তোমাতে করিবো বাস পর্ব -৪৬+৪৭

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৪৬
লেখনীতে-আফনান লারা
.
তটিনির মনটা খারাপ হয়ে গেছে।সে কখনওই চায়নি বাপ্পির মায়ের অপছন্দ হয়ে উঠতে।শুরুতে এইসব দিক লক্ষ না করলেও এখন তো সে চায় তিনি যেন ওকে ভাল ভাবে।কিন্তু সেটা না হয়ে হচ্ছে কিনা উল্টোটা।
উনার ধমক খেয়ে তটিনি বাপ্পির কাছে ফেরত চলে আসে।বাপ্পি জানালা বন্ধ করে বিছানায় দুটো বালিশ বুকে ধরে আরামসে ঘুম দিয়েছে।তটিনি ওকে ওরকম শান্তিতে ঘুমাতে দেখে ভাবলো কষিয়ে কয়েকটা লাগিয়ে দিবে,পরে ভাবলো এই উজবুকটাকে ফুলের টোকা দিলেও তার মা,বোন এসে কথা শুনিয়ে যায়।এরে কোনো টোকাই দেয়া যাবেনা।তাই নিজের রাগটাকে দমিয়ে সে রুমে পায়চারি করতে করতে ভাবছে কি করলে শাশুড়ি মায়ের রাগটাকে কমানো যাবে।অনেক ভাবনাচিন্তা করে শেষে বুদ্ধি বের করলো বকুল আপুর কথা।
তিনি ভাল বলতে পারবেন আন্টির রাগ কমানোর উপায় সম্পর্কে।
——
‘বুঝলাম,মা রাগ করলে সেটা থাকে বাপ্পিকে নিয়ে।এছাড়া মায়ের রাগ হয়না কোনো কিছুতে।আর তুমি সেই বিষয়টাতেই রাগাইছো?’

‘এখন আর কি করি!আপনিও বকেন’

‘আমি বকছিনা।আচ্ছা শুনো,মায়ের বাগানে বসে গান শুনতে শুনতে চা দিয়ে বিসকিট খাওয়া খুব পছন্দের।বিসকিটটা হলো’অলিম্পিক এনার্জি প্লাস বিসকিট।বুঝছো?’

তটিনি মাথা নাড়ায়।বকুল আপু আবার বলে,’তার চুলে তেল মালিশ করে বেনি করে দিলেও তার মন ভাল করা যায়।আপাতত এই দুটো কাজ করো।তারপরেও রাগ না গেলে আমি মোক্ষম একটা বুদ্ধি দিবো।’
——–
ঐ চাচা আসিফের শর্ত শুনে হ্যাং হয়ে গেছিলেন
আর কথাই বলেননি।মনে মনে আজকালকার ছেলেদের বকাঝকা করে,প্রজন্মের দোষ দিয়ে চলে গেছেন।এই কাহিনীতে একটা ভাল কিছু হলো,আর সেটা হচ্ছে রিনি সহজবোধ করলো।হাসি পেলো সাথে মনে বল পেলো এত মানুষের সামনে খাওয়ার।ঠোঁটের কোণায় হাসি রেখেই সে খাবারটা খেয়ে নেয়।
সে ভেবেছিল খাবার খেয়ে আসিফ ওকে নিয়ে সোজা বাসায় ফিরবে।কিন্তু আসিফ সেটা না করে ওর হাতে হাত রেখে উল্টো পথে হাঁটছে।
রিনি যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলো তারা কোথায় যাচ্ছে।।
আসিফ যেতে যেতে শুধু মুচকি মুচকি হাসে,আর কিছু বলেনা।রিনিও আর প্রশ্ন করেনা।
স্বামী এমন একজন মানুষ,বাবা মায়ের পরের একমাত্র আশ্রয়স্থল। এই মানুষটা হাত ধরে যেখানেই নিয়ে যাক না কেন তাকে ভরসা করার জন্য মন আপনা আপনি সাঁই দিয়ে দেয়।মনে ভয় হয়না কোনো কিছুর।
রিনির ও সেই অনুভূতিটা মনের ভেতর খেলে যাচ্ছে।চোখে আজ অন্যরকম ভাবনা ছলছল করছে।আসিফ হয়ত দেখেনি,তবে সে জানেওনা রিনি মনে মনে তাকে কতটা ভরসা করে।

চলতে চলতে তারা এই হাউজিংয়ের শেষ প্রান্তে চলে আসে।হাউজিংটা ওতোটা উন্নত না,তাই এর শেষ প্রান্ত ও যে আহামরি হবে তা বলা বোধগম্য নয়।
আসিফ আশা করেছিল সুন্দর লেক থাকবে,তারা বসে গল্প করবে,রিনির মন ভাল করবে।তা হলো কই!
চোখের সামনে বিরাট বড় ময়লার একটা লেক।গন্ধ চারিদিকটাকে ঘেরো দিয়ে ফেলেছে।নাকে হাত দিয়ে সে রিনির দিকে তাকায়।রিনি বুঝেছিল আসিফ তাকে কেন এনেছে এখানে।এখন এক্সপেকটেশন কিরকম হওয়া উচিত তা মনে মনে চিন্তা করে সে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,’বেশ তো!ঐ যে ওখানে বসার জায়গা আছে, চলুন আমরা গিয়ে বসি’

আসিফ রিনির এমন উত্তর আশা করেনি বলে সে অবাক হয়ে তাকিয়েছিল শুধু।এতক্ষণ সে রিনিকো টেনে টেনে আনলেও এবার রিনি তাকে টেনে ঐ বেঞ্চির কাছে নিয়ে এসেছে।

বেঞ্চির মাঝে পাঁচ আঙুল ফাঁক রেখে বসেছে দুজন।
কপোত কপোতী দেখে দূর থেকে এক বাদামওয়ালা এসে হাজির।সে মনে মনে ঠিক করেছে এখানে বাদাম বিক্রি করবে।
কাজটা সে শুরুও করে দিয়েছে।কোথাও কোনো মানুষ নেই তাও সে এদিকে ওদের লক্ষ করে চলতে চলতে’এই বাদাম খাবেন,বাদাম!!! এই উক্তিটি বলেই যাচ্ছে।’

আসিফ রিনির দিকে তাকায়।রিনি সবেমাত্র ভাত খেয়ে এসেছে বলে সে খাবেনা বলে দেয়।তখন আসিফ বলে,’বাদাম পেট ভরার খাবার না যে ভাতের পর খাওয়া যাবেনা।বাদাম মানুষ সময় কাটাতে খায়।’

এই বলে আসিফ বিশটাকার বাদাম কিনে নিলো।রিনিকে সাধলো প্রথমেই।কিন্তু রিনি যে প্রথমে মানা করে বসে আছে তাই সে আবারও মানা করে দেয়।
এবার আসিফ একাই বাদাম খাচ্ছে।তাদের বেঞ্চির পাশ ঘেঁষেই একটা কাঠবাদাম গাছ।সেটার ছায়াতলে বসে এই ভরদুপুরে দুজন ময়লার লেকের দৃশ্য উপভোগ করছে।
——-
বাপ্পির মাকে টেনেহিঁচড়ে তটিনি নিয়ে এসেছে বাগানে।সেখানে দুকাপ চা,এনার্জি প্লাস বিসকিট ও এনে সাজিয়ে রেখেছে।এসব দেখে বাপ্পির মা কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন।তারপর মাথার উপরের কড়া রোদ দিতে থাকা সূর্যটার দিকে তাকালেন।দাঁতে দাঁত চেপে কপাল মুছে বললেন,’দুপুরবেলা কেউ চা খায়?’

এটা শুনে তটিনি দাঁত কেলালো।তবে ভেতরে ভেতরে সে আফসোস করছে।বুবু বলেছিল বিকালে চা খেতে পছন্দ করে মা।কিন্তু সে আগ বাড়িয়ে অতিরিক্ত করে এই দুপুরেই চায়ের বন্দবস্ত করে হাজির।মনে মনে নিজেকে দোষারোপ করে সে আবারও দাঁত কেলাতে থাকলো।ও কিছু বলছেনা দেখে বাপ্পির মা বললেন,”হ্যাঁ,আমি আগে দুপুরে চা খেতাম।দিনে চারবেলা খেতাম।কিন্তু দুপুরবেলার চায়ে যত দুধ চিনিই ঢালা হোক না কেন,চা ঠিক জমেনা।কেমন যেন মনে হয় গরম পানিতে চিনি মিশিয়ে খাচ্ছি।তাই আমি দুপুরবেলা চা খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে।’

তটিনি মাথা নাড়ায়।মা বাগানে পা ও রাখলেন না।চলে গেলেন আবার।
তটিনি নিজের কপালে নিজে চড় দিয়ে এবার গেলো তেল গরম করতে।ওনার মাথায় মালিশ করে দিয়ে ওনার মন শান্ত করে তুলবে।প্ল্যান A কাজ করে নাই তো কি হয়েছে।প্ল্যান B তো আছে।
——
আসিফ বাদামের খোসা ছাড়িয়ে রিনির দিকে ধরলো।ছোট কালে আসিফ এরকম বাদামের খোসা ছাড়িয়ে রিনির দিকে ধরলে রিনি সেটা ধরার আগেই সে টুপ করে নিজেই খেয়ে নিতো।হুট করে সেইদিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেলে রিনির।সে আসিফের হাতের বাদামগুলোর দিকে তাই গভীর মনযোগ দিয়ে তাকিয়ে ছিল।
আসিফে অবশ্য সেসব কিছুই মনে নেই।তাই সে বাদাম ধরেইছিল স্বাভাবিক ভাবে।রিনি তখন ওর হাত থেকে বাদামটা নিয়ে বলে,’আন্নে ছোডোকালে আঁরে বহুত চেঁতাইতেন’

‘কে বলেছে?’

‘আঁর বেজ্ঞিন মনে আছে’

‘কিভাবে চেঁতাইতাম?’
———
বাপ্পির মা একটু সোফায় বসে আরাম করে চোখ বুজে ছিলেন।তটিনি একটা টুল এনে ওনার পিছনে এসে বসে এক বাটি তেলে হাত ডুবিয়ে সেও হাত ধপ করে ওনার মাথায় রাখলো।
উনি কি ভয়টা যে পেলেন!!চোখ বড় করে এক চিৎকার দিয়ে সোজা হয়ে বসে পেছনে মুড়ে দেখলেন তার গুণধর পুত্রবধূ আবারও দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে।

‘তোমার সমস্যা কি বলো তো!পাগল হয়েছো?এই গরমের মধ্যে আমি মাথায় তেল দিবো?তাও গরম তেল?এসব কে শিখিয়েছে তোমায়?যেই শিখিয়েছে,ভাল শিখিয়েছে।কিন্তু এটা শেখায়নি কখন কাজটা প্রয়োগ করতে হবে।গাধী কোথাকার!যাও আমার ছেলের কাছে।আমার পেছনে না লেগে ওর পেছনে লাগো।ওর কি লাগবে জিজ্ঞেস করো,তারপর সেটা করো।এই বাড়িতে আমার ছেলে ভাল থাকলে, আমার মন আপনাআপনি ভাল হয়ে যায়’

তটিনি মাথা নাড়িয়ে বাপ্পির কাছে এসে হাজির হয়।বাপ্পি তখন গভীর ঘুমে মগ্ন।সে ধীরে ধীরে ওর কাছে এসে ওর টি-শার্টের কলার খপ করে ধরে টান দিয়ে বললো,’জামাই উঠোন!জামাই।ভাত খাইবেন?পানি খাইবেন?কি খাইবেন?আমায় বলুন।আমি সব বানাই দিবো।জামাই উঠেন!’

বাপ্পি ভয় পেয়ে লাফ দিয়ে উঠে বসে এদিক- ওদিক চেয়ে আবার তটিনির দিকে ফিরে বুকে থুথু দিয়ে বললো,’কোথায় আগুন লাগছে?’

‘কই?আগুন লাগবে কেন?’

‘তাহলে ওরকম ঝাঁকালে কেন?স্বপ্নে এরোপ্লেনে চড়ে দুবাই যাচ্ছিলাম।তোমার ঝাঁকুনিতে টুপ করে মাঝ পথে মরুভূমিতে পড়ে গেছি প্লেন ক্রাশ হয়ে।তারপর সেখানে ধাউ ধাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো’

তটিনি বাপ্পির কাছে ঘেঁষে বসে ওর গলায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,’পানি খাবেন?’

‘ ঘুম থেকে তুলে পানি খেতে বলছো?’

‘তো কি খাবেন বলুন ‘

‘আমি ঘুমাবো।খাবো পরে’

এই বলে বাপ্পি আবার শুয়ে পড়ে।তটিনি ওর কাছে এসে ওকে ধরে আবারও টানতে টানতে বলে,’আহা আপনাকে ঘুমাতে দেয়া যাবেনা।শাশুড়ি আন্টির আদেশ।আপনাকে ধরে ধরে জিজ্ঞেস করতে হবে আপনার কিছু লাগবে কিনা।আফটার অল আপনি হলেন এই বাড়ির মাথামুণ্ডু’

চলবে♥তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৪৭
লেখনীতে-আফনান লারা
.
বাপ্পি ঘুম ঘুম চোখে বিরক্তি নিয়ে উঠে বসে তটিনিকে কিছু বলতে যাবে তখনই তার চোখ গেলো দরজার দিকে।সেখানে মা কোমড়ে হাত রেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তটিনির নাটকের দৃশ্য দেখছেন।
বাপ্পি ভয়ে তটিনির দিকে চেয়ে ইশারা করলো কিন্তু তটিনি কিছু বোঝেনি।সে আরও বাপ্পির গাল টেনে জিজ্ঞেস করতে লাগলো তার আর কি কি লাগবে।

বাপ্পি শেষে বাধ্য হয়ে তটিনিকে ধরে ওর মায়ের দিকে ফিরিয়ে দাঁড় করালো।তটিনি তো ওনাকে আচমকা দেখে ভয় পেয়ে চুপসে গেছে একেবারে।
তিনি এবার কাছে এসে দাঁড়ালেন।চোখে তার রাগ সাগরের ঢেউয়ের মতন কিণারায় এসে আঁছাড় খাচ্ছে।এই রুপ দেখে তটিনির শরীর কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে।

মা দু হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে থেকে বললেন,’বকুলের শাশুড়ি গ্রামের বাড়ি গেছে।ওর বাড়ি খালি।তুমি গিয়ে বেড়িয়ে আসো।একাই যাও।বাপ্পির থেকে আলাদা কদিন থাকলেই তোমার এ সব নাটক,বাঁদরামি এক লাইনে চলে আসবে।তুমি আসলে বোঝো নাই স্বামী কি জিনিস,আর স্বামীর সাথে কিরুপ ব্যবহার করা উচিত।না জেনেই ঠাট্টা তামাশা করছো।
আর হ্যাঁ।আমি বলা ছাড়া এই বাড়িতে তুমি আসতে পারবানা,তোমার ফোন রেখে যাবে আমার কাছে।কারোর সাথে কথা বলতে হলে বকুলের থেকে ফোন নিয়ে বলবে।এটা তোমার শাস্তি।হয়ত মনে মনে আমাকে দুষছো।কিন্তু আজ থেকে এক মাস পর তুমি এই আমার জন্যই দোয়া করবে।কারণ আমার আজকের এই পদক্ষেপে তোমার সব বাজে অভ্যাস ভালতে পরিণত হবে।’

তটিনি হা করে তাকিয়ে আছে।বাপ্পি একদিন অফিস থেকে দেরি করে এসেছিল বলে তার নাজেহাল অবস্থা হয়ে গেছিলো।আর সেই কিনা বকুল আপুর বাড়িতে ফোন ছাড়া,বাপ্পিকে ছাড়া থাকবে?এ তো প্রায় অসম্ভব ‘

তটিনির হা করে রাখা মুখখানি দেখে বাপ্পির মা ওর হাতটা টেনে ধরে বললেন,’অসম্ভব তাই না?সমস্যা নেই।তোমার যেদিন দম বন্ধ মনে হবে।আমায় কল দিবে।আমি বলবো কি করতে হবে।ঠিক আছে?এবার জামাকাপড় গুছাও’

তটিনি মাঘা ঘুরিয়ে বাপ্পির দিকে তাকালো।তখন ওর মা আবারও তটিনির হাত টান দিয়ে বললেন,’ওর দিকে তাকাচ্ছো কেন?সে কিছু বললেও ফায়দা হবেনা।কারণ সে নিজেও জানে এই কাজে তোমার আক্কল হবে।সে নিজেও চায় তোমার পরিবর্তন ‘

তটিনি দাঁতে দাঁত চেপে বাপ্পিকে মনে মনে বকাঝকা করে নিজের জামাকাপড় গোছানো শুরু করে।মা ওখানেই দাঁড়িয়ে দেখছেন। একটু যে একা পেয়ে উত্তম-মধ্যম দিবে সেটারও উপায় নেই।

জামাকাপড় ব্যাগে গুছিয়ে নিতেই মা দারোয়ানকে ডেকে ওর ব্যাগটা নিয়ে গাড়ীতে তোলালেন।তারপর বাপ্পিকে না বলে ড্রাইভারকে বললেন তটিনিকে বকুল আপুর বাসায় দিয়ে আসতে।
তটিনি বাপ্পির দিকে তাকাতে তাকাতে চলে গেলো।হুট করে এমনটা হবে আজ তা সে ভাবেই নাই।নিজেকে এতটা অসহায় এর আগে কোনোদিন মনে হয়নি।

বাপ্পি থ মেরে বসে আছে।সব কিছু শুরুতে ফান মনে হলেও এখন মনে হচ্ছে ফান ছিল না,মা সিরিয়াস ছিলেন এবং আছেন।তটিনি চলে যাবার পর মা এসে ওকে জানালেন তিনি যা করলেন সব ওদের ভালর জন্যই।
বাপ্পি নিজেও জানে এটা ভাল!কিন্তু মাঝ দিয়ে তটিনি ভীষণ কষ্ট পাবে।মন খারাপের চোটে রাতে হয়ত তার ঘুম ও হবেনা,কাঁদতেও পারে।
এভাবে জোর করে একটা মানুষকে ঠিক করার কোনো মানে আছে?’

তটিনি গাড়ীতে বসে থেকেই ভ্যাঁত করে কেঁদে দিয়েছে।তার কান্না শুনে ড্রাইভার গাড়ী থামিয়ে পেছনে ফিরে চেয়ে রইলো।তটিনি চোখ মুছতে মুছতে বললো,’গাড়ী চালাও।থামালে কেন?’

ড্রাইভার ঢোক গিলে আবারও গাড়ী স্টার্ট করে।বাপ্পিদের বাড়ি থেকে বকুল আপুর বাসা খুব একটা দূরে না।অল্প সময়েই তটিনি পৌঁছে গেছে সেখানে।
বকুল আপু তটিনি আসার কথা শুনে ঘরের সব যাবতীয় কাজ শেষ করে ওর অপেক্ষাতেই ছিলেন।
তটিনি গাড়ী থেকে নামতেই বকুল আপুর বাসার দুজন কাজের লোক ছুটে এসে ওর হাত থেকে ব্যাগ টেনে নিয়ে গেলো।
তটিনি হা করে তাকিয়ে আছে।বিশাল বড় একটি বাসা।
সে দেখতে দেখতেই বাসার মেইন দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়।
বকুল আপু ভেতর থেকে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলেন। তটিনি জোর করে হাসার চেষ্টা করলো তখন বকুল আপু বললেন,’থাক!আর হাসতে হবেনা।আমি বেশ জানি ভেতরে ভেতরে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছ’

তটিনি কিছু বলেনা,শুধু তাকিয়ে থাকে।আপু তার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে আসে।আপাতত বাসায় কেউ নেই।আপুর ছেলে মেয়ে দুজনেই হোস্টেলে।আপুর হাসবেন্ড ও ডিউটিতে।ফিরতে রাত হয়।
আপু তটিনিকে তার জন্য বরাদ্দ রুমটা দেখিয়ে দিলেন।
তটিনি রুমে ঢুকলোনা।বকুল আপুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বললো তার এখানে থাকার ইচ্ছা নাই।
আপু মুচকি হাসলেন।কিন্তু তটিনিকে সেটা বুঝতে দিলেন না।ওর পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন,’কেন বলো তো?’

‘জানিনা’

‘জানো।কিন্তু বলবেনা’

‘আমি আসলে……’

‘থাকো কদিন।যেটা জানোনা সেটা জেনে যাবে’

এই বলে আপু ওকে ছেড়ে চলে গেলেন।তটিনি পা টিপে টিপে বকুল আপুর ফোনটা নিয়ে নিলো যেটা কিনা টেবিলের উপর ছিল এতক্ষণ। ফোন নিয়ে বাপ্পির নাম্বারে কল দিতে গিয়ে মনে পড়লো তার তো নাম্বার মুখস্থ নাই।অনেক ভেবেচিন্তে আপুর ফোনেই বাপ্পির নাম্বারটা খুঁজতে লাগলো।কিন্তু সে বাপ্পির নামে কোনো নাম্বারই পেলোনা।আজব ব্যাপার!বোনের ফোনে ভাইয়ের নাম্বার নেই?
ওমনি বকুল আপুর ডাক শুনে তড়িগড়ি করে তটিনি ফোনটা রেখে আবার নিজের রুমে চলে আসে।
আপু ওর কাছে এসে জানতে চাইলেন সে কি খাবে।তটিনি তখন গোমড়া মুখ করে বলে দেয় তার কিছু খাওয়ার ইচ্ছে নেই।।আপু আর জোর করেননি,আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছেন।

তটিনি রুমটার জানালার গ্রিল ধরে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবতে লাগলো তার চাইতে অসহায় বুঝি আর কেউ নাই।
‘এ কেমন শাশুড়ি!এ কেমন শাস্তি!এতটা কঠোর না হলেও পারতেন।আর আমার বরটাকে দেখো!আমি নাহয় কল দিতে পারবোনা,কিন্তু তার ফোন তো আছে।সে কেন ফোন দিচ্ছেনা?’

বকুল আপু ফোন হাতে নিতেই বুঝে গেলেন কিছুক্ষণ আগে তার ফোন কেউ ধরেছিল।কারণ সাইডে কন্ট্যাক্ট শো করছে।ডিনি তে কন্ট্যাক্টে যাননি।তবে কে গেলো?
নিশ্চয় তটিনি!
আপু হাসলেন,তারপর দেখলেন কল লগে কোথাও বাপ্পির নাম্বার নেই।তবে কি সে কল করেনি!
এরপর আবারও হাসলেন।সে হয়ত বাপ্পির নাম্বারটাই খুঁজে পায়নি।পাবেই বা কি করে!
আপু তো তার ফোনে বাপ্পির নাম,’উজবুক ‘ দিয়ে সেভ করে রেখেছেন।
———
আজগর সাহেবের সামনে টেবিলের উপর রাখা একটা কলা আর একটা পাউরুটির স্লাইচ।
তিনি এই দুটো খাবার দেখছেন মনযোগ দিয়ে।
মিসেস মোস্তফা ওনার সামনে বরাবর সোফায় বসে থেকে বললেন,’বুঝলেন আজগর ভাই।আজ এখানে যে নতুন ভাঁড়াটিয়া হয়ে এলো!আরে আমার রিমনের বন্ধু আসিফ না কি যেন সে!!তার বউ নিয়ে উঠলোনা?আমার কি মনে হয় জানেন!’
(কিছুটা ফিসফিসিয়ে)ওরা অবিবাহিত ‘

মিসেস মোস্তফার এই লম্বা লেকচারের একটা শব্দ ও আজগর সাহেব কানে তোলেননি।তাকে ভাবাচ্ছে একটা কলা আর একটা পাউরুটির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।
ইহাকেই কি নাস্তা বলে!!!তাও বাড়িওয়ালাকে ভাঁড়াটিয়া এমন নাস্তা দেয়?’

‘ভাই কি বলছি শুনছেন?’

‘হ্যাঁ!আসলে ভাবছি’

‘হ্যাঁ ভাবুন ভাই।আপনাকেই তো ভাবতে হবে।অবিবাহিত ছেলেমেয়ের একসাথে থাকা তো আমরা সভ্য সমাজের লোক হয়ে মেনে নিতে পারিনা’

‘ভাবছি কতবড় ফকিন্নি হলে একটা কলা আর একটা পাউরুটি কেউ আমার মতন বাড়িওয়ালাকে খেতে দেয়!’

এই কথা শুনে মিসেস মোস্তফা তার কথা বাদ দিয়ে টেবিলের দিকে তাকালেন।অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে দাঁতে দাঁত চেপে রাইদাকে ডাক দিয়ে বললেন,’বেয়াদব মেয়ে!এটা কোনো নাস্তা হলো?তোকে না বললাম শুধু একটা কলা দিবি!আবার সাথে পাউরুটি এক পিস দিতে গেলি কেন!তুই জানিস না এই পাউরুটি দুই সপ্তাহ আগের পুরোনো পাউরুটি!ফেলে দেয়ার জন্য টেবিলে বের করে রাখছিলাম’

আজগর সাহেব অবশিষ্ট কলাটাকে হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে বললেন,’তা এটা কতদিনের পুরোনো?’

‘হেহে!আপনিও না!শুধু মশকরা করেন।এটা তো ঐদিন রাইদার বাবা নিয়ে আনছে।বেশিদিন হয়নি।’

‘আপনি ঢংয়ের একটা নাস্তা না দিতে পারলে আমাকে আসতে বলবেন না।জীবনে অনেক কিপ্টা দেখছি।কিন্তু আপনার মতন কিপটা দেখিনি,আজ আসি,আবার ভাল নাস্তা দিতে পারলে ডাক দিবেন।সাথে কলাটা নিয়ে যাচ্ছি।নাই মামার চাইতে কানা মামা ভাল।কিপটা বেডি!’

মিসেস মোস্তফা হাসি দিয়ে বললেন,’আপনি গুরু,আমি শিষ্য😌’

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here