প্রণয়ে দহন পর্ব -১১ ও শেষ

#প্রণয়ে_দহন
# পর্ব_১১(অন্তিম পর্ব)
#writer_nahida_islam

কথাটা বলার সাথে সাথে মামি জোরে জোরে বলতে শুরু করলো কে ঐখানে?শুভ্র স্থির হয়ে দাড়িয়ে রইলো। অহনা বার বার যেতে বললে ও শুভ্র এক পা ও নড়ে না।

মামি বের হতে ই সাথে শাহি আর পিয়ন চাচা ও বের হয়েছে।মামি রেগে বললো,

-এই ছেলে কে?

পিয়ন চাচা মামি কে থামিয়ে বললো,

-একটু চুপ থাকো তো তুমি এটা আমাদের বস।

মামি ভ্রু কুচকুচে বললো
-বস অফিসে থাকবে। এই রাতের বেলা মেয়ে মানুষের সাথে কি করে। আর তুমি যে অহনার সাথে এতো রাত অব্দি আছো এসব যদি মানুষ শুনতে পারে তাহলে কি অহনার বিয়ে হবে কোথাও

এবার শুভ্র বললো,

-মামি আপনি এতো চিন্তা করবেন না। অহনাকে বিয়ে আমি ই করবো। কালকে আমার দাদিমাকে আপনাদের বাসায় নিয়ে আসবো।

অহনা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,

-এই এসব কি বলছেন আপনি। আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।

মামি অহনাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

-বিয়ে করলে তোমাকে এখন ই বিয়ে করতে হবে। কালকে যে তুমি আসবে তার কি নিশ্চয়তা আছে।

-অহনা চাইলে আমি এখন ই বিয়ে করতে রাজি।

অহনা স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে। এসব কি হচ্ছে। অহনা ভাবছে এখন আমার কিছু বলতে হবে নয়তো সত্যি সত্যি বিয়েটা হয়ে যাবে। অহনা জোরে বলতে শুরু করলো,

-শোনেন আমি অনাথ। আমার জন্ম পরিচয় নেই। আমার বাবা মা কে তা কেউ জানে না। দয়া করে আমাকে বিয়ে করে আপনার সম্মান নষ্ট করবেন না।

শুভ্র স্বাভাবিক ভাবে উওর দিলো, আমি তোমাকেই ই বিয়ে করতে চাই। এমন লুকায়িত প্রণয়ে দহন হচ্ছি আমি প্রতিনিয়ত। তাই আর লুকোচুরি নয়। আমি বিয়ে করতে প্রস্তুত আছি। হালাল ভাবে বউকে ভালোবাসতে চাই।

তৎক্ষনাৎ মসজিদে ইমাম ডেকে বিয়ে সম্পূর্ণ করা হয়। বিয়ে শেষ হওয়ার পর অহনা শুধু মামিকে উদ্দেশ্য করে বলে হয়তো আমার বাবা মা নাই তাই এটা করতে পারছো। আর কখনো যেনো তোমার সাথে আমার দেখা না হয়। কথাটুকু বলে অহনা বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। শুভ্র ও অহনার পিছন পিছন যায়।

দুইজন ই গাড়িতে বসে আছে নিঃশব্দে। শুভ্র অহনাকে স্বাভাবিক করার জন্য বললো,

-সরি অহনা। আমি জানি তুমি কখনো বিয়ে করতে না। যদি এভাবে আমাদের বিয়েটা না হতো হয়তো তোমাকে আমি কখনো পেতাম না।

আনমনে অহনা প্রশ্ন করলো,

-আমাকে বিয়ে করা কি খুব জরুরি ছিলো।

-হ্যাঁ, তোমাকে পাওয়া আমার খুব বেশি ই জরুরি ছিলো। কারণ তোমাকে না পেলে আমার প্রেমকে পেতাম না। যাকে ভালোবাসি তাকে না পেলে জীবন ই বৃথা।

-হয়েছে তো বিয়ে ই করে ফেলেছেন। আর পটিয়ে কি করবেন।

-পটাবো কি তুমি তো এমনি পটে বসে আছো।

-হ্যা আমার তো আর কোনো কাজ নাই।

শুভ্র মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলতে লাগলো,

-প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছি সেদিন ই তোমাকে দেখে আমার মনে সুপ্ত এক ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে। তাই তো এতো জোরে একটা থাপ্পড় দেওয়ার পর ও আমি তোমাকে আমার কাছে রাখার নানা বাহানা করেছি।

অহনা মুখটা অগের ন্যায় মলিন করে ই বললো,

-আমাকে বিয়ে না করলে ও পারতেন।

শুভ্র বাসার আসার পর ই দেখে দাদিমা সোফায় বসে আছে। শুভ্রের সাথে অহনাকে দেখে চোখে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো,

-কাকে নিয়ে এসেছো?

শুভ্র কিছুটা লজ্জা পেয়ে বললো,

-আমার সেই মায়াবিনী পরী সুইটহার্ট। বিয়ে করে নিয়ে এসেছি।

কথাটা বলার সাথে সাথে দাদিমার মুখটা কালো হয়ে গেলো।

-এটা কি করলে দাদুভাই তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে। তেমার বাবা মার মৃত্যুর পর তোমাকে নিয়ে ই তো আমি বেঁচে আছি তাহলে আমাকে না জানিয়ে বিয়ে।

শুভ্র দাদিমাকে সব ঘটনা খুলে বললো, প্রথমে কিছুটা মন খারাপ করলে ও পরে সবটা ঠিক হয়ে গেছে। দাদিমার সাথে কথা শেষ করে শুভ্র অহনাকে নিয়ে উপরে গেলো।

রুমে ডুকতে ই অহনা বললো,

-আপনি এই রুমে থাকবেন?

-আমার রুমে আমি থাকবো না এটা ভাবলে কি করে?

-তাহলে আমি অন্য রুমে চলে যাই।

শুভ্র অহনার কোমর জড়িয়ে ধরে, কাছে টেনে বললো,

-জানপাখি তোমাকে এতো কায়দা করে বিয়ে করছি কি অন্য রুমে থাকার জন্য।

শুভ্র অনেকটা কাছে চলে এসেছে দুইজনের নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।

-একটু সরে দাড়ান

কথাটা বলতে ই শুভ্র আরো কাছে চলে আসলো। অহনা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। চোখ বন্ধ করেছো কেনো। আমি কি মারবো নাকি তোমাকে।

অহনা আস্তে আস্তে মিটমিট করে চোখ খুলতে ই শুভ্র আচমকা অহনার ওষ্ঠদ্বয়ে ভালোবাসার পরশ দিতে ই অহনা স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে থাকে যেনো বরফ হয়ে গেছে। শুভ্র হেসে রুম থেকে চলে যায়, যাওয়ার আগে বলে,

-জানপাখি ভয় পেয়ো না। তুমি যতদিন অনুমতি না দিবে আমি তোমাকে আর স্পর্শ করবো না। আমি চলে যাচ্ছে অন্যরুমে।

অহনা যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো। এতোক্ষণ বেশ ভয় করছিলো।

________________________________________

৫ বছর পর,

আজকে অহনার বাসায়, নয়না তার হাসবেন্ড এসেছে। মামা বছর দুয়েক আগে মারা গেছে। মামি এখন অহনার সাথে ই থাকে। মামি তার কর্মের জন্য এখন ও কান্না করে। অহনা সব মাফ করে দিয়েছে।শাহি ও আজকে তার হাসবেন্ডকে নিয়ে আসবে।

নয়না কি রিয়েক্ট ই করেছিলো শুভ্র বিয়ে করে ফেলেছে শোনে। সে কি কান্না। অহনা অনেক বুঝিয়েছিলো। লাস্ট শুভ্রকে ভুলতে বিয়ে ই করে নিলো।

-মাম্মা আমি ক্ষিধা লাগছে।

ছোট্ট আরোহির মুখে কথাটা শোনে অহনা পিছন ঘুরে তাকাতে ই দেখলো,গাল ফুলিয়ে তার মেয়ে বলছে ক্ষিধা লাগছে।

আরোহিকে দেখে অহনা বেশ বুঝতে পারছে সে রাগ করেছে।আরুহির বয়স এখন সারে তিন।
অহনা জিজ্ঞেস করলো,

-মাম্মার সাথে রাগ করছো?

আরোহি মাথা নাড়িয়ে বললো,

-হ্যাঁ, তুমি আমাকে কোলে নেওনা তাই রাগ করেছি।

কথাটা বলার সাথে সাথে অহনা কোলে নিয়ে বললো -আহারে। রাগ করেনা আম্মু। বাসায় কত মেহমান আছে সবাই তো তোমাকে কোলে নিচ্ছে কাজ শেষ করে আমি ও তোমাকে কোলে নিবো।

শুভ্র এসে অহনার কাছ থেকে আরোহিকে নিয়ে বললো,

– আসো মা আমি তোমাকে খাইয়ে দেই।

দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই চলে যায়। শাহি ও মামিকে নিয়ে চলে যায়। রাতে অহনা রুমে যেতে ই শুভ্র এসে কপালে চুমু খেয়ে বললো,

-ভালোবাসি বউ।

-আমি ভালোবাসি না জামাই।

-তো কাকে ভালোবাসো।

-আমার বাচ্চার বাবাকে

শুভ্র অহনাকে কোলে তোলে বললো,

-আমাকে ভালোবাসতে হবে না তোমার বাচ্চার বাবাকে ভালোবাসলে ই হবে।

সমাপ্ত

[ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here