তোমাতে করিবো বাস পর্ব -৪২+৪৩

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৪২
লেখনীতে-আফনান লারা
.
তটিনি বাপ্পি এই সকাল সকাল ভিজে বিড়ালের মতন ভিজে বসে বসে নাস্তা করছে।বাড়ির কাজের লোক হতে শুরু করে যে বাকিজনেরা আছে সকলেই ওদের দেখছে,নিজের কাজ করছে আর মিটমিট করে হাসছে।
বকুল আপু শুরু থেকেই তার দাদার মতন আচরণ করেন।তার দাদাও যৌবনে ঠিক এমন করেই পুরো সংসার শাসন করতেন।বাপ্পির বাবা মাকে দিনে দুইবার গোসল করাইতেন সেখানে বকুল আপু তো কমই করতেছেন!

আজ বকুল আপু চলে যাবেন।যাবার সময় মাকে বারবার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন রোজ সকালে ওদের দুজনের হাত আর চুল চেক করার জন্য।ওদের এই খবিশগিরি চুকিয়ে দেয়ার জন্য কড়া করে বলে গেছেন তিনি।

বাপ্পির গলা ব্যাথা কমে গেছে অনেক আগেই তাও সে অফিস যাবেনা।ঘরে ছোটাছুটি করা বিশ বছরের নব বধুকে সে আজ খুব মনযোগ দিয়ে দেখার পেছনে পুরোটা সময় খোয়াবে বলে ভেবে রেখেছে।এরকম রুপের মোহের ভাগ নিতে হলে,উপভোগ করতে হলে একটা দিন হাতে নিয়ে চোখকে কাজে লাগিয়ে দিতে হবে।নাহয় যে অফিসের অফিস!
সারাদিনে দু মিনিট দেখার সময় পাওয়া দায়।বউকে সময় দিতে হলে এরকম অফিস কামাই দিতে হবে।

তটিনি আজ রান্নাঘরে এসে দাঁড়িয়ে আছে নাস্তা খাওয়ার পর ঘেকে।বাপ্পির দাদি বিবি খাদেজা আজ নেহারী বানাবেন এবং তার দেখাদেখি তটিনিকেও বানাতে হবে।তবে সে বানাবে এক সপ্তাহ পর।দাদির মতন একই স্বাদের হলে সে পাবে একটা সোনার টিকলি যেটা কিনা দাদির এই বাড়িতে প্রথম পা রাখার স্মৃতি হিসেবে পড়ে ছিল সিন্ধুকে।যদি স্বাদ আরও ভাল হয় তবে সে টিকলির সাথে জোড়া কানের দুল ও পাবে।আর যদি কিছুই না হয়,খেতে বিস্বাদ লাগে তবে সে কিছুই তো পাবেই না উল্টে শাস্তি স্বরুপ তাকে ৭দিন ধরে সকাল বিকালের সব রান্নার কাজ করতে হবে।এরকম একটা খেলা তিনি বাপ্পির মায়ের সাথেও খেলেছিলেন।বাপ্পির মা ওনার মতন করে নেহারী রাঁধতে পারেননি বলে এরকম সাতদিন ধরে সকাল,দুপুর,বিকাল,রাতের সব রান্না একা হাতে করেছিলেন।
ভাবতেই তটিনির গলা শুকিয়ে গেলো।সে এরকম রান্না আগে করেনি,যদি বাই চান্স হেরে যায় তাহলে তার যে শনির দশা শুরু হবে তা সে বেশ বুঝতে পারছে।
ঢোক গিলে হাতে খাতা কলম নিয়ে সে দাদিকে নেহারী রান্না করতে দেখছে।পরে মনে হলো খাতায় সেইসব লেখা যাবেনা যেসব চোখে দেখা যায়।তাই বুদ্ধি করে ফোন নিয়ে ভিডিও করা শুরু করে সে।দাদি মুচকি হেসে কাজ করতে করতে বললেন,’মাইয়ার মাথা ভর্তি বুদ্ধি!’
——–
আসিফ আসছেনা দুপুর হয়ে গেলো,সে কি তাদের বাড়ি থেকে খেয়ে আসবে নাকি আজ আসবেই না?
তার পথ চেয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল রিনি।কেউ তার মনের কথা বুঝলোনা।
আসিফ তার বাড়ি এসে আটকে গেছে। মা,বাবা মিলে তাকে বুঝাচ্ছে রিনিকে অবহেলা করা যাবেনা আর।সে আজ পর্যন্ত তাকে সবসময় অবহেলাই করে এসেছে।এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।
রিনি একাকিত্বে ভুগবে সারাদিন।তাকে এই সময়ে পাশে থেকে আগলে রাখতে হবে।যত যাই হোক সে তো ওরই বিয়ে করা বউ।
তাদের ধারণা আসিফ রিনিকে ফেলে আবার শহরে চলে যাবে।
কিন্তু তারা কেউ তো জানেই না আসিফ নিজেই কাল থেকে রিনিকে নিজের দায়িত্ব করে নিয়েছে।চুপচাপ শুধু শুনে গেলো সে।
ওদিকে রিনি যে তার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে তা সে জানেনা।সে জানে রিনি হয়ত মাকে মনে করে বসে বসে মন খারাপ করছে।
——-
দাদির রান্না করা নেহারী খেয়ে সকলে প্রশংসায় পঞ্চমুখ।তটিনি খেতে বসেও গিলতে পারছেনা।এত এত মশলা!
উনিশ বিশ হলেই তার রান্নার স্বাদ বদলে যাবে।দাদির মতন একই স্বাদের হবেনা।কি করা যায়!
তটিনিকে মুখটা কালো করে খেতে দেখে দাদি বললেন,’শোনো মেয়ে!এত ভাবার কিছু নাই।আমার মতন হতে হবে এমন কেনো বাধ্যবাধকতা নাই,তবে তুমি যদি আমার চাইতে ভাল করে রান্না করতে পারো সেটা হবে দেখার বিষয়। ‘

বাপ্পি চেয়েছিল তটিনিকে সামনে বসিয়ে রেখে প্রাণভরে দেখবে কিন্তু তা আর হলো কই!দাদি মোড় ঘুরিয়ে দিলেন।তটিনির অপেক্ষায় রুমেই সারা দিন কেটেছে বাপ্পির।তটিনি ফিরলো তাও একেবারে দুপুরের দিকে।
বাপ্পি দরজার দিকে তাকাতে তাকাতে তার প্রায় চোখ ঝাপসা হয়ে গভীর ঘুম এসে গেছিলো।তটিনির হাতে দাদির বানানো খাবার।বাপ্পি খেতে আসেনি,কেউ ডাকেওনি কারণ সবাই মনে করেছিল ও হয়ত ঘুমাচ্ছে।আসলে সে তো তটিনির অপেক্ষায় সময় গুনছিল।তটিনি রুমে এসে দেখে বাপ্পি চোখ নড়াচড়া করছে,অনেক কষ্ট করে চোখ খুলে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে।

‘সাহেব আপনার খাবার’

এরকম করে বাড়ির বাকিরা কথা বলে তাই বাপ্পি এক মূহুর্তের জন্য ভেবেছিল হয়ত বাড়ির কাজ করা কেউ একজন এসেছে।কারণ সে ছিল তটিনির চিন্তায় মগ্ন।

অনেকক্ষণ মোড়ামুড়ি করার পর যখন সে মাথা তুলে তাকালো তখন নিজের সহধর্মিনীকে হাতে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে অবাক হয়ে যায়।এই অপরুপ দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করার মতন না।

‘ আশ্চর্য! আজ কি শুধু চেয়ে চেয়েই দেখবেন?’

‘নাহ!’

‘তো?হাত থেকে খাবার নিয়ে যান।আমি কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো?’

বাপ্পি থতমত খেয়ে উঠে এসে তটিনির হাত থেকে খাবারের ট্রেটা নেয়া ধরতেই ওখানে হাজির হলেন মা।
মাকে দেখে তটিনি তাড়াতাড়ি মাথার ঘোমটা টেনে এক পাশে দাঁড়িয়ে পড়েছে।

মা রুমে ঢুকে আগে বাপ্পিকে চেয়ে দেখলেন এরপর তটিনিকে।
তটিনি ভয়ে কিছু বলছেনা কারণ ওনার চোখ রাঙানো ছিল।

‘এভাবে ধমকিয়ে তুমি বাপ্পিকে খাবার দাও?এটা কেমন ব্যবহার তটিনি?আমরা তোমায় পছন্দ করে এনেছি বলে কি এর মান রাখবানা?আমি দেখে এসেছি শুরু থেকে তুমি বাপ্পিকে ধমকিয়ে কথা বলো।তুমি হয়ত ভুলে যাও সে তোমার স্বামী এবং বয়সে বড় হয়!’

‘না মা!!সে তো এমনি ঠাট্টা করছিল।ও আমায় যথেষ্ট সম্মান করে’

‘তুই চুপ কর!লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছিস আর এখন নামাতেও পারছিস না।শোনো তটিনি!এভাবে করলে চলবেনা!আমার ছেলে হয়ত কিছু বলছেনা কিন্তু আমার গায়ে লাগছে এইসব।বকুল বলে এক কথা আর আমি তো তোমাদের ব্যবহার দেখে বুঝতে পারছি অন্য কথা।তুমি তোমার এই স্বভাব শীঘ্রই বদলাবে নয়ত আমি অন্য পন্থা অবলম্বন করবো।আর এখন তুমি বসে নিজের হাতে বাপ্পিকে খাইয়ে দিবে।বাপ্পি অসুস্থ ‘

এই বলে মা হনহনিয়ে চলে গেলেন।তটিনি বাপ্পির দিকে তাকাতেই ও ট্রে টেবিলের উপর রেখে নিজে বসে বললো,’আরেহ আমি নিজেই খেতে পারবো।তুমি রেস্ট নাও’

‘নাহ!আর কষ্ট করতে হবেনা।দিন আমি আদর করে খাইয়ে দিচ্ছি’

এই বলে তটিনি তেড়ে এসে বাপ্পির কোলে বসে পড়লো।তারপর বাটি হাতে নিয়ে লোকমা বানিয়ে ওর মুখ টিপে গালে লোকমা ভরে বললো,’নাও সোনাবাবু খাও।আর তোমার মাকে গিয়ে বলো মা জানো বউ আমায় সোহাগ করে অনেক।’
———
আসিফ ফিরতে ফিরতে বিকাল হয়ে গেছে।সে আসার সময় তাদের বাগানের সরষে ফুল এক থোকনা ছিঁড়ে এনেছে রিনির জন্য।রিনির নাকি সরষে ফুল ভীষণ পছন্দের।এর আগে সে রিনির পছন্দ অপছন্দ নিয়ে এত ভাবতোনা।এখন থেকে ভাববে।
সে কারণেই এই ফুল আনা।বাড়ির বাহিরে ওকে কোথাও না দেখে আসিফ রিনির বড় ফুফুকে বাড়ির ভেতরে ঢুকে জিজ্ঞেস করে সে কোথায়।ফুফু জানায় রুমে শুয়ে আছে আর কাঁদছে।
আসিফের মন খারাপ হলো রিনির কান্নার কথা শুনে।
সে ধীর পায়ে ঘরে ঢুকে রিনির রুমের কাছে এসে দরজাটা আলতো করে ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো সেটা।

‘রিনি?ভাল আছিস?’

ওমনি বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে রিনি আসিফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।সারাটাদিন কাঁদলেও এতক্ষণ সে চুপচাপই ছিল।আসিফকে দেখে ব্যাথা যেন আবার নতুন হয়ে গেছে তার।ওকে ধরে ব্যাথা কমানোর চেষ্টায় আছে সে।

চলবে♥তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৪৩
লেখনীতে-আফনান লারা
.
আসিফ হাতের ফুলগুলো বিছানার উপর রেখে রিনির পিঠে আলতো করে হাত রেখে বলে ‘কাল সকালে চলে যাবো ঢাকায়।যাবি আমার সাথে?’

রিনির মনের ভেতর দোটানা বাসা বাঁধলো।একদিকে মায়ের কবর ছেড়ে যাবার কষ্ট,বাবাকে একা রেখে যাবার কষ্ট আর অন্যদিকে আসিফকে ছাড়া থাকার কথা সে ভাবতেও পারেনা।

রিনিকে চুপ করে থাকতে দেখে আসিফ ওকে বুক থেকে সরিয়ে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বলে,’আব্বা আর কারিম আমাদের বাড়িতে থাকবে। আমি বাবাকে বলে এসেছি।আমিও চাই তারা যেন একা না থাকে।তোর ফুফুরা চলে গেলে তারা দুজন আমাদের বাড়িতে চলে যাবে।কথা হয়েছে আমার।এটা আমার ইচ্ছা না,বাবার ইচ্ছা’

রিনির চোখ ছলছল করে ওঠে।মায়ের শূন্যতা তাকে আরও চেপে ধরে।তাও নিজেকে সামলিয়ে চোখ মুছে নেয় সে।আর কাঁদবেনা।আসিফের এই পরিবর্তন তাকে হয়ত আর কোনোদিন কাঁদতে দেবেনা।

আসিফের ফুলের কথা মনে পড়ায় তাড়াহুড়া করে বিছানার উপর থেকে ফুলগুলো নিয়ে রিনির দিকে ধরে বললো,’দেখ!তোর জন্য এনেছি।তোর প্রিয় না?’

রিনি জোর করে হাসার চেষ্টা করে ফুলগুলো হাতে নেয়।আসিফ তখন রিনির অবাধ্য চুলগুলোকে মুখের সামনে থেকে পেছনে নিয়ে বলে,’আঞ্চলিক ভাষায় বলা তোর প্রতিটা কথা মিস করি রিনি!কবে আগের মতন হবি?তোর এই বিষণ্ণতা আর গিলতে পারছিনা।আমারও কষ্ট হয়!’
——–
বাপ্পির মা আবারও আসছিলেন দেখার জন্য যে তটিনি কি করে।এসেই দেখলেন তার গুনধর পুত্রবধু তার সোনার টুকরো ছেলের কোলে বসে তাকে খাওয়াচ্ছে।অর্থাৎ তার কথার মান্য করছে!
তবে কোলে বসে কেন?সে কি মশকরা করছে?
বিষয়টা বুঝতে ওনার দু মিনিট সময় লাগলো।বুঝতেই তিনি হয়ে গেলেন রণচণ্ডী! রাগে ফুসফুস করতে করতে এগিয়ে এসে বললেন,’তটিনি তুমি ঠাট্টা করছো আমার আদেশের?’

মায়ের গলা শুনে বাপ্পি তটিনিকে কোল থেকে ঠুস করে নিচে নামিয়ে দিলো ভয়ে।
তটিনি মেঝেতে বসে বসে বললো,’আপনার ছেলে আমার হাত থেকে খেতেই চাইছিলো না তাই বলে কোলে বসে জোর করে খাওয়াতে হচ্ছিল।তাই না বলুন?’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ।মা ও ঠিক বলছে’

‘এইসব ঢং কমিয়ে প্র্যাক্টিক্যালি কাজ করবে!আমার এত নাটক পছন্দ না।’

তটিনি মেঝেতে বসে হাত দিয়ে বাপ্পির পায়ের আঙ্গুলের ভর্তা বানাচ্ছিল।আর বাপ্পি সোফায় বসে কাঁচুমাচু করছিল।মা কিছুই বোঝেননি।তটিনির দিকে চোখ রাঙিয়ে তিনি আবার চলে গেলেন।

‘আচ্ছা আপনি আমায় ফেলে দিলেন কেন?’

‘মায়ের সামনে ছেলে কিভাবে বউ কোলে নিয়ে বসে থাকতে পারে?তোমার উচিত ছিল আমি ফেলে দেয়ার আগেই উঠে দাঁড়িয়ে পড়া’

‘আপনার পরিবার চায় আমি যেন আপনাকে খুব আদর করি।এটা সেই আদরের নমুনা ছিল, তাহলে লজ্জা কিসের?তাদের কি বলে দিবো যে তাদের ছেলে অত্যন্ত লাজুক?’

‘তুমি এরকম রাগ করে আছো কেন?আমার কি দোষ?’

‘দোষ যা আছে সব আপনারই।সবসময় সবার সামনে ভেজা বেড়ালের মতন হয়ে থাকেন আর বকাঝকা সব আমার খাইতে হয়’
——-
রিনিকে সঙ্গে নিয়ে আসিফ ঢাকায় চলে এসেছে।রিনি বাসে আসার সময় ভাবছিল এর আগে যখন সে ঢাকায় গিয়েছিল তখন আসিফকে জোর করে তার সাথে গেছিলো।আসিফ ওকে কোনোমতেই নিতে চায়নি।আর এবার আসিফ নিজেই ওকে সাথে নিয়ে চলছে।

তবে এবারের পথটা রিনির কাছে বেশ অচেনা। এই পথ তটিনিদের বাসায় যায়না।তবে আসিফ তাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে?

পথ চলতে চলতে রিনি প্রশ্নটা করেই বসলো।সে জানতে চাইলো তারা কোথায় যাচ্ছে।আসিফ এক হাতে ব্যাগ আর অন্যহাতে রিনির হাতটা শক্ত করে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলে,’বাবা বলেছে আর ঐশীদের বাসায় যেন না থাকি।হাতে মোটা অঙ্কের টাকা ধরিয়ে বলেছেন সোজা যেন অন্য কোনো বাসায় উঠি।আমারও এই ইচ্ছা ছিল।এতদিন তো একা একা ওদের বাসায় থাকতাম। এখন তুই আসাতে তাদের জন্য একটা অসুবিধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।হয়ত ওনারা বুঝতে দেয়না কিন্তু এটা তো আমাদের বোঝা উচিত।’

‘তো আমরা অন কোনাই যাইয়াম?’

‘আমার এক বন্ধু তার বাবা,মা আর ছোট বোন নিয়ে তিন রুমের একটা বাসায় থাকে।সেই ফ্ল্যাটের বাকি তিন রুম আমি নিয়েছি ওকে বলে।হাফ ভাঁড়া দিবো আর কি!সাবলেটে থাকবো’

তটিনিদের বাসায় যত যাই হোক কেমন যেন খাপ ছাড়া লাগতো।রিনির সবসময় ইচ্ছা ছিল নিজের একটা আলাদা বাসা হবে।সেখানে সে আর আসিফ থাকবে।মা বলতো তোর একদিন সব হবে দেখিস!
আজ মা নেই অথচ মায়ের কথাগুলো সত্য হয়ে গেলো।

হাঁটতে হাঁটতে বাড়িটির সামনে এসে দাঁড়ায় দুজন।রিনি হাঁপাচ্ছে।মেইন রোড থেকে অনেক দূরে এই বাড়িটা।দেখতে মান্ধাতার আমলের বাড়ি।আসিফ রিনিকে ওমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,’তুই তো জানিসই আমি বেকার মানুষ।বাবা যে টাকা দিয়েছে সেটা দিয়ে যাতে মাসের পর মাস বাসা ভাঁড়াটা বসে বসে দিয়ে যেতে পারি তাই স্বল্প বাজেটের একটা বাসা নিলাম।রিনি আসিফকে ইতস্তত হতে দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,’সমস্যা নাই।আংগো বাড়ি তো টিনের।আর এই বাড়ি বিল্ডিংয়ের।এডাই ভালা’
[সমস্যা নেই।আমাদের বাড়ি তো টিনের।আর এই বাড়ি বিল্ডিং।তুলনায় এটিই সেরা!]

আসিফ রিনির হাতটা আরও শক্ত করে ধরে বাড়িটার ভেতরে ঢুকলো।ঢোকার সময় তাদের সামনে এসে দাঁড়ালেন বাড়ির মালিক আজগর সাহেব।

তিনি আসিফকে দেখে বললেন,’তুমি না দোতলার সাবলেটে থাকার ভাঁড়া নিছো?’

‘জ্বী।’

‘ভাল ভাল।তা এ বুঝি তোমার বউ?’

‘হ্যাঁ’

রিনি সালাম দিলো।আজগর সাহেব সালাম নিয়ে চলে গেলেন।তার হাতে মাছের ব্যাগ।সম্ভবত বাজার করতে যাচ্ছেন।ব্যাগটা থেকে পুরোনো মাছের আঁশটে গন্ধ ভেসে আসছিল।
রিনি নাকে হাত দিয়ো বললো,’দেইখতে কেইন্না কিপটা কিপটা লাগে’

‘ধরে ফেলেছিস?আমারও তাই মনে হলো।নাহলে শহরে এমন নতুন ভাড়াটিয়া আসলে দাওয়াত দেয় বাড়িওয়ালা।তাছাড়া বাড়ির যে হাল দেখছি এই লোককে কিপটার বেশি মনে হলোনা”
———
বাপ্পি আজ অফিসে গেছে আর তাই ওর মা দারুণ সুযোগ পেলেন তটিনিকে নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখার।মূলত তার প্রধান উদ্দেশ্য হলো তটিনিকে স্বামীর প্রতি সহানুভূতিশীল করা।ওকে প্রতিদিন ধমকাতে তারও খুব খারাপ লাগে।কিন্তু কিছুই করার নেই।আজকালকার যুগের মেয়ে।মিঠা কথায় কথা কানে নেবেই না।ত্যাড়ামি করবে।তাই ধমক দিয়ে দিয়ে সব করতে হচ্ছে।
আজ বাপ্পি যাবার পরেই ওর ময়লা জামাকাপড় সব বুয়ার হাত থেকে ছিনিয়ে এনে তিনি তটিনির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছেন ধুয়ে দিতে।
তটিনি প্রথমে হা করে তাকিয়ে ছিল।তার বাড়িতে তার ওড়নাটাও ঐশী ধুয়ে দিতো।জীবনের সবচাইতে বিরক্তিকর কাজ তটিনির কাছে এই কাজটাই ছিল বুঝি!
আর আজ তাকে তার শাশুড়ি কিনা বেছে বেছে এই কঠিন কাজটাই দিলো?

‘কি হলো?ওমন করে কি দেখছো?জামাকাপড় ধুতে পারোনা নাকি?’

‘পপপপপপপারি তো!পারবোনা কেন?’

‘তাহলে ওভাবে কি দেখছো?আমি বাপ্পির জামাকাপড়ই দিলাম।অন্য কারোর দিই নাই।ঝটপট ধুয়ে ফেলো।বুয়ার আজ অনেক কাজ।দুটো কম্বল ধুবে।নাহলে ওকে দিয়েই করাতাম’

তটিনি মাথা নাড়িয়ে বাথরুমে এসে বালতির উপর কল ছেড়ে মোড়ায় বসে গালে হাত রেখে বললো,’কিভাবে যেন ধোয়!এ বাড়িতে আসার পর থেকে আমার শাড়ী তো আমি বালতিতে চুবিয়ে নিয়ে সরাসরি ছাদে দিয়ে আসতাম।সেরকম করে ধোয়া হয়নি কিছু।মাকে ফোন দিবো?
না না!মা ধরে মারবে ফোনের উপর দিয়ে!বলবে -হলো তো!কত বলেছি শুধু রান্না শিখলে হবেনা।জামাকাপড় ধোয়া ও জানতে হয়।ভবিষ্যতে কাজে দেবে’

বাপ্পি অফিসে আজ ভীষণ ব্যস্ত।
কাল আসেনি বলে কালকের কাজ সহ আজ করতে হচ্ছে।এরই মাঝে হঠাই দেখলো তটিনির ফোন।
ওর কল দেখেই মূহুর্তে সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো তার।এক গাল হাসি হেসে ভাবলো আজ এত জলদি তাকে মিস করছে তটিনি?
হাসি মুখে কল রিসিভ করতেই ওপার থেকে ভেসে আসলো একটি লাইন।
আর তা ছিল,’জামাকাপড় কিভাবে ধোয়?’

এ কথা শুনে বাপ্পি এদিক ওদিক তাকালো।পাশে ছিল তার কলিগ শুভ।শুভ ওকে কানে ফোন নিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে বললো,’কি ভাই?বউ কি খুব অশ্লীল কিছু বললো?’

বাপ্পি হালকা কেশে বললো ‘নাহ তেমন কিছুনা’

‘তাহলে চোখ ঘুরাচ্ছো কেন?বলো বলো!আমিও একটু শুনি’

‘পরে বলছি’

এটা বলে বাপ্পি উঠে দূরে চলে এসে বললো,’ফান করতেছো তটিনি?’

‘একদমই না।শুনছেন না?কল থেকে পানি পড়ছে।তাহলে ফান কেন মনে হলো আপনার?’

‘তুমি আসলেই জামাকাপড় ধুইতে পারোনা?এতদিন নিজের শাড়ী ধোও নাই?’

‘সেটা তো বালতিতে চুবিয়ে ছাদে দিয়ে আসতাম।ওভাবে ধোয়া হয়নি।আমি আসলে জানিনা কিভাবে ধোয়’

বাপ্পি নিজের কপালে নিজে একটা বাড়ি দিলো এবার।চেহারা দেখে বিয়ে করার সুবিধা এবং অসুবিধা!
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here