দ্বিতীয় বাসর পর্ব ২৮+২৯

দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-২৮
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

আনন্দে আত্মহারা মিতু।মোবাইলটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকে সে।বন্ধনকে কি এখনি জানাবে?
বন্ধনকে ফোন করে মিতু।কিন্তু
“এই মুহূর্তে যোগাযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না…’টোনটি শুনে মনটা খারাপ হয়ে যায় তার।
তার খুব ইচ্ছে করছিল বন্ধনের গলার আওয়াজটা এখন শুনতে।
মাঝে মাঝে কাজের বেশী চাপ থাকলে সেদিন মোবাইল অফ থাকে।
মিতু এরপর টেক্সট পাঠায়,
“বাবু কখন আসবেন?একটা খুশীর সংবাদ আছে।’
এ পর্যন্তই লিখে পাঠায় মিতু।
কিন্তু তার শরীরটাও অনেক ক্লান্ত লাগছে।নীবিড় তার সাথে বেয়াদবি করেছে ভাবে মিতু।
“আচ্ছা আমিও কি বেশী রিএক্ট করে ফেলেছি?কেনই বা করবো না কাল দিব্যি দেখলাম পারুলের হাতটা ধরে রিক্সায় বেশ অন্তরংগতোই ছিল?আর সব দোষ পারুলের কাঁধে চাপালো?পারুলকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করতে হবে?সত্যিই কি পারুলের দোষ বেশী?’
হাবিজাবি ভাবছে মিতু।কিন্তু এ সময় এত বেশী ভাবা ঠিক না। অসুস্থ হয়ে যাবে তাহলে।
বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে আর একটু ঘুমানোর চেষ্টা করে।মোবাইলটা দেখে ফের বন্ধনের কোন ফিরতি এস এম এস আসে নি।
নটার দিকে ঘুম ভাঙে মিতু।ফ্রেশ হয়ে কিচেনে যায়।
চোখমুখ কেমন বসে যায় মিতুর।মিতু খেয়াল করলো নীবিড় মুখ ভারী করে বাসা থেকে নাস্তা না খেয়েই বের হয়ে যায়।যাওয়ার সময় নানুকে যেন কি বলে গেল,জুতোর ফিতে লাগাতে লাগাতে।
রানু নানুর ঘরে নানুর হাত পা মালিশ করছে, খবরটা বুয়াই জানায়।
মিতুর ভীষন অসহ্য লাগছে।এরকম একটা খুশীর সংবাদ বাসার কাউকে সে এখন পর্যন্ত জানাতে পারছেনা।রানু, নানুর মাথাটা পুরোই খেয়েছে।বুড়ী একবারও জিজ্ঞেস করেনি,”কোন খবর আছে কিনা?কিন্তু অন্যসময় কতবার জানতে চেয়েছে?আর আজ…?’
কিচেন থেকে ডাইনিং রুমে আসে এবার।কি খাবে তাই ভাবছে।মনটা ভীষন রকম বিষন্ন লাগে।বন্ধনেরও কোন এস এম এস এখন পর্যন্ত আসেনি।
নাস্তার টেবিলেও বেশীক্ষণ বসতে পারে না মিতু।মাথাটা ফের চক্কর দিচ্ছে।দৌড়ে গিয়ে আবারো বমী শুরু করে দেয়।
নানু বুয়াকে জিজ্ঞেস করে,
“কি হইসে দেক তো কাইল রাইত থ্যাইকা এমন করতাসে?খালি মাথা ঘুরায় পড়ে…এমন ভারী শরীল নীবিড় যায়া ঘরে দিয়াইসে।’
বুয়া জবাবে বলে,
“কি হইসে আফনে যায়া জিগান আমারে কন ক্যান?’ “ওর লগে কতা কইতে ডর লাগে,আমার নীবু আর রানুরে কাইল কি না কি কইলো,নীবু তো তার ভাবীজানরে ঘরে ঠিকই দিয়াইলো।সকালের নাস্তাটাও খাইতে পারল না….?’
মিতু তার রুমের বেসিনেই বমী করছিল।নানুর কথা শুনে পুরো আকাশ থেকে পড়ল সে।
“নানু এসব কি বলছে?রানু ও নীবিড়ের সাইড নিয়ে কথা বলছে?আমার পেটে যে তোমাদের বংশের প্রদীপ জ্বলছে সেটা তো একবারও জানতে চাইলে না? ‘
মিতু আর ওদিক টায় যায় না।কেমন যেন বুকে অসহ্য কষ্ট হতে থাকে।এ বাসার মানুষগুলো দিনদিন কেমন বদলে যাচ্ছে।
নীবিড় সকাল হলেই নাস্তা চাইতো,টাকা চাইতো,আবদার,ঠাট্টা মশকরা মিতু বিরক্তও হতো কিন্তু কখনো নীবিড়কে এতে প্রতিক্রিয়াশীল হতে দেখেনি।
নানুও মিতুকে বেশী বেশী খেতে বলতেন কিন্তু এখন সে নানুর কাছে ব্যারামের নাতবৌ।যেটা গতকাল রানুকে সে বলতে শুনেছে।
বুয়া আসে রুমে মিতুকে ধরতে।মিতু সরিয়ে দেয়।বুয়াকে বলে,
“আজ আমি রান্না করবো না খানসামাকে খবর দিয়ে দিচ্ছি।নানুরা নাস্তা করেছে?’
“হো মেলা খন আগেই খাইসে।রানু তারে পরোটা বেইলা খাওয়ায়,নীবিড় ভাইজানের জন্যেও বানায় সিলো,ভাই তো না খায়া গেল।আর কয়া গেল আইজ মনে অয় আইবো না বাইত।’
“আচ্ছা তোমার ছোট ভাই যে গাড়ীটা কাল নিয়েছিল সেটা কই বাসায় আছে না নিয়ে গেছে?’
“হো ভাই এর হাতে তো চাবি দেকলাম।’
“তাহলে পারুলের সাথে গাড়ীতে না উঠে রিক্সায় কি করছিল দুজন?গাড়ী কই ছিল?’
ফের বুয়াকে বলে,
“রান্নার কাটাবাছা এগুলো করো,খানসামাকে বলে দিও নানু,বাবাই যা খায় রাঁধতে আর দরজাটা যাওয়ার সময় ভীড়িয়ে দিও…’
মিতু ড্রাইভারকে ফোন করে খানসামাকে খবর দিতে বলে।
“খানসামার ফোন নাম্বারটা রাখা উচিত ছিল।’
মিতু ফের নিশাকে ফোন করে।
“কি রে এত সকালে কি খবর মিতু?’ওপাশ থেকে নিশা জানতে চায়।
“এই তো মোটামুটি…’
“গলা এমন ভারী লাগছে কেন কি হয়েছে?'”
মিতু কিছুক্ষণ চুপ থাকে ফের বলে,
“কুইক টেস্টটা করিয়েছি…..’
“রেজাল্ট কি? ‘
“পজেটিভ।’
“বাহ্ এটাতো খুব ভালো খবর,আলহামদুলিল্লাহ্‌! কিন্তু মন খারাপ কেন? বন্ধনকে জানাসনি?কি বলেন? তোর বর নিশ্চুই অনেক খুশী?’
“বন্ধনকে ফোন করে পাচ্ছি না…’
“ঠিক আছে ব্যস্ত আছে বোধহয়,বাসার আর সবাইকে জানাসনি?তারা কি বলে?’
“হ্যাহ্… আর সবাই…..?’.
বলেই মিতু ফোঁপাতে থাকে নানু,রানু ও নীবিড়ের আচরন খুলে বলে নিশাকে।
“আহা মিতু কাঁদছিস কেন?সব ঠিক হয়ে যাবে।আর যত তাড়াতাড়ি পারিস রানুকে বিদেয় কর তোদের বাসা থেকে।নানুকে একা পেয়ে,হাত পা মালিশ আর মজার মজার খাবার খাইয়ে নানুর মাথাটা তো খেয়েছেই,একই সাথে ঘরে আর দুজন পুরুষ মানুষের মাথা চিঁবানোর তালে আছে।’
“আমি কিভাবে বিদায় করবো নানুর কাছে রানুই এখন যক্ষের ধন।সবসময় আগলে রাখে।কাল ওকে মেরেছি বলে আরো ওর জন্যে দরদ উথলে পড়েছে।আমাকে ভুল বুঝছেন আর দোষ চাপাচ্ছেন আমার উপর।’
“কি আশ্চর্য উনি না আগে তোকে ছাড়া কিছু বুঝতেন না?এর মধ্যে একবারো তোর খবর জানতে চায় নি?’
“হুম আমি জ্ঞান হারানোর পর বোধহয় আমার পাশেই ঘুমিয়েছিল।ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে উঠে দেখি চলে গেছেন তার ঘরে আর আসেনি।এখন আবার বমী করছি, বুয়াকে বলে কি না ধরতে?অথচ দেখ,এই নানুই আগে কিছু হলে ছুটে আসতো সবার আগে….?’
“তুই এসব নিয়ে বড্ড ভাবছিস মিতু।নানু যখন রাতে তোর পাশে ছিল তার মানে তোর জন্যে এখনো দরদ আছে।এর মাঝে রানু বোধহয় সুযোগ বুঝে চড়ের কথা বলে নানুর মাথা বিগড়িয়ে দিয়েছে।’
“এখন তাহলে কি করবো নিশা?আমার যে কিছু ভালো লাগছে না।নানু, নীবিড় সবাই কেমন করছে আমার সাথে?’
“উফ্ মিতু এত টেনশন কেন করছিস?অসুস্থ হয়ে যাবি তো….
বল্লাম তো মেয়টাকে বিদেয় কর।বন্ধনকে সব খুলে বলবি।তুই এখন প্রথমবারের মতো মা হচ্ছিস।উনি অবশ্যই তোর কথা শুনবেন।’
“আর একদম মন খারাপ করবি না।তোর ক্ষতি হলে বাবুর ক্ষতি হয়ে যাবে।আর কি খেয়েছিস তুই?’
“রুটি টোষ্ট বাট খেতে পারছি নারে,বমী হয়ে যাচ্ছে।’
“তুই এক কাজ কর কিছু খাবারের চেষ্টা কর,তারপর ডাক্তার এর কাছে যা।’
নিশা কে বিদেয় দিয়ে ফোনটা ছেড়ে দেয় মিতু।বন্ধনের টেক্সট এসেছে।
“কি খুশীর খবর বাবু?আর আই এম এক্সট্রিমলি সরি আজ একটা ট্যুরে ঢাকার বাইরে যেতে হবে।তুমি কি যাবে?গেলে গাড়ীতে করে চলে আসো আর আমার ব্যাগটা সুন্দর করে গুছিয়ে দিও সোনা।’
মিতু পেটে হাত বুলায়।ওর খুব যেতে ইচ্ছে করছে।বন্ধনকে ছাড়া তার এই বাড়ীটা এখন নরকের মতো লাগছে।
“কিন্তু সোনা এখন তোকে নিয়ে যাই বা কি করে….?’
কি করবে ভেবে পায়না মিতু।এই খুশীর আমেজটাও বড্ড ফিঁকে লাগছে তার কাছে।খুব মার কথা মনে হচ্ছে মিতুর।
নিজেকে ভীষন একা আর অসহায় লাগছে এখন মিতুর কাছে….(চলবে)
নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান
দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-২৯
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

“কি বল্লে মিতু? আমি বাবা হতে যাচ্ছি…আবারো?
“হুম’
দুপুরে বন্ধন, মিতুকে ফোন করে খবরটা জেনে নেয়।
“নানু, নীবিড় জানে?আর বাবাই?’
মিতু চুপ কিছুক্ষন।ফের বলে
“আমি তো আজই কুইক প্রেগনেন্সী টেষ্ট করে জানলাম।আর ডাক্তারের কাছেও তো এখনও যাইনি?আগেভাগে কি করে বলি বলেন?’
“আচ্ছা জান তুমি এখনই ডকটরের কাছে যাও।কি বলে আমাকে জানাও।’
“কিন্তু আমিও আপনার সাথে ট্যুরে যাবো…’
“কিন্তু এসময় পারবে যেতে? সেই বান্দরবন অনেক উঁচু নিচু পথ আর আমিও রেষ্ট হাউজে তোমাকে সময় দিতে পারবো না।তোমার ভালো লাগবে না লক্ষীটি।’
“না আমি কোন কথা শুনবো না,আপনি আর্মি পারসন কোন না কোন ভাবে আমাকে ম্যানেজ করে নিয়ে চলেন,যাতে সেইফলি আমি যেতে পারি।’
“কিন্তু বাবু…?’
“কি কিন্তু তাহলে আপনি ট্যুর বাদ দেন।আমাকে সময় দেন।কোথাও ঘুরতে নিয়ে চলেন।বলেন বিয়ে হয়েছে ছয় মাস হতে চল্ল আমাকে হানিমুনে নিয়ে গেছেন আপনি?একা একা সিংগাপুরে ট্যুর করতে চলে গেছেন….।’
প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা মিতুর।আসলেই তো মিতুকে তো সেভাবে সময়ই দেয়া হয় নি।আর্মি অফিসারের বউ কিন্তু সেভাবে ক্লাব বা পার্টিতেও নিয়ে যাওয়া হয়নি।কেয়ার অসুস্থতা ও মারা যাওয়ার কারনে,মানসিকভাবেও বন্ধনের এসব ভালো লাগতো না।শুধু প্রোগাম গুলিতে রেগুলারিটি ও সৌজন্যতা মেনইটেইন করতে হতো বলে এটেন্ড থাকতো।
মিতুকে নিয়ে সেই হোটেল লা মেরিডিয়ানে যাবার পর,মিউজিক ক্যাফেতে গান শুনে বহুদিন পর যেন প্রানের স্পন্দন ফিরে পেয়েছে বন্ধন আবার নতুন করে।
বন্ধুবান্ধবদেরকেও এড়িয়ে চলেছিল সে বেশ কিছু সময়।কোথাও কারো সাথে দেখা হলেও মন বসাতে পারতো না।আজ সে আবারো সব কিছু ফিরে পেতে চলেছে তার লক্ষী বউ মিতুর কারনে।বাবাইকে সে মাতৃতুল্য স্নেহ দিয়েছে,নানু ও নীবিড়ের প্রতি খেয়াল রাখা মিতুর প্রতি আকর্ষনের অন্যতম কারন ছিল বৈকি।মিতুর সৌর্ন্দয্য যথেষ্ট মনোমুগ্ধকর কিন্তু পাঁচমাসে বন্ধন স্বাভাবিক হতে পেরেছে কারন উপরের বিষয়গুলি তাকে মিতুর প্রতি নিটল ভালোবাসার খোরাক যুগিয়েছে।তার অন্তরে মায়া, মমতা,ভালোলাগা,প্রশান্তির পুনরাবির্ভাব ঘটিয়েছে মিতুই তার আদুরে আদুরে চাহনী আর কথা বলার ঢঙে; বন্ধনের শত কষ্টের পর তার সহজ স্বাভাবিক জীবন,ফের নতুন করে পাওয়া সব এ তো মিথ্যে নয়?
কতরাত বন্ধন শোকে হতবিহবল থেকেছে।কেয়ার মৃত্যুর পর সে কেমন হয়ে গিয়েছিল মিতুর আগমন তাকে যেমনটি করে সব ফিরে পাইয়ে দিয়েছে সেক্ষেত্রে মিতুর এ আবদার রক্ষা কঠিন কিছু নয়।
কিন্তু বন্ধনের ঔরসে মিতুর কোলে যে নতুন অতিথি আসছে তাও তো খুবই আনন্দের বিষয়।সেদিকে তো কম গুরুত্ব দিলে আর মিতুর এমন ছেলেমানুষি করাও কি সঠিক? অাবার এও তো সত্যি মিতু এতদিন তো চুপটি করে থেকেছে।বন্ধন তাকে কোথাও নিয়ে যায়নি অথচ এটা তার কাছে কঠিন কোন ব্যাপারী ছিলনা,মিতু তো কিচ্ছুটি বলেনি?
আজ সে চাইছে তার সাথে যেতে চলুক।বিদ্যুতের গতির মতো ভাবে বন্ধন।চিটাগাং তো বিমানে করেই যাওয়া যাবে।আর বাকি পথটুকু বান্দরবনে হেলিকপ্টারে কি বা এমন সমস্যা? মাত্রই তো কনসিভ করলো মেয়েটা….এত ভেবে লাভ নেই।বাকীটা আল্লাহর ভরসা।
“ঠিক আছে তুমি লাগেজ গুছিয়ে তোমার আমার কিছু জামাকাপড় একসাথে নিয়ে নাও আর ডকটর দেখিয়ে সৈনিক পাঠিয়ে দিচ্ছি চলে আসো।আর শুনো ডকটরের কাছে একা যেও না।নীবিড়কে সাথে নিও।’
“ফের নীবিড় ‘জিভ কাটে মিতু।
“ও তো বাসায় নেই।’
“কোথায় গেছে ওকে ফোন করে আসতে বলো?’
“কোথায় গেছে আমি কি করে বলবো বলেন?আর আপনি এত ব্যস্ত হচ্ছেন কেন?আমি একাই যেতে পারবো।গাড়ীটা পাঠিয়ে দিলেই হলো।’
“এলিয়নটা নিয়ে যাও? ‘
“ঐটা নীবিড় নিয়ে গেছে।’
“ও হ্যা তাই তো। থাক ঐ গাড়ীতে যাওয়ার দরকার নেই।গাড়ীর ব্রেক নাকি নষ্ট।ওর বন্ধুর গ্যারেজে ঠিক করাবে।আজ বোধহয় ওখানেই থাকবে নীবিড়।’একটু ভেবে বন্ধন ফের বলে,
“আচ্ছা নানুকে নিবে নাকি?’
“কোথায় নিবো নানুকে?’মিতুর কৌতুহল।
“ডকটরের কাছে।’
“না না কি দরকার আমি পারবো কোথায় যেতে হবে বলে দেন।আর না পারলে আমার বান্ধবী নিশা বা পারুলকে বলে দিব সাথে যেতে।’
“দ্যাটস গ্রেট তাহলে তাই করো।বাট রাত দশটার ভিতর সব করতে হবে পারবে তো?’
“হুম।’
“ঠিক আছে আমি স্কয়ার হসপিটালে এপোয়র্মেন্ট করিয়ে দিচ্ছি।বাসা থেকে কাছে আছে আর গাইনোকোলিস্ট ডকটর আমার বন্ধুর ওয়াইফ।আর শুনো বাবাই কি করছে?রানুকে বলো ওর দিকে ভালো করে খেয়াল রাখতে।নানু,বাবাই সবার কাছ থেকে সুন্দর করে বিদায় নিয়ে এসো কেমন।’
“জ্বি আচ্ছা।’
মিতু দ্রুত লাগেজ গোছায়।বমীটা একটু কমেছে বোধহয়।খুব ক্ষুধাও লেগেছে।কিছু খাওয়া দরকার।
তবে মিতু ভাবে একটা কথা পারুলকে সে ফোন দিবে।ওর মুখ থেকেই শোনা যাক কাহিনী কি।
বিকেল পাঁচটার দিকে এপোয়েন্টমেন্ট স্কয়ার হসপিটালে বন্ধনের আরেক ডাক্তার বন্ধুর স্ত্রী শাহানা পারভীনের কাছে।
মিতু পারুলকে ফোন দেয়।
“হ্যালো মাই সুইট সিসটার মিতু আপু কি খবর বলো?’
সবসময় এমন প্রানবন্ত উদ্দীপনা পারুলের যেন বৈশিষ্ট্য।
” সুইট সিসটার?’ রাগে গজগজ করতে থাকে মিতু।অনেক কষ্টে দাঁতে দাঁত চাপিয়ে সেও হাসিমুখে জবাব দেয়,
” আজকাল আমি বুঝি তোর সুইট সিসটার?’
“ওমা তুমি তো সবসময়ই সুইট সিসটার!’
“তোর সাথে জরুরী কথা আছে পারুল।’
“কি কথা?’
মিতু কিছুক্ষণ ভেবে ফের বলে,
“আজ স্কয়ারে যাবো ডকটর দেখাবো তোকে লাগবে,যেতে পারবি?’
“কি ব্যাপার আপু বলোতো? ‘
“যে ব্যাপার সবসময় হয় বিয়ের পরে….।’মৃদু হেসে প্রতুত্তর করে মিতু।
“রিয়েলি?উফ্ আপু দ্যাটস গ্রেট!তাহলে তো ডকটর দেখানোর পরে দুলাভাই এর কাছ থেকে সেরকম একটা ট্রিট পাবো বলো?’
“দুলাভাই তো এখন কাছে নাই,তবে চিন্তা কি তোর দুলাভাই এর ট্রিটটা নীবিড় না হয় দিয়ে দিবে?’
পারুল হঠাৎ ভড়কে যায় শুনে।জবাবে,
“নীবিড় ভাইয়া দিবে? হঠাৎ তার কথা কেন? উনিও কি আসছেন ওখানে…?’কিছু একটা জানতে চায় যেন পারুল।
পারুলের কৌতুহল দেখে মিতুও যেন কিছু একটা আন্দাজ করে।জবাবে,
“না বল্লাম এ কারনে,কারন আজকাল তুই এই বোনকে দেখতে আসার চেয়ে তোর বেয়াইকে নিয়ে ঘোড়াঘুড়িতে ব্যস্ত থাকিস….আর মুখে বলিস নীবিড়কে তোর পছন্দ না।’
পারুল আমতা আমতা করে।
“ঠিকই তো বলেছি। ‘
“তাই যদি হয় তাহলে তার হাত ধরে কাল রিক্সায় কি করছিলি পারুল?’
চোর ধরা পড়ে যাবার মতো মনে হলো পারুলের কাছে।
“আপু তুমি এভাবে কেন কথা বলছো আমার সাথে?নীবিড় ভাইয়া কি কিছু বলেছে?’
“অনেক কিছুই বলেছে পারুল।নীবিড় তোর সম্পর্কে অনেক উল্টোপাল্টা কথা বলেছে।ওর থেকে তুই দূরে থাকবি।’
“কি বলেছে….?’
“সেটা দেখা হলে বলবো।এখন ছাড়ছি পাঁচটায় এখানে আসবি না সরাসরি স্কয়ারে?’
পারুল ভারী কন্ঠে বল্ল,
“স্কয়ারেই আসবো।’
ফোন রেখে দেবার পর ভাবে মিতু।ওকি বেশী রিএকট করে ফেলেছে মামাতো বোন পারুলের কাছে?পুরো বিষয়টাতো আগে জানা দরকার ছিল।ফের ভাবে,
“রাগ করবোই বা না কেন নীবিড় তো পারুলকে নিয়ে যাচ্ছে তাই বলেছে?পারুল আমার বোন নীবিড় তো কোন ছাড় দেয় নি? পুরো দোষ পারুলের ঘাড়ে চাপিয়েছে….।’
সাড়ে চারটার মধ্যে দুবোনের দেখা হয় স্কয়ারে।স্কয়ার হসপিটাল মিতুর বাসা থেকে বেশী দূরে নয়।বন্ধন জিপ গাড়িটা পাঠিয়ে দিয়েছিল।গাড়ী থেকে নেমেই মিতু পারুলকে খুঁজে পায়।

ছোট মামাদের বাসাও গ্রিনরোডে।পারুলের সান্তা মারিয়াম ভার্সিটি ধানমন্ডি শাখাও একটা এখানে।
পারুল সাদা লং ড্রেস, পলেজ্জো দিয়ে পড়ে এসেছে।দুচোখে কাজল আঁকা ডাগরডোগর চোখ,উজ্জ্বল গায়ের রঙ।সান গ্লাস পড়ে এসেছিল কপালের উপরে তুলে রেখেছে।তবে দেখে ওর মুখটা বেশ ভার লাগলো।
“লাগবেই তো না জানি কি বলতে কি বলে ফেল্লাম আমার আদরের এ মামাতো বোনকে?মাশাআল্লাহ ভারী সুন্দর হয়েছে এখন পারুল,আর ওকে নিয়ে কিনা নীবিড় আবোলতাবোল কথা বলেছে….?’
দুবোন কাছাকাছি হয়।পারুল চুপ করে আছে,বোঝা যাচ্ছে মিতুর আচরনে কতখানি খারাপ লেগেছে ওর।পারুলকে জিজ্ঞেস করে,
“কখন এসেছিস?’
“এই তো কিছুক্ষণ আগে।’
দুজনে ডকটর শাহানা পারভীনের রুমের কাছে বসে মিতু সিরিয়াল দেয়।
ঘড়ী দেখে মিতু চারটা পয়ঁত্রিশ।
“কোথা থেকে আসলি?ভার্সিটি ছিল আজ?’স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে মিতু বোনের কাছে।
“না আজ বন্ধ।’
“কিছু খাবি?’
“না।’
“রাগ করেছিস?’একটু ভেবে,
“না রাগ কেন করবো?কিন্তু কি বল্লা তখন কিছুই বুঝলাম না?’
মিতু হসপিটালের ফাঁকা এক জায়গায় পারুলকে ডেকে নিয়ে যায়।
“পারুল সত্যি করে বলতো নীবিড়ের সাথে তোর কোন এফেয়ার টেফেয়ার চলছে কিনা?’
পারুল ফের আমতা আমতা শুরু করে।
“এফেয়ার কিনা জানি না উনার আমাকে নাকি ভালো লাগে।’
“আর তোর?’
“আমারও এখন একটু একটু লাগে….।’মাথা নীচু করে পারুল জবাব দেয়।
“কতদিন ধরে?’
“বেশী না একমাস।’
“তোরা কি প্রায়ই দেখা করিস?’
“আমি করতে চাই না,নীবিড় ভাইয়াই তো আমার ভার্সিটির সামনে এসে বসে থাকে।’
“তাই নাকি?কিন্তু পারুল তুই জানিস এই সেইম জিনিস তো নীবিড় আমাকে বলেছে….।’
“কি বলেছে?’
“তুই নাকি ওর সাথে দেখা করার জন্যে পাগল?আরও কত কি হাবিজাবি বলেছে তোর নামে…. গতরাতে তুমুল ঝগড়া করেছে এটা নিয়ে আমার সাথে।’
“হতেই পারে না?তুমি ম্যাসেজ দেখো তাহলেই বুঝবা।’
পারুল ম্যাসেজগুলি ওর স্মার্ট ফোন থেকে খুলে বের করে দেখায়।
তাতে প্রায় সবগুলিতে পারুলকে বেবী বেবী করে লেখা নীবিড়ের এস এম এস।
“বেবী ওয়ার ইউ?আই এম নাও নিয়ার বাই ইউর ভার্সিটি লেট হুই মিট?’আরেকটাতে লেখা,
“সরি বেবী আই কান্ট কাম টুডে।কাজ পড়ে গেসে বিজি আছি।পড়ে আসবো।’
তাতে বোঝা গেল নীবিড়, পারুলের ভার্সিটি যায়।পারুলও তাকে প্রশয় দিচ্ছে।আর দুজনের যা বয়স দুজন দুজনকে ভালো লাগতেই পারে।কিন্তু নীবিড় এ কথা বলার সাহস পেল কি করে,
“তোমার বোন আমার সাথে দেখা করার জন্যে পাগল।আমি না….আমার এতো সময় নাই,লেট হার আসক্।’
কথাগুলো পারুলকে জানায় মিতু নীবিড় যেভাবে বলেছিল ঠিক সেভাবে।সাবধান হতে বলে মিতু নীবিড় থেকে,এই বলে।
“দেখ পারুল দো ইটস ইউর পারসোনাল ম্যাটার বাট ইউ হ্যাভ টু নো হিম।যে ছেলে মাত্র একমাসে একটা রিলেশন করে পুরো দোষ তার লাভারের উপর চাপিয়ে দিতে পারে, সে ছেলে তার লাভার বা গার্ল ফ্রেন্ডের জন্য কতখানি আস্থাভাজন।আমার তো মনে হয় না এ রিলেশন ট্রাস্টেবোল তার চেয়ে টেরিবল লাগছে নীবিড়ের আচরনে।
পারুল ও মিতু কেউই যেন বিশ্বাসই করতে পারে না,বন্ধনের মতো মানুষের এরই তো ভাই নীবিড়?এত ভালো একটা ফেমেলী তারা বিলোং করে।তাহলে?কানাডা নিবাসী নীবিড় কি তবে গেইম খেলছে পারুলের সাথে?(চলবে)

বিঃ দ্রঃএই পর্বটি গুগল ড্রাইভ থেকে পোষ্ট করেছিলাম তাই আবার দিলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here