তোমার নিরব অভিমানীনি পর্ব -৩০ শেষ

#তোমার_নিরব_অভিমানীনি(৩০)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
#অন্তিম_পর্ব
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

লোকে বলে দুপুরের খাবার ই নাকি আসল। দুপুর বেলা পেট ভরে খেতে পারলে অন্য সময় কম খেলেও চলে। খিদে টা বেশি দুপুর বেলাতেই হয়। রাদ এর হাতে খাবার বক্স দেখে খিদে টা যেন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে নজরাত এর। তবু শান্ত হয়ে বসে থাকে সে।
রাদ খাবার বক্স টা পাশে ছোট কেবিনেটের উপর রাখে। তারপর বিছানায় বসে হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বলল,
–” দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছে? খাবারটা খেয়ে নাও।

এতটুকু বলে রাদ বিছানায় শুয়ে যায়। নজরাত পিছনে ফিরে চেয়ে দেখল পিছন ঘুরে শুয়ে আছে রাদ। তাই ক্ষীণ স্বরে বলল,
–” আপনিও আমার সাথে খাবেন, আমি একা একা খাবো না।
রাদ এর থেকে কোন সারা পেল না নজরাত। কিছুক্ষণ খাবার গুলোর দিকে করুণ চোখে চেয়ে থেকে সেও শুয়ে যায়। কোলবালিশ দিয়ে মুখশ্রী আড়াল করে চোখের পানি ফেলে।

নজরাত না খেয়ে শুয়ে যাওয়াতে রাদ তার দিকে ফিরে শুয়ে গম্ভীর মুখে বলল,
–” না খেয়ে শুয়েছো কেন?
নজরাত কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,
–” খাবো না আমি।
–” কেন খাবে না? এখন কিন্তু তুমি একা নও। তোমাকে তোমার অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করে খেতে হবে।

ধরা গলায় নজরাত বলল,
–” ওর বাবা না খেলে সেও খাবে না।

নজরাত এর এতটুকু কথায় খানিকটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় রাদ। স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে নজরাত এর দিকে। নজরাত রাদ এর কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে বালিশের নিচ থেকে চোখ তুলে তাকায়। রাদ তখনো তার দিকেই চেয়ে আছে দেখে আবার চোখ নামিয়ে নেয়।
রাদ সবকিছু লক্ষ্য করল কিন্তু কিছু বলল না। বিছানা থেকে নেমে হাত ধুয়ে খাবার গুলো প্লেটে সার্ভ করে বিছানায় ফিরে আসে। নজরাত কে ডেকে বলে,
–” জলদি উঠে খাবার খেয়ে নাও!
নজরাত অভিমানী কন্ঠে বলে, খাবো না আমি। এ কথা শুনে রাদের মেজাজ চড়া হলো। নজরাত এর হাত ধরে আচমকা টেনে তুলল। নজরাত তখনো বলে, খাবো না আমি।রাদ চামচে বিরিয়ানী নিয়ে মুখের সামনে ধরে বলল,
–” এমনিতেই মুখখানা এইটুকু নি! না খেয়ে থাকলে আরো শুকিয়ে পেঁচার মত দেখতে লাগবে! হাঁ করো বলছি?

নজরাত স্নিগ্ধ ও গভীর এক দৃষ্টিতে তাকালে রাদ এর ভিতরের সমস্ত রা’গ, ক্ষো’ভ পানি হয়ে যায়। বিনা ভূমিকায় নজরাত কে বলল,
–” আচ্ছা আমিও খাবো। এবার হাঁ করো?
নজরাত ফিচেল হেসে খেয়ে নেয়, তারপর রাদ ও খায়।
খাওয়া শেষে নজরাত রাদ এর বক্ষপটে নিশ্চিন্তে মাথা রেখে বলে,
–“রাগ কমেছে?
রাদ হেসে বলে,
–” হুম।
–” আলহামদুলিল্লাহ।
_________________

হাতের ব‌ইটার দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে,
–” তার মানে আমি, মামুনি আর বাবার দ্বিতীয় সন্তান! সে অনুযায়ী আমার ভাই বা বোন থাকার কথা! তাহলে কোথায় সে? ব‌ইটাতে তো এমন কিছুই লেখা নেই। তাহলে কি এটা মামুনির অসমাপ্ত আত্মজীবনী?

কলেজের ঘন্টার শব্দে হুঁশ ফিরে নাদিয়ার। লাইব্রেরী কক্ষ থেকে বেরিয়ে ক্লাস রুমে ঢুকে। আজকে পাঁচ দিন হলো মায়ের লেখা উপন্যাস “তোমার নিরব অভিমানিনী” ব‌ইটা পড়া শুরু করেছে নাদিয়া। ব‌ইটা মায়ের কাবার্ডে পায় সে। একবার মায়ের সামনে ব‌ইটাতে হাত দেওয়ায় খুব বকেছিল তাকে। আর তাই নাদিয়া কলেজের “লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক” বিরতি টাইমে এবং কি রাত জেগে নিজের রুমে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়া শুরু করে ব‌ইটা। ব‌ইটার তারিখ অনুযায়ী তার বয়স একদমই মিলছে না। তাই নাদিয়ার মাথায় প্রশ্নেরা ঘুরপাক খাচ্ছে।

কোন রকম বাকি ক্লাস গুলো করে বাসায় ফিরে নাদিয়া। এসেই ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দেয়। নজরাত এর মেয়ে হলেও তার ঠিক বিপরীত ধর্মী হয়েছে নাদিয়া। নজরাত যেখানে কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নামাযে দাঁড়াতো সেখানে নাদিয়া অন্যান্য কিছু বেছে নেয়। এ নিয়ে নজরাত এর দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। হাজার বকাঝকা করেও পরিবর্তন আনতে পারছে না মেয়ের। আসলে দোষ নাদিয়ার নয়। দোষ হচ্ছে এই ইউরোপ কান্ট্রির। নিজের দেশ ছেড়ে ইতালিতে এসে খুব বড় ভুল করেছে, যা আজ বিশ বছর পর নজরাত উপলব্ধি করতে পারছে।

আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে,
দুই পরিবার মিলে ট্যুরে যাওয়ার পথে কার এক্সিডেন্ট হয়! বৃদ্ধ বয়সে মাথার চোট সহ্য করতে পারে না সাজেদা চৌধুরীর তৎক্ষণাৎ মৃ’ত্যু ঘটে! এর কিছুদিন পর হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃ’ত্যু বরন করেন সাজ্জাদ হোসেন! তখন নজরাত এর অবস্থা ছিল সূচনীয়। গর্ভের সন্তান মারা যায়! দেশের ডাক্তার জানান বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। তা না হলে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে!
রাদ এবং রাহার আ’ঘাত গুরুত্বর না হওয়ায় বেঁচে যায় তারা। রূপক এর সাথে বন্দোবস্ত করে নজরাত কে বিদেশে নিয়ে যায় রাদ।

এর কয়েক মাস পর নজরাত যখন সুস্থ হ‌ওয়ার পথে তখন রূপক দেশে ফিরে রাহা কে নিয়ে যায় বিদেশে। সেই থেকেই তারা বিদেশে সেটেল। দুই বাবা মা কে হারিয়ে দেশে ফিরে আসার মন উঠে যায় তাদের।
_________

মেয়েকে সুপথে ফিরাতে নজরাত একটা কঠিন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। সন্ধ্যা বেলা মেয়ের জন্য নাস্তা নিয়ে এসে তাকে জানায়, খুব শীঘ্রই তার বিয়ে! তার ফুফাতো ভাই আহম্মেদ এর সাথে! এ কথা শুনে নাদিয়ার মাথায় যেন বাজ পড়লো। মাকে ভীষণ ভ’য় পায় বলে কোন দ্বিরুক্তি করতে পারলো না। অপেক্ষায় রইল বাবা অফিস থেকে ফিরলে বাবাকে বলে বিয়ে ক্যান্সেল করবে।

রুমের মধ্যে পায়চারি করে চলেছে নাদিয়া। তার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না তার মামুনি এমন সিদ্ধান্ত কেন নিল? যেখানে তার মামুনি জানে যে, সে আহম্মেদ কে একদম পছন্দ করে না। কেননা আহম্মেদ এর চলাফেরা তার কেমন সেকেলে টাইপ মনে হয়। মুখ ভর্তি দাড়ি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাঞ্জাবি পড়ে থাকা যা একদমই ভালো লাগে না নাদিয়ার।

রাতের বেলা রাদ শাহমাত বাসায় ফিরলে তার জন্য কফি নিয়ে যায় নাদিয়া। আদূরে গলায় বলে,
–” বাবা কি করছো? এই দেখ আমি নিজ হাতে তোমার জন্য কফি বানিয়ে এনেছি।
— সংবাদ দেখছি মা। তুমি পড়াশোনা বাদ দিয়ে কফি বানাতে গেলে কেন? তোমার মামুনি ই তো বানাতে পারতো।

নাদিয়া স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে বলল,
–” আমার বুঝি ইচ্ছে করে না তোমার জন্য কিছু করতে?
রাদ সহর্ষ বিষ্ময়ে চেয়ে রইল মেয়ের মুখের দিকে। তার মেয়ে তো এতোটা কাজের ছিল না
তবে আজকে কি হলো? রাদ ক্ষীণ একটু হেসে বলল,
–” তাহলে আমার মেয়েটা বড় হয়ে গেছে বল? কতো কাজ করা শিখেছে। এখন তো তাহলে বিয়ে দিতে হবে!

রাদ এর দুষ্টুমির ছলে বিয়ের কথা বলায় তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে নাদিয়া। বাবাকে কিছু বলতে যাবে তখনি নজরাত এসে বলল,
–” ঠিক বলেছো গো। সেই জন্য‌ই তো সুপাত্র দেখে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছি।

মায়ের কথা শুনে নাদিয়ার শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। বাবা ও মামুনির সাথে একমত বুঝতে পেরে তার ভিতরে একটা রা’গের ঝাঁঝ উঠে। হনহন করে বেরিয়ে যায় ড্রয়িং রুম থেকে।
__________

মাঝ রাতে আহম্মেদ যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ঠিক তখন গায়ের মধ্যে পানির ঝাপটায় শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠে! চিৎকার করার পূর্বেই কারো নরম হাতের ছোঁয়ায় তার ওষ্ঠদ্বয় আবদ্ধ হয়ে যায়।”লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক” ছোট ছোট নেত্রযুগল খানিকটা বড় করে তাকায় সে। চোখের সামনে ফুফাতো বোন নাদিয়া কে দেখে বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে থাকে। নাদিয়া তখন কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
–” আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না বুঝছো? ভোরের আলো ফুটতেই তুমি বাসা থেকে পালাবে! তা নয় তো তোমার একদিন কি আমার যতদিন লাগে!

আহম্মেদ চোখে ইশারা করে বুঝায় সে কিছু বলতে চায়। তখন নাদিয়া হাত সরিয়ে নেয়। আহম্মেদ বার কয়েক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–” বিয়ে তুমি করতে চাও না, তাই পালাবে তুমি! আমি কেন পালাতে যাবো?

নাদিয়া ক্ষী’প্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
–” আমি মেয়ে হয়ে কোথায় যাব?
–” সে আমি কি জানি?

এ কথা শুনে নাদিয়া বসে একটু ভাবলো। তারপর দাঁড়িয়ে চোখে মুখে দুষ্টু বুদ্ধি নিয়ে বলল,
–” তুমি যখন পালাবে না তখন আমিই পালাবো। আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে! তখন বদনাম তোমাদের ই হবে আমার কি! তোমার ফুফু মণি আমার জন্য হার্ট অ্যাটাক করবে! তখন সব দোষ তোমার হবে মনে রেখো।

এই বলে নাদিয়া ব্যালকনির দরজা দিয়ে গিয়ে যেভাবে ম‌ই বেয়ে এসেছিল সেভাবেই নিচে নেমে গেল। নাদিয়ার বান্ধবী নৌসি তাকে দেখতে পেয়ে ইতালিয়ান ভাষায় উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
–” কিরে কাজ হয়েছে?
নাদিয়া ঠোঁট কামড়ে বলে,
–” হয়নি, তবে হ‌ওয়ার সম্ভাবনা আছে। দেখা যাক কি হয়। চল এবার?
–” হুম চল।
___________

সকাল বেলা কারো হাউকাউ কর্নধারে পৌঁছাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল নাদিয়ার। বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে ড্রয়িং রুমে আসে সে। তখন ফুফু মণি কে কান্না করতে দেখে কিছু আন্দাজ করে দুষ্টু হাসে নাদিয়া।

নজরাত আর রূপক শান্তনা দিয়ে চলেছে রাহা কে। কিন্তু রাহা ছেলের জন্য অস্থির। নাদিয়া কিছু না জানার ভান ধরে কাছে গিয়ে করুণ কন্ঠে বলল,
–” ফুফু মণি কাঁদছো কেন? কি হয়েছে বলোতো?
তখন আহম্মেদ এর বোন আরুষি জানায় যে, আহম্মেদ বিয়ে করবে না বলে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে! একটা চিঠি রেখে গেছে, চিঠিতে তাই উল্লেখ করেছে সে।
সবটা শুনে নাদিয়ার নাচতে ইচ্ছে করছে কিন্তু নিজেকে সংযত করে সেও ফুফুর সাথে মিছে কান্না করে বলে,
–” এখন আমার কি হবে গো? আমার বিয়ে হবে না। সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। আমি সবাইকে মুখ দেখাবো কিভাবে? ইয়া আল্লাহ এ কি সর্বনাশ হলো গো….
_________

দুইদিন কেটে যায় আহম্মেদ এর কোন খুঁজ পাওয়া যায় না। নজরাত মেয়েকে সন্দেহ করে জিজ্ঞাসা করে, এসবের পিছনে তোর কোন হাত নেই তো?
তখন নাদিয়া একদম সত্যি সত্যি কান্নার ভাব করে কেঁদে বলে সে কিছুই জানে না।

মায়ের মনে যেন সন্দেহ না ঢুকে সে জন্য রাহা যখনি কাঁদে তখন সেও কাঁদে। সারাক্ষণ রাহার পাশে থেকে থেকে আহাজারি করে।

এর এক সপ্তাহ পর, হঠাৎ আহম্মেদ ফিরে আসে! এসে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলে সে নাদিয়াকে বিয়ে করবে। এ কথা শুনে নাদিয়ার চোখ মুখে রক্তোচ্ছাস ভাব ফুটে ওঠে! কিন্তু সবার সামনে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

অতঃপর তাদের বিয়েটা সম্পূর্ণ হয় আলহামদুলিল্লাহ।
বাসর ঘরে আহম্মেদ লাজুক হেসে ব‌উয়ের দিকে তাকায় তখন তার চোখ কপালে উঠে যাওয়ার উপক্রম! তার নববধূ লাল টুকটুকে বেনারসী চেঞ্জ করে টি-সার্ট আর প্যান্ট পড়ে বসে আছে!

আহম্মেদ কে দেখতে পেয়ে নাদিয়া উঠে দাঁড়ায়। দ্রুত দরজা বন্ধ করে এসে আহম্মেদ এর বুকের পাশে পাঞ্জাবি খামচে ধরে গনগনে গলায় বলল,
–” তুমি ফিরে এলে কোন সাহসে? বলেছিলাম না এ বিয়ে না করতে?

আহম্মেদ ইনোসেন্ট ফেইস করে বলল,
–” তোমার জন্য‌ই তো ফিরে আসতে বাধ্য হলাম আমি! আরুষি বলল, তুমি নাকি আমার জন্য কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দিচ্ছ।
–” আরে ম’গা ঐগুলো অভিনয় ছিল। তুমি কেন আসতে গেলে?

আহম্মেদ দুষ্টু হেসে নাদিয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়! আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নাদিয়া। তখন আহম্মেদ ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বলে,
–” আমি খুঁজ নিয়ে জেনেছি তোমার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই! তাই আজ থেকে তুমি শুধুই আমার বউ! লাল টুকটুকে বউ আমার।
.
.
.
নজরাত, রাদ, রাহা, রূপক, আরুষি সাথে কজন প্রতিবেশী মিলে গার্ডেনে গোল হয়ে বসে আছে। অতীতের সুখ দুঃখের কথা একে অপরের সাথে শেয়ার করছে। আরুষি নিজের দেশ সম্পর্কে যত শুনছে ততোই মুগ্ধ হচ্ছে। বিদেশে জন্ম তার। আর তাই দেশের মাটিতে পা রাখা তার বিরাট বড় স্বপ্ন। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা চায়েতো তার স্বপ্ন পূরণ হবে ইনশা আল্লাহ।

মেয়েকে বিয়ে দিয়ে স্বস্থির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে নজরাত। এবার তার স্বপ্ন পূরণ হ‌ওয়ার পথে। সে রাদ, রাহা আর রূপক মিলে এ বছর হজ্জ পালন করতে পবিত্র মক্কায় পারি জমাবে। আগামীকাল ই তাদের ফ্লাইট।
__________

বাংলাদেশ থেকে এক আত্মীয় রাহা কে বললেন,
–” বিবাহযোগ্য ছেলেমেয়ে থাকলে বাবা- মায়ের জন্য হজ্জ ফরজ নয়।
এর উত্তরে রাহা বলে,
–” অনেকে মনে করেন মেয়ে বিয়ে না দিয়ে বা এই জাতীয় পারিবারিক দায়িত্ব পালন না করে হজ্জে যাওয়া ঠিক না। চিন্তাটি ঠিক নয়।
মেয়ে বিয়ের জন্য কি যাকাত দেওয়া বন্ধ রাখবেন?
ফরয নামায বন্ধ রাখবেন?

হজ্জও নামাযের মতই ফরয ইবাদত। হজ্জের টাকার ব্যবস্থা হয়ে গেলে হজ্জ করা ফরয।

যদি মেয়ের বিবাহ ঠিক হয়ে থাকে তাহলে বিবাহ দিন। এরপর হজ্জের টাকা হলে হজ্জ করুন। বিয়ে ঠিক না হলে হজ্জের টাকা হলে হজ্জ করুন। এরপর যখন বিবাহের সময় হবে তখন বিবাহ দিবেন।

মূল কথা হলো, আগের যুগে রাস্তার নিরাপত্তার অভাবে এদেশের মুসলমান সকল সামাজিক দায়িত্ব পালনের পরে চির বিদায় নিয়ে হজ্জে গমন করতেন। এ থেকে আমাদের দেশে এরূপ কুসংস্কার জন্ম নিয়েছে।

— ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ)

প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ্জ করা ফরয:
মহান আল্লাহ বলেন:
“এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে এই গৃহের হজ্জ করা সেই সব মানুষের কর্তব্য যারা সফর করার আর্থিক সামর্থ্য রাখে এবং যদি কেহ অস্বীকার করে তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ সমগ্র বিশ্ববাসী হতে প্রত্যাশামুক্ত।”
[সুরা(৩) আলে ইমরান :আয়াত ৯৭]

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ এক ‘উমরা’র পর আর এক ‘উমরা উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারা। আর কবুল যোগ্য হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয় (জান্নাতই হলো হজ্জে মাবরূরের প্রতিদান)।”
[সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৭৭৩]

আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হজ্জ পালনের ইচ্ছা পোষণ করেছে সে যেন তাড়াতাড়ি হজ্জ পালন করে।”
[মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ২৫২৩ , আবু দাউদ,১৭৩২, হাদিসের মান: হাসান হাদিস]

সুবহানাল্লাহ !
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে হজ্জ পালনের তাওফীক দান করুন। আমীন।

🌿 সমাপ্ত 🌿

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here