প্রণয়ে দহন পর্ব -০১

থাপ্পড়টা পড়তে ই বেশ রাগি লুক নিয়ে লোকটা আমার দিকে তাকালো, আমি ভয়ে দুচোখ বন্ধ করে ফেললাম। লোকটির চিৎকারে আবার চোখ খুলতে বাধ্য হলাম।

-কি ব্যাপার আপনি আমাকে থাপ্পড় মারলেন কেনো?

-সরি আপনাকে মারতে চাইনি, আমি তো আমার বোনকে থাপ্পড় মারতে গিয়ে আপনার গালে লেগে গেছে। আমার বোন শাহির দিকে হাত দিয়ে দেখচ্ছিলাম কিন্তু শাহির দিকে তাকাতে ই খেয়াল করলাম শাহি উধাও..

-ওহ আচ্ছা কোথায় আপনার বোন

কথাটা বলার সাথে সাথে আমার গালে ও সজোড়ে একটা থাপ্পড় পরে।

কাঁদো কাঁদো চোখ নিয়ে তাকাতে ই লোকটা বলে উঠলো,

-সরি আমি আপনাকে থাপ্পড় মারতে চাইনি আমার ড্রাইভারকে মারতে গিয়ে আপনার গালে লেগে গেছে।

কথাটা বলে ই হাসি দিয়ে লোকটি চলে গেলো। আমার কান্না করে দিতে ইচ্ছে করছে।

আসছি একটা অফিসে চাকুরির ইন্টারভিউ দিতে। এখন দেখে অফিসে ঢুকার আগে ই কপালে শনি মঙ্গল সব ঘটে গেছে।

হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকাতে ই দেখলাম ১০ টা বেজে গেছে অতীতে ঘটে যাও আমার সব কষ্ট বুকে চেপে অফিসের ভেতরে ঢুকলাম। গুটিগুটি পায়ে ওয়েটিং রুমে গিয়ে বসলাম।
কিছুক্ষণ পর ই দেখলাম সেই থাপ্পড় খাওয়া এবং আমাকে থাপ্পড় খাওয়ানো লোকটা বের হয়ে আসছে আর সবাই তাকে গুড মর্নিং স্যার বলে সম্মোধন করছে।

এই অফিসের পিয়ন আমার হয়। চাচা দেখে ইশারায় এদিকে আসতে বললাম আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম,

-লম্বা জিরাফের মতন যে একটা লাম্বু গেছে এটা কে কাকা?

প্রশ্ন শুনে কাকা বেশ ভয় পেলো মনে হচ্ছে। চোখ দুটো রসগোল্লা মতো করে বললো,

-উনি এই অফিসের বস। কোম্পানি উনার ইমতিয়াজ স্যারের ছেলে শুভ্র। শুভ্র স্যার কিন্তু বেশ ভালো মানুষ।

-হে তোমাকে বলছে ভালো।

-তুই জানিস কিভাবে খারাপ উনি? আজ ই তো প্রথম দেখলি…

-আমি সব জানি।

-সব জানিস যে এই জন্য ই তোর কোথাও চাকুরী হয় না। আর এই চাকুরী টা ও যদি না হয় তো পাড়ার মোড়ের দোকানীর সাথে বিয়ের পাকা কথা দিয়ে দিতে বলবো।

এইটুকু বলে ই কাকা হনহন করে চলে গেলো।

বসে বসে ভাবছি আমার বোন শাহির কথা। শাহিকে নিয়ে এসেছিলাম আজকে আমার সাথে অফিসের গেইটের ভেতর ঢুকতে ই শাহির ফোন আসে। ওর নাকি কোন ফ্রেন্ড কল দিয়েছে ইমারজেন্সি যেতে হবে তাই সে চলে যাবে। এটা শুনে রাগে থাপ্পড় মারতে গেলে ই ও নিচে বসে যায় আর এই শুভ্র নামের বদ লোকটার গালে থাপ্পড়টা পড়ে। এই মেয়েটার জন্য আজ এতো কাহিনি হয়ে গেলো। এই চাকুরীটা ও যে হবে না তা বেশ ভালোই জানি তাও ইন্টারভিউ না দিয়ে বের হলে মামি আমাকে আস্ত রাখবে না আজকে।

–মিস অহনাকে ভিতরে যান।

বসা থেকে উঠে দ্রুত রুমের ভিতরে ঢুকলাম। আমি ঢোকার সাথে সাথে শুভ্র স্যারের পাশে বসে থাকা বাকি দুইজনকে বললেন,
–আপনারা চলে যান উনার ইন্টারভিউ আমি নিবো,
শুভ্র স্যার কথাটা আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো।

উনার দিকে তাকিয়ে আমি বেশ ভয় পেলেম জানি তো চাকুরীটা হবে না তাও এতো ভয় দেখানোর কি আছে।

বাকি দুইজন লোক উঠে চলে গেলো। আমার সিভিটা আমার দিকে ছুড়ে দিয়ে বললো

-মিস অহনা আপনার নাম তাই না যে আমাকে একটু আগে থাপ্পড় মেরেছিলো,

-সরি স্যার আসলে আমি আপনাকে ইচ্ছে করে থাপ্পড় মারিনি

তৎক্ষনাৎ আমাকে থামিয়ে দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে আমার দিকে আসতে আসতে বললো, আসলে আমি আপনাকে কোনো রকম প্রশ্ন করবো না তবে একটা কথা মনে রাখবেন মিস অহনা যদি আপনি চাকুরী টা পেতে চান তাহলে এক বছরের কন্টাক্ট পেপারে সাইন করতে হবে। আর এই এক বছরে ৩৬৫ দিন আপনি সারা জীবন মনে রাখবেন। এবং আপনার অফিস টাইম হবে সকাল ৬ টা থেকে আর আমি না বলা অব্দি বাসায় যেতে পারবেন না

-সরি স্যার আমি কোনো কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করতে পারবো না।আর এই চাকুরী ও আমার কোনো প্রয়োজন নেই।

-যাওয়ার আগে একটা কথা শোন।যদি ভুল করে ও তোমার আমার মধ্যে কথাগুলো তোমার চাচা জানতে পারে তাহলে তোমার চাচার চাকুরী টা শেষ। যদি মনে করো চাকুরী টা তোমার লাগবে তো চলে এসো।

কেমন অভদ্র ব্যবহার মনে মনে হাজার খানেক বকা দিতে দিতে বেড়িয়ে গেলাম অফিস থেকে। করবো না এমন চাকুরী। যেখানে আমার কোনো সম্মান নাই ঐখানে আমার চাকুরীর কোনো প্রয়োজন নাই।

হাতে থাকা ব্যাগটা খুলে দেখলাম ব্যাগে পাঁচ টাকা একটা কয়েন পড়ে আছে । অনেকটুকু রাস্তা আমার হেটে ই যেতে হবে। এতে আমার কোনো কষ্ট নেই। রোজগার যেখানে করতে পারি না সেখানে আমাকে যে আসার ভাড়াটা দিয়েছে এটা ই অনেক।

প্রায় একঘন্টা হাটার পর বাসায় পৌছালাম। মামি আমাকে দেখো ই দৌড়ে আসলো।

— কি রে চাকুরীর কি হলো, শোন চাকুরীটা না হলে এবার তোকে বাড়ি ছাড়তে হবে। তোকে আমি বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে পারবো না।

আমি কোনে কথা না বলে চুপ করে রুমে ডুকে গেলাম।আজ যদি বাবা মা বেচে থাকতো তাহলে হয়তো জীবনটা অন্য রকম হতো। আমি তো জানিও না আমার বাবা মা আছে নাকি মরে গেছে। বুঝতে শিখার পর থেকে মামা মামিকে ই দেখেছি তাদের কাছে বাবা মার কথা জনাতে চেয়েছি। উনারা বলে আমি অনাথ। আমার কোনো মা বাবা নাই।

এই দুনিয়াতে আমার খোজ খবর রাখার জন্য শুধু শাহি ই আছে একটু আমার কষ্টগুলো বুঝে আর কেউ না। যদি ও শাহি মামির ই মেয়ে,শাহি আমাকে নিজের বোনের মতো ভাবলে ও মামি মেয়ে ভাবতে পারে না।

এসব ভাবতে ভাবতে ফ্রেশ হয়ে জামাটা চেঞ্জ করে নিলাম।চুপ করে টেবিলের বসে আছি। আমি জানি এখন খেতে গেলে ই চাকুরীর কথা জিজ্ঞেস করবো তাই যাবো।

-আপু তোর ইন্টারভিউ কেমন হলো।

চোখ তোলে শাহির দিকে তাকাতে ই দাত বের করে হাসি দিয়ে বললো,

-সরি মাফ করে দে।

-তোর মতো শয়তান মাইয়া যদি কারো আশেপাশে থাকে তার কপালে চাকুরীর চ ও লিখা নাই।

-আমি আবার কি করলাম।

– তের জন্য আমি যে ছেলেটার গালে চড় মারলাম সে ঐ অফিসের বস।

কথাটা শুনে শাহির মুখখানা ও চুপসে গেলো।আমি আর কোনো কথা না বলে টেবিলের উপর মাথা নিচু করে বসে আছি।

রাতে হঠাৎ পিয়ান চাচা বাসায় আসলো, মামিকে সাথে নিয়ে আমার রুমে ঢুকলো,

-তোর চাকুরী তো হয়ে গেছে, কাল থেকে ই স্যার যেতে বলছে।

কথাটা শুনে ই মামি খুশিতে গদগদ করতে লাগলো।

-আমি চাকুরী টা করতে পারবো না।

মুহুর্তে ই মামি মুখটা মলিন হয়ে গেলো। রাগি চোখগুলো নিয়ে জিজ্ঞেস করলো কেনো,

-মামি অফিস টাইম সকাল ৬ টা থেকে উনি যতক্ষণ না বলবে ততখন আসতে পারবো না। আর আমি যদি সারাদিন অফিসে থাকি তোমাকে রান্না করে দিবে কে। তোমার সব কাজ করে দিবে কে?

-ঐসব আমি জানি না। তুই হয় চাকুরী টা করবি নয়তো ঐ দোকানীর সাথে তোর বিয়ে দিয়ে দিবো। আমি আর এই আপদ ঘাড়ে বয়ে বেড়াতে পারবো না আমার সংসারের উটকো ঝামেলা তুই। তোর মামা তো অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে সংসারটা কিভাবে চলে একবার ভেবে দেখেছিস।

সবাই রুম থেকে চলে গেলো। কি আর করবো কালকে সকালে শুভ্র স্যারের সকল শর্ত মেনে চাকুরীটা করতে ই হবে।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে সকল কাজ শেষ করতে করতে নয়টার মতো বেজে গেলো, রেডি হয়ে অফিসে যেতে যেতে দশটা বেজে গেলো।

রিসিপশনের মেয়েটা জিজ্ঞেস করলো,

-তুমি কি শুভ্র স্যারের পি.এ। নতুন জয়েন করেছেন।

-জ্বি।

-আচ্ছা স্যারের রুটা বাম দিকে স্যার অফিসে ই আছে আপনি ঐখানে যান।

ভয়ে ভয়ে পা বাড়াচ্ছি কালকে যে এতো বড় গলায় বলে গেলাম আমি চাকুরী টা করবো না আজকে জানি কি বলে। ভেতরে ঢুকবো করে ভয় লাগছে তাই দরজায় পিঠ লাগিয়ে দাড়িয়ে ভাবছি কি করবো, ঠিক তখন ই দরজা খুলে গেলো। পড়ে যেতে নিলে শুভ্র স্যার আমাকে হাত দিয়ে ধরে ফেলে…..

চলবে,

#প্রণয়ে_দহন
#পর্ব_১
#writer_nahida_islam

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here