তোমাতে আসক্ত পর্ব ২০

#তোমাতে আসক্ত

নীলচুড়ি (রোকসানা)

পর্ব (২০)

“”চলো ওকে পাহাড় থেকে ফেলে দেই। ওর বেচে থাকার কোনো মূল্য নাই।””

সবাই মাহিরকে উচু করে নিয়ে বিশাল এক পাহাড়ে উঠে গেলো। আর সেখান থেকে মাহিরকে নিচে ঢিল মেরে ফেলে দিলো। মাহির নিচে পড়তে পড়তে দেখতে পেলো আরমান তার দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপভাবে হাসছে। মাহির আর সহ্য করতে পারলোনা। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলো,,,

“”আরমান,তোকে আমি ছাড়বোনা।””

“”ও মাগো, আমাকে মেরে ফেললো গো। খালামনি,আব্বু কই তোমরা? তোমাদের অথৈকে মেরে ফেললো””

হঠাৎ চিৎকারে মাহির চোখ মেললো। চোখ মেলতেই অথৈর গলায় নিজের হাত শক্ত করে বাধা আর অথৈর পেটের উপর নিজেকে দেখতে পেলো। ও মাই গড আমি কি আরমান ভেবে অথৈর গলা টিপে ধরেছি??? মাহির দ্রুত নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে অথৈকে তুলে বসালো। অথৈ জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো আর কাশতে লাগলো। মাহির পানি এনে অথৈকে খেতে দিলো।

“”সরি অথৈ,আমি বুঝতে পারিনি যে ওটা আপনার গলা।””
“”আমার গলা হবেনা তো কার গলা হবে? আপনি এই জন্য দরজা আটকিয়েছেন যাতে আমাকে মেরে ফেলতে পারেন না?””

অথৈর কান্নার গতি বেড়ে যেতে লাগলো। মাহির নিজেকে ইচ্ছেমতো বকতে লাগলো। কি হওয়ার কথা ছিলো আর কি হলো। কোথায় আরমানের গলা আর কোথায় অথৈর গলা। মেয়ে মানুষের গলা আর ছেলে মানুষের গলা আমি চিন্তে পারলামনা? ছি!ছি!!ছি!!! মাহির,তোর তো বেচে থাকায় বৃথা। মাহির অথৈর চোখের পানি মুছতে লাগলো।

“”এসব কি বলছেন অথৈ? আমি এমন কেন ভাবতে যাবো? আমি তো ভেবেছিলাম এটা আরমানের গলা তাই!!!””
“”আরমানের গলা মানে? এখানে আরমান কিভাবে আসলো?””
“”এখানে না অথৈ, আমি স্বপ্নে দেখছিলাম।””
“”ওহ! তারমানে আপনি স্বপ্নেও আমাকে মারার প্লেন করেন? থাকবোনা আমি আর এখানে। আমি এখনি আব্বুর কাছে চলে যাবো।””
“”উফ! আপনি সবসময় নিজেরটাই শুনেন কেন? আমি যে বলছি বিশ্বাস হচ্ছেনা আপনার?? আর আপনি তো খাটে ছিলেন নিচে এলেন কি করে??””
“”ওটাতো ভয় পেয়ে এসেছিলাম। আপনি তো ইচ্ছে করেই আমাকে এই ভুতুরে রুমে রেখেছেন যাতে আমি ভয় পেয়ে আপনার কাছে যাই আর আপনি আমাকে মারতে পারেন।””

মাহির এবার বেশ রেগে গেলো। অথৈকে বিছানার সাথে চেপে ধরলো। অথৈর ছাড়া চুলের বেশকিছু অংশ মাহিরের আংগুলের সাথে আটকে গেলো যাতে অথৈর মাথায় ব্যথা অনুভব হতে লাগলো।

“”বারবার,মারার কথা বলছেন কেন? আপনি কি আমার ভালেবাসাটা চোখে দেখেননা? আমার চোখে ভালোবাসা খুজে পাননা? আমার কথায় ভালোবাসার ছোয়া পাননা? আমি আপনাকে মারতে যাবো কেন? আমি আপনাকে ভালেবাসতে চাই অথৈ,খুব কাছ থেকে ভালেবাসতে চাই। আপনার শরীরে সাথে লেপ্টে থাকতে চাই,যাতে আপনার প্রত্যেকটা নিশ্বাসের শব্দ সবার আগে আমি শুনতে পারি,আপনার হৃদস্পন্দের শব্দটা যাতে সবার আগে আমি শুনতে পাই। আপনার শরীরের মাতাল গন্ধটাও যেন সবার আগে আমি নিতে পারি। আর কিছু চাইনা আমি,আপনি বুঝতে পারছেন অথৈ? আপনি কি আমার কথা বুঝার কখনো চেষ্টা করেছেন??””
“”ব্যথা লাগছে।””

মাহির নিজের হাতটা আরো শক্ত করে নিলো। নিজেকে অথৈর আরো কাছে নিয়ে গেলো।

“”শুধু নিজের ব্যথা,নিজের ইচ্ছেটাকেই কেন বড় করে দেখেন? একটাবার আমার কথা ভেবেছেন? আপনার এসব আচরনে আমার কতটা ব্যথা লাগে???””
“”আমি কিছু ভাবতে চাইনা। ছাড়ুন আমাকে””

মাহির অথৈকে ছেড়ে দিলো। বুঝতে পারলো খুব বেশি ব্যথা পেয়েছে যা চোখের পানি দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে। মাহিরের বুকেও হালকা করে দাগ কেটে গেলো। মাঝে মাঝে কি হয় আমার? অথৈকে পাওয়ার এতো বেশি নেশা উঠে যায় কেন আমার??

অথৈ চুল ঠিক করে নিজের বাহুতে হাত বুলাতে লাগলো। কি নিষ্ঠুর, মনে হচ্ছে ফুলে গেছে। উনার হাততো মনে হচ্ছে লোহার চেয়েও শক্ত। এমন শক্ত হাত নিয়ে আসছে আমাকে ভালেবাসতে। গুন্ডা একটা। গুন্ডারাও এর থেকে ভালো হয়,হুম।

“”কোথায় যাচ্ছেন আপনি?””
“”আপনার মতো নিষ্ঠুরের সাথে আমি ঘুমাবোনা। দরকার হলে ছাদে গিয়ে ঘুমাবো।””
“”আসেন, আমি এগিয়ে দিয়ে আসি। এখন তো মধ্যরাত,শুনেছি মধ্যরাতে আত্মারা ঘুরাঘুরি করে। আরমানের আত্মা এসে আপনাকে গান শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যাবে””

অথৈ আত্মার কথা শুনে নিজের আত্মার পানি শুকিয়ে গেলো। চুপটি করে নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।

মিষ্টি রোদের আলো চোখে পড়তেই অথৈর ঘুম ভেংগে গেলো। পাখিদের মিষ্টি কন্ঠের গান অথৈর কানে আসতে লাগলো। ঠোটে হালকা হাসি ফুটিয়ে মিটিমিটি করে চোখ দুটো খুলতেই মাহিরকে ওয়াশরুম থেকে বের হতে দেখলো। মাথা ভর্তি চুলগুলো ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে। হাতের টাওয়ালটা দিয়ে মাথাটাতো মুচছেই কিন্তু একজায়গায় বারবার বুলাচ্ছে যার ফলে মাথার সিংহভাগই ভিজে পানি টু্পটুপ করে ঘাড়ে পড়ছে। আর সেই পানির ফুটা বেয়ে বেয়ে মাহিরের ফর্সাবুকের মধ্যে কালো পশমগুলোকে ছুয়ে দিচ্ছে। সকাল সকাল এমন দৃশ্য অথৈকে বেশ পুলকিত করলো। অথৈর পানি গুলোর সাথে বেশ ঝগড়া করতে ইচ্ছে হলো এমন বেলজ্জা কেন পানিগুলো? আমার তো দেখতেই লজ্জা লাগছে আর এই ওরা ঠিকই ছুয়ে দিচ্ছে। অথৈর বেশ খারাপ লাগলো মাহিরের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলো বেশ তাড়াহুড়োই আছে। টাওয়ালটা ফেলে দিয়ে শার্টটা হাতে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে থমকে গেলো। চুলটাও ঠিকমতো মুছতে শিখলোনা আবার আসছে আমাকে ভালেবাসতে। অথৈর ইচ্ছে হলো দুগালে কয়েকটা চিমটি দিয়ে গালগুলো লাল টকটক করে চুলগুলো মুছে দিতে।

“”আপনি কি দিয়ে দাত মাজেন বলুনতো??””

মাহিরের এমন প্রশ্নে অথৈ বেশ নড়েচড়ে বসলো। খানিকটা লজ্জা নিয়ে চাদরটা গায়ে তুলে নিয়ে বললো,

“”আপনাকে বলবো কেন?””
“”তাহলে আমিও ওইটা দিয়ে দাত মেজে আপনার মতো আমার দাতগুলোও শক্ত করতে পারতাম।””
“”মানে?””

মাহির শার্টের কলারটা নিচে নামিয়ে অথৈর উদ্দশ্যে বললো,

“”আমার দুই পাশে যে দাত বসিয়ে গর্তে করে দাগ কেটে দিয়েছেন। এটা পুরন করবো কিভাবে?””
“”কি বলতে চাচ্ছেন আপনি? আমি মাংস খায়, আমি কি রাক্ষস?””
“”তার থেকেও বেশি।””

অথৈ রাগ নিয়ে বিছানা থেকে উঠে এলো।

“”তার থেকে বেশি মানে??””

মাহির শার্টের বোতামগুলো লাগাতে লাগাতে বললো,

এখন অনেক তাড়া আাছে, অথৈ। বিকেলে এসে বলবো।

অথৈ নাক ফুলিয়ে মাহিরের কলারটা চেপে বললো,

“”এখনি বলতে হবে।””
“”বললাম তো এসে বলবো।””
“”নাহ,এখন বলবেন নাকি বলেন।””
“”বিকেলে……””

মাহির কথা শেষ করার আগেই নিজের শার্টের বেতামগুলো টপাটপ নিচে পড়তে লাগলো

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here