা একে অপরের দিকে তাকিয়ে প্রাপ্তির হাসি হাসে।
সোহা এতো সময় রুমের বাইরে দাড়িয়ে সব কথাই শুনেছে।ওদের তিন জন কে এক সাথে দেখে কি যে ভালো লাগছে।মনটা আনন্দে ভরে উঠলো এইটা ভেবে যে দায়ান আবার আগের মতো হয়ে যাবে।
————————————
আজ সকলে এক সাথে রাতের খাবার খেতে বসে। দায়ান সবার সাথেই আজ হেসে কথা বলছে।দায়ানের পরিবর্তন দেখে সকলেই খুশি।
সোহা দায়ানের পাশে বসেছে আজ খেতে। খেতে খেতে দায়ান কে আস্তে করে ডাক দেয়,,, শুনুন!
দায়ান ও আস্তে করে বলে,,,বলো!
কাল খুব ভোরে উঠবেন বুঝলেন? আপনাকে নিয়ে এক জায়গায় যাবো।
আবার কোথায়?
গেলেই দেখতে পাবেন।এখন বলা যাবে না।টপ সি’ক্রেট!
#চলবে,,,,,,#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ৯
#Jhorna_Islam
কোয়াশার চাদরে মোড়ানো পৌষের ভোর।শীতের আড়মোড়া ভেঙে কাজে যাচ্ছে গায়ের মানুষ।পাখির কুজন শুনতে শুনতে আমি আর দায়ান হাটছি মেঠো পথে।শীত সকালের চেনা দৃশ্য খেজুর গাছ থেকে রসের হাড়ি নামাচ্ছে গাছি।শীত মানেইতো খেজুর গাছের মিষ্ট রসের ফলন।
শীতকাল মানেই ভোর নানা ধরনের মুখরোচক খাবারের সমাহার,,,,,
এখন সময় ভোর ৬টার একটু উপরে হবে।অথচ বাইরে কোয়াশার কারণে মনে হচ্ছে এখনো মাঝ রাত ই আছে। সোহা ঘুম থেকে সেই ভোর পাঁচটায় উঠে ফ্রেশ হয়ে গিয়ে দায়ানের দরজা তে ন’ক করে।
দায়ান তখনো ঘুমে বিভোর। সোহা বার কয়েক ন’ক করার পর দায়ান আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠে। তারপর কিছু সময় একই ভাবে বিছানায় বসে থাকে।
সোহা আবার দরজায় ন’ক করে।
এবার দায়ান হা’ই তুলতে তুলতে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। তারপর সামনে তাকিয়ে দেখে সোহা।
একদম পরিপাটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কি হয়েছে সোহা এতো সকাল সকাল? আরামের ঘুমটা ভেঙে দিলা কেনো?
আরে রাখেন আপনার আরামের ঘুম। আরাম করে ঘুমামোর জন্য সারাজীবন পরে আছে বুঝলেন? এমন সকাল আর পাবেন না।
কালকে কি বলেছিলাম ভুলে গেছেন?
কি বলেছিলে?
জানতাম আপনি ভুলে যাবেন।আপনাকে না বললাম যে আজ আপনাকে নিয়ে একটা জায়গায় যাবো তারাতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে?
ওহ ভুলে গেছি।
খুব ভালো করেছেন।এখন আমি মনে করিয়ে দিলাম।এখন গিয়ে রেডি হয়ে আসুন। আমি অপেক্ষা করছি বাইরে আপনার জন্য। তারাতাড়ি আসবেন বেশি টাইম নিবেন না। দশ মিনিট দিলাম।
ওকে।
তারপর দায়ান তৈরি হয়ে আসলে সোহা দায়ানকে নিয়ে বেরিয়ে পরে। বাড়ির কেউ এখনো উঠে নি।সকলেই ঘুম।আরো পরে উঠবে।
রাস্তার পাশে খেজুর গাছ থেকে খেজুরের র’সি নামাচ্ছে গা’ছিরা। কয়েকজন নামাচ্ছে তবে কয়েকজন হয়তো আরো পরে এসে নামাবে।
গ্রাম অঞ্চলের দিকে শীত টা শহুরে থেকে বেশিই পরে।চারদিক কুয়াশা তে ঘেরা। তিন চার হাত দূরের দৃশ্যই কিরকম ঝাপসা। কুয়াশাকে ধোয়ার কু’ন্ড’লী মনে হচ্ছে।
আপনার কি বেশি শীত করছে? হাটতে হাটতেই জানতে চায় সোহা।
নাহ্ করছে তবে তেমন না। শীতের দিন শীত করবে এটাই স্বাভাবিক।
ওয়েট কিছুক্ষনের মধ্যেই আপনারা শীতটা কমিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।
কি করবে?
— “চু’রি।”
— হোয়াট! বলেই চিললিয়ে উঠে দায়ান।
— এই আস্তে এমন চেচামেচি করছেন কেনো? আপনি দেখি চু’রি করার আগেই আমায় গণ ধোলাই খাওয়াবেন।কি সাং’ঘাতিক।। আপনার জন্য চু’রি করবো আর আপনিই কিনা আমায় ধরিয়ে দিবেন?
— চু’রি করবে মানে টা কি? কি বলছো মেয়ে এসব? এসব করার জন্য আমায় সকালে তুমি ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছো? এমন জানলে আমি কখনো আসতামই না।আমার তোমার সাথে দেখা যায় আসাটাই ভুল হয়ে গেছে। আমি বাসায় ফিরে যাচ্ছি তুমি যা ইচ্ছে করো।বলেই ঘুরে দাঁড়ায় ফিরে যাওয়ার জন্য।
সোহা তারাতাড়ি গিয়ে দায়ানের সামনে হাত দিয়ে আঁটকে দারায়।আরে এমন করছেন কেনো বলুন তো? আমি কি সোনা-রুপা চু’রি করার কথা বলছি নাকি?
সে তুমি যাই চু’রি করো না কেনো চু’রি মি’ন’স চু’রি।
সোহা মুখ ভেংচি কেটে মনে মনে বলে,,, আসছে আমার সাধু পুরুষ রেএএএএ। আর মুখে বলে চুপ থাকুন তো।এটাকে চু’রি বলে না।নিজের গাছ থেকে খেলে কি চু’রি হয়?
“নাহ্”
তো আসুন বলেই দায়ান কে নিয়ে একটা খেজুর গাছের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। খেজুর গাছের মধ্যে র’সির হাঁড়ি ঝুলছে। এখনো চু’ই’য়ে চু’ই’য়ে ফোটায় ফোটায় র’সি হাঁড়ির মাঝে পরছে। এই দৃশ্য টা খুবই মুগ্ধকর।যে নিজের চোখে দেখতে পেরেছে সেই শুধু জানে।
রসির দৃশ্য টা দায়ানের মন কেড়েছে।এতোদিন বইয়ের পাতায় পরে এসেছে। সামনা সামনি এমন দৃশ্য কখনো উপভোগ করা হয় নি। দায়ান যখন খেজুর গাছের দিকে তাকিয়ে আছে সোহা তখন কোমরে ওড়না বেঁধে অর্ধেক গাছে উঠে গেছে।
আরে আরে কি করছো? দেখতে পারতেছো না সকালের কোয়াশায় গাছ কেমন ভিজে আছে? ঐখান থেকে পরলে তোমার কাঠির মতো শরীর আসতো থাকবে?
চুপ করে দেখতে থাকুন কি করি।পরবো না।তবে আপনি পরবেতো পরবেতো করতে থাকলে নিশ্চিত পরবো।
দায়ান আর কিছু বলে না সোহাকে। সোহা খুব সাবধানে গাছ থেকে বাঁধন খুলে র’সির হাঁড়ি টা নিয়ে নিচে নেমে আসে।
তারপর দায়ানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে নিন এটা দিয়েই খেতে হবে।এখানে গ্লাস পাবো বা।আর চিন্তা করবেন না এটা আমাদেরই গাছ।সো খেতে পারেন।
কেমন এটা খেতে? না মানে,,,আগে কখনো খাইনি তো তাই এই প্রথম বার দেখছিই খাবো কি।
আমি বলবো না নিজেই খেয়ে দেখেন।তারপর বুঝতে পারবেন কেমন।
দায়ান ও হাঁড়ি টা হাতে তুলে নেয়। জীবনে নতুন কিছু টেস্ট করা মন্দ না। তারপর ঢকঢক করে কয়েক ঢোক র’সি পান করে।
সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে দায়ানের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য।
“ওমমম ইট’স টু ইয়াম্মি।” আসলেই অনেক ভালো লাগছে খেতে। বলতে বলতে প্রায় অনেক টুকু খেয়ে নেয় দায়ান। তারপর সোহার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে এটুকু তুমি খাও। আমি অনেক খেয়ে নিয়েছি।
ওহ্ তাও ভালো মনে আছে দেখা যায় আমার কথা।আমিতো ভাবছি আমার কথা ভুলে আপনি সব একাই খেয়ে নিবেন।বলে নিজেও বাকিটা শেষ করে। এই হাঁড়ি তে এতো বেশি র’সি ছিলোও না।
খাওয়া শেষ করে সোহা আবার হাঁটা দেয়।
এখন আবার কই যাও? বাড়ি যাবা না?
এখনই কিসের বাড়ি? বাড়ির কথা আজ ভুলে যান।জাস্ট এনজয় করুন। বাড়িতে যেতে আরো দেরি আছে।
তারপর সোহা মাঠের মধ্যে নেমে পরে। মাঠে দূর্বা ঘাস দিয়ে ভরপুর। সোহা মাঠে নেমেই জোতা খুলে খালি পায়ে হাঁটতে থাকে।
কি করছো ঠান্ডা লাগলে বুঝবা মেয়ে।
আপনি আপনার ডাক্তার গি’রি আপনার পকেটে ঢুকিয়ে রাখুনতো আজকের জন্য। প্রকৃতি উপভোগ করুন।এবার চুপচাপ জোতা খুলুন কোনো প্রশ্ন করবেন না।
কিন্তু,,,,,,,
কোনো কিন্তু না।
দায়ান অ’গ’ত্তা নিজের পায়ের জোতা খুলতে বাধ্য হয়।
এবার আমার সাথে শিশিরের উপর দিয়ে হাটুন আর ফিল করুন।দেখেন কি ভালো লাগবে!
দায়ান বলে উঠে আসলেই ভালো লাগছে। তারপর দুজন মিলে খালি পায়ে শিশিরের উপর অনেক সময় নিয়ে হাঁটাহাটি করে।এবার এখান থেকে যাওয়া যাক? সোহা বলে।
দায়ান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। দুজন জোতা পরে আবার হাটতে থাকে।
এতোসময় খালি পায়ে শিশিরের মধ্যে হাঁটার জন্য এখন অনেকটাই শীত লাগছে।সূর্য এখনো উঠেনি। সোহা কাঁপতে কাঁপতে বলে,, উফফ মাগো কি শীত।
হুম। চলো বাড়ি ফিরে যাই।
এই একদম না চুপ থাকেন আপনি।বলেই সোহা দৌড়ে একটা বাড়ির ভিতর ঢুকে যায়।
কি হয়ে গেলো দায়ান কিছু বুঝতে পারলো না।মিনিট কয়েক পরই আবার ফিরে আসে।
কি হলো এটা? দৌড়ে ঐ বাড়িতে ঢুকলে কেন?
অনেক শীত করছে তাই এখন শীত নি’বা’ড়ন করবো।
কিভাবে?
দেখতে থাকুন বলেই আশেপাশে তাকয়।পাশেই একটা খ’ড়ে’র পা’ড়া দেখতে পায়।আবার দৌড়ে গিয়ে ওখান থেকে কতোগুলো খ’ড় নিয়ে আসে।তারপর আবার আশেপাশে তাকিয়ে কতোগুলো শুকনো ডাল কুড়িয়ে নিয়ে আসে গাছের নিচ থেকে। তারপর বসে মে’চ নিয়ে খ’ড় দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
এবার আরেকটু পাশে এসে দাড়িয়ে আগুন পো’হা’ন কিছু সময় ঠান্ডা দেখবেন চলে যাবে। দায়ান কথা বাড়ায় না বিষয় গুলো সে উপভোগ করতে থাকে। কিছু সময় আগুন পোহানোর পর বলে উঠে,,, এবার আমরা কোথায় যাবো?
এবার আমরা মিষ্টি মুখ করতে যাবো আসেন আমার সাথে। তারপর একটা বাড়ির ভিতর ঢুকে যায় দায়ান কে নিয়ে।
বাড়িতে ঢুকেই দায়ান দেখতে পায় পাঁচ ছয় জন লোক বড় একটা হাঁড়ি না কি যেনো জ্বা’ল দিচ্ছে আর নাড়ছে।
সোহা এটা কি? কি করছে ওরা এসব?
আমরা যে খেজুরের র’সি খেলাম না?
হুম।
ঐটা এখানে ওরা জ্বাল দিচ্ছে।
কি করবে?
খেজুরের গুড় তৈরি করবে।
ওয়াও! ইন্টারেস্টিং ব্যাপার।
হুম। দেখতে থাকুন।
তারপর একটা ছোট ছেলে দুইটা মোড়া এনে সোহা ও দায়ানকে দেয় বসার জন্য। সোহাকে গ্রামে সকলেই কম বেশি চিনে।লোকটা আখা তে খেজুরের র’সি নাড়তে নাড়তে সোহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। সোহা ও বিনিময়ে হাসি দেয়।
খেজুরের গুড় তৈরি করতে যতোটা সময় লেগেছিলো পুরোটা সময় দায়ান একটা কথা ও বলেনি।চুপচাপ সব দেখেছো উপভোগ করেছে।সময় কতো হলো কারো সেই দিকে খেয়াল নেই। কয়েক ঘন্টা যে পার হয়ে গেছে এখানে বসে দায়ানের ধারণা ও নেই।
তারপর সোহা ও দায়ান কে গুড় এনে দেয় খাওয়ার জন্য। দায়ান মুখে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।ভেজাল মুক্ত খাঁটি গুড় এর মজাইতো আলাদা।তার উপর কি সুন্দর একটা ঘ্রাণ আসছে। এর মধ্যে একটা মহিলা প্লেটে করে ভাপা পিঠা নিয়ে আসে।
আরে ভাবি এসব কখন করল? সোহা জানতে চায় মহিলাটার থেকে।
এখনই ননদিনী নতুন মানুষ নিয়ে আসছো।নতুন চালের খেজুরের গুড় দিয়ে পিঠা খাওয়াও।বলেই মহিলা ভিতরে চলে যায়।
সোহা দায়ানকে পিঠার প্লেট টা বাড়িয়ে দিয়ে বলে নিন খান,,,আমি নিশ্চিত এতোক্ষন যা যা খেয়েছেন তার থেকে সবচাইতে বেস্ট হবে পিঠার টেস্ট। খেয়েই দেখুন।
দায়ান পিঠা নিয়ে খেতে থাকে। কোনো কথা বলেনি চুপচাপ তিনটি ভাপা পিঠা খেয়ে নিয়েছে। গ্রামের দিকে সাধারণত বড় বড় ভাপা পিঠা বানায়।শহরের ভাপা পিঠা গ্রামের ভাপা পিঠার কাছে নিতান্তই বাচ্চা।
সোহা বেশ খুশি হয়ে যায় দায়ানের পিঠা খাওয়া দেখে। আর জিজ্ঞেস করেনি কেমন লেগেছে। ভালো লেগেছে বলেই তো তৃপ্তির সাথে খেয়েছে লোকটা।
তারপর দুইজন ই আবার হাটা দেয়।
খেতের আইল ধরে হেঁটে চলেছে দু’জন। সত্যি অসাধারণ,, মাঠ খেত মাটির মিষ্টি গন্ধ হালকা বাতাস মিলেমিশে একাকার,৷,,
কিছু দূর যাওয়ার পরই বাতাসের তীব্র গতিতে একটা মিষ্টি ঘ্রাণ এসে নাকে বারি খাচ্ছে। দায়ানের খুবই ভালো লাগছে।দায়ান ঘ্রাণ টা পেয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
এই সোহা এই ঘ্রাণ টা কিসের বলোতো?
সোহা কিছু সময় চুপ থেকে পাশে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে এটা? আপনার পাশে তাকান।
দায়ান তাকিয়ে দেখে ধান খেত।তবে ধান গুলোর স্বাভাবিক রং না।দায়ানের জানা মতে ধান হয় সোনালী রং এর, এগুলো কালো। এগুলো কেমন ধান সোহা কালো কালো।
এগুলা কালোজিরে ধান বুঝলেন? এখান থেকেই মিষ্টি সুবাস পাচ্ছেন।তারপর কয়েক টা ধান ছিরে হাতে নিয়ে বলে দেখেন কেমন পোলাও পোলাও গন্ধ আহ্। এগুলো থেকেই পোলার চাউল হয় বুঝলেন?
সোহা তোমায় ধন্যবাদ দেওয়ার ভাসাই আমার নেই।উফফ এখন মনে হচ্ছে গ্রামে না এসে এসব উপভোগ না করতে পারলে অনেক কিছু মিস করে যেতাম।
আজ মনটা আমার প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য ও গ্রামের দৃশ্য দেখে পরিতৃপ্তিতে ভরে গেছে। কি যে ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে এই প্রকৃতি তে আমি ডুবে যাই।
তারপর দুইজন বাড়ির দিকে পা বাড়ায় আজকের জন্য অনেক ঘুরেছে। দায়ান ফুরফুরে মেজাজে হাসি মুখে হেঁটে চলেছে। সোহা দায়ানের আগে গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে হাঁটছে।
“ধ’নো ধা’ন্যে পু’ষ্পে ভ’রা আমাদের এই বসুন্ধরা।
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা।”
#চলবে,,,,,,,