প্রণয়ে দহন পর্ব -০৫

#প্রণয়ে_দহন
#পর্ব_৫
#writer_nahida_islam

শুভ্র রেগে কথা বলতে ই অহনা চিৎকার করে কান্না করতে শুরু করে। অহনার এমন কান্না দেখে শুভ্র কি করবে বুঝতে পারতেছিলো না। কিছু বুঝতে না পেরে শুভ্র অহনাকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরে। শুভ্র সাথে সাথে বুঝতে পেরে অহনাকে ছেড়ে দেয়। অহনাকে এভাবে জড়িয়ে ধরার কোনো রাইটস্ নাই।

– সরি আমি বুঝতে পারিনি তুমি এতোটা কষ্ট পাবে।
কথাটা বলে ই শুভ্র উপরে চলে গেলো।

অহনা শুভ্রের এমন কান্ডে একটু অবাক ই হয়েছে। তাও নিজেকে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো। শুভ্র ও যে নিজের কাজের কারনে লজ্জা পেয়েছে তা আর বুঝতে বাকি রইলো না।

___________________________

অহনা চলে যেতে ই মামির সাথে জহিরুল ঘরের ভিতর গিয়ে বসে।মুখটা মলিন করে বলে,

-মামি আপনি কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছিলেন অহনাকে আমার হাতে তুলে দিবেন। এখন কিন্তু মনে হচ্ছে চাকুরীতে গিয়ে ওর পাখা গজিয়েছে। আর যদি না দিতে পারেন বলে দেন যত টাকা দোকান থেকে বাকি খেয়েছেন,তা হিসাব করলে কিন্তু ত্রিশ হাজারের কাছাকাছি হয়ে যায়। বাকিটা আপনাদের ইচ্ছা।

-আরে বাবা ঐসব কথা টানছো কেনো। বলেছি যখন তোমার হাতে তুলে দিবো,তখন তোমার হাতে ই তুলে দিবো। তুমি এসব ভেবো না।

-আমি মামি বেশি সময় দিতে পারবো না। এতো সময় আমার কাছে নাই। টাকা পরিশোধ করে দেন আমি আর এই মেয়ের পিছনে পড়ে থাকছি না।

-এসব বলো না বাবা আর কয়েকটা দিন সময় দেও। আমি অহনাকে বুঝিয়ে তোমার হাতে ই তুলে দিবো।

-তাহলে বরযাত্রী কত জন, আপনাদের দাবি কি সব বলে ফেলেন। যেনো অহনা রাজি হলে ই দুদিন পর বিয়ে ডেট ঠিক করতে পারি।

-তুমি তো আমার অবস্থা দেখেছো ই জহিরুল। আমি কি আর বরযাত্রী খাওয়াতে পারবো।

-আরে মামি খালি একবার অহনাকে রাজি হতে বলেন এসব নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আমি ই সব ব্যবস্থা করে ফেলবো।

মামি হাসি দিয়ে বললো,

-ঠিক আছে বাবা। এতে ই আমি খুশি

-আজ তাহলে উঠি তাহলে

-হে বাবা সাবধানে যাও।

শাহি দাড়িয়ে সবগুলো কথা শুনলো। জহিরুল চলে যেতে ই শাহি তার মায়ের সামনে এসে দাড়িয়ে বললে,

_ক’টা টাকার জন্য অহনার জীবনটা শেষ করে দিতে চাইছো? অহনার জায়গায় যদি আমি হতাম কি করতে তুমি।

-আমি কি করবো তা তোর কাছ থেকে শিখবো না শাহি। আমি যা করি ভেবে চিন্তা করে ই করি। ওর বাবা মা নেয় জন্ম পরিচয় ও জানি না। কে নিবে এমন মেয়েকে।

-এই বলে ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দিতে পারো। অহনা যথেষ্ট বড় হয়েছে। নিজের ভালো মন্দ বুঝতে শিখেছে ওর টা ওকে বুঝে নিতে দেও প্লিজ।

-শুধু যে জন্ম পরিচয় না ই বলে যে অহনাকে আমি জহিরুলের সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছি তা কিন্তু নয়। জহিরুল ভালো ছেলে অহনাকে ভালো রাখবে। সেই সাথে আমাদের বাকি টাকাগুলো ও দিতে হবে না।

শাহি কথা বাড়ালো না। জানে মায়ের সাথে শুধু শুধু কথা বলতে পারবে কোনো কাজ হবে না।

________________________________

শুভ্র ড্রাইভ করছে। মিটিং এ যাচ্ছে। অহনা পিছনের সিটে বসে আছে। আজকে আর শুভ্রের সাথে বসেনি। সকালের ঘটনার পর থেকে অহনা চাইলে স্বাভাবিক হতে পারছে না। আর শুভ্রকে দেখলে বার বার সকালের কথা ই মনে পড়ছে তাই পিছনে বসেছে। গন্তব্য পৌছাতে প্রায় দুই ঘন্টার মতো সময় লেগেছে। একটা রেস্টুরেন্টে এ বসবে তারা।

মিটিং শেষ করতে করতে প্রায় বিকাল হয়ে গেছে। অফিস থেকে বের ই হয়েছিলো দুপুরের দিকে। অহনাকে চুপ থাকতে দেখে শুভ্র বললো

– চলো একটা গেইম খেলি।

অহনা আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-কি গেইম

-তুমি আমি দু’জন ই রান্না করবো। তারপর এখানকার কাউকে খেতে দিবো যার রান্না ভালো হবে সে যা বলবে তাই শুনতে হবে।

অহনা খুশি হয়ে বললো,

-ওকে। কিন্তু এখানে রান্না করবেন কোথায়।

শুভ্র হেসে উওর দিলো এই রেস্টুরেন্টে টা আমার বন্ধুর ওকে বললে কিচেনটা আমাকে ঘন্টাখানেকের জন্য একটুখানি জায়গা দিতে পারে।

-তাহলে চলেন। কিচেনে ঢুকি।

দুইজন বেশ খুশি হয়ে কিচেনে ডুকলো। অহনার একটু বেশি ই খুশি লাগতেছে কারণ অহনা বেশ ভালো করে ই জানে ও রান্নাটা শুভ্রের থাকে ভালো পারবে।

রেস্টুরেন্টের শেফরা একদিকে রান্না করবে,অন্যদিকে শুভ্র আর অহনা।

-ঠিক করো কি রান্না করবা?

-আপনি ঠিক করেন।

-আসো ডিম ভাজি করি।

শুভ্রের কথাটা শুনে অহনা বললো,
-এটা সবাই পারে

-তাহলে ফিশ ফ্রাই

-না

শুভ্র বিরক্ত নিয়ে বললো সব ই যখন না তাহলে তুমি ই বলো কি রান্না করবো?

-আমি যেটা বলবো ঐটা ই কিন্তু ফিক্সড।

-হে যাও তুমি যা বলবে তাই ফিক্সড

-চিকেন ফ্রাই।

-এটা আমি পারি না।

অহনা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলবো আমার থেকে দেখে দেখে করবেন।

-আর আপনি কিন্তু বলেছে আমি যা বলবো তাই ই ফিক্সড। ঐটা ই বানানে হবো।

শুভ্র মুখরা ভার করে বললো,

-ওকে। তাই ই হবে।

দুইজন নেমে পড়লো কাজে। আগে থেকে ই চিকেন মেরিনেট করা ছিলো। একটা ছোট ড্রাম ময়দা রাখা ছিলো একটু উপরে। অহনা আর নিচে নামাতে পারছিলো না।

-সরে আসো আমি নামিয়ে দেই।

-আমার কাজ আমি ই পারবো।

-জেদ করো না পরে সব তোমার উপর পড়বে। নিচে নামাতে পারবে না তুমি।

কথাটা বলার সাথে সাথে ময়দার ছোট ড্রামটা অহনা আর শুভ্রের উপরে পড়েছে। দুইজন পুরা ভুতের মতো হয়ে গেছে। এটা দেখে অন্য শেফরা হাসতে শুরু করলো। অহনা আর শুভ্র দুইজন ই দুইজনের দিকে তাকিয়ে আছে,

-এটা কি করলে

-যা দেখছেন তাই ই

-বেশি পাকামো করো।

-ভালো হইছে।

-ভালো তো হবে ই আমার কি অবস্থা করেছো, দেখছো।

-আপনাকে কি বলছি আমার পিছনে এসে দাড়ান।

-আমি তোমাকে বলছি ময়দা আমার উপর ফেলো।

-ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দেন। এখন হলে তো

অহনা ওয়াশরুম গিয়ে ঝেড়ে সব ময়দা শরীর থেকে ঝেড়ে ফেললো, তাও কেমন যেনো দেখা যাচ্ছে। দু’জন ই ময়দাগুলো যতটুকু সম্ভব ঝেড়ে ফেলে আবার কিচেনে ঢুকেছে।

-যাক ভয় পেয়ে পালিয়ে যাননি

অহনার কথায় শুভ্র ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,

-কে ভয় পেয়ে পালিয়ে যাবে?

-আমার সামনে যে আছে সে ই।

-আমি এসবে ভয় পাই না। আর শুনো প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে আমাদের বাসায় ফিরতে হবে। তাই এই গেইমটা অন্যদিন খেলবো।

অহনা হেসে বললো,

-তাতে আমার কেনো সমস্যা নেই যদি মেনে নিন আপনি হেরে গেছেন এবং শর্ত অনুযায়ী ই আমার কথা শোনেন।

-গেইম তো স্টার্ট ই করলাম না হেরে গেলাম মানে।

-যদি এটা মানতে না চান তাহলে চলেন গেইম শেষ করি।

– না,না যাও আমি ই হেরে গিয়েছি। এখন কি চাইবে চাও।

-এখন না বাসায় গিয়ে কল দিয়ে বলবো কি চাই।

-ওকে এখন চলো

শুভ্র গাড়িতে গিয় বসলো, অহনা পিছনে বসতে চাইলে ই শুভ্র বললো,

-আমি তোমার ড্রাইভার না সো সামনে এসো।

অহনা আর কি বলবে চুপ করে সামনে এসে বসলো। অজনা ভয় অহনাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। আজকে বাসায় গেলে মামি আবার কি ঝামেলা করবে কে জানে। ফিরতে তো বেশ রাত হবে। উওর কি দিবে মামিকে……

চলবে,

[ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here