তোমাত আসক্ত পর্ব ৮

#তোমাতে আসক্ত

নীলচুড়ি (রোকসানা)

পর্ব (৮)

মাহির ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটা ঘুসি দিয়ে ভেংগে ফেললো। আয়নার একটা টুকরো হাতে নিয়ে অথৈর দিকে এগিয়ে আসলো। অথৈর দুইবাহু চেপে ধরে রাগে গজগজ করতে করতে বললো,,

“”আপনি ওকে থামতে বলবেন নাকি এইটা দিয়ে ওর কল্লাটা কেটে ফেলবো?””
“”কেটে ফেলুন। আজকে আপনাদের লড়াই দেখবো বসে বসে। উফ! কতদিন হলো মারামারি দেখিনা। দেখা যাক কে জিতে।””
“”আপনার কি মনে হচ্ছে আমি ফান করছি?””
“”আমি কখন বললাম মজা করছি? আমি সিরিয়াস মাহির। আমার মুখ দেখে কি আপনার মনে হচ্ছে আমি ফান করছি??””

মাহিরের ইচ্ছে হলো আয়নাটা দিয়ে নিজেরই গলা কেটে নিতে। এই দুজন কি চাচ্ছে? আমাকে পাগল বানাতে?? অথৈ কি সত্যি ঐ পুচকো ছেলেকে ভালোবাসে? তাহলে আমার কি হবে? আমার ও ওদের দুজনকে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে???

“”কি হলো যাচ্ছেননা কেন?? আমার তো তোর সয়ছেনা।””

মাহির অথৈকে ছেড়ে ওঠে গেলো। ওয়াশরুমের দরজাটা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই আরমান ধরমড়িয়ে বের হয়ে আসলো। অথৈর কাছে এসে ওর হাতটা টেনে নিজের বুকের কাছে নিয়ে গেলো।

“”অথৈমনি তুমি কি ভয় পেয়েছো? একটুও ভয় পাবেনা কেমন? এই দেখো আমি তোমার কাছেই দাড়ীয়ে আছি। তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবোনা। তুমি ভয় পেয়োনা কেমন? আসো তোমার বুকে ফু দিয়ে দেয়!!””

আরমান নিজের মুখটা সামনে আগাতেই মাহির পেছন থেকে শার্টের কলার টেনে ধরলো।

“”চড়িয়ে সব ভয় বের করে দিবো। পুচকি ছেলে আসছে পুচকি মেয়েকে ভয় তাড়াতে। মুখের ভিতরে যে বত্রিশটা দাত আছে না? ওগুলো আর থাকবেনা। তোমার সাহস কি করে হয় আমার বউয়ের বুকে ফু দিতে আসো???””

“”আরে কি করছেন? আরমানের গলায় লাগছে তো। ছাড়ুন বলছি।””

আরমানের কলারটা ছেড়ে অথৈর দিকে তাকালো। চোখ রাঙিয়ে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়লো।

“”অথৈমনি উনি আমার কলার ধরেছে বলে তোমার খুব কষ্ট লেগেছে তাইনা গো? তুমি একটুও কষ্ট পেয়োনা দেখ আমি একটুও ব্যথা পায়নি।””
“”কে বললো আমার কষ্ট লাগছে? তোমার কষ্ট লাগছিলো সেটা আমি দেখতে পেরেছি তাই বললাম ছাড়তে।””
“”আমি জানি অথৈমনি তুমি আমকে অনেক ভালোবাসো কিন্তু আমার সামনে বলতে লজ্জা পাও। এই যে দেখ এখনো লজ্জায় তেমার মুখ লাল টকটক হয়ে গেছে। রসালো টমেটোর মতো লাগছে। ইচ্ছে করছে এখনি একটা কামড় দিয়ে খে…..”””

আরমান আর কিছু বলতে পারলোনা। মাহির বিছানা থেকে উঠে এসে আরমানকে পাজাকোলে করে উঠিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।

“”আরে আরে আপনার আবার কি হলো? ওকে এভাবে কোলে নিলেন কেন? আপনার কি কোলে নেওয়ার রোগ হয়ে গেলো?””

মাহির অথৈর কথা কানে নিলোনা। আরমানকে সিড়ি বেয়ে নিচে নিয়ে আসলো। তারপর একটা রুমের বিছানায় ফেলে দিয়ে গেলো।

“”এই রুম থেকে যদি একপাও নড়চড় হয় তোমার পা আমি কেটে দিবো। বুঝতে পেরেছো??””
“”না,আমি অথৈর কাছে থাকবো ভাইয়া। এখানে থাকলে আমি দম বন্ধ করে মরে যাবো,আপনি যদি অথৈকে মেরে ফেলেন তাহলে আমার কি হবে ভাইয়া? আমি তো অথৈকে ছাড়া এক মুহুর্তও থাকতে পারবোনা।””

আরমান মাহিরের পা চেপে ধরলো। পেছন থেকে অথৈ বেশ রাগ নিয়েই বললো,

“”আরমান কি করছো? উনার পা ধরছো কেন? কেমন বিচ্ছিরি দেখাচ্ছে।””
“”অথৈ তুমি এখানে থাকো,উনার সাথে যেয়োনা উনি তোমাকে গলা টিপে মেরে ফেলবে।””

মাহিরের কিছুতেই ঘুম আসছেনা। কি থেকে কি হয়ে গেলো। অথৈ যদি ওকেই ভালোবাসে তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করলো? আর স্যারও তো আমাকে এ ব্যাপারে কিছু বললোনা। উনিও কি এ ব্যাপারে জানতোনা? যে এতোটা ভালোবাসে পাগলের মতো হয়ে গেছে এটার কথা উনি জানবেননা? এটা কি করে হয়? আমি কি স্যারকে কল দিয়ে এ ব্যাপারে জানবো?

“”উফ! এত নড়াচড়া করছেন কেন? এতো নড়াচড়া করলে কি ঘুমানো যায়,বিরক্তকর।””

অথৈর বিরক্তভরা কন্ঠে কিছুটা আঘাত পেলো মাহির। কোথায় ওকে জড়িয়ে ধরে পরম আনন্দে ঘুমাবো তা না আমাকে কোলবালিশ নিয়ে ঘুৃমাতে হচ্ছে। মাহির আর নড়াচড়া করলোনা সে আর যাইহোক অথৈর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে চাইনা।

এদিকে এক কাত হয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে অসহ্য লাগছে মাহিরের।একটু ওপাশ হলে কি অথৈর ঘুম ভেংগে যাবে?? ভাবতে না ভাবতেই দরজায় হালকা টুকার শব্দ পেলো। কিছুটা মনোযোগ দিতেই শুনতে পেলো আরমানের ফিসফিস কন্ঠ,,

“”অথৈমনি তুমি কি ঘুমাইছো? ঘুম না পেলে বলো আমি তোমাকে গান শুনিয়ে ঘুৃম পাড়িয়ে দিবো।””

মাহির প্রচন্ড রাগে চিৎকার করে উঠলো। মাহিরের চিৎকারে পুরো বাড়ি কেপে উঠলো। অথৈ ঘুমের ঘরে মাহিরকে ঝড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,

“”আম্মু বাড়িতে ডাকাত পড়েছে। আমাকে ছেড়ে কোথাও যেওয়োনা। ওরা তোমাকে ছাড়বেনা।””

অথৈ বিড়বিড় করতে করতে মাহিরকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আর ভয়ে পুরো শরীর কাপতে লাগলো

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here