তোমাতে আসক্ত পর্ব ৯

#তোমাতে আসক্ত

নীলচুড়ি (রোকসানা)

পর্ব (৯)

অথৈ মাহিরকে জড়িয়ে ধরে কাপতে লাগলো। অথৈর কাপুনি মাহিরের বুকে ঝাকুনি দিচ্ছে। অথৈ এতটা মাহিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে যে মাহির নড়তেও পারছেনা। এভাবে একপাশ হয়েই মাহিরও চোখ বন্ধ করে নিলো। এক গভীর সাদাকালো স্বপ্নে ডুব দিলো।

সকালে মিসেস ইরানীর চিল্লাচিল্লির কারণে মাহিরের ঘুম ভাংলো। চোখ মেলেই অথৈকে নিজের বুকে আবিষ্কার করলো। মাহিরের ইচ্ছে করলো এভাবেই সারাজীবন কাটিয়ে দিতে। কি এমন ক্ষতি হয় যদি আজ ঘড়ির কাটা না ঘুরে?? ভাবতে না ভাবতেই মাহিরের পাশেই রাখা এলার্ম ক্লকটা বেজে উঠলো। মাহির তাড়াহুড়ো করে বাম হাতদিয়ে বন্ধ করে নিলো। অথৈর দিকে তাকাতেই বুঝলো সে গভীর ঘুমে মগ্ন। দেখতে বেশ মায়াবী লাগছে। কপালের ছোট চুলগুলো অথৈর শুকনো ঠোটে লেপটে আছে। হাতের নরম আংগুলগুলো দিয়ে মাহিরের শার্টের বুকের কাছটাতে যে বোতামটা আছে ওটাতে চিমটি দিয়ে ধরে আছে। মাহিরের মনে হলো এই মেয়ে মনে হয় স্বপ্নেও তার শার্ট ছিড়ে ফেলছে। আমার খুনিরানীটা শুধু শার্টই খুন করবে নাকি মাঝে মাঝে আমাকেও খুন করবে? আমার যে আপনার ওই শুকনো ঠোটে খুন হতে ইচ্ছে করছে। মাহিরের খুব ইচ্ছে হলো যদি সে অথৈর কপালের এই ছোট চুল হতো তাহলেতো সেও তার ঠোটে এভাবে লেপটে থাকতে পারতো। ইশ! কেন যে চুল হতে পারলাম না। বেশ আফসোস নিয়েই বা হাত দিয়ে চুলগুলো সরাতে লাগলো। হঠাৎ খালামনির চিল্লাচিল্লির শব্দে খানিকটা নড়ে উঠলো অথৈ।

মাহির কপালে হাত বুলাতেই আবার গভীর ঘুমে পাড়ি দিলো। মাহির এই সুযোগে আলতো করে অথৈর বাধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো।

“”এই ছেলে তোমার সাহস কি করে হলো আমার কিচেন রুমে ঢুকার? বের হও বলছি।””
“”…..””
“”কি হলো আমার কথা কানে যাচ্ছেনা? কানে কি বালু ঢুকিয়ে রাখছো যে আমার কথা কানে ঢুকছেনা?””
“”খালাম্মা বেলুনটা কোথায়? আমি বেলুনটা খুজে পাচ্ছিনা। একটু খুজে দিবে?””

আরমানের ব্যবহারে বেশ রেগে গেলেন মিসেস ইরানী। আধা ঘন্টার মতো এই ছেলের পিছে পিছে ঘুরছে আর বকে যাচ্ছে কিন্তু সেদিকে এই ছেলের কোনো খেয়ালি নেই! নিজের মতো ঘুরঘুর করছে আর মিসেস ইরানীর সাজানো রান্নাঘর তছনছ করছে। নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারলেননা মিসেস ইরানী। পাশ থেকেই সবজি কাটার ছুড়িটা নিয়ে আরমানের দিকে তেড়ে এলেন। লক্ষ্য একটাই আরমানের পেটের ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া।

মাহির রান্নাঘরের ঢুকেই এমন সর্বনাশী কান্ড দেখে দৌড়ে এলো। মিসেস ইরানীর হাতটা নিজের হাতের বাধনে নিয়ে বললো,

“”খালামনি কি করছো? সত্যি সত্তি মেরে ফেলবে নাকি?””
“”হুম। ওকে মেরে আমি জেলখানায় গিয়ে থাকবো। তবু এই ছেলের হাতে আমার স্বাদের রান্বাঘরের অকাল মৃত্যু কিছুতেই হতে দিবোনা। মাহির ছাড় আমাকে। আজ ওর একদিন কি আমার যতদিন লাগে।””

খালামনি যে রাগের চরম পর্যায়ে চলে গেছে তা বুঝতে মাহিরের দেরি হলোনা। দুজনের দস্তাদস্তিতে এখন যে কারো পেট ছুড়ি দখল করে নিতে পারে সেটাও বুঝতে বাকি রইলোনা। কিন্তু অবাক করার বিষয় আরমানের এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেয়। সে বেশ মনোযোগ দিয়েই রুটি বেলাই ব্যস্ত। এদিকে খালামনির সাথে পেড়ে উঠছেনা মাহির। কিছুটা মাথা খাটিয়ে বললো,

“”তুমি জেলখানায় গিয়ে থাকলে খালুর কি হবে খালামনি? খালু তো তোমাকে ছাড়া ঘুমাতে পারেনা জানোনা? আর জেলখানায় কিন্তু ছেলেমেয়ে আলাদা থাকতে হয়। তখন খালুর কি হবে ভাবতে পারছো?””

মিরার বাবার কথা সামনে আসতেই মিসেস ইরানী চুপ হয়ে গেলো। ছুড়িটা মাহিরের হাতে দিয়ে বললো,

“”ঠিক বলেছিস। আমি জেলে গেলে মিরার বাবার কি হবে? দাড়া আমি ওকে একটা ফোন দিয়ে জেনে আসি দুজনে এক সাথে থাকার কোনো ব্যবস্থা করতে পারে নাকি।””

মিসেস ইরানী রান্নাঘর থেকে বের হতেই মাহির আরমানের কাছে গেলো।

“”আরমান তুমি রান্নাঘরে কি করছো?””
“”ভাইয়া তুমি কি কানা? আমার অথৈমনি কি একটা কানা ভাইয়াকে বিয়ে করলো?””
“”Shut up. যে প্রশ্ন করছি তার উত্তর দাও আর খবরদার তুমি অথৈকে অথৈমনি বলবেনা বলে দিলাম!””
“”আমার অথৈমনিকে আমার যা খুশি তাই ডাকবো আপনার কি? দুর আপনার জন্য আমার পরোটা পুরে গেলো সরেন তো।””
“”পরোটা তোমার মাথায় আগুন ধরিয়ে ভাজবো। আমার কি মানে? অথৈ আমার বউ হয়। আমার বউকে তুমি অথৈমনি ডাকবে আর আমার কিছু হবেনা? এটা কি জগের মুল্লুক পায়ছো?””
“”উফ! জগের মুল্লুক না ভাইয়া মগের মুল্লুক হবে। এইটাই ঠিক করে বলতে পারেননা তাহলে আমার অথৈ মনিকে আপনি কিভাবে সামলাবেন? আংকেল যে কেন আপনার সাথে অথৈমনিকে বিয়ে দিলো বুঝলামনা। আংকেলের চশমা পড়া উচিত। চোখের পাওয়ার কমে গেছে এই জন্যই আমাকে চোখে পড়লোনা!!!”””

আরমান বিরক্ত আর আফসোস মিশিয়ে খাবার টেবিলে সব সাজিয়ে অথৈর রুমের দিকে ছুটলো। তাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে সে বেশ উৎফুল্লমনে আছে। যত যন্ত্রনা সব মাহিরের। আরমানকে নিজের রুমে যেতে দেখে মাহিরও পিছু পিছু ছুটলো। আরমান হাটু ঘেরে বসে অথৈকে ফিসফিস করে ডাকতে লাগলো। অথৈ আড়মুড়িয়ে উল্টো দিকে ঘুরে ঘুমঘুম কন্ঠে বললো,

“”মাহির বেশরম,সকাল সকাল আমার ঘুমটা নষ্ট করবেননা। যান তো এখান থেকে।””
“”অথৈমনি ভাইয়া না তোমার আরমান তোমাকে ডাকছে
উঠো নাস্তা……”””

আরমানের মুখ চেপে ধরলো মাহির।

“”ওই তুই কি আমার রাগের পরীক্ষা নিচ্ছিস? তোর কি মনে ভয় নাই? আমার রুমে এসে আমার বউয়ের ঘুমের ডিস্টার্ভ করছিস?””

আরমান নিজের মুখ ছুটিয়ে বললো,

“”ছি!ছি!ছি!!! ভাইয়া এসব কি ব্যবহার? আপনি আমাকে তুই তুই করে বলছেন?””
“”তোকে তুই কেন আরো কিছু থাকলেও বলতাম। ইডিয়েট,লম্পট, অসভ…..”””

“”আহ! আপনারা সকাল সকাল কি শুরু করছেন? উফ! আমার ঘুমের বারেটা বাজিয়ে দিলো!!”””

অথৈর চিল্লানিতে মাহির আর আরমান দুজনেই লাফিয়ে উঠলো। আরমান ঠোটে হাসি ফুটিয়ে নিলো,,

“”অথৈমনি তুমি উঠে গেছো? যাও ফ্রেস হয়ে আসো। আমি তোমার পছন্দের আলুর পরোটা বানিয়েছি।”””
“”আরমান তুমি জানোনা আমি ১০ টার আগে খায়না? আমাকে কেন উঠালে?”””
“”সরি অথৈমনি ভুলে গেছিলাম।”””
“”কিসের সরি? যাও একপা উচু করে কানে ধরে দাড়িয়ে থাকো।”””
“”ওকে অথৈমনি।””

আরমান ছোট বাচ্চাদের মতো একপা উচু করে কানে ধরে দাড়িয়ে রইলো। অথৈ মাহিরের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো।

এসব কি হচ্ছে? আরমানের দিকে তাকিয়ে মাহিরের খুব মায়া লাগলো। বেচারা ভালোবেসে সকাল সকাল এতো কষ্ট করে ব্রেকফাস্ট বানালো তার বিনিময়ে এই শাস্তি পেলো? অথৈর কাছে ভালোবাসা মানে কি অন্যজনকে কষ্ট দেওয়া???

“”কি হলো আপনি এভাবে দাড়িয়ে আছেন কেন? আরমানের মতো আপনিও সমান অপরাধী।””

মাহির ঢুক গিলে শুকনো গলা ভিজিয়ে বললো,

“”আমাকেও কান ধরতে হবে???”””

অথৈ টুপ করে ভাবনার সাগরে ঢুক দিয়ে ভিজে এসে বললো,,

“”আপনার শাস্তি অন্যরকম হবে।””
“”অন্যরকম মানে?””

অথৈ দুষ্টুমির হাসি দিয়ে আরমানের দিকে ফিরলো,,,

“”আরমান আমার ক্ষুধা পেয়েছে,আমাকে খাওয়াই দিবানা?””

আরমান বিশ্বভুলানোর হাসি দিয়ে অথৈকে নিয়ে নিচে নেমে আসলো। অথৈ চোখের ইশারাতে মাহিরকেও আসতে বললো,,,

“””অথৈমনি এই দেখ এগুলো আমি নিজের হাতে বানিয়েছি। নাও হা করো।”””

অথৈ হা করে আরমানের কাছ থেকে পরোটা খেতে লাগলো আর মাহিরের দিকে তাকিয়ে মিস্টি হাসি হাসতে লাগলো। মাহিরকে ঠিক তার সামনে বসিয়ে রেখেছে যাতে শাস্তিটা ঠিক মতো দিতে পারে।

“”একদিনেই তুমি কতোটা শুকিয়ে গেছো অথৈমনি। আমি না থাকলে তোমার কি হবে বলোতো? তুমি তো শুটকির মতো চিকন হয়ে যাবে। পরে দেখা যাবে মানুষ তোমাকে শুটকি ভেবে রান্না করে খেয়ে ফেলছে।””

আরমান বকবক করতে করতে আরেকটু পরোটা অথৈর মুখে গুজে দিলো। মাহিরের মনে হচ্ছে সে আগুনের শিখার উপরে বসে আছে। তফাৎ এটায় তার পিঠের নিম্নভাগে জ্বলার বদলে মাথার ভেতরে জ্বলে যাচ্ছে। পুরো মাথা হিট হয়ে গেছে। নিজের বউ অন্যপুরুষের হাতে তৃপ্তি করে খাচ্ছে আর সে অমায়িক দৃশ্য নিজে চক্ষুদর্শন করছে। এটাই কি তার প্রাপ্য???

মাহির আর সহ্য করতে পারলোনা। চেয়ার থেকে উঠে এসে আরমানের সামনে থেকে পরোটার প্লেটটা নিয়ে মাটিতে ছুড়ে ফেললো। টেবিলের উপর যা আছে সব তছনছ করে ফেললো। এমনকি টেবিলটাও রক্ষা পেলোনা সেটাও উচু করে আছার মারলো। তারপর নিজের ভয়ংকর রুপ নিয়ে অথৈর দিকে ছুটে এলো

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here