তোর নেশালো শহরে পর্ব ৫+৬

#তোর_নেশালো_শহরে
#Eshika_Khanom
Part: 05

সবকিছু গোছাচ্ছে রাহি। প্রায় তার গোছানো শেষই বলা যায়। এমন সময় রুমের দরজার কেউ নক করল মনে হল তার। রাহি বুঝতে পারে যার এসে তাকে নিয়ে যাওয়ার কথা সেই হয়তো এসেছে। কিন্তু কে আসবে তা তো সে প্রশ্ন করেনি। এখন বুঝবে কিভাবে? পরে রাহি আবার ভাবলো এখন এই সময়ে আর কেই বা আসতে পারে। রাহি এসব ভেবে দরজাটা খুলে দিলো। কিন্তু দরজাটা খোলার পর সে অবাকের সপ্তম আসমানে পৌছে গিয়েছে। এরিক হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে দরজার পাশের দেয়ালে। এরিক রাহিকে দেখে তার ভ্রুযুগল নাচিয়ে চোখের উপর থাকা রোদচশমা খুলে ফেলে। রাহি এখনো হা হয়ে তাকিয়ে আছে। এরিক রাহিকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে ঢুকে যায়। রাহি এতোই অবাক হয়েছিল যে সে এটা প্রথমে খেয়াল করেনি। কিন্তু যখন তার খেয়াল হয় তখন সে পিছনে ঘুরে দেখে এরিক তার বেডের উপরে পায়ের উপর পা উঠিয়ে বসে আছে। চরম রেগে যায় রাহি। এরিকের সামনে এসে বলে, এই তোর সাহস তো কম না তুই এতো বাজে কাজ করার পরও আমার রুমেতে আমার বেডের উপর বসে আছিস?
-এটা তোমার রুম?
-হ্যাঁ।
-এটা তো মিহিরও রুম।
-তুই আমার বোনকে কিভাবে চিনলি?
-এই তুমি আমাকে বারবার তুই করে বলছ কেন?
-তোর মতো একটা বাজে ছেলেকে আমি আর কি বলব? যে মেয়েদের অশ্লীল চিরকুট পাঠায় সে তো এর চেয়েও খারাপ ব্যবহারের যোগ্য।

এরিক এবার রেগে গেল খুব। সে এই মিথ্যা অপবাদ কেন বয়ে বেড়াবে? না সে পারবে না। এরিক বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। রাহির সামনে এসে রাহির চোখে চোখ রেখে বলে,
ওই চিরকুট তোমায় আমি পাঠায়নি। এই কথাটা যত জলদি নিজের মাথায় ঢুকাতে পারবে ততই ভালো হবে তোমার জন্যে।
-মিথ্যা কথার একটা সীমা থাকা উচিত মিস্টার এরিক। কি প্রমাণ আছে আপনার কাছে যে আপনি আমায় ওই চিরকুট পাঠাননি?
এরিক এবার রাহির এক হাত জোড়ে চেপে ধরে বলে,
তোমার কাছে কি প্রমাণ আছে যে ওই চিরকুট আমিই পাঠিয়েছি তোমায়?
-ওই চিরকুটের শেষে E লিখা ছিল।
-ওই অক্ষর দিয়ে কি আল্লাহর দুনিয়ায় অন্য কোনো মানুষ নাই? আমার নিজের ভাইয়ের নামও তো E দিয়ে শুরু।
-তাতে কি? সে তো আর ওই ক্লাবের মেম্বার না।
-ওই ক্লাবে কি E দিয়ে নাম শুরু আর কোনো মেম্বার নাই?
-অবশ্যই আছে। কিন্তু কার ইচ্ছে থাকবে আমার সাথে এমন অশ্লীলতা করার। সেটা শুধু আপনার আছে মিস্টার এরিক আহমেদ। (এরিকের দিকে আঙ্গুল তুলে বলল রাহি)
-কেন তোমার আমাকে সন্দেহ হয় রাহি?
-সন্দেহ? আমি তো পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখি যে এই কা আপনিই করেছেন। মেয়েদের হ্যারেস করাও কিন্তু একটা গর্হিত অপরাধ।
-একদিন এই উল্টোপালটা বিশ্বাসের জন্যেই ঠকবে তুমি রাহি। তখন তুমি নিজের ভুল বুঝতে পারবে।( রাহির হাত ছেড়ে দিয়ে বলল এরিক)
-আমি কোনো ভুল করিনি এরিক।
-বাদ দাও।
-হুম চলে যান এখানে থেকে। এমনিতেও আমি খুব ব্যস্ত।
-তা দেখতেই পারছি। চল আমার সাথে।
-আমি আপনার সাথে আবার কই যাব?
-কেন তোমার খালামনির বাড়ি। ওহ হ্যাঁ তোমাকে তো বলাই হয়নি, আমি এরিক, তোমার খালামনির ছোট ছেলে। আমার সাথেই তোমায় ওখানে আজ যেতে হবে।
-কি?

এটা বলেই রাহি হঠাৎ বেহুশ হয়ে গেল। বেহুশ হয়ে পড়ে যেতে নিলে এরিক রাহিকে ধরে ফেলে। এরিক রাহিকে বেডে শুয়িয়ে দেয়। কিন্তু এবার তো এরিক পড়ল বেকায়দায়। এবার ও করবে কি? এমনিতেই এইভাবে অন্য কেউ ওদের এখানে দেখলে নিশ্চিত খারাপ কিছু মনে করবে। কিহু হওয়ার আগেই তাই সে ম্যানেজারের রুমে দৌড় লাগালো।

______________________________

এরোনের ড্রেসিং করিয়ে দিচ্ছে একজন সার্ভেন্ট। তার পাশে বসে আছি আমি আর তার মা। খালামনি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। আর এরোন ক্ষতস্থানে মলম লাগাচ্ছে বলে মাঝে মাঝে ব্যথাসূচক শব্দ মুখ থেকে বের করছে। খালামনি এবার এরোনকে বললেন,
তুই বলবি আমায় আসলে কি হয়েছে তোর? তুইও বলছিস না আর মিহিও বলছে না। মিহি তুই অন্তত বল আমায়।

আমি এবার পড়ে গেলাম ফ্যাসাদে। আমি খালামনিকে ইনিয়েবিনিয়ে বললাম,
খালামনি আমি ওনাকে রাস্তায় এভাবে পেয়ে সামনের ক্লিনিকে নিয়ে যাই। তারপর একটু ড্রেসিং করিয়ে এখানে নিয়ে আসি। এখন তো আবার আপনারাই ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করাচ্ছেন।
– তা তো ঠিক আছে। কিন্তু এরোন তুই বলনা তোর এই অবস্থা হল কি করে?

এরোন এবার হুমকি দিয়ে বলল,
মা তুমি যদি আমায় আরেকবার এই প্রশ্ন করেছ তো আমি রাতে খাব না বলে দিলাম।

খালামনি এবার রেগে গিয়ে বললেন,
হয়েছে আর বলতে হবেনা। কিছু হলেই খাওয়ার ব অন্য কিছুর হুমকি দেয় জানো মিহি মা। আমার আর ভালো লাগেনা।

আমি তখন হেসে বললাম, খালামনি এরোনকে বিয়ে করিয়ে দেন। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।

কথাটা আমার বলতে দেরি হয়েছে কিন্তু আমার দিকে এরোনের অগ্নিদৃষ্টিতে তাকাতে দেরি হয়নি। এরোন আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়েছে যেন এবার আমায় আস্ত গিলে খাবে। আমি তাই খালামনিকে বললাম,
খালামনি দেখ খালি রাগী চোখে তাকিয়ে আমায় ভয় দেখায়।

এরোন সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয়। খালামনি এরোনকে বলে,
তুই আর যা করিস, আমার মেয়ে দুইটাকে কিছু বললে তোদের একদিন কি আমার একদিন।

এরোন মুখ ঘুরিয়ে বলল, হ্যাঁ এখন তো আমায় আর এরিককে তুমি ভুলেই যাবা, মিহি আর রাহিই তোমার সব।

খালামনি বললেন, তোদের কেন ভুলবো আমি? আর রইল বাকি মিহি আর রাহির কথা। সবসময় সায়মার মুখে ফোনে কথা বলতে গিয়ে ওদের ব্যাপারে শুনেছিলাম। সায়মার মৃত্যু শুনার পর কত খুজেছি এদের তবুও পাইনি। আর এখন আমি এদের কি এভাবে ছেড়ে দিব নাকি? মোটেও না। মিহি আর রাহি সারাজীবন আমার কাছেই থাকবে।

আমি বললাম, খালামনি তাই বলে এভাবে এখানে?

খালামনি বললেন, বেশি কথা বলবি তো তোকে ঠাসিয়ে এক চড় দিব।

আমি বললাম, হ্যাঁ এই ভয়েই তো তখনও আমি কিছু বলিনি। চুপ করে রাহিকে বুঝিয়ে আসতে বলেছি।

খালামনি বললেন, এই জন্যেই তোকে আমার ভালো লাগছে বেশি।
____________________________

মুখে ভেজা কিছু অনুভব করে রাহি পিটপিট কর চোখ খুলে সামনে এরিককে দেখতে পেল। দেখলো এরিক ওর মাথার কাছে বসে আছে। রাহির মাথাটা ঝিম ধরে আছে। রাহি উঠে বসার চেষ্টা করল। কিন্তু তার খুব দুর্বল লাগছে। তাই সে উঠে বসতে পারছেনা। এরিক রাহির অবস্থাটা বুঝতে পেরে রাহিকে উঠে বসতে সাহায্য করল। রাহি বসার পর এরিক রাহিকে প্রশ্ন করল,
এমন বেহুশ হলে কেন?
-আপনি আমায় যে শক দিয়েছেন আমি বেহুশ না হয়ে পারি?
-এখন যেতে পারবা না মনে হয়।
-আপনি একটু ব্যাগগুলো গাড়িতে রেখে আসেন, আমি এরপর নামছি। কিন্তু আমাকে একটু আপনার ধরে নিয়ে যেতে হবে। মনে করেন এটা সাহায্য, এটার জন্যে আবার আমার মাথায় উঠে বসবেন না।
-যথা আজ্ঞা মহারানী।

গাড়িতে এরিকের পাশের সিটে বসে আছে রাহি। দুইজনের মধ্যেই পিনপিন নীরবতা বিরাজমান। এরিক রাহির হাতের উপর হাত রাখলো। রাহি হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে বুঝতে পারে এটা এরিকের স্পর্শ। রাহি চট করে হাত সরিয়ে ফেলে। রাতের রাস্তাটা খুবই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি করেছে দুইজনের জন্যে। এরিক নীরবতা ভেঙ্গে বলল,
এর আগেও আমরা কয়েকবার একসাথে এই গাড়িতে চড়ে ঘুরেছি, তাইনা রাহি?
-হুম।
-তখন কি এতো নীরবতা ছিল?
-তখন পরিস্থিতিও অন্যরকম ছিল। এখন অনেক কিছু বদলেছে।
-কিছুই বদলায়নি।
-চুপ কর না। আমি তোমার থেকে দূরে থাকতে চাই তুমি বুঝতে পারছ না?
– তুমি চাইলেও আমার থেকে দূরে যেতে পারবেনা রাহি। তুমি যতই আমার থেকে দূরে সরে যেতে চাইবে ততই তোমায় আমার কাছে আসতে হবে।
#তোর_নেশালো_শহরে
#Eshika_Khanom
Part: 06

রাতে খোলামেলা পরিবেশে মৃদু শীতল বাতাস অত্যন্ত রোমাঞ্চকর। আর সেই পরিবেশ যদি থাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যতে ভরপুর, গাছপালা আর ফুলে ভরা তাহলে তো কোনো কথাই বাকি থাকেনা। মাঝে মাঝে এই আবহাওয়া শরীরে আজব শিহরণ দিয়ে যাই। আবার রাতে সদ্য ফোটা ফুলে নিজে উষ্ণ স্পর্শে ছুয়ে দেওয়া কতোটা মনোমুগ্ধকর তা যারা অনুভব করেছে তারাই বর্ণনা করতে পারে। এক অদ্ভুত আনন্দ খেলে যায় মনের মধ্যে। সেই আনন্দই আজ উপভোগ করতে পারছি আমি। জীবনের প্রথম এত শান্ত আর মনোমুগ্ধকর পরিবেশ উপভোগ করে বুঝতে পারছি মাঝে মাঝে জীবন আমাদের অনেক সুন্দর উপহার দেয় আমাদের। খালামনিদের বাড়ির বাগানে এখন বসে আছি আমি। এখানের সৌন্দর্য যত শব্দেই বর্ণনা করি না কেন কম পড়বে। রাহিকেও নিয়ে আসতে মন চাইছিল আমার কিন্তু মেয়েটার শরীর ভালো না যা দেখালাম। তাই খুব জলদি ঘুমিয়ে পড়েছে। এরিক বলেছিল তাকে দেখে মেয়েটা নাকি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। বলি হারি মেয়েরে বাবা! এরিককে দেখে অজ্ঞান হওয়ার কি আছে। এরিক তো আর কোনো ভূত না। আমার আবার চিন্তা হচ্ছে অন্য বিষয়ে। আজ আমি বারে যাইনি কাজ করতে। একদিন যাইনি এতেই অনেক বকা দিবে আমায়। তারপর খালামনি যদি আমার এই কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তবে আমি কি করব? নাহ কিছু বুঝতে পারছিনা আমি কি করব। আমি বগানে হাটতেই থাকলাম। দূরে একজনের আবছায়া দেখতে পেলাম আমি। কে সে? ভূত নাকি? নাহ এই শহরে ভূত থাকবে কিভাবে? কিন্তু এই সময়ে এখানে কেই বা দাঁড়িয়ে আছে এভাবে? ব্যপারটা দেখতে হবে তো। আমি গিয়ে মানুষটার একদম পিছনে দাড়ালাম। আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই সে আমায় বলল,
এতো রাতে এখানে কি করছ মিহি?

বারে ইনি আমায় চিনল কিভাবে? আর এতো এরোনের কন্ঠ। তাহলে এরোনই দাড়িয়ে আছে আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। যাক তাহলে একটু নিশ্চিন্ত আমি। এরোনকে ভয় পাওয়ার কিছু নাই। মনে মনে এসব ভাবছি তখন আবার এরোন সেই অবস্থাতেই শান্ত গলায় প্রশ্ন করল,
কি তোমাকে একটা প্রশ্ন করেছি উত্তর দাও না কেন?

এরোনের এই শান্ত গলা আমাকে অনেক ভাবিয়ে তুলছে। দুইদিন হয়েছে তার সাথে আমার পরিচয়। তাও অস্বাভাবিকভাবে। কিন্তু তাকে বিশ্বাস করা যায় এটা বুঝেছি। সে তো এতো শান্ত গলায় কথা বলেনা।

এবার এরোন পিছনে ঘুরলো। আমি তার চোখ মুখ দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। কেমন যেন বিধ্বস্ত লাগছে তাকে। এমন মনে হচ্ছে যেন জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু সে হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু তাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? আমি কৌতুহলবশত প্রশ্ন করেই ফেললাম। আমি বললাম,
একি এরোন আপনার এই অবস্থা কেন?
-এতো রাতে এখানে কি করছ?
-এইতো একটু ঘুরছিলাম। বলেন আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
-এমনি। তুমি আমায় তুমি করে ডাকতে পারো। কারন আমি তোমার খালাতো ভাই হই।
-না আমি এভাবেই কম্ফোর্টেবল।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-হুম।
-রাহি কোথায়?
-ঘুমিয়ে পড়েছে।
-জানো আজ আম্মু অনেক খুশি হয়েছে তোমাকে পেয়ে আর রাহিকে পেয়ে। যখন খালামনির ওফাতের খবর পেয়েছিল তখন অনেক কষ্ট পেয়েছিল আম্মু। অনেক খুজেছে তোমাদের আব্বু আর আম্মু। আর আজ তোমাদের পেল।
-খালু কোথায়?
-ফ্রান্সে, ব্যবসার কাজে।
-ওহ, আপনার কি হয়েছে?
-তুমি বুঝবে না।
-কেন বুঝবে না?
-কারণ তোমার আমার মতো পরিস্থিতি হয়নি। আর আল্লাহ না করুক এমন যাতে তোমার সাথে এমনকি কারো সাথেই কখনো না হয়। ভালোবাসার মানুষ যখন ধোকা দেয় আর মিথ্যে কথা বলে তখন বুকটা ফেটে যায় মিহি।

আমি বুঝতে পারলাম তার ভালোবাসার প্রিয় মানুষ তাকে ধোকা দিয়েছে। মনে মনে খুব কষ্ট লাগলো তার জন্যে। হায়রে দুনিয়া! প্রকৃত ভালোবাসার কদর এখন আর কেউ করেনা। আসলেই একেক মানুষ একেক দিক দিয়ে অসহায়। আমি এরোনকে বললাম,
শেয়ার করুন, একটু হালকা লাগবে।
-কাকে শেয়ার করব আমি? আর হালকা লেগেই বা কি হবে? আমার ভালোবাসাকে তো আমি ফিরে পাব না।
-যে আপনাকে ধোকা দিয়েছে সে অমানুষের পরিচয় দিয়েছে। আপনি কেন নিজে তাকে ভালোবাসে একজন হীন মানুষকে ভালোবাসে ভালোবাসার মতো পবিত্র একটা জিনিসকে অপমানে করবেন?
-এখানে ভালোবাসাকে অপমানের কি আছে?
-অবশ্যই আছে। যে ভালোবাসার যোগ্য না তাকে ভালোবাসা মানে ভালোবাসাকে অপমান করা। ভালোবাসার অপচয় করা। এতে নিজেও মানুষ নিজেকে ছোট করে।
-সত্যি?
-হুম।
-রিয়াকে তো ভালোবাসি আজ চার বছর ধরে। ও তো বলতো আমায় ভালোবাসে, তাহলে আজ কেন এমন করল?
-কি করেছে সে?

এরোন আমাকে সবকিছু বিস্তারিত বলল। খুব রাগ হতে লাগলো রিয়ার প্রতি আমার। মানুষ চেয়ে এতো ভালোবাসার মতো মানুষকে পায় না। আর ও টাকা পেয়ে এমন একটা হীরা হারালো। ওর যায়গায় আমি থাকলে এরোনকে কখনোই হারাতে দিতাম না। অনেক ভালোবাসতাম এরোনকে। মানুষ এতো নিচু স্বভাবের হয় কিভাবে? আমি এরোনকে বললাম,
বন্ধু হবেন আমার?
-আমি কেন তোমার বন্ধু হতে যাব? (অবাক হয়ে)
-ইচ্ছে না হলে প্রয়োজন নাই। তবে আমি আপনায় বন্ধু হিসেবে একটা কথা বলি?
-কি কথা?
-আপনি রিয়ার জন্যে নিজে এভাবে থাকবেন না। ওকে দেখিয়ে দিন যে আপনিও পারেন নিজের জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে। রিয়াকে না পেলে আপনি মরে যাবেন না, বরং ওর মতো একটা কালনাগিনী আপনার জীবনে না থাকলে আপনি অনেক ভালো থাকবেন এটা ওকে বুঝান। দেখবেন আপনি নিজেও ভালো থাকবেন আর আপনার ওর থেকে প্রতিশোধ নেওয়াও হবে।
-অনেক ভালো পরামর্শ। এবার তুমি যেতে পারো, আমায় একটু একা থাকতে দাও। ( হাত জোড় করে দেখিয়ে বলল এরোন)
-হুহ ভালো মানুষের তো দামই নাই এখন।
-হু নাই তুমি যাও তো।
-যাচ্ছি, আপনার বাড়ি আপনার সব, আমি তো আশ্রিতা, খালামনি রেখেছে বলে সহ্য করছেন। তাই ভালো কিছু বললেও আপনার ভালো লাগবে না।
-এই তুমি যাবে?

এরোনকে আর কিছু বলার সূযোগ দিলাম না আমি। দৌড়ে চলে আসি আমি সেখানে থেকে। দরজা লাগিয়ে আমি বিছানায় চুপটি করে বসে রইলাম। একসময় ঘুমিয়ে গেলাম।
_________________________

সকালবেলা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে এরিক। এটা এরিকের নিত্যদিনের অভ্যাস। সে কফি খেতে খেতে বাহিরের দৃশ্য উপভোগ করে। এরিকের বেলকনি থেকে বাহিরের রাস্তা দেখা যায়। সে প্রতিদিন ব্যস্ত মানুষদের দেখে, তাদের চলাচল দেখে। সে দেখে কেউ কারো জন্যে থেমে থাকেনা। কারো কারো সাথে কথা নেই, সবাই এগিয়ে চলে নিজের মতো। এটাই জীবন, যেটা কারো জন্যে থেমে থাকেনা। আর থেমে যাওয়ার যে ভয়টুকু প্রথমে থাকে সেটা হলো আবেগ। আবেগ আমাদের এভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। সে তার দৈনিক রুটিন অনুযায়ী আজও তাই করতে বসেছে। সকাল ৬টা ৩০ বাজে এখন। একটু পর আবার নাস্তার জন্যে নিচে ডাকবে। তারপর আবার ব্যাডমিন্টন প্র‍্যাক্টিস। ব্যস্ত জীবন পার করছে সবাই। হঠাৎ সে তার বাড়ির সদর দরজা দিয়ে একটা গাড়ি প্রবেশ করতে দেখলো। মূহুর্তে তার ভ্রযুগল কুচকে গেল। সে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকলো এই সময়ে তাদের বাড়িতে কে এসেছে তা দেখার জন্যে। গাড়ি এসে থামলো, গাড়ির দরজা খুলে দিল ড্রাইভার। পরমূহূর্তে যে বেরিয়ে আসলো তাকে দেখার জন্যে একদমই প্রস্তুত ছিলো না এরিক। মুখে যে কফিটুকু ছিল তা সে মুখ থেকে ছুড়ে বের করে ফেলল ঘটনার আকস্মিকতায়। আর সেই কফিটুকু গিয়ে পড়লো মালির উপর। মালি চেচিয়ে উঠল। এরিক ভয় পেয়ে গেল। এবার সে নির্ঘাত মায়ের কাছে বকা খাবে। কারণ এমন কাজ আজ প্রথম সে করেনি। মালি উপরে তাকিয়ে এরিককে দেখতে পেল। আর সে জোড়ে চেচিয়ে বলে উঠল,
এরিক বাবা আপনি আবার….

মালি এটা বলার সাথে সাথে সেই ব্যক্তি যে মাত্র গাড়ি থেকে বেরিয়েছে সে উপরে তাকিয়ে এরিককে দেখতে পেল। তারপর সে বলে উঠল,
এরিক মাই জান!
ব্যস এরিক দিল দৌড় তার ঘরে।

চলবে……….

(কে এসেছে আবার নতুন করে? যাকে দেখে এরিক দৌড়ে পালালো। সবাই একটু আন্দাজ করেন তো। আর আজকের পর্বটা কেমন হল জানাবেন প্লিজ।টাটা)
চলবে……..

(আজকের পর্বটা কেমন লাগলো আমায় জানাবেন কিন্তু।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here