তোমার নিরব অভিমানীনি পর্ব -২৮

#তোমার_নিরব_অভিমানীনি(২৮)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
#সারপ্রাইজ_পর্ব
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

তপ্ত দুপুরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটায় গরমে অতিষ্ঠ শহরের মানুষজন। একেই তো গরম তার উপর পানি সমস্যা। বিদ্যুৎ না থাকায় পানির সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে পানি না থাকায় শাওয়ার নিতে পারছে না কেহ। যতটুকু পানি সংগ্রহে ছিল ততটুকু দিয়ে রান্না বান্নায় শেষ হয়ে গেছে। সাজেদা চৌধুরী এ কথা রাদ কে জানালে, রাদ দাড়োয়ান চাচা কে কল করে কয়েক লিটার পানি আনায়। তারপর এগুলো দিয়েই খাওয়া এবং অযু’র কাজ চলছে।

নজরাত ডায়েরী ঠুকে কিছু লিখে আবার একটু হাঁটাহাঁটি করে কাহিল হয়ে আবার বসে একটু লিখে। যখন নিচে নেমে আসে তখন মণি হায়হুতাশ করে বলল,
–” অন্য দিন কত পানি ফালানি ছড়ানি যায় আর আজ কলে এক ফুটা পানি আহেনা।

মণির কথা শুনে নজরাত মলিন মুখে বলল,
–” মণি আপা কথায় আছে না, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দেইনি। সেরকম পানি যে আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার কতো বড় নেয়ামত তা আজকে শত শত মানুষ উপলব্ধি করতে পারবে। অথচ এই নেয়ামত কে আমরা কত্ত অপচয় করে থাকি। জানেন অপচয়কারীকে আল্লাহ তা’আলা পছন্দ করেন না। এবং অপচয়কারীকে এর জন্য অনেক প্রস্থাতে হবে।

মণি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বলল,
–” কি বলো ভাবী! প্রস্থাতে হবে কেন?
নজরাত কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম ওরনা দিয়ে মুছে বলল,
–” বর্তমান পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার এবং সংরক্ষণ থেকে উদাসীন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইসলাম অপব্যয় ও অপচয় নিষিদ্ধ করেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলে ঘোষণা করেছেন। অপচয় ও অপব্যয়ের কারণে মানুষের জীবন থেকে বরকতও হ্রাস পায়। এর ফলে মানুষের ধন-সম্পদ ক্রমে হ্রাস পায়। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আহার কর ও পান কর, কিন্তু অপব্যয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না’ (সূরা : আরাফ-৩১)।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমাদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রেখো, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই, আর শয়তান নিজ প্রতিপালকের ঘোর অকৃতজ্ঞ’ (সূরা : বনি ইসরাইল-২৬, ২৭)।

প্রিয়তম রসুল (সা.) বিভিন্ন হাদিসে পানি পান করার আদব শিখিয়েছেন। এর প্রতিটিতে নিহিত রয়েছে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিধান। একটি হাদিসে রসুল (সা.) পানির বড় পাত্র থেকে সরাসরি মুখ লাগিয়ে গড় গড় করে পান করা নিষেধ করেছেন, বরং ছোট পেয়ালায় ঢেলে তারপর দেখে পান করার জন্য আমাদের শিখিয়েছেন।

পানি ব্যবহারে আরও নির্দেশনা দিয়েছেন। এক হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা স্থির পানিতে পেশাব করো না, নাপাকি ফেলো না, কেননা তা তোমরা ব্যবহার করবে’ (আবু দাউদ)।

সবটা শুনে মণি বলল,
–” আমরা জেনে না বুঝে কতোই না পাপ করছি গো ভাবী? আমাদের এই পাপের শা’স্তি স্বরূপ কি হবে আল্লাহ তা’আলা ভালো জানেন।
–” ভুল করা যেমন মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি, তেমনি পাপের উর্ধ্বে কোন মানুষ থাকতে পারেনা। পাপ বা গুনাহ হয়ে থাকে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অথবা জেনে-না জেনে। তবে সেই পাপ থেকে মুক্তির উপায় আছে।

গুনাহ করা যেমন বান্দার স্বভাব তেমনি গুনাহ মাফ করাও আল্লাহর স্বভাব এবং বিশেষ গুণ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে তার গুনাহগুলো মিটিয়ে দেয়া হবে এবং তার প্রতিদানকে বহু গুণে বৃদ্ধি করা হবে। (সূরা তালাক : ৫)

মানুষ সাধারণত চার ধরণের গুনাহ করে থাকে। এর মধ্যে দুই ধরণের পাপ ক্ষমা করা হয়। আর বাকি দুই ধরণের পাপ ক্ষমা করা হয় না।

১. অনিচ্ছাকৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। এজন্য আজাব দেয়া এবং নিয়ামত বন্ধ করা হয় না। (সূরা আহযাব : ৫)

২. কবিরা গুনাহ করার পর অনুতপ্ত হয়ে তওবা করলে আল্লাহ তা ক্ষমা করেন এবং তার পদমর্যাদা বৃদ্ধি করেন। (সূরা আল-ইমরান : ১৩৫)

সুতরাং ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক পাপ করার পর অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে খালেস তওবা করতে হবে। দেরিতে হলেও তাওবা করতে হবে। তবে তা অবশ্যই মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হওয়ার আগেই করতে হবে। আল্লাহপাক নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন।

তওবা করার সময় তিনটি বিষয় মনে রাখতে হবে। তা হলো-
• কৃতকর্মের অনুশোচনা করা।
•ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট গুনাহ না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া। এবং
•আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে পাপ থেকে বেঁচে থাকার এবং খালিসভাবে তাওবা করার তাওফিক দান করুন। আমিন
–” আমিন।

দু’জনের কথার মাঝে বিদ্যুৎ আসে। তারপর মণি আর নজরাত দু’জনেই শাওয়ার নিতে যায়।
_________

রাতের বেলা নজরাত এর ভীষণ ঠান্ডা লেগে যায়, অবেলায় শাওয়ার নেয়ার কারণে। রাদ তখন গম্ভীর মুখে বলে,
–” আজকে শাওয়ার না নিলে কি এমন ক্ষ’তি হতো?
নজরাত হাঁচি চলমান রেখেই বলল,
–” শাওয়ার না নিলে ঘাম ঝরানো শরীরে ইবাদত করতে ইচ্ছে করে না গো। মনে সংশয় জাগে। মনে হয় আমার ইবাদত বুঝি আল্লাহ তা’আলা কবুল করবেন না।
–” এগুলো শয়তানের ওয়াশ‌ওয়া বুঝছো? এই যে পানির সমস্যা ছিল এটা কিন্তু আল্লাহ তা’আলা ঐ আরশের আজিম থেকে দেখছেন। সমস্যার কারণেই তুমি শাওয়ার নিতে পারনি সেটা তিনি জানেন। তাই কিছু বলবেন না। কেননা তিনি মহান। বুঝলে?

নজরাত মুচকি হাসে রাদ এর কথায়। মুখে কিছু না বলে রাদ এর বক্ষপটে নিশ্চিন্তে মাথা রাখে। রাদ তাকে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে।
_______

মাস খানেক পর,
নজরাত প‌ই প‌ই করে বলে রাদ কে আজ অফিসে যেতে দেয়নি। রাদ প্রথমে রাজী হতে চায়নি পড়ে নজরাত এর কোমল আবদারের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়। অফিসে কল করে জানিয়ে দেয় যে সে আজ জরুরি কাজে যেতে পারবে না।

তারপর সকাল দশটায় তৈরি হয়ে রাদ কে নিয়ে বের হয় নজরাত। রাদ বার বার জিজ্ঞাসা করেও কোথায় যাচ্ছে তারা জানতে পারেনি। নজরাত শুধু মুচকি হেসে বলেছে, গেলেই দেখতে পাবে ইনশা আল্লাহ।

প্রাইভেট কারের পেছনে তারা দুজনে বসেছে আর সামনে ড্রাইভার সাহেব ড্রাইভিং করছেন।
নজরাত মনে মনে একটু চিন্তিত। আল্লাহ জানেন রাদ এর প্রতিক্রিয়া কি হবে? এই ভেবে একটু দুশ্চিন্তা হচ্ছে।
গাড়ি যখন ফ্লাই ওভারে উঠে তখন থেকে জ্যাম শুরু হয়। দশ মিনিট বিশ মিনিট করে করে সময় এগিয়ে যাচ্ছে অথচ জ্যাম ছাড়ার নাম নেই। যেন পিঁপড়ার গতিতে এগিয়ে চলছে সামনের গাড়ি গুলো। নজরাত জানালা বন্ধ করে আবদ্ধ হয়ে থাকতে পারে না। আর তাই গলা গুলিয়ে বুমি হবার উপক্রম হতে রাদ কে বলল জানালার গ্লাস খুলে দেওয়ার জন্য। রাদ ড্রাইভার কে বলে গ্লাস খুলে দিতে নজরাত জানালা দিয়ে মাথা খানিকটা বাহিরে বের করে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস ফেলে। আর একটু হলেই বুমি করে ভাসিয়ে দিত। এখন প্রকৃতির বাতাসে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে আসে।

এর প্রায় ঘন্টা খানেক পর জ্যাম ছাড়তে তারা পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। রাদ তখনো বুঝতে পারছিল না কি হতে চলেছে।
গাড়ি থেকে নেমে নজরাত একটা অফিসের সামনে আসে তাকে নিয়ে। অফিসের নেইম প্লেটে লেখা “জ্ঞানের আলো প্রকাশনী” (ছদ্মনাম)।

নজরাত ভিতরে ঢুকতে একজন মহিলা সালাম দিল। নজরাত সালামের জবাব দিয়ে বলল,
–” মিষ্টার শামীম ওসমান ভাইয়া আছেন?
–” জ্বি আপু, আছেন। আপনি মিসেস রুপ..
মেয়েটির কথা শেষ হ‌ওয়ার পূর্বেই নজরাত বলল,
–” জ্বি আমি।
–” আচ্ছা আপু। ভাইয়া আপনার জন্য‌ই অপেক্ষা করছেন। আপনারা আমার সাথে আসুন?

তারপর মেয়েটির সাথে নজরাত এবং রাদ গেল। প্রকাশক মিষ্টার শামীম ওসমান এর সাথে নজরাত কুশল বিনিময় করে রাদ কে পরিচয় করিয়ে দিল। তারপর তাদের বসতে বললে দু’জনে বসে। বসার পর নজরাত উসখুস করে বলল,
–” ভাইয়া কাজটা ঠিক ঠাক মতো হয়েছো তো?
–” অবশ্যই কেন নয়?
–” আলহামদুলিল্লাহ।

তারপর, মিষ্টার শামীম ওসমান একটা ছেলেকে দিয়ে কয়েকটি বই আনিয়ে নজরাত এর হাতে দিলেন। নজরাত একটা ব‌ই হাতে রেখে অন্য গুলো শামীম ওসমান সাহেবের ডেস্কে রেখে দিয়ে হাতের ব‌ইটা রাদ এর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “শুধু তোমারি জন্য”!

রাদ ভ্রু কুঁচকে বলল,
–” আমার জন্য! কি ব‌ই এটা?
–” হাতে নিয়েই দেখুন?

অতঃপর, রাদ ব‌ইটার দিকে একপলক তাকিয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে!….

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here