তোমাকে শুধু তোমাকে চাই
ঊনবিংশ পর্ব
– এসব কি হচ্ছে অনিমা ?
অনিমা পেছন ফিরে চমকে উঠলো । কোনমতে বলল
– তুমি এখানে ?!
মুনিরের এতক্ষন যেটা বিস্ময় ছিল, এখন তা ক্রোধ রূপান্তরিত হল। মুনির গর্জে উঠে বলল
– এসবের মানে কি?
অনিমা ফিরে গিয়ে খাটে পা ঝুলিয়ে বসেছে। ওর পরনে এখনো রাতের পোশাক। গোলাপি টি-শার্ট আর ফ্লোরাল স্কাট। এভাবে কখনো অনিমাকে আগে দেখেনি মুনির। মাথা নিচু করে বসে থাকলেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ওর চোখ ফোলা, মুখ লাল হয়ে আছে। নিশ্চয়ই সারারাত ঘুমায়নি। অনিমা চকিতে একবার বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে বলল
– তুমি চলে যাও। আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবোনা
তারপর উঠে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। মুনির চট করে ওর সামনে চলে এল, তারপর দুই হাতে ওর কাঁধ শক্ত করে চেপে ধরে, চোখে চোখ রেখে বলল
– একটা কথা খুব ভালো করে শুনে রাখ, এই জীবনে আমি তোমাকে অন্য কারো হতে দেবো না। তুমি যতক্ষণ আমার প্রশ্নের উত্তর না দেবে, এই দরজা খোলা হবে না
অনিমা খুব কষ্ট করে নিজেকে সামলালো সাহস করে মুনিরের চোখের দিকে তাকাতে পারলো না। অন্যদিকে তাঁকিয়েই বললো
-আমি আমার বাবা মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে চাই না। তোমার ও উচিত তোমার বাবা মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী বিয়ে করা
-আমি যা করছি আমার বাবা মায়ের ইচ্ছাতেই করছি
-এটা সত্যি না। তুমি একজন কে কথা দিয়ে এভাবে তাকে ঠেকাতে পারো না
-ওয়েট আ মিনিট। তুমি আমাকে কথা দিয়ে অন্য যায়গায় বিয়ে করছ, আর আমি ঠকিয়েছি? কাকে ঠকিয়েছি আমি?
অনিমা জবাব দিল না, অনা দিকে তাকিয়ে রইল। মুনির ধমকে উঠে বলল
-কথা বলছ না কেন?
আমি এত কথা বলতে পারব না। যার সঙ্গে তোমার এনগেইজমেন্ট হয়েছে তাকে বিয়ে কর।
-মানে? কিসের এনগেইজমেন্ট?
অনিমা জবাব দিল না ফিরে যাবার জন্য উদ্দত হলো। মুনির ওর একটা হাত শক্ত করে ধরে বলল
-আমাকে বাধ্য করনা অনিমা। এমনিতেই আমার মেজাজ অনেক খারাপ হয়ে আছে। কি হয়েছে বলো আমাকে। অনিমা একটু একটু করে সবটা বললো। মুনির আশ্চর্য হয়ে বলল
-স্ট্রেঞ্জ! এই বিয়ে ব্যাপার মায়ের আগ্রহ আগ্রহই সবচে বেশি ছিল। এক সপ্তা ধরে শপিং করছে। তোমার জন্য। প্রত্যেকটা জিনিস কত আগ্রহ নিয়ে কিনছে।
-হয়তো আমার জন্য কিনছে না
– কি ফালতু কথা বলছ। দাড়াও আমি মাকে এখনি ফোন দিচ্ছি।
– না প্লিজ
মুনির কথা শুনল না। মা কে ফোন করে লাউডস্পিকার দিল
-হ্যালো মা, তোমার সাথে কি অনিমার কথা হয়েছে?
– কই আর হলো। তুইতো নাম্বার দিলিনা
ফোনের অপর পাশের কণ্ঠস্বর শুনে অনিমা চমকে উঠলো। মুনির অনিমার দিকেই তাকিয়ে ছিল, ওর চমকে ওঠা নজর এড়ালো না। মা কে বলল
– কেউ একজন তোমার নাম করে অনিমাকে ফোন করেছিল, বলেছে বিয়ে ভেঙে দিতে। আরো বলেছে কোন মিথিলার সঙ্গে নাকি আমার এনগেইজমেন্ট হয়েছে। আমার এনগেইজমেন্ট হলো অথচ আমি জানলাম না
– কি সর্বনাশের কথা। অনিমাকে ফোনটা দে তো
– অনিমা শুনছে। তুমি বল
– এসব কি শুনছি অনিমা? তুমি আমাকে জানাওনি কেন? মুনির কে তো বলতে পারতে
– আমি বুঝতে পারিনি আন্টি
– কিন্তু মা, এইরকম কারা করতে পারে? পরিচিত কেউ নিশ্চয়ই, তা না হলে এত কিছু জানল কি করে?
– দাঁড়া দাঁড়া মেয়েটার নাম বলেছে মিথিলা? মানে আমাদের মিথি? তোর মিঠু খালার মেয়ে? কি সর্বনাশ! এইজন্য মিঠু আমার কাছ থেকে সব খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জানতে চায়? দাড়া আমি এখনি ওদের দেখছি।
– ঠিক আছে মা, আমি তোমাদের জানাচ্ছি কখন আসতে হবে। আমি এখানেই আছি
বাইরে হঠাৎ হইচই এর শব্দ শোনা গেল। কারা যেন জোরে জোরে দরজা ধাক্কা দিতে লাগল। অনিমা ভয় পাওয়া গলায় বলল
– এখন কি হবে?
– মুনির দাঁতে দাঁত পিষে বলল
– আমি বলেছিলাম, সবচেয়ে বড় ঝামেলাটা তুমি বাধাবে তোমার বিয়ের দিন। এবার হলতো?
অনিমা জবাব দিল না। মাথা নিচু করে বসে রইল। মুনির দরজার ছিটকিনি খুলে একবার পিছন ফিরে দেখল। অনিমা ঐভাবেই বসে আছে। ওর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে কোলের উপর। মুনিরের হাত থেমে গেল। ফিরে এসে ও দুই হাত অনিমার মুখটা তুলে ধরে বললো
-চিন্তা করোনা
অনিমা মুখ তুলে তাকাল। তারপর বলল
-আমি মরে গেলে কি তোমার খুব কষ্ট হবে?
– এটা কি ধরনের বাজে কথা?
অনিমা হঠাৎ দুই হাতে মুনিরকে জাপটে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলো। মুনির ওকে আগলে নিয়ে বলল
– এত চিন্তা করো না। তোমাকে না নিয়ে আজকে আমি কোথাও যাব না
হঠাৎ ওরা লক্ষ্য করলো খোলা দরজায় অনেকগুলো উৎসুক দৃষ্টি ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। মুনির চট করে নিজেকে সামলে নিল। তারপর হাত তুলে বললো
– সব ঠিক আছে। আমি ওকে বুঝিয়ে দিয়েছি।
তারপর পিছন ফিরে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
– দরজা বন্ধ করে দাও, আর তুমি রেডি হয়ে যাও
মুনির বেরিয়ে যেতেই পেছনের দরজা সশব্দে বন্ধ হয়ে গেল। মুনির বাইরে বেরিয়ে পিরিস্থিতি বোঝার চেস্টা করতে লাগলো। পাত্র পক্ষের মধ্যে উচ্চসরে বাকবিতন্ডা চলছে। রুবিনা মোটামোটি হতভম্ব। যাকে সব ঠিক করতে পাঠিয়েছিলেন, সে আবার কি ঝামেলা বাধলো। মুনির সব কিছু অগ্রাহ্য হাসান সাহেবের ঘরে ঢুকে পরল।হাসান সাহেব তখন হুইল চেয়ারে বসে ফোনে কিছু পড়ছিলেন। গতবছর অনিমা তাকে একটা স্মার্ট ফোন কিনে দিয়েছে। প্রথম উনি ঠিক মতো চালাতে পারতেন না, পরে যখন শিখে গেলেন তখন আশ্চর্য হয়ে গেলেন। এখন মনে হয় পুরো পৃথিবীটা যেন হাতের মুঠোয়। এখন উনি মবাইলে পেপার পড়েন,খেলা দেখেন, গান শুনেন। চমৎকার সময় কেটে যায়। পায়ের শব্দ পেয়ে উনি চোখ তুলে তাকালেন। সুদর্শন এক যুবক ঘরে ঢুকেছে।
মুনির কাছে এসে হাটু গেড়ে বসল। তারপর বলল
-আংকেল আপনি এই বিয়েটা ভেংগে দিন। অনিমা এখানে ভাল থাকবে না
হাসান সাহেব মুখ তুলে তাকালেন। তারপর বললেন
-তুমি কি মুনির?
-জি
-তুমি কি ওকে বিয়ে করতে চাও?
জি । কিন্তু আপনি এসব কিভাবে………
হাসান সাহেব হাসলেন, কিছু বললেন না
-প্নিজ আঙ্কেল
-এই মুহূর্তে বিয়ে ভাংগা সম্ভব না। তোমার আন্টি কথা দিয়েছেন। তবে তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। আমি তোমাকে একটা পরামর্শ দিতে পারি। তোমার সঙ্গে কি আর কেউ আছে? এই প্লান কার্যকর করতে আর একজন মানুষ লাগবে।
মুনির নিজের মোবাইলে কথা শেষ করে, ঘর থেকে বের হয়ে দেখল, পাত্র পক্ষের লোকজন তাড়া দিচ্ছে। প্রথম কথা ছিল জুম্মার নামাজের পর বিয়ে পড়ান হবে কিন্তু এখন তারা আর অপেক্ষা করতে চাইছে না।মিনহাজ রুবিনার সঙ্গে গলা উঁচিয়ে তর্ক করছে। মুনির এগিয়ে এসে বলল
– একটু তো অপেক্ষা করতেই হবে
সবাই মুখ তুলে তাকাল। মিনহাজ বলল
-কেন?
-বলছি। আগে আমার পরিচয় দেই। আমি অনিমার এক্স হাসবেন্ড। আসলে এক্স বললে ভুল হবে আমাদের এখনো ডিভোর্স হয়নি। তবে আমি দিতে রাজি আছি। আমিও এই ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে চাই।
সমস্ত ঘরে পিনপতন নিরবতা।মিনহাজ কনমতে বলল
-বিয়ে হয়েছে তার প্রমাণ কি?
-এই মুহূর্তে কোন প্রমাণ নেই।আমিতো আর কাবিননামা পকেটে নিয়ে ঘুরি না। আপনারা বিশ্বাস করলে করবেন, না করলে বিবাহিত মেয়ে বিয়ে করে আইনের ঝামেলায় পরবেন। তবে আমি এই বউ রাখব না।
তৌহিদ কৌতুহল হয়ে বলল
-কেন? রাখবেন না কেন?
-কি রাখবো বলেন? একে তো ঘারত্যরা, ঝগড়াটে তার উপরে আবার এখন চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। বলে কি না অনেক কামাই করেছি এখন ঘর সংসার করতে চাই।ভেবেছিলাম ভাল ইনকাম করে একটু আরাম করব। এখন এই জিনিস দিয়ে কি লাভ?
মিনহাজ হতভম্ব মুখে রুবিনার দিকে তাকাল
-রুবিনা এইসব তো আগে বলো নাই। মেয়ের আগে একবার বিয়ে হইসে আবার চাকরি ও নাই। এই মেয়ে দিয়া আমরা কি করব? ভাবসিলাম ছেলেটা বিদেশে যাইতে পারলে ওর নামের মামলাটা……….
রুবিনা বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে। তার বিশ্বাস হচ্ছে যে এসব আসলে ঘটছে ও বলল
-আপনার ছেলের নামে মামলা আছে? কিসের মামলা?
-সেটা বড় কথা না
মুনির মাথা নেড়ে বলল
-জি আন্টি। সেটা বিষয় না
রুবিনা রেগে উঠে বলল
-তুমি চুপ কর
মুনির চুপ করে গেল। ওর কাজ শেষ। হাসান সাহেব ঠিকই বলেছিলেন চাকরির কথা বললেই এদের আসল রুপ বেরিয়ে আসবে। মুনির তাকিয়ে দেখল হাসিব ভেতরে ঢুকছে। ও আনন্দিত গলায়ে বলল
-এইত আমার বন্ধু চলে এসেছে। কাজি সাহেব আপনি তালাকের ব্যবস্থা করেন
মিনহাজ উত্তেজিত গলায় বলল
-আরে রাখেন আপনার তালাক। আমারা এই মেয়ে নিবনা। আপ্নে আপনার বউ নিয়া থাকেন।অই চল তরা।
সবাই তারাহুরো করে বেরিয়ে গেল। হাসিব হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে মুনিরের সাথে হাই ফাইভ করে বলল
-কাজ হয়ে গেছে ?
-একদম
রুবিনা সরু চোখে মুনিরের দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমাদের আসলে বিয়ে হয়েনি,তাইনা?
হাসান সাহেব ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললেন
-আগে হয়েনি, তবে আজকে হবে।
তোমাকে শুধু তোমাকে চাই
শেষ পর্ব ( প্রথম অংশ )
গাড়ি ছুটে চলেছে হাইওয়ে ধরে। মুনির স্টিয়ারিং হাত রেখে এক বার পাশ ফিরে তাকালো। অনিমা বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর মুখ ঠিক মত দেখা যাচ্ছে না, তবে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ও রেগে আছে। সাধারণত বাইরে কোথাও যাওয়ার সময় অনিমা খুব যত্ন করে সাজে। ঘন করে কাজল দেয়, পাতলা নরম বাটিকের শাড়ি পারে। সারা রাস্তা বকবক করতে থাকে। কত রকমের খাবার বানিয়ে আনে। কোলের মধ্যে ব্যাগ নিয়ে বসে থাকে। মুনির জার্নির সময় খেতে পারে না বলে কত রকম আয়োজন যে করে।
আজ ও শাড়ি পরেনি। একটা বাদামি রং এর গাউন পরেছে। চুরা খোঁপা বেধেছে, কাটা পর্যন্ত দেয়নি। কপালের পাশ বেয়ে অবাধ্য চুল গুলো ঝাপিয়ে পড়তে চাইছে চোখর উপর। মুনির এক হাতে আলতো করে সরিয়ে দিতে গেলে অনিমা মাথা সরিয়ে নিয়ে, তীব্র বৃষ্টিতে তাকালো। মুনির আর কিছু বলল না, হাসল মনে মনে। সেদিন ও এমন রেগে গিয়েছিল অনিমা। মনে হয় সেই দিনের কথা।
মিনহাজ তার দলবল নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় পর সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। হাসান সাহেব বলেছিলেন
রুবিনা, একটু চা খাওয়াও না আমাদের। সকাল থেকে বড্ড ঝামেলা গেল
মুনির ফোন করে মায়ের সঙ্গে রুবিনার কথা বলিয়ে দিয়েছে। উনারা সবাই সন্ধ্যার পরে আসবেন। সব শুনে রুবিনার রাগ পড়ে গেছে।
মুনির অনেক্ক্ষণ ধরে উশখুশ করছে। অনিমা এখানে দরজা খোলেনি। সবাই যখন চা খাওয়ায় বাস্ত তখন মুনির উঠে গিয়ে আবারো অনিমার দরজায় ধাক্কা দিল। ভেতর থেকে কনো সারা শব্দ পাওয়া গেল না। মুনিরের খুব ভয় করতে লাগলো। অনিমা কি সব যেনো বলছিল, মরে যাওয়ার কথা। ও আবার উল্টো পাল্টা কিছু করে বসেনিতো। মুনির এবার একটু গলা উচিয়ে বলল
অনিমা দরজা খোলা। প্লিজ
একটা মৃদু শব্দ করে দরজাটা খুলে গেল। মুনির ভেতর ঢুকে অনিমাকে কোথাও দেখতে পেল না। হঠাৎ দরজা বন্ধ হবার শব্দে চমকে পেছনে ফিরে ও হতভম্ব হয়ে গেল। দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনিমা। ওর পরনে নীল শাড়ী, খোলা চুল। অদ্ভুত রকমের মায়াবী লাগছে ওঁকে। মুনির স্থান কাল পাত্র ভুলে অনিমেষনেত্রে চেয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর অনিমা মুখ তুলে দেখল। ভুরু নাচিয়ে জানতে চাইল
-কি দেখছ?
-তোমাকে আগে কখনো নিল শাড়িতে দেখিনি
-দেখনি, নাকি দেখতে চাওনি?
– এটা কি ওই শাড়িটাই?
– হু
– এটা তুমি এখনো রেখে দিয়েছ? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি এটা পুড়িয়ে ফেলেছে
অনিমা হেসে ফেলল
-আমিও তাই চেয়েছিলেন কিন্তু পারিনি, তবে আজকের আগে কখনো এটা পরিনি
-কেন?
-আগে তো এটা আমার ছিল না। এই যেমন আগে তুমি আমার ছিলে না
-এখন তোমার হয়েছি?
অনিমা জবাব দিল না, মুখ নামিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মুনির হঠাৎ করেই ওর খুব কাছে এসে দাড়ালো, তারপর দুই হাতে ওর মুখটা তুলে ধরে আরো কাছে আসতে গেলে অনিমা হেসে উঠে বলল
-আরে কি করছ? বাসা ভর্তি লোক
মুনির নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
-আচ্ছা ঠিক আছে, আর তো মাত্র কয়েক ঘন্টা তারপর তো তোমাকে নিয়েই যাব
-কোথায় নিয়ে যাবে? অনিমা অবাক হয়ে জানতে চাইল
-কেন? বিয়ের পর তুমি আমার সঙ্গে যাবে না?
অনিমা জবাব দেয়ার সুযোগ পেল না, তার আগেই কেউ দরজায় টোকা দিল। বাইরে থেকে হাসিবের গলা পাওয়া গেল। মুনির দরজা খুলতেই বলল
কিরে তোদের আর তর সইছে না? এখানেই শুরু করে দিলি? কই অনিমা কই? দেখি?
মুনির হাসিবকে ভিতরে ঢুকতে দিল না।ঠেলে বের করতে করতে বলল
দেখতে হবে না। চল নামাজ পড়তে যাই
বের হবার পথে একবার পাশে তাকিয়ে দেখল অনিমা লজ্জায় রাঙা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অনিমার খুব ইচ্ছা ছিলো এই শাড়ি পরেই বিয়েটা হোক, কিন্তু রেহানা কথা শুনলেন না।বললেন
আমার একমাত্র ছেলের বউ বলে কথা। একেবারে রানির মত নিয়ে যাব
আগত্যা অনিমাকে লাল বেনারসি পরতে হল। রেহানা অনেক রকমের গয়না নিয়ে এসেছেন। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে টিকলি, পাথর বসানো চুরি। এত তারাতাড়ি মেহেদী দেয়া যাবেনা বলে গ্লিটারের টিউব নিয়ে এসেছেন। নাজমাকে বলা হলো সুন্দর করে ওকে সাজিয়ে দিতে। নাজমা ওর দায়িত্ব নিষঠার সাথে পালন করল। বউ এর সজে অনিমা যখন ঘরে ঢুকল সবাই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল।
বাদ মাগরিব আর কোন ঝামেলা ছাড়াই বিবাহ সম্পন্ন হল। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওদের বের হতে হতে রাত দশটা বেজে গেল। অনিমার মা বাবাকে ফেলে যেতে ইচ্ছা করছিল না। ও অনেক বার বলার চেস্টা করেছে আজকে যাবে না কিন্তু সুযোগ পায়নি। মুনির এত ব্যস্ত ছিল যে ওর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব ছিলো না। অন্য সবাই ও বলতে লাগলো এখান থেকে এখানে বাড়ি দুদিন পরেই চলে আসবে, তারপর প্রগ্রাম হলে একবারে সবাইকে নিয়ে নিজের বাসায় উঠবে।
বিদায়র সময় অনিমা অনেক কাঁদলো। বাবার কোলে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে রুবিনা কে বলল, যেন রাতে বাবার শরীর খারাপ করলে ওকে অবশ্যই ফোন করে।
গাড়িতে উঠার পর অনিমা আর কাঁদলো না। তবে ওর মনটা অসম্ভব খারাপ হল। ও ধারণা করেছিল মুনির হয়ত ওকে কিছু বলবে, অন্তত ওর হাতটা একবার ধরবে। কিন্তু বিদায় এর আগে থেকে মুনির কেমন যেন চুপ করে আছে। দেখে মনে হচ্ছে ওর মধ্যে কোন আনন্দ নেই। গাড়িতে বসে ও বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। কি জানি কি ভাবনায় ডুবে আছে।
বাড়িতে ঢুকে অনিমা আশ্চর্য হয়ে গেল। এত লোকজন থাকবে ও আসা করেনি। সবাই রীতি মতো বরন করে ওকে ভেতরে নিয়ে গেল। অনিমাদের বাসায় এতজনকে নেয়া যাবে না বলে সবাই এখানে অপেক্ষা করছে। অনিমাকে নিয়ে মুনিরের ঘরে বসানো হলো। একে একে সবাই এসে বউ দেখে যেতে লাগলো। মুনিরের তিন চাচা দুই ফুফু সঙ্গে তিন খালা তিন মামা সাথে তাদের ছেলে মেয়েরা।এত আত্মীয়-স্বজন অনিমা কোনদিন চোখেও দেখেনি।ওর বাবা-মা দুজনের কারোই কোন ভাই বোন নেই।
মুরুব্বীরা সবাই এসে অনিমার মুখ দেখে উপহার দিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ঘন্টাখানেক সাক্ষাতে চলে গেল। এরপর শুরু হল কাজিনদের পালা। খালাতো মামাতো সব মিলিয়ে মোট ১৩ জন কাজিন। তারাও এসেছে বিভিন্ন রকমের উপহার নিয়ে। সবার মধ্যে মুনির সবচাইতে বড়, তাই ভাই বোনদের উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। দেখা-সাক্ষাৎ পর্ব শেষ হতে হতে প্রায় সাড়ে বারোটা বেজে গেল।
অনিমার অসম্ভব ক্লান্তি লাগছে। মনটাও খুব খারাপ লাগছে। গাড়ি থেকে নামার পর থেকে মুনিরকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। এমনকি বরণের সময় ও ছিলনা। অনিমা বুঝতে পারছে না বিয়ের পর থেকে ও এরকম অদ্ভুত আচরণ কেন করছে?
আরো অনেকক্ষন পর রেহানা আর নাজমা এসে সবাইকে তাড়া দিল। সবাই ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গল্প করছিল। সব চাইতে যে ছোট কাজিন তার বয়স ৪ বছর, সে অনিমার পাশে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়েছে। রেহানা এসে বললে
এবার তোমরা সবাই বাইরে যাও। মেয়েটা ক্লান্ত হয়ে আছে। একটু বিশ্রাম নিক
তারপর নাজমাকে বললেন সব উপহার গুছিয়ে রেখে বিছানার চাদর পাল্টে দিতে, আর অনিমাকে চেঞ্জ করে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললেন।
অনিমা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখল সমস্ত ঘর পরিপাটি। নাজমা যাবার সময় দরজা টেনে দিয়ে গেছে। অনিমা আরাম করে খাটে বসলো I ও এই ঘরে আগেও এসেছে। বিছানার উল্টো দিকে একটা পেন্ডুলাম দেয়া দেয়াল ঘড়ি। অনিমা তাকিয়ে দেখল রাত দেড়টা বাজে।
মুনির ঘরে এলো আরো প্রায় ঘন্টাখানেক পরে। অনিমা হাঁটুর মধ্যে মুখ গুঁজে বসে অপেক্ষা করছিল। মুনিরকে ঢুকতে দেখে চোখ তুলে তাকাল। ওকে কেমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে, যেন অনেক পরিশ্রম করে এসেছে। অনিমাকে ওইভাবে বসে থাকতে দেখে বিরক্ত গলায় বলল
– তুমি এখনো এভাবে বসে আছ কেন? চেঞ্জ করনি?
অনিমা জবাব দিলনা। ওর মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। এতক্ষন ধরে ও এই ভাবে বসে ছিল শুধু মুনিরের জন্য। এই ভারী শাড়ি পরেছিল, যেন ওএসে এভাবে বউয়ের সাজে অনিমাকে দেখে। মুনির আলমারি থেকে ঘুমাতে যাবার পোশাক বের করতে করতে বলল
নাজমা তোমাকে কিছু দেখায়নি?
কি দেখাবে?
আশ্চর্য তো! ধরে দুটো থাপ্পড় লাগানো দরকার
অনিমা হতভম্ব হয়ে গেল। মুনির এরকম করছে কেন ? কি সমস্যা?
তোমাকে শুধু তোমাকে চাই
শেষ পর্ব ( শেষ অংশ )
অনিমা চোখ তুলে তাকালো না। ওর চোখ জলে ভরে গেছে। মুনির ওর একটা হাত ধরে আলমারির কাছে নিয়ে গেল, তারপর বলল
আলমারিটা খোলো।
অনিমা আলমারি খুললো না। উল্টো দিকে ঘুরে আলমারির দরজায় হেলান দিয়ে বলল
কোথায় ছিলে এতক্ষণ?
বলছি। আগে আলমারিটা খোলো।
না, আগে বলো।
মুনির বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল
ঘাড়ত্যারা বউ চেয়েছিলাম বলে প্রথম রাত থেকেই শুরু করে দিলে।
অনিমা জবাব দিল না। প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মুনির হাল ছেড়ে দেয়া ভঙ্গিতে বলল
বাবা মা কে আনতে গিয়েছিলাম।
কোথা থেকে আনতে? ওনারা তো এখানেই।
আমার বাবা-মা না। তোমার বাবা-মা কে।
অনিমা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বলল
এখন নিয়ে এলে? কেন?
তুমি আসার সময় যে-রকম কান্নাকাটি শুরু করলে। মনে হচ্ছিল তোমার শরীরটাই শুধু নিয়ে যাচ্ছি। মনটাতো পড়ে থাকবে ওখানেই। আর শুধু….
মুনির নিজের কথা শেষ করতে পারল না।তার আগেই অনিমা ওকে দুইহাতে জাপটে ধরে বুকের মধ্যে মুখ গুজে বলল
আমাকে এটা আগে বলতে পারলে না? আমি এতক্ষন ধরে ভাবছিলাম…….
মুনির হাসতে হাসতে বলল, ‘কি ভাবছিলে? আমি পালিয়ে গেছি?’
– নয়তো কি? তুমি তো এই বউ রাখতে চাও না।
মুনির হো হো করে হেসে উঠলো। তারপর বলল
আচ্ছা হয়েছে, এবার চেঞ্জ করে নাও। আলমারিটা খোলো।
খুলবো না।
আস্তে। কেউ শুনলে কি ভাববে?
তুমি একটা অসভ্য লোক।
আলমারি খুলে অনিমা আশ্চর্য হয়ে গেল। দুটো তাক ভর্তি নানান রকমের শাড়ি। তাত মসলিন, জামদানি, বাটিক কোনটার অভাব নেই। অনিমা অবাক হয়ে বলল
এত শাড়ি কার?
তোমার।
কে কিনেছে?
আমি।
কবে?
গত এক বছর ধরে আমার কোন শাড়ি পছন্দ হলে অনলাইনে কিনে রাখতাম। তুমি এখান থেকে একটা নিয়ে পরে ফেলো।
অনিমা একটা গোলাপি রং-এর বাটিকের শাড়ি বের করল। মুনির ততক্ষণে ওর জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেছে। অনিমা ঝটপট চেইঞ্জ করে নিল। খোপাটা খুলে চুল ছেড়ে দিল। তারপর বিছানায় এসে বসলো। মুনির ওর পাশে বসে চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দিতে দিতে বলল
একটু কাজল দিতে পারতে।
কাজল দিয়ে আমি ঘুমাতে পারিনা। সকালবেলা ভুতের মতন লাগে দেখতে।
আজকে রাতে ঘুমাচ্ছে কে?
এরকম অসভ্যের মতন কথা বলো কেন সবসময়।
যা বাবা! আমি আবার কি বললাম? এখন বাজে রাত পৌনে তিনটা। আরেকটু পরে তো সকালই হয়ে যাবে। তোমার মাথাতেই যত উল্টাপাল্টা চিন্তা ঘুরছে।
অনিমা লজ্জা পেয়ে উঠে দাঁড়াল।
– কোথায় যাচ্ছ?
– কাজল দিতে।
-গুড। আর একটা কথা। তুমি যেটা ভাবছিলে সেটা হলেও সমস্যা নেই।
অনিমা তীব্র দৃষ্টি হেনে আয়নার সামনে এগিয়ে গেল। এই ঘরে কোন ড্রেসিং টেবিল নেই। অনিমা ওর হ্যান্ডব্যাগ খুলে কাজল বের করল। আলমারির আয়নার সামনে দাড়িয়ে গাঢ় করে কাজলের টান দিয়ে পেছনে ফিরে বলল
এবার ঠিক আছে?
একদম। তোমাকে দেখে ওই কবিতাটা মনে পরে গেল—
কোনটা?
মুনির এগিয়ে এসে দুই হাতে ওর মুখটা তুলে ধরে বলল
“শোনো কাজল চোখের মেয়ে,
আমার দিবস কাটে বিবশ হয়ে তোমার চোখে চেয়ে…”
গাড়ির হর্নের শব্দে মুনিরের ধ্যান ভাংলো। আচ্ছা, আজ কি অনিমা কাজল দিয়েছে? না দিলে বুঝতে হবে ও সত্যি রেগে আছে। মুনির পাশ ফিরে তাকালো। অনিমা এখনো বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখ দেখা যাচ্ছে না। মুনির চকিতে একবার ব্যক-ভিউ মিররের দিকে তাকিয়ে বলল
মুনিয়া পাখি তোমার কি খিদে পেয়েছে?
পেছনের সিটে ওদের পাচ বছরের মেয়ে বসে হেডফোন দিয়ে গান শুনছিল। ডাক শুনে বলল
না বাবা।
তোমার মা কে জিজ্ঞেস করো তো তার খিদে পেয়েছে কিনা।
অনিমা বাইরের দিকে তাকিয়েই বলল
আমাকে নিয়ে ভাবতে বারণ করে দাও মুনি।
মুনিয়া বলে দাও না খেলে ভাই এর কষ্ট হবে।
মা এর চেয়ে মাসির দরদ বেশি দেখাতে মানা করো।
মাসি দেখাচ্ছে না , ছেলের বাবাই দেখাচ্ছে।
এই পর্যয়ে মুনিয়া বিরক্ত হয়ে বললো
তোমরা নিজেরা কথা বলতে পারোনা ? এতো বিরক্ত কর কেন?
মুনির একটা রেস্তরাঁর সামনে থামলো। দুপুর গড়িয়ে গেছে। নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছে ওদের। মুনির ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়েছে। অনিমা সেটাও করেনি। এবারে ওর বেশ কষ্ট হচ্ছে। সকালে একেবারেই খেতে পারেনা। মুড সুইং ও হচ্ছে খুব। এর মধ্যেই বায়না ধরেছে সিলেট যাওয়ার। মুনির রাজি হয়নি। এই অবস্থায় এতো সিড়ি ওঠা নামা ঠিক হবে না ওর জন্য। পাহাড়ের উপর একটা কটেজে থাকতে চাইছিল ও। মুনির প্রথম কিছু বলেনি। পরে যাত্রা শুরু করার আগে অনিমা জানতে পারে যে, ওরা কক্সবাজার যাচ্ছে। তখন থেকেই রেগে আছে।
অনিমাকে কিছু খাওয়ানো গেল না। মুনির মেয়েকে খাইয়ে নিজেদের খাবার প্যাক করে নিল। হোটেলে পৌছাতে পৌছাতে রাত হয়ে গেল।
পথের ধকলে অনিমা ক্লান্ত হয়ে গেছে। স্নান করে ঘুমিয়ে পরেছে। চুল ছড়িয়ে। মুনির বারান্দায় মেয়েকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে। মুনিয়ার চোখে ঘুমের লেশ মাত্র নেই। একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে বাবাকে।
মা তোমাকে ভালবাসে না কেন বাবা?
কে বলেছে ভালবাসে না?
তাহলে শুধু ঝগড়া করে কেন?
মুনির রেলিং-এর কাছে দাঁড়িয়ে দূরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সমুদ্রের সবুজাভ ঢেউ নজরে আসছে। জলের ধারে কয়েকজন মানুষ দেখা যাচ্ছে। মুনির ওই দিকে আঙুল তুলে বলল
তুমি কি ওই লোকটার সঙ্গে ঝগড়া করবে?
না। ওকে তো আমি চিনিই না।
ঠিক। বাবা বেলুন না আনলে কিন্তু তুমি বাবার সাথে ঠিকই ঝগড়া করো।
তুমিতো বাবা।
সেই তো। আমি তোমার বাবা আর তুমি আমাকে ভালবাসো তাই তো ঝগড়া করো। তেমনি তোমার মাও আমাকে অনেক ভালোবাসে।
আমার চেয়েও বেশি?
সবার চেয়ে বেশি।
মুনিয়া ওর ছোটো ছোটো দুই হাত দিয়ে বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলল
না, আমি বাবাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।
আচ্ছা আচ্ছা। আমার মুনিয়া পাখি আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।এবার ঘুমিয়ে পরো তো পাখি।
ঘুম আসছে না।
কি করলে ঘুমাবে?
গান; না গল্প বলো।
তুমি একেবারে তোমার মায়ের মতো করো। কিসের গল্প শুনবে বল।
রাজার; না ভুতের..
আচ্ছা। এক ছিলো এক ভুত তার নাম ছিলো মুনিয়া….
না। আমি ভুত না।
মুনির হাসতে হাসতে বলল
এক ছিলো এক রাজকন্যা তার নাম ছিলো মুনিয়া। ওর একটা পোষা ভুত ছিলো তার নাম ছিলো……
অনিমার ঘুম আসছেনা। ও বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে; আর কান পেতে মুনিরের গল্প শুনছে। মুনির যে এতো মজার গল্প বলতে পারে এটাতো ও আগে জানতাই না।
খুব অস্থির লাগছে। খিদেও পেয়েছে। অনিমা ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে দেখল মুনির মেয়েকে বিছানায় শুইয়ে কম্বল দিয়ে দিচ্ছে।অনিমা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। এতো বছরেও ওর মুগ্ধতা এতোটুকু কমেনি বরং বেড়েছে। আজও এই মানুষটিকে দেখলে তেমনই লাগে যেমনটি আজ থেকে সতেরো বছর আগে লাগতো।
মুনির মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
অনিমা চলো খাই। খিদে পেয়েছে।
কি এনেছ?
কাচ্চি। গরম করতে হবে।
আমি করছি।
অনিমা খাবার গরম করে টেবিলে দিলো। খুব আগ্রহ নিয়ে বসলেও বিশেষ একটা খেতে পারলো না। মুনির লক্ষ করে বলল
ভালো না লাগলে খেয়ো না। অন্য ব্যাগে কলা আর ব্রেড আছে। ওটা খাও।
হুম..
মুনির এখনো সবকিছু কী করে খেয়াল রাখে! ওর নিজেরইতো মনে থাকে না।অনিমা খাওয়া শেষ করে বারান্দায় যাচ্ছিল; মুনির ওর একটা হাত টেনে ধরে বলল
ওষুধ কে খাবে?
অনিমা দাত দিয়ে জিভ কেটে বলল
সরি। ভুলে গেছি।
রাত বেশ গভীর হয়েছে। অনিমার ঘুম আসছে না। ও বারান্দার চেয়ারে বসে দূরে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ আকাশ খুব পরিষ্কার; অনেক তারা মিটমিট করছে। অনিমা উদাস হয়ে বসে রইল। মুনির কখন এসে পায়ের কাছে বসেছে টের পেলো না। মুনির ওর মাথাটা অনিমার কোলের উপরে রেখে বলল
এখানে একা একা বসে কি করছো?
ঘুম আসছে না।
মেয়েকে তো গল্প বলে ঘুম পাড়াতে হলো। তোমার জন্য কি করবো বলো?
অনিমা ওর চুলের মধ্যে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
গান শোনাও।
যথা আজ্ঞা।
মুনির ওর কোলের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে গান শুরু করলো
তোমার নামের রোদ্দুরে
আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে
জানি না যাব কতদুরে এখনও…
আমার পোড়া কপালে
আর আমার সন্ধ্যে সকালে
তুমি কেন এলে জানি না এখনও…
ফন্দি আটে মন পালাবার..
বন্দি আছে কাছে সে তোমার
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও, তোমাকেই চাই
হুঁ.. যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও তোমাকেই চাই
সমাপ্ত