তোমাতে করিবো বাস পর্ব -৩০+৩১+৩২

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৩০
লেখনীতে-আফনান লারা
.
বাপ্পি যেন বিরাট এক সুযোগ হাতে পেয়ে গেলো।নিশ্চয় খারাপ কিছুনা,তবে বেশ ইন্টারেস্টিং কিছু।সে একটু এগিয়ে মুচকি হেসে বলে,’তটিনি!তুই আমায় চিনতে পেরেছিস তাহলে?’

তটিনি চোখের পলক ফেলে কয়েকবার।এরপর ড্যাবড্যাব করে দেখতে থাকে।ঝাপসার বাহিরে সে কিছুই দেখছেনা।চোখটাকে একটু ডলে নিয়ে আবারও তাকায়।এবার তার কাছে আসিফই মনে হলো তাছাড়া বাপ্পি তো ওকে তুই করে বলেনা।চোখপর পলক দ্রুত ফেলতে ফেলতে সে বললো,’হুম চিনেছি।চিনবোনা কেন!’

‘তাহলে জড়িয়ে ধর একবার’

তটিনি ওমনি মাথা ঘুরিয়ে শক্ত চোখে তাকায়।ভ্রু যুগল কুঁচকে বলে,’আজব তো!তোমায় কেন জড়িয়ে ধরবো?তুমি কে হও আমার?’

‘একবার তো ভালবাসার মানুষ ছিলাম’

‘তো কি!জামাই থাকতে তাই বলে তোমায় জড়িয়ে ধরবো?বেশি পকপক না করে এখান থেকে যাও আর আমার বাপ্পিকে এনে দাও’

‘তোর বাপ্পি?’

‘তো কি তোমার বউ রিনির বাপ্পি?আমার বাপ্পি আমারই।যাই হোক তাকে এনে দাও।তাকে ভালবাসবো আজ।হুশ থাকতে বাসতে পারিনা।ভেতর থেকে কেমন একটা বাধা কাজ করো।আজ তাকে ভালবাসবো।মা বলতো বিয়ের পর স্বামীর উপর এমনিতেই মায়া লেগে যায়হোক সে অপছন্দের মানুষ’

বাপ্পির মুখে হাসি ফোটে।চট করে গায়ের টিশার্টটা খুলে সে তটিনির সামনে গিয়ে বসে পিঠ ঘুরিয়ে।তার পিঠ দেখে তটিনির ভ্রু যুগল সমান হয়ে যায়।ঠোঁটের কোণায় হাসি নিয়ে পিঠের মাঝে হাত রাখে সে এরপর ফোলা ফোলা জায়গায় টিপ দিয়ে বলে,’হ্যাঁ।এটাই তো আমার বাপ্পি’

এই বলে তটিনি মুখ ডুবায় তাতে।বাপ্পি মাথা নিচু করে হাসছে।এটা তার কাছে স্বপ্নের চাইতে কম কিছুনা।তটিনি কখনওই এমন কিছু করার মতন মেয়ে নয়।

তটিনি ওর পিঠ থেকে মাথা তুলে বলে,’আহারে ভাইয়ার সামনে এসব কেন করছি!ইশ লজ্জা!’

বাপ্পি তখন বলে,’ তোমার ভাইয়া চলে গেছে’

এটা শুনে তটিনি এগিয়ে এসে আবারও ঝাপটে ধরে বাপ্পিকে।
বাপ্পির দম নিতে কষ্ট হচ্ছে।তটিনির স্পর্শে সে কাতর হয়ে যায়।এদিকে তটিনি যে হুশে নেই এটা সে বুঝতে পারে,চাইলে সুযোগটা নিতে পারবে কিন্তু তটিনিকে দেয়া কথা সে ভঙ্গ করতে পারবেনা।যত যাই হোক মেয়েটাকে সে সত্যিকারের ভালবাসে,পছন্দ করে।তার অজান্তে এইসব করলে পরে দেখা গেলো হুশ আসার পর সে নিজের উপর খুব রাগ করবে।নিজেকে ঘৃনা করবে।তাকে এমন একটা পরিস্থিতিতে ফেলতে চায়না বাপ্পি।তাই চুপ করে বসেই থাকলো।তটিনি বাপ্পির পিঠে মাথা ঘষে ঘষে বললো,’আসিফ ভাইয়াকেও এমন উদম দেখছিলাম।তবে কিছু করিনাই।কিন্তু আপনার পিঠ দেখে ছুঁতে ইচ্ছা করে।টান আছে, স্বামী হোন যে তাই’

বাপ্পি শান্ত গলায় বলে,’তোমার কি সত্যি হুশ নেই তটিনি?’

তটিনি মাথা তুলে।তারপর আবারও মাথাটা নিচু করে চুপ করে থাকে।কিছুই বলেনা।
বাপ্পি হাতটাকে পেছনে নিয়ে তটিনির মাথায় রেখে বলে,’কাউকে ভালবাসলে তাকে না পেলে পরের মানুষটাকে নতুন করে ভালবাসা অপরাধ না তটিনি।তুমি হয়ত এই ভেবে দ্বিধা করছো!আমি পর কেউ না।তোমার বিয়ে করা বর!এইসব চিন্তা কোনো লজিক রাখেনা’

তটিনি বাপ্পির পিঠে আঙ্গুল দিয়ে কিসব লিখতে লিখতে বলে,’বিয়ের চারদিনের দিন একটা মানুষকে আপন করে নেয়ার মনমানসিকতা আমার নেই।আরও, আরও সময় লাগবে!শরীরে চাহিদার বাইরে মন বলে একটা শব্দ থাকে।মনের সাথে চাহিদার সম্পর্ক নেই।’

তটিনি সরে বসে আবার।বাপ্পি উঠে রুমের আলো নিভিয়ে বারান্দাতে চলে যায়।
তার ঠিক কিছুক্ষণ পর তটিনি এলোমেলো ভাবে হেঁটে এসে বাপ্পির পাশে দাঁড়ায়।এরপর রেলিংয়ে হাত রেখে বলে,’আমার হুশ আছে!প্রথমে ঝাপসা দেখলেও এখন ক্লিয়ার দেখছি!’

এই বলেই সে হঠাৎ পড়ে যাওয়া ধরলো, বাপ্পি সামনের দিকে তাকানো অবস্থায় তটিনিকে এক হাতে ধরে ফেললো তখনই।

‘তোমার হুশ নেই’

‘আপনি ও খাইতেন।ভাল হতো’

‘তোমাকে ধরতো কে এখন? ‘

‘বসবেন চেয়ারে?’

বাপ্পি কিছু বলেনা।সামনে একটু দূরে চোখ বুলালেই সমুদ্রের ঢেউ নজরে আসে।সেদিকটাই দেখছে সে।চেয়ারে বসলে এগুলা দেখা যায়না বলেই দাঁড়িয়ে আছে সে।কিন্তু তটিনির নেশার চোখে এতোদূরের সমুদ্র দেখা গেলোনা।সে বারবার বাপ্পিকেই দেখছিল।
বাপ্পির বিষন্ন চেহারা তাকে ভাবিয়ে তুললো।আসিফের কারণে সে এখনও বাপ্পিকে মেনে নেয়নি।নিবেও কিনা সেটার নিশ্চয়তা নেই।অথচ বাপ্পি টু শব্দ ও করেনা এটা নিয়ে।তাকে পেয়ে গিয়েই যেন বাপ্পি সব পেয়ে গেলো।কিন্তু সে কি ওর সাথে ঠিক করছে আদৌ?’

‘আপনি আমায় ডিভোর্স দিয়ে দেন’

‘কেনো?’

‘আমি আসিফ ভাইয়াকে এত সহজে হয়ত ভুলতে পারবোনা’

‘তাই বলে ডিভোর্স? আমি সব জেনেই বিয়ে করলাম।কোনো অভিযোগ তো নেই’

‘অভিযোগ না দেখালেও আমি দেখি।বুঝতে পারি,আমার জায়গায় অন্য একটা মেয়ে হলে আপনায় মাথায় করে রাখতো,সেটাও জানি’

‘তবে কি সে আমার মনের মতন হতো?যতটা তুমি”

‘মনের মতন দিয়ে আর কি হলো?’
———-
রিনি রুমে ফিরে দেখে আসিফ বই পড়তে বসেছে।কাল রাত সহ দুবার কোলে ওঠা হয়েছে বলে রিনির এখনও মনে হচ্ছে সে হাওয়ায় ভাসছে।দ্যা গ্রেট আসিফ যে কিনা তটিনির ক্রাশ সে ওকে কোলে তুলেছে তাও দুবার!ভাবা যায়!না ভাবা যায়না।হুট করে সূর্য ওঠার দিক বদলে গেলো কেন!রিনিকে কি আজকাল বেশি সুন্দর লাগে?
আয়নার সামনে এসে নিজরে পেট, গলা, মুখের চারপাশ হাতিয়ে রিনি ভাবছে তাকে কি তটিনির চেয়ে বেশি সুন্দর লাগে!নাহলে কোলে নেয়ার মানে কি হতে পারে!
ঠোঁটে হাত রেখে রিনি কল্পনা করছে তটিনির ঠোঁট কেমন।
কি সুন্দর চিকন ঠোঁট তটিনির!!বাপ্পি ভাই কয়বার যে ছুঁয়েছে সেটাই ভাবছিল রিনি ওমনি হাত থেকে চিরুনি পড়ে গেলো।শব্দে আসিফ মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে রিনি তড়িগড়ি করে চিরুনি তুলছে নিচ থেকে।
আসিফ আবারও পড়ায় মন বসায়।রিনি এবার নিজের জামা একটু সরিয়ে পেট দেখছে।বিয়েরদিন তটিনির শাড়ীর ফাঁকে ওর পেট দেখছিল হালকা করে।মুখের চাইতে পেট সাদা চারগুন!!এমনি এমনি ওর বিবাহিত বর তটিনির জন্য পাগল হয়নি।আর ওর পেট দেখো!যে দুই বাচ্চা জন্ম দেয়া শেষে।
পেটের ভুড়ি টিপ দিয়ে রিনি বিরক্ত হয়ে বলে,”আইচ্ছা মাইয়াগো কোন জিনিস কান হোলাগো বেশি বালা লাগে?’
আচ্ছা মেয়েদের কোন জিনিসটা ছেলেদের বেশি ভাল লাগে?’

‘উমমমমম!চোখ,আমার কাছে’

রিনি চোখে হাত দিয়ে এক লাফ দিয়ে বললো,’আঁর চোখ তটিনি বুবুর তন ও বেশি ডক।হেয়াল্লাই হয়ত হেতেন আঁরে দুইবার কোলে লইছেন ক্রাশ খাই’
আমার চোখ তটিনি বুবুর চাইতেও বেশি সুন্দর তাই হয়ত উনি আমায় দুবার কেলে নিছেন ক্রাশ খেয়ে’

আসিফ নোট লিখতে লিখতে আবার বললো,”চুল ও’

রিনি এবার নিজের চুলে হাত রেখে বলে,’ওহ
তাইলে এই বুঝি কারণ!’

চুলের ক্লিপটা খুলে চুলগুলোকে ছেড়ে রিনি আসিফের পাশে চেয়ার নিয়ে বসে চুল নাড়তে থাকে হাত দিয়ে।আসিফ রিনির চুল নাড়ানাড়ির জন্য পড়ায় মন বসাতে পারছেনা।একটা সময়ে বাধ্য হয়ে সে বলে,’তোর কি সমস্যা? চুল ছিঁড়ে ফেলবো একদম।হাত সরা চুল থেকে’

‘কিল্লাই?আঁর চুল আন্নেরে কিচ্ছে?’

‘কিচ্ছে?পড়াতে মন বসাতে পারছিনা’

‘ক্যান?আঁর চুল কি আন্নেরে টাচ করতাছে নাকি ইভটিজিং করতাছে?’

আসিফ বইটা তুলে রুম থেকে চলে গেলো।সোজা একেবারে ছাদে।সেখানে এসে শান্ত মনে পড়তে বসলো।কিন্তু সমস্যা হলো রাতের ছাদে যে বাতিটা থাকে সেটা নষ্ট। এই অন্ধকারে পড়া অনেক মুশকিল!
চিলেকোঠার দরজা খেলার আওয়াজে আসিফ মাথা তুলে তাকায়।রিনি চুলগুলোকে হেলিয়েদুলিয়ে আসছে আসিফের কাছে।পাশের বাড়ির ছাদের বাতির আলোয় তাকে আবছা দেখা যায়।রিনি আসিফের সামনে এসে বলে,’বিবাহিত পুরুষদের জন্য রাত পড়বার নয়!হয়ত শুরুতে বই পড়বার কিন্তু শেষ রাত বউয়ের।’

রিনি কখনও শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেনা।এখন বললো বলে আসিফ অনেকটাই অবাক।

আসিফ ওর পাশ দিয়ে চলে যাওয়া ধরে কিন্তু রিনি বইটা ধরে ফেলে বলে,’চলেন তারা গুনি’

আসিফ কিছু বলেনা।বইটা রিনির কাছে রেখেই চলে যায়।সিঁড়ি দিয়ে নামবার সময় রিনি উপর থেকে বললো,’বাপ্পি ভাইয়া তটিনি বুবুকে না পেয়ে নাকি হার মাইন্না গেছে।কিন্তু আঁই হেতেনের মতন না।আঁই আদায় করা জানি।আইতেছি রুমে!’

আসিফ ভয় পেলোনা শুরুতে কিন্তু করিডর দিয়ে যেতে যেতে হালকা পাতলা ভয় হলো।রিনি কি করবে এসে?এইসব চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল ওমনি রুমের দরজা বন্ধের আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকায় আসিফ।রিনি চুলে খোঁপা করতে করতে আয়নার কাছে গিয়ে বইগুলো ড্রেসিং টেবিলে রাখে।এরপর আয়নায় চোখ রেখে আসিফকে দেখতে লাগলো সে।
আসিফ বইটা সেখান থেকে তুলে নিতে চাইলো কিন্তু রিনি হাত দিয়ে আটকে বলে,’অনেক পড়ছেন।আজ আর পড়তে দিব না।হ্যাঁ,বই না পড়েন।আমাকে পড়তে পারেন।আমাকে পড়া উন্মুক্ত আপনার জন্য।’

‘এতসব শুদ্ধ ভাষা কে শেখালো?’

‘তটিনি বুবুর ডায়েরী থেকে লাইন নিয়ে কাট,কপি,পেস্ট করছি’
চলবে♥তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৩১
লেখনীতে-আফনান লারা
.
বাপ্পির অফিস অনেকদিনের ছুটি নেয়া হয়েছে,আর মিস দেয়া যাবেনা।তাই পরেরদিন ভোর হতেই তারা হোটেল থেকে বিদায় নিলো।তটিনি গাড়ীর পেছনের সিটে ঘুমাচ্ছিল আজ।কাল সারা রাত ঘুমিয়েছে তাও তার অনেক ঘুম যেন এখনও বাকি আছে।অবশ্য এখন খুব একটা সকাল না।সাড়ে ছয়টা বাজে।বাপ্পি হাই তুলতে তুলতে ড্রাইভ করছে।কাল রাতে যেটা ঘটেছে সেটা খুব একটা স্মরণীয় নাহলেও বাপ্পির বার বার দৃশ্যগুলো মনে পড়ে যায়।তটিনি আসিফকে না চেয়ে তাকে চাইছে এর চেয়ে বড় কিছু আর কি হতে পারে।

অনেকটা পথ আসার পর বাপ্পি গাড়ী থামায়।একটা কফি খেতে মন চাইছে।দোকানটা মেইন রোড থেকে কাঁচা পথ দিয়ে মাঝ বরাবর।অর্থাৎ গাড়ী রেখে হেঁটে যেতে হবে কফির জন্য।
তটিনিও ঘুমায়।তাই বাধ্য হয়ে বাপ্পি দরজা লক করে ঐ দোকানের দিকে চলে গেলো।
সে যাবার কিছু সময় পরেই তটিনির ঘুম ভেঙ্গে যায়।চোখ ডলে সামনে তাকিয়ে বাপ্পিকে কোথাও না দেখে সে কিছুটা ভয় পেলো।এরপর গাড়ীর দরজা খোলার চেষ্টা করে দেখে সেটা লক।এবার তার ভয়টা আরও গাঢ় হয়ে আসে।
জানালায় হাত রেখে কিছু বলবে তখনই বাপ্পিকে দূর থেকে আসতে দেখে মূর্হুতেই তটিনির মুখে হাসি ফোটে।সে মুচকি হেসে এক দৃষ্টিতে বাপ্পির দিকে তাকিয়ে আছে।বাপ্পি দরজা আনলক করে তটিনির দিকে চা ধরে বললো,’জানতাম তুমি জেগে যাবে।তাই তোমার জন্য ও নিয়ে এসেছি।চা খেয়ে নিজেকে ফ্রেশ করে নাও তো দেখি’

তটিনি কাপটা দেখে মনে করছে বিয়ের দিন রাতে হাসপাতালে বাপ্পি ওকে কফি দিতে চেয়েছিল।সে ধমক দেয়ায় এরপর থেকে ও আর কখনও ভুলেও তটিনিকে কফি সাধেনি!
এই ছোট বিষয়টা নিয়েই তটিনির ঠোঁটের কোণায় হাসি খেলে গেলো।

বাপ্পি তার এই হাসিটা দেখেনি।সে কফিতে চুমুক দিয়ে মাথার উপরের আমড়া গাছটা দেখছে।সবগুলো পাতা হলুদ রঙ হয়ে আছে।
অনেকক্ষণ সেটা দেখে তটিনিকে সে গাড়ীর বাইরে নিয়ে এসে বলে চোখ বন্ধ করো।
তটিনি চায়ের কাপটা কারের উপর রেখে চোখ বন্ধ করে।বাপ্পি গাছটাকে ধরে খুব জোরে ঝাঁকায়।ওমনি সে বলে তটিনিকে চোখ খুলতে।তটিনিও চোখ খুলে।খুলতেই চোখের সামনে শতশত আমড়া গাছের হলুদ পাতা ঝরতে দেখে সে।তার হাসিটা এমন ছিল যে এইসব বুঝি ফুলের পাপড়ি!
সে চিৎকার করছিল খুশিতে।বাপ্পি অবাক চোখে ওর খুশিটা দেখে গেছে।ফুলের পাপড়ির বদলে বিবর্ণ পাতাতেও কেউ এত খুশি হয়!
গাছের পাতাগুলো সব ঝরে যাবার পর তটিনির হাসি বন্ধ হলো।বাপ্পি কপালের ঘাম মুছে নিচ্ছে।গাছটা যেমন বড় ছিল তেমনই তার ঢালপালা গুলো বেশি ছিল তার সাথে পাতাও বেশি তাই ওর গায়ের অনেক শক্তি ক্ষয় হয়ে গেলো।
তটিনি দেখে নিচে পাতাতে পাতাতে ভরে অনেক সুন্দর বসার জায়গা তৈরি হয়ে গেছে। তাই চায়ের কাপটা নিয়ে সে পাতার উপরে বসে যায়।
বাপ্পি বসতে গিয়েও বসেনা।অভ্যাস নেই,কেমন একটা আনইজি লাগছিল।তখনই তটিনি তাকে খোঁচা দিয়ে বললো,’এইসব কি আর বড়লোকেরা পারবে!’

তার কথায় বাপ্পি দ্রুত বসে যায় ওর পাশে।কথাটা ভালমতন গায়ে লাগছে ওর।
চা কফি শেষে বাপ্পি কাপ গুলো রেখে আসতে চলে যায় ঐ দিকে আর তটিনি বসে বসে শূন্য পাতার গাছটি দেখছে।ঢালপালাগুলো কেমন যেন খাঁপছাড়া।
পাতাতেই যেন সব সৌন্দর্য্য ছিল।পাতা নেই বলে গাছটাকে কেমন যেন একটূ লাগছে।গাছের আসল রুপটাই যেন ফিকে হয়ে গেছে।তটিনি পাতাগুলো ধরে বারবার গাছটা দেখছিল।
তখনউ বাপ্পি এসে ওকে তাড়া দিয়ে বলে গাড়ীতে উঠতে।তটিনি এবার পেছনে না বসে বাপ্পির পাশের সিটটাতেই বসেছে।
বাপ্পি ফ্রেশ মাইন্ডে ড্রাইভ করছিল।কয়েকবার করে ওর মায়ের ফোন এসেছিল।তিনি জানিয়েছেন আজ নাকি ওরা ফিরবে বলে বাড়িতে মহা আয়োজন লেগেছে।তাছাড়া আজ তটিনির পরিবারের লোকদেরও বাপ্পিদের বাসায় দাওয়াত।বৌভাত তো হয়নি।সেটা কাল হবে বলে আজ সবাই একটু আলাপ করতে আসবে কত মানুষ আসবে সেটা নিয়ে।।

তটিনি শুনলো আসিফ ও আসবে।হঠাৎ সে বাপ্পিকে গাড়ী থামাতে বলে।বাপ্পি ভয় পেয়ে গাড়ীটা সঙ্গে সঙ্গে থামিয়ে নেয়।

‘কি হলো হঠাৎ?’

‘আমরা বাসায় যাব না’

‘কোথায় যাবো?’

‘ঢাকায় হোটেল নাই?’

‘বাসা থাকতে হোটেলে কেন?’

‘আমি বলছি তাই।আমাকে নিয়ে সোজা হোটেলে যাবেন আর নয়ত আপনি বাসায় ফিরুন আমি নিজের ব্যবস্থা করতেছি’

‘বলবে তো কি হয়েছে!’

‘না বলবোনা।আমি আজ ফিরবোনা বাসায়।কাল সকালে ফিরবো’

বাপ্পি আর কিছু বলেনা। পুনরায় গাড়ী স্টার্ট করে।ঢাকায় পৌঁছে তটিনির কথামতন সে একটা হোটেলে আসে।মাকে ফোন করে জানায় আজ এখানে তার এক বন্ধুর বাড়িতে পার্টি বলে রাতটা তারা এখানেই থাকবে।ওদিকে আসিফ,রিনি,ঐশী,তটিনির বাবা মা সকলে এসে গেছে।আর তাই ওরা দুজন আসবেনা বলে সকলেই আশাহত হলেন।
বাপ্পি কাউকে বলে নাই তটিনির কারণে তার আসা ক্যানসেল হয়েছে।তটিনি হোটেলের রুমে এসে এক কোণায় বসে আছে সোফায়।কোনো কথা বলছেনা।বাপ্পি এতটা পথ ড্রাইভ করে এসেছে বলে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়েছে বিছানায়।গা টা এলিয়ে দিতেই চোখে রাজ্যের ঘুম এসে হানা দিলো ওর।তটিনি ফ্রি হয়ে ফোন নিয়ে ঐশীকে কল দেয়।ঐশী কলটা রিসিভ করেই চেঁচামেচি শুরু করে। তারা কেন আজ আসেনি।কত অপেক্ষা করছে সবাই।পার্টিটা কি বেশি জরুরি হয়ে গেলো!’

তটিনি শুধু জানতে চায় আসিফ রিনি এসেছে কিনা।ঐশী জানায় তারাও এসেছে।এটা শুনেই তটিনি ফোন রেখে দিলো।
মূলত ওদের সামনে যেতে চায়না বলেই সে আজ বাসায় ফেরেনি।ওদের একসাথে দেখলে ওর মনটা আবার খারাপ হয়ে যাবে আর তার রিয়েকশান দেখাবে বাপ্পিকে।যেটা সে চায়না।
—-
বাপ্পি যখন চোখ খুললো তখন বাজে রাতের বারোটা পঞ্চাশ।একটার কাছাকাছি। পেটের খুধায় জেগে গেছে সে।লাফ দিয়ে উঠে বসে সবার আগে তটিনির কথা মাথায় আসলো।কারণ তটিনিও না খেয়ে আছে।হন্তদন্ত করে রুমের আলো জ্বালালো সে।আলোতে স্পষ্ট হয় তটিনি।সে বাপ্পির পাশে গুটিশুটি দিয়ে চোখ বন্ধ রেখে শুয়ে ছিল।বাপ্পি ওকে না জাগিয়ে ফোন নেয় খাবার অর্ডার দেয়ার জন্য তখন তটিনি চোখ মেলে বলে,’ওখানের মিনি ফ্রিজটা থেকে চকলেট আইসক্রিম নিয়ে খেয়েছি।খিধে নেই আমার।আপনি শুধু নিজের জন্য অর্ডার দিন।’
——-
ঐশী, আসিফ আর রিনিকে জোর করে বাপ্পির মা রেখে দিয়েছেন বাসায়।এটা নাকি নিয়ম।বউয়ের বাড়ির কেউ ১মবার আসলে তাদের রেখে দিতে হয়।তটিনির বাবা মা চলে গেছিলেন।বকুল আপুর রুমে রিনি আর আসিফকে থাকতে দেয়া হলো।আর ঐশী থেকে গেলো বুশরার সাথে।
রিনি সবগুলো জিনিস ধরে ধরে দেখছে।এত বড়লোকের ছেলের সাথে তটিনির বিয়ে হইছে তাও সে মানিয়ে নিতে পারছেনা!!কি ভালবাসাটাই ছিল ওদের!
রিনি ইয়া বড় হা করে সব দেখছিল দেখে আসিফ টিটকারি করে বলে,’এই বাড়ির আর ছেলে নাই।নাহলে তোরে বিয়ে করাই দিতাম’

‘আঁর জামাই আছে।আরঁ আর বিয়া লাগদোনো।অজ্ঞার বালুপাসা হাইতেই আঁর জীবন যায় যায়…..’

আসিফ হেসে দিয়ে আবার পরক্ষণেই মুখটা ফ্যাকাসে করে ফেলে।সে জানে আজ তটিনি কেন আসেনি।এতদূর জার্ণি করে কেউ অন্তত পার্টিতে যাবেনা।সে নিশ্চয় ইচ্ছে করে বাড়ি ফেরেনি,ওর সামনে পড়তে হবে বলে।
——-
তটিনি হাঁটু ভাঁজ করে খাটে হেলান দিয়ে বসে বসে বাপ্পির খাওয়া দেখছে।বাপ্পি অনেকবার ওকে খেতে ডেকেছে কিন্তু সে বলেছে সে খাবেনা।তটিনি খায়নি বলে বাপ্পি খাবার খুব কম খেয়ে হাত মুছে তটিনির সামনে এসে বসে।এরপর পা দুলাতে দুলাতে ওর হাতটা টেনে ধরে ওর দিকে ফিরে বলে,’জানিনা কেন!কি কারণে এতটা মন খারাপ করে রেখেছো!যদি বলতে তাহলে আমি সমাধান করে দিতে পারতাম’

‘আসিফ ভাইয়া…..’

‘বুঝেছি!ওরা হয়ত এতক্ষণে চলেও গেছে।কাল সকালে আমরা বাড়ি ফিরে যাবো কেমন?কাল কিন্তু অনুষ্ঠান আছে।এখন শুয়ে পড়ো।আমার কোনো অভিযোগ নেই।যদি আরও আগে বলতে তবে এত প্রশ্ন করতাম না’

বাপ্পি আলো নিভিয়ে আবারও শুয়ে পড়েছে।তটিনির চোখে ঘুম নেই।কাল যদি বৌভাত হয় ও!!তাহলে আসিফ রিনি আবার আসবে!
তার ভাল লাগছেনা এই একটা টপিক!কেন শেষ হয়না!সবসময় ওর সাথেই জড়িয়ে যায়!
হাতটা সরাতেই বাপ্পির হাতের স্পর্শ পেয়ে তটিনির চিন্তাটা বদলে গেলো।ওর হাতের সাথে হাত লাগায় সে আসিফ রিনির অধ্যায়টাকে কিছু সময়ের জন্য ভুলে যায়।অন্ধকারে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে। বাপ্পির কি দোষ!বারবার এক কথাই মাথায় আসে।আসলেই ওর কি দোষ!সে তো বিয়েতে শুরুর দিকে জোরাজুরি করলেও পরে সে ঠিকই সব সিদ্ধান্ত তটিনির উপর ছেড়ে দিয়েছিল।বিয়েটা তটিনি নিজের মতেই করেছে!
হয়ত মত না,জেদের বশে!

ভাবতে ভাবতেই তটিনি বাপ্পির আঙ্গুলটাকে ফোনের আলো দিয়ে দেখছিল।বাপ্পিকে নিয়ে ভাবলে আসিফের কথা একবারও মনে আসেনা তার।বাপ্পি বেশ ভাল বুঝতে পারছিল তটিনি এবার তার আঙুল নিয়ে গবেষণায় মেতেছে।তাই সে এক পলকেই তটিনির হাতটা শক্ত করে ধরে ফেললো।এমন ভাবে ধরলো, আগামীকাল ছাড়া আর ছাড়বেনা। চোখটাও বন্ধ!
চলবে♥তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৩২
লেখনীতে-আফনান লারা
.
হাতে হাত রেখে ঘুমালে সম্পর্কটা ঠিক কতটা গভীর হয়?বিশেষত সেই মানুষটার হাত যে মানুষটা আপনার খুব আপন।আপনার বৈধ সম্পর্কের মানুষ।

খুব সকালে তটিনির আর বাপ্পির এক সাথেই ঘুম ভেঙ্গে যায়।কারণটা ছিল বাপ্পির মায়ের ফোন।আজ বৌভাত, তারা যেন সূর্যের আলো উঠানে পড়ার আগেই বাড়িতে উপস্থিত হয়।
বাপ্পি তটিনির হাতটা তখন ছাড়লো যখন তার বিছানা থেকে নামার উপক্রম হলো।
তটিনির হুশ নেই।সে হেলেদুলে নিজেও নেমে মুখ ধুইতে চলে গেছে।যেতে যেতে আঁচলটা মেঝেতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেছে।বাপ্পি তার ব্যাগ থেকে তোয়ালে বের করতে ব্যস্ত ছিল।তোয়ালেটা অনেক খোঁজাখুঁজির পর বের করে যেই না সে পিছনে ফিরলো দেখলো তটিনি চোখ ডলতে ডলতে এদিকেই আসছে।আঁচলের ঠিক নেই।বাপ্পি ধপাস করে পিছিয়ে মেঝেতে বসে গেলো এ দৃশ্য দেখে।তটিনি আসতে আসতে খাটের সাথে এক ধাক্কা খেয়ে উহঃ করে নিজের দিকে চোখ ফিরাতেই আঁচল নিচে দেখে তড়িগড়ি করে আঁচলটা তুলে গায়ে জড়িয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে বাপ্পি না দেখার ভান ধরে তোয়ালে গায়ে পেঁচিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেছে।

‘এই দাঁড়ান!আপনি কিছু দেখেছেন?’

‘না তো!কি দেখবো?’

তটিনি আর কিছু বলেনা।নিজের আঁচল দিয়ে মুখ মুছে বিছানার উপর থেকে নিজের চুড়ি আর আংটি নিয়ে পরছে।
বাপ্পি জিভ কামড়ে কোনোমতে ওখান থেকে পালিয়ে ওয়াশরুমে চলে আসে।তটিনি যদি জানে তার আঁচল পড়ে যাবার পর সে ওকে ড্যাবড্যাব করে দেখেছে তাহলে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধাবে।
——
তটিনি বাপ্পির অপেক্ষায় ছিল।সে বের হলেই তারা হোটেল থেকে বের হয়ে বাড়ির পথে রওনা হবে।হোটেলটা থেকে বাড়ি খুব একটা দূরে না।আধা ঘন্টার পথ।
বাপ্পি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে তটিনিকে নিয়ে রওনা হয়।তারা যখন বাড়ি পৌঁছে ততক্ষণে সাতটা বেজে গেছে।
ডেকোরেশনের লোকেরা তাদের কাজ করা শুরু করে দিয়েছে।
তটিনির হাসি আর ধরেনা।আজ তাদের বৌ ভাত।হাসিটা ভেতর থেকে আসছে তার।
হাসতে হাসতে ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই তটিনি আটকে যায়।পরের পা আর রাখলোনা।
কিছুক্ষণ আগে এখানে রিনি হাতে ঝুল পরিষ্কার করার ঝাড়ু নিয়ে টুলে উঠে ঝুল পরিষ্কার করছিল।ময়লা দেখলে তার কেমন যেন লাগে,দম ফেলতে অশান্তি লাগে।যেখানেই যাক ময়লা দেখলে উঠে পরিষ্কার করে ফেলে সে।
এখনও তাই করছিল হঠাৎ আসিফ ওখান দিয়ে যাবার সময় টুলের সাথে তার ধাক্কা লাগে আর টুল নড়বড়ে হওয়ায় রিনি তখন পড়ে যাচ্ছিল,আসিফ তাকে সঠিক সময়ে ধরে ফেলে।এই দৃশ্যটাই তটিনি দেখেছে মাত্র।বাপ্পি ব্যাগ কাজের লোকের হাতে দিয়ে গাড়ী পার্ক করে এসে সেও একই দৃশ্য দেখে তটিনির দিকে তাকায়।তটিনির চোখে পানি দেখে তার বুকটা যেন নিমিষেই খালি হয়ে গেলো।মুখটা তার ফ্যাকাসে হয়ে গেলো মূহুর্তেই।এই মেয়েটিকে সে কখনও কাঁদাতে চায়নি!আর আজ এই মেয়েটিই ওর সামনে কাঁদছে।!
তটিনি শক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে।
আসিফ আর রিনি এখনও ওদের দেখেনি।আসিফ রিনিকে খুব যত্ন করে নিচে নামালো।রিনির খুশি আর ধরেনা।সে আসিফকে তখনই জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা গুজে বললো,’আন্নে আঁর বেজ্ঞিন😘’

তটিনি পিছিয়ে যাওয়া ধরতেই বাপ্পি ওকে হাত দিয়ে ধরে ফেলে।এরপর চুপচাপ ওদের নজর এড়িয়ে রুমে নিয়ে আসে তটিনিকে।

রুমে এনে দরজা লক করে বাপ্পি।তটিনি চোখ মুছে বিছানার উপর রাখা তার বৌ ভাতের শাড়ীর প্যাকেটটা হাতে তুলে নেয়।দ্রুত প্যাকেট থেকে সেটা বের করে পরতেও চলে যায়।বাপ্পিকে সে বোঝাতে চাইছে সে ঠিক আছে।আসলে যে ও ঠিক নেই এটা বাপ্পি জানে।
তটিনি ওয়াশরুমে এসে নিচে বসে ঝর্ণা ছেড়ে কাঁদছিল মাথা ধরে।বাপ্পি দরজার কাছে এসে প্রায় দশ মিনিট মতন দাঁড়িয়ে ছিল এরপর দরজায় হাত রেখে সে বলে,’তটিনি!এত ভিজলে জ্বর আসবে।সকালে এত ভিজতে হয়না!চলে এসো’

তটিনি শোনেনা।সে কাঁদছে!আসিফকে ভোলার হাজার চেষ্টা করেও সে ব্যর্থ!
বাপ্পি দরজায় কয়েকবার নক করার পরেও তটিনির কোনো সাড়া না পেয়ে ড্রয়ারের উপর থেকে ওয়াশরুমের চাবি বের করে লক খুলে বলে,’তটিনি আমি আসছি!’

দরজাটা খুলতেই তটিনিকে নিচে বসে থাকতে দেখে বাপ্পি দরজা ছেড়ে দেয়।তটিনি মাথা তুলে বাপ্পিকে দেখে হাত উঠিয়ে ঝর্ণা অফ করে।এরপর চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়।তারপর আর কিছু করেনা।দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বাপ্পির দিকে তাকিয়ে থাকে।বাপ্পি শাড়ীর প্যাকেটটা বাহিরে রেখে তোয়ালে ওর গায়ে পেঁচিয়ে দিয়ে বলে,’আমি ওদের বলছি চলে যাবার জন্য।তাও তোমায় কষ্ট পেতে হবেনা’

‘না।তার দরকার নেইই’

‘তোমায় এভাবে দেখতে পারবোনা আমি’

”আমি ঠিক আছি’

তটিনি তোয়ালেটা ধরে বের হয়ে আসে।বাপ্পি কিছু না বলে দরজা খুলে চলে যায় রুমের বাহিরে। আসিফ রিনিকে ছাড়িয়ে বাগানের দিকে গেছে।বাপ্পি ও সেদিকেই গেলো।ওকে দেখে আসিফ খুশি হয়ে জানতে চাইলো তারা কখন এসেছে।তটিনি বা কোথায়।
বাপ্পি ওর সাথে আলাপ করতে করতে চেয়ার নিয়ে বসে।আসিফ তার ভার্সিটি নিয়ে কথা শুরু করে তখনই বকুল আপা সেখানে এসে বাপ্পিকে ধমকে বললেন গিয়ে তটিনির কথা শুনতে।তটিনি নাকি ওর খোঁজ করছে শুধু।আসিফ ও অবাক হলো।বাপ্পি তো নিজেই অবাক।
তাও মনে মনে আন্দাজ করে তটিনি হয়ত আসিফকে জেলাস ফিল করাতে বকুল আপুকে দিয়ে ওকে ডেকেছে।
এইসব ভাবতে ভাবতেই রুমে এসে দেখে তটিনি পিঠে হাত দিয়ে রুমের শেষ কোণায় দাঁড়িয়ে আছে।বাপ্পি ওর কাছে এসে বললো,’আসিফকে জেলাস ফিল করাতে আমায় মনে করা হচ্ছে?’

‘নাহ।আসলে আমার পিঠের উপর যে রশিটা আছে সেটা জায়গা থেকে ছুটে গেছে।সেফটিপিন দিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে।অনেক টাইট বলে পরতে আমার কষ্ট হয়েছে।আবার খুলে সেফটিপিন লাগালে আবারও ছুটে যাবে’

বাপ্পি কোমড়ে হাত রেখে বলে,’এটা তো বকুল আপুকে দিয়েও করাতে পারতে’

‘বলেছিলাম।উনি আমায় ধমকে বলেছেন কাজটা আপনার করা উচিত’

বাপ্পি ঢোক গিলে তটিনির কাছে এসে দাঁড়ায়।তটিনি মাথা নিচু করে ওর দিকে পিঠ ঘুরিয়ে দাঁড়ালো।বাপ্পি সেফটিপিন নিয়ে রশিটাকে আটকে দিচ্ছে।হাত কাঁপছে তার অনবরত।
তটিনি মুচকি হেসে বলল,’বিয়ের পরেরদিন আমি মলম মালিশ করেছিলাম।আমার এতটাও হাত কাঁপেনি’

‘ওসব তুমি বুঝবেনা।তোমাদের তো আমাদের পিঠ, গলা দেখে অনুভূতির বৃদ্ধি ঘটেনা।কিন্তু আমাদের ঘটে।’

‘তো কি করা উচিত তাহলে?’

‘যেটা করা উচিত সেটা করলে তুমি খুব মারবে আমায়।বৌভাতের দিন মার খেয়ে গাল লাল করে হাঁটতে চাইনা’

তটিনি জানালা দিয়ে বাগানের দিকে তাকালো।সেখানে আসিফ বসে বসে কফি খেতে খেতে ফোনে লার সাথে যেন কথা বলছে।রিনি সেখানে লাফালাফি করছে ওর পাশেই।
তটিনি মাথা উঁচু করে বলে উঠলো,’মারবোনা’

‘তাও করছিনা।আমার সাহস নেই’

তটিনি নিজেকে ছাড়িয়ে বাপ্পির দিকে ফিরে বললো,’কেন নেই?আমি অনুমতি দিলাম না?’

‘দিলে তবে বাগনে আসিফকে দেখে।বিয়েটা জেদ করে করেছো,ভালবাসাটা জেদ করে করোনা,হবেওনা,গড়বেওনা’

এই বলে বাপ্পি চলে গেলো।তটিনি বাপ্পির কথায় আশ্চর্য হয়ে আছে।বাপ্পি খুব কঠিন একটা সত্যি বলে চলে গেলো!
আসিফকে জেলাস ফিল করাতে সে বাপ্পিকে বিয়ে করেছে হাজারও অপছন্দের ভীড়েও।আর আজ!আবারও একই সিদ্ধান্ত! ‘
——
রিনি ফুলের মালা মাথায় লাগিয়ে বাপ্পিদের বাগানের সবকয়টা ফুল ধরে ধরে দেখছে।আসিফ হাতে কফির মগটা নিয়ে ওর চঞ্চলতা দেখছে।
বহু সময় আগে তটিনিকে এভাবে দুষ্টুমি করতে দেখতো সে।
মনটা আনন্দে ভরে উঠতো কিন্তু সে বুঝতে দিতোনা।আর আজ ও!!!
রিনি চুল কানের পেছনে গুজে আসিফের দিকে ফিরে বলে,’আঁরে ভালা লাগে?’

‘একটুও না’

‘বেশ জানি!!’

আসিফ অন্যদিকে মুখ করে বসে এবার।তটিনি জানালায় হাত রেখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।দিনশেষে সে একা!
তার কেউ নেই।কিছু নেই!তাকে বোঝার মতন একটি মানুষ নেইই!
শাড়ীর আঁচল গায়ে চাদরের মতন টেনে রুম থেকে বের হয় সে।সবাই যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। বাপ্পি তার বাবার সাথে ডেকোরেশনের জায়গায় দাঁড়িয়ে কথা বলছে।দূর থেকে ওর গায়ের কমলা রঙের পাঞ্জাবিটা চোখে লাগে!
তটিনি অনেকক্ষণ ওকে দেখছিল।বকুল আপু হাতে পিঠার ঢালা নিয়ে ওখান দিয়ে যাবার সময় বললেন,’কথা বলতে ভয় কিসের?যাও ওর কাছে গিয়ে দাঁড়াও’
চলবে ♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here