তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম পর্ব ৮+৯

#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ০৮

সিয়া হেলে দুলে বাড়ির ভেতরে চলে যায়। আর‍ যেতেই দেখে সিয়ার নানু কোমড়ে দুই হাত দিয়ে কপাল বেশ কুকচে দাঁড়িয়ে আছে। সিয়া তার নানু কে এভাবে একখান দজ্জাল মার্কা লুক নিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এমন একটা ভাব ধরে যেনো সে ভাজা মাছ টাও উলটে খেতে জানে না। সিয়া আবার ইনিয়ে-বিনিয়ে চলে যায় রুমে। রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ব্যাগ টা সোফার ওপরে রেখে নিজে একদম চিৎ হয়েই শুয়ে পরে বিছানাতে। কেনো যেনো মুখে আপনা আপনিই হাসির রেশ লেগে আছে তার। এই বিনা কারণে হাসির কোন মানেই খুঁজে পায় না সিয়া। ক্ষীন কিছু দম ছেড়ে সিয়া উঠে বসে। হাত দিয়ে চুল গুলো ইচ্ছে করেই কিছুটা এলোমেলো করে দেয়। উঠে গিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের দিকে তাকায়। আশে পাশের উঁচু উঁচু বিল্ডিং গুলো দেখছিলো তখনই সিয়ার মা দোলার ডাক…….

দোলা;; সিয়ায়ায়ায়া!!

সিয়া;; আসছি।

সিয়া নিচে চলে যায়। গিয়ে দেখে দোলা তাকে রান্নাঘর থেকে ডাকছে। সিয়া আলতো পায়ে ধীরে ধীরে রান্নাঘরে গিয়ে তার মা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। দোলা হেসে দেয়।

দোলা;; তোর এই স্বভাব টা গেলো না?

সিয়া;; না আর যাবেও না। আচ্ছা কি করো?

দোলা;; সিঙারা বানাই।

সিয়া;; ওহহ আচ্ছা।

দোলা;; ওই কে ছিলো?

সিয়া;; কে?

দোলা;; ওইতো যে তোকে বাসায় রেখে গেলো!

সিয়া;; আব… মা আসলে।

দোলা;; হুম হুম কে ছিলো?

সিয়া;; অর্নীল ছিলো।

দোলা;; ওমা অর্নীলের সাথে তোর আবার কীভাবে দেখা হলো?

সিয়া;; না মানে হয়েছে দেখা,, আমি দা দাঁড়িয়ে ছি ছিলাম তো উনি বললো যে এ এ এসো বাড়ি নামিয়ে দেই ত তো এ এসে প পরলাম আর কি।

দোলা;; দেখেছো মেয়ের কান্ড, ছেলেটাকে বাসায় আনবি না তুই!

সিয়া;; না না থাক, আরেকদিন আসবে নি।

দোলা;; বুদ্ধি-সুদ্ধি কবে হবে তোর!

সিয়া;; আরে ছাড়ো তো। আগে বলো বুড়ির কি হইছে? আমার দিকে ওইভাবে তাকায় আছে কেনো?

দোলা;; ওইযে তোকে হয়তো অর্নীলের সাথে দেখেছে তাই 😅।

সিয়া;; হায়রে।

সিয়া রান্নাঘর থেকে এসে পরে৷ সিয়া তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলো যে হয়তো দোলা তাকে অনেক বকাঝকা করবে কিন্তু না বেঁচে গেছে। শিউলি বেগম হলরুমে বসে বসে টিভি দেখছিলো, সিয়া গিয়ে তার নানুর পাশে ধিরিম করে বসে পরে। সে আড়চোখে তার নানু কে দেখছে।

সিয়া;; আহাম…আহাম।

শিউলি;;

সিয়া;; এইযে..

শিউলি;;

সিয়া;; এই বুড়ি এই

শিউলি;;

সিয়া;; এইযে আমার নানার বউ, কথা কও না ক্যান। কি হইছে? বাতের ব্যাথা বাড়ছে নাকি পান পাতায় জর্দা কম পরছে কোনটা?

শিউলি;; বাইরে থেকে যে আসলি আমার জন্যে কি আনছোস?

সিয়া;; হ্যাঁ 😟? ওওও মা দেখো তোমার মা কি কয়? এই বুড়ি তুমি আমাকে কি বলছিলা যে কিছু লাগবো তা নাহলে তো আনতাম ই। আর এর জন্যই ফুইল্লা আছো তুমি আমার সাথে?!

শিউলি;; জ্বি না তা না, আসলে…. না থাক।

সিয়া;; এই না না কি বলো।

শিউলি;; না কিছু না। বাদ দে

সিয়া;; আচ্ছা দিলাম বাদ।

সিয়া সোফার একদম ওপরে পা তুলে একটা কুশন তার নানুর কোলে রেখে তাতে তার মাথা রেখে শুয়ে পরে। শিউলি সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগে। যতোই হোক সিয়া তার মা & নানুর অনেক বেশি আদরের। ছোট থেকে বাবার আদর পায় নি, বঞ্চিত থেকেছে যার ফলে তার আদর টা দ্বিগুণই। হঠাৎ সিয়া বলে ওঠে……

সিয়া;; আচ্ছা নানি!

শিউলি;; হুমমম।

সিয়া;; শুনেছি নানুভাই নাকি তোমাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলো? কাহিনী কি বলতো। মানে তোমাদের লাভস্টোরি টা একটু বলো, শুনি।

শিউলি;; ধুরু আর কইস না, প্রেমের গপ্প না ছাই। আর তখনকার আমলে প্রেম শব্দ টা মানে ছিলো এক বিশাল অপরাধ। মানে প্রেমের নাম নিলে মনে হইতো কোন এক বিরাট ভুল কইরা ফালাইছে এমন।

সিয়া;; বলো কি! তাহলে তোমার আর নানু ভাইয়ের প্রেম কীভাবে হলো??

শিউলি;; আরে আমাদের বিয়ে প্রেম করে হয় নাই রে। আমরা প্রেম করি নাই,, আমি তখন স্কুলে পড়তাম একদিন বাসায় আসার পথে তোর নানা আমারে দেখে। আমারে নাকি তোর নানার হেব্বি পছন্দ হইছে। তখন তোর নানাও ব্যাংকে একটা ভালো পোস্টে চাকরি করে। এইতো আর কি বুঝোস না তখনকার জামানা। মেয়েদের তো স্কুলের গন্ডি পেরোতে না পেরোতেই বিয়া-শাদি দিয়ে দিতো৷ তোর নানা আমার বাবার কাছে প্রস্তাব দেয়৷ ছেলে ভালো ছিলো তাই আমার আম্মা-আব্বাও রাজি হইয়া গেছে। যদিও তোর নানা বিয়ার পরেও আমারে পড়াইতে চাইছে কিন্তু আমি পড়ি নাই, ভালা লাগতো না। মাথার উপরে দিয়া গেতো সব। তার তিন, সারে তিন বছর পর দোলা হইলো আমার। সব এভাবেই চলছিলো। একদিন তোর নানারে আল্লাহ”র পছন্দ হইলো আর নিয়া গেলো। এইতো আমার প্রেমের মানুষ টা গেলো গা। তখন দোলাই আমার সব। তবে আর যাই কস না ক্যান তোর নানা আমারে বিরাট মোহাব্বত করতো।

সিয়া এক মনে তার নানির দিকে তাকিয়ে ছিলো। খুব মনোযোগ দিয়ে শিউলি বেগমের কথা গুলো শুনলো। সিয়া খেয়াল করলো যে তার নানু শাড়ির আঁচলের এক অংশ দিয়ে চোখের কার্নিশ মুছছে। সিয়া বুঝলো চোখ গুলো ভিজে এসেছে তার। সিয়া ফট করেই তার নানি কে জড়িয়ে ধরে। শিউলিও সিয়া কে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু দিয়ে দেয়।

সিয়া;; চিন্তা করো না নানুভাই এখনো তার শিউলি মালা কে হেব্বি পছন্দ করে।

সিয়া তার নানু কে মাঝে মাঝে শিউলি মালা বলে সম্মোধন করে৷ শিউলি হেসে দেয়। তখনই দোলা হাতের ট্রে তে করে এত্তো গুলো গরম গরম সিঙারা নিয়ে আসে।

দোলা;; কি করা হচ্ছে দুই নানি-নাতনী মিলে হ্যাঁ?

সিয়া;; আরে রোমান্টিক মুডে আছি মা।

দোলা;; মানে?

শিউলি;; আরে ধুরু তোর মাইয়ার কি! আমার আর তোর বাবার কথা তুলছে।

দোলা;; ওহহ আচ্ছা। না ঠিকই আছে। আম্মুর ভাগ্যে যা হয়েছে সেম আমারও তাই। বাবাও আগে চলে গিয়েছে মা কে ছেড়ে আর আমার হাসবেন্ডও৷

সিয়া;; 😒😒

দোলা;; আরে তোর জামাই যাবো না।

দোলার কথায় সিয়া আর শিউলি দুজনেই হেসে দেয়। এভাবেই হাসি-তামাশার মাঝ দিয়ে সময় গেলো।



অর্নীল;; দেখ তোর যা হয়েছে সব আমার সাথে হয়েছে, তোর বোঝা-পড়া সব আমার সাথে তুই আমার ফ্যামিলির দিকে নজর কেনো দিস। তুই জানিস তোকে মেরে তোর লাশ গুম করে দিতে আমার দুই মিনিটও সময় লাগবে না৷

অর্নীলের সামনে এখন আধা মরা হয়ে একটা লোক বসে আছে৷ কপালের কার্নিশ বেয়ে লাল বর্ণ যুক্ত তরল পদার্থ গড়িয়ে পরছে। আর অর্নীলই তাকে মেরেছে৷ আসলে লোকটা এক সময় অর্নীলের সাথেই কাজ করতো কিন্তু অর্নীল জানতে পারে যে অর্নীলের বাবা সাগর চৌধুরী আসলে যে দলের পলিটিক্স করেন সেই দলের ঠিক বিপরীত দলের সাথেই এই লোকটি কাজ করে। আর সবকিছুরই সে কোন দল হোক বা কোম্পানি সবকিছুরই কিছু না কিছু গোপন সূত্র বা গোপন তথ্য থাকে যেগুলো পাবলিকলি লিক করা যায় না। তবে এই লোকটির তাই করেছে। আসলে সে এক প্রকার জাসুসই ছিলো। আর অর্নীল তাকে আজ হাতে নাতে ধরেছে তো এতো সহজে কি করে ছেড়ে দেয়। আর বড়ো কথা হচ্ছে এই লোকটি অর্নীলের বাবার ওপর হামলা করার প্ল্যান পর্যন্ত করেছিলো তাই অর্নীল ক্ষেপে গিয়েছে। অর্নীল অনেক আগেই লোকটিকে তার কুকর্মের জন্য চাকরি থেকে বের করে দিয়েছিলো কিন্তু এখন কিনা সে সোজা সাগর চৌধুরীর ওপর হামলা করতে চেয়েছে এটা জানতে পেরেই অর্নীলের মাথা খারাপ হয়ে যায়৷ তাই গার্ড দের বলে লোকটিকে ধরে বেধে এনেছে।

অর্নীল;; অর্থাৎ তোর সাহসের তারিফ না করে পারি না। তুই কীভাবে কোন সাহসে আবার আমার বাবার ওপর হামলা করার বুদ্ধি আটিস৷ ব্যাস অনেক হয়েছে৷ সেকেন্ড চান্স দিয়েছিলাম তোকে শুনিস নি। এখন আমিও শুনবো না। এইই তোরা একে মার। মারতে মারতে একদম মেরে ফেলবি পরে লাশ গুম করবি। কাল ভোর হওয়ার আগেই যেনো আমি এই জানোয়ারের কিসসা ক্লোস পাই ওকে।

গার্ড;; জ্বি স্যার৷

অর্নীল এতোক্ষণ একটা গোডাউনের ভেতরে চেয়ারে বসে বসে এগুলো বলছিলো। অবশেষে লোকটিকে গার্ড দের হাতে তুলে দিয়ে সে সেখান থেকে চলে আসে। অর্নীল বাইরে এসে গাড়িতে ওঠে ড্রাইভ করতে থাকে। তখনই অর্নীলের মাথায় আসে যে তাকে তো কিছুদিনের জন্য সিটির বাইরে যেতে হবে। এতোদিন সে সিয়াকে না দেখে, তার সাথে না কথা বলে কীভাবে থাকবে। এইত অর্নীলের মাথা যেনো আবার খারাপ হয়ে গেলো। অর্নীল গাড়ি থামায়, ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে রাত বাজে ১২ বেজে ১৫ মিনিট। অর্নীল কয়েক মিনিট কিছু একটা ভেবে আবার গাড়ি স্টার্ট দেয়। বেশ কিছুক্ষণ পর একদম সিয়ার বাসার সামনে পৌঁছে যায়। অর্নীল গাড়ি আবার ঘুড়িয়ে সিয়ার বাসার সামনে থেকে চলে গিয়ে তার বাসার পেছনের দিকটায় দাঁড়ায়। অর্নীল মুখে মাস্ক পরে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরে। ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। সিয়ার রুমের সামনে ছোট করিডর টা দেখা যাচ্ছে৷ এখনো বড়ো বড়ো পর্দা গুলো বাতাসে দুলছে। অর্নীল তার জেকেটের হাতা গুলো গুটিয়ে নেয়। আশে পাশে বার দুয়েক দেখে সামনে হাটা দেয়। কি আর করার করিডর বেয়েই অর্নীল সিয়ার রুমের ভেতরে প্রবেশ করে। অবশ্য যখন এটা ওটা ধরে ওপরের দিকে উঠছিলো সে তখন হাতে কিছু কাটার মতো একটা বিধে যার ফলে এক বিন্দু পরিমাণ রক্ত বের হয়। অর্নীল সিয়াকে ফোন দিয়েছিলো কিন্তু ফোন বাজতে বাজতে কেটে গিয়েছে তাই এই পদ্ধতি টা অবলম্বন করা। ৫-১০ মিনিট পর অর্নীল ধিরিম করে সিয়ার করিডরে এসে নেমে পরে। অর্নীল তার জেকেটের কলার টা কিছুটা ঝাড়ি দিয়ে সিয়ার রুমের ভেতরে যায় আর গিয়েই যা দেখে তাতে যেনো অর্নীলের মনে এক প্রশান্তির ঢেউ বয়ে যায়। সিয়া সাদা চাদরে বুক অব্দি মুড়ে ঘুমিয়ে আছে। চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া। মুখ টা একদম মায়াময়। অর্নীল ধীর পায়ে হেটে গিয়ে সিয়ার বিছানার পাশে গিয়ে আস্তে করে বসে পরে। ঘুমন্ত অবস্থাতেই সিয়ার হাত টা ধরে নিজের মুখের সামনে নিয়ে হাতের উল্টো পাশে চুমু খায়৷ অর্নীল তার দুহাত দিয়ে সিয়ার এক হাত ধরে রাখে আর একমনে সিয়ার দিকে তাকিতে থাকে। তাকিয়ে থাকতে থাকতেই অর্নীল সিয়ার দিকে বেশ খানিক ঝুকে তার কপালে চুমু খায়। এভাবে কয়েক মিনিট পার হয়ে যায়৷ কিন্তু সিয়ার কেনো যেনো মনে হচ্ছে যে ঘুমন্ত অবস্থাতেই তাকে কেউ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে৷ এটা মনে হতেই সিয়া আস্তে করে চোখ মেলে তাকায়। আর তাকাতেই সামনে অর্নীল কে বসে থাকতে দেখে সিয়া একদম তার অন্তর-আত্না ছেড়ে দিয়ে দেয় এক চিৎকার। তবে তা বেশি দূর অব্দি যেতে পারে নি। কেননা অর্নীল সিয়ার মুখ শক্ত করে চেপে ধরেছে। অর্নীল দ্রুত নিজের মুখ থেকে মাস্ক টা সরিয়ে দিয়ে সিয়া কে শান্ত করতে করতে বলে ওঠে………

অর্নীল;; সিয়াজান, রিলেক্স এটা আমি।

সিয়া;; আল্লাহ। আপনি নির্ঘাত আমাকে হার্ট এটাক দিয়ে মারবেন। থেকে থেকে খালি মিনি এটাক দেন। কবে যে মরে………

অর্নীল;; এই চুপ,, ঘোড়ার আন্ডার প্যাচাল পারতাছে৷ একদম চুপ।

সিয়া;; 🤐

অর্নীল;; এই মেয়ে ফোন কয়বার দিয়েছি হ্যাঁ,, আমি বারবার করে বলে দিলাম যে সিয়া ফোন দিলে সাথে সাথে ধরবে কিন্তু কে শোনে কার কথা। ওদিকে ফোন দিতে দিতে আমি পাগল প্রায় আর উনি এদিকে আরামছে চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে।

সিয়া;;

অর্নীল;; আর ওই রাত বাজে বারো টার ওপরে এখনো এই করিডরের দরজা খোলা রেখেছো কেনো? কাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছো?

সিয়া;;

অর্নীল;; কিছু কি বলবে!!

সিয়া;; আজব তো, আপনিই চুপ করে থাকতে বলেন আবার আপনিই কথা বলতে বলেন। আমি করমু ডা কি?

অর্নীল;; আপনি অনুগ্রহ করে কথা বলুন 🙂।

সিয়া;; আচ্ছা, না মানে বাইরে থেকে তাজা তাজা ঠান্ডা বাতাস আসে তো, এতে ঘুম ভালো হয় আমার। তাই ইচ্ছে করেই খোলা রেখেছি।

অর্নীল;; ভালো করেছো।

সিয়া;; আর এই আপনি? আপিনি এতো রাতে এখানে কি করেন? বলা নেই কওয়া নেই সোজা আমার রুমে। আর আপনি কোন দিক দিয়ে এলেন, কীভাবে এলেন??

অর্নীল;; ওইযে করিডরের নিচে যে যন্ত্র গুলো আছে সেগুলোই একটা একটা ধরে আস্তে আস্তে ওপরে এসেছি।

সিয়া;; 🤦‍♀️🤦‍♀️

অর্নীল;; চলে যাবো সকাল বেলাই জানি না দেখা করতে পারবো কিনা তোমার সাথে তাই ভাবলাম এখনই দেখা করে আসি। তাই সোজা এসে পরলাম।

সিয়া;; ফোন দেওয়া যেতো, কথা হতো।

অর্নীল;; হ্যাঁ ফোন দিলে কতোটুকু আর কি কথা হতো তা এতোক্ষণে বুঝে গিয়েছি আমি।

সিয়ার তার ফোনের দিকে তাকায় দেখে যে তা সাইলেন্ট মুডে রাখা তা দেখে সিয়া একটা হাবলার মতো ভেটকি দেয়। আর অর্নীল সিয়ার হাত ধরে টানতে লাগে।

অর্নীল;; চলো।

সিয়া;; আরে কিন্তু কোথায়?

অর্নীল;; আরে চলো চলো চলো।

অর্নীল সিয়াকে রুম থেকে এনে করিডরে দাড় করিয়ে দেয়।

সিয়া;; আমরা এখানে কেনো আসলাম।

অর্নীল আর কিছু না বলেই সিয়াকে নিজের সামনে দাড় করিয়ে দেয়। সিয়ার একটা হাত ধরে আর নিজে এক হাটু ভাজ করে দিয়ে সিয়ার সামনে বসে পরে। বেশ আবেগ মাখা দৃষ্টিতেই অর্নীল সিয়ার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে……

অর্নীল;; আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি সিয়াজান! আর এটা মিথ্যে কোন কথা নয়। আমি নিজেই নিজের ওপর এখন বিশ্বাস করি না জানো।কারণ আমি কখনো ভাবিই নি যে আমিও,, আমিও কখনো কোনদিন কাউকে এভাবে ভালোবাসবো। বিশ্বাস করো সিয়া তোমাকে একদিন না দেখলে বা একদিন কথা বন্ধ রাখলে আমি উন্মাদ পাগল হয়ে যাবো। আমাদের দেখা হওয়ার সময় টা হয়তো কম হবে কিন্তু আমার ভালোবাসা কম না। সিয়া আমি আমার জীবনের শেষ টা তোমার সাথে দেখতে চাই। খুব করে চাই। আমি চাই আমাদেরও একটা ছোট ভালোবাসার দুনিয়া হোক। তুমি, আমি আর আমাদের ভালোবাসা। আমি ভালোবাসি তোমাকে সিয়া। জানি তোমার কাছে এখন অদ্ভুত লাগতে পারে যে এতো রাতে আমি এগুলো কি বলছি তোমাকে কিন্তু এগুলো আমার ভেতর থেকে আসা কথা। তুমি জানো আমার ভেতরে এর থেকেও আরো হাজার গুণে বেশি কথা লুকিয়ে আছে কিন্তু এখন আমি বলতে পারছি না। এর বিশালতা গভীর সিয়া। পরিশেষে আমি শুধু এটাই বলবো যে এই অর্নীল তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে সিয়া, অনেকটাই বেশি। You r my world, my everything… And i love you more then anything Siya…. আর হ্যাঁ এটা নিয়ে কিন্তু আমার দুই নাম্বার প্রপোজ করা তোমাকে। মানুষ এইক্ষেত্রে হাতে একতোড়া ভালোবাসা ময় ফুল বা চকোলেট বা রিং নিয়ে প্রপোজ করে কিন্তু আমি শূন্য হাতে তোমাকে নিজের মনের কথা ব্যাক্ত করলাম। ওহ সরি, হাত শূন্য হতে পারে কিন্তু আমার বুক কিন্তু কখনোই না শূন্য ছিলো আর না ই থাকবে। এক বুক ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছি আমি তোমার জন্য। যা শুধু আর শুধুমাত্র তোমার নামেই লিখা সিয়া। আমার ভালোবাসার ওপর অধিকার শুধুই তোমার,, আর তোমার ওপর আমার। সিয়াজান, ভালোবাসবে কি আমায়?!

অর্নীল এই বলেই সিয়ার হাত টা ছেড়ে দেয়, সিয়ার সামনে নিজের দুই হাত মেলে দেয়। শেষ কথাটা যেনো একটা প্রশ্নই ছিলো সিয়ার উদ্দেশ্যে করা। অর্নীল বেকুল ভাবে সিয়ার মাঝে নিজের উত্তর খুঁজে যাচ্ছে। অর্নীল যে এক একটা কথা বলছিলো তাতে সিয়ার বুকের ধুকপুকানি ক্রমশ বাড়ছিলো। সিয়া জানে না কেনো এমন হচ্ছে আর আগে কখনো কোন কারণেই সিয়ার এমন ফিলিং হয়নি। সিয়া এক মনে অর্নীলের দিকে তাকিয়ে ছিলো তখনই সিয়ার অজান্তেই তার চোখ দিয়ে টুপ করে এক বিন্দু পানি গড়িয়ে পরে। ছলছল চোখে সিয়া অর্নীলের দিকে তাকিয়ে থাকে। অর্নীল আর সিয়া একে ওপরের দিকে স্থির ভাবে তাকিয়েই আছে। অর্নীল তার মাথা টা খানিক নাড়ায়, যেনো সিয়ার দিকে প্রশ্ন টা আবার করা তার। এমনকি অর্নীল এখনো সিয়ার দিকে নিজের দুই হাত মেলে দিয়ে বসেই আছে এক হাটুর ওপর ভর করে। সিয়া অর্নীলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আর না পেরে ঝট করেই অর্নীলের বুকে ঝাপিয়ে পরে। এক নিমিষেই অর্নীল কে জড়িয়ে ধরে। অর্নীল নিজেও সিয়ার মাথার পেছনে হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। অর্নীলের মুখে ফুটে ওঠে এক লাগামছাড়া হাসি। যেনো সে তার সিয়াকে পেয়ে দুনিয়ার সব পেয়ে গেছে। আর সিয়া কিছুটা ফুপিয়ে ওঠে। অর্নীল সিয়াকে প্রায় অনেকক্ষন যাবত জড়িয়ে ধরে থাকে, তারপর নিজের দুই হাত দিয়ে সিয়ার গালে হাত রেখে তাকে নিজের সামনে আনে। সিয়া আর তার মাথা টা একসাথে ঠেকিয়ে দেয়। সিয়া কিছুটা নাক টেনে ওঠে।

অর্নীল;; তো সিয়াজান! আমি আমার উত্তর কি ধরে নিবো?

সিয়া মাথা তুলে অর্নীলের দিকে তাকায়।

অর্নীল;; বলো! আচ্ছা থাক ভালো না বাসলে আমি আরেক জনে…………….

সিয়া;; ভালোবাসি তো। আরেক জন মানে। আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমিই আছি আর কাউকে দরকার নেই। আমিই তো ভালোবাসি আপনাকে।

অর্নীল হেসে দিয়ে সিয়াকে আরেক দফা নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।

অর্নীল;; সিয়াজান, This is the best gift for me….beautiful gift ever & the gift is you my love…. আমি ভালোবাসি। সত্যি বাইরে যাওয়ার আগে আগে তুমি আমায় ভালোবাসি কথা টা বলেছো৷ এটা আমার জন্য ঠিক কি পরিমাণ বড়ো একটা জিনিস তা আমি বলে বুঝাতে পারবো না।

অর্নীল সিয়ার গালে, কপালে চুমু একে দেয়। আরো বেশকিছু সময় অর্নীল সিয়ার কাছে থেকে তারপর এসে পরে। দরজা দিয়ে না, এবারও ওই করিডর দিয়েই নিচে নেমেছে অর্নীল। আর সিয়া এগুলো দেখে হেসেই শেষ। সিয়া করিডরের ওপরে দাঁড়িয়ে ছিলো অর্নীল বাইরে এসে কতোক্ষন সিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে এসে পরে। অর্নীলের চলে যেতেই সিয়া রুমে এসে খুশিতে একটা ঘুড়ান্টি দেয়। তারপর ঠাস করে বিছানার ওপর শুয়ে বালিশকে ঝাপটে ধরে দেয় এক লম্বা ঘুম।


পরেরদিন সকালে সিয়ার ঘুম ভাঙে কিছু একটা ভাংচোরের আওয়াজে। সিয়া জলদি উঠে গিয়ে নিচে নেমে পরে। গিয়েই দেখে হলরুমে বেশকিছু লোক, তাদের দেখে তো মনে হচ্ছে যে স্টাফ। আর তারা ঘরের জিনিস গুলো গোছাচ্ছে। তখনই দোলা আসে, সিয়াকে দেখে মনে হচ্ছে সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেই এসেছে। সিয়া ঘরের সব জিনিস পত্র গোছগাছ করতে দেখে অবাক হয়ে দোলা কে জিজ্ঞেস করে….

সিয়া;; মা, এগুলো কেনো আর সব গোছাচ্ছে কেনো?

দোলা;; আসলে আমরা আরেক জায়গায় সিফট হচ্ছি তাই।

সিয়া;; মানে??

দোলা;; ফ্ল্যাট টা চেঞ্জ করছি আমরা।

সিয়া;; কেনো এখানে কোন সমস্যা হয়েছি কি?

দোলা;; না, তেমন কোন সমস্যা না তবে এখান থেকে আরেক ফ্ল্যাটে যাচ্ছি। তোকে বলতাম কিন্তু তা মাথা থেকেই বের হয়ে গিয়েছিলো।

সিয়া;; ওহহ আচ্ছা।

দোলা;; তা তুই কি আজ কলেজে যাবি?

সিয়া;; হ্যাঁ যেতে হবে কিছুদিনেই টেস্ট আছে।

দোলা;; ওহহ আচ্ছা তাহলে তুই রুমে যা আমি ব্রেকফাস্ট নিয়ে তোকে দিয়ে আসবো।

সিয়া;; আচ্ছা।

সিয়া রুমে চলে যায়। চুল গুলো পেছনে বেধে নেয়, ব্রাশ করতে লাগে কিন্তু তখনই ফোন আসে। সিয়া দেখে অর্নীলের ফোন তাও আবার ভিডিও কল। এইতো গেলো, সিয়া তো ব্রাশ করে এখন ভিডিও কল কীভাবে। যাজ্ঞে, সিয়া ব্রাশ করা অবস্থাতেই ভিডিও কল রিসিভ করে। অর্নীল কিছু বলতে যাবে কিন্তু ফোনের স্ক্রিনের ওপর পাশে সিয়াকে ব্রাশ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে কপাল কুচকে তাকায়।

অর্নীল;; এটা কি হচ্ছে?

সিয়া;; আরে ব্রাশ, ব্রাশ। কেনো আপনি করেন না?

অর্নীল;; হুয়াট দা…….! সিয়া

সিয়া;; হুম হুম

অর্নীল;; এভাবে কেউ ব্রাশ করে। ভিডিও কল দিয়েছি আমি আর তুমি ব্রাশ করছো।

সিয়া;; আরে কলেজ আছে আর ঘুম থেকে উঠতে দেরি করে ফেলেছি তো তাই। এখন সব একসাথে করছি।

অর্নীল;; তুমি কবে জলদি ঘুম থেকে উঠো, একটু বলবা আমাকে!

সিয়া;; হুম হয়েছে, আচ্ছা আপনি এখন কোথায়?

অর্নীল;; গাড়িতে।

সিয়া;; ওহহ, আচ্ছা শুনুন জলদি এসে পরবেন।

অর্নীল;; হায়, আমাকে মিস করবে বুঝি!

সিয়া;; অলরেডি করছি। (আস্তে করে)

অর্নীল;; কি?

সিয়া;; কিছু না, বললাম যে আমরা সিফট হচ্ছি।

অর্নীল;; কোথায়?

সিয়া;; না মানে এই শহরেই থাকবো তবে এটা তো রোড নাম্বার ৭, আর আমরা যাচ্ছি রোড নাম্বার ১৩ তে।

অর্নীল;; ওহহ আচ্ছা। সমস্যা নেই সেখানেও আমি টপকে পরবো।

সিয়া;; হ্যাঁ আপনার তো কাজই ওইটা। আচ্ছা অর্নীল শুনুন আমার যেতে হবে। তাই আমি এখন রাখি ওকে। ক্লাস থেকে বের হয়ে আমিই আপনাকে কল দিবো।

অর্নীল;; ওকে।

সিয়া;; বায়।

অর্নীল;; টেক কেয়ার, লাভ ইউ।

এই বলেই অর্নীল ফোন কেটে দেয়। সিয়ার মা এসে ব্রেকফাস্ট দিয়ে যায় সিয়া খেয়ে কোন রকমে বাইরে বের হয়ে পরে। কলেজ থেকে ফিরে আর মনে হয় এখানে আসা হবে না সোজা নতুন ফ্ল্যাটে চলে যেতে হবে। সিয়া বাড়ি টা ঘুড়ে ঘুড়ে একটু দেখে নেয় এখানে ৫ বছর থেকেছে, কিছুটা মায়া কাজ করছে। তবে সিয়া এটা বুঝতে পেলো না যে দোলা কেনো হুট করে ফ্ল্যাট চেঞ্জ করছে কেননা দোলা একবার বলেছিলো যে এই ফ্ল্যাট টা নাকি তারা একেবারেই কিনে নিবে। যদি কিনে নেওয়ারই ছিলো তাহলে হুট করেই চেঞ্জ কেনো করছে। যাই হোক সিয়া বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে, আর দোলা-শিউলি এদিক টা সামলায়।
#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ০৯

মাঝখানে কেটে গেলো আরো চারদিন। সিয়া রা তাদের নতুন ফ্ল্যাটে উঠে এখন সেখানেই থাকছে। সবকিছু বেশ ঠিক ঠাক ভাবেই চলছে। অর্নীলের সাথে সিয়ার প্রায় সারাদিনই ফোনে কথা হয়। তাদের সম্পর্ক টা যেনো আগের থেকে আরো বেশি গাঢ় হয়ে গেছে। সিয়ার জন্য অর্নীল বলতে গেলে পুরো পাগল। অর্নীলের কাজে বাইরে যাওয়াতে তো কয়েকদিন যাবত দেখা হয় না শুধু ফোনেই যোগাযোগ হয় তাদের। এতে সিয়ার কাছে তাদের সম্পর্ক টা কেমন যেনো একটু লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপের মতো লাগে। তবে সিয়া তাদের ব্যাপারে এখনো কাউকে সোজা সাপটা কিছু বলে নি। সিয়া রুম থেকে নেমে এসেই নিচে গিয়ে বসে পরে৷

দোলা;; কিরে আজ কলেজ নেই তোর?

সিয়া;; না, ক্লাস নেই তো গিয়ে কি করবো। তবে কফি শপে শান্তি আর অনুর সাথে দেখা করার কথা।

দোলা;; ওহহ তো কখন যাবি?

সিয়া;; ঘন্টা খানিক পর।

এভাবেই বেশ সময় চলে যায়। সিয়াও বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। হঠাৎ দরজাতে কলিং বেলের আওয়াজ শুনে সিয়া গিয়ে দরজা খুলে দেয়৷ দেখে একজন মাঝ বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে আছে সিয়া তাকে দেখে বেশ অবাকই হয়।

সিয়া;; জ্বি আপনি..?

লোকটি কিছু বলতে যাবে তার আগেই দোলা এসে পরে৷ তারপর লোকটিকে ভেতরে আসতে বলে। সিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে৷ সে লোকটিকে চেনে না। লোকটি গিয়ে দোলার সাথে বেশ কিছু কথা বলে৷ তারপর কিছু পেপারে দোলার সিগন্যাচার নিয়ে বের হয়ে পরে।

সিয়া;; মা লোকটি কে ছিলো?

দোলা;; উনার কাছে আমাদের জমি টা বিক্রি করে দিয়েছি।

সিয়া;; নানভাইয়ের জমি?

দোলা;; হ্যাঁ।

সিয়া;; কেনো?

দোলা;; আমরা তো এখানেই থাকবো। একটা ফ্ল্যাট কিনে নিবো, জমি টা অযথা পরিত্যক্ত হয়ে পরে থাকার চেয়ে বিক্রি করে দিলাম।

সিয়া;; ওহহ আচ্ছা। আচ্ছা আমি যাই।

দোলা;; আচ্ছা মা শোন না!

সিয়া;; হ্যাঁ

দোলা;; তুই পারলে একটু জলদি আসিস আমাকে একটু তোর বিল্লাল চাচার কাছে যেতে হবে।

সিয়া;; সেকি চাচ্চুর বাসায় যেতে তো বেশ সময় লাগবে আবার আসবে আরো সময় লাগবে।

দোলা;; না না তোর চাচ্চু আমার জন্য অপেক্ষা করবে আমি শুধু যাবো। কিছু কাজ আছে। বেশি না আধা ঘন্টা লাগবে।

সিয়া;; আব… আচ্ছা।

এই বলেই সিয়া বের হয়ে পরে৷ একটা রিকশা নিয়ে চলে যায় কফি শপে। যেতেই দেখে শান্তি আর অনু আগে থেকেই সেখানে বসে আছে।

শান্তি;; ওই যে ম্যাডাম আসছে।

সিয়া;; সরি রে, দেরি হয়ে গেলো।

শান্তি;; আরে ঠিক আছে।

সিয়া;; কখন এসেছিস তোরা?

অনু;; বেশি না ১০ মিনিটের মতো হবে।

সিয়া;; ওহহ।

অনু;; কিরে তোরা নাকি বাসা চেঞ্জ করেছিস?

সিয়া;; হ্যাঁ। করতে হলো।

শান্তি;; আচ্ছা বল কি খাবি! অর্ডার দেই।

সিয়া;; ক্যাপাচিনো।

শান্তি;; ওকে, থ্রি ক্যাপাচিনো।

শান্তি অর্ডার দিয়ে দেয়। আর এদিকে অনু সিয়ার লেগ পুল করতে ব্যাস্ত।

অনু;; তো, সিয়া বাবু তোমাদের তো ভালোই চলতাছে।

সিয়া;; মানে? (হেসে দিয়ে)

শান্তি;; আহা, মানে বুঝো না তাই না।

সিয়া;; আরে কচু, সত্যিই বুঝি নাই।

অনু;; আহাম, আহাম। শান্তি রে বইন ওরে বুঝা।

সিয়া;; মানে কি?

শান্তি;; ওইই অর্নীল স্যার আর তুই যে চুটিয়ে প্রেম করছিস কি ভেবেছিস তা জানি না আমরা, বুঝি না কিছু।

সিয়া;; না মানে আসলে…

অনু;; হইছে, ওই আসল নকল নিয়াই পইরা থাকো তুমি।

শান্তি;; এখন ট্রিট দে।

সিয়া;; ট্রিট?!

অনু;; অবশ্যই প্রেম করো তলে তলে আর ট্রিট দিবা না! ট্রিট দাও, ট্রিট দাও।

সিয়া;; তোরা তো দেখি আচ্ছা প্যাচে ফেললি। হ্যাঁ করছি প্রেন যা স্বীকার করেই নিলাম। এখন ট্রিট টাও দয়া করে অর্নীলের কাছ থেকেই নিয়ে নিও।

শান্তি;; এখন থেইকা তাইলে দুলাভাই বইলা ডাকমু।

সিয়া;; আগে বিয়ে তো হইতে দে মেরি মা।

অনু;; হতে কতোক্ষণ!

শান্তি;; একদম, আমার তো মন বলে যে কবে যেনো শুনতে পারবো আমাদের সিয়া পালিয়ে গিয়েছে৷

এই বলেই অনু আর শান্তি হাসতে লাগে। আর সিয়া কথা টা উপেক্ষা করে যায়। এভাবেই তিন জন মিলে বেশ সময় আড্ডা দিচ্ছিলো কিন্তু হুট করে শান্তি আর অনু অবাক হয়ে সিয়ার পেছনের দিকে তাকায়। সিয়া তাদের দুইজনের নজর কে অনুসরণ করে তার পেছনের দিকে তাকাতে যাবে কিন্তু সাথে সাথে শান্তি আর অনু সিয়া কে আটকে দেয় পেছন দিকে তাকানো থেকে৷

শান্তি;; আরে আরে কি করছিস? পেছনে তাকাতে হবে না। তুই এখানে দেখ৷

সিয়া শান্তির সাথে কথা বলতে থাকে। কিন্তু তার কয়েক মিনিট পরেই শান্তি আর অনু কিছুটা হকচকিয়ে বলে ওঠে……

অনু;; আচ্ছা সিয়ু বেবি শোন আমরা এখন যাই কেমন। মানে আমাদের না কিছু কাজ আছে বুঝলি, আমরা এখন যাই!

সিয়া;; আরে কিন্তু এভাবে হুট করে…..

শান্তি;; আরে আগামীকাল তো দেখা হচ্ছেই তাই না। তো আজ আমরা যাই কেমন! থাক হ্যাঁ, বায়।

সিয়া;; কিন্তু তোরা….. আরে!

সিয়াকে আর কিছু বলতে না দিয়েই শান্তি আর অনু কফি শপ থেকে বের হয়ে পরে যেনো এখান থেকে কোন রকমে চলে গেলেই বাঁচে। ওদের চলে যেতেই সিয়া নিজের ক্যাপাচিনো খাওয়ার দিকে নজর দেয়। তখনই পেছন দিক থেকে এক জোড়া হাত এসে সিয়ার চোখ দুটো কে আবদ্ধ করে নেয়। সিয়া প্রথমে অবাক হয়ে চমকে গেলেও পরে শান্ত হয়ে যায়। হাত দিয়ে হাতিয়ে হাতিয়ে সেই হাত জোড়ার মালিক কে চেনার চেষ্টা করছে। কয়েক সেকেন্ড যেতেই সিয়ার মুখ দিয়ে আনমনেই উচ্চারিত হয় “অর্নীল”। সিয়ার বিশ্বাস টা আরো গাঢ় হতে লাগলে সে হাত জোড়া নিচে নামিয়ে দিয়ে ফট করে পেছনে ঘুড়ে তাকায়। সে ঠিক ছিলো, এটা অর্নীলই। অর্নীল কে এই মূহুর্তে এখানে দেখে সিয়া জাস্ট সারপ্রাই’ড। সিয়া বসা থেকে উঠে সোজা অর্নীল কে জড়িয়ে ধরে। অর্নীল নিজেও বেশ হেসে সিয়াকে জড়িয়ে ধরে। আর শপের পুরো মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ মুচকি হাসছে তাদের দেখে। কিন্তু তাদের কে তোয়াক্কা না করে সিয়া অর্নীল কে জড়িয়ে ধরেই আছে। বেশ সময় হয়ে যায় তবুও সিয়ার অর্নীলের বুক থেকে ওঠার নাম নেই। তা খেয়াল হতেই অর্নীল সিয়াকে খানিক টেনে সরিয়ে দেখে মেয়ে কাদছে। অর্নীল হাসবে না কি করবে বুঝে না।

অর্নীল;; সিয়া! আরে বাবা আমি আসছি তো কাদছো কেনো?

সিয়া;; 😓

অর্নীল;; সিয়াজান!

সিয়া;; জানেন আপনাকে আমি কত্তো মিস করেছি, আমি তো ভেবেছিলাম যে আপনি আরো দেরিতে আসবেন।

অর্নীল;; আগেই আসতাম আরো বাট কাজের চাপ বেশি ছিলো।

সিয়া;; আপনি আর কোথাও যাবেন না।

অর্নীল;; আচ্ছা।

অর্নীল সিয়ার মাথার ওপর নিজের থুতনি টা রেখে দিয়ে আরো জড়িয়ে ধরে। অবশেষে ছেড়ে দিয়ে দুজনেই বসে পরে।

সিয়া;; ওহহ আচ্ছা আচ্ছা, এবার বুঝলাম আমি যে কেনো শান্তি আর অনু চলে গিয়েছে। আপনি তাদের ইশারা দিয়ে যেতে বলেছেন তাই না!

অর্নীল;; হ্যাঁ।

সিয়া;; হায়রে,, আচ্ছা আপনি কখন এখানে এসেছেন? আর আমি যে এখানে আছি তা জানলেন কীভাবে?

অর্নীল;; তা জানা কোন ব্যাপার হলো নাকি। আর এসেছি এক ঘন্টা হবে তো সোজা এখানে এসে পরলাম।

সিয়া;; হুমমম।

অর্নীল;; আমরা বিয়ে করছি কবে?

সিয়া ক্যাপাচিনো খাচ্ছিলো কিন্তু অর্নীলের এমন কথায় সিয়া বেশ অবাক হয়েই খাওয়া ছেড়ে তার দিকে তাকায়৷

সিয়া;; বুঝলাম না!

অর্নীল;; আরে বিয়ে বিয়ে, কবে হচ্ছে আমাদের বিয়ে?

সিয়া;; ফেব্রুয়ারির ৩০ তারিখে।

অর্নীল;; আমি ফাজলামি করছি না সিয়াজান। আমার মাথা খারাপ হয়ে গেলে সোজা তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো। তুমি জানো তোমাকে ছাড়া আমি কীভাবে থাকি।

সিয়া;; এহহহহ, তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলবো। মামার বাড়ির আবদার। বললেই হলো।

অর্নীল;; আহা,, শশুড় বাড়ির আবদার।

সিয়া;; আমি ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি,, আরেকটু বড়ো হই তারপর। আপনি তো বুড়া, পড়াশোনা শেষ আপনার।

অর্নীল;; বুড়া বলেন আর যাই বলেন আপনাকে এই বুড়াকেই বিয়ে করতে হবে মিস. জান্নাতা আফরিন সিয়া। এই বুড়ার ই বুড়ি হতে হবে, উপায় নেই। আমাকে ছেড়ে আপনি কোথায় যাবেন সেখান থেকে ধরে বেধে আনবো।

সিয়া;; 😏

অর্নীল;; মুখ টা ত্যাড়া হয়ে যাবে। তখন সবাই বলবে যে অর্নীলের বউ এর মুখ ত্যাড়া।

সিয়া;; এই চুপ করুন।

অর্নীল আর সিয়া এভাবেই বসে বসে খুনশুটি করছিলো কিন্তু হঠাৎ শপের বাইরে সিয়ার মা দোলা আসে। অর্থাৎ উনি ওই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলেন আর কি। দোলা চলেই যেতো রাস্তা পার করে কিন্তু শপের সব দরজা-জানালা গুলো কাচের হওয়াতে ভেতরের প্রায় সবই দেখা যায়। আর কাকতালীয় ভাবে সিয়াকে দোলার নজরে পরে। দোলা তার কপাল কুচকে সিয়ার দিকে তাকায়, কিন্তু সুস্পষ্ট হওয়ার জন্য আরো একটু কাছে গিয়ে খেয়াল করে দেখতেই দোলা বুঝে যায় যে এটাই সিয়া। পাশে তাকিয়ে দেখে অর্নীল বসে আছে। এতে দোলার টনক নড়ে। সে কিছু না বলে সেখান থেকে সোজা চলে আসে। তারও বেশ সময় পরে সিয়ার খেয়াল হয় যে তার মা তাকে একটু জলদি জলদি বাড়ি ফিরতে বলেছিলো। সিয়া তার হাতে থাকা ঘড়ি দেখে দ্রুত বলে ওঠে……

সিয়া;; ওহ হো,, অর্নীল শুনুন আসলে বাসায় নানু একা তো আর মা একটু বাইরে গিয়েছে। সময় অনেক চলে গিয়েছে আমাকে জলদি বাড়ি ফিরতে বলেছিলো মা। So, i have to go now…

অর্নীল;; ওকে ফাইন, তো চলো তোমাকে ড্রপ করে দেই।

সিয়া;; আচ্ছা।

অর্নীল আর সিয়া শপ থেকে বের হয়ে বাইরে এসে গাড়িতে ওঠে পরে। প্রায় ১৫-২০ মিনিট পরেই সোজা সিয়ার বাসার সামনে এসে থামে। সিয়া অর্নীলের গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে তাকে টাটা জানায়। অর্নীল চলে গেলেই সিয়াও ভেতরে এসে পরে, এসেই দেখে তার মা বসে বসে গল্প করছে তার নানুর সাথে।

সিয়া;; ওহ মা তুমি এসে পরেছো?

দোলা;; হ্যাঁ, মানে কাজ তো শেষ তাই জলদি এসে পরেছি।

সিয়া;; ওহহ ভালো করেছো। নানি এই দেখো তোমার জিনিস।

শিউলি;; কি?

সিয়া প্রায় ২০ টা পানের খিলি তার নানির সামনে রেখে দেয়। ওইযে সেইদিন বলেছিলো যে বাইরে গেলে কিছু নাকি আনে না। তাই সিয়া এটা এনেছে। আর সে জানে যে তার নানির পান হলে আর কিছু লাগে না। শিউলি বেগন যেনো পানের খিলি গুলো পেয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো। সিয়া গিয়ে দোলা আর শিউলির মাঝে বসে পরে।

দোলা;; তো শান্তি আর অনুর সাথে দেখা কেমন করলি?

সিয়া;; ভালো, হারামিরা এসেছিলো কিন্তু অনেক তাড়াতাড়ি চলেও গিয়েছে।

দোলা;; হুমমম।

সিয়া;; আচ্ছা তুমি হাসছো কেনো? যখন থেকে এসেছি খালি আমাকে দেখে হাসছো?

দোলা;; তো এখন কি আমি কানমু?

সিয়া;; হেহেহেহেহে, তা বলি নাই। কিন্তু এতো মিটমিট কইরা হাসতাছো কেনো?

দোলা;; ওইটা তোর না বুঝলেও চলবো চুপ থাক। বাইরে থেকে এসেছিস যা ফ্রেশ হ। আমি খেতে দিচ্ছি।

সিয়া;; আচ্ছা।

সিয়া ওপরে চলে যায়। আর দোলা তাকিয়ে দেখে তার মা বসে বসে পান চিবুচ্ছে। দোলা ফিক করে হেসে দেয়।

শিউলি;; আচ্ছা কিছু কি হয়েছে?

দোলা;; তোমার নাতনী ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে।

শিউলি;; মানে?

দোলা;; ছাড়ো,, তুমি পান খাও।

এই বলেই দোলা চলে যায়। আর সিয়া ওপরে রুমে এসে ওয়াসরুমে ঢুকতে যাবে তখনই তার মনে পরে যে হলরুমের সোফাতে সে তার ব্যাগ রেখে এসেছে যদি কারো হাতে পরে তাহলে শেষ আর অর্নীল মিনিটে মিনিটে তাকে ফোন দেয়। এটা মনে পরতেই সিয়া এক দৌড়ে হলরুমে চলে যায়। ব্যাগ টা হাতে নিয়ে আবার এক দৌড়ে সোজা রুমে। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নেয়। সেই দিন টা এভাবেই চলে। রাতের বাজছে ১০ টা সিয়া তার টেবিলে বসে বসে নোটস করছে। তখনই তার মা হাতে এক গ্লাস দুধ নিয়ে সিয়ার রুমে আসে।

দোলা;; এই কি করিস?

সিয়া;; ধুরু আর বইলো না। নোটস করছি। ভালো লাগে না

দোলা;; হুমম কর আর এটা খা।

সিয়া;; কি?

দোলা;; দুধ।

সিয়া;; আমি মাফও চাই দোয়াও চাই। আমি দুধ খাইতে পারমু না। আমার মাথা ঘোরায়।

দোলা;; দুধ না খেলে ব্রেন হবে না পড়তে পারবি না।

সিয়া;; এহহ বলছে তোমারে, দুধ খাইলে যদি ব্রেনই হইতো তাহলে গরুর বাচ্চা রাই ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হইতো। আর আমরা ঘাস, লতা-পাতা খাইতাম।

দোলা;; বাজে কথা না বলে এটা খা।

সিয়া;; আম্মুউউউউ

দোলা;; আচ্ছা অর্ধেক খা।

সিয়া ২-৩ ঢোক খেয়েই দুধের গ্লাস টা সরিয়ে রাখলো। তার পক্ষে আর সম্ভব না।

দোলা;; আচ্ছা এগুলো লিখালিখি শেষ করে ঘুমিয়ে পরিস।

সিয়া;; গুড নাইট।

দোলা;; গুড নাইট সোনা।

কয়েক ঘন্টা চলে যায়। ঘড়ির কাটা যখন প্রায় বারো টা ছুই ছুই তখন দিয়া আর বসে থাকতে না পেরে সব অফ করে হাই তুলতে তুলতে বিছানাতে গিয়ে শুয়ে পরে। নিজের ফোন টা চেক করে। অবাক হওয়ার বিষয়। অর্নীল তাকে এই তিন ঘন্টার মাঝে একটাও ফোন বা মেসেজ দেয় নি। হয়তো ব্যাস্ত কাজে, এই ভেবেই সিয়া চাদর টা দিয়ে একদম মাথা অব্দি মুড়ি দিয়ে অগোছালো ভাবে ঘুমিয়ে পরে। বেশি না ২০ মিনিট যেতে না যেতেই ফোনের কর্কশ আওয়াজে সিয়ার ঘুম ভেঙে যায়। বিরক্তির চরম পর্যায়ে এখন সে, তবুও ঘুমের ঘোরেই ফোন টা কোন রকমে হাতিয়ে নিয়ে কানের কাছে ধরে।

সিয়া;; হ্যালো

অর্নীল;; হ্যালো সিয়াজান।

সিয়া;; আপনি?

অর্নীল;; না তো কে থাকবে। আচ্ছা শুনো ঘুম থেকে ওঠো জলদি।

সিয়া;; কিন্তু কেনো?

অর্নীল;; আরে জলদি ওঠো আর করিডরে এসো। ফোন কাটবে না, কানে নিয়েই করিডরে এসো।

সিয়া;; আরেএএএএ,, আচ্ছা আসছি।

সিয়া ঢুলু ঢুলু পায়ে বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে করিডরে দাঁড়ায়। দেখে বাড়ির নিচে অর্নীল দাঁড়িয়ে আছে। সিয়া তার চোখ দুটো কিছুটা ডলে নিয়ে তারপর আবার দেখে। হ্যাঁ অর্নীল আসলেই দাঁড়িয়ে আছে। অর্নীল তার হাত নাড়িয়ে হাই দেয়।

সিয়া;; আপনি এতো রাতে এখানে কি করেন?

অর্নীল;; নিচে নেমে এসো তারপর বলছি।

সিয়া;; কি? এতো রাতে নিচে কেনো?

অর্নীল;; আরে আসতে বলেছি আসো।

সিয়া;; না না আমি এখন যেতে পারব না। আর আপনি বাসায় যান।

অর্নীল;; তুমি নিচে নামবে নাকি আমি ওপরে আসবো?

সিয়া;; ধমকাচ্ছেন?

অর্নীল;; অবশ্যই। এখন কি তুমি নামবে নাকি, আচ্ছা আমিই আসছি দাড়াও।

সিয়া;; এই এই না না

অর্নীল;; তাহলে তুমি নিচে আসো। আর হ্যাঁ আমি ওপরে গেলে অবশ্যই তা তোমার জন্য বেশি একটা সুবিধের হবে না সিয়াজান।

সিয়া;; কি মুশকিল রে বাবা,, আচ্ছা আসতাছি আমি আসতাছি।

এই বলেই সিয়া ফোন কেটে দিলো। ওরনা টা গলায় জড়িয়ে আস্তে করে রুম থেকে বের হতে ধরে কিন্তু আবার থেমে যায়। কখন কি হয় বলা যায় না, তাই সিয়া একটা কোল বালিশ আর একটা নরমাল বালিশ কে বেশ মুড়িয়ে চাদরের নিচে এমন ভাবে রেখে দেয় যেনো দেখে মনে হয় কেউ একজন এখানে মরার মতো করে ঘুমাচ্ছে। তারপর দিয়া রুম থেকে বের হয়ে পরে। উঁকি ঝুকি মেরে একদম গুটি গুটি পায়ে হলরুমে চলে যায়। বাড়ির চাবি টা হলরুমের ড্রয়ারেই রয়েছে। সিয়া সেটা হাতে নিয়ে মেইন দরজা আস্তে করে খুলে বাইরে চলে যায়। খুব সাবধানে বাইরে এসে সোজা অর্নীলের কাছে।

সিয়া;; কি হয়েছে?

অর্নীল;; চলো।

সিয়া;; আবার চলো মানে কোথায় যাবো?

অর্নীল;; আমার সাথে যাবে।

সিয়া;; না অর্নীল দেখুন হাত ছাড়ুন,, প্লিজ পাগলামো করবেন না। কেউ যদি দেখে ফেলে সর্বনাশ।

অর্নীল;; এই এতো ভয় পাও কেনো বলোত,, ভালোবাসবে আবার ভয়ও পাবে। এ কেমন কথা? ভয় আর ভালোবাসা এক জায়গায় একসাথে থাকে না। থাকতে পারে না বুঝলে।

সিয়া;; আপনার জন্য ব্যাপার টা ইজি অর্নীল কিন্তু আমার জন্য মোটেও না। আমি যাই হ্যাঁ কাল কথা হবে।

এই বলেই সিয়া উল্টো ঘুরে চলে যেতে ধরবে আর ওমনি অর্নীল সিয়ার হাত ধরে এক টান দিয়ে সোজা গাড়িতে বসিয়ে লক করে দেয়। সিয়া নিজের মতো করে বকর বকর করে যাচ্ছে কিন্তু এদিকে অর্নীল গাড়ি চালাচ্ছে। সিয়া একটা সময় হাপিয়ে যায় কথা বলতে বলতে আর না পেরে তাই চুপ করে বসে আছে। কোথায় যাচ্ছে, কেনো যাচ্ছে সিয়া জানে না। একটা সময় অর্নীল গাড়ি থামায়। নিজে নেমে গিয়ে সিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে গাড়ির দরজা খুলে দেয় আর সিয়া হুড়মুড় করে নেমে পরে। অর্নীল আবার সিয়াকে হাত ধরে নিয়ে যায়। অর্নীল সিয়ার চোখ একটা সাদা কাপড় দিয়ে বেধে দেয়। সিয়া প্রথমে ছটফট করলেও এখন চুপ। অর্নীল তাকে হাত ধরে সামনে নিয়ে যায়। তারপর আস্তে করে সিয়ার চোখ থেকে কাপড় টা সরিয়ে দেয়। এবার যেনো নিজের সামনে তাকিয়ে সিয়া নিজেই তাক লেগে গেলো। খোলা আকাশ, ঘন সবুজ ঘাস তার ঠিক মাঝখানে একটা ছোট নীল-সাদার কাপড়ে মুড়ানো টেবিল। আশে পাশে অনেক বেলুন। টেবিলের ঠিক মাঝখানেই নীল আর সাদা কালারের মোমবাতি, তাতে জ্বলজ্বল করে হলুদ আলোতে আগুন জ্বলছে। অর্থাৎ বলতে গেলে সিম্পলের মাঝেক অনেক সুন্দর একটা ক্যান্ডেল লাইট ডিনার। ডিনার না তবে হ্যাঁ ক্যান্ডেল লাইট। সিয়া তাকিয়ে তাকিয়ে এইসব কিছু দেখছিলো, পাশে ফিরে অর্নীল কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অর্নীল হাতে ইয়া বড়ো একটা ফুলের বুকে নিয়ে সিয়ার সামনে এসে হাসিমাখা মুখে বলে………

“” Happy birthday to you, Happy birthday to you.. Happy birthday~Happy birthday ”” Happy birthday to you Siyajaan….””

সিয়া খানিক কপাল কুচকে অর্নীলের দিকে তাকায়। তারপর মনে পরে যে বারো টার ওপরে বেজে গেছে আর আজ সিয়ার বার্থডে। সিয়া নিজেই অবাক। তার যে বার্থডে এটা তার মাথা থেকে একদম বের হয়ে গিয়েছিলো। একদম মনেই নেই। তবে সে এটাই ভেবে পায় না যে অর্নীল কীভাবে জানলো। অর্নীলের দেওয়া সারপ্রাইজ দেখে সিয়া সত্যি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছে। সে নিজের দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে।

অর্নীল;; Happy birthday my Love…

সিয়া;; থ্যাংক ইউ সো মাচ। আমার সত্যি বলতে মনেই ছিলো না যে আমার বার্থডে। আমি একদম ভুলেই গিয়েছিলাম।

অর্নীল;; সমস্যা নেই আমি আছি তো মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। এবার এসো।

অর্নীল সিয়াকে নিয়ে গিয়ে টেবিলের পাশে দাড় করি দেয়। তারপর একটা বড়ো সড়ো চকোলেট কেক আনে। সিয়া কেক প্রথমে কেটে অর্নীল কে খাইয়ে দেয় তারপর নিজে।

অর্নীল;; আচ্ছা আমার একটা গিফট চাই।

সিয়া;; বার্থডে আমার তো গিফট আমার চাই।

অর্নীল;; I wanna kiss..

সিয়া;; হুয়াট..

অর্নীল;; ইয়েস।

সিয়া;; না মানে বলছিলাম কি যে আজ না ওকে। আজ না অর্নীল প্লিজ।

সিয়া না না করলেও অর্নীল সিয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই লাগে। অর্নীল সিয়ার কোমড় নিজের দুই হাত দিয়ে পেচিয়ে ধরে। সিয়া ভয়ে দুই চোখ খিচে বন্ধ করে নিলে অর্নীল টুপ করে সিয়ার দুই গালে চুমু দিয়ে দেয়। সিয়া চোখ মেলে তাকায়। অর্নীল সিয়ার কপালে চুমু দিয়ে দেয়। চুমুরত অবস্থায় কয়েক মিনিট ধরে রাখে। সিয়া মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে রাখে। আচ্ছা সব প্রেমিকরা বা প্রিয়জন তার প্রিয়তমার কপালে চুমু দিলে কি এমন অনুভূতি হয়। ভালোবাসার গভীরতা মাপা যায়? এত্তো ভালো লাগা কাজ করে। কপালে চুমু দেওয়া বুঝি ভালোবাসার বিশেষ বহিঃপ্রকাশ। অর্নীল সিয়াকে কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেয়।

অর্নীল;; আসলে যতো টা লুচু তুমি আমাকে মনে করো ঠিক ততটা লুচু আমি নই।

সিয়া হেসে দেয়।

আর ওদিকে সিয়ার মা পানি খাওয়ার জন্য হলরুমে আসে। তারপর বড়ো দেওয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে বারো টা চল্লিশ বাজছে। হঠৎ দোলার মনে পরে যে আজ সিয়ার জন্মদিন। দোলা কপালে হাত দিয়ে দেয়। হায়, মেয়ের জন্মদিন আর তার কিনা মনে নেই। দোলা আর দেরি না করে সোজা সিয়ার রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।





চলবে~~




চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here