তোমাতে করিবো বাস পর্ব -১০+১১

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_১০
লেখনীতে-আফনান লারা
.
সকাল ৯টার সময় তটিনি চোখ খুললো।এখনও খুলতোনা,কালকের ক্লান্তি তার চোখে আরও ঘুম রেখেছিল।ঘুম ভেঙ্গে যাবার কারণ বাহিরের কোলাহল। এত বেশি চেঁচামেচি চলছে সে উঠতে বাধ্য হলো।মাথায় হাত দিয়ে সামনে তাকাতেই বাপ্পির মুখ দেখলো সে।ডিভানে গুটিশুটি দিয়ে শুয়ে আছে সে।কানে তুলা গুজে রেখেছে এটা তটিনি দেখেনি।তার কানে তুলা গুজার কারণ যেহেতু সে দেরি করে ওঠার মানুষ,বাড়ির কোলাহল তো আর ধরে রাখা যায়না,এ কারণে কানে তুলা গুজে ঘুমায় সে যাতে করে সকালে ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে।
তটিনি এবার কানে হাত দিয়ে বিছানা থেকে নামলো।বাপ্পির থেকে নজর হটিয়ে দরজা আটকে দিলো।কাল রাতে বাপ্পি দরজা লাগায়নি।লাগালে আর এত আওয়াজ আসতোনা।
বাপ্পি আসলে কখনওই দরজা লাগায়না।এখন থেকে তাকে দরজা লাগানো শিখতে হবে।
তটিনি দরজাটা আটকে দিয়ে নিজের ব্যাগ খুঁজতে লাগলো।তার সাথে কাল যে দুটো ট্রলি ব্যাগ এসেছে বাড়ি থেকে সেগুলোর একটাও রুমে খুঁজে পেলোনা।তাই আবার দরজা খুলে বাহিরে বের হতেই বকুল আপুর মুখোমুখি হলো সে।বকুল আপু তটিনির পা থেকে মাথা একবার পরোক করে নিয়ে গম্ভীর গলয বললেন,’নতুন বউকে এমন বেশে মানায় না,তোমায় না বলেছি বড় ঘোমটা দিয়ে রাখবে?কেউ এখনও তেমার মুখ দেখেছে?উপহার দিয়েছে?তাহলে ঘোমটা সরালে কেন?আমরা বৌভাতের সে শাড়ীটা পাঠিয়েছি সেটা পরে সেটার সাথের ঘোমটা টেনে বিছানায় বসে থাকবে,এত বাহিরে ঘুরঘুর করবেনা।ঠিক আছে?’

‘বাবা তো অসুস্থ। মামা বলছিল আজকে বৌভাত হবেনা।আরও কয়েকদিন পরে হবে।’

‘জানি।কিন্তু তাও তুমি আজ সেই শাড়ীটা পরবে।কারণ আজ আমাদের অনেক আত্নীয় স্বজন আসবে বাসায়।তোমার জন্য বৌভাতের আরেকটা শাড়ী আনা হবে।আপাতত ঐ শাড়ীটা পরো।আর তোমার ব্যাগ তো কাল রুমেই ঢুকাও নাই।সোফার রুমে পড়ে আছে,আমি কাজের লোককে দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি,সরে দাঁড়াও’

তটিনি মাথা নাড়িয়ে সরে দাঁড়ালো।এক মিনিটের ভেতর দুজন লোক এসে ব্যাগগুলো রুমে ঢুকিয়ে চলে গেলো।তটিনি চুপচাপ রুমে যাওয়া ধরতেই বকুল আপু ওর হাত ধরে ফেললেন।এরপর মুচকি হেসে বললেন,’বড় বোন হিসেবে দেখবে।আমার কথায় কষ্ট পেও না।বাপ্পিকে আমি যে আদর করি,তোমাকেও সেই আদরটা দিব,তুমি শুধু আমায় বাপ্পির মত করে সম্মান করো’

তটিনি মাথা নাড়িয়ে রুমে চলে আসলো।এসে ট্রলি ব্যাগ খুলে বৌভাতের শাড়ীটা বের করে ওয়াশরুমের দরজায় হাত রেখে আর খুলতে পারছেনা সে।
অনেক চেষ্টা করেও দরজা সে খুলতে পারেনি।ছিটকিনি খোলার পরেও ওয়াশরুমে আরেকটা লক দেয়া।আজব কারবার!ওয়াশরুমে কেউ এমন লক দেয়?অনেক টানাটানি করার পর তটিনি বুঝলো চাবি দিয়ে খুলবে এটা।এবার সে পুরো রুম তদন্ত করলো তাও সেই চাবি পেলোনা যেটা দিয়ে ওয়াশরুম খুলবে।বিড়বিড় করতে করতে বাপ্পির কাছে এসে দাঁড়ায় তটিনি।বাপ্পি আরামসে ঘুমাচ্ছে।ওকে পাঁচবার ডাকার পরেও সে ওঠেনি।এদিকে ওকে ধরে জাগানোর ইচ্ছা আসছিল না তটিনির।বাপ্পি যে কানে তুলা দিয়ে রেখেছে সেটা চোখে পড়তেই কান থেকে তুলা বের করলো সে।এরপর আবারও ডাক দিলো।এবারও কোনো রেসপন্স নাই।বাধ্য হয়ে বাপ্পিকে না ডেকেই শাড়ী নিয়ে হাঁটা ধরলো সে।পরে মনে পড়লো বকুল আপু বলেছে কেউ যাতে মুখ না দেখে।তারপর আবার হাঁটা থামিয়ে বাপ্পির কাছে আসে সে।এবার এই লোকটাকে ধরেই জাগাতে হবে,আর কেনো উপায় নাই।
ডান হাতটা বাড়িয়ে বাপ্পির কাঁধে রাখে তটিনি।তারপর হালকা করে চাপ দিয়ে ওকে ডাকে।কোনো সাড়া নাই।রাতে কম ঘুমালে সকাল বেলা মানুষ এমন মরার মতন ঘুমায় তা জানা ছিল না তটিনির।তাই এবার জোর দিয়েই চাপ দিলো সে।অবশেষে বাপ্পি চোখ খুলে।তটিনিকে চোখের সামনে দেখে মুচকি হেসে বলে’গুড মর্নিং’

‘রাখেন আপনার গুড মর্নিং!ওয়াশরুমে কোন ছাগলে লক করে রাখে??’

‘সেই ছাগল আমার আপু।এভাবে কাউকে না জেনে ছাগল বলবেনা।লক করার কারণ বিয়েবাড়িতে কিছু মেহমান থাকে,তাদের জন্য বারতি ওয়াশরুম থাকার পরেও পার্সোনাল ওয়াশরুমে ঢুকে ইউজ করে বাজে ভাবে রেখে যায়।সেটা থেকে বাঁচতে লক করে রাখা।বুঝেছো?’

‘এখন কি আমাকেও ইউজ করতে দেয়া হবেনা?’

বাপ্পি ডিভান থেকে উঠেই ঘাড়ে হাত রাখলো।ডিভানে শোয়ার কারণে কাঁধ ব্যাথা ধরে গেছে।চোখ ডলতে ডলতে পকেটে হাত দিয়ে চাবি বের করে দরজার লক খুলে দেয় সে।
তটিনি কিছু না বলেই ভেতরে চলে গেছে।

তার ঠিক দশ মিনিট পর বকুল আপু হাতে নাস্তার ট্রে নিয়ে ওদের রুমে এসে দেখেন বাপ্পি ডিভানে বসে কাঁধে চাপ দিচ্ছে নিজে নিজে আর ব্যাথায় উহঃ উহঃ করছে।
বকুল আপু ট্রেটা টেবিলের উপর রেখে চুপচাপ চলে গেছেন।বাপ্পি ওনার উপস্থিতি টেরও পায়নি।
তটিনির জন্য আনা শাড়ীটা ছিল গাঢ় সবুজ রঙের।ঘোমটাও সবুজ রঙের ছিল।তৈরি হয়ে নিয়ে সে বের হতেই দেখে বাপ্পি ডিভানে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।তটিনি ঘোমটা ঠিক করতে করতে বিছানায় এসে বসতেই বকুল আপুকে দেখে আবার উঠে দাঁড়িয়ে গেলো।বকুল আপু হাতে একটা বাটি নিয়ে এসেছেন।তাতে গরম জলপাইয়ের তেল।বাটিটা তটিনির হাতে ধরিয়ে দিলেন,এরপর তিনি বললেন,’বাপ্পির কাঁধে হয়ত ব্যাথা করছে।সুন্দরভাবে মালিশ করে দেও’

তটিনি মাথা নাড়িয়ে চুপ করে থাকলো।বকুল আপু এবার বললেন,’কি হলো?দাও!আমার সামনে দাও।আমি দেখবো কেমন করে মালিশ করো তুমি।এমনিতেও বাপ্পির কদিন পরপরই গারগতর ব্যাথা করে।সারাজীবন তোমাকেই এমন মালিশ করে দিতে হবে,ঔষুধ খাইয়ে শরীর পঁচানো যাবেনা’

তটিনি মনে মনে বাপ্পিকে বকতে বকতে বাপ্পির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।এরপরও কিছু বলেনা।বকুল আপু বিছানায় বসে বললেন,’বাপ্পি উঠে বস!!তটিনি তোর কাঁধে তেল মালিশ করবে’

এ কথা শুনে বাপ্পি চোখ বড় করে লাফ দিয়ে উঠে বসে তটিনির দিকে তাকায়।তটিনি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাপ্পির দিকে।বাপ্পি ওর চাহনি দেখে আপুর দিকে তাকিয়ে বলে,’আরেহ না না।আমার তো কাঁধে ব্যাথা করছেনা।কে বললো?’

‘আমি দেখেছি নিজের চোখে।চুপ করে গায়ের শেরওয়ানি খোল এখন।তেল ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।আমি বাপু আবার তেল গরম করতে পারবোনা।এমনিতেও দুই চুলায় মাংসের পাতিল বসানো।তেল গরম করার জন্য খালি চুলা নাই
জলদি কর!!”

আপুর ধমকে বাপ্পি বাধ্য হয়ে শেরওয়ানি খুলে নিলো।তটিনির হাত কাঁপছে।জীবনে একবার লুকিয়ে আসিফ ভাইয়ার উদম দেহ দেখছিল,দুই বছর আগে।ভাইয়া গোসল করে তোয়ালে খুঁজতেছিল সেইসময় লুকিয়ে সে ভাইয়ার উদম দেহ দেখছিল।এরপর আর সাহস করেনি দেখার।আর আজ নিজের স্বামীর শরীর!!!”

তটিনির হাত কাঁপতে দেখে বাপ্পি ওর হাত থেকে বাটিটা ছিনিয়ে নিয়ে বললো,’আপু আমি লাগিয়ে নিব,তটিনিকে করতে হবেনা।তুমি যাও কাজে।এত ব্যস্ত হইওনা তো!’

‘তুই এমন ভয় পাচ্ছিস কেন?তোর মালিশ তোর বউই করতে আসছে,পর নারী আসে নাই।এমন ভাব করছিস যেন আমি কোথাকার কোন মেয়েকে দিয়ে তোর মালিশ করাবো!!তোর নিজের বউকেই দায়িত্ব দিছি।তাছাড়া স্বামীর সেবা তটিনিকে শিখতে হবে।কোনো কিছু শিখা তো অপরাধ না’

তটিনি দাঁতে দাঁত চেপে বাপ্পির হাত থেকে বাটিটা আবার কেড়ে নিলো।তারপর ধপ করে ডিভানে হাঁটু গেড়ে বসে বাপ্পির কাঁধে তেল দিয়ে মালিশ করা শুরু করে দিলো।বকুল আপু কাছে এসে বললেন,’গলার দিকেও দাও,ওর আরাম লাগবে।সুন্দর করে ঘঁষো।দুহাতের জোর লাগাও।এত আস্তে দিলে ওর ব্যাথা আরও বাড়বে’

তটিনি রাগের চোটে জোরে জেরে চাপছে এবার।বাপ্পি জানে তটিনি বাধ্য হয়ে করছে।সেও চায়নি এমনটা হোক।আপু এভাবে এসে সব কিছুতে পানি ঢেলে দিবে কে জানতো?
তটিনির হাত অনেক নরম।বাপ্পির ব্যাথাটা পাঁচ মিনিটেই গায়েব হয়ে গেছে, তার খুব ভাল লাগলো মালিশে।তটিনির হাতের সবুজ রঙের চুড়ি গুলার আওয়াজ আর বাপ্পির খালি পিঠে সেই চুড়ির স্পর্শ বাপ্পিকে তটিনির প্রতি আরও আসক্ত করে তুলছিল।
সে বারবার আয়নার দিকে তাকাচ্ছিল।আয়নাতে তটিনিকে স্পষ্ট দেখা যায়।মুখটা ফুলিয়ে কাজ করছে সে।পাক্কা দশ মিনিট পর বকুল আপু চলে গেলেন।
ওমনি বাপ্পি বললো,’হইছে আর লাগবেনা’

‘না করি।কাঁধের গুষ্টি উদ্ধার করবো আজ’

‘রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। সরি আসলে আমার দোষেই!!’

তটিনি হাত সরিয়ে এবার নিজের হাত টিপতে টিপতে বললো,’আমার নিজেরই হাত ব্যাথা হয়ে গেছে।স্বামী সেবা করতে আসছি আমি এ বাড়িতে??’

‘সরি’

তটিনি রেগেমেগে ডিভান থেকে নেমে দ্রুত হাঁটতে যেয়ে শাড়ীর কুচিতে পা লেগে ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেলো বাপ্পির চোখের সামনে।কুচি খুলে তো গেছেই,এর সাথে সে পায়েও ব্যাথা পেলো।বাপ্পি উঠে দাঁড়িয়ে ওকে তুলতে যেতেই তটিনি বললো,’খবরদার! ধরবেন না একদম!’

‘এত রাগের মানে কি?আমি তো হেল্পই করতে চাইতেছি’

‘শাড়ীর কুচি খুলে গেছে।আপনি ওদিকে ফিরে দাঁড়ান।আমি নিজে নিজে উঠতে পারবো।এভাবে ভারী শাড়ী পরার অভ্যাস নেই আমার,তাই পড়ে গেছি নাহয় আমি পড়ার মতন মেয়ে না😏’

বাপ্পি অন্যদিকে ফিরে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছে।
চলবে♥তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_১১
লেখনীতে-আফনান লারা
.
আসিফ ভোরে উঠেই বাসার পাশের মসজিদে নামাজ পড়তে চলে গিয়েছিল।এদিকে রিনি তখনও ঘুমাচ্ছে।রাতে যে খুব একটা ভাল ঘুম হয়েছে তা কিন্তু মোটেও নয়।সারারাত হাত পা ছড়িয়ে সে আসিফের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়েছিল। শেষে বাধ্য হয়ে আসিফ ভোর হতেই ছুট লাগিয়েছে মসজিদে।
রিনির ঘুম ভেঙ্গেছে তটিনির মামির ডাকে।তিনি নাস্তা তৈরি করেছেন সেটা খাওয়ার জন্য ওকে ডেকে চলে গেছেন আবার।সবাই এবার তটিনির বাবাকে দেখতে হাসপাতালে যাবেন,সাথে কিছু খাবার নিবেন তটিনির মা আর ঐশীর জন্য।তারা হয়ত এখনও না খেয়ে আছে ওখানে।
রিনিকে বাসাতেই রেখে যাবেন।ওদের আর যেয়ে কাজ নেই।আসিফ জানেনা সবাই যে এক এক করে হাসপাতাল চলে যাচ্ছে।সে যখন মসজিদ থেকে বাসায় ফিরলো তখন বাসায় রিনি ছাড়া আর কেউ ছিলনা।
রিনি আচারের বোয়াম নিয়ে পুরো বাসায় ঘুরঘুর করছিল।আসিফ এসেছে দেখে ওর কাছে গিয়ে বললো,’খাইবেন্নি?জলপির আচার’

‘সকাল সকাল পাগল ছাড়া কেউ আচার খায়না’

‘আঁই তো হাগলই!!আন্নেও হাগল অন।দুই হাগলের সংসার সেই অইবো🤘😌!’

আসিফ গাল ফুলিয়ে সোফায় বসে টিভিটা অন করে বললো,’তোকে আর এখানে থাকতে হবেনা।বিয়ের আগে কি কথা হয়েছিল?আমি চাকরি পাওয়া অবধি তোকে আর আমাকে এক সাথে থাকতে দেয়া হবেনা।সে শর্ত ভাঙ্গা হলো কেন?’

রিনি আসিফের পাশে সোফায় পা তুলে বসে ওর দিকে ফিরে বলে,’আঁর মনে কইছে আঁই আঁর জামাইর লগে থাইক্কাম।গুষ্টি কিলাই আন্নের শর্তের!’

‘এসব বলে লাভ নেই।আমার আর তিনদিন পর থেকে ফাইনাল পরীক্ষা। আমি আজই তোকে নোয়াখালীতে রেখে আসবো। এত ঝামেলা পোহাতে পারবোনা’

রিনি রেগে আগুন হয়ে বললো,’কিচ্চি!আন্নেরে আঁই কিচ্চি?খাইতাছি এয়ানে,শুইতাছি এয়ান!!তো আন্নের কোনানদি ঝামেলা লাগে?আঁরে কি কোলে লই আডেন??’
[কি করছি?আপনাকে আমি কি করছি?খাচ্ছি এখানে,শুইতেছি এখানে।তো আপনার কোন দিক দিয়ে ঝামেলা লাগে?আমাকে কি কোলে নিয়ে হাঁটেন?’]

‘আর ওটাই বাকি ছিল।এসন গরম দেখাবিনা আমায়।আমি তোকে আজ দিয়ে আসবো সেটাই ফাইনাল’

‘আঁই যাইতাম “ন”।কিরবেন করেন!যদি আঁরে রাখিও আসেন,আঁই আবার চলি আইয়াম!’

আসিফ বিরক্ত হয়ে তার রুমে চলে গেলো।রুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজাটা লাগিয়ে দিলো যাতে করে রিনি এসে জ্বালাতে না পারে’
———–
বাপ্পি কানে তুলা লাগিয়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়েছে।তটিনি একা একা নাস্তা সেরে বাপ্পির ফোন খুঁজে হাসপাতালে ঐশীর কাছে কল করলো।ঐশী রিসিভ করে জানিয়েছে বাবার শরীর এখন মোটামুটি ভাল আছে,বাসার সবাই চলে এসছে তাকে দেখার জন্য।তটিনি জানালো তার শ্বশুর বাড়ির সবাই যাবে বাবাকে দেখতে।এই বলে সে ফোন রাখে।বাপ্পির ফোনে লক করা নেই,তটিনির মন চাইলো একবার ঘেঁটে দেখার।সবার আগে সে গ্যালারিতে গেলো।গিয়ে দেখে বাপ্পির বন্ধুদের সাথে তোলা কিছু ছবি আর তটিনির গায়ে হলুদের কিছু ছবি।তই ছবিগুলো ঐশী মেসেঞ্জারে পাঠিয়েছিল বাপ্পিকে।তটিনি এবার ডাটা অন করে মেসেঞ্জারে ঢুকলো।ওমা!কত গুলো মেয়ের মেসেজ!
তবে একটারও রিপ্লাই করেনি বাপ্পি।এটা দেখে তটিনি খুশি হলো।ফোন রেখে বাপ্পির দিকে তাকিয়ে ভাবছে সে কেন খুশি হলো!বাপ্পি যদি ঐ মেয়েগুলোর মেসেজের উত্তর দিতো ও তবে তার কি যায় আসে??
কি যেন ভেবে তটিনি আবার ফোনটা হাতে নেয়।সেই মেসেজগুলো আবারও পড়ে তারপর রিপ্লাই করলো,’সরি আমার বউয়ের সাথে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিলাম তাই রিপ্লাই করতে পারিনি।কিছু বলবেন আপু?’

এই মেসেগুলো সে সব কয়টা মেয়েকে পাঠিয়ে ফোনটা আবার আগের জায়গায় রেখে দিয়েছে।মনে এক পৈশাচিক আনন্দ অনুভূত হচ্ছে তার।মিটমিট করে হাসছিল সে।ওমনি দরজা খোলার আওয়াজ শুনে ঘোমটা টেনে বসে গেলো।বাপ্পির মেজো খালা আর খালু ঢুকছেন রুমে।তটিনি ঘোমটা টান দিয়ে বিছানা থেকে নেমে ওনাদের সালাম দিলো।খালা রুমে ঢুকেই বাপ্পিকে ডিভানে শুতে দেখে বললেন,’তওবা তওবা! নতুন বউ!এই সব কি দেখছি!তুমি কি সিনেমার নায়িকাদের মতন বাপ্পিকে রাতে আলাদা শুইয়েছো নাকি!’

তটিনি চোখ কপালে তুলে বাপ্পির দিকে তাকিয়ে আছে।বাপ্পি তখনও ঘুমে ছিল।খালা ওর কাছে এসে বললেন,’কানাঘুষোয় শুনছিলাম তুমি বিয়েতে রাজি ছিলেনা,তাই বলে আমাদের ছেলেটাকে এভাবে কষ্ট দিবা?ডিভানে শোয়া কত কষ্টের জানো তুমি?সামান্য বসলেই কোমড় ব্যাথা ধরে যায়,শোয়া তো দূরের ব্যাপার।
কাল সারারাত ও এভাবে ঘুমিয়েছিল নাকি?শুনছো মেহের আপা!দেখে যাও!!নতুন বউ কি কান্ড ঘটিয়েছে দেখে যাও!’

তটিনি ঢোক গিলে বাপ্পির কাছে এসে ওর হাত ধরে টানছে ওকে ঘুম থেকে তোলার জন্য।এদিকে ওর মা ছুটে চলে এসেছেন নিজের বোনের আওয়াজ শুনে।এসেই শুনলেন তটিনি নাকি বাপ্পিকে সারারাত ডিভানে শুইয়েছে।মা কড়া নজরে তটিনির দিকে তাকালেন তখ।তটিনি থতমত খেয়ে বললো,’না আন্টি।সেটা নয়।উনি তো এমনি অফিসের কাজ করতে করতে এখানে শুয়েছেন।সারারাত ঐ বিছানাতেই শুয়েছিল’

বাপ্পির মা বিশ্বাস করলেন না,মোট কথা বাসার কেউই বিশ্বাস করেনি।তটিনি যে বিয়েতে রাজি ছিল না এ কথা সকলের জানা আছে।তাই এখন বাপ্পির এই হালে সকলেই তটিনির উপর অসন্তুষ্ট।
তটিনি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বাপ্পিকে দেখছিল।কখন সে উঠবে আর কখন ওকে বাঁচাবে, এরা সবাই মিলে তো মনে হয় ওকে কাঁচাই চিবিয়ে খেয়ে নিবে আর কিছু সময় থাকলে।খালা বাপ্পিকে ডেকে তুললেন।রুম ভর্তি মানুষ দেখে বাপ্পি আগে কান থেকে তুলা বের করে নিলো।সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।বাপ্পি তটিনিকে ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকত দেখে এবার মাকে প্রশ্ন করলো ঠিক কি হয়েছে।

‘কি হয়েছে মানে!তুই আগে এটা বল তুই কি কাল সারারাত ডিভানে শুয়েছিলি?’

বাপ্পি বুঝে গেছে কি ঝামেলা হয়েছে।সে ডিভান থেকে চট করে উঠে বিছানায় বসে বললো,’কে বলেছে এ কথা?আমি সকালে ফ্রেশ হয়ে ডিভানে বসে অফিসের কিছু কাজ করতে করতে ওখানেই শুয়ে পড়েছিলাম।তাই বলে কি সারা রাত ডিভানে শুয়েছি নাকি?আমার অভ্যাস নাই তো ডিভানে শোয়ার’

খালা কোমড়ে হাত রেখে এগিয়ে এসে বললেন,’তবে যে বকুল বলছিল তোর নাকি প্রচণ্ড ঘাড় ব্যাঘা!’

‘ওটা তো আমার মাঝে মধ্যেই হয়।কাল কত দখল গেছে সেকারণেই।’

খালা আর কথা বাড়ালেন না।আসল বাপ্পি যখন কোনো অভিযোগ তুলছেনা সেখানে তিনি একা চেঁচামেচি করে কি হবে।সোজা তটিনির কাছে এসে ওর ঘোমটা তুলে মুখ দেখে হাত ধরে আঙ্গুলে একটা মোটা সোনার আংটি পরিয়ে দিয়ে বললেন,’বাপ্পি আমাদের খুব আদরের ছেলে।
আজকের ঘটনা যদি বাপ্পির কথায় সত্যি হয়ে থাকে তবে আলহামদুলিল্লাহ। আর যদি এর পেছনে মিথ্যে লুকিয়ে থাকে তবে তোমায় সাবধান করছি!বাপ্পিকে আমরা যে আদরে বড় করেছি, যে আদরে রাখছি সে মর্যাদা তুমি রাখবে।বুঝলে?’

তটিনি মাথা নাড়ালো।খালা মুখ বাঁকিয়ে খালুকে নিয়ে চলে গেলেন।মিসেস মেহের কাছে এসে তটিনির হাত ধরে আংটিটা ধরে বললেন,’আপা বকুলের বিয়েতে ওকে এর চেয়ে হালকা পাতলা একটা আংটি দিছিলো আর দশ হাজার টাকা দিছিলো জামাইর হাতে।এবার মনে হয় সব টাকা আংটির পিছনে ঢালছে।বেশ মোটাসোটা আংটি’

তটিনি ওমনি আংটিটা খুলে বললো,’আপনি নিয়ে নিন।আমি রেখে কি করবো?’

‘আরেহ না।আমার অভা আছে নাকি?আর আমি সেই শাশুড়ি না যে বিয়ের পরেরদিন বউয়ের সব গয়না নিজের আলমারিতে তুলবো।এই মোটা আংটি তোমার হাতেও মানাচ্ছেনা,তুমি বরং বাপ্পির হাতে পরিয়ে দেও।ওকে বেশ মানাবে।আসো’

এই বলে মিসেস মেহের তটিনিকে টেনো বাপ্পির কাছে নিয়ে এসে বললেন পরিয়ে দিতে।তটিনি গাল ফুলিয়ে বাপ্পির হাত ধরে আংটিটা পরিয়ে দিলো।বাপ্পি তার হাতের দশ আঙ্গুল সামনে ধরে বললো,’এত আংটি কি করবো আমি?একটা পরারও তো অভ্যাস নেই’

‘এঙ্গেজমেন্টের আংটিটা রেখে বাকিগুলো আলমারিতে রেখে দিবি।আচ্ছা আমি যাই আমার অনেক কাজ’

মা দ্রুত চলে গেলেন।তটিনি ওমনি ঘোমটা সরিয়ে বললো,’সকাল হলে বিছানায় এসে শুবেন।ঢং করে ডিভানে শুয়ে থাকতে হবেনা।আপনার এই ঢংয়ের কারণে আমার এত কথা শুনতে হলো।যেন কোন রাজপুত্রকে বিয়ে করেছি।সবাই তাকে মাথায় করে রাখে,এখন আমাকেও মাথায় করে রাখতে হবে।সব ঢং!’

কথাগুলো বলে সে মুখ বাঁকিয়ে বিছানায় উঠে বসে গেলো এবার।।

তটিনি গাল ফুলালে ওকে এত সুন্দর লাগে বাপ্পির কাছে।তাই সে মুচকি হেসে ওকেই দেখছিল।তটিনি চোখ ফেরাতেই দেখে বাপ্পি মিষ্টি করে হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

‘সারাদিন কি উদমই থাকবেন?যান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নতুন পাঞ্জাবি পরেন।সেই কখন মালিশের জন্য শেরওয়ানি খুলছিলেন এখনও উদম ঘুরছেন।লজ্জা করেনা আপনার?’

‘ওহ হ্যাঁ!!’

বাপ্পি লজ্জা পেয়ে আলমারি থেকে নতুন পাঞ্জাবি নিয়ে চলে গেলো।তটিনি মেসেজের আওয়াজ শুনে বাপ্পির ফোন আবার ধরলো।যে মেয়েগুলোকে সে মেসেজ দিয়েছিল তাদের মধ্যে একটা মেয়ে লিখেছে’বাপ্পি মামু আপনার না কাল বিয়ে হলো?কক্সবাজার গেলেন কবে?’

তটিনি জিভে কামড় দিয়ে মেয়েটার প্রোফাইল চেক করে বুঝতে পারলো ওটা বকুল আপুর বড় মেয়ে তৃষা।যে ক্লাস সিক্সে পড়ে।আর আইডিটা বকুল আপুর ছিল।প্রোফাইলে ছিল মেহজাবিনের ছবি তাই তটিনি ঠিক বুঝতে পারেনি।নিজের কপালে নিজে চড় দিয়ে সে ফোনটা আবার রেখে দেয়।এখন যদি তৃষা এসে সব বলে দেয় বাপ্পিকে!কি হবে!!
ওদিকে বাপ্পি গোসল করে পাঞ্জাবি পরে বের হয়েও গেছে।তটিনি ভয় ভয় চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল।কি বলবে,, কি করবে!!
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here