তোমাতে_বিভোর২ পর্ব ৪

#তোমাতে_বিভোর
#Season_2
#পর্ব_৪
#Sapna_Farin
_________________

–সকাল বেলা।ড্রয়িং রুমে ছোট খাটো মিটিং বসেছে অচেনা মেয়েটি কে নিয়ে।মিটিং এর বিষয় হলো অচেনা মেয়েটি নিজেকে এই বাড়ির বৌ হিসাবে দাবী করছে।কিন্তু বাড়ির দুটি ছেলে রুদ্র এবং অভ্র বিবাহিত।তাহলে তার কথা কতোটুকু সত্যি?সে বিষয় নিয়ে আজকের মিটিং।মেয়েটি কে কিছু জিজ্ঞেস করতে সে শুধু বলছে সে এই বাড়ির বৌ।তার স্বামীর নাম জিজ্ঞেস করতে সে কিছু বলছেনা।নীরবে দাঁড়িয়ে আছে।তার এমন অবস্থা দেখে সবার স্তব্ধতা।তখন রুদ্রের মা মিসেস রিমঝিম এবং অধরার মা মিসেস মানহা ফিসফিস করে অচেনা মেয়েটির উদ্দেশ্যে অনেক কিছু বলে যাচ্ছে।কিন্তু মেয়েটির সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ হচ্ছে না।সে ভালো করে তাকিয়ে বাড়ির মানুষ গুলো এবং বাড়িটা কে দেখছে।

–যে মেয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে নিজেকে বাড়ির বৌ হিসাবে দাবী করছে।তার অবশ্য কোন কিছুতে যায় আসেনা।সে তার মতো আছে।তার এমন অবস্থা দেখে মিসেস রিমিঝিম উত্তেজিত হয়ে মিসেস মানহা কে বলে উঠে।

–“দেখো ভাবি কেমন মেয়ে?এখানে তাকে নিয়ে এতো কিছু হয়ে যাচ্ছে।তার কোন ভ্রুক্ষেপ হচ্ছে না।সে নিজেকে আবার আমাদের বাড়ির বৌ হিসাবে দাবী করছে।তার কি যোগ্যতা আছে আমাদের বাড়ির বৌ হবার?এমন মেয়ে যে ঘরে বৌ হয়ে যাবে।জানিনা তাদের কি অবস্থা করবে।ভাগ্যিস আমার রুদ্র কালকে অধরা কে পুনরায় বিয়ে করে তাকে স্ত্রী হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছে।”

–মেয়েটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে।

–“তাহলে কথা সত্যি রুদ্র বিয়ে করে অধরা কে স্ত্রী হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছে।তাহলে কি সব মিথ্যা ছিলো?মিথ্যা ছিল দু’বছর আগের ঘটনা।যে মেয়েটি তার জীবন এলোমেলো করে দিলো।শেষ পর্যন্ত তাকে বিয়ে করে স্ত্রী হিসাবে স্বীকার করে নিলো।আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা।”

–মিসেস মানহা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলে।

–“মেয়ের সাহস কি দেখো?আমাদের সামনে আমাদের বাড়ির ছেলে মেয়েকে নিয়ে কথা বলছে।ভাগ্যিস আমার অভ্র বিবাহিত এমন মেয়ে কখন কি করে ফেলে বিশ্বাস আছে।মনে হচ্ছে আমাদের বাড়ির গবেষণা করে বাড়িতে এসেছে।”

–মেয়েটি মুচকি হেসে বলে।

–“কি করবো বলেন ছোট আম্মু,বাড়ির বৌ যেহেতু। বাড়ির সম্পর্কে জানা থাকবে না।আপনার বাড়ির ছেলে সবকিছু আমাকে বলছে।”

–“কি ছোট আম্মু!কে তুমি মেয়ে হ্যাঁ?আমাকে ছোট আম্মু ডাকছো।”

–মেয়েটি লজ্জা মাখা মুখে বলে।

–“আপনার বাড়ির বৌ”

–বড়সড় ধাক্কা খেলো মিসেস মানহা।তখন সে অভ্রের দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে থেকে।শাড়ির আঁচলে মুখ গুজে কেঁদে ফেলে বলে।

–“এসব দেখার বাকী ছিলো অভ্র।এখন কি হবে আমার তিশার।তিশা তোমাকে কি সতীনের সংসার করতে হবে?আমার অভ্র কি করলো!”

–তখন তিশা রেগেমেগে আগুন হয়ে।অভ্রের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে।তাকে টেনে দূরে নিয়ে এসে।দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলে।

–“তাহলে আমার ভাবনা ঠিক ছিলো।মেয়েটি যখন বলেছিল সে আমাদের বাড়ির বৌ তখন আমার সন্দেহ হয়েছিল।কিন্তু শুধু প্রমাণের অপেক্ষায় ছিলাম।তোমার বোকা চেহারার পিছনে এমন রুপ লুকিয়ে আছে।আমার আগে জানা ছিলো না।ঘরে স্ত্রী রেখে পরকিয়া করো?এখন তাকে বিয়ে করে ঘরে তুলেছো।লুচ্চা কোথাকার?তোমার সাহস কি করে হয় এসব করার।তুমি কি ভেবেছো তুমি এসব করবে আমি সহ্য করবো কখনো না।তোমাকে আমি এক্ষুনি ডির্ভোস দিবো।তুমি থাকো তোমার দ্বিতীয় স্ত্রী কে নিয়ে।আমি চলে গেলাম।”

–তিশা চলে যায়।অভ্র ভেবাচেকা খেয়ে তিশার পিছু গিয়ে বলে।

–“তিশা শোন আমার কথা।তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।”

–“আমার কোন ভুল হচ্ছেনা অভ্র সবকিছু ক্লিয়ার চোখের সামনে।”

–অভ্র করুণ কন্ঠে বলে উঠে।

–“তিশা।”

–তিশা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

–তখন রুশা বলে উঠে।

–“ছিঃ অভ্র ভাইয়া তুমি এমন।কালকে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে।আমি ভেবেছিলাম তুমি মজা করছো।কিন্তু আজকে বিয়ে করে৷বৌ নিয়ে এসেছো।”

–অভ্র বোকার মতো তাকিয়ে আছে রুশার দিকে।সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে অভ্র।তখন দূরে দাঁড়িয়ে তাদের এমন অবস্থা দেখে অচেনা মেয়েটি মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে।

–তখন তিশা অভ্রের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।

–“সব সত্যি অভ্র?”

–“না মানে তিশা আমি তোমাকে সবকিছু খুলে বলি।তাহলে তুমি বুঝতে পারবে।”

–তিশা ডুকরে কেঁদে উঠে বলে।

–“আমাকে কিচ্ছু বোঝাতে হবেনা।তোমার মনে এমন শয়তানি ছিলো।তারজন্য তুমি আমাকে সামান্য ভালোবাসো না।”

–তখন অভ্র চিৎকার করে বলে।

–“হয়েছে তোমাদের ড্রামা বন্ধ করবে।এতোক্ষণ মেয়েটি কে নিয়ে পড়ে ছিলে।এখন আমার দিকে আাঙুল তুলছো।তোমাদের কাছে কোন প্রমাণ আছে মেয়েটি আমার স্ত্রী।কি মেয়ে কোন কথা বলছো না কেন?তুমি আমার স্ত্রী।”

–অচেনা মেয়েটি মুখ টিপে হেসে বলে।

–“না।”

–তখন তিশা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে।

–“ওহ্ বেঁচে গেলাম।কিন্তু রুশার কথা?”

–অভ্র রুশার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।

–“রুশা কখন কি বলতে হয় বুঝতে পারোনা।মজা করেছিলাম সে কথা এভাবে বলতে হলো।”

–রুশা লজ্জা পেয়ে বলে।

–“স্যরি অভ্র ভাইয়া।”

–তখন মিসেস মানহা উত্তেজিত হয়ে বলে।

–“সব সম্যসার মূল হচ্ছে ঐ মেয়েটা।তারজন্য এতো কিছু হচ্ছে।”

–মিসেস রিমিঝিম জায়ের সাথে তাল মিলিয়ে বলে।

–“ভাবি তুমি কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে গেছো।মেয়েতো না পুরো ড্রামা কুয়িং।দেখেছো আগে থেকে সবকিছু ট্রেনিং দেয়া।আমাদের ভাগ্য যে আজকে কি অপেক্ষা করছে।ভেবে আমার হৃদয় ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”

–অচেনা মেয়েটি নীরবতা কাটিয়ে বলে।

–“ওহ্ শাশুড়ী মা এতো চিন্তা করবেন না?আপনার বৌ মা আভা এসে গেছে এতো চিন্তা কিসের!”

–মিসেস রিমিঝিম শকড খেয়ে বলে।

–“কি?”

–মেয়েটি লজ্জা মাখা মুখে বলে।

–“হ্যাঁ।”

–রায়মান এবং আয়মান সাহেব সোফা থেকে দাঁড়িয়ে যায়।এতো সময় ধরে সবার ড্রামা দেখছিল।এখন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে স্তব্ধ হয়ে।তখন রায়মান সাহেব নীরবতা কাটিয়ে বলে।

–“তুমি কি বলছো বুঝতে পারছো?”

–“হ্যাঁ শ্বশুর আব্বু।”

–রায়মান সাহেব কি বলবে বুঝতে পারছেনা।তখন আয়মান সাহেব বলে উঠে।

–“দেখো মা তোমার কোন ভুল হচ্ছে।ভুল করে তুমি অন্য কারো বাড়িতে চলে এসেছো।”

–আভা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে।

–“না ছোট আব্বু আমি ঠিক বাড়িতে এসেছি।আমার স্বামী কে ডাকেন সে আসলে সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে।”

–আয়মান সাহেব রায়মান সাহেবের দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে থেকে ধপাস করে সোফায় বসে পড়ে।রায়মান সাহেবের মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে চিন্তার ছাপ।তখন মিসেস রিমিঝিম উত্তেজিত হয়ে বলে।

–“সব মিথ্যা?আমার রুদ্র এমন কি করে করতে পারে।তোমরা ঐ মেয়ের কথা বিশ্বাস করবে না।”

–তখন মিসেস মানহা বলে।

–“ভাবি দু’বছর অনেক সময়।তখন রুদ্র মেয়েটা কে বিয়ে করে ফেললে।আমার অধরার কি হবে?”

–“ভাবি আজেবাজে কথা বলোনা!কোথাকার কোন মেয়ে এসে এসব কিছু বলছে তোমারা বিশ্বাস কিভাবে করছো।ঐ মেয়ের মধ্যে কোন ঝামেলা আছে।”

–তখন অভ্র বলে।

–“বড় আম্মু রুদ্র এখানে আসলে সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে।আভা কে নিয়ে আগে আমাদের এতো কথা বলা ঠিক না।”

–তিশা অভ্র কে ধাক্কা মেরে ফিসফিস করে বলে।

–“তোমার কি সম্যসা আভা কে কথা শোনাচ্ছে তারজন্য।মেয়ে মানুষ দেখলে মাথা ঠিক থাকে না।”

–অভ্র ফিসফিস করে বলে।

–“তিশা তুমি বুঝতে পারছো না।এভাবে কথা বললে সম্যসার সমাধান হবেনা।রুদ্র এবং আভা কে মুখোমুখি করতে হবে।এখানে আমার বোনের জীবন জড়িয়ে আছে।”

–“আচ্ছা আমি রুদ্র ভাইয়া কে ডেকে নিয়ে আসছি।”

–“তোমার কেন যেতে হবে।”

–তিশা অভ্রের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে।

–“সিরিয়াসলি অভ্র।”

–অভ্র জেরে কেশে বলে।

–“রুশা রুদ্র কে ডেকে নিয়ে এসো।
তাহলে সব সম্যসার সমাধান হয়ে যাবে।”

–“আচ্ছা।”

–রুশা রুদ্র কে ডাকতে চলে যায়।
_______________________

–রুদ্র ঘুম থেকে জেগে গিয়ে।অধরার ঘুমন্ত এবং নিষ্পাপ মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে।উঠে সোজা ওয়াশ রুমে চলে যায়।ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেড় হতে।দড়জায় কারো কড়া নাড়ার শব্দ শুনে বলে।

–“কে?”

–“ভাইয়া আমি রুশা।তুমি দয়া করে তাড়াতাড়ি নিচে আসো অনেক বড় ঝামেলা হয়ে গেছে।”

–রুদ্র তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে উঁকি দিয়ে বলে।

–“কি হয়েছে রুশা সবকিছু ঠিক আছে।”

–“তুমি এসে দেখো।”

–রুশা চলে যায়।রুদ্র রুমে এসে তৈরি হয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
_________________________

–রুদ্র সিড়ি দিয়ে নামতে আভা ছুটে এসে রুদ্র কে আঁকড়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে বলে।

–“রুদ্র এসব কি শুনতে পাচ্ছি।তুমি অধরা কে পুনরায় বিয়ে করে নিজের স্ত্রী হিসাবে স্বীকার করেছো।তাহলে আমি কে তোমার জীবনে আমার অবস্থান কি?রুদ্র দয়া করে বলো এবং সকল কে বলো অধরা না আভা তোমার স্ত্রী তোমার ভালোবাসা।”

–আচমকা এখানে আভা কে দেখে এবং তার ব্যবহার দেখে রুদ্র স্তব্ধ হয়ে গেছে।সে কি বলবে কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছেনা।সে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আভা তাকে আঁকড়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।

#চলবে…

(রুদ্রের সাথে কাকে দেখতে চাচ্ছেন?অধরা নাকি আভা।এবং কোন জুটি কে সাথে দেখতে চাচ্ছেন?আরেকটা কথা আজকে কালকের পর্ব দিয়ে দিচ্ছি।কালকে দিতে পারবো কিনা জানিনা।হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here