#না_চাইলেও_তুমি_আমার💞
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট_১৯
।
।
।
।
গ্রামের কাচা রাস্তায় বার বার গাড়ি এদিক ওদিক কাত হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বেশী একটা ঝাকি লাগছে না কারণ কাব্যের ড্রাইভিং ভালো। আজ আমি আর কাব্য গ্রামের টিয়াদের বাড়ীতে যাচ্ছি। আমি বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি, গ্রামের পরিবেশ আসলেই খুব মনোরম। চারপাশে ক্ষেতে ভরপুর, একবার ধান ক্ষেত আরেক বার সরিষা ক্ষেত, আরেক বার পাট ক্ষেত একের পর এক ক্ষেত পার হয়ে যাচ্ছি আমরা,চারপাশে এত গাছ পালা কিছুটা দূর পর পর খাল বিল দেখা যাচ্ছে, রাস্তা মাঝে মাঝে গরু ছাগল ধান ক্ষেতেও দেখাচ্ছে খুবই সুন্দর সব কিছু।
কাব্য হঠাৎ গাড়ি থামালো, আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,,,কি হয়েছে গাড়ি থামালে কেন চলে এসেছি।ও আমাকে সামনের দিকে ইশারা করলো, আমি তাকিয়ে দেখি ছোট একটা হাসের বাচ্চা ছোট ছোট পায়ে হেটে যাচ্ছে ইশশশ কতটা যে কিউট দেখাচ্ছে, বাচ্চাটা পাড় হয়ে গেলো কাব্য আবার গাড়ি চালানো শুরু করলো।
ফাইনালি আমরা পৌছে গেলাম, আমি গাড়ি থেকে নেমে গেলাম আর কাব্য ব্যাগ নামাচ্ছে তখনি টিয়া দৌড়ে আসলো আর মামীর সাথে একজন লোক।মামী বলল,,,
– তোমাদের আসতে কষ্ট হয় নিই তো
– না মামী
তখনি টিয়া বলে উঠল,,,,
– ভাবি ফাইনালি তোমরা আসলা
– কেমন আছো টিয়া
কাব্য হঠাৎ বলে উঠল,, তোদের মনের ভাব বিনিময় পরে কর আগে বাড়ীতে চল,আমি গাড়ি পার্ক করে আসি।তারপর কাব্য গাড়িতে উঠে চলে গেল।আমি আর টিয়া ওদের বাড়ীতে গেলাম কিন্তু বাড়ী দেখে মন খারাপ হয়ে গেল, টিয়া বলল,,,
– কি হয়েছে ভাবি দাড়িয়ে পড়লে কেন বাড়ী পছন্দ হয় নিই
– না
– ভাবি গ্রামে শহরের মতো ওতো সুন্দর বাড়ী না
– তা না আমি ভেবে ছিলাম গ্রামের মতো বাড়ী থাকবে কিন্তু এটা তো শহরের বাড়ীর মতো
– আচ্ছা চল ফ্রেশ হয় নেও আমরা তারপর ছাদে যাব
– আমি গোসল করব
পিছন থেকে কাব্য বল,, হ্যা গোসল করতে হবে পরে সব কিছু। টিয়া বলল,,,ঠিক আছে।পরে আমাদের একটা রুম দেখিয়ে বলল এটা আমাদের থাকার রুম, আমি ভিতরে গিয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াস রুমে যেতে নিলাম, দেখতে পেলাম কাব্য বাহিরে যাচ্ছে আমি ওকে ডাক দিলাম,
– কোথায় যাচ্ছ
– পুকুরে
– কি এখানে পুকুর আছে
– হ্যা
– আমিও যাব
– না তুমি সাঁতার জানো না
– প্লিজ আমিও যাব
পিছন থেকে মামী বলল,,কাব্য ওকেও নিয়ে যা শহরের মেয়ে ওর তো পুকুরের যাওয়ার মন চায়।আমি খুশি হয়ে মামীকে বললাম,,থ্যাংকস মামী।কাব্য বলে উঠল,, না মামী ও সাতার জানে না।মামী বলল,,আরে ও জানে না তো কি হয়েছে তুই তো জানিস তাছাড়া টিয়াও আছে। পরে কি মামীর জোর করার কারণে আমি যেতে পারলাম, আমি সিড়িতে পা ডুবিয়ে ওদের দেখছি আর কাব্য আর টিয়া পুকুরের এদিকে থেকে ওদিক যাচ্ছে সাতার কেটে।
কিছুখন পর চারটা বাচ্চা আসলো দুইটা বাচ্চা মেয়ে আর দুইটা বাচ্চা ছেলে, আমি তাদের দেখে অবাক এতটুকু বাচ্চা আর তারা এতো ভালো সাতার জানে, আমার খুব ইচ্ছে করছে পানিতে সাতার কাটতে,টিয়া এসে বলল,,
ভাবি নামবে,আমিও সাথে সাথে হ্যা বললাম।কাব্য এসে বলল,,খবরদার একদম না টিয়া ও সাতার জানে না।
আমি কাব্যের দিকে অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে বললাম,,,প্লিজজজজজজজজজজজ।কাব্য বলল,, ঠিক আছে। বলেই আমার দিকে হাত বাড়ীয়ে দিল আমিও খুশি হয়ে হাত দিয়ে দিলাম, তারপর ও বলল,,তোমার শখ মিটাচ্ছি পানিতে নামার,বলেই পানিতে টান দিয়ে ফেলে দিল।
আমি তো ভয়ে হয় এখনি শেষ তাড়াতাড়ি কাব্যের গলা জরিয়ে ধরলাম, কাব্য আমাকে ধরে বলল,,কেমন লাগলো।আমি রাগী ভাবে তাকিয়ে বললাম,,,পাজি ছেলে কোথাকার।ও বলল,,কি আমি পাজি, বলেই আমাকে ছেড়ে দিল আমি তো সাথে সাথে ওকে আরো শক্ত করে ধরে বললাম,,,না না আমাকে ধরো আমি ডুবে যাব। ও না ধরে বলল,,আর আমাকে গালাগালি করবা।আমি বললাম,,না না না আর কখনো না।
তারপর কাব্য আমাকে আবার ধরলো, কাব্য মিটিমিটি হাসছে, পাশে তাকিয়ে দেখি ছোট বাচ্চা গুলো নিজের সর্বচ্চো শক্তি দিয়ে হাসছে আর বলছে,, কত বড় মাইয়া সাতার জানে না হিহিহিহি
তাদের সাথে তাল মিলিয়ে টিয়া আর কাব্যও হাসছে। মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো, আমি রেগে ওদের কাছে গিয়ে বললাম,,,কি বললা তোমরা। ওরা কিছু বলল না চুপ হয়ে গেলো, আমি ওদের কাছ থেকে এসে আবার কাব্যকে ধরে বললাম আমাকে সিড়ির কাছে দিয়ে আসো আমি চলে যাব।কাব্য হা হয়ে তাকিয়ে আছে সাথে টিয়াও। আমি ভ্রু কুচকে বললাম কি হলো কি দেখছো।টিয়া বলে উঠল,, ভাবি তুমি তো সাতার জানো মাএ বাচ্চা গুলোর কাছে সাতার কেটে গিয়ে আসলা। আমিও অবাক হয়ে গেলাম আমি সত্যিই সাতার কেটেছি কিন্তু কিভাবে।
কাব্য বলল,,তুমি তো পারই নিজেই যাও।বলেই আমাকে ছেড়ে দিল,আমি এখন ভুলেই গেছি আমি কিভাবে সাতার কাটলাম,প্রায় পানিতে ডুববো বলে কাব্য এসে আমাকে ধরে ফেলল আর বলল,,কি হলো। আমি বললাম,,আমি ভুলে গেছি কিভাবে সাতার কাটলাম।ও আমার রেগে তাকিয়ে বলল,,গাধী।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই পাখিদের কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে, বারান্দায় গেলাম, চারপাশটা দেখতে লাগলাম, কত সুন্দর এই গ্রামের সকাল ঢাকাতে এমন আবহাওয়া দেখাই যায় না।নিচে তাকিয়ে দেখি টিয়া আর কয়েকটা মেয়ে কানামাছি খেলছে ওদের দেখে দৌড়ে ওদের কাছে গেলাম, গিয়ে বললাম,,,টিয়া তোমরা খেলছো।টিয়া বলল,,হ্যা ভাবি।আমি বললাম,,আমাকে নেবে আমিও খেলবো তোমাদের সাথে,সারা দিন বসে থাকতে ভালো লাগে না । টিয়া বলল,,কেন না খুব মজা হবে।
তারপর সবাই খেলতে লাগলাম, ফাইনালি একটা মেয়ের কাছে ধরা পড়লাম,এবার আমার চোখ বেধে দেওয়া হলো আমি এক এক জনকে খুজতে লাগলাম,কিন্তু একটাও আমার হাতে আসছে না, ফাইনালি পেলাম ধরেই আনন্দে চেচিয়ে বলতে লাগলাম,,ইয়ে ধরেছি ধরেছি কিন্তু বডির আকার এমন কেন এই তুমি যেই হও তুমি ধরা পড়েছো।
হঠাৎ কে যেন আমার চোখের বাধন খুলে দিলো তাকিয়ে দেখি কাব্য দাড়িয়ে আছে, ওকে দেখে আমার ভ্রু কুচকে গেলো চারপাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই সবাই কোথায় গেলো,আমি কাব্যের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,তুমি ওরা কোথায়।ও আমাকে বলল,,সবাই আমাকে দেখে চলে গেছে তাছাড়া তুমি এখানে খেলছো কেন তুমি বাচ্চা নাকি।আমি বললাম,,এতে বাচ্চা হওয়ার কি আছে খেলতে তো সবারই ইচ্ছে করে। ও আমাকে বলল,,তোমার একটু বেশীই ইচ্ছে করে।
আমি বললাম,,দেখো তোমার এই বকা আমার একদম ভালো লাগছে না ওদের ডাক দেও আমি খেলবো।কাব্য বলল,,কোনো খেলা হবে না তুমি এখনো সকালের নাস্তা কর নিই চল আমার সাথে। আমি বললাম,,,না পরে খাব আমাকে খেলতে দেও।ও আমার দিকে কিছুখন তাকিয়ে থেকে বলল,,,তুমি কি এখনো বড় হয়েছে নাকি ছোট আছো।এবার আমার ও রাগ হচ্ছে বললাম,,তুমি আমাকে শুধু শুধু বকো কেন।ও আর কিছু না বলে আমার হাত টেনে বাড়ীর ভিতরে নিয়ে গেলো।
#না_চাইলেও_তুমি_আমার💞
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট_২০
।
।
।
।
সকালে খাবার খেয়ে আমি রুমে গিয়ে আবার একটা লম্বা ঘুম দিলাম,হঠাৎ মনে হলো কেউ ডাকছে তাকিয়ে দেখি টিয়া, আমি উঠে বসলাম আর বললাম,,,কি হয়েছে টিয়া। ও বলল,,ভাবি ঘুরতে যাবে না তুমি না বললে গ্রাম ঘুরবে।আমিও লাফিয়ে উঠে বসলাম,, হ্যা হ্যা চল। ও বলল,,দাড়াও এভাবে যাবে নাকি।আমি বললাম,,ও দাড়াও চেঞ্জ করি নেই।আমি আর টিয়া বের হয়ে দেখি কাব্য গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে, আমরা গিয়ে গাড়িতে বসলাম, আমি হঠাৎ বললাম,, গাড়ি থামওওওওও।কাব্য তাড়াতাড়ি ব্রেক করলো তারপর আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,, কি হলো। টিয়া বলল,,,হ্যা কি হয়েছে ভাবি এমন চিৎকার করলে কেন।আমি একটু জোর পূর্বক হেসে বললাম,, না মানে গ্রামে ঘুরতে বের হয়ে যদি শহরের মতো গাড়িতে বসে থাকি তাহলে গ্রাম ঘুরার মজা কি আর পাওয়া যায়।
আমার কথা শুনে কাব্য আর টিয়া কিছুটা অবাক হলো তারপর কাব্য বলল,,,সামান্য এই একটা কথার জন্য এত জোরে কেউ চেচিয়ে ওঠে।টিয়া বলল,,,ভাইয়া ভাবি ঠিক বলছে তো হেটে হেটে ঘুরি।কাব্য বলল,,ঠিক আছে চল।
তিন জন গাড়ি থেকে নেমে চারপাশ দেখতে লাগলাম,,চারপাশ বেশ খোলা মেলা, আমার চোখের সামনে সরিষা ক্ষেত আবিষ্কার করলাম, বাহ কি সুন্দর, সরিষা ফুলের জন্য মনে হয় এই পুরো জমিনে হলুদে লেপটে আছে,টিয়া বলল,,ভাবি ভাইয়া চল ওখানে ওই ঘাসের উপর বসি। কাব্য বলল,,ঠিক আছে।
আমরা তিন জন মিলে একটু উচু জায়গায় বসে আছি কাব্য হঠাৎ বলল,,টিয়া কিছু খাবি।
টিয়া বলল,,হ্যা চিপস নিয়ে আসো।কাব্য আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,তুমি কি খাবে।আমি বললাম,, তোমরা যা খাবে তাই নিয়ে আছো।
আমি আর টিয়া বসে আছি কাব্য সামনের দিকে গেছে, টিয়া আমাকে বলল,,,ভাবি এই জায়গাটা কেমন লেগেছে তোমার। আমি বললাম,,
– খুব খুব খুব ভালো
– সত্যি
– হ্যা আমার ভিশন ভালো লেগেছে জায়গাটা
এর মাঝে কাব্য চলে আসলো,তারপর তিন খেতে লাগলাম আর গল্প তো আছেই, হঠাৎ বুঝতে পারলাম আমার আচলে টান লাগছে কিন্তু কিসে পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার শাড়ির আচলটা ছাগলের মুখে, দিলাম এক চিৎকার, চিৎকার দিয়ে কাব্য ধরে ফেললাম,কাব্য আর টিয়া অবাক হয়ে বলল,,ভাবি কি হয়েছে।কাব্য বলল,,বলবে তো কি হয়েছে আরে তুমি কাপছো কেন।আমি কাপা কাপা কন্ঠে বললাম,,আআআ আমার শাড়ির আচল ছা ছা ছাগলের মুখে।
হঠাৎ করে কাব্য আর টিয়া জোরে জোরে হাসা শুরু করে দিল ওদের হাসিটা আমার ভালো লাগছে না এখানে আমি ভয়ে আধ মরা হয়ে যাচ্ছি আর এরা হাসছে,রেগে বললাম,,,হাসা বন্ধ করে আমার শাড়ির আঁচল ছাড়াও।কাব্য বলল, ওয়েট।
কাব্য শাড়ির আঁচল টা ছাড়ালো আর এক মিনিট ও ওখানে বসলাম না, আমরা আবার হেটে যাচ্ছি গাড়ির দিকে,মাঝ রাস্তায় এক দল রাজা হাসের সামনে পড়লাম,এতো লম্বা গলা হাস গুলোর, দেখতেও সুন্দর দেখাচ্ছে, আমি টিয়া কাব্য দাড়িয়ে হাসদের যাওয়া দেখছি,
আমি টিয়াকে বললাম,,,টিয়া হাস গুলো কত সুন্দর তাই না।টিয়া বলল,,হ্যা তেমনি ভয়ঙ্কর ও।আমি ভ্রু কুচকে বললাম,,,মানে।ও বলল,,,এই হাস গুলো কামড় দে।আমি আতকে উঠলাম কথাটা শুনে।হাস গুলো চলে গেলো আমি আর কাব্য সাথেও হাটতে লাগলাম,হঠাৎ হাসের আওয়াজ পিছনে ফিরে দেখি একটা রাজা হাস আমাদের দিকে তেড়ে আসছে,আমি ভয়ে ওদের ফেলেই সামনে দৌড় দিলাম আর কাব্য আর টিয়া জায়গায় দাড়িয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দৌড়ের দিকে।
দৌড়াতে দৌড়াতে একটা ইটের সাথে পা লেগে পড়ে গেলাম ভিশন ব্যথা করছে, পা টা মোচকে গেছে, টিয়া আর কাব্য দৌড়ে এসে আমার সামনে দাড়ালো,আমি তো ব্যথায় শেষ, চিল্লিয়ে বলতে লাগলাম,,,আআআআহাহা আমার পা । টিয়া বলল,,ভাবি তুমি ও না এত ভয় পেলে হয়। আমি বললাম,,দেখলে না হাসটা আমাদের দিকে আসছিল।টিয়া বলল,,,আরে ওই হাসটা আমাদের সোজা আসছিল কিন্তু আমাদের কাছে আসার আগে বা দিকে ক্ষেতে নেমে যায় আর তুমি একটু দেখেই দৌড় দিলে।
কাব্য রেগে বলল,,,কি গ্রাম দেখা হয়ে গেছে সামান্য জিনিস গুলো দেখে ভয় পায় আর একটা ব্যথা পেয়ে বসে।আমি গাল ফুলিয়ে বললাম,,তুমি আমাকে বকছো কেন।ও বলল,,তাহলে কি করব বকার মতো কাজ কর কেন চল বাড়িতে ফিরি।আমি রাগ দেখিয়ে বললাম,,, যাব না।
কাব্য আর কিছু না বলে টিয়াকে নিয়ে গাড়ির দিকে হাটা দিল, গিয়ে গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো,সত্যি সত্যি আমাকে ফেলে চলে গেলো, এখন তো মন ভরে কাদতে ইচ্ছে করছে, উঠে দাড়াতে গেলাম কিন্তু পারলাম না পায়ে প্রচন্ড ব্যথা করছে তাই আবার বসে পড়লাম, হঠাৎ আমার সামনে কাব্য গাড়ি থামিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালো আর বলল,,,চল।আমি কিছু না বলে অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে রাখলাম, হঠাৎ কাব্যকে আমাকে কোলে তুলে গাড়িতে বসে দিল তারপর নিজে বসে ড্রাইভ করতে লাগল।
গাড়ি থেকে আমাকে কোলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো মামী দেখে দৌড়ে আসলো, এসে বলল,,আরে কি হয়েছে। কাব্য বলল,,, মামী পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছে। বলে আমাকে রুমে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিলো,তারপর বলল,,,শাড়ি টা চেঞ্জ করে নেও।
বলে আলমারীর কাছে গিয়ে একটা কাপড় বের করে দিয়ে বলল,,,নেও।আমি ওকে কিছু বললাম না অন্য দিকে মাথা ঘুরিয়ে রাখলাম, তারপর কাব্য আবার বলল,,,কি হলো চেঞ্জ করে নেও তোমার কাপড়ে ময়লা লেগেছে।আমি এবার চুপ হয়ে আগের মতো রইলাম, এখন কাব্য বলল,,কি হলো চেঞ্জ করবে না।আমি মাথা অন্য দিকে ঘুরিয়েই না বোধক উওর দিলাম, কাব্য এবার বলল,,,ঠিক আছে আমি করে দিচ্ছি। বলেই শাড়ির আঁচল টান দিলো,আমি সাথে সাথে বললাম,,না না আমি করছি।কাব্য বলল,,গুড।
বলেই বাহিরে চলে গেলো তারপর মামী ঢুকলো রুমে এসে বলল,,,দেখি শাড়ি চেঞ্জ করে দেই তোমার আবার পায়ে ব্যথা একা একা অসুবিধা হবে।আমি বললাম,,আপনি কিভাবে জানলেন আমার অসুবিধা হবে।মামী বলল,,কাব্য বলেছে।মামী আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে আর মুখ চেপে হাসছে,আমি ভ্রু কুচকে বললাম,,কি হলো মামী হাসছেন কেন।মামী বলল,,,তুমি এত ভয় পাও কেন টিয়া আমাকে বলেছে কিভাবে পড়লে।আমি বললাম,,,
– কি করব বলেন, আমার কেন জানি খুব ভয় করে এই সব
– তুমি এই গ্রামে থেকে যাও এক মাসেই সাহসী হয়ে যাবে
– দরকার নেই সাহসী হওয়ার
মামী আমার কথা শুনে হা হা করে হেসে দিলেন।এখন রাত, আমার রুমে আমি মামী, আর টিয়া বসে ভূতের গল্প শুনছি,আর মামী গল্প বলছে, আর শরীর হাত পা শিউরে উঠছে।
মামীর পাশে আমি আর টিয়া সিরিয়াস মুড নিয়ে বসে ভূতের গল্প শুনছি।আর কাব্য সামনের চেয়ারে বসে মোবাইল টিপতে ব্যস্ত।হঠাৎ পাশ থেকে কাব্য বলল,,মামী গল্প তো শোনাচ্ছো রাতে তো আমার জন্য বিপদ হয়ে যাবে।মামী বলল,,তোর বিপদ হতে যাবে কেন? কাব্য আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,না এমন ভীতুর ডিমের সামনে ভূতের গল্প বলছো আমার তো বিপদ হবেই।
কথাটা শুনে রেগে কাব্যের দিকে তাকালাম,আর টিয়া আর মামী হেসে দিয়ে বলল,,আচ্ছা অনেক গল্প হয়েছে এবার সবাই খাবার খাবে।
বলেই মামী চলে গেলো, টিয়া ও মামীর পিছন পিছন গেলো,আমি ও উঠে যেতে নিলাম কিন্তু পায়ের ব্যথায় আর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম যেই পড়তে যাব ওমনি কাব্য ধরে ফেলল,আর বলল,,,
– তোমাকে বিছানা ছেড়ে কে উঠতে বলেছে
-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
কাব্য আমাকে বিছানায় নিয়ে বসালো, তারপর বাহিরে যেতে যেতে বলল,,,একা একা নামার চেষ্টা করবা না আমি আসছি।বলেই বাহিরে চলে গেলো আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। কিছুখন পর কাব্য খাবার নিয়ে রুমে এসে আমার পাশে বসে বলল,,দেখি মুখ খুলো।
আমি বললাম,,,খাব না। কাব্য বলল,,তোমাকে খাওয়াতে আসি নিই আমি আমার বউকে খাওয়াতে এসেছি। ওর এমন আজব কথা শুনে আমার ভ্রু কুচকে গেলো।কাব্য আবার বলল,,
দেখি মুখ খোলো।আমি মুখ খুলে খেতে গেলাম, কিন্তু না খেয়ে বললাম,,,তুমি খাবে না।কাব্য সামান্য হেসে বলল,,আমি পড়ে খাব এখন তোমার খাওয়া দরকার।আমি বললাম,,,না তুমিও খাবে নইলে আমি খাব না।তারপর কাব্য বলল,,,ওকে। দুজন খাবার খেয়ে নিলাম।
বিছানায় শুয়ে ফেসবুকিং করছি কাব্য হঠাৎ বলল,,তোমার পায়ের ব্যথা কেমন এখন।আমি বললাম,,এখনো অনেকটা ব্যথা করছে।কাব্য বসা থেকে উঠে বাহিরে চলে গেলো।আমি ফোনটা রেখে একটু চোখ বুঝলাম। কিন্তু হঠাৎ অনুভব হলো কেউ আমার পায়ের কাছে বসেছে, আমি সাথে সাথে চোখ খুলে দেখি কাব্য। আমি ওকে দেখে বললাম,,কি করছো।
কাব্য আমার পায়ের কাছ থেকে শাড়িটা একটু উচু করলো। আমি সাথে সাথে বললাম,,আরে কি করছো। কাব্য বলল,,চুপ কর চেচাচ্ছো কেন। বলেই একটা মলম আমার পায়ে লাগিয়ে দিতে লাগলো।আমি তাড়াতাড়ি পা সরিয়ে বললাম,,,আরে ছাড় আমি করে নেব তোমাকে করতে হবে না।কাব্য রেগে বলল,,কেন আমি করলে কি হবে।আমি বললাম,,, এমন হঠাৎ রেগে গেলে কেন তোমার কষ্ট হবে তাই বললাম।কাব্য বলল,,,ঘুমাও রাত হয়েছে। বলেই আমার পাশে এসে শুয়ে পড়লো। আমি নিচে নামতে গেলাম ওমনি আমার হাত ধরে আটকে ফেলল আর বলল,,কোথায় যাচ্ছো।আমি বললাম,,,কেন নিচে তুমি তো আমার সাথে এক বেডে শোও না।
বলেই যেই নামতে যাব ওমনি হাত ধরে বলল,,,কোথাও যেতে হবে না।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,, তোমার আবার কি হয়েছে।কাব্য আমাকে টান দিয়ে ওর বুকের মাঝে নিয়ে নিলো, আমি এতটাই অবাক হয়েছি যে মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরই হচ্ছে না।কাব্য আমার মুখের সামনের থেকে অবাদ্ধ চুল গুলো সরিয়ে বলল,,,অনেক হয়েছে মান অভিমান খেলা,আমি আর পারছি না তোমার থেকে দূরে সরে থাকতে , যত চাই আর কথা বলব না, আর তোমাকে ভালোবাসবো না ততোই আমি জোরিয়ে যাচ্ছি তোমার সাথে, আমার প্রতিটা নিশ্বাসে মিশে আছো তুমি, শেষ মেষ এই অভিমানের কালো মেঘ পেড়িয়ে ভালবাসার সূর্য উদয় হয়েছে, তোমার ভালোবাসার কাছে আমার অভিমান হেরে গেছে, পিছনের সব ভুলে নতুন জগত সাজাতে চাই তোমাকে সাথে নিয়ে,আমার পাশে সারাটা জীবন থাকবে তো।
আমার মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না আনন্দের অশ্রুতে দু জোয়া আখি ভরে উঠেছে, কিছু না বলতে পেরে হাউমাউ করে কেদে দিলাম,কাব্য আমার কান্না দেখে মুচকি হেসে বলল,,কি হলো কাদছো কেন, আমি জানি আমি তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছি, আমাকে মাফ করে দেও, কথা দিলাম আর কখন কষ্ট দেব না ভালোবাসার শুভ্র চাদরে জোরিয়ে রাখবো সারাটা জীবন আমার এই বুকে।ও আমার চোখের অশ্রু মুখে দিয়ে আমার কপালে ভালোবাসার স্পর্শ একে দিয়ে বলল,,এখন ঘুমাও সকালে উঠে দেখবে তোমার শরীর ভালো লাগছে পায়ের ব্যথাও কমে যাবে।আর কিছু না বলে ওর বুকে মাথা রেখে পরম শান্তিতে ঘুমের রাজ্যে কানামাছি খেলতে চলে গেলাম যেখানে ঘুম পরীরা প্রতিদিন আমার অপেক্ষায় থাকে।
চলবে,,,,,,
ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন
চলবে,,,,,
ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন