#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৪ {বোনাস}
দোলা একমনে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে গেছে সে। বাইরে বেশ কোলাহলের আওয়াজ শুনে বিল্লাল বাইরে বের হয়ে পরে। সাগর চৌধুরী কে এগিয়ে নিয়ে আসছে। আর দোলা তাদের দেখছে। হুট করেই দোলার চোখ থেকে টুপ করে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে। বিল্লাল জানে না যে কি করছে, সে কার সাথে কাজ করছে। আস্ত একটা কালসাপ সাগর চৌধুরী। সাগর চৌধুরী কে ভেতরে আসতে দেখে দোলা সেখান থেকে আড়াল হয়ে যায়। বিল্লাল তার সাথে সাগর চৌধুরী ভেতরে এসে বসে। আর দোলা বেশ ঘাবড়ে গিয়ে দ্রুত বাড়ির একদম ভেতরের দিকে চলে যায়। সে যাচ্ছে আর খানিক বাদে বাদে ভয়ার্ত মুখে পেছন ফিরে তাকাচ্ছে। এভাবেই যেতে যেতে হঠাৎ সিয়ার সাথে দোলার ধাক্কা লেগে যায়।
সিয়া;; আরে মা! সাবধানে কি করছো! লেগে যেতো তো। আর মা, কি হয়েছে? এভাবে, এভাবে ঘেমে গেছো কেনো? ঠিক আছো তুমি? (চিন্তিত হয়ে)
দোলা;; সিয়া মা শোন না চল এখান থেকে আমরা চলে যাই!
সিয়া;; মা কি হয়েছে? বলো আমাকে। না কিছু তো একটা হয়েছে তাই না। সেইদিন আপুর রেসিপশনেও তুমি এমন করেছো আর আজও। মা কি হয়েছে?
দোলা;; অর্নীলের বাবা সাগর চৌধুরী?
সিয়া;; হ্যাঁ।
দোলা;; তুই আমাকে আগে কেনো বলিস নি?
সিয়া;; ওমা কেনো তুমি জানো না? আমি ভেবেছি তুমি অর্নীলের বাবা কে চেনো।
দোলা;; হ্যাঁ চিনি৷ আসলেই চিনি। হারে হারে চিনা আছে আমার৷
সিয়া;; মা…
দোলা;; চল এখান থেকে।
সিয়া;; আরে..
দোলা সিয়া কে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। রুমে এসে ধপ করে বসিয়ে দেয়।
দোলা;; শোন আগামী ২ ঘন্টা যাবত তুই রুম থেকে বের হবি না। যা কিছু লাগে আমাকে বলবি দিয়ে যাবো কিন্তু তুই বের হবি না ভুল করেও না বুঝেছিস!
সিয়া;; আজব।
সিয়া আর কিছুই বলে না দুই হাত রাগে ভাজ করে ঠোঁট গুলো উল্টিয়ে দিয়ে বসে থাকে। আর ওদিকে দোলা সিড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসে। তখনই আদিবার সাথে দেখা।
আদিবা;; আরে জেঠিমা যে, তুমি এখানে আর আমি তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।
দোলা;; কেনো কি হয়েছে?
আদিবা;; বাবা ডাকছে তোমাকে।
দোলা;; আব.. আদি মা বলছি কি যে আমি না যেতে পারবো না বুঝলি। আমি আমার রুমে যাচ্ছি। আসলে মাথা টা খুব ধরেছে। এখন না আমি যাই।
আদিবা;; ওহহ আচ্ছা ঠিকআছে যাও৷ আর কিছু দরকার পরলে আমায় বলো।
দোলা;; আচ্ছা।
এই বলেই আদিবা চলে যায় আর দোলা দ্রুত নিজের রুমে এসে পরে। এভাবেই সেইদিনের অর্ধেক বেলা কেটে যায়। দোলা প্রয়োজন ছাড়া আর রুম থেকেই বেরই হয় নি। রাত হয়ে গিয়েছে। দোলা নিজের রুমে রকিং চেয়ারে বসে দুলছে আর চিন্তায় মগ্ন। কোন কিছুতেই মন বসাতে পারছে না। আগের স্মৃতি গুলো যেনো মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। দোলা নিজের চোখ থেকে চশমা টা খুলে চোখ বন্ধ করে ফেলে। ডুব দেয় আগের ভাবনায় যখন সিয়ার বাবা রহমান শেখ বেঁচে ছিলেন।
।
।
“রহমান শেখ আর সাগর চৌধুরী এক কালে বিজন্যাস পার্টনার ছিলেন এমনকি ভালো বন্ধুও ছিলো। তবে দুইজনে দুই রকমের কাজ করতো। যেমন; রহমান শেখ সবসময় ভালোর পথে চলতো, এমনকি গরিব বা দুঃখী যারাই ছিলো সবাইকে এক চোখে দেখতো। অতি সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। এতো মার প্যাচ বুঝতেন না। তবে মানুষের মাঝে রহমান শেখের নাম নিতেই যেনো এক আলাদা সম্মান কাজ করতো। আর অন্যদিকে সাগর চৌধুরী এমন কোন দিন নেই যে জেল খাটে নি। মারামারি, অন্যের জিনিস আত্নসাত করা আরো নানা মন্দ কাজের সাথে লিপ্ত ছিলেন। এগুলো তে অর্নীলের মা যেনো একদম অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছিলেন। এগুলোর পাশাপাশি আরো একটা জিনিস সাগর চৌধুরীর মাঝে কাজ করতো তা হচ্ছে ‘হিংসা’। যেদিকে সাগর চৌধুরীর বাজে রিপোর্টের অভাব ছিলো না তার উল্টো দিকে রহমান শেখের ভালো কাজের কাবিননামারও অভাব ছিলো না। আস্তে আস্তে যারা সাগর চৌধুরীর পক্ষে ছিলো তারাও যেনো রহমান শেখের পাশে এসে দাড়াতে শুরু করে। একদিন রহমান শেখের বাসায় সাগর চৌধুরীকে আমন্ত্রণ করা হয়। রহমান শেখ আমন্ত্রণ তো করেছিলেন তাকে খুশি মনেই কিন্তু কে জানতো যে এই দিন টাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। হলরুমেই রহমান শেখ এবং সাগর চৌধুরী বসে ছিলেন। তবে কথার মাঝেই এক প্রসংগে তাদের বিজন্যাস নিয়ে কথা ওঠে৷ এতে দুজনেই দুই রকম মতামিত রাখে। যার দরুন বেশ রেশারেশি বেজে যায়। আর এক পর্যায়ে সাগর চৌধুরী তার রাগ দমিয়ে রাখতে না পেরে ফলের ঝুড়ি থেকে চাকু হাতে তুলে নিয়ে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে রহমান শেখের গলাতে আচড় কেটে দেয়। শ্বাসনালি বরাবর কেটে যায়। আর তার গায়ের ভেতরে যে ঠিক কতবার চাকু দ্বারা আঘাত করেছে তা গুনতির বাইরে। আর এই সবকিছুই দোলা নিজ চোখে দেখেছে। সে মূলত যাচ্ছিলো সিয়ার বাবার সাথে কথা বলতে তবে তার আগেই তার চোখে এই দৃশ্য এসে পরে। সেই সময়ে কোন কিছুই করার ছিলো না তার। কারণ সেই সময় কালে দোলাও সাগর চৌধুরীর কার্যাবলির সম্পর্কে কিছুটা ধারনা ছিলো। আর যখন একের পর এক ঘা রহমান শেখের গায়ে লাগানো হচ্ছিলো তখন তার কাছে নিজের মুখে শাড়ির আঁচল গুজে কাদা ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা ছিলো না। কেননা তখন তার সাথে ২ বছরের সিয়াও ছিলো। যদি দোলা তখন কিছু বলতো বা প্রতিবাদ করতো তাহলে হয়তো তারা মা-মেয়েও আজ বেঁচে থাকতো না। দোলা কোন কথা না বলেই সেখান থেকে সিয়া কে নিয়ে সোজা বের হয়ে এসে পরে। সাগর চৌধুরী দোলা আর সিয়া কেও সারা বাড়িতে খুঁজেছে মেরে ফেলার জন্য কিন্তু সেইদিন সেই অবস্থা তেই দোলা ছুটে তার মায়ের কাছে গাড়ি দিয়ে এসে পরে। দোলার মা সেইদিন দোলা কে এতো ভয়ার্ত মুখে দেখে চিন্তিত ছিলেন কিন্তু দোলা কিছুই বলে নি। এড়িয়ে গেছে। আর ওদিকে সাগর চৌধুরী ফ্লোরে চাকু টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে এসে পরে। তারপর বাড়ির সার্ভেন্ট রা রহমান শেখ কে এমন অবস্থায় পরে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। তারপর দোলার কাছে খবর যায় কারণ দোলা তখনও নিজের মায়ের বাড়িতেই। শিউলি বেগম সবই বুঝে যায়। দোলা কে জিজ্ঞেস করতেই সে আর কোনকিছুই এবার লুকিয়ে রাখতে পারে না। হুহু করে অঝোড়ে কেদে এক এক করে সব বলে দেয়। পুলিশে স্ট্রশনে ছোট্ট একটা বাচ্চা কে নিয়ে ঘুড়পাক খেতে খেতে দোলার যেনো জীবন যায় যায় অবস্থা। আর সাগর চৌধুরী আসলেই বেশ প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ছিলেন আগে থেকেই। তার বিরুদ্ধে মামলা করা বা তাকে জেলে ভরা চারটে খানিক কথা ছিলো না। আর সাগর চৌধুরী কে জেলে ভরলে যে দোলা তার মেয়ে বা তার মা কে নিয়ে শান্তিতে বেঁচে থাকতে পারতো সেই বিষয়েরও কোন গ্যারান্টি ছিলো না। আর আসলে কি টাকার ওপর নাম বাপ। এই টাকা দিয়ে মানুষের বিবেক-আক্কেল, ইমান-কামান সব কিনে নেওয়া যায়। আর কিনে নেওয়া হয়েছিলোও। পুলিশ অফিসার দের। তারা সব কিছু জানা সত্ত্বেও সাগর চৌধুরীকে এরেস্ট করে নি। কেননা তাদের মুখ টাকা দিয়ে বন্ধ করা ছিলো। কি আর করার এভাবেই দিনের পর দিন মাসের পর মাস কেটে যায়। দোলা এক প্রকার ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলো। কিন্তু তার একটা ফুটফুটে মেয়ে আছে এভাবে ভেঙে পরলে মেয়েটার জীবনে প্রভাব পরবে। তাই দোলা উঠে দাঁড়ায়। যা হওয়ার হয়েছে। ইনসাফ না পেলো তবে একটা ভালো আর সাধারণ জীবন নিজের মতো করে তো বাঁচতে পারবে। এই ভেবেই দোলা তাদের আগের বাসা অর্থাৎ যেখানে রহমান শেখ, দোলা আর সিয়া থাকতো দোলা ওই বাড়ি টা একেবারেই পানির দামে বেঁচে দেয়। তারপর থেকেই দোলার নিজের বাপের বাড়ি তার মাকে নিয়ে থাকা। সেখানে প্রায় ৭ বছরের মতো থেকেছে দোলা রা। তখন সিয়ার ৯ বছর বয়স। সে স্কুলে পরে। কিন্তু সাগর চৌধুরীর লোকেরা আস্তে আস্তে ওই এলাকা তেও এসে নিজেদের পাড়ি জমায়। বেশ বছর কেটে গিয়েছিলো কিন্তু কে জানে যদি আবার সাগর চৌধুরী কিছু করে বসে। দোলার না হলেও তার মেয়ের! এই ভয়েই দোলা নিজের বাপের বাড়িও ছেড়ে দেয়। তারপর অন্য একটা শহরে অন্য একটা ফ্ল্যাটে এসে পরে। এখান থেকেই থাকা। এখানেই সিয়ার বেড়ে ওঠা৷ আস্তে আস্তে স্কুল পেড়িয়ে কলেজ। তবে দোলা কখনোই সিয়াকে এই সবের ব্যাপারে ঘুনাক্ষরেও টের পেতে দেয় নি। সিয়া যখন নিজের বাবার কথা জিজ্ঞেস করতো তখন দোলা বলতো আল্লাহ”র কাছে। সিয়া বড়ো হলে বলেছে হার্ট এটাক করে মারা গিয়েছে। সিয়া তাই মনে করেছে। না দোলা আর না ই শিউলি সিয়াকে কেউ কিছুই বলে নি। এইসবকিছু হতে সিয়া অজানা। সিয়ার সাথে সাথে বিল্লাল নিজেও। বিল্লাল জানে যে তার ভাই রহমান খুন হয়েছে তবে কে করেছে বা কার হাতে হয়েছে তা সে জানে না। আর না ই দোলা বলেছে তাকে। সিচুয়েশন টাই এমন ছিলো। তবে কে জানতো সময়ের চাকা ঘুড়িয়ে একটা সময় এমন দিনও দেখতে হবে দোলাকে। বিল্লাল এখন কিনা নিজের ভাইয়ের খুনির সাথে কাজ করছে। এই খবর টা শুনলে হয়তো বিল্লাল নিজেই ৪৪০° এর ঝটকা খাবে কিন্তু দোলা এমন চাইছে না। সে চায় না যে সে নিজে যা যা সহ্য করেছে তা আবার আরেক দফা হোক। দোলা শুধু নিজের মেয়েকে নিয়ে একটা ভালো সুস্থ জীবন লিড করতে চায় ব্যাস।”
এগুলো কথাই যেনো দোলার মাথায় এসে বাড়ি খাচ্ছে। ফট করে চোখ মেলে তাকায় সে৷ চোখ বন্ধই করতে পারছে না। বন্ধ করতেই আগের সব কালো স্মৃতি এসে ভেসে ওঠে। দোলা জীবনেও নিজে সাগর চৌধুরীর সামনে পরতে চায় না। কেননা আগের সেই ভয় টা দোলা এখনো পায়। তবে দোলার এখন চিন্তা শুধু আর শুধুই নিজের মেয়ে সিয়া কে নিয়ে। দোলা বেশ ভালো করেই চিনে নিজের মেয়ে কে। সিয়া বেশি ইমোশনাল না তবে যার ওপর সিয়ার একবার মায়া পরে যায় বা যাকে সে ভালোবেসে-পছন্দ করে ফেলে তা সিয়া জীবনেও ভুলে না। ইন ফ্যাক্ট সিয়া অসুস্থ হয়ে যায়। এটা ছোট থেকেই। কোন একটা বিষয়ে সিয়া কে বেশি জোর করলে বা তাকে জোর করেই ওই জিনিস টা থেকে দুরে টেনে আনলে সিয়া অসুস্থ হয়ে পরে। এখন দোলা কি করবে? দোলা সিয়ার মধ্যে অর্নীলের জন্য প্রচন্ড রকমের ভালোবাসা দেখেছে। কিন্তু অর্নীলের বাবা তো সাগর চৌধুরী। দোলা কি করে নিজের স্বামীর খুনির একমাত্র ছেলের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে পারে। এটা হয়তো তাহলে রহমান শেখের ক্ষেত্রে ভারি অন্যায় হয়ে যাবে। তাহলে সিয়া? সিয়ার কি! ওর ভালোবাসা আর অর্নীল তাদের কি হবে? দোলা যেনো একটা সমুদ্রের মাঝে এসে পরেছে। যেখানে কোন কূল-কিণারা নেই। না যেতে পারছে ওইদিকে আর না যেতে পারছে এইদিকে। দোলা এই সব কিছু ভাবছিলো তারপরেই তার মনে পরে যে সে সিয়াকে রুমে রেখে এসেছিলো সেই সকালে আর এখন সন্ধ্যে হয়ে এলো বলে। এই কথা মনে পরতেই দোলা উঠে গিয়ে রুমের বাইরে পা রাখে। সিয়ার রুমে গিয়ে আলতো করে দরজা টা খুলে দেখে বিছানাতে বালিশের ওপর সিয়ার পা রাখা আর তার উল্টো দিকে তার মাথা। দোলা রুমের ভেতরে গিয়ে সিয়ার মাথায় হাত রাখে। আর সিয়া সরে আসে কিছুটা। দোলা বুঝলো যে ভারি অভিমান জমা হয়েছে মেয়ের। সিয়া যেনো না বুঝে যে তার মা কান্না করেছে নয়তো এখনই হাইপার হয়ে যাবে। তাই চোখের কার্নিশ ভালোভাবে মুছে গলা পরিষ্কার করে বলে ওঠে……
দোলা;; সিয়া!
সিয়া;; ___________
দোলা;; সিয়া মা রে, কথা বলবি না?
সিয়া;; না।
দোলা;; সরি।
সিয়া;; ___________
দোলা;; যাচ্ছি না তো এখান থেকে। আরে তখন তো শুধুই এমনি বলেছিলাম। যাচ্ছি না, মজা করেছি। তোকে জোর করবো না। তোর যতদিন খুশি এখানে থাক কোন মানা নেই। কেউ কিছুই বলবে না। যতদিন ইচ্ছে।
সিয়া এবার এক ঝটকায় উঠে বসে পরে।
সিয়া;; সত্যি?
দোলা;; হ্যাঁ সত্যি।
সিয়া;; আলাভুউউউউউ।
সিয়া তার মা কে জড়িয়ে ধরে।
দোলা;; আচ্ছা হয়েছে এবার নিচে যা। কখন থেকে রুমে বসে আছিস। যা নিচে যা আর গিয়ে দৌড়াদৌড়ি কর।
সিয়া;; আচ্ছা।
সিয়া নিজের ওরনা টা নিয়ে চলে যেতে ধরবে রুম থেকে তখনই আবার দোলার ডাক।
দোলা;; সিয়া!
সিয়া;; হ্যাঁ
দোলা;; আমি যদি তোর কাছে কিছু চাই তাহলে কি আমায় দিবি।
সিয়া;; আরে মাম্মি জান হাজির হ্যা। একবার বলো তো।
দোলা;; আজ না কাল।
সিয়া;; আচ্ছা। আমি এখন যাই।
সিয়া টাসটাস নিজের স্যান্ডেলের আওয়াজ তুলে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে পরে। আর দোলা তাকিয়ে দেখে রুমের সব অগোছালো তাই সে সব ঠিকঠাক করে দিতে লাগে।
।
।
।
এভাবেই দেখতে দেখতে মাঝখানে কেটে যায় আরো ৪-৫ দিন। তবে দোলা এখনো সিয়াকে কিছুই বলে নি। সিয়া যদিও বেশ কয়েক বার জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু দোলা বলে নি কিছুই। সিয়া রা এসে পরেছে তার চাচ্চুর বাসা থেকে। এখন তারা নিজেদের বাড়িতেই। সিয়া কলেজে যায় রোজ। দুইদিন বাদে তার এক্সাম। তারপরেই ইন্টার ২য় বর্ষে। এরই মাঝে অর্নীলের সাথে খুনশুটি সিয়ার লেগেই থাকে। সিয়াকে অর্নীলের হুট করেই কলেজ থেকে নিয়ে এসে পরা। কেউ কিছু বলে না। কি বলবে, কারো সেই সাহস নেই। আর অবশ্যই সিয়া আর অর্নীলের সেটা পারসোনাল ম্যাটার। সিয়ার বাসার বাইরে অর্নীলের যখন ইচ্ছে তখন এসে পরা। সিয়া মানা করলেও শুনে না সে। দোলা শুধু এইসব কিছু দেখে যায়। বলে না কিছুই। সে প্রিটেন্ড করে এমন যে কিছু হয়ই নি। দোলা সিয়ার মাঝে পাগলামি দেখে। আর অর্নীল যে সিয়াকে কম ভালোবাসে তা কিন্তু না। ইন ফ্যাক্ট সিয়ার থেকে বেশি পাগল অর্নীল নিজে। সিয়া কে সবকিছু কি করে ভেঙে বলে বুঝাবে দোলা তাই সে ভেবে উঠতে পারে না। সিয়া এখন যথেষ্ট বড়ো হয়েছে। তার সবকিছু জানার অধিকার রয়েছে তার। কিন্তু সিয়াকে বলার পরে সবকিছু আদৌ ঠিক থাকবে কিনা বা সিয়া কেমন রিয়েক্ট করবে তাই ভেবে পায় না দোলা। আর অর্নীল,, অর্নীলও জানে না যে তার বাবা সিয়ার বাবা কে খুন করেছে। তা না হলে অর্নীলের মনে নিজের বাবার ব্যাপারে যতটুকু ঘৃণা আছে তার থেকে আরো হাজার গুণে বেড়ে যাবে। অর্নীল নিজের মায়ের মৃত্যু কারণ হিসেবে তার বাবা কে জানে এখন যদি সিয়ার বাবাকে নিজের হাতে মারার খবর জানতে পারে না জানি তখন কি হবে। সময় আর ভাগ্য কত্তো অদ্ভুত জিনিস তাই না! কখন কাকে কার সাথে মিলিয়ে দেয় বা কাকে সামনে নিয়ে আসে তা বলা বড়ো দায়। তবে যাই হোক যত দ্রুত সম্ভব সিয়াকে বলতে হবে সব কিছুর ব্যাপারে৷
এখন রাত, সিয়া তার রুমেই আছে হয়তো বসে বসে গান শুনছে বা লিখালিখি করছে। দোলা সিয়ার রুমে চলে যায়।
।
।
।
।
চলবে~~