তোমার নিরব অভিমানীনি পর্ব -০৪

#তোমার_নিরব_অভিমানীনি(০৪)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

রাদ মিটিং শেষ করে নিজের কক্ষে এসে বসলো। সামনে থাকা টেবিলে নজর পরতেই দেখলো টিফিন বক্স।নিচে একটা ছোট্ট কাগজের টুকরো তে লেখা “খাবার টা খেয়ে বাধিত করবেন”!
রাদ তখনকার এমপ্লয়ে কে ঢেকে পাঠায়। লোকটা আসলে জিজ্ঞাসা করে,
—” আমার কক্ষে কে এসেছিল?
লোকটা ঠোঁটে হালকা হাসি ঝুলিয়ে বললেন,
—” স্যার ম্যাম এসেছিলেন।
—” কোন ম্যাম?
এমন প্রশ্ন শুনে লোকটা ভরকালো, দমে যাওয়া কন্ঠে বললো,
—” স্যার আপনার স্ত্রী..
—” কি পরিহিত ছিল?
এবার লোকটা মনে মনে ভাবলো মিটিং করে হয়তো তার স্যারের মাথা ঠিক নেই!তাই এমন ধারা প্রশ্ন করছে।তাই সহজ ভাবে বললো,
—” কালো বোরকা পড়ে এসেছেন।
রাদ এবার কনফার্ম হলো যে নজরাত এসেছিল অফিসে।তাই আর কিছু না বলে বললো,
—” আচ্ছা আপনি এবার আসতে পারেন।
লোকটা চলে যেতেই রাদ খাবার খেতে প্রস্তুত হয়।তার ভীষণ পরিমাণে খিদে পেয়েছে তাই কে আনলো না আনলো এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন মনে করলো না।
_____
লেকের পাড়ে বেঞ্চে বসে আছে নজরাত। শূন্য দৃষ্টি পানিতে নিবদ্ধ রাখা। তখন রাদ এর অফিসে ওসব কসমেটিকস দেখে আর থাকতে ইচ্ছে হয়নি তাই তৎক্ষণাৎ চলে আসে এখানে। নজরাত বুঝতে পারে ওসব কসমেটিকস রুপকথা ছাড়া আর কারো হবে না।

রুপকথা অনলাইনে নিত্যদিন নিত্য নতুন কসমেটিকস, শাড়ি, থ্রিপিস অর্ডার করে রাদ শাহমাত এর অফিসের ঠিকানা দিয়ে দেয়। তখন রাদ বিল পরিশোধ করে ওসব জিনিসপত্র সংগ্রহ করে।এই তো গতকাল ও কতো গুলো কসমেটিকস নিয়ে আসে ভেলিভারি ম্যান।যে গুলো নজরাত আজকে দেখতে পেল।

নজরাত বসে থাকা অবস্থায় হঠাৎ কেউ তার চোখ দুটো চেপে ধরে। নজরাত সেকেন্ড কয়েক সময় নিয়ে বললো,
—” শোভা?
শোভা নজরাত এর বেস্ট ফ্রেন্ড। নজরাত নাম বলতেই হাত ছেড়ে পাশে বসতে বসতে বললো,
—” কি করে বললি?
—” আজকে আমাদের মিট করার কথা ছিল। সে হিসেবে না জানার কোন কারণ নেই।
শোভা বোকা হেসে বললো,
—” আচ্ছা এবার বল আমাদের “গল্পপুড়ি” তার নতুন জীবনে কেমন আছে?
নিমিষেই মন খারাপ হয়ে গেল নজরাত এর। সামনে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
—” হাজার হাজার মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি বা পাই। কিন্তু যার ভালোবাসা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল সেটা থেকেই বঞ্চিত আমি!

শোভা বিষ্মিত চোখে তাকায়, নজরাত এর কথা গুলো তার কাছে সত্যি বলে মনে হচ্ছে না কিছুতেই।এ কিভাবে সম্ভব? এই মেয়েটা যে হাজার হাজার মানুষের চোখের মণি!তার সাথে এ কিছুতেই যায় না! নজরাত কে ঝাঁকিয়ে বললো,
—” তুই কি উপন্যাসের কোন কাহিনী শুনাচ্ছিস আমাকে?
নজরাত এর চোখে পানি গড়িয়ে পড়ছে।এর মাঝে নজরাত বললো,
—” এরপর‌ও বলবি আমি কোন উপন্যাসের কাহিনী বলছি তোকে?

শোভা চমকালো, ভরকালো সাথে সাথে নিজের সাথে চেপে ধরলো নজরাত কে। নজরাত এমন ভরসার স্থান পেয়ে হুহু করে কেদে উঠল।
______

আজকাল নজরাত এর সময় কাটে চার দেওয়ালের লাইব্রেরী কক্ষে।যেটা এক সময় রাদ এর প্রাণ প্রিয় ছিল। কিন্তু এখন ঘরটা পরিত্যক্ত বলা চলে।রাদ সারাদিন অফিস সামলে আর সুযোগ হয়ে উঠেনা ঘরটাতে আসার। লাইব্রেরী টাতে যেন উপন্যাসের মেলা। সাথে গুটি কয়েক সাইন্স ফিকশন বই আছে এবং হাদীসের ব‌ই আছে।

প্রথম দিন ঘরটাতে ঢুকে অনেক ধুলা বালি জমে থাকা দেখতে পায় নজরাত। তারপর মণি কে নিয়ে রুমটা পরিষ্কার করে তুলে। এরপর থেকে এই কক্ষটি নজরাত এর দখলে। মণি ছাড়া কেউ ভুল করেও এই দিকে পা বাড়ায় না।

নজরাত এখানে থেকে থেকে ব‌ই পড়ে নয়তো কাগজ ঠুকে কিছু লিখে।
সালাতের সময় হলে এখানেই সালাত আদায় করে নেয়।মাঝে মাঝে খাবার খাওয়ার কথাও ভুলে বসে। তখন মণি নিজ দায়িত্বে খাবার নিয়ে আসে এ ঘরে। মাঝে মাঝে নজরাত খাবে না বলে বায়না ধরলে মণি বুঝতে পারে তার হাতে খেতে চায় নজরাত! তখন খুব যত্নের সাথে মেয়েটিকে খাইয়ে দেয় মণি। নজরাত ও খুব আনন্দে ভরে খায়।যেমটি তার বাবা খাইয়ে দিলে খেত। মা মরা ছেলে মেয়ে দুটোকে খুব আদরে মানুষ করেছেন সাজ্জাদ হোসেন। কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেননি।

মাস খানেক পর,
এক শীতের সকালে, ঠিক সকাল নয়। এগারোটা ছুঁই ছুঁই শীতের প্রকোপে চারিদিকে কুয়াশায় ঢাকা পড়ে আছে।তাই সময় ঠিক বুঝা যাচ্ছে না।এমন সময় রাহা’র চেঁচামেচি শুনে নজরাত তো ছুটে এসেছে সাথে সাজেদা চৌধুরী ও চলে এসেছেন নিচ তলার ড্রয়িংয়ে। নজরাত সামনে থাকা ব্যক্তিকে দেখে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে! সাজেদা চৌধুরী বললেন,
—” কে তুমি বাবা?
উনার কথা শেষ হতে না হতেই নজরাত দৌড়ে গিয়ে জাপটে ধরে কেঁদে উঠলো।বাদ বাকি সবাই প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে।
নজরাত ভাইয়া বলে কাঁদতে শুনে সবাই বুঝলো ছেলেটা নজরাত এর ভাই।রাহা কয়েক পা পিছিয়ে গেল। খুঁটি হিসেবে চেয়ারে ধরে রাখলো!

রূপক নজরাত এর মাথায় হাত রেখে বললো,
—” এই পাগলী এভাবে কাঁদছিস কেন? আমিও কিন্তু এবার কেঁদে দিব! তখন কি করবি?
এই বলে খানিকটা হাসলো রূপক। নজরাত ভাই কে ছেড়ে কুশল বিনিময় করে শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। সাজেদা চৌধুরী মণি কে আপ্যায়নের দায়িত্ব দিয়ে রূপক কে নিয়ে বসে কথা বলছেন। সাথে নজরাত ও আছে।
এর কিছু সময় পর রাহা কে আর দেখা গেল না আসেপাশে কোথাও।
কিছুক্ষণ আগের কথা, নিজের বোন কে মনে করে রূপক রাহা’র নেত্রজোড়া চেপে ধরে! পুরুষালী দেহের স্পর্শে কেঁপে উঠে রাহা।এরপরেই ধম ফাটানো চিৎকার করে উঠে!যার ফলে ভয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে যায় রূপক। কেননা এটা তার বোন হতেই পারে না, এতোক্ষণে উপলব্ধি করে সে।
অতঃপর দু’জনের চোখাচোখি হতে নিরব হয়ে থাকে।এর মধ্যে সবাই উপস্থিত হয়ে যায় এখানে।
______

মণি রূপক এর জন্য অনেক আইটেম এর রান্না বান্না করছেন। সাথে টুকটাক সাহায্য করে চলেছে নজরাত।তার ভাই কি কি খেতে পছন্দ করে সেসব বলে সাহায্য করছে সে।

রাহা শূন্য দৃষ্টিতে গ্রিল গলিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তখন পিছন থেকে শুনতে পায়,
—” তাহলে আপনি ই বোনুর সেই কুটনি ননদিনী?
কথাটা বলে খানিকটা হাসলো রূপক।রাহা কিছুক্ষণ দৃষ্টি নত রেখে চুপ করে রইলো। তারপর বললো,
—” ভালোবাসা গুলো মিলিয়ে দিতে না হয় কুটনি হলাম!তাতেও শান্তি!
—” মিলিয়ে দিতে মানে? ঠিক বুঝলাম না!
তখন নজরাত পিছন থেকে বললো,
—” ভাইয়া তুমি এখানে? আমি খুঁজে চলেছি তোমায়।
নজরাত কে দেখতে পেয়ে রাহা আর কথা বাড়ালো না, চলে গেল নিজের রুমে।রাহা চলে যেতে দুই ভাই বোন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে। নজরাত বলে,
—” ভাইয়া এবার কিন্তু আমার একটা মিষ্টি ভাবীমণি চাই ই চাই। তোমার কোন আপত্তি শুনবো না আমি।
—” বোনু তুই সুখী তো?
হঠাৎ রূপক এর এমন ধারা কথায় থমকে গেল নজরাত। না বলতে পারবে সত্যি আর না মিথ্যা।তাই এক কথায় বললো,
—” আলহামদুলিল্লাহ।
তবুও রূপক এর সন্দিহান দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারলো না নজরাত।
_______

রূপক চলে গেছে দুপুরের পর।রাদ অফিসে থাকায় দেখা হয়নি তার সাথে। তবে রূপক আগামীকাল শুক্রবার দিন স্বপরিবারে সবাই কে দাওয়াত দিয়ে যায়। নজরাত জানে না রাদ আদৌও যাবে কিনা? যদি না যায় তাহলে রূপকের কাছে সে ধরা পড়ে যাবে নিশ্চিত। তখন কি হবে? এই ভেবেই তটস্থ হয়ে আছে নজরাত।
রাতে রাদ বাসায় ফিরে মিষ্টি সাথে নিয়ে। ভীষণ খুশি খুশি লাগছে তাকে।রাহা জিজ্ঞাসা করতে বললো,
—” সামনের ব‌ই মেলায় রুপকথার প্রথম ব‌ই আসতে চলেছে!
এ কথা শুনে রাহা ও ভীষণ খুশি হয়।
নজরাত সবটা শুনে জিজ্ঞাসা করে,
—” কিসের ব‌ই!নাম কি?
রাদ শাহমাত গর্বের সাথে বলে,
—” “ছায়া সঙ্গিনী” উপন্যাস!….

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here