তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -৩২

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩২.

-“এই বাড়িতে নোংরামি কাজ চলবেনা ছিঃ ছিঃ বেলা তুমি এমন।

-” আজ থেকে এই বাড়ির দরজা তোমার জন্যে বন্ধ, আমার বাড়িতে কোনও নোংরামি চলবেনা।

বেলা ঘুমের মধ্যেই ছটফট করে যাচ্ছে চোখে মুখে স্পষ্ট যন্ত্রণার ছাপ মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে সে যন্ত্রণাময় কোনো স্বপ্ন দেখছে, বেলা ঘুমের মাঝেই চিৎকার করে উঠে বসে, শরীর ঘামে ভিজে গেছে কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ফোটা চোখে মুখে ছেয়ে আছে তীব্র কষ্টের ছাপ, চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে বিন্দু বিন্দু অশ্রু কনা বড় বড় করে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্যে বক্ষস্থল ওঠানামা করছে, বেলা কিছুক্ষণ নিজেকে স্থির থাকার চেষ্টা করেও পারেনা তার কানে শুধু কথা গুলো বেজে যাচ্ছে “নোংরামি” বেলা দুই হাত দিয়ে নিজের মাথার চুল খামছে ধরে হাঁটুতে মুখ গুঁজে ফুফিয়ে কান্না করে ওঠে পুরোনো সেই বিষাক্ত স্মৃতি আজকে আবারো হানা দিয়েছিলো তার চোখের পাতায় যেটা সে ভুলে যেতে চাচ্ছে তার জীবন থেকে মুছে ফেলতে চাইছে যে অধ্যায় সেটা বারবার ফিরে আসছে কোনো না কোনো ভাবে। কয়েক ঘণ্টা আগের কথা গুলো মনে করে আরো বেশি ফুফিয়ে কান্না করে ওঠে শান্তার সাথে বেলা কলে ছিল যখন শান্তা বুরহান খান আর বাকিদের সাথে কথা বলছিল বেলা কলে থেকে ওখানে হওয়া সব কথোপকথন শুনেছে বলা ভালো শান্তা তাকেই শুনিয়েছে বেলাকে যে ওরা সবাই মিলে এত এত অপমান করেছে তার যদি এক অংশ ফিরিয়ে দিতে পারে আর এইটা বেলা নিজে অবলোকন করে তাহলে একটু হলেও শান্তি পাবে। কিন্তু শান্তি হওয়ার জায়গায় উল্টে আরো বেশি করে বেলার পুরোনো ঘা তাজা হয়ে গেছে যে অভিশপ্ত দিন তার কেটে গেছে সেগুলোই আবারো যেনো তার সামনে কেউ তুলে ধরেছে। বেলা ওদের সবার কথোপকথন শোনার পর নিজেকে স্থির করে ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়ে গেছিলো কিন্তু বেলার অতীত এতটাই অভিশপ্ত ছিল যে ঘুমের মাঝেই সেই গুলো তার চোখের পাতায় দৃশ্যমান হয়েছে ঘুমের ওষুধও বেলাকে ঘুম দিতে পারিনি বেলাকে।

বেলা নিজের মাথার চুল টেনে ধরে পাগলের মত আচরণ করতে থাকে কাঁধে গলায় নক দিয়ে আচড় কাটতে থাকে বেলার সামনে যেনো সেইদিন টা উজ্জ্বল হয়ে আছে আনিসের স্পর্শ গুলো যেনো এখনও জীবন্ত ভাবছে বেলা একহাত মুখের মধ্যে দিয়ে কান্না আটকানো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মাঝে হঠাৎ করেই দুটো হাত এসে জড়িয়ে নেয় বেলাকে নিজের বুকের মধ্যে মিশিয়ে নেয়। বেলা তার অতি চেনা পরিচিত স্পর্শ পেতেই কান্না করে ওঠে চিৎকার করে এতক্ষণ নিজেকে আটকে রাখলেও আর পারেনা সামনের মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে বুক ফাটা কান্না করতে থাকে নিজের মধ্যে জমানো যন্ত্রণা দুঃখ কষ্ট গুলো কান্না হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। বেলা বুকে মুখ গুঁজে চিৎকার করে কান্না করে যাচ্ছে আর সাঁঝ বেলার মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে, হ্যাঁ সামনের মানুষটা আর কেউ নয় সাঁঝ, শান্তার ফোন পেয়ে মাঝরাতেই চলে আসে বেলার কাছে। শান্তা জানতো আজ ওদের কথোপকথন শোনার পর বেলা আরো একবার ভেঙে পড়বে এই অবস্থায় তাঁকে সামলানো তাদের খুবই কষ্ট সাধ্য হলেও সাঁঝের জন্যে নয় সে খুব সহজেই বেলাকে শান্ত করতে পারে। এর আগেও বেলাকে পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে সাহায্য করেছে বেলার জিন্দেগি হিসাবে তখন তারা কেউই জানতো না যে বেলার জিন্দেগি সাঁঝ রওশন এমনকি বেলাও জানতো না। সেদিন ওই ঘটনার পর বেলা একদম পাথরে পরিনত হয়ে গেছিলো চুপচাপ থাকতো তাকে দেখে মনে হতো একটা পুতুল ছাড়া আর কিছুই নয় তার ভিতরের সব অনুভূতি গুলো যেনো খান বাড়ির লোক আর আনিস শুষে নিয়েছিলো। সেই সময়ে ওম বেদ সারা রুহি নিশান প্রতিটা সময়ে বেলার খেয়াল রেখেছে তাকে আবারো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে গেছে। তারা দীর্ঘ সময়ে পর বেলাকে চুপচাপ পুতুল অবস্থায় থেকে ফিরিয়ে আনতে পারলেও তার মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারিনি এরপর থেকে বেলা আগের মত তাদের সাথে থাকলেও যেনো মনে হতো বেলা তাদের মাঝে নেই বেলার শরীর আছে কিন্তু তার মাঝে রুহ নেই, একদম চুপচাপ হয়েই আগের অবস্থায় ফিরেছিলো বেলা, তারা চেয়েও আবার সেই চঞ্চল বেলাকে ফিরিয়ে আনতে পারিনি আর ঠিক সময়ে বেলার জীবনে জিন্দেগি অর্থাৎ সাঁঝের আগমন ঘটে সেই আসতে আসতে আবারো আগের বেলা সেই চঞ্চল বেলাকে ফিরিয়ে আনে সাঁঝের সংস্পর্শে থেকে একটু একটু করে বেলা আবারো সেই হাসি খুশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

সাঁঝ বেলাকে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখে আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। বেলা এখনও চিৎকার করে কান্না করে যাচ্ছে সাঁঝের শার্ট ভিজে গেছে ইতি মধ্যে বেলার চোখের পানিতে পিঠে বেলার হাতে নখের আচড়ের দাগ বসে গেছে তবে এতে সাঁঝের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই সে চুপ করে বসে বেলার মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে আর বেলার শান্ত হওয়ার অপেক্ষা করছে সাঁঝ বেলার কান্না থামাতে চাইছেনা সাঁঝ চাইছে আজ যাতে বেলা তার মনে মধ্যে জমে থেকে সমস্ত যন্ত্রণা দুঃখ কষ্ট কান্না রূপে বেরিয়ে আসুক বেশ কিছুক্ষণ পর বেলার কান্নার আওয়াজ ধীর হয়ে আসে এখন বেলা শুধু ফুফিয়ে কান্না করছে। বেলাকে সাঁঝ নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে বেলার মাথায় নিজের অধর ছুয়ে দেয় গভীর ভাবে বেলাকে নিজের থেকে আলতো সরিয়ে দুই হাত দিয়ে বেলার মুখ আজলা করে তুলে ধরে অধরের দ্বারা বেলার চোখের পানি শুষে নেয়, বেলা এখনও সাঁঝ কে দুই হাত দিয়ে আকড়ে ধরে আছে। বেলার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে রেখে অধর ছুয়ে দেয় বারবার বেলার নাক বরাবর। বেলা শান্ত হয়ে বসে থাকে সাঁঝের সাথে মিশে।

-“এখন ঠিক আছো তুমি? সাঁঝ মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” হুম । আলতো স্বরে মাথা হালকা নাড়িয়ে বলে ওঠে।

-“গুড, আজকে এই চোখের পানি যেনো তোমার চোখ থেকে পড়া শেষ বিন্দু হয়। এরপরে থেকে আমি যেনো তোমার চোখে একফোটা অশ্রুকনাও না দেখি আজকেই যেনো তোমার অতীতের সমস্ত অভিশপ্ত দিনের ইতি হয়। যে মানুষ গুলো তোমার কষ্টের কারণ চোখের এই অশ্রুবিন্দুর কারণ সেই মানুষগুলোর জন্যে নিজের মনে কখনই সমবেদনা যেনো না থাকে তাদের জন্যে তোমার মূল্যবান এই অশ্রুনা ঝরে পড়ে এগুলো বহু মূল্যবান আমার জন্যে। সাঁঝের শীতল কন্ঠে বলে ওঠে।

বেলা কোনো কথা না বলে সাঁঝের গলায় নিজের মুখ গুঁজে দেয় সাঁঝ পরম আদরে বেলাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।

-“তোমাকে শান্তা ফোন করেছিলো? বেলা মৃদু কন্ঠে বলে ওঠে ।

-” হুম, আজকাল কথা এড়িয়ে যেতে ভালোই শিখেছ। সাঁঝ বলে ওঠে।

সাঁঝের কথা শুনে বেলা কোনো কথা বলেনা তবে সাঁঝের পিঠে থাকা হাত দিয়ে খামচি দেয়, বেলার এই কাজে সাঁঝ কিছু বলেনা তবে নিঃশব্দে হেসে ওঠে।

-“আমাকে এত বছর দূরে রাখার কারণ কি ছিলো সাঁঝ? সেদিন এমন কি হয়েছিলো!! আর কেনই বা তোমায় অমন অবস্থায় আমাকে দেখতে হয়েছিলো সাঁঝ? আমার ভুল না ভাঙানোর কারণ কি আমি জানতে পারি? বেলা ধীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” অবশ্যই জানতে পারো সুইটহার্ট, তোমাকে আমি অবশ্যই সব ঘটনা বলবো কিন্তু তার জন্যে তোমাকে আর কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে যেদিন আমাদের প্রজেক্ট কম্পিলিট হয়ে যাবে সেদিনই তুমি সব কিছুই জানতে পারবে কেনো তোমাকে আমি দূরে রেখেছিলাম। এতদিন রাগ অভিমান নিয়ে অপেক্ষায় ছিলে আর না হয় কয়েকটা দিন ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষায় থাকো।

বেলা কোনো কথা না বলে সাঁঝের গলায় দাঁত বসিয়ে দেয়, বেলার কামড়ে সাঁঝের ব্যাথা লাগলেও কোনো প্রতিক্রিয়া করেনা আরো শক্ত করে বেলাকে নিজের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে ধরে।

চলবে…?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here