তোমাতে_বিভোর২ পর্ব ৫

#তোমাতে_বিভোর
#Season_2
#পর্ব_৫
#Sapna_Farin

–দু’বছর আগে যে আভা তাকে ভুল বুঝে চলে গিয়েছিল।একটি ঘটনা কে কেন্দ্র করে তাদের ভালোবাসার বিচ্ছেদ হয়েছিল।সে আভা আজকে দু’বছর পড়ে এভাবে রুদ্রের জীবনে এন্ট্রি নিবে।সে কথা রুদ্রের কল্পনার বাহিরে ছিলো।রুদ্র স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।সে এমন মূহুর্তে কিভাবে রিয়েক্ট করবে এবং তার কিভাবে রিয়েক্ট করা উচিৎ সে বুঝতে পারছেনা।সে রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছে।নিজেকে আজকে তার অনুভূতি হীন মানুষ হচ্ছে।মনের ভিতরে তোড়লাড় ঝড় শুরু হয়েছে তার।সে নীরবে সবকিছু সহ্য করছে।আভা রুদ্রের স্তব্ধতা দেখে তাকে ছেড়ে দিয়ে।।নিজেকে সামলে নিয়ে রক্ত বর্ন চোখে তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।তার শার্টের কর্লার ধরে তাকে ঝাকিয়ে,দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

–“রুদ্র তাহলে সব সত্যি!কি হলো বলো?সব ক সত্যি?”

–রুদ্রের নীরবতা সে ফেলফেল চোখে আভার দিকে তাকিয়ে আছে।আভা রুদ্রের অবস্থা দেখে তাকে ছেড়ে দিয়ে বলে।

–“ওহ্ বড্ড বোকা আভা।সব সময় রুদ্র তোমাকে বিশ্বাস করে যার এমন অবস্থা।সেদিন যেমন তুমি আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলেছিলে।আজকে তুমি তেমন আমার বিশ্বাস ভেঙে দিলে।আসলে আমার খালামনি ঠিক বলেছে।তোমার মতো মানুষ কে আমার ভালোবাসা জীবনের সবথেকে বড় ভুল ছিলো।তোমাকে ভালোবেসে তোমার অপেক্ষা করা।আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল ছিলো।তুমিতো এখানে দিব্যি ভালো আছে।তোমার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী অধরার সাথে।আমাকে তোমার দরকার কি?”

–রুদ্র আচমকা আভার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে।চিৎকার করে বলে।

–“আভা?মুখ সামলে কথা বলো,তুমি কি বলছো তুমি বুঝতে পারছো।অন্য কে নিয়ে কথা বলার আগে। নিজেকে দেখো ভালো করে।তুমি আমার সাথে অনেক অন্যায় করেছো।তাহলে কেন দু’বছর পড়ে ফিরে এলে আমার জীবনে।”

–আভা আচমকা রুদ্রের এমন ব্যবহার দেখে অশ্রু ভেজা চোখে রুদ্র দিকে তাকিয়ে থেকে।দীর্ঘ নিশ্বাঃস ছেড়ে বলে।

–“অবশেষে নিজের আসল রুপে ফিরে এলে মি. রুদ্র?তুমি কি ভেবেছিলে আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে তুমি ভালো থাকতে পারবে কখনো না।তুমি যখন আমাকে ভালোবাসে আমাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে।দেশে ফিরে অধরা কে বিয়ে করে ফেললে।সবকিছু মেনে নিয়েছিলাম আমি বিশ্বাস করো সবকিছু শেষ করে তোমার জীবন থেকে চলে গিয়েছিলাম।কিন্তু তোমার বলা শেষের কথা গুলো প্রতিটি মুহূর্ত আমার কানে বাজে।তুমি বলেছিলে,আভা সবকিছু মিথ্যা সবকিছু ধোকা ছিলো।তুমি দয়া করে আমাদের ভালোবাসা কে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে।আমাকে রেখে এভাবে চলে যেওনা।সেদিন তোমার এবং অধরার জীবন থেকে আভা নামক থার্ড পারসন চলে গিয়েছিল।কিন্তু তোমার শেষ বলা কথা গুলো এবং তোমার অপেক্ষা গুলো আমাকে তোমার কাছে ফিরে আসতে বাধ্য করেছে।কিন্তু যখন ফিরে আসলাম তুমি সবকিছু মিথ্যা করে দিলে।কেন রুদ্র কেন?”

–রুদ্র বুকে পাথর রেখে,নিজেকে সামলে নিয়ে বলে।

–“জাস্ট সেটাপ আভা।সব দোষ আমার এখন।তুমি ভুল বুঝতে পেরে যখন তখন আমার জীবন থেকে চলে যাবে।যখন তখন এভাবে ফিরে আসবে তাহলে কিভাবে হবে?তোমার অপেক্ষায় রুদ্র নিজের পুরো জীবন শেষ করে দিবে।রুদ্র মুভ অন করে ফেলেছে। সে অধরা কে নিজের স্ত্রী হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছে।”

–আভা পিছিয়ে গিয়ে ধপাস করা সোফায় বসে পড়ে।সে পুরো স্তব্ধ হয়ে গেছে।তার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।রুদ্রের পুরো ফ্যামিলি তাদের কথা শুনে এবং আভার অবস্থা দেখে স্তব্ধ হয়ে গেছে।রুদ্র আভার অবস্থা দেখে ফিসফিস করে বলে।

–“আমাকে পারলে ক্ষমা করো আভা।রুদ্র তোমার ভালোবাসা পাবার যোগ্য না।আমার ভুলের জন্য তোমার এমন অবস্থা।আমার এমন জীবনের সাথে তোমার জীবন জড়িয়ে নষ্ট করতে পারবো না।”
______________________

–রোদের ঝিলিমিলি আলোতে অধরা জেগে যায়।সে ঘুম থেকে আড়মোড়া হয়ে উঠে বসতে।বেডের পাশে রুদ্রের ছবিটি দেখে কালকে রাতের ঘটনা মনে পড়ে যায় তার।সে রেগেমেগে আগুন হয়ে।রুদ্রের ছবির ফ্রেম ফ্লোরে ছুড়ে মেরে।মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে।নিজের শরীরের রুদ্রের দেয়া আঘাত গুলোর উপরে আলতো করে স্পর্শ করে।মুচকি হেসে ফিসফিস করে বলে।

–“রুদ্র ভাইয়া গেম ইজ ইন।আভা ইজ কামিং।তুমি আমার শরীরে আঘাত করেছো।অধরা তোমার মনে আঘাত করবে,হিসাব বরাবর।তুমি কি ভেবেছিলে তোমার সামান্য দয়া পেয়ে তোমার দেয়া আঘাত গুলো ভুলে যাবো?তুমি যে খেলা শুরু করেছো।অধরা সে খেলা শেষ করবে।”

–অধরা অট্টহাসি দিয়ে।শাড়ির আঁচল দিয়ে ঝাপটা মেরে ওয়াশ রুমে চলে যায়।সে হট শাওয়ার নিয়ে ওয়াশ রুমে থেকে বেড়িয়ে নিজেকে তৈরি করে।রুম থেকে বেড়িয়ে পড়ে।তার উদ্দেশ্যে রুদ্রের কাটা গায়ে নুনের ছিটা দেয়া।অধরা সিড়ি দিয়ে নামছে তার মুখে ফুটে উঠেছে এক চিলতি হাসির রেখা।
_________________________

–আহান অধরা কে নিয়ে বাজে স্বপ্ন দেখার পড়ে থেকে।পুরো রাত ঘুমাতে পারেনি।অধরার চিন্তায় ছটফট করেছে শুধু।

–ভোরের আলো ফুটতে সে তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে পড়ে অধরার দের বাড়ির উদ্দেশ্য।
________________________

–রুদ্র স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে অতীতের কথা গুলো ভেবে যাচ্ছিলো।রুদ্র পড়াশোনার জন্য বাহিরে যেতে সেখানে আভার সাথে তার রিলেশন শুরু।আভা সেখানে তার খালামনির কাছে থেকে পড়াশোনা করতো।

–সবকিছু ভালো চলছিলো রুদ্র এবং আভার।তাদের ভালোবাসা দেখে মানুষের হিংসে হতো।তারা নিজেদের কে এতো ভালোবাসে এতো বিশ্বাস করে। যেখানে কখনো ছেড়ে যাবার প্রশ্ন আসেনা।তারা সীধান্ত নিয়েছিল তারা বিয়ে করবে।তাদের ভালোবাসা কে স্বীকৃতি দিবে।কিন্তু সবকিছু মূহুর্তের মাঝে শেষ করে দিয়ে আভা চলে গিয়েছিল তার জীবন থেকে।রুদ্র অনেক চেষ্টা করে সেদিন আভা কে ফেরাতে।কিন্তু পারেনি সে।বোঝাতে পারেনি, কোন অবস্থায় অধরার সাথে তার বিয়ে হয়েছিল।তার ভালোবাসা মিথ্যা ছিলো না।তার প্রতিশ্রুতি গুলো মিথ্যা ছিলো না।সে কোন বিশ্বাসঘাতকা করেনি।হাজারো স্বপ্ন গুলো মূহুর্তের মাঝে শেষ হয়ে গিয়েছিল তাদের।

–রুদ্র দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।
_______________________

–বর্তমান।

–অধরা সিড়ি দিয়ে নেমে আচমকা পিছনে থেকে রুদ্র কে আঁকড়ে ধরে।অভিমানী কন্ঠে বলে।

–“রুদ্র ভাইয়া তুমি কখন উঠেছো।আমাকে ডাকবে তো।ঘুম থেকে জেগে গিয়ে তোমাকে পাশে
না দেখে অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।মনে পড়ে গিয়েছিল দু’বছর আগের কথা।তুমি কিন্তু ভুল করে অধরা কে ছেড়ে যাবার চিন্তা করবে না কেমন।তুমি জানানো অধরা তোমাকে চোখের আড়াল করতে ভয় পায়।”

–রুদ্র পিছনে মুখ ঘুরিয়ে অধরার এমন ব্যবহার দেখে রীতিমতো ঘামছে সে।কি বলবে বুঝতে পারছেনা।তখন তিশা জেরে কেশে বলে।

–“অধরা এখানে আমরা আছি।নিজেকে সামান্য কন্টোল করো।তোমার স্বামী হারিয়ে যাচ্ছে না।”

–অধরা রুদ্র কে ছেড়ে দিয়ে লজ্জা মাখা মুখে বলে।

–“স্যরি ভাবি বুঝতে পারেনি।এখানে হচ্ছে কি?তোমাদের কি আজকে অফিস ছুটি।এখানে ড্রয়িং রুমে সকলে বসে আছো কেন?”

–রুশা বলে উঠে।

–“অধরা আপু!স্যরি ভাবি এখানে ফ্রীতে সিনেমাটিক ড্রামা চলছে।তুমি দেরি করে ফেলেছো।আসলে হয়েছে কি শুনো?”

–তখন মিসেস রিমিঝিম উত্তেজিত হয়ে মেয়েকে থামিয়ে দিয়ে বলে।

–“কি হয়েছে রুশা তুমি বেশি কথা বলো।অধরা তুমি রুশার কথা কানে তুলোনা।সব সময় বেশি কথা বলে মেয়েটা।”

–রুশা মুখ গোমড়া করে বলে।

–“এখন সব দোষ আমার?তোমরা আসলে!”

–মিসেস রিমিঝিম রুশার দিকে আড়চোখে তাকাতে সে নীরব হয়ে যায়।তখন অভ্র তিশাকে উদ্দেশ্যে করে ফিসফিস করে বলে।

–“দেখো তিশা কারো পৌষ মাস এবং কারো সর্বনাশ।”

–“তুমি বেশি কথা বলো অভ্র?”

–অভ্র দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে।

–“হুম রুদ্রের মতো ছেলেদের সকল মেয়েরা পছন্দ করে।এখানে তার পৌষ মাস চলছে এবং আমার সর্বনাশ।”

–তিশা রাগী লুকে অভ্রের দিকে তাকাতে।অভ্র নীরব হয়ে যায়।তখন অধরা আভার উদ্দেশ্য বলে উঠে।

–“আজকে কি বাড়িতে মেমহান আসার কথা?তাকে তো চিনতে পারলাম না?”

–তখন মিসেস মানহা শাড়ির আঁচলে মুখ গুজে অশ্রু ভেজা চোখে বলে।

–“রুদ্র যে তোমার জন্য সতীন নিয়ে এসেছে অধরা!এখন তোমার কি হবে।”

–অধরা রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে।

–“মানে?”

–তখন আয়মান সাহেব উত্তেজিত হয়ে বলে।

–“কি করছো মানহা।তোমার এমন ড্রামা বন্ধ করো। মেয়ের মাথায় এসব কি ডুকাচ্ছো?”

–তখন রায়মান সাহেব উত্তেজিত হয়ে রুদ্র কে বলে।

–“তুমি এসব করার জন্য আমাদের জীবনে ফিরে এসেছো।মেয়েটি নিজেকে আমাদের বাড়ির বৌ বলে দাবি করছে।তুমি এখানে অধরার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছো অন্য দিকে আভা।এসব কি শুরু করেছো রুদ্র?আমার ভাবতে লজ্জা করছে তুমি আমার ছেলে।”

–রুদ্র অস্ফুটস্বরে বলে।

–“আব্বু।”

–রায়মান সাহেবের নীরবতা।তখন অধরা তার কাছে গিয়ে বলে।

–“বড় আব্বু তুমি ভুল বুঝতে পারছো রুদ্র ভাইয়া কে।সে এমন না।কে কি বললো তারজন্য কি আমাদের মাঝখানে ফাটল ধরবে কখনো না।”

–তখন আভা নীরবতা কাটিয়ে রায়মান সাহেব কে বলে।

–“স্যরি আংকেল আমার ভুল হয়েছে ভুল সময় ভুল জায়গায় চলে এসেছি।”

–আভা দ্রুত চলে যাচ্ছিলো তখন আচমকা কারো সাথে ধাক্কা খেতে।সে স্তব্ধ হয়ে যায়।চিরচেনা পুরানো কোন মুখ দেখে।

#চলবে…

(ডিয়ার রির্ডাস আপনাদের রেসপন্স এতো কম কেন?আমার লেখা ভালো হচ্ছেনা?নাকি পড়ার আগ্রহ কমে গেছে আপনাদের?হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here