তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম পর্ব ১২+১৩

#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১২

কয়েক ঘন্টা পরেই সিয়ার নানু কে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখন সুস্থই আছে তবে আরো কিছুটা রেস্ট নিতে হবে। উনার যখন যা যা লাগছে তাই দিয়ে দিচ্ছে সিয়া আর দোলা। তাদের বাসায় যাবার বেশ সময় পর হঠাৎ করেই অর্নীল আসে। অর্নীল কে দেখে দোলা দ্রুত ভেতরে আসতে বলে। তবে সিয়া অবাক।

সিয়া;; আপনি?

অর্নীল;; হ্যাঁ, নানু কে দেখতে আসলাম।

দোলা;; অনেক ভালো কাজ করেছো বাবা। বসো বসো।

অর্নীল গিয়ে শিউলি বেগমের পাশে বসে পরে।

অর্নীল;; নানু, কেমন আছেন এখন?

শিউলি;; এখন ভালো আছি। তুমি কেমন আছো আগে তা বলো।

অর্নীল;; জ্বি আলহামদুলিল্লাহ।

সিয়া;; নানু, উঠো আগে মেডিসিন খাও।

অর্নীল;; আচ্ছা, তুমি আমাকে আগে ফোন করে কেনো জানাও নি?

সিয়া;; না মানে বলতাম কিন্তু ওই সময় আসলে কি থেকে কি করবো কিছুই বুঝে আসছিলো না। তাই দ্রুত চলে গিয়েছি।

শিউলি;; সমস্যা নেই, আমি এখন ঠিক আছি।

এভাবেই প্রায় অনেক সময় থেকে অর্নীল এসে পরে। সিয়া অর্নীল কে বাইরে পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গিয়েছে। বাইরে এসে অর্নীল গাড়িতে হেলান দিয়ে দুই হাত ভাজ করে দাঁড়ায়। আর সিয়া তার সামনে। নিজের দুই আঙুলের ভাজে ওরনা প্যাচিয়ে যাচ্ছে। অর্নীল কিছুক্ষণ এক মনে সিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে পরক্ষণেই আবার বলে ওঠে…..

অর্নীল;; বিয়ে করছি কবে আমরা?

সিয়া অর্নীলের দিকে কপাল কুচকে তাকায়।

অর্নীল;; কবে?

সিয়া;; এই আপনার কি মাথা খারাপ?

অর্নীল;; হ্যাঁ, তোমার দোষ। তুমি করে দিয়েছো।

সিয়া;; ধুর, এখানে নানু অসুস্থ আর আপনি বিয়ে বিয়ে করছেন। এই যান আমি করবো না বিয়ে। এতো তাড়াতাড়ি কেউ বিয়ে করে?

অর্নীল;; কেউ করে কিনা জানি না তবে আমরা করবো।

সিয়া;; অর্নীল! এখন এই কথা বলার সময়। নানু অসুস্থ।

অর্নীল;; শুনো আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে।

সিয়া;; বলেন।

অর্নীল;; তোমার আমার বিয়ের সাথে সাথে না নানুআপু কেও আরেকটা বিয়ে করিয়ে দিবো। তাহলেই দেখবে নানুআপু একদম ফিট & ফাইন।

অর্নীলের কথায় সিয়া ফট করে মাথা তুলে তার দিকে তাকায়। চোখ গুলো পিট পিট করে তাকায়। অর্নীল হয়তো আজকে পাগল হয়ে গেছে এটাই ভাবছে সিয়া। তাই সিয়া সোজা অর্নীলের বেশ কাছে গিয়ে কপালে হাত রেখে দেয়।

সিয়া;; জ্বর এসেছে আপনার তাই না? শরীর খারাপ করছে বুঝতে পারছি আমি। আচ্ছা শুনুন আপনি বাড়িতে যান। আর রেস্ট নিবেন। দরকার হলে আমাকে ফোন করবেন।

সিয়ার কথা শুনে অর্নীল সিয়ার হাত টা কপাল থেকে সরিয়ে দেয়।

অর্নীল;; কি বলছো তুমি এইসব? আমার কোন শরীর টরীর খারাপ করে নি। ঠিক আছি আমি।

সিয়া;; তাহলে আপনার মাথা গেছে। মানে লাইক সিরিয়াসলি নানুর বিয়ে এই বুড়ো বয়সে। কে করবে?

অর্নীল;; আরেক বুড়া কে ধরে করিয়ে দিবো দুজনের বিয়ে।

সিয়া;; অর্নীল।

সিয়া গিয়ে অর্নীল কে দুই একটা ঘুষি দিয়েই দেয়। আর অর্নীল জোরেই হেসে দেয়। অবশেষে বিদায় নিয়ে এসে পরে।


রাতের দিকে দোলা রান্নাঘরে কাজ করছিলো আর সিয়া তার নানুর পাশে বসে আছে এই সময় সিয়ার চাচ্চু বিল্লাল আসে। সিয়া বিল্লাল কে দেখে এগিয়ে যায়।

সিয়া;; আরে চাচ্চু, তুমি?

বিল্লাল;; হ্যাঁ, তোর নানু নাকি অসুস্থ। ভাবি বলেছিলো আমাকে তাই আসলাম। আর আমাকে আগে কেনো ফোন করিস নি তোরা?

সিয়া;; না মানে তেমন মেজর কোন বিষয় না আর নানু এখন ঠিক আছে।

বিল্লাল;; যাক ভালো।

বিল্লাল গিয়ে শিউলি বেগমের সাথে কথা বলতে লাগে।

সিয়া;; মা, মা এই চাচ্চু এসেছে।

দোলা;; আসছি।

দোলা হলরুমে চলে যায়।

বিল্লাল;; ভাবি কেমন আছো?

দোলা;; এইতো আছি। তুমি কেমন আছো আর আদিবার শশুড় বাড়িতে সবাই ভালো তো?!

বিল্লাল;; হ্যাঁ সবাই বেশ ভালো আছে। আচ্ছা ভাবি শুনো এখানে আমি মূলত দুই কাজে এসেছি।

দোলা;; কি?

বিল্লাল;; আমি জানি খালামনি অসুস্থ এই সময় কথা টা বলা ঠিক হবে কিনা!

দোলা;; আরে ভাই কি যে বলো না। বলো তো তুমি কি বলবে জলদি বলো।

বিল্লাল;; না মানে আমি বলছি কি আসলে আদিবা রা সবাই এখন আমাদের বাড়িতে মানে ঘুড়তে এসেছে আর কি। তবুও না আমার বাড়ি টা কেমন ফাকা ফাক লাগছে তোমাদের ছাড়া। তাই বলছিলাম যে যদি তোমরা আমার সাথে যেতে।

দোলা;; ওহহ তো এই ব্যাপার। আমাদের নিতে এসেছো? আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু মা কে নিয়ে কীভাবে যাই? মা তো জার্নিও তেমন একটা করতে পারে না।

বিল্লাল;; হ্যাঁ এর জন্যই বললাম যে এখন তাহলে কি করবো!

শিউলি;; আরে শোন তুই আর সিয়া চলে যা আমি খেয়াল রাখতে পারবো নিজের। এখনো এতো টা বুড়ি হই নি আমি।

দোলা;; হ্যাঁ, আমার তো মাথা খারাপ হয়েছে যে তোমাকে এখানে একা রেখে আমি ওখানে যাবো। বিল্লাল শুনো তুমি এক কাজ করো। তুমি সিয়াকে নিয়ে চলে যাও আজ, আমরা পরে আসবো নি।

সিয়া তার মায়ের কথা শুনে তো “দিল ম্যা লাড্ডু ফুটা” টাইপ ফিলিং”স আসছে৷ আহা, বেড়াতে যাবে তাও চাচ্চুর বাসায়। এগুলো মনে মনে ভেবেই যেনো সিয়া নাগিন ড্যান্স দিচ্ছে। সিয়া ৩২ টা দাঁত বের করে ভেটকাচ্ছিলো তখনই হুট করে সে তার মায়ের দিকে তাকায় দেখে দোলা উল্টো তার দিকেই তাকিয়ে আছে। এতে যেনো সিয়া চুপসে যায়।

দোলা;; বিল্লাল তুমি সিয়া কে নিয়ে যাও আমরা কাল বা পরশু এসে পরবো। সিয়া মনে মনে নাচনাচি বাদ দিয়ে যা ব্যাগ প্যাক কর। আর দোহায় লাগে একটু শান্ত & ভদ্র হয়ে থাকিস।

বিল্লাল;; তুমি কি যে বলো না ভাবি। আমার আদিবার থেকে সিয়া অনেক ভালো।

সিয়া;; হিহিহিহিহি।

সিয়া ঢ্যাং ঢ্যাং করে ওপরে রুমে গিয়ে নিজের সব গুছিয়ে নেয়। তারপর নিজের চাচ্চুর সাথে গাড়িতে করে বের হয়ে পরে। গাড়িতে বিল্লাল আর সিয়া যাচ্ছে। দুজনের সে কি বকবকানি। সিয়া বলতে গেলে তার চাচুর কলিজা। বিল্লাল কখনো বলে নি যে তার এক মেয়ে। তার দুই মেয়ে এক আদিবা আর দুই সিয়া। তবে যেতে যেতে সিয়ার মনে পরে যে সে তো অর্নীল কে জানায় নি যে চাচ্চুর বাসায় যাচ্ছে। নয়তো কাল প্রথমে কলেজে যাবে সেখানে না পেলে বাসায় আসবে সেখানেও না পেলে পরে সিয়া কে বেগুন ভর্তা বানাবে। আর এখন তো সে চাচ্চুর সাথে বসে আছে ফোনও করতে পারবে না। তাই মেসেজ টাইপ করে…..

“” অর্নীল, আমি কাল কলেজ যাবো না৷ আমি আমার চাচ্চুর বাসায় আছি। তো আমাকে কাল না পেয়ে পাগলের মতো সোজা আবার আমার বাসায় চলে যাইয়েন না। আমি হয়তো এখানে কিছুদিন থাকবো।””

সিয়া মেসেজ সেন্ড করে দেয়। এভাবেই দেখতে দেখতে একটা সময় তারা বাসায় এসে পরে। বিলাল্লা গাড়ি থেকে নেমে সিয়ার সব ব্যাগ ভেতরে নিতে যেতে বলে। আর এদিকে সবাই বাড়ির বাগানের পাশে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো সিয়া কে দেখেই আদিবা সব রেখে ছুটে আসে।

আদিবা;; সিয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া!

সিয়া;; হেই বিয়াইত্তা মাইয়া কেমন আছোস?

আদিবা;; আরে হারামি।

আদিবা গিয়ে সিয়া কে জড়িয়ে ধরে৷ সিয়া গিয়ে আদিবার শশুড় বাড়ির লোকদের সাথে কথা বলে। সিয়ার শাশুড়ী-শশুড় সবার সাথেই।

সিয়া;; দুলাভাই!

জাবেদ;; আজকে আমার সাথে ফোনও নাই, আমার ওয়ালেটও নাই। টাকাও নাই। আজকে কি নিয়ে আটকাবা শালিকা!?

জাবেদের কথা শুনে সবাই হেসে দেয়।

সিয়া;; ভাইয়া এইটা কোন কথা। শালিরা কি খালি টাকাই নেই দুলাভাই এর কাছ থেকে।

জাবেদ;; আরে মজা করছি। আচ্ছা বাইরে থেকে এসেছো এখন যাও ফ্রেশ হও। তারপর এখানে এসো বসে বসে আড্ডা দেই সবাই। আর হ্যাঁ তোমার বোন টাকে নিয়ে যাও প্লিজ। বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতে আমার জীবন টা একদম তেজপাতা বানিয়ে ফেলেছে।

সিয়া;; হাহাহাহাহাহাহাহাহা।

আদিবা;; আজকে শুধু রুমে যাও তারপর আছে তোমার।

জাবেদ মেকি হাসে আদিবার কথায়।

সিয়া;; আচ্ছা চল তুই আমার সাথে রুমে চল।

সিয়া আদিবা কে নিয়ে এসে পরে। তবে হলরুমে আসতেই আবার আদিবার ডাক পরে যায়।

আদিবা;; এই রে আবার ডাকা ডাকি শুরু। এই সিয়ু বেবি শোন তুই রুমে যা আমি কয়েক মিনিট পরেই আসছি।

সিয়া;; আচ্ছা।

সিয়া এই বলেই নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। সিয়া গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে যাচ্ছিলো তবে সিড়ি বেয়ে ওপরে ওঠতেই থমকে যায়। সিয়া বেশ অবাক হয়েই তাকিয়ে থাকে সামনে থাকা মানুষ টার দিকে। আজ দুপুরে যখন সে তার নানু কে নিয়ে হস্পিটালে যায় তখন যে সায়ন মাহমুদ নামে একজন ডক্টর ছিলো সে এখানে। অর্থাৎ যে শিউলি বেগমের চেকাপ করেছে আর কি। তবে এই এখানে কি করে? কোথা থেকে এলো? সিয়া তো আদিবার পুরো বিয়ের ফাংশনেই ছিলো একে তো দেখে নি কোথাও আর না ই আদিবার মুখে কখনো শুনেছে। মানে এই এখানে কি করে? সিয়া তাকিয়ে তাকিয়ে এগুলোই ভাবছিলো তখনই ফোন ঘাটতে ঘাটতে সায়ন আসে। সেও মাথা তুলে সামনে তাকায়। দেখে সিয়া। সিয়া চলে যেতে ধরলে সায়ন বলে ওঠে….

সায়ন;; Excuse me!

সিয়া;; জ্বি।

সায়ন;; আপনার নানু কে আজ…

সিয়া;; আপনিই চেকাপ করছেন।

সায়ন;; আপনি এখানে?

সিয়া;; এটা তো আমারও প্রশ্ন। আপনি এখানে?

সায়ন;; আরে আমার ভাইয়ের শশুড় বাড়ি এটা তো আমি আসবো না।

সিয়া;; ভাই মানে? কোন ভাই?

সায়ন;; জাবেদ আমার বড়ো ভাই হয়৷

সিয়া;; আর আদিবা আমার বড়ো বোন।

সায়ন;; ওহহ আচ্ছা আচ্ছা তো ভাবি আপনার বোন হয়।

সিয়া;; জ্বি। তবে আপনাকে তো আগে দেখি নি।

সায়ন;; আসলে আমি…..

আদিবা;; সিয়া!

সিয়া;; হুমম।

আদিবা;; ওহহ সায়ন। ও হচ্ছে আমার একমাত্র জানটুস মানে আমার বোন। আর সিয়া ও আমার দেবর।

সিয়া;; আগে তোমার এই গুনধর মার্কা দেবর কে তো কখনোই দেখি নি। (আদিবার কাছে গিয়ে ফিসফিস করে)

আদিবা;; আব…. আরে ও দেশের বাইরে ছিলো বুঝলি৷ মানে আমার বিয়েতেও আসতে পারে নি। তবে রেসিপশনে ছিলো। আর জেঠিমা তো তোকে নিয়ে চলেই গিয়েছিলো তাই আর কি তোদের দেখা হয় নি। আর হ্যাঁ সায়ন একজন ডক্টর। এতোদিন দেশের বাইরে ছিলো কিন্তু এখন দেশে৷

সিয়া;; তা আর বলতে। নানু কেও উনিই চেকাপ করেছেন।

আদিবা;; কি সত্যি?

সায়ন;; হ্যাঁ ভাবি, উনার নানু কে আজই আমি দেখেছি।

আদিবা;; ওহহ তাহলে তোমাদের আগেই দেখা হি
য়ে গিয়েছে।

সিয়া;; আমি তো দেখে অবাকই হয়ে গিয়েছিলাম।

আদিবা;; হুম বুঝলাম। আচ্ছা যাই হোক সিয়া তুই রুমে চল। আর সায়ন ভাই তুমি নিচে যাও৷ সেখানে জাবেদ আর বাকিরা সবাই বসে আছে।

সায়ন;; আচ্ছা৷

সায়ন নিচে চলে যায় আর সিয়া আদিবার সাথে রুমে চলে যায়। রুমে গিয়েই সিয়া আগে বুক ভরে দম নেয়। ফ্রিজ থেকে পানি বের করে ঢকঢক করে খেয়ে নেয়। আর আদিবা সিয়ার ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে।

সিয়া;; ভাই রে ভাই, এত্তো গরম। পুরাই আলু সিদ্ধ হয়ে গেলাম।

আদিবা;; তার ওপর এতো মোটা একটা জামা পরেছিস। হালকা ফুলকা সিম্পলের মাঝে কিছু পর৷

সিয়া;; ব্যাগ থেকে দে।

সিয়া চেঞ্জ করে এসে বসে পরে।

আদিবা;; তো বল এবার দিন কাল কেমন যাচ্ছে তোর?

সিয়া;; তুই বল তোর বিবাহিত জিন্দেগী কেমন চলছে। আমি তো আমিই সবসময় একই রকম।

আদিবা;; বেশ ভালোই। তবে হুট করেই জাবেদের সাথে ঝগড়া লেগে যায়। কিন্তু কিছুক্ষন পর এসে সে নিজেই সরি বলে দেয়। আর মা-বাবাও বেশ ভালো। ননদ আছে সে বাইরে বাইরেই বেশি থাকে। আর সায়ন তো সবে এলো। মোট কথা আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

সিয়া;; যাক ভালো থাকলেই ভালো।

আদিবা;; এবার তুই বল।

সিয়া;; এটা নে (পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে)

আদিবা;; এটা?

সিয়া;; আমার খবর শুনে ঝটকা খেতে পারো সোনা।

আদিবা;; তাত্তাড়ি ক ছেরি।

সিয়া;; হাহাহাহা,, আমি মানে আমি আরে মানে আমি আর অর্নীল একসাথে আছি।

আদিবা;; হেহেহেহেহে.. হেহেহেহ হাহাহাহাহা।

সিয়া;; জ্বিনে ধরলো নাকি তরে, হাসোস কেনো?

আদিবা;; আমার সন্দেহ আগে থেকেই তোদের দুইজনের ওপর ছিলো। মানে কিছু না কিছু তো একটা আছেই। দেখ আমার ধারণা ঠিক হয়েছে।

সিয়া;; আম্মুও জানে।

এবার আদিবার হাসি থেমে গেলো। সে সত্যি সত্যি এবার পানি খেয়ে নেয়।

আদিবা;; মানে??

সিয়া;; মানে আম্মু জানে আর কি।

আদিবা;; জেঠিমা কিছু বলে নি তোকে?

সিয়া;; না কি বলবে। মানে আম্মু সবই জানে। আর অর্নীল তো আর লোফার কোন ছেলে না তাই কি আর বলবে। আর তুই জানিস যে আম্মু আমার ঠিক কতোটা ক্লোজ।

আদিবা;; বুঝালাম। তোর মতো একটা মা যদি আমারও থাকতো।

সিয়া;; তো কার মা। আমদের দুজনেরই তো। ৫০-৫০।

আদিবা;; 😆,, হুমম আচ্ছা তো বিয়ের পিড়িয়ে কবে বসছিস।

সিয়া;; তুইও শুরু করলি।

আদিবা;; কেনো?

সিয়া;; অর্নীল বিয়ের জন্য না প্রায় মরে যাচ্ছে এমন অবস্থা। জানিস আজকে 😆, আজকে বলে যে তুমি আর আমি বিয়ে করবো। তার সাথে সাথে নানু কেও আরেকটা বিয়ে করিয়ে দিবো।

আদিবা;; কি? হাহাহাহাহাহাহাহাহাহা।

সিয়া;; আমি এসেছি ফোন করে বলি নি ওকে। মানে সুযোগ ই পাই নি। তবে টেক্সট করে দিয়েছি। অনেকক্ষন তো হলো এখনো রিপ্লাই দিলো না।

আদিবা;; হয়তো ব্যাস্ত, কাজের চাপ। পরে দিবে। বা তুই রাতে ফোন দিস।

সিয়া;; হুমমম, আচ্ছা চল নিচে যাই।

আদিবা;; আগে কিছু খেয়ে নে তারপর যা।

সিয়া;; আরে এখন খাবো না। একেবারে রাতের খাবার খাবো। এখন চল।

আদিবা;; আচ্ছা।

আদিবা আর সিয়া নিচে চলে যায়। সবাই বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। এর মাঝে একটা সার্ভেন্ট এসে চা দিয়ে যায়। সিয়ার পাশেই সায়ন বসে। সিয়া এক নজর তার দিকে তাকিয়ে আবার গল্প করাতে মন দেয়। আদিবার শাশুড়ী সিয়াকে তার মা আর নানুর কথা জিজ্ঞেস করলে বলে তারা পরে আসবে। আর এদিকে ওপরে রুমে সিয়ার ফোন বাজতে বাজতে শেয়, আর অবশ্যই ফোন অর্নীলের। অবশেষে প্রায় বেশ সময় সবাই মিলে গল্প গুজব করার পরে যে যার‍ যার রুমে চলে আসে। তবে সিয়া তার রুমে এসে ফোনে তাকাতেই তার আক্কেলগুড়ুম। অর্নীলের ১৭ বার ফোন। সিয়া কাপা কাপা হাতে অর্নীল কে ফোন করে। আর সাথে সাথে রিসিভ।

সিয়া;; হ হ হ্য হ্যালো।

অর্নীল;; বাইরে বের হ।

সিয়া;; কি?

অর্নীল;; তোকে বলছি বাইরে বের হবি৷ তুই বাইরে বের হ।

সিয়া;; সরি ☹️। আমি সবার সাথে নিচে ছিলাম তো তাই আর কি ফোন ধরতে পারি নি। সরি তো।

অর্নীল;; সিয়া, বাইরে বের হবা নাকি আমি বাড়িতে ঢুকবো।

সিয়া;; আমি চাচ্চুর বাসায়।

অর্নীল;; মাথা মোটা আমি তোর চাচ্চুর বাসার নিচেই দাঁড়িয়ে আছি।

সিয়া;; কিহহহ? আপনি এখানে কীভাবে?

অর্নীল;; ২ ঘন্টার রাস্তা ৫০ মিনিটে এসেছি। উড়ে উড়ে। এখন তুমি নিচে নামো।

সিয়া;; আমি, আমি আসছি।

এই বলেই এক দৌড়ে সিয়া নিচে চলে যায়। আদিবা দেখেছে তাকে। সিয়া শুধু বলেছে যে আমি আসছি এই বলেই দৌড়৷ বাইরে গিয়ে দেখে অর্নীল গাড়ির ভেতরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে রাগে লাল হয়ে আছে।
সিয়া অর্নীলের কাছে যেতেই অর্নীল স্বশব্দে গাড়ি থেকে নেমে পরে। সিয়া ভয়ে জমে ছিলো আর অর্নীল সিয়ার কাছে গিয়েই হাত ধরে দেয় এক টান। সিয়া অর্নীলের কাছে এসে পরে। চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে। সে ভেবেছিলো হয়তো অর্নীল তাকে মারবে বা অনেক অনেক বকা দিবে। কিন্তু সিয়ার ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে অর্নীল সোজা সিয়াকে জড়িয়ে ধরে। একদম আষ্ঠেপৃষ্ঠে।

অর্নীল;; জানি দুপুরের দিকেই দেখা হয়েছে আমাদের। কিন্তু আমার ভালো লাগে না তোমাকে ছাড়া। আর তারওপর ফোন ধরো নি। এত্তো গুলো ফোন দিলাম৷ তুমি জানো আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না কিন্তু তবুও এমন করো।

সিয়া;; অর্নীল আমার দম আটকে আসছে।

অর্নীল তার হাতের বাধন টা একটু আলগা করে দেয়। এতো টাই শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলো যে সিয়াকে। অর্নীল এবার ছেড়েই দেয় সিয়াকে।

সিয়া;; সরি আর এমন হবে না,, সত্যি সরি।

অর্নীল;; আরে বাবা হয়েছে৷ ঠিক আছে বাদ দাও। আর এখান থেকে কবে যাবে বাড়ি?

সিয়া;; চাচ্চুর সাথে বেশ ঘন্টা খানিক আগেই এসেছি। কাল হয়তো মা আর নানুও আসবে। কিছু দিন থেকে তারপর যাবো।

অর্নীল;; হুমম আর হ্যাঁ আমি এখানে একবার করে হলেও আসবো। শুধু পাঁচ মিনিটের জন্য। শুধু একটা বার তোমাকে দেখার জন্য। তারপরেই চলে যাবো।

সিয়া;; অর্নীল প্লিজ এভাবে বলবেন না। খারাপ লাগে তো। আর আমি তো উড়ে যাচ্ছি না। আরে মাত্র কিছুদিনের জন্য এখানে এসেছি। আপনার সাথে কথা হবে, দেখাও তো হবেই। আর আমাদের বাড়িতে থাকলেও তো এভাবেই দেখা করতাম তাই না।

অর্নীল;; কখনোই না। তুমি আমার সাথে ঘুরতে অর্ধেক বেলাই থাকতে।

সিয়া;; হাহাহা। আচ্ছা এবার হয়েছে তো এবার আপনি যান। রাতও অনেক হয়ে গেছে।

অর্নীল;; তোমাকে নিয়ে যাই আমার সাথে করে??

সিয়া হো হো করে হেসে দেয়।

সিয়া;; অর্নীল যান গাড়িতে উঠুন। যান যান, দ্রুত।

অর্নীল;; হুমমম যাচ্ছি।

অর্নীল সিয়ার কপালে একটা চুমু একে দেয়। তারপর গাড়িতে ওঠে চলে যায়।

সিয়াও ভেতরে চলে যায়।

আদিবা;; কিরে দেখা হলো?

সিয়া;; আর বলিস না। পুরাই পাগল।

আদিবা;; আহা প্রেম।

সিয়া;; আহা, আর তুমি যেমন কিছুই করো নাই। চাপা কম মার। তোর লাভ লেটার আমি নিজে লিখে দিয়েছি।

আদিবা;; খুব উপকার হইছে 🙂।

সিয়া;; জামাই এর কাছে যা, এখানে কি করস।

আদিবা;; আসলে তোকে বলতে এসেছি যে কাল আমরা শপিং এ যাচ্ছি।

সিয়া;; কেনো আবার কার বিয়ে?

আদিবা;; আরে ধুরু কারো বিয়ে না। এমনি মানে কাল ঘুরবো আর কি সাথে কিছু কেনা কাটা। তুই, আমি আর তোর দুলাভাই সাথে রুমানা (আদিবার ফ্রেন্ড)

সিয়া;; ওহহ আচ্ছা।

আদিবা;; এখন শুয়ে পর। আমি যাই।

সিয়া;; হুমমম।

আদিবার চলে যেতেই সিয়া অর্নীলের কাছে ফোন দেয়। অর্নীল ড্রাইভ করছিলো কানে এয়ার পড ছিলো তা দিয়েই কথা বলতে থাকে।

সিয়া;; অর্নীল!

অর্নীল;; হ্যাঁ জান বলো।

সিয়া;; কোথায় আপনি?

অর্নীল;; এইতো যাচ্ছি। আর এক ঘন্টা লাগবে।

সিয়া;; ওহহ আচ্ছা। ওহ হো আমি তো ভুলেই গিয়েছি।

অর্নীল;; কি?

সিয়া;; যখন থেকে এখানে এসেছি তখন থেকে আম্মু কে ফোন করে নি। নানু কেমন আছে জানা উচিত ছিলো। একটা বারও ফোন দিলাম না।

অর্নীল;; আরে চিন্তা করো না। আমি ফোন দিয়েছিলাম শাশুড়ী আম্মুর কাছে। তারা ঠিক আছে।

সিয়া;; ওহহ আচ্ছা যাক বাঁচলাম। আচ্ছা শুনুন তাহলে আমি রাখি। আমার না ঘুম পাচ্ছে। আর আপনি বাড়ি যান। অফিস বা বাইরে বাইরে ঘুইড়েন না আবার।

অর্নীল;; হ্যাঁ আর তুমি যাও ঘুমাও। কুম্ভকর্ণ একটা।

সিয়া;; এই কি বললেন?

অর্নীল;; আমার লক্ষী টা, ঘুমাও।

সিয়া;; হাহ, ঢং।

এই বলেই সিয়া ফোন কেটে দেয়। আর এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে পরে।

।#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৩

পরেরদিন সকালে কারো দরজাতে নক করার শব্দে সিয়ার ঘুম ভেঙে যায়। ঢুলুঢুলু পায়ে, চোখ দুটো কচলাতে কচলাতে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। আর দরজা খুলতেই স্পষ্ট চোখে চেয়ে সামনে তাকায়। সায়ন!! সে তার হাতে একটা ট্রে তে এক কাপ গরম কফি, আর জ্যাম-ব্রেড এগুলো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সিয়া;; জ্বি!

সায়ন;; জ্বি আসলে এগুলো আংকেল পাঠিয়ে দিলো আপনার জন্য।

সিয়া;; বিল্লাল চাচ্চু!

সায়ন;; হ্যাঁ।

সিয়া;; তো অন্য কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেই হতো। আপনি কষ্ট করে আবার…..

সায়ন;; না না ঠিক আছে। এখন ধরুন এটা।

সিয়া এগিয়ে গিয়ে সায়নের হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে নেয়। তারপর সায়ন চলে যায়। সিয়া ভেতরে এসে পা দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। আর সিয়ার একটা অভ্যাস আছে খালি পেটেই চা বা কফি খাওয়া। তাই সে কফি টা খেয়ে নিলো। তবে কফি মুখে তুলতেই সেটা আবার এক নিমিষেই ফিক করে বের হয়ে পরে। টিস্যু দিয়ে কোন রকমে মুখ চেপে ধরে। মাত্রাতিরিক্ত তেতো। হয়তো কফি পাউডার বেশি পরে গেছে তাই।

সিয়া;; মানুষ টাকে তো এতো তেতো লাগে না, ভালোই আছে ব্যাবহার। তবে কফি এতো তেতো কেনো?

সিয়া হাত থেকে কাপ টা টেবিলের ওপর রেখে দিয়েই ওয়াসরুমে চলে যায়। বেশ সময় পর টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে রুমে এসেই দেখে অর্নীলের ফোন।

সিয়া;; হ্যালো।

অর্নীল;; গুড মর্নিং সিয়াজান।

সিয়া;; হুম মর্নিং। কেমন আছেন?

অর্নীল;; ভালো আর থাকলাম কই তোমাকে ছাড়া!

সিয়া;; হয়েছে। কি করেন?

অর্নীল;; অফিসে আছি।

সিয়া;; ওহ, তাহলে কাজ করুন আমি রাখি।

অর্নীল;; আমি রাখতে বলছি, এতো বেশি বুঝো কেন!

সিয়া;; না মানে আপনি তো কাজ করছেন।

অর্নীল;; আর কাজ। নানু আর আন্টি এসেছে?

সিয়া;; না এখনো আসে নি।

আদিবা;; সিয়া, সিয়া।

সিয়া;; অর্নীল আপু এসেছে আমি পরে কথা বলি আপনার সাথে ওকে!

অর্নীল;; আচ্ছা, বায়।

দিয়া গিয়ে দরজা খুলে দেয়।

আদিবা;; উঠেছিস!

সিয়া;; হ্যাঁ

আদিবা;; নিচে চল ব্রেকফাস্ট করতে।

সিয়া;; আরে না ওইতো সায়ন ব্রেড-জ্যাম আর কফি দিয়ে গিয়েছিল। সেগুলোই খেয়েছি, ব্রেকফাস্টে এতো ভারি খাবার খাই না।

আদিবা;; আচ্ছা চল।

সিয়া আদিবার সাথে নিচে চলে যায়। জাবেদ হঠাৎ আদিবা কে ডাক দেয় তাই চলে আয়। আর সিয়া বাইরে উঁকি দিয়ে দেখে সবাই একসাথে বসে আছে। তাই সিয়া ভাবলো কেননা সবার জন্য চা বানানো যাক। সিয়া রান্নাঘরে চলে গেলো। গিয়েই চা বানাতে লাগলো। সিয়া চা বানাচ্ছিলো তখনই হাতে একটা আপেল ঘুড়াতে ঘুড়াতে সায়ন আসে রান্নাঘরে। চাকু নিয়ে আপেল কাটতে কাটতে বলে ওঠে…..

সায়ন;; ভাবি, কি করছো?

সিয়ার এবার যেনো টনক নড়ে। সে চোখ তুলে ওপরে তাকায়।

সায়ন;; ও ভাবি কথা বলো না কেনো। আচ্ছা শুনো আমার চায়ে চিনি একদম কম দিবে। মানে এক চামচেরও হাফ বুঝলে।

সিয়া;; হু

সায়ন;; কি হু হু করো। কি হয়েছে?

সিয়া এবার তার হাতে চায়ের ট্রে টা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। সায়ন দেখে ভাবি না ভাবির বোন সিয়া।

সায়ন;; আব…স সরি আসলে আমি….

সিয়া;; ভাবি না আমি।

সায়ন;; আপনাকে পেছন থেকে অবিকল ভাবির মতোই দেখতে লাগে। আর আমি তেমন একটা খেয়াল করি নি। আসলে ভাবি রোজ চা বানায় তো তাই ভাবলাম।

সিয়া এগিয়ে গিয়ে সায়নের হাতে একটা চায়ের কাপ ধরিয়ে দেয়।

সিয়া;; আপনার হাফ চিনি ওয়ালা চা।

সায়ন;; ধন্যবাদ।

সিয়া চোখ নামিয়ে ট্রে টা নিয়ে গটগট করে রান্নাঘর থেকে এসে পরে বাগানের পাশে চলে যায়।

সিয়া;; এই যে তোমাদের সবার গরম-গরম চা, নাও নাও।

বিল্লাল;; কিরে তুই রান্না ঘরে গিয়েছিস কেনো?

সিয়া;; কেনো আদিবা আপু তো রোজ যায়। আজ না হয় আমিই গেলাম।

বিল্লাল;; আচ্ছা বুঝলাম।

সিয়া;; হুম।

বিল্লাল;; আচ্ছা শোন, আজ বিকেলের দিকে কিন্তু
ভাবি আর খালামনি আসছে।

সিয়া;; কথা হয়েছে তোমার?

বিল্লাল;; হ্যাঁ।

এভাবেই সময় টুকু পার হয়ে যায়। এক সময় সিয়া, আদিবা, জাবেদ আর রুমানা মিলে বাইরে বের হয়ে পরে৷ জাবেদ যদিও যেতে চায় নি কিন্তু আদিবা টেনে ধরে নিয়ে গেছে। তারা একের পর এক শপিং মলে ঘুড়েই যাচ্ছে ঘুড়েই যাচ্ছে আর যা পছন্দ হচ্ছে তা একটা একটা করে তুলে নিচ্ছে। আর সব ব্যাগ গুলো জাবেদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। জাবেদের তো নাজেহাল অবস্থা। এভাবে ঘুড়তে ঘুড়তেই হঠাৎ সিয়ার চোখ আটকে পরে মলের ভেতরে থাকা একটা পিংকিস কালারের বড়ো মাপের টেডি বিয়ারের ওপরে। সিয়া তা দেখে লোভ সামলাতে না পেরে সেখানে চলে যায়। কি সুন্দর দেখতে! সিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদিবার ডাক পরে। আদিবা এসে দেখে সিয়া একটা মলের ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে। তাই আদিবা গিয়ে দ্রুত সিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে পরে৷ সেখান থেকে চলে যাওয়ার আগে সিয়া আরেকবার তার মাথা ঘুড়িয়ে টেডি বিয়ার টার দিকে তাকিয়ে যায়। বাইরে এসে পরে। অনেক গুলো কেনাকাটা করেছে। তবে বাইরে এসেই সিয়া দেখে সায়ন দাঁড়িয়ে আছে।

সিয়া;; আদি…

আদিবা;; হ্যাঁ।

সিয়া;; ও এখানে কেনো?

আদিবা;; এসেছে, আমাদের সাথে না তবে কিছুক্ষণ আগেই এসেছে।

সিয়া;; ওহহ আচ্ছা।

আদিবা;; চল গাড়িতে ওঠ৷

তারা সবাই গাড়িতে ওঠে চলে যায়। বাড়ি গিয়েই দেখে সিয়ার মা আর নানু এসে পরেছে।

সিয়া;; মা এসেছো? আর নানু তোমার শরীর কেমন এখন?

শিউলি;; হ্যাঁ আছি ভালোই।

দোলা;; কোথাও গিয়েছিলি তোরা?

আদিবা;; হ্যাঁ জেঠিমা আসলে বাইরে গিয়েছিলাম একটু।

জাবেদ;; আর আমার অবস্থা খারাপ।

সবাই হেসে দেয়। তারপর যার যার রুমে চলে যায়৷
রাতের বেলা সিয়া তার রুমে বসে বসে ফোন ঘাটছিলো তখনই হাতে ছোট একটা বাটি নিয়ে আদিবা আসে৷

আদিবা;; এই ওঠ।

সিয়া;; হুম হুম, কি হয়েছে?

আদিবা;; আগে ওঠ তুই?

সিয়া;; উঠলাম, এখন কি!

আদিবা;; এদিকে আয়।

সিয়া;; আসলাম।

আদিবা;; মাথায় তেল দিয়ে দেই। ঘুম ভালো হবে৷

সিয়া;; এই না না না না। একদম না। বইন তুই না ভালা। প্লিজ তেল দিয়ে দিস না৷ একদম ফকিন্নির মতো লাগে রে৷

আদিবা;; কেনো সমস্যা কি? বাসায় ই তো আছিস। আর এই রাতের বেলা তোকে দেখতে কে আসছে! চল উঠ তেল দিয়ে দেই৷

সিয়া;; তুই এভাবে আদা লবণ খাইয়া আমার পেছনে পরছোস কেন? আমি তেল দিমু না। ভালো লাগে না। চিপ-চিপ করে ইয়াক।

আদিবা;; চুপ কর।

আদিবা সিয়া কে টেনে নিয়ে মাথায় তেল দিয়ে দিলো। তবে তেল দেওয়া শেষ হতে না হতেই সিয়ার ফোনে কল আসে। সিয়া ফোন হাতে নিয়ে দেখে অর্নীলের ফোন। এটা দেখেই তো চোখ ছানাবাড়া।

সিয়া;; হ্যালো

অর্নীল;; এই বাইরে আসো।

সিয়া;; হ্য?? কিন্তু কেনো আর আপনি কি বাসার বাইরে নাকি!!

অর্নীল;; হ্যাঁ বাইরে।

সিয়া;; খাইছে রে।

অর্নীল;; ২ মিনিটে নিচে নামবা।

সিয়া আয়নার সামনে গিয়ে একবার নিজেকে দেখে আরেক বার বাইরে। মাথায় তেল দিতে চুবু চুবু অবস্থা। তার ওপর মাঝখান দিয়ে সেথি করে দুই পাশে বেনী করা। ইশ পুরাই ফকিন্নি লুক। সিয়া মেকি একটা হাসি দিয়ে আদিবার দিকে তাকায়। আদিবা কিছু বুঝতে না পেরে ভ্রু নাচায়।

সিয়া;; তেল কম পরছে মাথায় আরো একটু দে।

আদিবা;; হয়েছে কি?

সিয়া;; হয়েছে কি মানে অর্নীল নিচে এসে দাঁড়িয়ে আছে৷ আর আমাকে যেতে বলছে এখন আমি এই ভাবে নিচে কীভাবে যাবো?!

আদিবা;; আরে আজব, তাই মাথায় তেল দিবি না। এই যা তো যা৷ কিছুই হবে না। যা তুই৷

আদিবা এক প্রকার ঠেলেই সিয়া কে নিচে পাঠিয়ে দেয়। আর সিয়াও মুখ টাকে একদম বাংলার পাঁচ বানিয়ে নিচে যায়৷ তবে কিছুটা লুকিয়েই। যেনো কেউ না দেখে। সিয়া বাইরে গিয়েই দেখে অর্নীল মাত্র গাড়ি থেকে নামছে। সিয়া অর্নীলের সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। অর্নীল সিয়াকে দেখে বুঝলো যে সে এমন কেনো করছে।

সিয়া;; কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন, আমি চলে যাবো।

অর্নীল;; আরে তেল দিয়েছো তাই কি হয়েছে৷ মানুষ কি দেয় না। আর তুমি কি জানো তোমাকে কি পরিমাণ চুম্পু চুম্পু দেখা যাচ্ছে।

সিয়া;; কি কি?

অর্নীল;; চুম্পু চুম্পু। মানে কিউট কিউট।

সিয়া;; হয়েছে জানি ফকিন্নি আল্ট্রা প্রো মেক্স লাগতাছে।

অর্নীল;; আচ্ছা ওয়েট একটা জিনিস আছে তোমার জন্য।

সিয়া;; কি?

অর্নীল;; ওয়েট জান।

এই বলেই অর্নীল গিয়ে তার গাড়ির পেছনের সীট থেকে একটা বড়ো সড়ো বক্স নিয়ে এলো।

অর্নীল;; নাও৷

সিয়া;; কি এটা?

অর্নীল;; আরে ধরো তো। আর হ্যাঁ রুমে গিয়ে খুলো দেখবা।

সিয়া;; আচ্ছা।

অর্নীল;; এবার যাও। এটা দিতেই এসেছিলাম আর দিলাম।

সিয়া;; আচ্ছা।

অর্নীল;; আমি যাই!

সিয়া;; আচ্ছা শুনুন।

অর্নীল;; বলো।

সিয়া;; ভালোবাসি।

অর্নীল সিয়ার গালে টুক করে একটা চুমু একে দেয়। তারপর চলে যায়। আর সিয়া কেউ দেখার আগেই রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে দরজা জানালা সব অফ করে আস্তে আস্তে কাচি দিয়ে র‍্যাপার টা খুলতে লাগে৷ প্রায় সিয়ার সমান বক্স টা। সে জানে না যে এতে কি রয়েছে৷ তাই এক্সাইটেড। আস্তে আস্তে বক্স টা খুলে ভেতরে দেখতেই সিয়া অবাক। আজ শপিং মলে গিয়ে যেই টেডি বিয়ার টা সিয়া দেখেছিলো আর পছন্দ হয়েছিলো কিন্তু কেনার সুযোগ পায় নি জলদি জলদি এসে পরেছে। সেই টেডি বিয়ার টা। সিয়ার সে কি খুশি। সে টেডি টাকে জড়িয়ে ধরে বেশ শক্ত করে৷ তবে আবার সিয়ার মনে পরে যে অর্নীল কি করে জানলো। সিয়া অর্নীল কে ফোন দেয়।

অর্নীল;; হ্যাঁ সিয়াজান।

সিয়া;; আপনি কি করে জানলেন যে এই টেডি টা আমার পছন্দ হয়েছিলো?

অর্নীল;; দেখেছি আজকে আমি তোমাকে। আদিবার সাথে ছিলে তুমি।

সিয়া;; কি? কখন দেখেছেন? আমাকে ডাক দেন নি কেনো?

অর্নীল;; না এমনি।

সিয়া;; থ্যাংক ইউ।

অর্নীল;; তা না হয় মানলান। কিন্তু দেখো আবার আমার থেকে বেশি ভালো তুমি ওই টেডি কে বেসো না।

সিয়া এভাবে আরো বেশ সময় কথা বলে ফোন কেটে দেয়।



পরেরদিন~~

দোলা;; বিল্লাল তোমার নাস্তা দিবো?

বিল্লাল;; না ভাবি, একজন আসবে তো তাই উনার সাথে দেখা করতে হবে। পরে যাই একটা দরকারি মিটিং আছে৷ আসলে ওইতো আমার কাজের জন্যই আর কি৷

দোলা;; কে আসবে??

বিল্লাল;; আবরার চৌধুরী অর্নীলের বাবা।

দোলা;; ওহ অর্নীল আচ্ছে, ওর বাবা কে?

বিল্লাল;; আরে ওইতো সাগর চৌধুরী।

ব্যাস এইতো দোলার মাথা টা ঘুরে গেলো। সে বেশ অবাক।

দোলা;; কি, কি বলো এইসব। অর্নীলের বাবা সাগর চৌধুরী?

বিল্লাল;; হ্যাঁ। কেনো জানো না!

দোলা সেখান থেকে চলে আসে। মাথা যেনো আর কাজ করছে না। দোলা বাইরে আসতেই দেখে সাগর চৌধুরী গাড়ি থেকে নামছে। এখন সবকিছু বাদ দিয়ে দোলার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুড়ছে তা হচ্ছে অর্নীলের বাবা সাগর চৌধুরী।





চলবে~~



চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here