প্রণয়ে দহন পর্ব -০৩

#প্রণয়ে_দহন
#পর্ব_৩
#writer_nahida_islam

শুভ্র বেশ রাগি লুক নিয়ে বললো ওহ আচ্ছা তাহলে তোমাকে ও আমি প্রেক্টিক্যাল ক্লাস নিচ্ছি এই বলে ই অহনার হাত ধরে টান মারে, টাল সামলাতে না পেরে উপরে পড়ে যায়। শুভ্র উঠে দাড়িয়ে যায়। অহনা পানির উপরে ই পরে আছে হালকা হালকা ভিজে গেছে। কাঁদো কাঁদো মুখখানা নিয়ে উঠে দাড়িয়ে বললো,

-আরে এটা কি করলেন আপনি?

-তোমাকে আংশিক কপি করলাম।

-এখন আমি এই ভেজা কাপড় নিয়ে কি করবো?

-বাহিরে গিয়ে রোদে দাড়াতে পারো।

-এতো সকালে রোদ পাবো কোথায়?

– তাহলে তুমি চাইলে আমার প্যান্ট শার্ট পড়তে পারো।

-বদ লোক

-সার্টিফিকেট চাইনি তোমার কাছ থেকে। যাও গিয়ে আমার জন্য ব্রেকফাস্ট বানাও। আমি ফ্রেশ হবো এখন তুমি যেতে পারো। আর কখনো এমন করলে পুকুরে এক ঘন্টার জন্য চুবিয়ে আনবো।

আমি আর একমুহূর্তে ও দাড়ালাম না। দ্রুত নিচে নেমে কিচেন খুঁজে বের করলাম। ফ্রিজ থেকে ডিম বের করলাম। দুইটা ডিম সিদ্ধ, আর পাউরুটি টোস্ট করে দিলাম। প্রথম দিন অন্য কি নাস্তা বানাবো তা বুঝতেছি না।

টেবিলে খাবার গুলো দিয়ে আমি গিয়ে সোফাতে বসে পড়লাম। কাপড়ের ভেজা অংশগুলো প্রায় শুকিয়ে গিয়েছে। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করতে ই দেখলাম শাহি কল দিয়েছে,

-হ্যালো অহনা তুই কোথায় এখন?

-শুভ্র স্যারের বাসায়।

-ঐ বাসায় তুই এখন কি করিস?

-কি আর করবো ব্রেকফাস্ট রেডি করে বসে আছি।

-নিজের ব্রেকফাস্টের সাথে খবর নাই, সকালে তো কিছু খেয়ে যাসনি কালকে রাতে ও কিছু না খেয়ে ই ঘুমিয়ে পড়লি। আমি কি অফিসে তোর জন্য খাবার নিয়ে যাবো?

-পাগল হয়েছিস তুই আমি বাহির থেকে কিনে কিছু খেয়ে নিবো। এখন রাখলাম কাজ আছে অনেক বাসায় গিয়ে কথা বলবো।

বলে ই কল কেটে দিলাম। এই মেয়ে এখন হাজারটা প্রশ্ন করবে এর থেকে ভালো কথা বলা।

-তুমি বাটন ফোন ইউস করো?

শুভ্রের কথাটা শুনে পিছনে ফিরে তাকিয়ে হাসি দিয়ে অহনা উওর দিলো,

-হে এটা ই ভালো লাগে, স্মার্ট ফোনগুলাতো অনেক বড় তাই হাতে নিতে ভালো লাগে না।

কথাটা বলার সাথে সাথে শুভ্র তার ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো,

-ধরো আমার ফোনটা সব সময় তোমার কাছে থাকবে। সাথে নিয়ে নিয়ে হাটবে কল আসলে আমাকে দিবে।

-আসলে ই আপনি একটা বদ লোক যেই বললাম বড় ফোন হাতে ধরে রাখতে ভালে লাগে না। এটা শুনে ই ফোনটা আমার হাতে দিয়ে দিলেন।

-শাঁখচুন্নি মুখে কিন্তু বদ লোক শুনতে ভালো ই লাগে। যাই হক চলো কি অখাদ্য বানিয়েছো তা টেষ্ট করে দেখা যাক।

শুভ্র টেবিলে গিয়ে বসলো অহনা সেই সোফাতে ই বসে আছে। এটা দেখে শুভ্র ডাক দিলো। অহনা একরাশ বিরক্ত নিয়ে শুভ্রের সামনে গিয়ে দাড়ালো।

শুভ্র কিছুক্ষন অহনার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

-তোমার ভাব দেখে বুঝা যাচ্ছে আমি না তুমি ই আমার বস।

-সরি

-আর সরি বলতে হবে না, চেয়ার টেনে বসো আমার সামনে।

-আমি বসে কি করবো?

-তোমাকে বসতে বলছি। বস খাবারের মধ্যে যদি বিষ মিশিয়ে থাকো তাহলে তুমি যেনো আমার আগে মরে যাও।

-আজব তো কি জন্য আমি আপনার খাবারে বিষ মিশাবো।

-সে তুমি জানো।

-আমি শুধু আপনার জন্য খাবার বানিয়েছি। আমার জন্য না।

-এসব বাহানা দিয়ো না প্লিজ মনে ভেতর ভয় লাগে যদি আসলে ই তুমি বিষ দিয়ে থাকো।

-আরে কি বলেন এইগুলা

-পাউরুটি টোস্ট আর ডিম। কাজে ফাকি দেওয়ার পথ তো দেখছি ভালোই জানো।

-আরে আমি জানি না আপনি কি খাবার সকালে খান তাই এগুলা করেছি।

অহনা এবার বেশ অবাক হলো শুভ্র তার অর্ধেক খাবার অহনাকে দিলো। অহনা একমনে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে,বেশ কিছুক্ষন যাবৎ। শুভ্র অহনার দিকে তাকাতেই চোখে, চোখ পড়ে গেলো।

-আমার খাবারে চোখ দিয়ো না প্লিজ তোমাকে তো খাবার দিলাম ই।

অহনা রেগে শুভ্রের চৌদ্দ গুষ্টিকে বকে ফেলেছে।

-জানি আমাকে মনে মনে হাজার খানকে বকা দিচ্ছো তুমি।

অহনা এভার একটু শকট হলো,এই লোক কি মানুষের মনের খবর জানে নাকি

-আপনি কি সাইকোলজির স্টুডেন্ট?

-এই প্রশ্নের মানে হলো আসলে ই তুমি আমাকে বকা দিচ্ছিলে?

-উফফ আল্লাহ কার খপ্পরে পড়লাম আমি

-কেনো জানো নাহ্ না। শুভ্র চৌধুরীর।

-সরি স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দিন এবার প্লিজ বলুন চমার পরের কাজটা কি?

__অফিসের বাহিরে আমাকে স্যার বলবা না

বাগানে গিয়ে দেখে আসো কতগুলো ফুল ফুটেছে। হাতা কলম নিয়ে যাও। কতগুলো ফুল ফুটেছে গুনে আমাকে বলবে।

___________________________

নয়না শুভ্রকে প্রায় পঁচিশটার মতো কল দিয়েছে একটাও রিসিভ করেনি অনেকগুলা মেসেজ ও করেছে তার ও কোনো রিপ্লাই করেনি। এবার বেশ ভয় হচ্ছে, সিদ্ধান্ত নিলো এখন ই শুভ্রের অফিসে যাবে নয়না। যে ভাবনা সেই কাজ ড্রাইভারকে বললো গাড়ি স্টার্ট দিতে।

অফিসের জন্য বের হয়েছিলো শুভ্র মাঝরাস্তা আসতে ই অহনা ঘুমিয়ে পড়ে। তাই শুভ্র গাড়িটা সাইড করে বসে আছে। অনেক্ষন বসে থাকার ফলে বেশ বিরক্ত লাগছে এভাবে বসে থাকতে। শুভ্রের ফোনটা ও পরে আর অহনার কাছ থেকে নেওয়া হয়নি। একবার ভেবেছিলো ফোনটা অহনার থেকে নিবে এর পর আবার ভুলে গেলো। অহনা ঘুমাচ্ছে তাই আর ডাক দিলে না।

শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে বেশ কিছুক্ষণ জায়গায় টা ঘুরে ঘুরে দেখলো। হাতের থাকা ঘড়ির দিকে তাকাতে ই দেখলো প্রায় সাড়ে এগারোটার মতো বাজে তাই গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো।

গাড়িতে বসতে ই চোখ পড়লো অহনার উপর। বাতাসের জন্য অবাধ্য চুলগুলো অহনার মুখ ভর্তি হয়ে আছে। শুভ্রের খুব করে ইচ্ছে করলো অহনার চুলগুলো সরিয়ে দিতে কিন্তু এভাবে চুল সরাতে গেলে যদি উঠে পড়ে তখন অহনা শুভ্রকে খারাপ ভাবতে পারে তাই আর চুলগুলো সরানো হলো না।

হঠাৎ অহনা চোখ খোলে ই ভয়ে ভয়ে শুভ্রকে বললো,

-আমি ঘুমিয়ে পড়ছিলাম সরি। আমি এখন কোথায়?

-হে,তুমি যে ঘুমিয়ে পড়ছো তা তো দেখতে ই পাচ্ছি। ঘুমিয়ে পড়ছিলে তাই অফিসে যাইনি গাড়ি সাইড করে রেখে দিয়েছি।

অহনা এর পর আর একটা কথা ও বললো না। অফিসের সামনে এসে বললো,

-আপনি কি জানেন আপনি আমাকে তুমি করতে সম্বোধন করছেন?

-জানি এতে আমার ভুল বলে মনে হয় না। তুমি আমার বয়সে অনেক ছোট তুমি করে বলতে ই পারি। অনেক লেট হয়ে গেছে আর কথা বলো না।

শুভ্র তার কেবিনে ডুকতে ই দেখলো নয়না বসে আছে। শুভ্রের পিছনে ছিলে অহনা। অহনাকে দেখে যেনো নয়না তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।

-এই মেয়েটার জন্য তুমি আমার কল রিসিভ করোনি শুভ্র তাহলে এই ব্যাপার।

শুভ্র নরম সুরে বললো,

_নয়না এটা আমার অফিস এভাবে চিল্লাবে না।

-ওকে ফাইন চিল্লাবো না। তুমি আমার কল রিসিভ করোনি কেনো?

-দেখিনি।

পেছনে ঘুরে অহনাকে বললো,

_অহনার আমার ফোনটা দেও তো।

অহনা সাথে সাথে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দিলো।

নয়না আবার চিল্লাতে শুরু করলো,

_দেখলে তো আমি ঠিক ই ধরেছি এই মেয়েটার জন্য তুমি কল রিসিভ করোনি।

-তুমি চুপ করবা প্লিজ।

-চুপ করবে কেনো হে,কে এই মেয়ে।

-ও কে এই কৈফিয়ত তোমাকে দিবো না। একটা কথা মনে রেখো নয়না তুমি শুধু ই আমার কাজিন। আমার পার্সোনাল লাইফে কি করবো আমার ব্যাপার। এখন তুমি যেতে পারো।

নয়না অহনার হাত ধরে বাহিরে টেনে নিয়ে বললো,

-আমি তোমাকে দেখে নিবো, শুভ্র দেখে দূরে থেকো

-এখন কি চোখ বাসায় রেখে এসেছেন। এখন ই ভালো করে দেখে নিন…..

চলবে,

[ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কালকে আমর এক্সাম আছে। গল্প না ও দিতে পারি এর জন্য দুঃখিত। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here