#দায়িত্ব
#পর্ব_১৩
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই
শায়েরিকে মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে..শ্রেয়ান গিয়ে করিডোর থেকে ফুল গুলো একটা একটা করে তুলে বাহিরে নিয়ে রেখে আসলো… ২০-৩০মিনিট পর শায়েরি কিছুটা নরমাল হলো… শ্রেয়ান সেই যে রুম থেকে গেল তো গেলোই আর আসার নাম নেই… শায়েরি শ্রেয়ানকে এসএমএস দিয়ে দুমিনিটের মধ্যে রুমে আসতে বললো…শ্রেয়ান রুমে এসে…
“কি হলো কোনো সমস্যা?
” সমস্যা তো বটেই… কোথায় ছিলেন..?
“ড্রয়িং রুমে…তোমার কি কিছু লাগবে..?
“না.. আরে বোদ্ধ এতো আপসেট হওয়ার কি আছে… আগে তো হিসটরিটা শুনেন…
“না না আপসেট হবো কেনো..? বলো কি হিসটরি…
“চলেন করিডোরে যাই…
শায়েরি শ্রেয়ানের হাত ধরে করিডোরে নিয়ে গেলো….একে অপরে মুখোমুখি হয়ে দাড়ালো… শায়েরি শ্রেয়ানের হাত ধরে…
” সত্যিই আমি খুববব সরি.. প্লিজ ডোন্ট বি আপসেট…
“সরি কেনো..?
“বারে এতো সুন্দর টাইম আর সুন্দর মোমেন্ট ক্রিয়েট হওয়ার আগেই স্পোয়েল করে দিয়েছি…
” নো..নো.. ইটস ওকে..হঠাৎ করে তোমার এমন এলার্জি শুরু হলো কেনো..?
” হঠাৎ করেই এলার্জি শুরু হয়.. যদি সেখানে হঠাৎ করে আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য রজনী গন্ধা ফুল আনা হয়..তাহলে এলার্জিও হঠাৎ করেই শুরু হয়..
“সিরিয়াসলি..? রজনী গন্ধা ফুলে কারো এলার্জি হয়..?
” আরে এতো অবাক হওয়ার কি আছে..? কারো নাই হতে পারে বাট আমার হয়…
“এখন আমার এতো এতো রাগ হচ্ছে.. জানো কিসের জন্য..?
“উহু.. কিসের জন্য..?
“কিসের জন্য আবার ওই রজনী গন্ধা আর তোমার এলার্জির জন্য… সব মাটি করে দিল এই দুটো জিনিস কম্বাইন্ড হয়ে….
“আচ্ছা এতো এরেন্জ করেছিলেন কেনো..? আজ কি কোনো স্পেশাল ডে ছিল.?
” স্পেশাল ডে ছিল না করতে চেয়েছিলাম…
” আহারে সেটা আর হলো না… ঠিক আছে কিছু সময় নিয়ে স্পেশাল ডে ক্রিয়েট করেন…
” আর কতো সময় নিবো..? অলরেডি অনেক সময় হয়ে গেছে…
” হ্যাঁ তাই তো…অনেক রাত হয়ে গেছে… ঘুমাতে হবে তো…
” হুমম যাও..আমি আসছি…
“হুমম তাড়াতাড়ি আসবেন কেমন..!
।
।
শায়েরি এসে বিন্দুর পাশে শুয়ে পরলো… শ্রেয়ানের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে খেয়াল নেই… শ্রেয়ান রুমে এসে দেখে শায়েরি সুন্দর করে বিন্দুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে…. শ্রেয়ান ভেবেছিল শায়েরি হয়তো জেগে থাকবে শ্রেয়ান না আসা অবদি….। শায়েরি আর বিন্দুকে এভাবে দেখে শ্রেয়ানের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো… শ্রেয়ান বিন্দুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে কিস করে বিন্দুর পাশে শুয়ে পরলো…..
,
,
শ্রেয়ান অনেক ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাজ শুরু করে দিয়েছে…অনেক গুলো কাজ পেন্ডিং আছে… সাধারণত শায়েরি ঘুম থেকে উঠে শ্রেয়ানকে নামাজ পড়ার জন্য ডেকে তুলে…আজ শ্রেয়ান শায়েরিকে ডেকে তুলেছে নামাজ পড়ার জন্য….
শায়েরি ফ্রেস হয়ে নামাজ আদায় করে নিলো.. তারপর দুজনের জন্য কফি নিয়ে এসে শ্রেয়ানের পাশে বসলো…
“আজ এতো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছেন যে..?
” কাজ ছিল তাই…
” আপনি নামাজ পড়েছেন..?
” হুমমম মসজিদে গিয়ে…
“বাহহহ দারুন তো… এখন থেকে প্রতিদিন মসজিদে গিয়ে নামাজ পরবেন..
” আচ্ছা পড়বো…. দুটো কফি এনেছো কেনো…একাই আজ দুটো কফি খাবে নাকি.?
“এমনিতেই কি আর আপনাকে বুদ্ধ বলি…আমি একা কেনো খেতে যাবো… আপনিও খাবেন তাই এনেছি…
“ওহহহ… কিহহ.? আমি তো কফি খুবব একটা খাইনা যদিও খাই তবে হেডেকস প্রবলেমের জন্য ব্ল্যাক কফি খাই…
” এভাবে রিয়াক্ট করার কি আছে… খান না এখন থেকে একটু আদটু আমার সাথে খাবেন… আমার একা একা খেতে ভালো লাগেনা…
“তাই বলে আমাকে কেনো বলির পাঠা বানালে..?হুমমম খেতে পারি একটা শর্তে…!
” কি শর্ত..?
“আমি যে কফিটা খাবো সেটা তোমায় আগে টেষ্ট করে দিতে হবে… আই মিন সব ঠিকঠাক আছে কিনা…
” ঠিকি তো আছে সব… টেষ্ট করার কি আছে… ওকে দিচ্ছি….
শায়েরি কফিতে এক চুমুক দিয়ে..
“এই নিন সব পারফেক্ট আছে….
” হ্যাঁ এখন তো পারফেক্ট হবেই….
শ্রেয়ান কফিতে এক চুমক দিয়ে ঠোঁটের কোনে বাকা হাসি রেখে…
” উমমম নট ব্যাড… আমি প্রতিদিন কফি খেতে রাজি.. যদি তুমি আগে টেষ্ট করে দাও তবেই….!
” সব সময় শুধু বেশি বেশি….
” ওরে আল্লাহ্ কি এমন বললাম…যে এখানেও লজ্জা পেয়ে লতিয়ে যেতে হবে…. এই যে ম্যাডাম আপনি এভাবে লজ্জা পেলে আমি সব গুলিয়ে ফেলি… কি থেকে কি হয়ে যায় আই ডোন্ট নো…!
শায়েরি আর এক মূহুর্ত শ্রেয়ানের পাশে না বসে উঠে চলে গেলো….
শ্রেয়ান মুচকি হেসে কফি খেতে খেতে কাজে মনোযোগ দিল… আর শায়েরি চা বানিয়ে শাশুড়ির রুমে দিয়ে আসলো…
নিয়ান সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কাদছে… হয়তো ক্ষিধে পেয়েছে তাই… নিলা নিয়ানকে কোলে নিয়ে কিচেনে এসে কিছু একটা করার চেষ্টা করছে…শায়েরি খেয়াল করলো নিয়ান কাদছে…
” ভাবি নিয়ান তো কাদছে.. তুমি ওকে নিয়ে বসো আমি ওর ফিডার বানিয়ে দিচ্ছি….
” হুমমম…
শায়েরি নিয়ান এর জন্য ফিডার বানাতে বানাতে…
” আচ্ছা ভাবি ভাইয়া কবে ফিরবে… এখনো কি প্রজেক্ট শেষ হয়নি..?
“আরো তিনদিন লাগবে…
“ওহহহ আচ্ছা….
শায়েরি ফিডার বানিয়ে নিলার হাতে দিয়ে আসার সময়.. নিলার হাতের সাথে ছোয়া লাগে…নিলার হাতটা স্বাভাবিক এর চেয়ে গরম… হয়তো জ্বর এসেছে এটা ভেবেই শায়েরি নিলার কপালে হাত দিল.. হ্যাঁ সত্যিই তো জ্বর এসেছে…
” ভাবি তোমার তো জ্বর এসেছে মেডিসিন খেয়েছো..?
” না খাইনি…
“আচ্ছা আমি নিয়ানকে খাইয়ে দেই… তুমি ফ্রেস হয়ে এসো…
” নিয়ান তো এখন কাদছে… তুমি সামলাতে পারবেনা..
” দেখোই না পারি কিনা..?
শায়েরি নিয়ানকে কোলে নিয়ে ফিডার খাওয়াচ্ছে… আর নিলার জন্য ব্রেড আর আমলেট রেডি করে ফেললো… যাতে এগুলো খেয়েই মেডিসিন খেতে পারে… নিয়ান ও অনেকটা শান্ত হয়ে গেছে… খেতে খেতে নিয়ান ঘুমিয়ে পরলো….
নিলা ফ্রেস হয়ে এসে…
” শায়েরি নিয়ান তো ঘুমিয়ে পরেছে…ওকে শুইয়ে দিয়ে আসি..
” হুমম ঘুমিয়ে পরেছে.. ক্ষিধে পেয়েছিল তাই এতো কাদলো… আমি ওকে শুইয়ে দিয়ে আসি.. তুমি এগুলো তাড়াতাড়ি খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নাও…
নিলা তাকিয়ে তাকিয়ে শায়েরিকে দেখছে….।
শায়েরি নিয়ানকে শুইয়ে দিয়ে এসে… খুবব দ্রুত রান্না শেষ করে টেবিলে খাবার সার্ভ করে দিলো…. বিন্দুর বায়না মায়ের হাতে খাবে… আর তাই হলো শায়েরি বিন্দুকে খাইয়ে দিলো…
খাওয়া শেষে বিন্দুকে রেডি করিয়ে দিলো… আর বিন্দু শায়েরির গালে চুমু দিয়ে দৌড়ে নিচে চলে গেলো… শ্রেয়ান ও বিন্দুর মতো শায়েরির গালে চুমু দিল আর ঠিক তখনই বিন্দু রুমে এলো…. বিন্দুকে দেখে শ্রেয়ান মুখে হাসি রেখে…
” তুমি তোমার মাকে চুমু দিলে তো তাই আমিও তোমার মাকে চুমু দিলাম….
” কেনো তুমি আমার মাকে কেনো চুমু দিলে… তুমি তোমার মাকে চুমু দিবে… আর আমি আমার মাকে…
“ওহহহ আচ্ছা নেক্সট টাইম থেকে তাহলে… আরেকটা কাজ করলে কেমন হয়..?
” কি কাজ..?
“তুমিও আমার মাকে চুমু দিবে আর আমিও তোমার মাকে চুমু দিবো.. ব্যাসসস সুদবুদ…,
শায়েরি বিন্দুর কাছে গিয়ে…
“ফিরে এলে কেনো কিছু কি রেখে গিয়েছো…
” পেন্সিল বক্স…
শায়েরি পেন্সিল বক্সটা বিন্দুর ব্যাগে তুলে দিলো… আর বিন্দু নিচে চলে গেলো…
শ্রেয়ান শায়েরির হাত ধরতেই…
” কি ফাজিল… সব সময় ফাজলামো… আপনাকে মরিচের গুড়া দিয়ে সমুচা খাওয়ানো দরকার…!
” হুমমম তাতে আমি রাজি… তারপর যদি স্পেশাল মিষ্টি দাও তাহলেই…
” এই আপনি যান তো…বিন্দুর লেট হয়ে যাচ্ছে…
” আচ্ছা তাহলে বাই…
” আচ্ছা সাবধানে যাবেন…”
“একদম আমার লক্ষিটি…
চলবে……
