#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩৩ (অন্তিম পর্ব)
অভ্র পিছনে তাকিয়ে মিহি বলে চিৎকার দিয়ে মাটিতে পরে যায়। কিন্তু এই অবস্থায় এভাবে পড়ে গেলে তো চলবে না, নিজেকে একটু শক্ত করে উঠে মিহির কাছে যায়। কোলে নিয়ে পাগলের মতো মিহিকে ডাকতে থাকা আর গাড়ি নিয়ে বসে। বার বার ডাকে কিন্তু কোনো কথা বলে না। রক্তে অভ্রের শরির মাখামাখি অবস্থা। কী করবে ভাবতে পারছে না।মনে হচ্ছে কলিজাটা কেউ ছিঁড়ে ফেলেছে।
অভ্র হসপিটালের গেইটের সামনে যেতে ই দেখে অপু। মিহিকে দ্রুত ইমারজেন্সিতে নেওয়া হয়।অভ্র পাগলের মতো করছে। এতোটা শকড নিতে পারতেছেনা। অপুকে ড্রাইভার কল দিয়ে বলেছে। পলা কিছুটা দূরে দাড়িয়ে আছে।
কিছুক্ষন পর ডক্টর বের হয়। জানায় দ্রুত আইসিইউতে নিতে হবে। মাথায় আর বুকে আঘাত পেয়েছে যার কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে মাথায় আঘাত পাওয়ার কারনে চোখে সমস্যা হতে পারে। চব্বিশ ঘণ্টার আগে জ্ঞান ফিরবে নাকি পারবেনা। প্রচুর রক্তক্ষরণ এর ফলে রক্ত লাগবে। আর উনার বাচ্চাটা বাচানো সম্ভব না। উনি বাচবে কিনা সন্দেহ উনার বাচ্চাকে বাচানো তো আরো আগে সম্ভব না।
–কী বলছেন ডক্টর। মিহি প্রেগন্যান্ট ছিলো।
–হে, আপনারা জানেন নাহ্।
কথাটা শোনে অভ্রের দুচোখ দিয়ে না চাইতে ও পানি পড়তে থাকে। ভাগ্যের কী পরিহাস, বাবা হওয়ার অনুভূতিটা যে কতো মধুময় তা একটা বাবা ই ভালো জানে আর বাবা হয়েও তা জানতে পারলো না। মিহি কেনো বলেনি তাহলে তো কখনো সিলেট নিয়ে যেতো না।আল্লাহ আমাকে শক্তি দাও।
–ডক্টর আমি কী একটু দেখতে পারবো?
–এখন না। আইসিইউতে দেওয়ার পর।আপনারা রক্তের ব্যবস্থা করুন।
পিছনে ঘুরে তাকাতে ই দেখে, দাদিমা সহ বাসার সবাই চলে এসেছে। মিনতি অনবরত কান্না করতেছে। মিহির বাবা মা ও চলে এসেছে।
–ভাইয়া মিহি কোথায়।
অভ্র কোনো কথা বলছে না। শুধু চুপ করে আছে। অভ্রের অবস্থা অপু বুঝতে পেরে বললো,
–আইসিইউতে সিফট করবে এখন। তোমার আর মিহির রক্তের গ্রুপ কী একই। বা তোমার পরিবারের কারো সাথে কী মিহির রক্তের গ্রুপ মিলে।
–হে, আমাদের দুইবোনের রক্তের গ্রুপ একই।।
তাহলে চলো আমার সাথে বলে ই মিনতিকে নিয়ে ডক্টরের কেবিনের দিকে চলে যায়। অভ্রে ফ্লোরে বসে আছে। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। মুখটা মলিন হয়ে আছে। শুধু আইসিইউর দিকে তাকিয়ে আছে।
অভ্রের এমন অবস্থা দেখে কেউ ভয়ে কিছু জিজ্ঞেস করে না৷
বেশকিছুক্ষনপর,
অভ্রের হঠাৎ উঠে আইসিইউর দিকে যাওয়া শুরু করলো, সাথে সাথে রেনু বেগন ও যায়। অভ্র ডক্টরের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সকল ফর্মালিটি মেনে অভ্র ভেতরে ডুকতে ই দেখে অক্সিজেন মাক্স খোলা। মিহি নিশ্বাস নিতে পারতেছেনা। অভ্র ডক্টর বলে জোড়ে চিৎকার দিয়ে পিছনে তাকাতে ই এককোনে পলাকে দেখতে পেলো। পলার হাত পা কাপছে ডক্টর এসে মিহিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
অভ্র পলাকে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে আসলো,পলাকে এমন মারতে দেখে মিনতি, অপু এসে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে,
–আরে ভাই তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস। পলাকে এভাবে মারছিস কেন। উনি তোর কী করেছে।
—অপু ভালোই ভালোই বলতে বল, এই মহিলাকে কে পাঠিয়েছে।
ভয়ে পলা বলতে শুরু করলো,
–মীরা ম্যাডাম আমাকে টাকা দিতো অভ্র ভাই আর মিহির খবর নিয়ে দিতে পারলে। আমি অনেক দিন আগে থেকে ই মীরা ম্যাডামকে এসব বলি। এবাড়িতে কাজ নেওয়ার মূল কারণ ই ছিলো অভ্র ভাই আর মিহির খবর মীরা ম্যাডামকে দেওয়া।
–এইগুলো বাদ দিয়ে বল মিহিকে এক্সিডেন্ট করিয়েছিস কীভাবে।
—মীরা ম্যাডামের কথায়, মীরা ম্যাডাম সব প্রি প্লানিং করে রেখেছিলো। আমি ই বার বার বলি মিহিকে আইসক্রিম নিজে আনতে যেতে। আইসক্রিম আনার কথা বলে গাড়ি থেকে নামাই তারপর সুযোগ বুঝে আমি ইচ্ছে করে মিহিকে গাড়ি আসার সাথে সাথে ধাক্কা দেই।
অভ্র উঠে আবার মারতে গেলে। সবাই আটকিয়ে রাখে। পলাকে পুলিশের হাতে দিয়ে দেয়। কিন্তু মীরাকে খুজে পাওয়া যায়নি।
___________________
দুইমাস পর,
–এই তোমাকে আর কতো বলবো কম খেতে। মনে হচ্ছে কোলে একটা আটার বস্তা নিয়েছি।
মিহি রাগি চোখে তাকাতে ই অভ্র বললো,
–তুমি খাবে না কে খাবে টিয়াপাখি। আমি যা আছে সব তোমার জন্য। আজকে রাতে ই তোমাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবো টিয়াপাখি। রাগ করো না।
–শাস্তি আরো বাড়িয়ে দিলাম, যাও আমাকে কোলে নিয়ে বাগানে যাও।
–আজকে কোমরটা ভেঙ্গে ছাড়বা টিয়াপাখি।
–ভাঙ্গলে তো ভালো ই হবে। সারাক্ষণ আমার সামনে বসে থাকবে আর আমাকে ভালোবাসবে।
–কোমর ভেঙ্গে বসিয়ে রাখবে কেনো। তুমি বললে অনন্তকাল আমি তোমার নয়নে নয়ন রাখিয়ে কাটিয়ে দিতে পারি প্রয়সী।
মিহি মেকি হাসি দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে।
অভ্রের শাস্তি চলতেছে।দুইটা বাজার আগে অভ্রকে অফিস থেকে চলে আসতেছে বলেছে। আর এখন চারটা বাজে। লেইট করার শাস্তি স্বরুপ এখন মিহিকে কোলে নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরতে হচ্ছে।
বাসায় কেউ নাই সবাই মিহিদের বাসায় গিয়েছে, শুধু মিহি আর অভ্র বাদে। ডক্টর মিহিকে কোথাও যেতে নিষেধ করেছে। পুরোপুরি রেস্টে থাকতে বলেছে তাও মিহি যথেষ্ট অনিময় করে। অবশ্য অভ্র সামনে থাকলে তা করে না।বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে শোনে মিহি অনেক কান্না করেছিলো, কিন্তু অভ্র সামলে নিয়েছে। আল্লাহ চাইলে অবশ্যই সন্তানের মুখ দেখা হবে। হয়তো এই সন্তানটা ভাগ্যে ছিলো না।২৬
সন্ধ্যা বেলা, বেলকনিতে বসে আছে মিহি, মিহি একটা বইয়ে মন আসক্ত হয়ে আছে। আর অভ্র মিহিতে আসক্ত হয়ে আছে। হাজার বার দেখলে ও মন ভরে না চোখের আড়াল হলে ই মনে হয় কেউ হয়তো আবার কলিজাটা নিয়ে যাবে। আগলে রাখবো টিয়াপাখি আমার সবকিছু দিয়ে। অনেক ভালোবাসি টিয়াপাখি।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, অভ্র মুখে বিরক্তি ভাব নিয়ে ফোনটা রিসিভ করতে ই লাফিয়ে উঠলো।
মিহি ভয় পেয়ে বার বার জিজ্ঞেস করে কী হইছে। কিন্তু অভ্র মিহিকে বার বার থামতে বলেছ।
কথা বলা শেষ করে অভ্র বললো,
—মীরাকে পুলিশ ধরতে পেরেছে। আল্লাহ আমার মনের আশা পূরণ করেছে। এতো দিনে মীরার উচিত শাস্তি হয়েছে।
–হুম, এগুলো নিয়ে ভাববে না, তুমি।
–তাহলে কী নিয়ে ভাববো টিয়াপাখি।
–কেনো আমি আছি না।
–হুম, তোমাকে নিয়ে তো আমার ভাবনা সর্বক্ষণ ই।
–তা ছয় মাসের বেশি তো হলো, এখন ও ডিভোর্স দিলে না যে। উল্টো আমাকে ছাড়া তো এক মুহুর্ত ও থাকতে পারো না।
–ছয় মাস কি। ছয়জনম বলে যদি কিছু থাকে তাহলে সেই ছয়জন্মে ও তোমাকে চাই।
মিহি হাসিমাখা মুখে উওর দিলো,
“ভালোবাসি অভ্র”
হুম আমি ও, প্রত্যেকটা মুহুর্ত তুমিময় কাটাতে চাই, প্রত্যেকটা মুহুর্ত তোমাতে আসক্ত হতে চাই। এভাবে ই সারাজীবন তোমাতে আসক্ত হয়ে কাটাতে চাই। বলে ই কপালে ঠোঁট দুটো ছুয়ে দিলো।
———–সমাপ্ত ——-
[আসসালামু আলাইকুম। গল্পটা আপনাদের মনকে কতটা ছুঁয়েছে জানি না। অনেক ধন্যবাদ আপনাদের, আপনাদের কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। আশা রাখি আমার সকল ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, যারা গল্পটা পড়েন একটু কষ্ট করে আজকে রিয়েক্ট দিয়ে যাবেন, আমি দেখি আমার কতোজন সাইলেন্ট রিডার্স আছে, ধন্যবাদ ]