#তোর_নেশালো_শহরে
#Eshika_Khanom
Part: 07
মালি উপরে তাকিয়ে এরিককে দেখতে পেল। আর সে জোড়ে চেচিয়ে বলে উঠল,
এরিক বাবা আপনি আবার….
মালি এটা বলার সাথে সাথে সেই ব্যক্তি যে মাত্র গাড়ি থেকে বেরিয়েছে সে উপরে তাকিয়ে এরিককে দেখতে পেল। তারপর সে বলে উঠল,
এরিক মাই জান!
ব্যস এরিক দিল দৌড় তার ঘরে। এরিক তার রুমের দরজা আটকে দিল। বেলকনির সাথে সংযুক্ত গ্লাসের দরজা আটকে দিল। জানালা আটকে দিল। এরপর ফোন নিয়ে বসে এরোনকে কল দিলো। এরোন তখনও ঘুমিয়ে ছিল। আসলে রাতে অনেকক্ষন জেগে ছিল সে, তাই এখন পরে পরে ঘুমাচ্ছে। একই বাড়িতে থাকার পরও ফোনে কল দিয়ে এরোনের ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেওয়ার ফলে এরোনের এরিকের প্রতি খুব রাগ হচ্ছে। বিরক্তিমাখা মুখ নিয়ে এরোন এরিকের কল রিসিভ করল আর বললো,
খেয়ে দেয়ে কাজ নাই তোর? একই বাড়িতে থেকে, পাশাপাশি রুমে থেকে কল দেওয়ার মানে কি?
-ঘুমিয়ে ছিলি এরোন?
-নারে, আমার প্রিয় ভাইটা কল দিবে এই আশায় ফোন ধরে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
-থাক এতো ভালোবাসা দেখাতে হবেনা। তুই বল উনি এখানে কি করছে?
-কে?
-আরে উনি।
-কে?
-হেনা ফুপ্পি।
-কি হেনা ফুপ্পি! তুই এনাকে কই পেলি?
-আমাদের বাড়িতে।
-কি?
-হুম।
-ফুপ্পি এখানে এতো সকালে কি করে?
-আমি জানিনা কি করে। তবে এইটুকু জানি আজ আমাদের রক্ষে নাই ভাই। তার উপর তো আমি আরো বড় অকাম করেছি।
-কি?
-সকালে তো প্রতিদিনই আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কফি খাই।
-হ্যাঁ তো?
-আরে আজ ওনার এন্ট্রি দেখে কফি মুখ থেকে পড়ে যায়। আর সেই কফি গিয়ে পড়ে মালির উপর।
-কাজ সারছে! তুই আবার এই কাজ করলি। তুই কি আর কাউকে খুজে পাস না? মালি আংকেলের উপরই তোর মুখের কফি ফালাতে ইচ্ছে হয়েছিল।
-আরে ভুল করে পড়ে গিয়েছে। আমি তো ভাবছি এরিন না আসলেই হয় এখন।
-এবার যদি তোর আর এরিনের বিয়ের কথা বলতে আসে?
-আমি তোর সাথে বিয়ে দিয়ে রাহিকে নিয়ে পালিয়ে যাব।
-আর তোকে আমি পচা ডোবায় চুবিয়ে মারবো।
-তোর রুমের দরজা খোলা?
-হুম।
-তুই পাগল? জলদি লাগিয়ে ফেল।
-হ্যাঁ ধন্যবাদ রে। আমি ফোন রাখি, দরজা জানালা লাগিয়ে আসি।
-হুম সাবধানে থাকিস। শুভকামনা তোর জন্যে।
-ওইটা তোর জন্যে। কারণ তোর শুধু হেনা ফুপ্পি ঝামেলা না তার সাথে এরিনকে নিয়েও ঝামেলা।
-রাখ।
এবার এরোন জলদি উঠে গিয়ে দরজা জানালা লাগিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। আর এরিক ঘরে বসে আয়াতুল কুরসী পড়া শুরু করে দেয়।
ড্রইংরুমে সোফাতে বসে গল্প করছে হেনা আর আফিয়া ( এরোনের মা)। তারা এক বিষয়ে আলাপ থেকে অন্য বিষয়ে আলাপ শুরু করছে। এতে করে যে কত সময় অয়ার হয়ে যাচ্ছে অথচ তাদের এতে কোনো খেয়ালই নাই। আজ এরোন এরিকও রুম থেকে বের হয়নি সেটার খেয়ালও নাই হেনার সাতগে গল্প করতে করতে। হঠাৎ করে ননদকে পেলে যা হয়। এরোন আর এরিকের কথা হেনা ফুপ্পিই উঠায়। তাও এরিনা সম্পর্কে কথা বলতে বলতে। হেনা ফুপ্পি বলছিল,
আমার এরিনাকে আমার সাথেই আনতে চাইছিলাম ভাবি। কিন্তু মেয়েটাকে তো জানেনই ভাবি, ওর প্র্যাক্টিস সবসময়ই আগে থাকে। তাই বলেছে ব্যডমিন্টন ক্লাবে আগে যাবে আর সেখানে থেকে একেবারে সন্ধ্যায় ফিরবে। আর এরিকও তো যাবে তাইনা ভাবি?
-হুম যাবে কিন্তু ওকে তো সকাল থেকে দেখতেই পেলাম না।
-আমি তো দেখলাম বেলকনিতে দাড়িয়ে কফি খাচ্ছিল। আমি একটু সুন্দর করে ডাকলাম আর রুমের ভিতরে ঢুকে গেল। মনে হয় লজ্জা পেয়েছে আমার এরিক।
-হুম (হতাশ হয়ে)
-তা তুমি এরোনের বিয়ে কবে দিবা ভাবি?
-এরোন যখন চাইবে।
-এত চাওয়ার উপরও তো নির্ভর করলে হবেনা, এরিকও তো আছে নাকি। আমি চাই এরোন বিয়ে করে ফেললে জলদি এরিন আর এরিকের বিয়ে দিয়ে দিতে।
-এরিন আর এরিকের মত থাকতে হবে তো হেনা
-এরিন প্রথম থেকেই রাজি। আর আমার এরিক তো আমার সোনার টুকরো ছেলে। এরিক বিয়েতে অমত করবেই না।
এসব কথা হচ্ছিল তখন রাহি তার প্রয়োজনীয় সামগ্রী ব্যাগে নিয়ে ক্লাবে যাওয়ার জন্যে বাহিরে যাচ্ছিল। খালামনি রাহিকে দেখে প্রশ্ন করে,
আরে রাহি তুমি এই সময় কই যাও?
-ব্যাডমিন্টন ক্লাবে খালামনি।
-তুমিও ব্যাডমিন্টন ক্লাবে আছো? কোনটায়?
-খালামনি এরিক যেটাতে আমিও সেটাতেই।
তখন হেনা বলে উঠলো, এই মেয়ে কে গো ভাবি?
খালামনি বলল, আমার ছোট বোনের ছোট মেয়ে রাহি।
তখন হেনা ফুপ্পি রাহিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
ওহ তুমি তাহলে এরিকের খালাতো বোন।
-জ্বি। আসসালামু আলাইকুম।
-ঠিক আছ ঠিক আছে। তবে এরিক তো তোমার বড় আর তোমার খালাতো ভাই হয়? তুমি ওকে নাম ধরে ডাকলে কেন? স্বাভাবিক ম্যানার্স নাই তোমার নাকি?
-আন্টি এরিক আমার খালাতো ভাই সেটা আমি যেদিন থেকে জানি তার আগে থেকে এরিক আমার বন্ধু হয়। তাই হুট করে ওকে ভাই বলে ডাকতে পারছিনা আমি। এরিক আমার খালাতো ভাই হলেও আমার জানামতে প্রথমে আমার বন্ধু ছিল। তাই আমি এখন ওকে ভাই ডাকতে পারব না। আর এএ এরিকেরও কোনো সমস্যা নাই।
-সেটা তোমাদের শিষ্টাচারের ব্যাপার। তোমাকে যে যা শিখিয়েছে তুমি তো এমনই করবে তাইনা? এসব শিক্ষার উপর নির্ভর করে।
এরিক তখন সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল,
আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমায় কি বলে ডাকবে তা নিয়ে তোমার চিন্তা না করলেও চলবে ফুপ্পি।
হেনা তখন বলল, এইতো আমার এরিক এসে পড়েছে।
-আসসালামু আলাইকুম ফুপ্পি।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা।
-আম্মু আমি আর রাহি বেরোলাম।
খালামনি বলল, নাস্তা করবিনা?
এরিক বলল, রাহির সাথে বাহিরে খেয়ে নিব।
রাহি বলল, আমি কি বলেছি আমি তোমার সাথে যাব এরিক?
এরিক তখন রাহিকে চোখ মেরে বলল, আরে রাগ কইরো না তো আর। আমার তোমার সাথে কাজ আছে তাই তুমি আমার সাথেই যাবে।
খালামনি তখন বলল, হ্যাঁ রাহি আলাদা যাওয়ার দরকার নাই। তুমি এখন থেকে এরিকের সাথেই যাবে।
রাহি বলল, কিন্তু খালামনি?
হেনা বলল, থাক ভাবি, মেয়েটা আলাদা যেতে চাইলে আলাদাই যাক। আর এরিক তুমি ফেরার সময় এরিনকে নিয়ে ফিরবে কেমন।
এরিক মনে মনে বলল, ওইতো আরেক প্যারা।
খালামনি হেনা ফুপ্পির কথার প্রতিউত্তরে বলল,
না রাহি তুমি এরিকের সাথেই যাবে এবং ফিরবে। এটাই আমার শেষ কথা। আর শুনো এরিক তুমি এরিনকেও সাথে নিয়ে ফিরবে আম্মু।
এরিক বলল, ওকে আম্মু। চল রাহি।
রাহি মাথা নিচু করে বলল, হুম এরিক চল।
তখন হেনা ফুপ্পি মাঝে দিয়ে বলল,
শুনো মেয়ে এখন থেকে ভাইয়া বলা শুরু কর এরিককে। আমিও এটা পছন্দ করিনা আর আমার এরিন তো একদমই পছন্দ করেনা।
এরিক বলল, আরে রাহি তুমি চল তো।
এরিক রাহির হাত টেনে নিয়ে চলে গেল। আর হেনা ফুপ্পি ভ্রু কুচকে তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল।
মাঝপথে এরিক রাহিকে নিয়ে বাহিরে খেতে চাইলেও রাহি নাস্তা করবেনা জানায়। তাই এরিকও আর নাস্তা করেনি। দুইজনে ক্লাবে চলে আসে।
ক্লাবের মাঠে প্র্যাক্টিস করছিল এরিন। এতোক্ষণে তো বুঝেই গিয়েছেন এরিন হলো এরিক আর এরোনের ফুপাতো বোন। এরিন রাহি আর এরিককে একসাথে প্রবেশ করতে দেখে শট মিস করে আর প্রচণ্ড রেগে যায়। এরিনের হাতে কর্ক ছিল আর রাগে সে এটা ছিড়ে ফেল টেনে। এটাই মনে হয় হিংসা। তার হাত কেটে যায়। সে রেগে প্র্যাক্টিস ম্যাচ ছেড়ে সেখানে থেকে চলে যায়।
চলবে……
(আজকের পর্ব কেমন লাগলো তা জানবেন প্লিজ। আর অনেকে কেন এরিকের বাবা মনে করেছিলেন তা বুঝলাম না। ভুলত্রুটি মাফ করবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের আশা করছি)