তোমার মাদকতায় আচ্ছন্ন পর্ব ২৮+২৯

#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_২৮)

খুশি কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলো তার খেয়ালই নেয়। মুখের উপরে রোদ পড়াই খুশির ঘুমটা ভেঙে যায়। নিজেকে মেঝেতে শুয়ে থাকতে দেখে অনেকটা অবাক হলো মাথায় একটু প্রেসার দিতেই সবটা মনে পড়ে গেলো তার নির্মম ভাগ্যের কথা।

খুশি বাইরে বের হয়ে এলো। আশেপাশে কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না। রান্নাঘর থেকে আওয়াজ আসছে তাই খুশি সেদিকে গিয়ে দেখলো সেই ফুচকা ওয়ালা মানে ওর সদ্য বিবাহিত স্বামী রান্না করছে। ওর দিকে তাকিয়ে বিশ্রী একটা হাসি দিয়ে বললো..
– তুমি উঠে পড়েছো।
– হুম।
– আচ্ছা গোসল করে নাও আজকে তো আমাদের বৌভাত।
– তোর বৌভাত বিয়ে করছি আমি তোর সাহস কীভাবে হলো আমার মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করার।
– আমি কী করবো আমাকে তো এটাই করতে বলা হয়েছে।
– কে বলেছে তোকে।
– আমি…

দরজার সামনে তুহাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খুশির মনে রাগের সৃষ্টি হলো।

– তুহা তুই।
– হুম দেখতে এলাম কেমন আছিস।
– কেমন আর থাকবো বল।
– ভালোই তো থাকবার কথা তোর পছন্দের মানুষের সাথে আছিস।
– আমি তো মজা করে বলেছিলাম।
– জীবনটা মজা নয় সেটা তোকে বুঝতে‌ হবে খুশি।
– সরি।
– আচ্ছা বাদ দে এসব ভাব কি করবি এই লোকটার সাথে থাকতে তোর কোনো অসুবিধা নেয় তো।
– প্লিজ তুহা এইরকম করিস না আমি থাকতে পারবো না্ এর থেকে তো তোর দেবর অনেক ভালো।
– ভালো‌ বলছিস তাহলে ।
– হুম।
– আচ্ছা ভাব যদি তোর বিয়ে‌ কাব্যের‌ সাথে হয়েছে তখন কি করবি।
– মানিয়ে নেব।
– সত্যি তো।
– হুম সত্যি সত্যি সত্যি।
– কিন্তু তোর তো বিয়ে হয়ে গেছে একটা বিবাহিত মেয়ের সাথে আমার দেবরের বিয়ে দিই কীভাবে বল। তার চেয়ে ভালো তুই ওর সাথেই থাক আমি গেলাম।

তুহা খুশিকে কিছু না বলতে দিয়ে চলে গেলো। খুশির রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে, নিজের মাথা চাপড়াতে মন চাইছে এখন ওটা ছাড়া তো কোনো কাজ নেয়। কাব্যকে তো না বলেছিলো প্রতিশোধ নেবার জন্য আসলে মনের কোনো চলে যে অন্য কিছুই।

– এই যে রেডি হবে তো।

আচমকা কারোর কন্ঠস্বর শুনে খুশি ঘাবড়ে যায়। পেছন ঘুরে দেখলো ওর ফুচকা ওয়ালা বর দাঁড়িয়ে আছে।

– এই আপনি আমার সামনে আসবেন না আপনাকে দেখলেই না আমার রাগ হয়।
– কেন বউ তুমি তো আমার বউ বলো।
– ন্যাকামো করবেন না আমি আপনাকে কখনোই বর হিসাবে মানতে পারবো না। আর না কোনো ভালোবাসার কথা ভাবতে পারবো আমি শুধু মাত্র কাব্যকে ভালোবাসি।
– এই কাব্যটা কে?
– আমার সবকিছু যাকে নাজের ভুলে নিজের জীবন থেকে হারিয়ে ফেলেছি।
– মানে আমাকে একটু বলো।
– আমি কাব্যকে আগে থেকেই পছন্দ করতাম কিন্তু কাব্যের মুখ থেকে কথাটা শোনার জন্য বিয়েতে না করে দিয়েছিলাম, কে জানতো ভাগ্য এতটা নিষ্ঠুর হবে আমার প্রতি তাহলে কখনোই না বলতাম না।
– ভালোবাসার মানুষটিকে পাবার পরেও বলছো ভাগ্য নিষ্ঠুর।

চেনা কন্ঠস্বর শুনে খুশি চমকে উঠলো। চারিদিকে দেখতে লাগলো। সামনে তাকিয়ে থমকে গেলো, কাব্য দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে খুশি আর কোনো দিকে নজর না দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। খুশি তো কেঁদেই দিয়েছে।

– আরে কাঁদছো কেন? দ্যাখো আমিই কাব্য আর কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না বউ।
– হুঁ এতকিছুর মানে কী?
– তোকে জব্দ করা।

তুহার গলা শুনে কাব্যকে ছেড়ে খুশি সরে দাঁড়ায়।

– আমার দেবর কে রিজেক্ট করলি তাই ভাবলাম একটু জব্দ করা যাক।
– তাই বলে এইভাবে।
– সরি রে জানু রাগ করিস না। আর তাছাড়া তোদের বিয়ে কিছুদিন পরে বড়ো করে হবে। আর আজকে তুই বাড়ি ফিরে যাবি।
– হুম।

কাব্য ও খুশিকে মেনে নিতে শুরু করেছে। আর খুশি তো কাব্যকে ভালোবাসে।

দেখতে দেখতে বিয়ের দিনগুলো এগিয়ে আসতে শুরু করেছে। সকলেই আয়োজনে ব্যস্ত। বাড়ির ছোট ছেলে ও মেয়ের বিয়ে একসাথে সবাই তো খুব এক্সাইটিং। আজকে মিহা মেহতাবের সাথে দেখা করতে এসেছে।

– মিহা তুই এখানে কেন এসেছিস।

মিহা কিছু না বলে মেহতাবকে জড়িয়ে ধরলো চুপটি করে। মেহতাব চাইলেও মিহাকে সরিয়ে দিতে পারলো না। অনেকক্ষন হয়ে যাবার পরেও মিহার কোনোরকম সাড়াশব্দ না পেয়ে মেহতাব দেখলো মিহা অজ্ঞান হয়ে পড়েছে।

– এই মিহা তোর কী হলো বল।

মিহা চোখ খোলে না। বাধ্য হয়ে মেহতাব মিহাকে কোলে তুলে অফিস থেকে বের হয়ে আসলো। সকলেই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু মেহতাবের ডোন্ট কেয়ার ভাব।

মেহতাবকে ডক্টর জানায়..
– কয়েকদিন যাবত ঠিকমতো না খাওয়া, তার উপরে রোদে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা আর উত্তেজনা থেকে জ্ঞান হারিয়েছে।

কথাটা শুনে মেহতাব নিজেকে দায়ী মনে হতে করতে থাকে। মিহার ওর জন্যই এই অবস্থা। মেহতাব ধীর পায়ে ওর কাছে বসে হাতটাকে ইজের মুঠোয় নিয়ে বললো…
– মিহা আমাকে মাফ করে দিস। আমি চাই না তুই আমার জন্য কষ্ট পাক আর তুই কেন বুঝিস না তুই আমার জীবনে থাকলে কষ্ট পাবি। তাই আমি তোর জীবন থেকে হারিয়ে যাবো অনেক দূরে ভালো থাকিস।

মিহার কপালে একটা কিস করে মেহতাব চলে যায় ওখান থেকে।

কিছুক্ষন পর..

মিহার জ্ঞান ফিরে নিজেকে হসপিটালে দেখে আর আশেপাশে কাউকে না দেখে খুব অবাক হয়ে যায় মিহা। নার্স এসে ওর হাতে একটা প্রেসক্রিপশন দিয়ে ছুটি বলে দেয়। মিহা বাইরে আসতেই একটা ট্যাক্সি পেয়ে যায় মিহা চুপচাপ উঠে বসে এবং কোথায় যাবে সেটা বলে। মিহা ট্যাক্সি থেকে নেমে টাকা দেবার আগেই ট্যাক্সি ড্রাইভার চলে যায় মিহা খুব অবাক হয়ে যায় এই রকম কাজে। এমনিতেই শরীর অসুস্থ কোনো কথা না বলেই চুপচাপ নিজের ঘরে এসে দরজা আটকে দেয়।।

অন্য দিকে…..

তুহা ফারাবির ঘরের সবকিছু গুছিয়ে রাখছে। হঠাৎ করেই ওর সামনে একটা মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখলো। কৌতুহল বশত হাত তুলে নিয়ে শক খেল।

রাতে…

খাওয়া দাওয়া শেষ করে। ফারাবি ঘরে এসে দেখলো তুহা চুপচাপ বসে আছে বিছানার উপরে।

– কি হয়েছে তাহু পাখি।
– আচ্ছ তুমি তো আমাকে না ভালোবাসো। তাহলে আমার সাথে কিভাবে এই প্রতারনাটা করতে পারলে।
– কিসব বলছো তুমি।
– হ্যা আমি ঠিক বলছি তুমি ঠকিয়েছে আমাকে মিথ্যা বলেছে কেন করলে এইরকম।

ফারাবি পুরোই হতভম্ব হয়ে গেছে একে তো তুহা ওকে তুমি বলছে তার উপরে উলটো পাল্টা কথা বলছে।

– আমাকে বলবে তোমার কি হয়েছে। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
– বুঝতে পারছো না। নাকি চাইছো না।এটা কী?

তুহা ফারাবির সামনে মেডিকেল রিপোর্ট টা ধরলো। তুহার হাতে ওটা দেখে ফারাবি ঘাবড়ে গেলো। আমতা আমতা করে বলল…
– এটা তোমার কাছে কেন? তুমি কোথায় পেলে।
– আমি কিভাবে পেলাম সেটা বড়ো কথা নয়। আগে বলো এইসব কিছু কী সত্যি।

ফারাবী মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তুহা ফারাবির দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে একের পর এক।

– চুপ করে থেকো না উত্তর দাও বলো।
– হ্যা হ্যা সবকিছুই সত্যি।

তুহা এক পা পিছিয়ে গেলো। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে রাখার চেষ্টা করছে। ফারাবি এগিয়ে এসে তুহাকে জড়িয়ে ধরলো। ফারাবির বুকে মাথা রেখে তুহা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_২৯)

তুহা ফারাবির বুকে মাথা দিয়ে কেঁদেই চলেছে। ফারাবি শান্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু তুহা থামছে না।

– এই তুমি চুপ করবে না আমি চলে যাবো এখান থেকে।

তুহা ধমক খেয়ে কান্না থামিয়ে দিলেও ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। ফারাবি তুহার দুই গালে হাত রেখে বললো…
– তাহু পাখি তুমি যেরকমই হও না কেন তুমি আমার স্ত্রী ছিলেন। আমার মাদকতা ছিলো আর সারাজীবন থাকবে। কোনো কিছুই আমাদের আলাদা করতে পারবে না।
– কিন্তু কথাটা তো সত্যি আমি কখনোই তোমাকে পিতৃত্বের সাধ দিতে পারবো না।
– দরকার নেয় আমার। আমি একটা সন্তানের জন্য তোমাকে কখনোই ছাড়তে পারবো না। তুমি তো আমার বেঁ/চে থাকার প্রান ভোমরা তোমাকে ছাড়া আমি বাঁ/চ/বো না।‌
– কখনো হাতটা ছেড়ে দেবে না তো।
– কখনোই না।

তুহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ফারাবি। ফারাবি তুহাকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বললো…
– সমস্ত সত্যি টা তোমাকে কখনোই বলতে পারবো না তাহু পাখি মাফ করে দিও আমাকে।

সেদিন এক্সিডেন্টে তুহার বাহ্যিক কোনো প্রকার ক্ষতি না হলেও ভেতরে অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে গেছে। সেদিন এক্সিডেন্টের রির্পোট আসার পর ডক্টর ফারাবিকে নাজের কেবিনে ডেকে পাঠায়..

– মিস্টার চৌধুরী আপনাকে শক্ত হতে হবে। এখন আমি আপনাকে এমন কিছু সত্য কথা বলবো যেটা হয়তো আপনি সহ্য করতে পারবেন না। তবুও আপনাকে সবটা জানতে হবে,বুঝতে হবে।
– কি সত্যি ডক্টর।
– এক্সিডেন্টের আগে আপনার স্ত্রী একা ছিলেন না।
– মানে?
– মানে হলো এটাই আপনার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট ছিলো, ওনার গর্ভে সন্তান এসেছিলো কিন্তু উনি সেটা বোঝার আগেই এই এক্সিডেন্ট সবটা শেষ করে দেয়।

ফারাবির মাথাটা ঘুরে গেলো। কোনো পুরুষ যখন জানতে পারে সে বাবা হতে চলছিলো কিন্তু একটা এক্সিডেন্ট তার সন্তানকে শেষ করে দিয়েছে তার মনের ভেতরে কি চলে সেটা সেই বুঝতে পারে।

– দেখুন মিস্টার চৌধুরী আপনি এত সহজে ভেঙ্গে পড়লে তো আপনার স্ত্রীকে সামলানো যাবে না‌। আর এখনো যে কঠিন সত্যটার মুখোমুখি হওয়া বাকি।
– আবার কি সত্যি ডক্টর।
– আপনার স্ত্রী কখনোই মা হতে পারবে না। হয়তো এই এক্সিডেন্টটা না হলে কখনোই এইসব হতো না কিন্তু ভাগ্য আপনাদের সাথে এটাই করেছে।

ফারাবির মাথাতে একের পর আকাশ ভেঙে পড়ছে। কিভাবে এই ঝড়টা সামলাবে ওহ।

– আমি জানি মিস্টার চৌধুরী একটা ছেলের পক্ষে এইসব মেনে নেওয়া কতটা কঠিন কিন্তু আপনি আপনার স্ত্রীর কথা একবার ভাবুন উনি কতটা কষ্ট পাবেন সবকিছু জানলে। আর আমি আপনার চোখে ওনার জন্য অগাত ভালোবাসা দেখেছি আমি আশা করবো আপনার স্ত্রীর কোনো অক্ষমতায় আপনাদের সম্পর্কের ইতি টানবেনা।

ফারাবির চোখের সামনে তুহার বলা সেইদিনের কথা গুলো ভেবে উঠলো। কথার জীবন কাহিনী মনে পড়ে গেলো। ফারাবি নিজের মনকে বোঝালো…
– সে তো কাপুরুষ নয়। সে তো তার তাহু পাখিকে ভালোবাসে তাহলে কখনোই তাহু পাখির অক্ষমতা গুলোকে দেখবে না। বরং আগলে রাখবে তাহু পাখিকে।

ফারাবি নাজের চোখের পানিটা খুব সমর্পণে মুছে নিয়ে বললো…
– ডক্টর চিন্তা করবেন না। আমি তাহু পাখিকে ভালোবাসি। যাকে নিজের জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসি একটা সন্তানের জন্য তাকে অবহেলা কখনোই করবো না।

– দোয়া করি আপনারা সুখী হন। আর একটা কথা আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনার স্ত্রীকে কেউ ইচ্ছা করে ধাক্কা দিয়ে ছিলো।
– আপনি এসব কি বলছেন।
– যদিও সবটাই সন্দেহ তবে মনে হচ্ছে। ওইভাবে পরে যাওয়াটা খুবই অস্বাভাবিক বিষয় আপনি বিষয়টা একটু ভালো করে তদন্ত করতে পারেন।
– ওকে ডক্টর আমি দেখছি।

ফারাবী চলে যেতেই ডক্টর নিজের চশমাটা খুলে চোখের পানিটা মুছে নিলো…
– ভালোবাসা দেখতেও ভালোলাগে। প্রিয়তমা তুমি আমাকে একাকে রেখে কোথায় হারিয়ে গেলে আমার একটা আবদার একটা সন্তান আনতে গিয়েই তুমি আমাকে একা করে চলে গেলে। আমি ডক্টর হয়েও তোমাকে বাঁ/চা/তে পারিনি আমাদের মেয়েটাকে আমাকে একা করে চলে গেলে তুমি। আমি চাইনা সন্তানের জন্য কোনো পরিবার শেষ‌হয়ে যাক,, আমি চাই না।

বর্তমান…

ফারাবি তুহার চোখের আড়ালেই চোখের পানিটা মুছে নিলো। তুহা কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়েছে ফারাবি ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে মাথাতে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো।

পরেরদিন….

কালকে কাব্য আর কুহুর গায়ে হলুদ। তুহা নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু বারে বারে আনমনা হয়ে পড়ছে। বাড়িতে আত্মীয় আসতে শুরু করে দিয়েছে।

মিস শাকচুন্নি থুক্কু মনিকা ম্যাডাম ওহ এসে পড়েছে আজকেই ঝামেলা করার জন্য। এসেই ফারাবির সাথে কিছু একটা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়ে চলেছে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ফারাবি চেঁচিয়ে উঠলো…
– মনিকা চুপ কর। আর একটা কথা বললে আমি কী করবো‌ আমি নিজেই জানি না।

ফারাবির ধমক খেয়ে মনিকা চুপ করলো ঠিকই কিন্তু মুখের কোনো শয়তানী হাসিটা ফুটিয়ে রাখলো যেন এটাই চাইছিলো ওহ। এদিকে ফারাবীর চিৎকারে সকলেই ওখানে এসে উপস্থিত হয়েছে। ফারাবির বাবা বললো…
– কি হয়েছে এইভাবে চেঁচামেচি করছো কেন?
– আঙ্কেল আমি ফারাবি একটা কথা বলছিলাম ওহ এমনি এমনি রিয়াক্ট করছে।
– মনিকা কি বলছে এসব ফারাবি (বাবা)
– বাবা ওকে এখান থেকে চলে যেতে বলো নাহলে আমি কিছু একটা করে দেবো।
– আমাকে কেন তাড়িয়ে দিতে চাইছো যাতে নিজের বউ এর অক্ষমতাটা ঢাকা থাকে তাই তো।(মনিকা)
– কিসব বলছিস মনি তুই(ফারাবীর মা)
– হ্যা আন্টি সত্যি বলছি তোমার ছেলেকেই জিজ্ঞেস করো না। ওহ তোমাদের থেকে কি সত্যি লুকিয়েছে।
– ফারাবি বাবা মনি এসব কি বলছে।(মা)

ফারাবি চুপ করে আছে।‌তুহাও মাথা নীচু করে চোখের পানি ফেলছে। মনিকা তুহার সামনে দাঁড়িয়ে বললো…
– কি হলো সত্যি টা সবাইকে বলো। তুহা নাকি কখনোই মিথ্যা বলে না তো এবার কেন চুপ করে আছো।
– মনিকা তুহার উপরে উঁচু গলাতে কথা বলার সাহস হলো কিভাবে তোর।(ফারাবি)
– বেশ করেছি একটা বন্ধার সাথে এর থেকে ভালো করে কথা বলতে আমি পারবো না।

কথাটা সবার মাঝে বজ্র পাতের মতো পড়লো। সকলেই চমকে উঠে তুহা,মনিকা আর ফারাবির দিকে তাকিয়ে আছে। তুহা ঠোট কামড়ে কাঁদছে। ফারাবি মনিকার গালে একটা থাপ্পর দিলো।

– তুমি এই বন্ধার জন্য আমাকে মারলে।
– চুপ একদম চুপ। যাকে এইসব কথা বলছো সে আমার বিবাহিত স্ত্রী। তোর সাহস কিভাবে চৌধুরী বাড়ির বড়ো বউ এর সাথে এইভাবে কথা বলার।
– আন্টি দেখেছে তোমার ছেলে।
– মনিকা চুপ কর। ফারাবি মনিকা কি বলছে এসবের কারন কি সবটা বল আমাদের।
– তোমরা যখন অর্ধেক টা জেনেই গেছো তাহলে পুরোটাই জেনে নাও। হ্যা সত্যি তুহা কখনোই মা হতে পারবে না। ওই এক্সিডেন্টের ফলে তুহার শরীরের অনেক ক্ষতি হয়েছে এবং মা হবার ক্ষমতা হারিয়েছে।

সকলেই আরো একবার চমকে উঠলো। তুহা কান্না আটকে রাখার চেষ্টা করছে। ফারাবির চোখের কোনো ওহ পানি মনিকার মুখে শয়তানি হাসি। ফারাবির মা ধীর পায়ে তুহার কাছে এগিয়ে এসে তুহাকে নিজের বুকে আগলে নিলো, তুহা একটা আশ্রয়স্থল পেয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো।

– মা বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছা করে কিছু করিনি।
– মারে কোনো মেয়েই ইচ্ছাকৃত ভাবে মাতৃত্বের সাধ থেকে বঞ্চিত হতে চাই না। তুই ওহ চাসনি কিন্তু ভাগ্য তোদের সাথে করেছে মন খারাপ করিস না। দরকার পরে আমরা একটা সন্তান দত্তক নেবো তবুও তোদের চোখে পানি আসতে দেবো না। কথাকে হারিয়েছি তোকে হারাতে পারবো না আমার।

মনিকার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ওহ ভেবেছিলো কথাটা শুনলে সকলে তুহাকে অবহেলা করবে। কিন্তু সবাই তো আরো গুরুত্ব দিচ্ছে তুহার প্রতি। রাগকে কন্ট্রোল করতে না পেরে বললো…
– আন্টি একজন বন্….

কথাটা শেষ করার আগেই ওর গালে একটা থাপ্পর পড়লো।

– আন্টি তুমি।
– হ্যা আমি,আমার বাড়ির বউকে অপমান করার অধিকার আমি তোমাকে দিইনি। তুহা আমার ছেলের বউ আমার মেয়ে। তাই ওর সব খুঁত আমরা মেনে নিতেই রাজি অবহেলা নয় আগলে রাখতে শেখো। আর এখুনি তুমি এই বাড়ি থেকে চলে যাও আমি চাই না বিষয়টা কেউ জানুক।

মনিকা অপমানে বাড়ি থেকে চলে যেতে যাবে তখনি ফারাবি বললো…
– দাঁড়া।

সকলেই ফারাবির এমন কাজে অবাক।

– তুই ওকে দাঁড়াতে বললি কেন (মা)
– কাজের শাস্তি না পেয়েই চলে যাবে।
– কি কাজের শাস্তি।
– কি মনিকা সবাইকে বলি আমি।

মনিকা ঘামতে শুরু করলো ফারাবির কথাতে।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here