প্রণয়ে দহন পর্ব -০৭

#প্রণয়ে_দহন
#পর্ব_৭
#writer_nahida_islam

অহনা কিছু ই বুঝতে পারে না। যাক জহিরুল মাফ চেয়ে চলে গেছে। সবাই রুমের ভিতরে ডুকতে যাবে ঠিক তখন ই পিয়ন চাচা অনেক বাজার নিয়ে আসলো। এসব দেখে অহনা বুঝতে পারলো না এগুলা কি হচ্ছে।

অহনা কিছু একটা ভেবে জিজ্ঞেস করলো,

-কাকা এই বাজার কে করলো। আপনাদের জন্য করেছেন নাকি?

-আমি ই করেছি তোদের জন্য। তোর মামার অসুস্থতা পর থেকে তোদের বাসায় তো ভালো মন্দ বাজার ও হয় না তাই ভাবলাম বাজার করে দেই তোদের।

-চাচা কারো দয়া আমরা চাই না।এগুলো আপনাদের বাসায় ই নিয়ে যান।

শাহি অহনাকে চোখ রাঙ্গিয়ে বললো,

-এই মেয়ে চুপ কর। দেন তো ভাই বাজারগুলা আমাকে দেন।

মামি বাজারগুলো ব্যাগগুলো খুলে দেখলো,মাছ মাংস, পেয়াজ,রসুন,সবজি সব কিছু ই আছে। এসব দেখে খুশি হয়ে গেছে।

কিন্তু অহনা এসব দেখে খুব বিরক্ত হচ্ছিলো।কাল পর্যন্ত তো সব সব ঠিক ছিলো। শুভ্রের সাথে সব শেয়ার করার আগ পর্যন্ত সব ঠিক ছিলো কিন্তু শুভ্রকে সকালে সবকিছু বলতে ই পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে গেলো। তার মানে কাজটা শুভ্র করেছে।

অহনা এখন ভালো করে বুঝতে পারছে কাজটা শুভ্রের। অহনা রুমে যাওয়ার পর শাহিকে বললো,

-জানিস এই কাজগুলো কার?

শাহি অহনার সামনে চেয়ার টেনে বসে বলে,

-কার?

-শুভ্র স্যারের।

শাহি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-উনি আমাদের পারিবারিক অবস্থার কথা জানে কিভাবে?

-আমি বলেছিলাম। টাকা ধার চেয়েছি। উনি শর্ত দিয়েছে যদি আমার সমস্যার কথা বলে তো টাকা দিব।

-তুই ও সব বলে দিলি?

-আর কি কিছু করার ছিলো আমার।

-যা হয়ে গেছে তা নিয়ে মাথা নিয়ে চিন্তা করিস না। এই জন্য ই তো ভাবতেছি পিয়ন চাচার মতো একটা কৃপণ মানুষ কিভাবে আমাদের বাসায় বাজার করে নিয়ে আসে।

অহনার চুপ করে বসে আছে,কেনো জানি খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে ভিতরে। শুভ্রকে সব বলেছে,তাই বলে কি দয়া দেখালো। বার বার শুধু এই কথাটা ই মনের ভেতর নাড়া দিচ্ছে।

ঐ দিন বাকি দিনটুকু আর রাতটুকু কাটে বেশ অস্থিরতায়। সকাল হতে ই অহনা সব কাজ শেষ করে শুভ্রের বাসায় চলে যায়।

বাসার মেইন গেইট ক্রস করতে ই ঐদিনের লোকটা অহনাকে পেছন থেকে ডাকলো। পিছন ফিরে তাকাতে ই লোকটি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো,

-কে তুমি মা, আমি শুভ্রকে ছোট থেকে চিনি কখনো তো কোনো মেয়েকে এই গেটের ভেতরে ঢুকতে দেখিনি। কিন্তু ইদানীং তোমাকে কদিন যাবৎ দেখছি। প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছিলাম আমি বেশ অবাক হয়েছি।

-আসলে আমি উনার জব করি চাচা। তাই কাজের জন্য আমাকে বাসায় আসতে হয়।

-ওহ আচ্ছা। যাও মা

অহনা হাটতে থাকে। দ্রুত কিচেনে যায়। কিচেন থেকে লবন নিয়ে শুভ্রের রুমে যায়। দরজা ধাক্কা দিতে ই খুলে যায়। অহনা গিয়ে শুভ্রের মুখে চামচ দিয়ে বেশ খানিকটা লবন দিয়ে দেয়। মুখে লবন পড়ার সাথে সাথে ঘুম থেকে উঠে পড়ে।

-এই মেয়ে এইগুলা কি করছো?

-যা দেখছেন তা ই। আপনার উপর আমার অনেক রাগ আমি তো আপনাকে মারতে পারবো না। তাই এটা করলাম। এতে আমার মনে কিছুটা হলে ও শান্তি পাবো।

শুভ্র কিছু বললো না। বিনা বাক্যে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

-এই আপনি আমার সাথে কথা না বলে কোথায় যাচ্ছেন।

-ওয়াশরুমে যাচ্ছি। যাবে আমার সাথে?

অহনা রেগে বললো,

-বদ লোক

-নিচে গিয়ে বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তখন মন চাইলে আমাকে মারতে ও পারবে অনুমতি দিলাম। বসে ভাবো কি দিয়ে মারবে আমাকে।

-আপনার মাথা দিয়ে।

-আমার মাথা কেনো তোমার মাথা দিয়ে ও মারতে পারো এতে ব্যথা কম পাবো।

-আসলে ই আপনি একটা বদ।

-ধন্যবাদ, এখন নিচে যাও।

-আপনি না বললে ও যাবো,নিজে নিজের কাজ করুন।

এইটুকু বলে ই অহনা নিচে চলে গেলো। বেশ অস্বস্তি কাজ করছে যতক্ষন না শুভ্রের কাজ থেকে সব প্রশ্নের উওর না পাবে ততক্ষণ শান্তি লাগবে না।

বেশ কিছুক্ষন পর শুভ্র ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে ই বললো,

-তোমাকে না ঐদিন বলছি আমার ঘুমের কুরবানী দিতে সকাল সকাল আসবে না। তাও এসে আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছো।

-আপনি তো আমার জন্য সকালের ঘুমটা কুরবানী দিয়েছেন। আমি কালকে সারা দিন রাত অস্বস্তিতে ছিলাম এখন বলুন কার পরিস্থিতিটা গুরুতর।

-তোমার। কিন্তু আমি আবার কি করলাম বুঝতে পারলাম না।

-আপনি সব জানেন। জেনে বুঝে ই তো আমাকে এমন অস্তিত্বতে ফেলেছেন।

-আসলে ই আমি কিছু বুঝতে পারতেছি না।

-ভালো, কালকে আপনি পিয়ন চাচাকে দিয়ে বাজার করিয়ে পাঠানি? জহিরুলের টাকা পরিশোধ করেননি?

শুভ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

-হে করেছি তো কি হয়েছে।

-কেনো করেছেন এমনটা? আমি আপনার দয়া চাইনি। ধার চেয়েছি কিছু টাকা, তা তো পরিশোধ ও করে দিতাম কিন্তু আপনি ইচ্ছে করে আমাকে ছোট করার জন্য এমনটা করেছেন।

-অহনা প্লিজ ভুল বুঝো না। এটাতে ছোট করার কি হলো তাই ই বুঝতে পারি নাই।

-স্যার আপনি আমার বস। আমি আপনার সামান্য কর্মচারী। আমার সাথে আপনার এর বাহিরে কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এসব করার ও কোনো মানে হয় না।

-অফিসের ভেতরে আমি তোমার বস। তুমি আমার আন্ডারে কাজ করবে বাহিরে নয়। অফিসের বাহিরে তুমি আমি সাধারণ মানুষ এবং আমি মানুষ হিসেবে মানবিকতার কারনে ও তোমার সমস্যা সমাধান করতে পারি।

-আমি কারো সাহায্য চাইনি। আমি নিজের টা নিজে ঠিক করে নিতে পারবো।

______________________________

জহিরুলের দোকানে মামিকে দেখে চেয়ার টেনে মামিকে জহিরুল বসতে দিলো, মামি কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বললো,

-কালকের ব্যাপারটা ঠিক আমার মাথার ভেতরে ডুকে নাই বাবা। হঠাৎ তোমার কি হলো?

-কিছু হয়নি মামি।

-তাহলে তোমার ব্যবহারে এতো পরিবর্তন কি করে হলো বুঝতে পারছি না। আর টাকাটা ই বা কে পরিশোধ করলো।

-ঐ লোককে তো আমি ও চিনি না। চিনে পিয়ান চাচা। পিয়ন চাচার সাথে লোকটা আসছিলো। বাকি ছিলো উনত্রিশ হাজার কিন্তু উনি দিয়ে গেছে পঞ্চাশ হাজার।

এটা শুনে মামি অবাক হয়ে জহিরুলের দিকে তাকায়। আর বলে,

-বাকি টাকার জিনিস আমি আস্তে আস্তে নিবো।

-ইসসস, আসছে। ঐলোক এই টাকা আমাকে এমনিতে ই দিছে। যদি টাকার জিনিস না দিতে চাস তো এখন ই পিয়ন ভাইয়ের কাছে গিয়ে বিচার দিবো আমি।

-মামি তুমি তো ভালো লোভি আছো।

মামি ব্যাঙ্গাত্বক ভাবে বললেন,

-তুমি ও কোনো অংশে আমার থেকে লোভি কম না বাপু। যাই এখন,আমি তোমার ব্যবস্থা পরে করবো।

এইটুকু বলে ই মামি চলে গেলো,

বেশ কিছুক্ষণক্ষন যাব শুভ্র আর অহনার মধ্যে কথা-কাটাকাটি হচ্ছে। অহনা বেশ রেগে থাকলে ও শুভ্র ঠান্ডা মেজাজে কথা বলার চেষ্টা করছে।

-স্যার আমি কাজ করে আপনার সব টাকার শোধ করে দিবো।

-অহনা কতবার বলবো অফিসের বাহিরে আমাকে স্যার বলবে না। আর টাকা কি আমি তোমার কাছে চেয়েছি।

-টাকা না চান আমি চাই না করো করুনার পাত্র হয়ে থাকতে। যতদিন টাকা পরিশোধ না হবে আমি বেতন নিবো না।

কথাটা বলে ই অহনা চলে যতে চাইলে, শুভ্র পিছন দিয়ে অহনার হাত টেনে ধরে….

চলবে,

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here