দ্বিতীয় বাসর পর্ব ৬৫+৬৬

দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৬৫
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

মিতুর শরীর ও মন ক্রমশই খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
কাউকে কখনো চিনছে,কখনো বা চিনতে পারছে না।
তার প্রানপ্রিয় আব্বু মারা গিয়েছে,অথচ কোন প্রতিক্রিয়াই নেই!
বন্ধনের কাছ থেকে অনুমুতি নিয়ে সেতারা তাদের বাবার বাসায় আদাবরে মিতালীকে নিয়ে যায়।
মিতালী শুধু তার বাবার ঘরে গিয়ে খোঁজে তার আব্বুকে।
“আচ্ছা আপু আব্বু কোথায় বলো তো?’
সেতারা,মুহিন একজন আরেকজনের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে।
শান্ত গলায় সেতারা জবাব দেয়।
“আব্বু কোথায় তুই জানিস না হতভাগী?’
“আমি কি এখানে থাকি?আমার বিয়ে হয়ে গেছে না?কি করে জানবো আমি?’স্বাভাবিক উত্তর মিতুর।
“আমাদের আব্বু নেই।উনি এখন আমাদের মায়ের পাশে শুয়ে আছেন।’
“আব্বু নেই মানে?মায়ের পাশে শুয়ে আছে মানে?কি বলছো?’
“মানে আব্বু আর নেই আপু,, কেন বুঝতে পারছো না?এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে আব্বু।আব্বুকে আম্মুর পাশে কবর দেয়া হয়েছে।’
মুহিন বলে ওঠে এবার।
মুহিনের কথা শুনে রাগে ফেটে পড়ে মিতু।
ওর শার্টের কলার মুঠি চেপে ধরে চিৎকার করে ফের।
“কি সব আবোলতাবোল কথা বলছিস মুহিন?আব্বু মারা গেছেন আর আমি জানবো না?খবরদার ফের উলটোপালটা কথা বলেছিস তো!’
সেতারা মিতুকে ছাড়িয়ে নেয় এবার।
কষে সজোরে মিতুর গালে একটা থাপ্পড় দেয় বড় বোন সেতারা।
ব্যাথায় আর্তনাদ করে মিতু।
“আপু আমাকে মারছো কেন?কি করেছি আমি?’
“ওরে হতভাগী আমাদের বাবা আর নেই,মাও নেই,তোর পেটের বাচ্চাটাও নেই,,,কাঁদ মিতু কাঁদ,,,বাস্তবে ফিরে আয়, কল্পনা ছাড় মিতু,,,’
সেতারার কথাগুলো যেন তীরের মতো বিঁধলো মিতুর বুকে।
বাবার ঘরটায় যেয়ে আবার সেই পাগলামী মিতুর।
ফের রহিমা খালাকে জিজ্ঞেস করে সত্যতা জানতে চায় এবার।
খালাও নির্মম সত্যিটা জানিয়ে দেয় অতঃপর।
বাবার ঘরে মিতু তার প্রিয় আব্বুর বিছানার বালিশটা জাপটে ধরে এবার।
প্রচন্ড আর্তনাদে ক্ষতবিক্ষত মিতু।
“আব্বু তুমি কই?আমাকে এভাবে না বলে চলে গেলে?’ বলে চিৎকার করে ফুঁপিয়ে ওঠে।
তার কান্নার বৃষ্টিতে, নিজেকে কষ্টের অনল থেকে মুক্ত করার চেষ্টা যেন অবিরামভাবে।
প্রায় সারাটাক্ষন,সারাবেলা মিতালীর চোখটা বেয়ে ঝরে
অঝোর বারিধারা।
ডিসেম্বর মাসে শুকনো মৌসুমে তার চোখে অবিরাম শ্রাবনের ঢল।
নাওয়া,খাওয়া কোন কিছুই ঠিক নেই মিতালীর।বুকের মাঝটায় বালিশ চাপা দিয়ে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শুধু।
সেতারা জোর করে বোনের মুখে খাবার তুলে দেয় ঠিক ওর মায়েরই মতোন।এরপর রহিমা খালা, সেতারা মিলে সযতনে তাকে গোসল করিয়ে,কাপড় পড়িয়ে দেয় এতীম ও সদ্য সন্তান হারা মিতালীকে।
সেতারা বড় চিন্তিত হয়ে পড়ে তার মালয়েশিয়া চলে যাবার দিন ক্রমশ চলে আসছে।তার স্বামী ডকটর আরিফ বাংলাদেশে এসে শ্বশুরের দাফন কাজ সেড়ে দুদিন পরই মালয়েশিয়া চলে যায়।
কিন্তু মিতু ও মুহিনকে এভাবে ফেলে কিভাবে যাবে?আর গেলেও তো শান্তি পাবে না সেতারা।
এসব ভেবে সেতারাও অসুস্থতা অনুভব করে।

নিজের ভাগ্যের কাছে লাঞ্চিত,পরাজিত মিতু বড়ই ক্লান্ত। সেতারা তাকে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে বিছানায় শোয়ায়।
তাদের আব্বুর ঘরেই ঘুমাতে চায় মিতু।
চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে অগত্যা।
সেতারা ছেলে, মেয়ে নওশাত ও সিমলা বিস্মিত প্রকাশ করে।
“মামনী,খালামনির কি হয়েছে?বাচ্চাদের মতো কেন করছে?’
ছোট মেয়ে সিমলা জানতে চায়।
মাত্র বারো বছর সিমলার,একই জিজ্ঞাসা নওশাতেরও চোখে মুখে। সে অবশ্য বেশ বড়ো।স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছে মাত্র কিছুদিন।
“তেমন কিছু না সোনা,খালামনি অসুস্থ তো তাই?’
“কিন্তু তুমি কেন খালামনিকে মারলে?তোমার কাছ থেকে ব্যাথাটা পেয়েই তো সে কেঁদেছে?’আবারও জিজ্ঞাসা সিমলার
“এ ব্যাথাটা না দিলে তোমাদের খালামনি আরও ব্যাথা পাবে।’
সিমলা কিছু বুঝতে পারে না তার মার কথায়।
নওশাত বুঝে যায়,তাদের খালামনিকে আজ তাদের মা মেরেছে বলেই স্বাভাবিক কান্নাটা আজ এতদিন পর কেঁদেছে মিতু।তা না হলে মিতালীর অস্বাভাবিকতা বেড়েই চলত।কখনো ঘটতে পারতো না অনুভুতির প্রতিক্রিয়া।

আজ ডিসেম্বর আঠারো। মিতালীর জন্মদিন।বন্ধন মিতুর জন্য অনেক ফুল কেনে।বেলী,কাঠালিচাঁপা ফুল অনেক পছন্দের মিতুর।যদিও এখন বর্ষা নয়।তবু খুঁজে খুঁজে ফুল কিনে তোড়া সাজায়।রক্তগোলাপ কয়েকটা,সাথে চন্দ্রমল্লিকা ফুল ছিল যাকে বোতাম ফুলও বলে,সেগুলো, এছাড়া সূর্যমুখী সহ বেশ কিছু রং বেরং এর ফুল দিয়ে সাজায় মিতুর জন্মদিনের জন্যে ফুলেল উপহার।
মিতুর একটা লালচে মেরুন কালারের শাড়ী অনেক পছন্দ হয়েছিল।
নীবিড় যখন বাংলাদেশে এসে তার ভাই ও ভাবীর সাথে শপিং এ গিয়েছিল তখন মিতু এ শাড়ীটি ধরে বার বার দেখছিল।
কিন্তু সেদিন সে কিছু বলেনি।দামটা জিজ্ঞেস করেছিল দোকানীকে যদিও। দামটা চড়া মনে হয় তখন মিতুর মসলিন শাড়ীর উপর অসাধারন হাতের কাজ করা এই শাড়ীটি।তার উপর মিতালীর পছন্দের রঙ লাল।
যদিও বন্ধনের সাথে তখনও কত দূরত্ব।অন্তরঙ্গতার কোন সুযোগ নেয় নি তার নিজের স্বামীর কাছেও।
মুখ ফুটে বলেও নি,এই শাড়ীটা তার এত পছন্দ হয়েছিল।
এমনকি বিয়ের পর দুটো ঈদেও সে সুবিধা নেয় নি।অথচ বিয়ের পর মেয়েরা কত শখ করে তার স্বামীর কাছ থেকে এসব উৎসব আনন্দে কিছু না কিছু পছন্দ করে কিনবে।
নিজের জন্যে তো নয়ই,সবসময় বাবাই কি পড়বে,কি পড়লে তাকে মানাবে,নানুর জন্যে কি কিনবে এমন কি আবীর আর তার স্ত্রী বাচ্চাদের কেনাকাটা নিয়েও অস্থির থাকতো মিতালী।
আর নীবিড়কে সবসময় নিজের ছোট ভাই হিসেবেই দেখে এসেছিল।
এত অল্প সময়ে বন্ধনের পরিবারকে সে আপন করে ছিল।আজ বন্ধনের দায়িত্ব তাকে যোগ্য প্রাপ্তি দেয়া।
“আর এতো শুধু প্রাপ্তি নয় হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা যা আরও আগেই দেয়া উচিত ছিল আমার মিতুকে।’

কেকের অর্ডারটা আগেই দিয়েছিল। কেকটাতে কি লেখা থাকবে তাও বলে জানায় শালি পারুলকে।পারুল তো পুরোই অবাক,একজন সেনা অফিসার এতো আবেগী হতে পারে?
কারন কেকটা বাসায় আনার দায়িত্ব পারুল নেয়।
আদাবরের বাসায় এসে খুশী ও আগ্রহ চিত্তে গাড়ী থেকে নামে আর্মি সু্্যট,বুট আর চোখে মিতালীরই কিনে দেয়া সানগ্লাস।
“ভীষন রকম গুড লুকিং লাগছে আপনাকে বাবু?এইভাবেই আপনি আমাকে পাগল বানাতে চান,,,তাই না বাবু?’
“আর যখন আমি আদর করবো,তখন পাগলিটা বলবে,এইভাবেই আমাকে আদর করবেন, যাতে পরে আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে না পারি,,,,পরে আপনি যখন আমাকে ছেড়ে দূরে থাকবেন তখন আমার কেমন লাগে সেটা বোঝেন আপনি?’
এসব,মনে মনে ভাবে বন্ধন মধুর আবেগে।
“পাগল কি তুমি একা হয়েছো মিতু,এইভাবে তো তুমিও আমার মাথাটা খেয়েছো তোমার সহজ সরল দুরন্তপনায় আর আধো আধো আল্লাদিপনা কথার জাদুতে।আবার এভাবে কবে শুনবো মিতু?ফিরে এসো তুমি আবার আগের মতোন,,,এ অন্তরে।’
কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে এসে যেন তার আনন্দ ও আগ্রহ দুটোই উবে যায়।
মিতালী উঠোনের দোলনায় দোল খাচ্ছিলো।কিন্তু মাথাটা হঠাৎ চক্কর খায় তার।
পড়ে যাচ্ছিল মিতু।
ঘটনার আকস্মিকতায় মিতুকে ধরে ফেলে তৎক্ষনাত।
তবে সে বন্ধন নয় হীমেল।
বন্ধনের হাতে মিতুর জন্যে তার একরাশ ভালোবাসার তরতাজা ফুল।আর পছন্দের প্রিয় সেই উপহার যা মিতু শপিং মলে দেখে এসেছিল।
সেগুলো একজায়গায় রেখে বন্ধনও দৌড়ে যায় তার স্ত্রীকে ধরতে।
কিন্তু মিতু প্রবল অভিমানে হাত বাড়িয়ে সড়িয়ে দেয় তাকে।
কিন্তু হীমেলের হাতেও অনেক ফুল দেখতে পায় বন্ধন।
“তবে কি হীমেলও,,,,,?'(চলবে)নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৬৬
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

সকালে পারুলের মোবাইলে ফোন এলো।
ঘুম কাতুরে গলায় বল্ল,
“হ্যালো?’
“হ্যালো পারুল,ভালো আছো?’
“জ্বী দুলাভাই,, ‘
“ঘুমাচ্ছিলে নাকি?’
“হ্যা দুলাভাই,আজ ভার্সিটি নেই তো,তাই।’
“আমার একটা কাজ করে দিতে পারবে?’
“কি কাজ? ‘
“আজ তো মিতুর জন্মদিন,তুমি যদি ওর কেকের ওর্ডারটা দিয়ে দিতে?’
“ওহহো্ তাই তো আজ মিতু আপুর জন্মদিন,,,একদম মনে ছিলো না,, ‘মনে মনে আওরায় পারুল।
“অবশ্যই দুলাভাই।কোথা থেকে দিবো?’
“তোমার যেখানে ভালো মনে হয়।আর আমার মনে হলো ভালো কেক তুমি বেটার চয়েজ করতে পারবে।’
“ঠিক আছে ভাইয়া,চিন্তা নাই।আপু চকলেট কেক অনেক পছন্দ করে আমি আমার পছন্দ মতো অর্ডার দিয়ে দিবো।আচ্ছা আর কোন প্ল্যান আছে নাকি জন্মদিন নিয়ে?’
“না আপাতত নেই।তুমি তো জানো,আমার শ্বশুর মারা গেছেন, তার উপর বাচ্চাটাকে হারালাম আজ তাদের জন্যে মসজিদে আবারও দোয়া পড়িয়ে দিচ্ছি।আর মিতুর এখন মনটাও চাঙ্গা করার দরকার,তাই শুধু কেকটা কাঁটতে চাই ওকে নিয়ে।আর যদি পারি সন্ধ্যায় ওকে নিয়ে ঘুরে আসবো।’
“তাই যান দুলাভাই।আচ্ছা কি লিখতে হবে কেকটাতে।’
“সেটা এস এম এস দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছি।আর শোন আর একটা কথা।’
“কি কথা?’
“মিতুর ব্যাগে হসপিটালে যে কাপড়ের ব্যাগটা,সেটাতে একটা ছোট ব্যাগ আর একটা আর্মি ক্যাপ আছে সেগুলো তোমার কাছে গুছিয়ে রেখো।’
“কার ব্যাগ দুলাভাই?’
“ক্যাপ্টেন জামানের।মিতুকে যে ব্লাড ডোনেট করেছিল।ও ভুলে এসব রেখে গেছে।আমি পরে মিতুর লাগেজে ঢুকিয়ে ছিলাম।’
“ও আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া।’

পারুল এখন তার ফুপাত বোন মিতালীদের সাথেই থাকছে। সেতারাও বলছিল থাকতে।মিতুর ছোট মামী অবশ্য রাজী ছিলনা।তাছাড়া নীবিড় এভাবে না জানিয়ে চলে যাওয়াতে ছোট মামী চটে যায় মিতালী ও নীবিড়ের উপর।
পারুল এটা নিয়ে তার মাকে সাফ জানিয়ে দেয়,
“এখানে মিতু আপুর কি দোষ?তুমি কেন রাগ করছো ওর উপর?’
“কেন রাগ করবো না,নীবিড় কত ভালো একটা ছেলে মিতু কি জানতো না আমি ওকে তোর জন্যে পছন্দ করে রেখেছি।আর ছেলেটাও তো কত তোকে পছন্দ করতো।’
“পছন্দ না ছাই করতো।’
ফের রেগে যায় ছোটমামী,
“পছন্দ না করলে ও তোকে ফোন করতো কেন,ভার্সিটিতে তোর সাথে দেখা করতে না আসতো, তুই না বলতি?কত করে বলেছি মিতুকে,তোকে দিয়ে খাবার পর্যন্ত পাঠিয়েছি।আর তোর বোনের সহ্য হচ্ছিল না তুই ওর সংসারে ঢুকিস,হিংসামী করে দেবরটাকে পাঠিয়ে দিলো,,,’
“দেখো মা,যা জানো না তা নিয়ে কথা বলবে না।’
“হ্যা আমি তো কিছু জানি না,সারাক্ষন বোনের ভালোর জন্যে চিন্তা করিস তুই আর দেখ সে তোর কি প্রতিদান দিলো।’
“মা তুমি যখন অসুস্থ থাকতে মিতু আপু,সেতারা আপুই আমাকে দেখাশোনা করতো,খাইয়ে দিতো আমাকে,আমাকে স্কুল কলেজেও দিয়ে আসতো নিয়ে আসতো,আববুও সেভাবে আমাকে সময় দেই নি।আর তুমি বলছো প্রতিদানের কথা।’
মেয়ের কথায় পেরে ওঠে না ছোটমামী।
ছোটমামীর মানসিক কিছু অসুস্থতা আছে।হঠাৎ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে মামী কোন কাজ করতে পারে না।
তাই পারুল হবার পর মামা আর সন্তান নেন নি।
পারুলকে সেই থেকে সেতারা ও মিতুই খেয়াল রাখতো।
ছোট মামা দিয়ে যেত তাকে তাদের কাছে তখন থেকে।

ব্যাগের চেইনটা খোলে পারুল।সেতারাও ঘর গোছাচ্ছিল।মিতু ঘুমিয়ে আছে তখনও।মুহিন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এ আই ইউ বিতে ভর্তি হয় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ।অনেক টাকা খরচ হয় এখানে।
অ্যাডমিশনে চান্স পাবার পর ভর্তির টাকা সহ সব ব্যবস্থা করে দেয় বন্ধন।সেতারাও কিছু অবদান করে।
চেইনটা খুলে ছোট একটা জলপাই রঙা ব্যাগ বের করে
পারুল।হঠাৎ হাতটা থেকে ব্যাগটা টেনে বের করবার সময় পড়ে যায়।
ব্যাগের বোতাম খোলা ছিল,ভেতর থেকে অনেক গুলো ছবি বের হয়ে যায়।
ছবিগুলো সব মিতুর।নীলগিরিতে তুলে দিয়েছিল যে ছবিগুলি জামান।মিতুর ছবিগুলির দিকে চোখ আটকে যায় সেতারাও।
হাতে তুলে নিয়ে পারুল ও সেতারা একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে।
“মিতু কোথায় গিয়েছিল?’সেতারা জিজ্ঞেস করে ফের,
“কি ব্যাপার বল তো পারুল?ক্যাপ্টেন জামানের ব্যাগে মিতুর এত ছবি?’
“মিতু আপু নীলগিরিতে গিয়েছিল সেতারা আপু।’
“একা?বন্ধন কই তাহলে?সব তো মিতালীর সিঙ্গেল ছবি?’
“আমিও তাই ভাবছি।দুলাভাই বোধহয় কাজে আঁটকে গিয়েছিল।’
“বন্ধনের মোটেও উচিত হয় নি,মিতুর থেকে এভাবে দূরে থাকা।বিয়ের পর ওকে তো হানিমুনেও নিয়ে যায়নি।আর দেখ সব গুলো ছবিতেই মিতুর কেমন মনমরা ভাব।’

মোবাইল এর টুনটুন শব্দে মিতালীর ঘুম ভেঙ্গে যায়।
পারুল মোবাইলটা চার্জে দিয়ে ভুলে রেখে গেছে।
কে যেনো ফোন করেছে পারুলকে।
হাতে নেয় মিতালী ফোনটা।
পারুলের মোবাইলে ভাইরাস ঢুকে ব্যাপক সমস্যা হয়ে গিয়েছে।
ভয়েস রেকর্ডারে অটো ভয়েস অন হয়ে যায়।
হঠাৎ মিতু শুনতে পায় পারুলের মোবাইল থেকে অটো ভয়েস।
বন্ধনের গলা শুনেই চমকে যায় মিতু,
“মিতুর কি দোষ ছিল?যা দোষ করেছি আমি আমার সাথে বোঝাপড়া করতি,মিতুর গায়ে হাত দিলি কেন?’
“দোষ স্বীকার করছো তাহলে বাবু?অথচ এই তুমি মিতুর কাছে কত সাধু সেজে এসেছো?দিনের পর দিন মিতুর সাথে ভালোবাসার নাটক করেছো,,,,’
হুংকার দিয়ে ওঠে বন্ধন,
“একদম বাজে কথা বলবি না পাঁপিয়া,আমি কোন নাটক করিনি।’
“তুমি নাটক করোনি?এই একই নাটক তুমি আমার সাথেও করেছো মিষ্টার বন্ধন।আমি তো তোমাকে ভুলেই গিয়েছিলাম,পরে তুমি আমার কাছে এসেছো।অস্বীকার করতে পারো?দিনের পর দিন তুমি আমাকে ভোগ করোনি?আর এখন মিতুর কাছে ভালো মানুষ সেজে আছো,,,,,’
মিতু কথাগুলো শুনে থমকে যায় এবার।ওর মাথা ভয়ংকর ভাবে দুলতে থাকে।
“কত বড় মুখ করে সেদিন আমি পাঁপিয়াকে বলেছিলাম,খোদ ফেরেশতা এসে বল্লেও আমি বিশ্বাস করবো না আমার বাবু এমন।অথচ বন্ধন নিজের মুখে স্বীকার করেছে সে দোষ করেছে।ছিঃ বাবু এত বড় ধোকা দিলেন আপনি আমাকে?আর এজন্যে বিয়ের পাঁচমাস পর আমাকে স্পর্শ করেছিলেন?তারমানে তখনও আপনার সাথে পাঁপিয়ার শারীরিক সম্পর্ক ছিল?’

পারুল রিক্সায় উঠেই চমকে যায়,
“এই রে আমার মোবাইলটা তো ভুলে রেখে এসেছি।দুলাভাই তো টেক্সট পাঠাবে মিতু আপুর কেকটাতে উইশ পাঠানোর লেখা দিয়ে।তাড়াতাড়ি রিক্সা
ঘুরিয়ে আদাবরের বাসায় দৌড়ে যায়।
রুমে ঢুকে ধাক্কার মতো খায় পারুল।ওর মোবাইলে যে পাঁপিয়া বন্ধনের কিছু কথা রেকর্ড হয়ে গিয়েছিল পরে তা শুনেছিল পারুল।কিন্তু পরে আর ডিলিট করা হয়নি।
পারুলের মোবাইল হাতে মিতু দাঁড়িয়ে আছে।
“তোর একটা কল এসেছিল পারুল? ‘খুব স্বাভাবিক কন্ঠে জানায় মিতালী।
মিস কলটা বন্ধনেরই দেখতে পায় পারুল।
“আপু দেখসো দুলাভাই ই ফোন করেছিল,তোমার জন্মদিন নিয়ে ভাইয়ার কত ভাবনা! ফোনটা ধরলে না কেন মিতু আপু?কথা বল্লেই পারতে?’
“হুম আসলে কত যে ভাবনা?কিন্তু এসব বাবুর শুধু অভিনয়,,,কত চমৎকার উপহার পেলাম আজ আমার জন্মদিনে,,,,, মুখোশ খুলে গেছে বাবুর,ধোকাবাজ লোক একটা,,,,’বিড়বিড় করে সমস্ত দোষ চাপাতে লাগলো মিতু তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির ওপর।
পারুল তাড়াতাড়ি মোবাইলটা নিয়ে দেখল স্ক্রীনে ভয়েস উঠে আছে।তবে সুইচ অফ।
“যেখানে বাঘের ভয়, সেইখানেতে রাত হয়,মিতু আপু শুনে ফেল্লো নাকি বন্ধন দুলাভাই আর পাঁপিয়ার কথা? ‘
একটু পরেই বন্ধনের এস এম এসটা আসে।কেকের গায়ে কি লেখা থাকবে সেটা জানায় বন্ধন।
এস এম এস টা পড়ে রীতিমতো মুগ্ধ পারুল,
“ইশ কত্ত রোমান্টিক বন্ধন দুলাভাই!
মিতু আপুকে কত্ত ভালোবাসে,,,,,?’

পারুল বের হয়ে যায় আবার,কিন্তু মিতুর চোখের কোনে ব্যাথার পানিটা দেখতে পায় না সে।
পারুল চলে যাবার পর বিছানার ওপর দপ করে বসে পড়ে মিতু।দুহাত গালে চেপে ফোঁপাতে থাকে।
তীব্র ঘৃনা আর লাঞ্চনায় আবারো দগ্ধ হয় মিতালী,
“আজ আপনার এই জঘন্য ভুলের কারনে, পাঁপিয়া আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল,আপনার পাঁপের কারনে আমার নিষ্পাপ বাচ্চাটাকে হারিয়েছি বন্ধন,,,,দিনের পর দিন আপনি আমাকে মিথ্যে বলেছেন।এই ভুলের কোন ক্ষমা নেই,,,,,আই জাস্ট হেইট ইউ বাবু,,,,,আই হেইট ইউ,,’
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here