তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -৩৩

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩৩.
বেলা নিশান বেদ ওম রুহি সারা শান্তা একসাথে স্কুল শেষে শপিং মলে ঢোকে তারা আজ একসাথে লাঞ্চ করবে সাথে শপিং ও করবে। তাই আজ একসাথে চলে এসেছে। বেলা সারা রুহি শান্তা ওম বেদ নিশান প্রথমেই লাঞ্চ করতে চলে সেকেন্ড ফ্লোরে থাকা রেস্টুরেন্টে। সবাই মিলে কর্নার এর বড় টেবিলে বসে পড়ে শান্তা সারা ওম বেদ নিশান রুহি বকবক করলেও বেলা চুপ করে ওদের কথা শুনে যাচ্ছে ওদের কিচিরমিচির আওয়াজে ওখানে থাকা বাকিরা একবার করে ঘুরে দেখে কিন্তু এতে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তারা তাদের মতো মেতে আছে। বেলা চারিদিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে আবারও ওদের কথা শুনতে লাগে সে যদি আগের বেলা থাকতো তাহলে এতক্ষণ সে নিজে এতক্ষণ চুপ করে থাকত না ওদের থেকেও বেশি কিচিরমিচির শুরু করে দিত ভেবেই বাঁকা হাসে।

বেলাদের অপর সাইটে টেবিলে সাঁঝ কয়েকজন লোকের সাথে বসে বিজনেস সংক্রান্ত কথা বলছে আর নিজেদের লাঞ্চ করছে বলা যায় এটা এক প্রকার বিজনেস মিটিং। কিছুটা চেঁচামেচির আওয়াজ শুনেই সাঁঝ বিরক্ত হয়ে কথা বলা থামিয়ে দিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই তার বিরক্তি ভরা মুখে হঠাৎ করে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে বিরক্তিতে কুঁচকে যাওয়া ভ্রুযুগল আপনাআপনি ঠিক হয়ে যায়, ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে মৃদু হাসি। সামনের টেবিলে বসা বেলার দিকে তাকিয়ে সাঁঝের দৃষ্টি আটকে যায়, সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বেলাকে তাকিয়ে দেখতে থাকে আজকে যেনো আরো বাচ্চা বাচ্চা লাগছে বেলাকে সেদিনের তুলনায় স্কুল ড্রেসে, দুই দিকে করে লম্বা লম্বা চুল গুলো কে বেঁধে রাখা সাদা শার্ট ব্লু টাই আর ব্লু স্কার্টে একদম বাচ্চা লাগছে। দুই হাতের উপর নিজের থুতনি রেখে তার পাশে থাকা বাকিদের কথা শুনছে চোখ বড় বড় করে। তবে সাঁঝ আশ্চর্য হয়ে যায় বেলার পাশে বসে থাকা সারাকে দেখে সাঁঝের মনে প্রশ্নের মেলা উঠে আসে সারা এখানে কি করছে সাঁঝের মনে পড়ে সারা বলেছিলো তার আজকে ফিরতে লেট হবে ফ্রেন্ডদের সাথে শপিংয়ে যাবে তার মানে তার বোন সারা আর বেলা ফ্রেন্ড এটা ভাবতেই সাঁঝের চোখ মুখ আরো বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

সাঁঝের মনে পড়ে প্রথম দেখার দিনের কথা সেইদিন এই মেয়ে তার দৃষ্টি কেড়ে ছিল আর এই কয়েকদিনে তো তার মন হৃদয় সব জায়গায় তার অধিকার স্থাপত্য করে ফেলেছে যে মনে কেউ কোনো দিন জায়গা পাইনি সেখানে এই মেয়ে তার রাজত্ব গড়ে তুলেছে তার অজান্তেই। সাঁঝ এই কয়েকদিন কখনো বেলার কথা ভুলে যেতে পারিনি বরং বেলাকে ভোলার চেষ্টা করেও কখনো ভুলতে পারিনি আরো বেশি করে মনে পড়েছে তবে সাঁঝ নিজকে আটকে রেখেছিলো এই বুঝিয়ে সে মেয়েটা কে মাত্র একবার দেখেছে আর এতেই কিছু হয়না যদি কখনো আবার দেখা হয় তখন আর সাঁঝ এই মেয়েকে কিছুতেই ছেড়ে কথা বলবে না ততদিন সে নিজের মনের কথা বুঝতে চেষ্টা করুক। তাই সাঁঝ এতদিন বেলার ব্যাপারে কোনও খোঁজ খবর নেয়নি শুধু অপেক্ষায় ছিল বেলার সাথে তার দ্বিতীয় সাক্ষাতের যদি বেলা তার ভাগ্যে লেখা থাকে তাহলে আবারো তার সাথে বেলার দেখা হবে আর তারপর কখনই সে বেলাকে তার চোখের আড়াল করবে না। আর আজ ভাগ্য ক্রমে সাঁঝ বেলার দেখা পেয়ে গেলো তার সাথে আবারো বেলার দেখা হয়েই গেলো। সাঁঝ বেলাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে করতে নিজের লাঞ্চ ও মিটিং শেষ করে। মিটিং শেষে সবাই চলে গেলেও সাঁঝ আর আকাশ একইভাবে বসে থাকে, বেলাদের ততক্ষণে লাঞ্চ হয়ে গেছে এবার তারা উঠে বেরিয়ে যাচ্ছে। সাঁঝ ওদের একবার দেখে নিয়ে পকেট থেকে মাস্ক বের করে পরে নেয় আকাশকে ইশারা করে এদিকে সামলে নিতে বলে সাঁঝ বেরিয়ে যায়।

সারা শান্তা রুহি ওম বেদ নিশান নিজেদের মতো শপিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে আর বেলা তাদের পিছে পিছে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছে সে কিছুই নিচ্ছে না বা পছন্দ করছেনা শুধুই দেখছে বেলা চারদিকে তাকিয়ে হাঁটার জন্যে বাকিদের থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে আর সাঁঝ ঠিক একদম বেলার পিছনে হাঁটছে বলতে গেলে বেলা যদি দাঁড়িয়ে যায় তাহলে তাদের ধাক্কা লাগবে এতটাই কাছাকাছি বেলা চারিদিকে তাকিয়ে থাকলেও সাঁঝ একভাবে বেলার দিকে তাকিয়ে আছে। বেলা সামনের দিকে না তাকিয়ে হাঁটার জন্যে সামনের জনের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিলেই পিছন দিকে থেকে সাঁঝ বেলার কোমর ধরে পড়ে যাওয়া থেকে আটকে নেয় চোখ রাঙিয়ে সামনের দিকে তাকাতে দেখতে পায় সামনের জন ইতি মধ্যে পাশ কেটে চলে গেছে। বেলা ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়ার থেকে বাঁচার জন্যে হাত বাড়িয়ে সাঁঝের কোট আকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয় বেলা এটাও দেখেনা সে কি বা কাকে আকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করছে। বেলা নিজের কোমরে কারোর শক্ত হাতের মজবুত স্পর্শ পেয়ে কেঁপে ওঠে তবে এক মুহূর্তের জন্যে তার এই স্পর্শ খারাপ মনে হয়নি বরং সেই দিনের সেই স্পর্শকে মনে করিয়ে দেয় সেই একইরকম শিহরন অনুভব করে বেলা।

-“এখনও দেখি সেই একই রয়ে গেলে আজকে আবারো ধাক্কা খেলে তুমি কি ঠিক করে রেখেছ যে তুমি সামনে তাকিয়ে হাটবেনা। সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে ফিচেল কন্ঠে বলে ওঠে।

হঠাৎ করে কানের কাছে এই কথা শুনতেই বেলা চোখ খুলে তাকায় তবে তার মুখের সামনে থাকা মুখের দিকে তাকিয়ে বেলার ভ্রু কুঁচকে যায় বেলা চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে দেখতে থাকে তার উপরে ঝুঁকে থাকা মুখের দিকে চেনা চেনা লাগছে কোথাও যেনো দেখেছে কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছেনা। বেলাকে নিজের দিকে এই ভাবে তাকাতে দেখে সাঁঝ বাঁকা হাসে তাকে যে কোথায় দেখেছে সেটা মনে করতে চাইছে সেটা বুঝতে পারে সাঁঝ।

-“আগের বারের মত এবারও আমি তোমাকে ধাক্কা লেগে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে নিলাম। বলেছিলাম না দেখে হাটবে তোমাকে ধরার জন্যে সব সময়ে আমি নাও থাকতে পারি। সাঁঝ বেলার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে কথা গুলো যাতে বেলা দ্রুত মনে করতে পারে।

সাঁঝের কথা শুনে বেলা তীক্ষ্ণ চোখে সাঁঝের মুখের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখতে থাকে এই চোখ মুখে মাস্ক ঠিক এইভাবেই হ্যাঁ তার মনে পড়েছে সেদিন বিয়ে বাড়িতে দেখা হয়েছিলো তাহলে এই সেই লোক আর কথার ধরন দেখেই তো মনে হচ্ছে সেই লোক আর এই চোখ আর মুখের এই ভোল সব কিছুই তো সেই লোকের মতো কোনো পরিবর্তন নেই হ্যাঁ এই সেই লোক।

-“তাহলে কি আমি এটা ধরে নেবো যে তুমি আমার সামনে আসলেই শুধু ধাক্কা খাও? সাঁঝ ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করে ওঠে।

সাঁঝের কথা শুনে সাঁঝের কোটে ধরে থাকা নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়, বেলার প্রতিক্রিয়া দেখে সাঁঝ নিজেও বেলাকে ছেড়ে ঠিক করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে বেলার দিকে তাকায় চোখে মুখে দুষ্টুমি ছেয়ে আছে বেলা একবার চোখ উঠিয়ে সাঁঝের মুখের দিকে তাকায় দেখে তার দিকে তাকিয়ে আছে সাথে সাথে বেলা চোখ সরিয়ে নেয় ।

-” ম্ মোটেও না আমি কেনো আপনার সাথে ধাক্কা খেতে যাব এটা শুধু একটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিল। বেলা তাড়াতাড়ি করে প্রতিবাদ করে বলে ওঠে।

-” হুম সেটা তো হবে সামনের দিকে না তাকিয়ে যদি চোখ চারিদিকে ঘুরতে থাকে তো। সাঁঝ বলে ওঠে।

সাঁঝের কথা শুনে বেলা আর কিছুই বলে না সত্যিতো সে কি বলবে সেই তো চারদিকে তাকিয়ে হাটছিলো আর তাই জন্যেতো ধাক্কা খেলো আর এই লোকের কাছে আবারো কথা শুনলো তবে এই লোকের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতেও পারেনা কেমন যেনো একটা অদ্ভূত অনুভূতি আসে এই লোকের সামনে থাকলে এই নিয়ে মাত্র দুবার দেখা হয়েছে তাদের আগের দিনও ঠিক এমনি অনুভূতি হয়েছিলো তার আর আজকেও ঠিক সেই একই অনুভূতি অনুভব হচ্ছে বেলার।

-“বেলা রাইট! সাঁঝ বেলার ভাবনার মাঝে বলে ওঠে।

-” উম! হুম । বেলা কিছুটা থতমত খেয়ে বলে ওঠে।

-“এখানে এখন কি করছো মানে দেখেতো মনে হচ্ছে স্কুল থেকে এসেছ রাইট? সাঁঝ জেনেও জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” ফ্রেন্ডদের সাথে এসেছি লাঞ্চ আর শপিং করতে। বেলা বলে ওঠে ।

-“তো ফ্রেন্ডদেরকে কই দেখতে পাচ্ছিনা তোমার সাথে। সাঁঝ চারিদিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে কিছু না জানার ভান করে বলে ওঠে।

-“উম ও ওরা সামনেই আছে আমি চারিদিকে দেখতে গিয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি।বেলা একবার তার আশেপাশে তাকিয়ে নিয়ে বলে ওঠে।

-” তো চলো ওরা যখন সামনে চলেই গেছে তখন আমার সাথেই চলো ওদের দেখতে পেলে নাহয় তখন ওদের সাথে যাবে। নাহলে আবার কোথায় ধাক্কা খাবে তখন তোমাকে ধরার কেউ হয়তো নাও থাকতে পারে। সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

বেলা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায় এই লোক কথায় কথায় তাকে ধাক্কা খাওয়ার কথা বলে আরে বাবা সে নাহয় অন্য দিকে তাকিয়ে হাঁটার জন্যে ধাক্কা খেয়েছে তো কি হয়েছে তার জন্যে কি বারবার বলতে হবে। সাঁঝ বেলার প্রতিক্রিয়া দেখে নিঃশব্দে হেসে বেলার সাথে পা বাড়ায়।

হঠাৎ করেই দরজায় নক করার শব্দে বেলার ঘোর কেটে যায় বেরিয়ে আসে তার ভাবনার স্মৃতির পাতা থেকে এতক্ষণ সে কেবিনে বসে তার সাথে সাঁঝের দ্বিতীয় সাক্ষাৎয়ের কথা ভাবছিলো চোখের পাতায় উঁকি দিচ্ছিল সেই দিন যেদিনের পর থেকে তার জীবনের সাথে সাঁঝের নাম জুড়ে গেছিলো সেই দ্বিতীয় দেখার পর থেকেই তাদের দুজনের সমীকরণ আলাদা হয়ে গেছিলো অজানা অচেনা থেকে হঠাৎ করেই চেনা পরিচিত হয়ে উঠেছিলো তারা শুধু চেনা পরিচিত নয় তার থেকেও বেশি কিছু হয়ে উঠেছিলো সাঁঝ বেলার কাছে।

চলবে….?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here