প্রণয়ে দহন পর্ব -০৪

#প্রণয়ে_দহন
#পর্ব_৪
#writer_nahida_islam

নয়না অহনার হাত ধরে বাহিরে টেনে নিয়ে বললো,

-আমি তোমাকে দেখে নিবো, শুভ্র দেখে দূরে থেকো

-এখন কি চোখ বাসায় রেখে এসেছেন। এখন ই ভালো করে দেখে নিন।

-মুখে তো ফটরফটর ভালো ই পারো।

-এখন কথা বলতে হলে ও কি আপনার অনুমতি নিতে হবে নাকি। আর কান খুলে শুনে রাখুন, কাজ করতে এসেছি দূরে যাওয়া, কাছে আসার খেলা খেলতে আসেনি।

শুভ্র দাড়িয়ে সব কিছু শুনেছে। অহনার কথাগুলো শুনে বেশ হাসি পেলো তাও চেপে রেখেছে। কেবিনের ভেতরে ঢুকে গম্ভীর হয়ে অহনাকে ডাক দিলো। শুভ্র ডাক দেওয়ার সাথে সাথে অহনা কেবিনের ভেতরে প্রবেশ করলো,

-আমার জন্য তোমার কথা শুনতে হয়েছে সরি।

অহনা ভ্রু কুচকুচে তাকিয়ে বললো,

-আপনাকে ভালোবাসে মনে হচ্ছে।

-এ ব্যাপারে কোনো কথা শুনতে চাইনি।

-না শুনতে চাইলে আর কি বলবো না?

-শোনো কালকে একটা মিটিং আছে তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে।

-আর কে যাচ্ছে?

-তুমি আর আমি।

-কখন বাসায় ফিরবো আমরা?

শুভ্র এবার বেশ রেগে বললো,

-যেতে ই তো দেওনি আসবো কখন তা জিজ্ঞেস করছো কেনো?

এই লোকটাকে অহনার মন চায় মাঝে মাঝে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিতে। কিছু হলে ই ব্যবহার খারাপ করে।

নয়না অহনার কথা শুনে বুঝতে পারলো এই মেয়ের সাথে এভাবে পারা যাবে না অন্য ব্যবস্থা করতে হবে।

_________________________________

সন্ধ্যা বাসায় ফিরে ই থ্রি পিস টা চেঞ্জ করে নিলাম। আমার চারটা জামা আছে। দুইটা পড়ে অফিসে যাই,এর মধ্যে আর দুইটা জামা বাসায় পড়ার। বাসার পড়া জামাগুলো বেশ পুরোনো। এগুলো পড়ে কোথাও যাওয়া যাবে না। এখন অফিসে তো প্রতিদিন থ্রি পিস পড়ে যেতে হয়। সবার অনেকগুলো করে ড্রেস কিন্তু আমার তো দুইটা ই। হয়তো সবাই বুঝে ফেলবে আমার সমর্থ নেই আর ড্রেস কিনার। এতে আমার কোনো আক্ষেপ নেই এই মাসের বেতন পেলে ই তো ড্রেস কিনতে পারবো।

-এই মাইয়া কি এতো ভাবিস বলতো। কাজ কর্ম কি আমি করবো করবো নাকি সব ই?

এই শুরু হলো আরেক রেডিও

-এই তুই কি বললি আমাকে?

-জানি না?

-জানতে হবে না যা গিয়ে রান্ন বসা। রাতের খাবার খাইয়ে তোর মামাকে ঔষুধ খাইয়ে দিস। আর রাতে যদি তুই না খাস, চাল কম নিবি। প্রতিদিন তোর জন্য আমি ভাত নষ্ট করতে পারবো না।

-আমি কি তোমাকে বলছি ভাত নষ্ট করতে?

-তুই বলবি কেন রান্না করে যে খাস না এইগুলা কি ভাত নষ্ট হয় না।

-আচ্ছা যাও তো মামি সারাদিন আমি ও কাজ করি। আমারও তোমার মতো শরীর ই। বাসায় আসার পর ও যদি আবার কাজ ও করতে হয় কথা ও শুনতে হয় তাহলে ভালো লাগে না।

এগারোটা মতো বাজে হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো অহনা রান্না শেষ করে এসে শুধু একটু শুয়ে ছিলো কখন যে চোখ লেগে গেছে বুঝতে পারেনি।
কয়েকবার কল আসার পর ও রিসিভ করলো না। অহনা বার কয়েক কেটে দিলে ও বার বার কল আসায় বিরক্ত নিয়ে কল রিসিভ করলো,

-কে রে তুই পাচা ডিম, করলা, মুলা বাঙ্গী পচা আলু এতো রাতে তোর কি জন্য আমাকে কল দিয়ে ঘুম ভাঙ্গাতে হবে। আরেকবার যদি কল দিছিস তোর বাসায় গিয়ে পিটিয়ে আসবো।

-আমি শুভ্র, কালকে আসো দেখবোনে কতো কি করতে পারো।

কথাটা বলার সাথে সাথে অহনা শুয়া থেকে উঠে গেছে। শুভ্রের কথা শুনে সব ঘুম উড়ে গেছে। ভয়ে ভয়ে বললো,

-সরি স্যার।

-আমি পঁচা ডিম

_না।

-আমি করলা, মুলা বাঙ্গী।

-না স্যার সব আমি।

-শিকার করছো তো সব তুমি

-হে স্যার সব আমি।

-অফিসের বাহিরে স্যার বলতে নিষেধ করছি না?

-ওহ্ হে সরি

-আচ্ছা মাফ করো আর সরি বলো না। কালকে বাসায় ৮ টার দিকে আসলে ই হবে। সকালে এসে আমার ঘুমের কুরবানী দিতে হবে না।

অহনা মনে মনে বেশ খুশি হলো যাক কালকে থেকে আর এতো সকালে উঠতপ হবে না। আজকে পানি ঢেলে দিয়ে ভালো কাজ ই করেছে।
শুভ্রের কথাটা টুকু শেষ করে কল কেটে দিলো।

_____________________________

সকাল বেলা অহনা রান্না বান্না শেষ করে রেডি হয়ে বের হতে ই বাসার গেইটের সামনে জহিরুলকে দেখতে পেলো। এই সেই পাড়ার মোড়ের দোকানী। এই লোকটাকে দেখে অহনার মাথায় রক্ত উঠে গেলো। হাতে থাকা মিষ্টি বাক্সগুলা মামির হাতে দিতে ই বললো,

-আসো বাবা তুমি ঘরে এসে বসো।

– না মামি। তা আমার পাখি কোথায় উড়াল মারবে এখন।৷ এভাবে রেডি হয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?

অহনা হেসে বললো,

-জাহান্নামে

-আমি তোমার সাথে সব জায়গায় যেতে ই রাজি।

-আমি রাজি না।

-রাজি না থাকলে রাজি করাবো?

-আমি তো কোনো দিন রাজি হবো না।

পাশের বাসার নুসরাতের মা জহিরুলকে দেখে দৌড়ে আসলো। এই এক কুচুটে মহিলা। এসে ই হাসতে হাসতে বললো,

-কি রে অহনা জহিরুল কত ভালো ছেলে তাকে কেন বিয়ে করবি না। ছেলে দেখতে ও যেমন ভালো পাড়ায় তার একটা দোকান ও আছে।

অহনা জহিরুলকে হেসে বললো,

-জহিরুল ভাই ঐ যে উনি রাজি আছে উনাকে বিয়ে করে নিন। আমি আপনাকে কখনো বিয়ে করবো না।

এটা বলে ই অহনাকে গেইটের দিকে পা বাড়ায়

নুসরাতের মা কথাটা তাকে বলেছে বুঝতে পেরে রেগে গিয়ে বললো,

-তুই তো অনাথ। তোর কেনো জন্ম পরিচয় নেই। তোকে যে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে সে তো তোর সাত কপলের ভাগ্য।

অহনা ঠাঁই দাড়িয়ে রইলো দুচোখ দিয়ে সমানে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো । মনে মনে ভাবতে লাগলো আসলে ই আমি অনাথ আমার জন্ম পরিচয় নেই।

দুচোখের পানি মুছে হাটছে তাও কেনো জানি বার বার না চাইতে ও পানি চলে আসছে। সকাল সকাল এমন কথা শুনতে হবে তা মুটে ও ভাবেনি অহনা।

মন খারাপ করে ই শুভ্রের বাসায় ঢুকলো।ব্যাগটা সোফায় রেখে নিঃশব্দ কিচেনের দিকে চলে গেলো।

চুপচাপ রান্না করে খাবার টেবিলে দিয়ে দিলো। শুভ্র অনেকক্ষণ যাবৎ খেয়াল করছে সব সময় হাসি খুশি থাকা মেয়েটা হঠাৎ কেমন জানি হয়ে গেলো। শুভ্রকে যেনো অহনার চুপ থাকা বড্ড পীড়া দিচ্ছি তাই জিজ্ঞেস করলো,

-কি হয়েছে আমাকে বলা যাবে?

অহনা চুপ থাকলো কিছু বললো না। অহনার এই চুপ থাকা তো শুভ্রকে আরো বেশি পীড়া দিচ্ছে।

-তোমাকে এভাবে চুপ থাকতে দেখলে আমার ভালো লাগে না। হয় কিছু বলো, নয়তো আগের মতো হয়ে যাও।

এবারও কিছু বললো না

এতো বার মেয়েটাকে প্রশ্ন করলো কিন্তু কিছু ই বললো না। চোখ মুখ দেখে বুঝাই যাচ্ছে বেশ কান্না করছে। শুভ্র থেকে লুকিয়ে বার বার যে চোখের পানি মুছতেছে তা বেশ ভালোই চোখে পড়ছে শুভ্রের।

-অহনা প্লিজ কিছু বলো আমার ভালো লাগছে না বললাম তো,

এবার ও চুপ ছিলো অহনা এতে শুভ্র বেশ রেগে যায়। রেগে গিয়ে অহনার সামনে গিয়ে বলে,

-এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি। তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারো না। রাগাচ্ছ কেনো আমাকে

শুভ্র রেগে কথা বলতে ই অহনা চিৎকার করে কান্না করতে শুরু করে। অহনার এমন কান্না দেখে শুভ্র কি করবে বুঝতে পারছিলো না। কিছু বুঝতে না পেরে শুভ্র হঠাৎ অহনাকে জড়িয়ে ধরে……

চলবে

[ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here