প্রণয়ে দহন পর্ব -০৬

#প্রণয়ে_দহন
#পর্ব_৬
#writer_nahida_islam

অহনা আর কি বলবে চুপ করে সামনে এসে বসলো। অজনা ভয় অহনাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। আজকে বাসায় গেলে মামি আবার কি ঝামেলা করবে কে জানে। ফিরতে তো বেশ রাত হবে। উওর কি দিবে মামিকে। অহনাকে একটু চিন্তিত দেখে শুভ্র প্রশ্ন করলো

-কোনো প্রবলেম থাকলে বলতে পারো?

-না তেমন কিছু না।

-তাহলে এতো টেনশন করছো কি নিয়ে।

-তা দিয়ে আপনার কাজ কি?

-তুমি কি ভালো করে কথা বলতে শিখনি? আমি তো ভালো একটা প্রশ্ন করলাম।

-আপনার ভালো খারাপ কোনো প্রশ্ন ই করতে হবে না।

-আচ্ছা। দয়া করে তোমার এড্রেসটা বলবা। রাতে হয়ে গেছে বাসায় একা কি করে যাবে। আমি নামিয়ে দিবো।

-কোনো দরকার নাই আমি একা যেতে পারবো।

সব সময় বেশি বুঝবা না যা বলতে বলছি তাই বলো। নয়তো আমার বাসায় নিয়ে চলে যাবো।

কথাটা বেশ রেগে বলতে ই অহনা চুপ করে গেলো। বুঝা ই যাচ্ছে ভয় পেয়েছে।

-এখন বাসার এড্রেস বলো।

এবার আর কথা না বাড়িয়ে অহনা বাসার এড্রেস বলে দিলো।

বাসার কাছাকাছি পৌছাতে ই অহনা বললো,

-এখনে ই নামিয়ে দিন।

অহনা গাড়ি থেকে নামতে ই দেখে শাহি আর মামি কোথায় যেনো যাচ্ছে। অহনাকে দেখে দৌড়ে এলো তারা। এসে ই জিজ্ঞেস করলো,

-এতো রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলি।

-এতো প্রশ্ন করো না মামি। আগে বাসায় চলো।

অহনা আর একমুহূর্ত ও দাড়ালো না। মামি আর শাহিকে পেছনে ফেলে ই দ্রুত হাটতে শুরু করলো। মামি ও অহনার পিছনে হাটতেছে আর নানা প্রশ্ন করছে। অহনা একটা প্রশ্নের ও উওর দিলো না সোজা বাসায় গেলো। বাসার গেইট ক্রস করতে ই মামি হাতে টান দিয়ে ধরে বললো,

-আমার প্রশ্নের উওর না দিয়ে কোথাও যাবি না।

-কি প্রশ্ন বলো,

-এতো দামি গাড়ি কার?

-আমার অফিসের বস এর

-তা এতো রাতে কোথা থেকে এসেছিস?

-দূরে মিটিং ছিলো, শেষ করে আসতে লেট হয়ে গেলো।

-এসব বলে কি মনে করেছিস আমি বিশ্বাস করবো নাকি। সব তোর বানানো কাহিনি। তোর আর অফিস করা লাগবে না। দুইদিন পর জহিরুলের সাথে তোর বিয়ে। আজ ই তোর শেষ অফিস। এসব ফষ্টিনষ্টি আমার বাড়িতে থেকে হবে না জেনে রাখিস।

-আমি ঐ লোককে বিয়ে করতে পারবো না।

মামি ব্যাঙ্গাত্বক ভাবে বললো,

-তো কাকে বিয়ে করবা মা ঐ যে এখন নামিয়ে দিয়ে গেলো তাকে। আরে মাইয়া দুনিয়ার এখনও কিছু ই বুঝিস না। আজ একটা কদিন পর দেখবি আরেকটা নিয়া ঘুরছে। তখন তুই কপ চিনবে ই না।

-আরে মামি হইছে তো তোমার প্রশ্ন করা, শেষ করো দয়া করে। এখন আমাকে ভেতরে যেতে দাও।

যা কিন্তু শুনে রাখ দুদিন পর শনিবার পরে, ঐদিন ই তোর বিয়ে।

অহনা কিছু বললো না চুপ করে রুমে গেলো।

মামির কথায় আমার খুব রাগ হলো, যখন ই বলেছে শুভ্র দুদিন পর অন্য মেয়ের সাথে ঘুরবে ভেতরে কেমন একটা খারাপ লাগা কাজ করলো। যদি ও শুভ আর আমার মধ্যে ঐরকম কোনো সম্পর্ক নাই। আর মেয়ে নিয়ে ঘুরলে ঘুরুক তাতে আমার কি।

________________________

শুভ্র অহনার কথা মনে করে বরাবরই ই হাসে। মেয়েটা অন্য রকম। অহনার চনচলতা শুভ্রর কাছে ভিষণ ভাল্লাগে। আজ কাল অহনার কথা মনে হলে ই আনমনে হেসে দেয়।

অহনাকে নামিয়ে দেওয়ার পর, বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে অহনার কথা ই ভাবছিলো। হঠাৎ ফোন বেজে উঠতে ই ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে কল রিসিভ করলো,

-হ্যালো মাই সুইটহার্ট।

অপরপাশ থেকে উওর আসলো,

-আমি তোমাকে কতদিন দেখি না দাদু ভাই। তুমি তো আসতে পারো বাসায়।

-এসে কি হবে।

-আসো আমার ও দেখা হবে আর তোমার জন্য একটা বউ ও খুজে দিবো।

শুভ্র হেসে বললো,

-বউ লাগবে না সুইটহার্ট। তুমি আসো আমার বাসায়। আমি তো একা থাকি তুমি আসলে ভালো লাগবে।

-আচ্ছা তাহলে এই কথা ই রইলো, আমি যাবো তোমার বাসায়। আমাকে কিন্তু সময় দিতে হবে অফিস অফিস করলে হবে না।

-আচ্ছা, কবে আসবে আমাকে জানিও।

শুভ্র এইটুকু বলে কল কেটে দিলো।

দশটার পর আজ অহনা অফিসে এসেছে। এসে ই সোজা শুভ্রের কেবিনের দিকে গেছে। কারো সাথে কোনো কথা বলেনি। হুট করে কেবিনে ঢুকে বললো,

-স্যার আমার কিছু টাকার প্রয়োজন।

শুভ্র বেশ রেগে বললো,

-তোমার এখন অফিসে আসার সময় হলো?

-সরি স্যার। আমার কিছু টাকর প্রয়োজন।

-আরে তোমাদের মতো মেয়েদের এই এক সমস্যা। একটু সহানুভূতি দেখলে ই মাথায় উঠে নাচা শুরু করো। যে ই দেখলে আমি তোমার সাথে একটু ভালো ব্যবহার করছি,অমনি তোমার টাকার প্রয়োজন হলো।

অহনা একটা কথা ও বললো না। শুধু চুপ করে শুনলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-স্যার টাকা আমার প্রয়োজন। আমার বেতন থেকে টাকাটা কেটে রেখে দিয়েন।

এটা শুনে শুভ্র কিছু একটা ভেবে বললো,

-কত টাকা লাগবে তোমার।

-৩০ হাজার।

-আচ্ছা দিবো কিন্তু এই টাকা টা তোমার বেতন থেকে কেটে নেওয়া হবে কিন্তু আমাকে বলতে হবে এই টাকাগুলো দিয়ে কি করবে। যদি আমাকে বলো টাকাটা দিয়ে কি করবে তাহলে আমি টাকা টা তোমাকে দিতে পারি।

অহনার ইচ্ছে না থাকা শর্তে ও জহিরুল সব কথা শুভ্রকে বললো। সব কিছু বলা শেষ হওয়ার পর শুভ্র বললো,

-আজকে তোমার ছুটি তুমি বাসায় যাও। আমি পিয়ন চাচার কাছে টাকা পাঠিয়ে দিবো। এই মুহুর্তে টাকাটা আমার কাছে না।

অহনা কিছুটা চিন্তা মুক্ত হয়ে বাসায় চলে গেলো।

_________________________________

অহনা অফিস থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পর ই পিয়ন চাচাকে নিয়ে জহিরুলের দোকানে যায় শুভ্র। শুভ্রকে দেখে ই বললো,

-কি দিবো স্যার?

শুভ্র কিছু বললো না। পিয়ন চাচা বললো,

-অহনাদের কতোটাকা বাকি আছে তা বল।

-সে তো মেলা টাকা হবে। এই স্যারকে?

পিয়ন চাচা রাগ দেখিয়ে বললো,

-এটা তোর জানতে হবে না।

জহিরুল কিছুটা ভয় পেয়ে দ্রুত খাতে খুলে সব হিসাব করে দেয়। ঊনত্রিশ হাজার চারশো টাকা হয়েছে।

শুভ্র সাথে সাথে টাকাটা জহিরুলের দিকে ছুড়ে মারে।

-তোমার নাম জেনো কি?

শুভ্রের প্রশ্নে ঝটপট উওর দিলো জহিরুল,

-জ্বি স্যার আমার নাম জহিরুল।

-এখানে পুরো পঞ্চাশ হাজার আছে। ফেরত দিতে হবে না। আর কখনো যদি অহনাকে বিয়ে করার মুখে আনছো তাহলে জহিরুল নামের আগে মরহুম যুক্ত হয়ে যাবে। আর অহনাদের বাসায় গিয়ে অহনার কাছে ক্ষমা চেয়ে আসবে।

কথাটা বলে ই শুভ্র দোকান থেকে বের হয়ে যায়। পিয়ন চাচাকে কিছু টাকা দিয়ে বললো,

-অহনাদের বাসায় বাজার করে নিয়ে যাবেন। কিন্তু ভুলে ও শিকার করবেন না আমি যে টাকা দিয়েছে। বলবেন আপনি বাজারগুলো করে নিয়ে গেছেন।

পিয়ন চাচা মাথা নাড়ালো

শুভ্র আর লেট করলো গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।

অহনাদের বাসার গেইট লাগানো ছিলো। জোরে জোরে ধাক্কার শব্দ শুনে মামি এসে গেইট খুলে দিতে ই জহিরুল কে দেখতে পেয়ে মামি হাসি দিয়ে বললো,

-বাবা জহিরুল তুমি আসো ভেতরে আসো।

-মামি অহনা কোথায়।

অহনা আর শাহি ভেতর থেকে বের হয়ে আসে,

অহনাকে দেখে জহিরুল গিয়ে বলে,

-বইন আমাকে তুই মাফ করে দে। আমার ভুল হয়ে গেছে।

অহনা কিছু ই বুঝতে পারে না। যাক জহিরুল মাফ চেয়ে চলে গেছে। সবাই রুমের ভিতরে ডুকতে যাবে ঠিক তখন ই পিয়ন চাচা অনেক বাজার নিয়ে আসলো। এসব দেখে অহনা বুঝতে পারলো না এগুলা কি হচ্ছে…..

চলবে,

[ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here