#তোমায়_পাবো_বলে
#পর্ব_১০
#নিশাত_জাহান_নিশি
চশমাটা চোখ থেকে এক ইঞ্চি নিচে নামিয়ে রুম্পা আপু আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“হু ইজ হি?”
সংকোচ প্রবনতায় রীতিমতো ব্যাঘাত ঘটিয়ে আমি ঠোঁটের আলিজে স্নিগ্ধ এক ম্লান হাসি ফুটিয়ে রুম্পা আপুর সম্মুখস্থ হয়ে বললাম,
“পরশ ভাই।”
আপুর খর্বাকৃতির মুখমন্ডলে অতি আশ্চর্যের ছিটিঁফোঁটা আন্দাজ করা মাএই আমি তিক্ত গলায় বললাম,,
“আরে আপু পরশ ভাইকে চিনলে না? ঐ যে, যার বাড়িতে আমার মাসব্যাপী ঠাঁয় হয়েছিলো! যার বদৌলতে আমি হিমেশ অবধি পৌঁছানোর সাহস এবং সুযোগ পেয়েছিলাম!”
আপুর চেতনাশক্তি বোধ হয় মাএ পুনরুত্থান হলো। সম্মতি ফিরে পাওয়া মাএই আপু কিঞ্চিৎ রুক্ষ হাসিতে পরশ ভাইয়ার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,,
“এবার চিনতে পেরেছি। হিমেশ ভাইয়ার ফ্রেন্ড আপনি তাই তো?”
পরশ ভাই জোর পূর্বক হাসিতে এক প্রকার তিক্ততার রাগিনী মিশিয়ে মিহি কন্ঠে বললেন,,
“ইয়াহ, হিমেশের ফ্রেন্ড!”
অপ্রত্যাশিত ভাবেই আপু ঠোঁটের আলিজে ক্রুর হাসি সমেত কেমন যেনো মোহ ভরা কন্ঠে বললেন,,
“মানতে হবে বস। ইউ আর লুকিং সো হট, কিউট, হ্যান্ডসাম এন্ড ড্যাশিং অলসো! সিরিয়াসলি, আমার যদি তুহিনের সাথে বিয়েটা না ঠিক হতো না? আমি এক্ষনি, এই মুহূর্তে আপনাকেই বিয়ের প্রপোজালটা দিতাম। ইউ আর জাস্ট বেটার অপশন ফর মি।”
সেকেন্ডের কাটা টা ও বোধ হয় কিঞ্চিৎ এদিক থেকে ওদিক হওয়ার সময়, সুযোগ পেলো না। এর অতি পূর্বেই হেচকি সমেত পরশ ভাইয়ার খুক খুক শুকনো কাশির আবির্ভাব ঘটল। ঠোঁটের উপর ঠোঁট চেঁপে ধরে আমি অট্ট হাসি আটকানোর চেষ্টায় প্রয়াত প্রায়। বাঁধ ভাঙ্গা হাসিতে এক্ষনি লাগাম না টানলে আগাম জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে! এই পরশটার সাথে একদমই বিশ্বাস নেই! পরে দেখা গেলো, গুমড়ো মুখো লোকটার খিল্লি উড়ানোর অপরাধে আমাকে বদ্ধ ঘরে তালাবন্ধি করে দিলো! ৪/৫ দিনের খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে আমায় অভুক্ত, অনাহারে রাখা হলো! বাপরে বাপ এই ভয়ঙ্কর লোকটার সাথে এক রত্তি ও বিশ্বাস নেই!
পরশ ভাইয়ার কাশির রেশটা যেনো বেগতিক বৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। ঐদিকে আমার হাসির ঝংকার ও মাএাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে পরশ ভাইয়ার মাথা ব্যাথার কারন হয়ে উঠছিলো! লোকটা খড়তড় দৃষ্টিতে খানিক বাদে আমার দিকে দৃষ্টিলোকন করছেন। আমাদের এহেন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাব ভঙ্গি দৃষ্টিলোকন হওয়া মাএই রুম্পা আপু কপালের ভাঁজে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে আমাদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“আশ্চর্য! হলোটা কি তোমাদের? একজন কাশছ তো আরেকজন হাসছ! মানে কি ভাই? কি এমন মহা আশ্চর্যকর কথা বলে ফেললাম আমি?”
কাশি থামিয়ে পরশ ভাই বেশ তৎপর কন্ঠে রুম্পা আপুর উদ্দেশ্যে বললেন,,
“আপনার উডবি হাজবেন্ড যদি জানতে পারেন না? উনার অগোচরেই আপনি উনাকে অপশন হিসেবে দেখছেন? আ’ম ড্যাম সিউর উনি সাথে সাথেই বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার এই কঠিন সিদ্ধান্তটা নিতে ও দ্বিধাবোধ করবেন না! আপনার উডবি হাজবেন্ড হার্ট হতেন এসব হটকারী কথাবার্তায়। মজার ছলে ও এসব কথা কখনো কাউকে বলবেন না। হতে পারে আপনার বিপরীতে থাকা মানুষটা আপনার হাসি, মশকরা যুক্ত সামান্য তম কথা গুলো ও স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছেন না। ইউ নো না? মাইন্ডে লাগবে ভীষন। পৃথিবীতে কোনো ছেলেই চাইবে না, তার পছন্দ করা মানুষটা, তার ওয়াইফ বা তার গার্লফ্রেন্ড তাকে অপশন হিসেবে দেখুক বা ভাবুক! তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করুক। তার চেয়ে ব্যাটার কাউকে দেখে অন্তত তাকে অযোগ্য হিসেবে ভাবুক! অন্য কারো সাথে তার কিঞ্চিৎ পরিমান অযোগ্যতা নিয়ে কম্পেয়ার করুক! তার বাহ্যিক সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করে অন্য কারো সৌন্দর্যে প্রশংসিত হোক। আই থিংক আপনার উডবি হাজবেন্ড তুহিন ও চাইবেন না তার উডবি ওয়াইফ অন্য কারো প্রশংসায় পঞ্চমুখ হোক! আমরা ছেলেরা, ভুলক্রমে যদি একবার ও কারো কাছ থেকে আঘাত পাই না? তবে সেই ব্যক্তিটাকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দিতে একবার নয় বরং হাজারটা বার পিছিয়ে যাই। আমাদের আঘাতের জখম খুব গাঢ় হয়, পারবেন না সেই জখমে বিন্দু পরিমান উষ্ণতার স্পর্শ ছোঁয়াতে!”
টুম্পা আপুর থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে পরশ ভাই আমার হতবাক দৃষ্টিতে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জিগ্যাসু কন্ঠে বললেন,,
“ওয়াশরুমটা কোন দিকে?”
তব্দিত ভঙ্গিতে আমি আঙ্গুল দিয়ে ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিতেই পরশ ভাই দ্রুত পায়ে হেঁটে ওয়াশরুমে প্রবেশ করলেন। রুম্পা আপু শুকনো ঢোক গিলে আমার হাতের কব্জিতে হালকা হাতে ধাক্কা মেরে বললেন,,
“কি বলল রে এসব? সব তো আমার উপর দিয়ে গেলো! বুঝলাম না, কি এমন আহামরি বলে ফেললাম আমি!”
মুখমন্ডলে রাগী ভাব ফুটিয়ে আমি তিক্ত গলায় আপুকে বললাম,,
“এমনি এমনি তুহিন ভাইয়া তোমাকে টিউব লাইট বলে না। তুমি জাস্ট যা তা!”
প্রস্থান নিলাম আমি। রুম্পা আপুর বুদ্ধি শুদ্ধি আদৌ এই জীবনে খুলবে কিনা বিধাতা জানেন। বুঝে শুনে মোটে ও কথা বলতে পারেন না এই অকালকুষ্মান্ডটা। কোন জায়গায় কোন কথাটা বলতে হবে তা ও আজ পর্যন্ত বুঝতে পারল না? অথচ ২৫ বছরের একজন প্রাপ্ত বয়সী যুবতী সে! দুদিন বাদেই তার বিয়ে! উফফফস! নিতে পারছি না এসব।
,
,
রাত ৮ টা৷ লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় ডিভানের এক পাশে জড়সড় ভঙ্গিতে বসে আছেন পরশ ভাই। হাতে জ্বলন্ত সিগারেটের বিশ্রি গন্ধ বাতাসের বেগে হুড়মুড়িয়ে নাকে ভেসে আসছে আমাদের পাশের ডিভানে। নাকে হাত চেঁপে আমি কদাকার গন্ধটা এড়িয়ে চলার যথেষ্ট চেষ্টা করছি। রাগে রীতিমতো ফুসফুস করছেন পরশ ভাই। নাকটা ফুলে, ফেঁপে রক্তিম বর্ণের রূপ নিয়েছে। কপালের অগ্রভাগে লেপ্টে থাকা চুল গুলো বাঁ হাত দিয়ে অনবরত টেনে মানুষটা পরিহিত লুঙ্গিটার দিকে ক্ষোভের দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন। হাতে কোনো বেটার অপশন পেলে নির্ঘাত পড়নের লুঙ্গিটা এক টানে খুলে উনি দাবালনে নিক্ষেপ করতেন। জ্বলে পুড়ে খাঁক হয়ে যেতো লুঙ্গিটা। সাথে উনার মনের জ্বালা টুকু ও এক নিমিষেই নিভে যেতো! বুঝলাম না, লুঙ্গিতে কোন জাতীয় এলার্জি আছে লোকটার? লুঙ্গি পড়লে সমস্যাটা কোথায়? বাঙ্গালী পুরুষদের পরিচয় তো লুঙ্গিতেই। ইতোমধ্যেই পাশ থেকে নীলা ফিক করে হেসে আমায় ঝাঁকিয়ে বলল,,
“কি অবস্থা করলে বলো তো ঐ গুমড়া মুখো পরশ ভাইয়াটার? দেখছ তো? রাগে কেমন ফুসফুস করছেন?”
“হাট! আমি ইচ্ছে করে করেছি নাকি এসব? হাত ফসকে হঠাৎ চায়ের কাপটা সরাসরি উনার প্যান্টে পড়লে আমি কি করতে পারি এতে?”
স্নিগ্ধা প্রখর সন্দেহের বশবর্তী হয়ে এক ভ্রু উঁচিয়ে আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“কেনো জানি না আমার মনে হচ্ছে তুমি ইচ্ছে করেই এই কু-কর্মটা ঘটিয়েছ আপু! তোমার মুখমন্ডলে আমি বিরূপ কিছুর আভাস পেয়েছিলাম! তোমার চিন্তাধারা মাপ করতে আমার কিন্তু খুব বেশি একটা সময় লাগে না!”
স্নিগ্ধা এবং নীলার দিকে কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমি প্রসঙ্গ পাল্টাতে ধমকের স্বরে বললাম,,
“তোদের এখানে কি হুম? আমার রুমে কি করছিস তোরা? যা পড়তে বস দুজন। বড় আপুর বিয়ে বলে পড়ালেখা একদম চাঙ্গে উঠে গেছে তাই না?”
দুজন আমার দিকে তেঁড়ে এসে সমস্বরে বলল,,
“এক্সাম তো তোমার ও কিছুদিন পর আপু। পড়াশোনা চাঙ্গে তুলে তুমি ও আমাদের সাথে এই ডিভানে কি করছ হুম? পরশ ভাইয়াকে টুকুর টুকুর দেখছ তাই না?”
থতমত খেয়ে আমি চোয়াল শক্ত করে বললাম,,
“কি বললি? পরশ ভাইকে আমি টুকুর টুকুর দেখছি?”
“হুম দেখছই তো। সাথে আমরা ও দেখছি। সেইম সেইম!”
“পড়তে যাবি কিনা বল? চাচাীমনির কাছে আমি নালিশ জানাবো?”
“তোমাকে ও আমাদের সাথে পড়তে বসতে হবে, তবেই আমরা পড়তে বসব ব্যাস!”
“এই তোরা কি আমাকে নূন্যতম ভয়টা ও পাস না? উল্টে আমাকেই শাসাচ্ছিস? তোদের তো আমি!”
দাঁতে দাঁত চেঁপে আমি দুজনের দিকে কঠোর হাত বাড়াতেই দুজন খিলখিলিয়ে হেঁসে ডিভান থেকে প্রস্থান নিচ্ছে আর বলছে,,
“মোটে ও পড়তে বসব না আমরা। বিয়ের স্টেইজ সাজানো দেখব। পরশ ভাইয়াকে ও সাথে নিয়ে যাবো।”
তড়িঘড়ি করে আমি পেছন থেকে নীলা এবং স্নিগ্ধাকে ডেকে বললাম,,
“এই নীলা, স্নিগ্ধা না। পরশ ভাইকে অযথা ঘাটাস না। উনি এসব টানা হেঁছড়া, ইয়ার্কি, দুষ্টুমি, হৈ-হুল্লোড় পছন্দ করেন না।”
দুজনই এতক্ষনে রুম থেকে প্রস্থান নিয়ে কোথাও একটা মিলিয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই আমার ছোট চাচীর বড় মেয়ে মিলি আপু হুড়মুড়িয়ে আমার রুমে প্রবেশ করলেন। শুভ্র মুখে রাগের ছাপটা যেনো অত্যধিক ভাবে ফুটে আছে। সাংঘাতিক কিছু একটা হয়েছে বোধ হয়। কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই আপু গুরু গম্ভীর ভাব নিয়ে সোজা ডিভানে আমার মুখোমুখি এসে দাঁড়ালেন। ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে আমি আপুর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,
“কি হয়েছে আপু? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?”
বুকে দুহাত বেঁধে আপু রুক্ষ কন্ঠে আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“পরশ ছেলেটা স্মোকিং করে?”
ঘটনার আকস্মিকতায় আমি ভড়কে উঠতেই আপু অধৈর্য কন্ঠে পুনরায় বললেন,,
“কি হলো বল? পরশ স্মোকিং করে?”
আপুর দিকে আমি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,
“কেনো আপু? কি হয়েছে? হঠাৎ এই প্রশ্ন জিগ্যেস করছ কেনো?”
“যা বলছি, তার উত্তর দে। প্রশ্ন তুই পরে ও করতে পারবি।”
“আজব, এসব আমাকে জিগ্যেস করছ কেনো? সরাসরি উনাকে জিগ্যেস করলেই তো পারো!”
“সময় হলে নিশ্চয়ই সরাসরি কথা বলব, এমনকি যা জিগ্যেস করার তা ও জিগ্যেস করব। এখন যা জানতে চাইছি, তার উত্তর দে?”
অপারগ হয়ে আমি মাথা নিচু করে বললাম,,
“হুম। পরশ ভাই স্মোকিং করেন!”
“ওকে ফাইন। পরশকে বারণ করবি, আজ থেকে যেনো কোনো রকম স্মোকিং না করেন। ইট’স ইনজুেরিয়াস টু হেলথ।”
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আমি আপুর দিকে তাকাতেই আপু পুনরায় আমায় প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,
“পরশের কোনো অতীত আছে? আই মিন কোনো গার্লফ্রেন্ড? ভালো লাগা বা ভালোবাসা?”
বুঝতে আর বিলম্ব হলো না, আপু পরশ ভাইয়ার উপর ইন্টারেস্টেড! এই প্রথম আপু কোনো ছেলের প্রতি এতোটা ইন্টারেস্ট প্রকাশ করছেন! ছেলে মানুষদের উপর চরম এলার্জি আপুর। কিন্তু এই প্রথম আপু একটা ছেলে সম্পর্কে এতোটা কৌতুহল প্রকাশ করছেন! তার মানে কি আপু….!
আমার অপ্রতুল ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে আপু তিরিক্ষিপূর্ণ কন্ঠে বললেন,,
“কি হলো বল?”
মাথা নিচু করে আমি আগ পাছ না ভেবেই ছোট আওয়াজে বললাম,
“না নেই!”
মুহূর্তের মধ্যেই আপু মুদ্যু হেসে রুম থেকে প্রস্থান নিলেন। মাথা উঁচিয়ে আমি আপুর যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকে প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বললাম,,
“প্রথম দেখাতেই আপু পরশ ভাইয়ার প্রতি এতোটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন? প্রথম দেখাতেই কাউকে ভালো লেগে যায় বুঝি?”
মনে কেনো জানি না বিষন্নতার মেঘ জমতে আরম্ভ করেছে। বুকটা ভারী হয়ে আসতেই আমি ধপ করে বিছানার উপর দু হাতে ভর করে বসে পড়লাম। চোখ জোড়া বুজে আমি ক্ষনিকের জন্য মাইন্ড স্থির করার প্রয়াসে লিপ্ত হলাম। আত্নীয় স্বজনদের সমাগত ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে পুরো বাড়িতে। হাঁকডাঁক, হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠছে সারা বাড়ি। কাজিনদের চেঁচামেচির আওয়াজ দু কানে স্পষ্টত। গান, বাজনার উচ্চ আওয়াজ ভেসে আসছে কর্নকুহরে। ধ্যান স্থির করতে পারছি না একরত্তি। তিক্ত হয়ে বসা থেকে উঠে আমি না চাইতে ও পরশ ভাইয়ার রুমের দিকে অগ্রসর হলাম। ভেজানো দরজাটা হালকা হাতে ধাক্কা দিয়ে আমি রুমে প্রবেশ করতেই রাগে গজগজ করে পরশ ভাই লুঙ্গির গিট্টু চেঁপে ধরে আমার সম্মুখীন হয়ে বললেন,,
“এই তোমার মধ্যে কি সামান্য মেনারসটুকু ও নেই? গেস্টদের কিভাবে আপ্যায়ন করতে হয় জানো না?”
নির্বোধ চাহনীতে আমি জিগ্যাসু কন্ঠে বললাম,,
“কি করেছি আমি?”
“একবার ও খোঁজ নিয়ে দেখছ আমি কতোটা কমফোর্টেবল ফিল করছি? এই পরিস্থিতিতে আমি নিজেকে আদৌ মানিয়ে নিতে পারছি কিনা?”
“কি হয়েছে বলবেন তো?”
“এই ডিজগাস্টিং লুঙ্গিটা আর কতক্ষন পড়ে থাকতে হবে আমার? প্যান্টটা কোথায় আমার?”
“ডিজগাস্টিং বলছেন কেনো? লুঙ্গি পড়াটা কোন দিক থেকে খারাপ? জানেন? লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় আপনাকে কতোটা পরিশুদ্ধ বাঙ্গালী মনে হচ্ছে? দেশি দেশি একটা ফিলিং আসছে!”
“ইউ জাস্ট শাট আপ। নিকুচি করেছে আমার বাঙ্গালীয়ানা। কখন কোঁমড় থেকে এই ইরেটেটিং লুঙ্গিটা খসে পড়ে আমার মান-সম্মান নিলামে উঠে গড নৌজ। যাও তাড়াতাড়ি আমার প্যান্টটা নিয়ে এসো।”
এক রোঁখা ভাব নিয়ে আমি বললাম,,
“পারব না। তাছাড়া আপনার প্যান্ট এখনো শুকোয় নি!”
দাঁতে দাঁত চেঁপে পরশ ভাই বললেন,,
“ভেজা প্যান্টটাই পড়ব। আই হ্যাভ নো প্রবলেম। যাও তাড়াতাড়ি প্যান্টটা নিয়ে এসো।”
“স্যরি। আমার অন্য কাজ আছে। প্যান্ট শুকালেই পরে প্যান্টটা পাবেন বুঝতে পেরেছেন?”
ভাবলেশহীন ভাবে আমি পরশ ভাইয়ার সম্মুখ থেকে প্রস্থান নেওয়ার পূর্বেই পরশ ভাই পেছন থেকে আমার হাতটা উনার শক্ত হাতে টেনে ধরে তেজর্শী কন্ঠে বললেন,,
“এক্ষনি আমার বাস স্টপ যেতে হবে। আম্মু, পায়েল, পিয়ালীকে পিক করতে হবে। বেশি ঘাটি ও না আমায়। ইচ্ছে করে আমার প্যান্টে চা ঢালার অভিযোগে আমি তোমার যে ঠিক কি হাল করব তুমি জাস্ট ভাবতে ও পারছ না!”
কাঠ কাঠ গলায় আমি ঘাঁড়টা সামান্য পেছন দিকে ঘুড়িয়ে বললাম,,
“ইচ্ছে করে চা ঢেলেছি মানে?”
“মানেটা তুমি নিজে ও জানো! ড্রামা করবে না একদম!”
“বুঝলাম না! অনুমানের ভিত্তিতে আপনি কিভাবে পারেন আমার উপর আঙ্গুল উঠাতে? যা আমি করি নি তাই আমার উপর চাঁপিয়ে দিচ্ছেন?”
“দুর্জন বিদ্বান হলে ও পরিতাজ্য! ইউ নো দেট না? তুমিই হলে সেই দুর্জন!”
রাগে গজগজ করে আমি এক ঝটকায় পরশ ভাইয়ার হাতটা ছাড়িয়ে তেজী কন্ঠে লোকটার সম্মুখস্থ হয়ে বললাম,,
“সেইম প্রবাদটা যদি আমি ও আপনার উপর আরোপ করি তখন হুদাই লাফালাফি করবেন না তো? আপনি ও কিন্তু দুর্জনের চে কম যান না ওকে?”
পরশ ভাই চোয়াল শক্ত করে আমার দিকে তেঁড়ে এসে বললেন,,
“ইউ….!
আচমকাই আমার দৃষ্টি পড়ল পরশ ভাইয়ার লুঙ্গির গিট্টুর দিকে। গিট্টুটা খানিক ঢিলে হয়ে আসতেই আমি জিভ কেটে চোখে, মুখে হাত চেঁপে ধরে দৌঁড়ে রুম থেকে প্রস্থান নিচ্ছি আর বলছি,,
“ইসসস! আগে তো লুঙ্গিটা সামলান! এরপর না হয় আমায় শাসাবেন!”
#চলবে…?
(কি লিখেছি না লিখেছি জানি না। একসাথে ৯ টা এক্সাম ছিলো আজ। সম্পূর্ণ ক্লান্ত আমি। পর্যাপ্ত রেস্ট না নিয়েই চেষ্টা করেছি ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট বের করে গল্পটা টাইপ করার। জানি পর্বটা খুব অগোছালো হয়েছে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর হ্যাঁ, রি-চেইক ও করা হয় নি।)