#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(পর্ব_২২)
কাব্য খুশির কাছে গিয়ে বললো…
– বলো কি বলবে।
– আমি যেটা বলবো আপনি কি সেটাই শুনবেন।
– আছে এটা কি ধরনের প্রশ্ন আমি কেন তোমার কথা শুনবো।
– প্লিজ একটা হেল্প করবেন আমাকে।
– কি হেল্প।
– আমার প্রেমিক হবার নাটক করবেন আপনি।
কাব্য আকাশ থেকে পড়লো। খুশির কথার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছে না খুশি কি বলছে এসব।
– কি সব বলছো তুমি।
– হ্যাঁ প্লিজ প্লিজ।
– আরে আমিই কেন?
– আসলে কি হয়েছে বলুন তো বাড়ি থেকে একটা ছেলে ঠিক করা হয়েছে, তারসাথে মিট করার পর আমার তাকে পছন্দ হয়নি সেই জন্য আমি বলেছি আমার বয়ফ্রেন্ড আছে কিন্তু ব্যাটা বিশ্বাস করতে চাইছিলো না তাই আমি কোনো উপায় না পেয়ে বলে দিয়েছি কাব্য চৌধুরী মানে আপনার সাথে আমার রিলেশন আছে।
– এ্যা।
কাব্য তো শকে চলে গেছে। এই মেয়ে কি পাগল নাকি তার নামে এত বড়ো মিথ্যা কথা।
– প্লিজ আপনি বাচান। ছেলেটা এখন প্রমান চাইছে তার জন্য আপনাকে আমার সাথে যেতেই হবে।
– আমি পারবো না।
– প্লিজ একটা হেল্প করুন তারপরে আমি আর আপনার সামনে কখনোই আসবো না।
কাব্য কিছু একটা ভেবে বললো…
– ওকে আমি রাজি, তবে কথাগুলো মনে থাকে যেন। এরপর আমার সামনে দেখলে টোটো ওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দেবো তোমার।
– শেষে কিনা টোটো ওয়ালা।
– হ্যা। এই নাও আমার কার্ড, কল বা মেসেজ করে বলে দিও কোথায় যেতেহবে আমি গেলাম।
কাব্য চলে যায়। খুশি রাগে গজগজ করতে করতে বললো…
– হাতি কাঁদায় পড়লে চামচিকাতেই লাথি মারে। শুধু মাত্র ভুল করে আপনার নামটা বের হয়ে গেছেবলে নাহলে আপনার কাছে সাহায্য চাইতে আমার বয়েই গেছে।
ওইদিকে…
তুহা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, ফারাবি ওকে পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরলো। তুহা ফারাবির উপস্থিতি টের পেয়ে মুচকি হাসলো।
– কি হয়েছে তাহু পাখি কি ভাবছো।
– ভাবছি এটাই যে ভাগ্য আমাদের সাথে কতকিছু খেলা দেখালো।
ফারাবি তুহাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিজের দুইগালে হাত রেখে বললো…
– পাখি জীবনটা হলো পানির মতো। যার কোনো আকার হয়না, যেই পাত্রে রাখবে সেই পাত্রেরই আকার ধারন করবে। কখনো সমুদ্রের পানির মতো স্রোত জীবনকে যেই দিকে নিয়ে যাবে আমাদের সেই দিকেই যেতে হয়। আর একটা কথা আছে যেটা হয় ভালোর জন্যই হয় তাই মন খারাপ করো না।
তুহা ফারাবির বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে নিজের মনেই বিরবির করে বললো…
– সত্যি কি ভালোর জন্যই হয়।
ফারাবি তুহার কথাটা শুনলেও কিছু বললো না চুপ করে তার পাখির চুলের গন্ধ নিতে লাগলো। প্রতিটা প্রেমিকা পুরুষের কাছেই তার প্রেমিকার তার প্রেয়সীর চুলের গন্ধটা প্রিয়। প্রতিটা অসুন্দর জিনিসই প্রিয়। তবেই তো সে প্রকৃত প্রেমিক।
তুহা ফারাবির ভালোবাসা এভাবেই আজীবন অটুট থাকবে নাকি আবারো কোনো দমকা হাওয়া সবটা এলোমেলো করে দেবে। যদিও বা দমকা হাওয়া আসে তাহলে কি তুহা আর ফারাবি সেটা সামলাতে পারবে নাকি আলাদা হয়ে যাবে দুইজন। সমুদ্রে জোয়ার ভাটা থাকবেই ঠিক তেমনি জীবনেও খারাপ ভালো দুটো সময়ই আসে। তবে সবটাতেই মানিয়ে নিতে হয়।
রাতে…
কাব্য অফিসের কিছু কাজ করছে এমন সময় ফোনে কল আসতে লাগলো। কাব্য আননোন নম্বর দেখে ফোনটা না ধরেই রেখে দিলো। কিন্তু ফোনের উপরে ফোন আসতে লাগলো, বিরক্ত হয়ে কাব্য ফোনটা কানে তুললো, কিছু বলার পূর্বেই একটা ঝাঁঝালো গলা ভেসে আসলো…
– এই মিস্টার ফোন ধরেন না কেন। ভাব বেড়ে গেছে নাকি আপনার।
কাব্য বিরক্ত হলো। একে তো ক্রমাগত ফোন করেছে তার উপরে আবার তেজ দেখাচ্ছে।
– দেখুন মিস বা মিসেস, আপনার সাথে কথা বলার সময় নেয় আমার কাছে। আপনি রং নম্বরে কল লাগিয়েছেন রাখূন চুপচাপ।
– আজ্ঞে না আমি ঠিক নম্বরেই কল লাগিয়েছি। আপনি মিস্টার কাব্য চৌধুরী বলছেন।
– কিন্তু আপনি কে?(ভ্রু কুঁচকে)
– বাবা গো এরই মধ্যে ভুলে গেলেন ।
– বেশি পাকামো না করে বলুন কে আপনি
-আমি খুশি বলছি।
কাব্যের কপালে ভাঁজ পড়লো, মুখটা বিরক্তে ভরে উঠলো। মুখটা গম্ভীর করে বিরবির করে বললো…
– তাই তো বলি এত অসভ্য মেয়ে আমার নম্বর পেলো কোথা থেকে। আল্লাহ জানে কি ঘটাবে এই মেয়ে।
– এই বিরবির করছেন।
– কিছু না তুমি বলো কি বলবে।
– আগামীকাল সকাল ১০ টাই ….এখানে উপস্থিত থাকবেন।
– ওকে,বাই। ( বিরক্ত হয়ে)
খুশি কিছু বলার পূর্বেই কাব্য ফোনটা কেটে দিলো। খুশি তো রেগে গজগজ করছে।
– একবার কাজটা হয়ে যাক তারপরে সবকিছু শুধে আসলে আদায় করবো।
অন্যদিকে…
তুহা বিছানা ঠিক করছে। কোথা থেকে ফারাবি বিছানায় শুয়ে বললো…
– পাখি আমরা কবে বেবি নেবো।
বেবি নেবার কথা শুনে তুহার মুখটা কালো হয়ে গেলো। কথার নিষ্ঠুর জীবনের কথা মনে পড়ে গেছে,বিষয়টা ফারাবি প্রথমে না বুঝতে পারলেও পরে মনে পড়তেই উঠে বসে পড়লো। তুহার মুখটা ফ্যাকাশে লাগছে। ফারাবি নিজের বোকামীর জন্য নিজের মনে নিজেকে একটু বকাঝকা করে তুহাকে বললো…
– পাখি মন খারাপ করো না। আমি এইসব ভেবে কথাটা বলিনি সত্যি।
– আচ্ছা দিদিভাইয়ের মতো আমার ওহ যদি বেবি না হয় তখন কি আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন।
ফারাবি তুহাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো…
– কখনোই না তাহু পাখি। আমি আমার প্রেয়সীকে ভালোবাসি,আর তার হাত কখনোই ছাড়বো না সে যেকোন পরিস্থিতিতেই হোক না কেন।
– তাহলে দিদিভাইয়ের সাথে এইরকম হলো কেন।
– দ্যাখো প্রতিটা মানুষেরই ইচ্ছা থাকে বাবা মা হওয়ার আর এটা তো আল্লাহ তায়ালার দান , ওনার ইচ্ছা ছাড়া তো কিছুই সম্ভব না তাই না। সবাই তো সবটা বোঝে না। আকাশ ওহ বোঝেনি,অবুঝের মতো কাজ করে আমার বোনটাকে শে/ষ করে দিলো।
– আমার ওহ যদি এই একই সমস্যা দেখা যায় তো।
– তাহলে একটা কিউট বাচ্চাকে দত্তক নিয়ে বড়ো করবো প্রমিস করলাম তোমাকে।
তুহা ফারাবিকে জড়িয়ে ধরলো আবারো। আল্লাহ তায়ালার কাছে অশেষ ধন্যবাদ, এইরকম একটা মানুষকে নিজের পাশে পাবার জন্য।
পরেরদিন…
কাব্য রেডি হয়ে খুশির বলা মতো জায়গায় পৌঁছে যায়। গিয়ে দেখলো খুশির সাথে আরেকটা ছেলে বসে আছে সামনের দিকে ঘুরে বসায় ঠিকমতো দেখতে পাওয়া যাচ্ছেনা। কাব্য এতকিছু না ভেবে সামনে এগিয়ে গেলো। কাব্যকে দেখা মাত্রই খুশি উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো…
– আরে তুমি এসে পড়েছো।(মিস্টি হাসি দিয়ে)
– হুম।
– এই যে মিস্টার দেখুন আমার বয়ফ্রেন্ড এসে পড়েছে।
কাব্য এইবার পাশের ছেলেটার দিকে তাকালো। তাকিয়ে চমকে উঠলো…
#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
#বোনাস_পার্ট
(পর্ব_২৩)
কাব্য সামনে তাকিয়ে চমকে উঠলো। সামনে থাকা মানুষটি ওকে দেখে মিটমিট করে হাসছে। কাব্যের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওহ ঠিক কতটা অবাক হয়েছে। ছেলেটা উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো কাব্যকে। খুশির তো চোখ বেড়িয়ে আসার জোগাড়।
– আরে ভাই তুই এখানে।
– কেমন লাগলো সারপ্রাইজ।
– সেটা তো ভালোই কিন্তু তোকে এখানে দেখে খুব শক খেয়েছি আমি।
– হা হা শা/লা বাবু এখনো সেই আগের মতোই আছেন দেখছি।
– এই হা/রা/মী আমাকে খবরদার শা/লা বলবি না আমার বোনকে তোকে দেবো না। তোর জন্য এই খুশিই পারফেক্ট।
– বারে ভাই বোনকে দিবি না আর গার্লফ্রেন্ডকে দিয়ে দিবি।
খুশি কি করবে বুঝতে পারছে না। এখুনি যে তার সত্যি টা বের হয়ে আসবে সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছে। কাব্যকে এখুনি থামাতে না পারলে সব প্ল্যানে জল ঠেলে দেবে। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে বললো…
– আপনারা একে অপরকে চেনেন।
– ইয়েস মিস। আমি আর কাব্য অনেক পুরানো বন্ধু। যখন আপনার মুখে কাব্যের নাম শুনলাম তো ভাবলাম কাব্যকে একটা সারপ্রাইজ দেওয়া যাক।
– আমি আজকে শেষ(বিরবির করে খুশি)
– কিছু কি বললেন। (আতিফ)
– না কিছুই বলিনি আমি।
– ওকে। তাহলে আমি এখন আসি কাব্যের সাথে আমার পার্সোনাল কিছু কথা আছে। আর চিন্তা নেয় বন্ধুর ভালোবাসা আমি কেড়ে নেবো না তবে খুব তাড়াতাড়ি আপনাদের বিয়ের নেমন্তন্ন চাই আমার। থ্যাঙ্কস।
– কিসের জন্য।
– পরে বলবো সিক্রেট। কাব্য চল।
খুশি কিছু বলার পূর্বেই কাব্যকে নিয়ে আতিফ হাওয়া হয়ে গেলো। খুশির অবস্থা তো ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি এই টাইপ।
– তুইও প্রেম করছিস ভাবা যায়।
– খুশির সাথে আমার কোনো রিলেশন নেয়।
আতিফ কথাটা শুনে গাড়ি ব্রেক করে কাব্যের দিকে তাকিয়ে বললো…
– মানে?
কাব্য আতিফকে সবটাই বললো,অন্য কেউ থাকলে হয়তো বলতো না কিন্তু আতিফকে মিথ্যা বলতে পারবে না তাই লুকিয়ে গেলো না সবটাই জানিয়ে দিলো। সবটা শুনে আতিফ হাসতে হাসতে শেষ।
– তুই হাসছিস।
– হুম। কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা।
– হুম। ভাই ওকে বিয়ে করে নে তুই।
– কাব্য আজকে তোকে কিছু কথা জানানোর আছে।
– কি কথা।
– কথা দে রাগ করবি না।
– ওকে বল।
আতিফ কাব্যকে কিছু একটা বললো। সবকিছু শুনে কাব্য অবাক হলো অনেকটাই।
– এইসব কি সত্যি।
– হুম ভাই সবটা সত্যি।প্লিজ হেল্প কর একটু।
– আচ্ছা আমি দেখছি কি করতে পারি।
– ওকে।
খুশি বাড়ি ফিরে এসে সারা ঘর পাইচারি করছে, আঙুল কামড়াচ্ছে। আশিক এসে ওর মাথায় মারলো।
– আহ লাগছে।
– কী হয়েছে তোর এইভাবে পায়চারি করছিস কেন।
– কিছু না।
– বলতে বলেছি আমি।
– রাগ করবে না তো বলো।
– না বল।
খুশি সবটা বললো। আশিক মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।
– কি হলো তোমার।
– বোন আমার কি করেছিস তুই এটা।
– মানে।
– আরে গাধা এইসব করার আগে তুই একবার বলবি তো সবটা আমাকে।
– বললে কি করতে তুমি।
– গাঁধী আতিফ আমি আর কাব্য তিনজন তিনজনের অনেক পুরনো বন্ধু।
– কী!
– হুম।
আশিক চলে গেলো। খুশি মাথায় হাত দিয়ে বললো…
– বিপদ যখন আসে সবদিক থেকে আসে। এবার কি হবে আমার।
ওইদিকে…
– আতিফ তোর সাথে ওই বজ্জাত মেয়েটার সাথে বিয়ের কথা হলো কিভাবে?
– একমিনিট একমিনিট।
– কি হলো।
– তুই জানিস খুশি কে?
– হুম তুহা আর মেধার ফ্রেন্ড হয়।
– আরেকটা পরিচয় আছে।
– কি?
– ওহ আমাদের আশিকের ছোট বোন।
– কী?
– হুম।
– তারমানে ওই সেই ছোট খুশি।
– ইয়েস কাব্য চৌধুরী তোমার পিচ্চি ক্রাশ।
– এই ছিলো আমার কপালে
কাব্যের কান্ড দেখে আতিফ ফিক করে হেসে দিলো। সবাই চেনা পরিচিত কিন্তু তবুও অনেকটাই অচেনা।
তুহা আবারো কলেজে জয়েন করেছে। পড়াশোনা শেষ করতে চাই। তিশার প্রেগন্যান্সি চলছে, মাঝে মধ্যেই উল্টোপাল্টা বায়না করছে সবটাই ওর বর সামলাচ্ছে। তুহা কলেজ শেষ করে ঠিক করলো বাড়ি থেকে ঘুরে আসবে। কথা মতো চৌধুরী বাড়িতে ও ফারাবিকে জানিয়ে দিলো।
তুহাকে হঠাৎ বাড়িতে আসতে দেখে ওর মা খুবই আবেগ প্রবন হয়ে পড়লেন। তুহা কে নিজের বুকে আগলে রাখলেন। তুহার জন্য রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তুহা বাড়িটাকে দেখছে আর ভাবছে এই বাড়িতেই একদিন রাজত্ব করে বেড়াতো। সারাটা দিন খেলে বেড়াতো কিন্তু তার আদরের বোনটা কোথায়।
মিহাকে খুঁজতে খুঁজতে তুহা মিহার ঘরে এসে দেখলো। মিহা কিছু একটা দেখছে ফোনে,তুহা পেছনে দাঁড়াল চমকে দেবার জন্য কিন্তু নিজেই চমকে উঠলো..
– মিহা।
আচমকা এইরকম হওয়াতে মিহা হকচকিয়ে গেলো। পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখলো তুহা দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে ভয়ে বললো…
– তুই।
– কী করছিস এসব তুই।
মিহা কিছু বলছে না চুপ করে আছে।
#চলবে…