প্রণয়ে দহন পর্ব -০২

#প্রণয়ে_দহন
#পর্ব_২
#writer_nahida_islam

ভয়ে ভয়ে পা বাড়াচ্ছি কালকে যে এতো বড় গলায় বলে গেলাম আমি চাকুরী টা করবো না আজকে জানি কি বলে। ভেতরে ঢুকবো করে ভয় লাগছে তাই দরজায় পিঠ লাগিয়ে দাড়িয়ে ভাবছি কি করবো, ঠিক তখন ই দরজা খুলে গেলো। পড়ে যেতে নিলে শুভ্র স্যার আমাকে হাত দিয়ে ধরে ফেলে।

-কানা নাকি চোখে দেখেন না?

আমি শুভ্র স্যারের হাত ছাড়িয়ে স্বাভাবিক হয়ে বললাম।

-সরি স্যার

-আপনার নাম জানি কি?

-অহনা রহমান।

-আপনার নাম অহনা রহমান না হয়ে ভুল রহমান হওয়া উচিত ছিলো। দেখে ই মনে হচ্ছে দিনে হাজারটা ভুল করবেন আর সরি বলবেন।

কথাটা শুনে বেশ রাগ হলো

_ আপনি রাগ ও করতে জানেন। দেখে ভালো লাগছে। আপনাকে আমি ৬ টায় আসতে বলছিলাম এখন ক’টা বাজে? আর বেশ তো ভাব দেখিয়ে কালকে চলে গিয়েছিলেন জবটা করবেন না তাহলে আজকে কি মনে করে আসলেন?

-সরি লেট হয়ে গেলো কালকে থেকে ঠিক টাইম মতো আসবো। আর আমি বুঝিনি আপনার অফিস দশটা থেকে, আমি ছয়টা বেজে এসে কি করবো।

— অফিসে না আমার বাসায় যাবেন। এতো কথা বলতে পারবো না। টেবিলের উপর ফাইলগুলো রাখা আছে বিনা শব্দে নিচতলায় ফাইলগুলো রেখে আসুন। লিফটে না সিড়ি দিয়ে নিচে নামবেন।

একদমে কথাগুলো বলে শুভ্র চলে গেলো। আমি ভাবছি আছি চার তলাতে।নিচে নামতে সিড়ি দিয়ে কতক্ষন লাগবে।কি আর করবো সবই কপাল।

ফাইলগুলো নিয়ে নিচে নামতে নামতে ভাবছি পি.এ নাকি আমি পিয়ন আল্লাহ ই জানে।

-আরে অহনা তুই এগুলো নিচ্ছিস কেনো। আমাকে দে।

-অশুভ্র আমাকে এগুলো নিচে নিয়ে যেতে বলছে কাকা।

-এসব স্যার শুনতে পারলে তোকে কিন্তু চাকুরী থেকে বের করে দিবে।

ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে বললাম,

-তাতে আমার কিছু আসে যায় না।

-তোর মামির কথা মনে কর সব আসবে যাবে।

-উফফ এসব আর মনে করিয়ে দিও না প্লিজ আমি এখন যাই।

শুভ্রের কেবিনে ঢুকতে ই দেখলাম ফাইলে কি জানি দেখছে।নিচের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-ফাইলগুলো রাখা হলো?

-জ্বি স্যার।

-আমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে নিয়ে আসুন দ্রুত।

দৌড়ে গিয়ে কফি বানিয়ে আনলাম। কফিটা দেওয়ার সাথে সাথে বললো,

-যে ফাইলগুলো নিচে রেখে এসেছেন ঐগুলো আবার উপরে নিয়ে আসুন।

-তাহলে আপনি নিচে রেখে আসতে বললেন কেনো?

-বস আপনি না আমি?

রাগটুকু কন্ট্রোল করে বললাম,

-আপনি।

-তাহলে আমি কি আপনার অর্ডারে কাজ করবো নাকি আপনি আমার অর্ডারে কাজ করবেন?

-আপনার অর্ডারে আমি কাজ করবো।

-তাহলে এরকম প্যাচার মতো মুখ না করে ফাইলগুলো নিয়ে আসুন।

-কী আমার মুখ প্যাচার মতো?

-বেশি কথা না বলে কাজ করুন।

ইসস ভাবটা দেখো কেমন,
ইচ্ছে করছে আপনার মাথায় বোম ছুড়ে মারি।

-সে সময় হলে দেখা যাবে কে কার মাথায় বোম ছুড়ে মারে

নিজের কপালে নিজে ই চাপড়াই। এতো আস্তে বললাম তাও শুনে ফেললো।

যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে ই আবার ডাকলো,

-কালকে সকাল ৬ টার মধ্যে আমার বাসায় থাকবেন। আপনার ফোন নাম্বার দিয়ে যান আমি এড্রেস এসএমএস করে পাঠিয়ে দিবো। সকালে যাওয়ার পর আমার জন্য ব্রেকফাস্ট বানাবে আমাকে ঘুম থেকে জাগাবে আর, অফিসে যাওয়ার জন্য জামা কাপড় রেডি করবে।

-এমা আমি কি আপনার বউ নাকি?

কথাটা বলে ই বেশ লজ্জা পেলাম।

-আমার এতোটাও খারাপ দিন আসেনি। আপনাকে বিয়ে করতে হবে।সকালে রিসিপশনের যে চুক্তি পত্রে সাইন করছো তা কি ভালোভাবে পড়েননি। সবগুলো উল্লেখ ছিলো ঐখানে।

উফফ আমি কি করবো আল্লাহ। সব কিছু পড়ে দেখেনি লেট করে অফিসে এসেছি তাই। সব পড়ে দেখে ই কি করতাম চাকুরীটা তো আমার প্রয়োজন ছিলো।

________________

শাহি সন্ধ্যায় বারান্দায় বসে আছে, চাদর মুড়ি দিয়ে পাশে মোমবাতি জ্বালানো। বিদুৎ বিল অনেকগুলো একসাথে জমে ছিলো দিতে পারেনি তাই লাইন কেটে দিয়েছে। অনেকক্ষন যাবৎ শাহি বসে আছে, কিন্তু অহনার আসার নাম ই নেই।
হঠাৎ অন্ধকারে কারো উপস্থিতি খেয়াল করলো। জুতা গুলা ছুড়ে ফেলে দরজার সামনে বসে পড়লো অহনা।

-জুতাগুলো ও ছিড়ে এসেছিস আজকে। কাল থেকে খালি পায়ে অফিসে যাবি।

–উফ মামি ভালো লাগছে না।

-আরেহ্ একদিন অফিস করে তো ভালোই দেমাক দেখানো শুরু করলি। বলি এখন জামাটা বদলে রান্না করে চলে আয়। নবাবজাদী মতো বসে থাকলে রান্নাটা করবে কে বল তো। আমি ও সারাদিন খেটে মরি এখন রান্না করতে পারবো না।

উঠে ফ্রেশ হয়ে, জামা চেঞ্জ করে সব রান্নাবান্না শেষ বিছানার বসতে ই ঘড়িটা দিকে চোখ গেলো। দ্রুত এলাম সেট করলাম।

ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ করতে ই ঘুমের জন্য আর চোখ খুলতে পারিনি

সকাল ঠিক ৫ঃ৫৯ মিনিটে মেইন গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছে অহনা। গেইট খোলে দিতে ই ভেতরে প্রবেশ করলো। চারাপাশে বাহারি রঙের গাছের সমাহার। সব কিছু দেখতে দেখতে অহনা অহনার বেশকিছুটা দূরে বড় একটা অট্টালিকা দেখতে পেলো। সামনে যেতে ই একটা বয়স্ক লোক কাছে পানি দেওয়া রেখে অহনাকে জিজ্ঞেস করলো,

-তুমি কে মা।

-আসলে শুভ্র স্যার আমাকে আসতে বলছে।

-ওহ্ আচ্ছা। তাহলে ভেতরে যাও।

লোকটা আবার নিজের কাজে মন দিলো আমি ডেকে জিজ্ঞেস করলাম এই বাসাটা এতো স্তব্ধ কেনো? এই বাসায় কে কে আছে?

উওরটা আসলো

–শুভ্র ছাড়া কেউ ই থাকে না।

বেশ অবাক হলাম এমন কথায় সাথে ভয় ও পেলাম। তাহলে কেনো ডাকলো আমাকে যেখানে উনি একা থাকে। এরকম নির্জন বাসায় কি আমার যাওয়া ঠিক হবে। ব্যাগে একটা ছু*রি আছে যদি ভুলভাল কিছু করে বসে তাহলে ছু*রিটা কাজে লাগাবো।

এসব ভাবতে ভাবতে বাসার ভেতরে প্রবেশ করলাম। বাসাটা বেশ গুছানো। চারদিকে চোখ বুলিয়ে সিড়িদিয়ে উপরে গিয়ে কয়েকটা রুম খুজে একটা রুম দেখলাম ভেতর থেকে লক করা। দরজার মধ্যে জোরে কয়েকটা লাথি মারলাম।

-এই দরজায় লাথি দিচ্ছে কে রে।

ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে শুভ্র দরজাটা খোলতে ই অহনা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। ফর্সা কপালের উপর লম্বা লম্বা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে বসে আছে।

মুহুর্তে ই শুভ্র আবার নিজের জায়গায় গিয়ে৷ শুয়ে পড়ল। অহনা নিজের মাথায় নিজে ব্যাগ দিয়ে আস্তে করে বারি দিয়ে ভাবলো এগুলা কি দেখতেছি।

হঠাৎ অহনার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো আমাকে এতো সকালে ঘুম থেকে উঠিয়ে আপনার কামলা খাটানোর জন্য, নিজের বাসায় ডেকে নিয় আসছেন আপনার ঘুমের ও বারোটা বাজিয়ে দিবো।

যেই ভাবনা সেই কাজ। অহনা ওয়াশরুম খুজে বের করলো। বালতিতে অর্ধেক বালতি পানি নিয়ে আস্তে করে শুভ্রর রুমে ডুকলো। এই ঠান্ডা মধ্যে ঠান্ডা পানি শুভ্রের উপর ঢেলে দিতে ই শুভ্র ভুত দেখার মতো উঠে বসে।

-এই মেয়ে তুমি এটা কি করলে?

-সকালে ঘুম থেকে উঠতে কত কষ্ট হয় তা বুঝার জন্য আপনার একটা প্রেক্টিক্যাল ক্লাস নিলাম। আমি যদি সকালে উঠে সব কাজ শেষ করে আপনার বাসায় এসে আবার আপনার সব কাজ করতে পারি তাহলে আপনি কেনো সকালে উঠতে পারবেন না।

শুভ্র বেশ রাগি লুক নিয়ে বললো ওহ আচ্ছা তাহলে তোমাকে ও আমি প্রেক্টিক্যাল ক্লাস নিচ্ছি এই বলে ই অহনার হাত ধরে টান মারে, টাল সামলাতে না পেরে উপরে পড়ে যায়……

চলবে,

[ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here